expr:class='"loading" + data:blog.mobileClass'>

Wikipedia

সার্চ ফলাফল

বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

কবি কা'ব বিন আশ্রাফকে হত্যার কারন

     

কবি কাব বিন আশরাফকে কেন হত্যা করেছিলেন মুহাম্মদ (সাঃ)?
     জবাবঃ
কা‘ব বিন আশরাফ। মদিনার প্রসিদ্ধ ইহুদী নেতা। কবিতা লেখায় সিদ্ধহস্ত। কাব্যে তার পারদর্শিতা। ইহুদীদের মধ্যে এমনই এক ব্যক্তি তিনি, যিনি ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতি অত্যন্ত শত্রুতা ও হিংসা পোষণ করতেন। তিনি নাবী কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দিতেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে যুদ্ধের হুমকি দিয়ে বেড়াতেন। ‘বনু তাঈ’ গোত্রের শাখা   বনু নাবাহান   এর সাথে তার পিতা সম্পর্কযুক্ত ছিলেন। আর তার মাতা   বনু নাযীর   গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। কা‘ব বিন আশরাফ ছিলেন ধনাঢ্য ব্যক্তি। তিনি পুঁজিপতিও ছিলেন। আরবে তার সৌন্দর্য্যের খ্যাতি ছিল। মদীনার দক্ষিণে বনু নাযীর গোত্রের আবাদী ভূমির পেছনের দিকে ছিল তার বসবাসের সুরম্য দূর্গ।
ইসলাম এবং ইসলামের নবীর প্রতি তিনি যে কি পরিমান শত্রুতা পোষন করতেন তা অনুমান করা যায় মুসলমানদের সাথে তার শত্রুতামূলক বিভিন্ন কথা, কাজ ও আচরণে। ইসলামের বিরুদ্ধে তার অব্যাহত ষড়যন্ত্র, মুসলিম সতীসাধ্বী নারীদের নামে মিথ্যে অপবাদ প্রদান করে তাদের নামে কুৎসা রটনা, আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হত্যার প্রকাশ্য হুমকিসহ তার ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের কিছু নমুনা উপস্থাপন করছি-
বদরের যুদ্ধে মুসলিমদের বিজয় তিনি মেনে নিতে পারেননিঃ
উদাহরণতঃ বদর যুদ্ধে মুসলিমদের বিজয় লাভ এবং নেতৃস্থানীয় কুরাইশদের নিহত হওয়ার প্রথম খবর শুনে তিনি অকস্মাৎ বলে ওঠেন- ‘সত্যিই কি ঘটনা এটাই? এরা ছিল আরবের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি এবং জনগণের বাদশাহ। যদি মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে হত্যা করে থাকে তবে পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগ ওর উপরিভাগ হতে উত্তম হবে; অর্থাৎ আমাদের বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই উত্তম হবে।
ধরা পড়ে যায় কা  বের গোপন চিঠিঃ
ইবনে ইসহাকের বর্ণনা উদ্ধৃত করে কা  বকে হত্যা করার পেছনে কারণ হিসেবে উইকিপিডিয়ায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, কাবের প্রেরিত একটি চিঠি বদর যুদ্ধের পর মক্কায় পৌঁছেছিলো এবং তা মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিরুদ্ধে কুয়াইশদেরকে ক্ষেপিয়ে দিয়েছিল। সে চিঠির বিষয় ফাঁস হয়ে গেলে কা  বের গোপন ষড়যন্ত্র সম্মন্ধে মুসলিমরা নিশ্চিত হন।
বিশ্বাসঘাতকতার আরেক নাম কা  বঃ
অঙ্গীকার ভঙ্গকারীদেরকে ক্ষমা করার বিধান পৃথিবীর কোথাও নেই। মক্কাবাসীদের সাথে মদিনার চুক্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি মদিনাবাসী লোক হয়ে মদিনার বিরুদ্ধে মক্কার কুরাইশদেরকে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য বিভিন্ন উপায়ে উষ্কানি দিয়ে আসছিলেন। তার এই বিশ্বাসঘাতকতা নজিরবিহীন। যে কোনো দেশ, রাষ্ট্র ও জনপদের নিরাপত্তা ও অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে এই ধরণের বিশ্বাসঘাতককে উচিত শিক্ষা দেয়া অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে।
কুরাইশদের সাথে মুসলিমদের স্বার্থ বিরোধী লিখিত চুক্তিপত্রে আবদ্ধ হন কা  বঃ
বিভিন্ন ঐতিহাসিক সূত্র দাবি করে যে, কাবকে হত্যা করার কারণ ছিল যে, তিনি মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হত্যার জন্য একদল ইহুদির সঙ্গে গোপন পরিকল্পনা করেছিলেন। বিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা যারুল্লাহ যামাখাশারি, আল-তাবারসি, আল-রাযি এবং আল-বায়দাভির মত পরবর্তী ভাষ্যকারদের কাছ থেকে আরেকটি পৃথক মত পাওয়া যায় যে, কাবকে হত্যা করা হয়েছিল কারণ ফেরেশতা জিবরাইল আলাইহিস সালাম মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কাবের চুক্তি সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছিলেন, যেখানে কাব তার মক্কা সফরের সময় কুরাইশ এবং চল্লিশজন ইহুদির মধ্যে মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিরুদ্ধে দ্বিপাক্ষিক সন্ধিচুক্তিতে আবু সুফিয়ানের সাথে সাক্ষর করেন।
সূত্রঃ উইকিপিডিয়া
অধ্যাপক ইউরি রবিনের ভাষ্যমতে, প্রাথমিক উৎসগুলোতে কুরাইশ এবং ইবনে আশরাফের মাঝে স্বাক্ষরিত একটি মুসলিমবিরোধী সন্ধির অস্তিত্বের বিষয়ে বর্ণনা পাওয়া যেতে পারে।
সূত্রঃ উইকিপিডিয়া।
পৃথিবী থেকে মুসলিমদের অস্তিত্ব মিটিয়ে ফেলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনিঃ
পরে যখন তিনি নিশ্চিতরূপে জানতে পারলেন যে, বদরের যুদ্ধের ফলাফলের যে খবর তিনি শুনেছেন তা সত্য, তখন আল্লাহর এ দুশমন রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং মুসলিমদের নিন্দা এবং ইসলামের শত্রুদের প্রশংসা করতে শুরু করলেন এবং তাদেরকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করতে লাগলেন। কিন্তু এতেও তার বিদ্বেষবহ্ণি প্রশমিত না হওয়ায় তিনি পৃথিবী থেকে মুসলিমদের অস্তিত্ব মিটিয়ে ফেলার গভীর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিনি পথ খুঁজতে থাকেন।
যুদ্ধের আগুন জ্বালাতে তিনি ছুটে গেলেন সুদূর মক্কায়ঃ
অবশেষে অন্য কোনো উপয়ান্তর না পেয়ে তিনি মক্কার কুরাইশদের সাথে যোগ দেয়াকেই অধিক উপযুক্ত মনে করলেন। তার ধারণা ছিল, একমাত্র কুরাইশদের বৃহত শক্তিই নতুন ধর্মবিশ্বাস ইসলাম এবং এর অনুসারীদের নিশ্চিহ্ন করতে সক্ষম হবে। তাই তিনি কুরাইশদের সাথে হাত মেলানোর উদ্দেশ্যে অশ্বে আরোহণ করে প্রায় পাঁচশো কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সুদূর মক্কায় উপনীত হলেন এবং মুত্তালিব ইবনু আবী অদাআ সাহমীর অতিথি হলেন। তারপর তিনি কুরাইশ নেতৃবৃন্দের সামনে নিজের কাব্যপ্রতিভার প্রকাশ ঘটালেন। তিনি কুরাইশদের মর্যাদাবোধ তুলে ধরে তাদের উত্তেজিত করতে, তাদের প্রতিশোধাগ্নি প্রজ্জ্বলিত করতে এবং তাদেরকে নাবী কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্যে উৎসাহিত করতে কবিতা বলে বলে ঐ কুরাইশ নেতাদের জন্য বিলাপ করতে লাগলেন যাদের বদর প্রান্তরে হত্যা করার পর কূপে নিক্ষেপ করা হয়েছিল।
তিনি যে মিথ্যাবাদী এবং শঠ তার প্রমানঃ
মক্কায় তার অবস্থানকালে আবূ সুফিয়ান ও মুশরিকরা তাকে জিজ্ঞেস করল, ‘তোমার নিকট আমাদের দ্বীন বেশী পছন্দনীয়, না মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সঙ্গীদের দ্বীন? আর উভয় দলের মধ্যে কোন্ দলটি বেশী হিদায়াতপ্রাপ্ত?’
উত্তরে কা‘ব বিন আশরাফ বললেন- ‘তোমরাই তাদের চেয়ে বেশী হিদায়াতপ্রাপ্ত এবং উত্তম।
তার এই মিথ্যাচারের অপনোদনেই আল্লাহ তা‘আলা নিম্নের আয়াত নাযিল করেন-
‏(‏أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِيْنَ أُوْتُوْا نَصِيْبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُوْنَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوْتِ وَيَقُوْلُوْنَ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا هَؤُلاء أَهْدَى مِنَ الَّذِيْنَ آمَنُوْا سَبِيْلاً النساء.
‘যাদেরকে কিতাবের জ্ঞানের একাংশ প্রদত্ত হয়েছে, সেই লোকেদের প্রতি তুমি কি লক্ষ্য করনি, তারা অমূলক যাদু, প্রতিমা ও তাগূতের প্রতি বিশ্বাস করে এবং কাফিরদের সম্বন্ধে বলে যে, তারা মু’মিনগণের তুলনায় অধিক সঠিক পথে রয়েছে।’ -আন-নিসা ৪ : ৫১
মদিনায় প্রত্যাবর্তন এবং সতিসাধ্বী মুসলিম নারীদের চরিত্রহননঃ
কিছু দিন মক্কায় অবস্থান করে মক্কাবাসী কুরাইশ নেতৃবৃন্দের অন্তরে যুদ্ধের লেলিহান আগুনের শিখা প্রজ্বলিত করে দিয়ে, মদিনার মুসলিমদের নিশ্চিহ্ন করার অভিযানে গমন করলে তাদেরকে সর্বপ্রকার সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করার আশ্বাস দিয়ে কা‘ব ফিরে এলেন মাদিনায়। কিন্তু মদিনায় ফিরে এসেও তিনি যেন শান্তি পাচ্ছিলেন না। ইসলাম ও মুসলিমদের তার কোনোভাবেই সহ্য হচ্ছিল না। এ পর্যায়ে নব উদ্যমে তিনি ভিন্ন এক ন্যাক্কারজনক কাজে হাত বাড়ালেন। সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুমগণের স্ত্রীদের ব্যাপারে বাজে কবিতা বলতে শুরু করলেন এবং কটুক্তির মাধ্যমে তাঁদেরকে ভীষণ কষ্ট দিতে থাকলেন।
আল্লাহর এই দুশমনকে হত্যার ঘটনাঃ
তার ধারাবাহিক এসব জঘন্য অপকর্ম, সতিসাধ্বী মুসলিম নারীদের প্রতি মিথ্যা অপবাদ ও কলঙ্ক রটানো, ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়ে মক্কার কুরাইশদের সাথে ষড়যন্ত্রে শামিল হয়ে তাদেরকে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে পরামর্শ প্রদানসহ সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া, সর্বোপরি আল্লাহ তাআলা এবং রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নানাবিধভাবে দুর্ব্যবহারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করায় এক পর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
من لى بكعب إبن الأشرف فإنه قد أذى الله و رسوله
অর্থ:   কে এমন আছে? যে কাব ইবনে আশরাফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে! কেননা সে আল্লাহ এবং তার রাসূলকে কষ্ট দিচ্ছে।
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এ প্রশ্নের জবাবে মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু, আব্বাদ বিন বিশর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু, হারিস বিন আউস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু, আবূ নায়িলাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু যার আরেক নাম সিলকান বিন সালামাহ এবং যিনি ছিলেন কা’বের দুধ ভাই, তিনি এবং আবূ আবস বিন হিবর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এ অভিযানে পথপ্রদর্শকের দায়িত্ব পালনের জন্যে এগিয়ে আসেন। ক্ষুদ্র এ বাহিনীর নেতা ছিলেন মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু।
কা‘ব বিন আশরাফের হত্যার ব্যাপারে যেসব বর্ণনা রয়েছে তার সারমর্ম হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বললেন, ‘কা‘ব বিন আশরাফকে কে হত্যা করতে পারে? সে আল্লাহ এবং তার রাসূল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দিয়েছে।’
তখন মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু উঠে আরয করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি প্রস্তুত আছি। আমি তাকে হত্যা করব এটা কি আপনি চান?’
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাবে বললেন, ‘হ্যাঁ’।
তিনি বললেন, ‘তাহলে আপনি আমাকে অস্বাভাবিক কিছু বলার অনুমতি দিচ্ছেন কি?’
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বলেন, ‘হ্যাঁ, তুমি বলতে পার।’
এরপর মুহাম্মাদ বিন মাসলামা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু কা‘ব ইবনু আশরাফের নিকট গমন করলেন এবং তাকে বললেন, ‘এ ব্যক্তি অর্থাৎ, মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাছে সাদাকাহ চাচ্ছে এবং প্রকৃত কথা হচ্ছে সে আমাদেরকে কষ্টের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
একথা শুনে কা‘ব বলল, ‘আল্লাহর কসম! তোমাদের আরো বহু দুর্ভোগ পোহাতে হবে।’
মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বললেন, ‘আমরা যখন তার অনুসারী হয়েই গেছি তখন হঠাৎ করে এখনই তার সঙ্গ ত্যাগ করা উচিত মনে করছি না। পরিণামে কী হয় দেখাই যাক। আচ্ছা, আমি আপনার কাছে এক অসাক বা দু’ অসাক (এক অসাক =১৫০ কেজি) খাদ্য শস্যের আবেদন করছি।’
কা‘ব বলল ‘আমার কাছে কিছু বন্ধক রাখো।’
মুহাম্মাদ বিন মাসলামা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বললেন, ‘আপনি কী জিনিস বন্ধক রাখা পছন্দ করেন?’
কা‘ব উত্তর দিলো, ‘তোমাদের নারীদেরকে আমার নিকট বন্ধক রাখো।’
মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বললেন, ‘আপনি আরবের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সুদর্শন পুরুষ, সুতরাং, আমরা আমাদের নারীদেরকে কিরূপে আপনার নিকট বন্ধক রাখতে পারি?’
সে বলল, ‘তাহলে তোমাদের পুত্রদেরকে বন্ধক রাখো।’
মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বললেন, ‘আমরা আমাদের পুত্রদেরকে কী করে বন্ধক রাখতে পারি? এরূপ করলে তাদেরকে গালি দেয়া হবে যে, এক অসাক বা দু অসাক খাদ্যের বিনিময়ে তাদেরকে বন্ধক রাখা হয়েছিল। এটা আমাদের জন্যে খুবই লজ্জার কথা হবে। আমরা অবশ্য আপনার কাছে অস্ত্র বন্ধক রাখতে পারি।’
এরপর দুজনের মধ্যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো যে, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু অস্ত্র নিয়ে তার কাছে আসবেন। এদিকে আবূ নায়িলাও রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু অগ্রসর হলেন অর্থাৎ কা‘ব বিন আশরাফের কাছে আসলেন। কিছুক্ষণ পর্যন্ত উভয়ের মধ্যে বিভিন্ন দিকের কবিতা শোনা ও শোনানোর কাজ চললো। তারপর আবূ নায়িলা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বললেন, ‘ভাই বিন আশরাফ! আমি এক প্রয়োজনে এসেছি। এটা আপনাকে আমি বলতি চাচ্ছি এই শর্তে যে, আপনি কারো কাছে এটা প্রকাশ করবেন না।’
কা‘ব বলল, ‘ঠিক আছে, আমি তাই করব।’
আবূ নায়িলাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বললেন, ‘এ ব্যক্তির অর্থাৎ, মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর আগমন তো আমাদের জন্যে পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোটা আরব আমাদের শত্রু হয়ে গেছে। আমাদের পথ ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে, পরিবার পরিজন ধ্বংস হতে চলেছে। সন্তান-সন্ততির কষ্টে আমরা চৌচির হচ্ছি।’
এরপর তিনি ঐ ধরণেরই কিছু আলাপ আলোচনা করলেন, যেমনটা মুহাম্মাদ বিন মাসলামা করেছিলেন। কথোপকথনের সময় আবূ নায়িলাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এ কথাও বলেছিলেন যে, আমার কয়েকজন বন্ধু বান্ধব রয়েছে যাদের চিন্তাধারা ঠিক আমারই মত। আমি তাদেরকেও আপনার কাছে নিয়ে আসতে চাচ্ছি। আপনি তাদের হাতেও কিছু বিক্রি করুন এবং তাদের উপর অনুগ্রহ করুন।’
মুহাম্মাদ বিন মাসালামা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এবং আবূ নায়িলাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু নিজ নিজ কথোপকথনের মাধ্যমে নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনে সফলকাম হন। কেননা, ঐ কথোপকথনের পরে অস্ত্রশস্ত্র বন্ধু বান্ধবসহ এ দুজনের আগমনের কারণে কা‘ব বিন আশরাফের সতর্ক হয়ে যাওয়ার কথা নয়।
জোছনাস্নাত রাতে কা  ব বিন আশরাফের পরকাল যাত্রাঃ
হিজরি ৩য় সনের রবিউল আওয়াল মাসের ১৪ তারিখ জোছনাস্নাত এক রাতে এ ক্ষুদ্র বাহিনী রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট একত্রিত হন। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাকীয়ে গারকাদ অর্থাৎ, জান্নাতুল বাকী কবরস্থান পর্যন্ত তাঁদের অনুসরণ করেন। তারপর বলেন, ‘আল্লাহর নাম নিয়ে যাও। বিসমিল্লাহ। হে আল্লাহ! এদেরকে সাহায্য করুন।’
তারপর তিনি নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন। তারপর বাড়িতে তিনি সালাত ও মুনাজাতে লিপ্ত হয়ে পড়েন।
এদিকে এ বাহিনী কা‘ব বিন আশরাফের দুর্গের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছার পর আবূ নায়িলাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু উচ্চৈঃস্বরে ডাক দেন। ডাক শুনে কা‘ব তাদের নিকট আসার জন্যে ঘর হতে বের হতে উদ্ধত হলে তার স্ত্রী তাকে বললেন, ‘এ সময় কোথায় যাচ্ছেন? আমি এ ডাকের ভেতরে এমন শব্দ শুনতে পাচ্ছি, যেন তা হতে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পড়ছে।’
স্ত্রীর এ কথা শুনে কা‘ব বলল, ‘এটা তো আমার ভাই মুহাম্মাদ বিন মাসলামা এবং দুধ ভাই আবূ নায়িলাহ। সম্ভ্রান্ত লোককে যদি তরবারী যুদ্ধের দিকে আহবান করা হয় তবে সে ডাকেও সে সাড়া দেয়।’
এরপর তিনি বাইরে এলেন। তার দেহ থেকে সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ছিল এবং তার মাথায় যেন খোশবুর ঢেউ খেলছিল।
আবূ নায়িলাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু তাঁর সঙ্গীদেরকে বলে রেখেছিলেন যে, ‘যখন তিনি আসবেন তখন আমি তার চুল ধরে শুঁকবো। যখন তোমরা দেখবে যে, আমি তার মাথা ধরে তাকে ক্ষমতার মধ্যে পেয়ে গেছি তখন ঐ সুযোগে তোমরা তাকে হত্যা করবে।’
সুতরাং, যখন কা‘ব এলেন তখন দীর্ঘক্ষণ ধরে আলাপ আলোচনা ও গল্পগুজব চললো। তারপর আবূ নায়িলাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বললেন, ‘বিন আশরাফ! আজুয ঘাঁটি পর্যন্ত চলুন। সেখানে আজ রাতে কথাবার্তা বলাবলি হবে।
তিনি বললেন, ‘তোমাদের ইচ্ছা হলে চলো।’ তারপর তাদের সাথে তিনি চললেন।
পথিমধ্যে আবূ নায়িলাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু তাকে বললেন, ‘আজকের মতো এমন উত্তম সুগন্ধি আপনাকে ইতোপূর্বে ব্যবহার করতে দেখিনি।’
একথা শুনে কা  বের বক্ষ গর্বে ফুলে উঠল। তিনি বললেন, ‘আমার পাশে আরবের সর্বাপেক্ষা অধিক সুগন্ধি ব্যবহারকারিণী মহিলা রয়েছে।’
আবূ নায়িলাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বললেন, ‘আপনার মাথাটি একটু শুঁকবো, এ অনুমতি আছে কি?’
তিনি উত্তরে বললেন ‘হ্যা, হ্যাঁ’।
আবূ নায়িলাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু তখন কা‘বের মাথায় হাত রাখলেন। তারপর তিনি নিজেও তার মাথা শুঁকলেন এবং সঙ্গীদেরকেও শুঁকালেন। কিছুদূর যাওয়ার পর আবূ নায়িলাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বললেন, ‘ভাই আর একবার শুঁকতে পারি কি?’
কা‘ব উত্তর দিল ‘হ্যাঁ হ্যাঁ। কোন আপত্তি নেই।’
আবূ নায়িলাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু আবার শুঁকলেন। সুতরাং, তিনি নিশ্চিত হয়ে গেলেন।
আরো কিছুদূর চলার পর আবূ নায়িলাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু পুনরায় বললেন, ‘ভাই আর একবার শুঁকবো কি?’
এবারও কা‘ব উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, শুঁকতে পারো।
এবার আবূ নায়িলাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু তার মাথায় হাত রেখে ভালভাবে মাথা ধরে নিলেন এবং সঙ্গীদেরকে বললেন, ‘আল্লাহর এ দুশমনকে হত্যা করে ফেল।’
ইতোমধ্যেই তার উপর কয়েকটি তরবারী পতিত হলো, কিন্তু কাজ হলো না। এ দেখে মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু নিজের কোদাল ব্যবহার করে তার দুনিয়ার স্বাদ চিরতরে মিটিয়ে দিলেন। আক্রমণের সময় কা  ব এত জোরে চিৎকার করেছিলেন যে, চতুর্দিকে তার চিৎকারের শব্দ পৌঁছে গিয়েছিল এবং আশপাশে এমন কোন দূর্গ বাকী ছিল না যেখানে বিপদ সংকেত স্বরূপ অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করা হয়নি। কিন্তু এতদসত্বেও মুসলিমদের ক্ষুদ্র এ বাহিনী কোনোরূপ বাধার সম্মুখিন না হয়ে সফলতার সাথে অভিযান সমাপ্ত করে প্রত্যাবর্তন করতে সক্ষম হন।
আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বললেন, ‘আফলাহাতিল উজূহু’
কা‘বকে আক্রমণ করার সময় হারিস ইবনু আউস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুকে তাঁর কোন এক সাথীর তরবারীর কোণার আঘাত লেগেছিল। ফলে তিনি আহত হয়েছিলেন এবং তাঁর দেহ হতে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল। কা‘বকে হত্যা করে ফেরার সময় যখন এ ক্ষুদ্র মুসলিম বাহিনী হররায়ে আরীয নামক স্থানে পৌঁছেন তখন দেখেন যে, হারিস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু অনুপস্থিত রয়েছেন। সুতরাং, তারা সেখানে থেমে যান। অল্পক্ষণ পরে হারিস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুও সঙ্গীদের পদচিহ্ণ ধরে সেখানে পৌঁছে যান। সেখান হতে তাঁরা তাঁকে উঠিয়ে নেন এবং বাকীয়ে গারকাদে পৌঁছে এমন জোরে তাকবীর ধ্বনি দেন যে, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ও তা শুনতে পান। তিনি বুঝে নেন যে, কা‘ব নিহত হয়েছে। সুতরাং, তিনিও আল্লাহু আকবার ধ্বনি উচ্চারণ করেন। তারপর যখন এ মুসলিম বাহিনী তাঁর খিদমতে উপস্থিত হন তখন তিনি বলেন, ‘আফলাহাতিল উজূহু’ অর্থাৎ এ চেহারাগুলো সফল থাকুক।
তখন তারা বললেন, ‘অ অজুহুকা ইয়া রাসূলুল্লাহ’ অর্থাৎ হে আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার চোহরাও সফলতা লাভ করুক। আর সাথে সাথেই তাঁরা তাগূতের (কা‘বের) কর্তিত মস্তক তাঁর সামনে রেখে দেন। তিনি তখন আল্লাহ পাকের প্রশংসা করেন এবং হারিস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু -এর ক্ষত স্থানে স্বীয় পবিত্র মুখের লালা লাগিয়ে দেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি আরোগ্য লাভ করেন এবং পরে আর কখনো তিনি কষ্ট অনুভব করেন নি। -এ ঘটনাটির বিস্তারিত বিবরণ ইবনু হিশাম ২য় খন্ড ৫১-৫৭ পৃঃ, সহীহুল বুখারী ১ম খন্ড ৩৪১-৪২৫ পৃঃ, ২য় খন্ড ৫৭৭ পৃঃ, সুনানে আবূ দাউদ আউনুল মা’বূদ সহ দ্রষ্টব্য ২য় খন্ড ৪২-৪৩ পৃঃ এবং যা’দুল মাআ’দ ২য় খন্ড ৯১ পৃঃ, এ সব হাদীস গ্রন্থ হতে গৃহীত হয়েছে।
কা  ব হত্যার ফলাফলঃ
এদিকে ইহুদীরা যখন কা‘ব বিন আশরাফের হত্যার খবর জানতে পারে তখন তাদের শঠতাপূর্ণ অন্তরে ভীতি ও ত্রাসের ঢেউ খেলে যায়। তারা বুঝতে পারে যে, রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন অনুধাবন করবেন যে, শান্তি বিনষ্টকারী, গন্ডগোল ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী এবং প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকার ভঙ্গকারীদেরকে উপদেশ দিয়ে কোন ফল হচ্ছে না, তখন তিনি তাদের উপর শক্তি প্রয়োগ করতেও দ্বিধাবোধ করবেন না। এ জন্যেই তারা এই বিশ্বাসঘাতককে হত্যার প্রতিবাদে কোন কিছু করার সাহস করেননি, যদিও তাদের এ যুগের উত্তরসূরীদের কেউ কেউ আগপাছ না ভেবে ইতিহাসের সত্যকে ঢেকে রেখে হাহাকার রব তুলে শোরগোল করতে চান মাঝে মাঝেই, বস্তুতঃ কা  বের খুনের ঘটনার পরে মদিনা এবং আশপাশ অঞ্চলের বাদবাকি ইহুদিদের মধ্যে যারা তার পথে হাটছিলেন, তাকে অনুসরণ করছিলেন তারাও একে একে সকলে মুনাফিকির এই পথ থেকে ফিরে আসেন। তারা অঙ্গীকার পূরণের স্বীকৃতি দান করেন এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধাচরণের দুঃসাহস সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে ফেলেন।
এভাবে ইসলাম ও মুসলিমদের দুশমন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এবং রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দুশমন দুর্বৃত্ত কা  ব বিন আশরাফকে উচিত শিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনার বিরুদ্ধে বহিরাক্রমণের সম্ভাবনা বিদূরিত করতে সক্ষম হলেন। এর ফলে মুসলিমরা মদিনার অভ্যন্তরীণ গোলযোগ হতেও সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হয়ে গেলেন; যে গোলযোগের শঙ্কা বহু দিন থেকে তাঁদেরকে চিন্তিত, শঙ্কিত ও উদ্বেগাকুল করে রেখেছিল এবং যার নেতৃত্বে ছিলেন মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত দুর্বৃত্ত কা  ব বিন আশরাফ।
সূত্র থেকেঃ
০১। সহীহ বুখারী ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৪১, ৪২৫,
০২। সহীহ বুখারী ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৫৭৭,
০৩। সুনানে আবূ দাউদ ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৪২, ৪৩,
০৪। যাদুল মায়াদ ২য় খন্ড পৃষ্ঠা ৯১,
০৫। সিরাতে ইবনে হিশাম, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৫১, ৫৭।
০৬। আর রাহীকুল মাখতুম (বঙ্গানুবাদ), মূলঃ আল্লামা ছফিউর রহমান মোবারকপুরি, অনুবাদকঃ খাদিজা আকতার রেজায়ী, আল কোরআন একাডেমি লন্ডন কর্তৃক প্রকাশিত, পৃষ্ঠা ২৪৮ - ২৫১ন্ডন কর্তৃক প্রকাশিত, পৃষ্ঠা ২৪৮ - ২৫১




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে!

  দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে! এক.   শুনতে খারাপ শোনালেও এটা সত্য, রবীন্দ্রনাথের...