expr:class='"loading" + data:blog.mobileClass'>

Wikipedia

সার্চ ফলাফল

শুক্রবার, ৯ মে, ২০২৫

জগৎ বিখ্যাত যে সমিতি কুমিল্লায় অবস্থিত,পেয়েছে ম্যাগসাই পুরস্কারও

যে সমিতি বদলে দিয়েছে কুমিল্লার দুই গ্রামের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট,৯ আনার সেই দিদার সমিতির এখন রয়েছে ২০ কোটি টাকার সম্পত্তি।

দিদার সমবায় সমিতি

 

দিদার  সমবায় সমিতি। কুমিল্লা শহরের নিকটবর্তী কাশিনাথপুর ও বলরামপুর গ্রামের আটজন রিকশাচালক ও একজন ক্ষুদ্র দোকানদারের উদ্যোগে ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সামান্য সদস্য পুঁজি নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও কালক্রমে দিদার একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এ সংগঠনের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে আয় বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করা এবং এর সদস্যদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার খরচ যোগানো।

বর্তমানে দিদারের সদস্য সংখ্যা ১৫০০। সমিতির সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত ৯ সদস্যের একটি কার্যনির্বাহী কমিটি এর কর্মকান্ড পরিচালনা করে। সমিতির রয়েছে ইটভাটা, সরিষার তেলের মিল, ন্যায্য মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিক্রির সমবায় স্টোর, সার ও কীটনাশকের দোকান, তিনটি গভীর নলকূপ, তিনটি ধান ও গম ভাঙার কল এবং একুশটি রিকশা। সমিতির অধীনে রয়েছে একটি হাইস্কুল ও একটি কিন্ডারগার্টেন। দিদারের সদস্যবৃন্দ অনেক সামাজিক কর্মকান্ডে সক্রিয়। এগুলির মধ্যে রয়েছে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, মাছ চাষ প্রকল্প এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি প্রভৃতি।

যে দুটি গ্রামে শুরু থেকে দিদারের কর্মকান্ড চালু রয়েছে সেখানে আজ দারিদ্রে্যর চিহ্ন প্রায় নেই। কৃষি উৎপাদন বেড়েছে চারগুণ। গ্রাম দুটিতে শিক্ষার হার জাতীয় গড় হারের চেয়ে অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতীয় গড় হারের তুলনায় বেকারত্বও হ্রাস পেয়েছে। সমাজিক উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮৪ সালে দিদার স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার লাভ করে। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমীও তার রজতজয়ন্তীতে এ সমিতিকে পুরস্কৃত করে। দিদারের প্রতিষ্ঠাতা মুহম্মদ ইয়াসিন ১৯৮৮ সালে এশিয়ার বিখ্যাত র‌্যামন ম্যাগাস্যাসে পুরস্কার লাভ করেন।

গ্রামের চায়ের দোকানের মালিক মোহাম্মদ ইয়াছিন তার দোকানে আগত ৮ জন রিক্সা ও ভ্যান চালক মোঃ বেনু মিয়া, মোঃ নুরু মিয়া, মোঃ আতর আলী, মোঃ নিলু মিয়া, মোঃ চরু মিয়া, মোঃ অহিদ মিয়া, মোঃ আব্দুল খালেক এবং মোঃ রফিক মিয়াকে নিয়ে প্রত্যেক সদস্য প্রতিদিন ১ আনা করে জমা রাখাবে - এই শর্তে ১৯৬০ সালে ৯ অক্টোবর তারিখে ৯ সদস্যবিশিষ্ট এই সমবায় সমিতিটির গোড় পত্তন করেন।

পুরস্কার ও সম্মাননাঃ

১৯৬২ সালে জাতীয় সমবায় দিবস" উপলক্ষে তৎকালীন প্রদেশিক গভর্ণর সমবায় ইউনিয়ন হতে পুরস্কার প্রদান করেন। ১৯৬২ সাল অবধি কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কয়েকবার সমিতিকে পুরস্কার ও প্রশংসাপত্র প্রদান করেন। ১৯৭৬ সালে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন ও অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকার দিদার সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতিকে" রাষ্ট্রপতি পুরস্কার" প্রদান করেন। ১৯৭৭ সালে কুমিল্লা ফাউন্ডেশন " থেকে স্বর্ণপদক প্রদান করে। ১৯৮২ সালে যথাক্রমে বাংলাদেশ ও জেলার শ্রেষ্ঠ সমবায় সমিতি হিসাবে বাংলাদেশ সরকার" স্বর্ণপদক ও রৌপপদক" প্রদান করেন। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সার্বিক অবস্থার উন্নয়নের ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশের “সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার” হিসাবে পরিচিত “স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয় এই প্রতিষ্ঠানটিকে। ১৯৮৮ খ্রি. সনে আন্তর্জাতিক পুরস্কার র‍্যামনম্যাগ সাই (এ্যাওয়ার্ড) অর্জন ও পল্লী উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখার জন্য অত্র সমিতির প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব মোঃ ইয়াসিন ১৯৯০ খ্রি. সনে “স্বাধীনতা পদক” পুনরায় অর্জন করেন। ২০২০ সালের জাতীয় শ্রেষ্ঠ সমবায় সমিতি পুরস্কার স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন দিদার সমিতির চেয়ারম্যান জনাব আবু তাহের ( মনু )।

বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন অ্যাকাডেমি (বার্ড)-এর প্রতিষ্ঠাকালীন পরিচালক ড. আখতার হামিদ খানের পরামর্শে ১৯৬০ সালে একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে আটজন রিকশাচালকের চাঁদায় কুমিল্লার বলরামপুরে গড়ে ওঠে দিদার সমিতি। প্রত্যেকে এক আনা করে মোট ৯ আনা (৫৬ পয়সা) চাঁদা জমা দিয়েছিলেন।

৯ আনার সেই দিদার সমিতির এখন রয়েছে ২০ কোটি টাকার সম্পত্তি। এই দিদার সমিতি পাল্টে দিয়েছে দুই গ্রামের মানুষের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটও। কুমিল্লার বলরামপুর ও কাশীনাথপুর গ্রামে লেগেছে সমৃদ্ধির ছোঁয়া। শিক্ষা ও স্বনির্ভরতায় বেশ ভালো রয়েছেন এখানকার মানুষ।

সমিতি সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে দিদার সমিতি এশিয়ার নোবেল খ্যাত র‌্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার পয়। ১৯৮৪ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার পান সমিতির মূল উদ্যোক্তা মুহাম্মদ ইয়াছিন। এছাড়া, ১৯৯০ সালে কৃষি পুরস্কার ও শ্রেষ্ঠ সমবায় পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার পায় দিদার সমিতি। চলতি বছর সমবায় স্বর্ণপদক পেয়েছে দিদার সমিতি। গত ৬ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সমিতিকে পদক দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে সমিতির সদস্য প্রায় দেড় হাজার, যার মধ্যে ৭ থেকে ১৮ বছর বয়সী সদস্য রয়েছে ৪০০ জন। সমিতির অধীনে আছে গভীর নলকূপ, সমবায় বাজার, সমবায় দোকান, কমিউনিটি সেন্টার, গাড়ির গ্যারেজ, বাৎসরিক ১৮ শতাংশ হারে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প, দিদার মডেল হাইস্কুল ও ইটের ব্যবসা।

সমিতির সদস্যরা সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জমা রেখে বছরে ২০ শতাংশ লাভ পাচ্ছেন বর্তমানে। ৭-১৮ বছর বয়সী ক্ষুদে সদস্যদের সঞ্চয়ে অভ্যস্ত করে তোলা হয়। সদস্য মেয়েদের অনেকের বিয়ের খরচ আসে সঞ্চয়ের লভ্যাংশ থেকে।

যেভাবে গড়ে ওঠে দিদার সমিতি

আধুনিক কুমিল্লার পথিকৃত হিসেবে পরিচিত ড. আখতার হামিদ খান ১৯৫৯ সালে কুমিল্লায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন অ্যাকাডেমি (বার্ড) প্রতিষ্ঠা করেন। তার হাত ধরে কুমিল্লার কৃষিতে আমূল পরিবর্তন শুরু হয়। তিনি কুমিল্লার কোতোয়ালি থানায় কৃষি সমবায় গড়ার উদ্যোগ নেন।

দিদার সমিতি সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৭ সালে বিদ্রোহের জন্য ছয় মাস জেল খাটেন পুলিশ সদস্য মোহাম্মদ ইয়াসিন। তিনি বলরামপুরের বাসিন্দা। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ইয়াসিন চাকরিচ্যুত হয়ে গ্রামে চলে আসেন। ওই বছর ১০ শতক জমি ২০০ টাকায় বন্ধক রেখে চা ও মুদিমালের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। তখন বলরামপুর ও কাশীনাথপুর গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ ছিলেন হতদরিদ্র।

১৯৫৯ সালে ছয়টি রিকশা কেনেন ইয়াসিন। কিছুদিন পর আখতার হামিদ খানের কাছে পরামর্শের জন্য যান তিনি। তখন আখতার হামিদ তাকে বলেন, 'দান-অনুদান দিতে পারব না। তবে পরামর্শ দিয়ে তোমাদের উপকার করতে পারি।'

ওই সময় তিনি মোহাম্মদ ইয়াসিনকে সমিতি করার পরামর্শ দেন। ১৯৬০ সালের ৯ অক্টোবর বলরামপুরে একটি সভা হয়। সেখানে বলরামপুর ও কাশীনাথপুরের দুইশ মানুষ ছিলেন। সভায় নানা ধরনের উৎসাহ দিয়ে বক্তব্য রাখেন আখতার হামিদ খান। এ ধরনের সমিতির কর্মপন্থা, স্বচ্ছতা ও উদ্দেশ্যের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

সভা শেষ হওয়ার পর অনেকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগলেও মোহাম্মদ ইয়াসিন টাকা 'খোয়া গেলে' নিজের দোকান থেকে মালামাল দিয়ে তাদের ঋণ পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দেন। মাত্র আটজন রিকশাচালক সমিতির প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে এক আনা করে চাঁদা দেন। ইয়াছিন নিজেও এক আনা চাঁদা দেন। মোট দাঁড়ায় নয় আনা।

এরপর প্রতি সপ্তাহে এক আনা করে চাঁদা দিতে থাকেন তারা। এভাবে জমতে থাকা টাকায় ১৯৬১ সালে দুটি রিকশা কেনা হয়। যারা নিয়মিত চাঁদা দিতেন তাদের রিকশা কিনে দেওয়া হতো। দিন দিন পুঁজি বাড়তে থাকে। বাড়ে রিকশার সংখ্যাও।

১৯৬৮ সালে রিকশার সংখ্যা হয় ১৩০টি। ১৯৬৪-৬৫ সালে ইট ব্যবসা শুরু করে দিদার সমিতি। ১৯৬৪ সালে কেটিসিসিএল থেকে তারা ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেয়। ১৯৬৫ সালের বার্ষিক সাধারণ সভায় আখতার হামিদ খান সমিতির সদস্যদের গভীর নলকূপ স্থাপনের পরামর্শ দেন।

১৯৬৭ সালে তিনটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। কিন্তু মাটির নিচ থেকে পানি উঠালে পাপ হবে, এ কথা বলে একপক্ষ গভীর নলকূপের বিরোধিতা করে। সার, কীটনাশক ব্যবহারও অযৌক্তিক দাবি করে সেই পক্ষ।

তারপরও প্রতি ৪০ শতক জমিতে জমির মালিককে ৮ মণ ধান ও খড় দেওয়ার চুক্তিতে এক হাজার শতক জমি আধুনিক পদ্ধতিতে পরীক্ষামূলক চাষাবাদ শুরু করে দিদার সমিতির ৭৫ জন কৃষক। সব সমালোচনা ও বাধা ডিঙিয়ে ওই চাষাবাদেই দারুণভাবে পাল্টে যায় সমিতির ভাগ্য।

সময়ের ব্যবধানে সবুজ ধান মাথা উঁচু করে। কচি ধান পাকতে থাকে। তখন সমিতির পক্ষ থেকে পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, যারা আগের তুলনায় এসব জমিতে কম ধান হওয়ার প্রমাণ দিতে পারবে তাদেরকে ৭৫, ১০০ ও ১২৫ টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হবে।

কিন্তু ওই পুরস্কার কেউই পায়নি। কারণ সেবার অন্যান্য সময়ের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি ধান হয়। প্রতি ১০০ শতক জমিতে গড়ে ৭৭ মণ ধান হয়, যা তখন কেউই কল্পনা করতে পারেনি।

এই ধান থেকে চালের পাশাপাশি টাইপি-১৭৭ নামক মুড়ি করা হতো। এরই ধারাবাহিকতায় দিদার সমিতি ছাড়িয়ে সারা কুমিল্লায় ছড়িয়ে পড়ে কৃষি বিপ্লব। ১৯৬৮ সালে সমিতির অর্থায়নে দিদার জুনিয়র স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। ঋণের টাকায় গড়ে ওঠে ইটভাটা-দোকানপাট। রিকশার পর ট্রাক ও ট্রাক্টর কেনা শুরু হয়, গড়ে তোলা হয় হাঁস-মুরগির খামার।১৯৯৯ সালের ৯ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রে মারা যান ড. আখতার হামিদ খান। তার আটদিন পর ১৭ অক্টোবর বাংলাদেশে মারা যান দিদার সমবায় গ্রাম সমিতির উদ্যোক্তা মুহাম্মদ ইয়াসিন।

কাশীনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম ১৯৭৮ সাল থেকে দিদার সমিতির সদস্য। সৌদি আরব থেকে সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরেছেন। নুরুল ইসলাম জানান, এই দুই গ্রামের সবাই এখন সচ্ছল। পড়াশোনায়ও এখানকার ছেলেমেয়েরা ভালো অবস্থানে আছে।তিনি বলেন, 'দিদার সমিতি শুধু কুমিল্লায় আলোড়ন সৃষ্টি করেনি, গোটা বাংলাদেশের কৃষি বিপ্লবের নেপথ্যে দারুণ ভূমিকা রয়েছে এই সমিতির।'

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে!

  দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে! এক.   শুনতে খারাপ শোনালেও এটা সত্য, রবীন্দ্রনাথের...