expr:class='"loading" + data:blog.mobileClass'>

Wikipedia

সার্চ ফলাফল

শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫

বিগত ৫৪ বছরের নির্বাচন হতে যা পেলো জাতি

 "বিগত ৫৪ বছরের নির্বাচন হতে যা পেলো জাতি"

নির্বাচনই কি বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির একমাত্র পথ?

রক্তাক্ত জুলাই বিপ্লবের পর ইন্টারিম সরকারের সময়ে জাতি বাংলাদেশের আমুল পরিবর্তনের জন্য একটি সংস্কার দাবী করেছে। এই সংস্কার যেমন কঠিন তেমনই সময় স্বাপেক্ষ। কিন্তু এটা মানুষ বুঝার পরও কিছু বিদেশী এজেন্ট বিশেষ করে ভারতীয় দালাল বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ দিচ্ছে সরকারকে।তাদের যুক্তি হলো নির্বাচনই হলো গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ। আমিও বলি অবশ্যই নির্বাচন গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ।  কিন্তু বাংলাদেশের বেলায় এই নির্বাচন গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও জাতিকে মুক্তির জন্য কতটুকু ফলপ্রসূ?


আসুন বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাস ও তার পরবর্তী ফলাফল একটু দেখি কি হয়েছিল।

১৯৭১ সালে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে নির্বাচন হলো সে নির্বাচনে শয়ং দেশের রক্ষক, বাংলাদেশের স্বাধীনতার তথা কথিত মহা নায়ক শেখ মুজিব নিজেই ভোট ডাকাতি করে বসলো। তার পর নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য বাকশাল কায়েম করলো। দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলো, লক্ষ লক্ষ মানুষ না খেয়ে মারা গেলো। এই ছিলো প্রথম নির্বাচনের ফলাফল।

এর পর বহু নাটক হলো, কিন্তু একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মেজর জিয়ার আগমন পর্যন্ত মানুষকে অপেক্ষা করতে হলো। জিয়াউর রহমান হ্যাঁ/না ভোটের মাধ্যমে নিজের ক্ষমতার বৈধতা পাকাপোক্ত করার পর সকল দলের জন্য গনতন্ত্র উম্মুক্ত করার পর তাকে আর বেশী দিন টিকতে দেওয়া হয় নি। চলে আসলো স্বৈরাচার এরশাদ।

এরশাদের আমলেও নির্বাচন হয়েছিলো,কিন্তু সে নির্বাচনও ছিলো পাতানো ও সাজানো, যেমন ছিলো হাসিনার আমলের নির্বাচন গুলো।

এই স্বৈরাচারী এরশাদকে হটিয়ে আবারো গনতন্ত্র উদ্ধারের জন্য ৯০ এর গন অভ্যুত্থান হল, নির্বাচন হলো,খলেদা জিয়া ক্ষমতায় আসলো, শুরু হলো গনতান্ত্রিক চর্চা। 


১৯৯১ সালে সাময়িক ভাবে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু হলেও সংবিধানে না থাকার কারনে খলেদা জিয়া নিজের হাতে ক্ষমতা রেখেই ১৯৯৬ সালে নির্বাচন করলো,ফলাফল হলো ৭৭ দিন দেশে হরতাল, দেশ ভিক্ষার থলে নিয়ে পথে বসল তার পর আনারও আসলো তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা।  নির্বাচন হলো,ক্ষমতায় আসলো স্বৈরাচার হাসিনা। সে পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পর আবার নির্বাচন হলো, আসলো আবার জোট সরকার। ক্ষমতায় ৫ বছর থাকলো এর মধ্যে ৩ বার দূর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হলো। এই ছিলো নির্বাচিত সরকারের অবদান।

তার পর এই সরকার এমন একটি তত্বাবধায়ক সরকার গঠন করলো যাতে সহজেই ক্ষমতায় যাওয়া যায়, এমন কি স্বৈরাচার এরশাদকে চার দলীয় জোটে আনতে যে প্রধান বাঁধা ছিলো বিদীশা এরশাদ, তাকেও তালাক দিতে বাধ্য করলো নির্বাচন সামনে রেখে। দেশে আসলো অবৈধ ফখরুদ্দিন ও মঈনউদ্দীন সরকার। ২ বছর পর আবারও সাজানো নির্বাচন, আড়াইশোর বেশী আসনে স্বৈরাচার আওয়ামিলীগ জয় পেলো। আওয়ামিলীগ এসে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে বসলো, ৩টি ভোটার বিহীন নির্বাচন হলো,জনগনের কপালে জুটলো নির্যাতন, অর্থ লুটপাট, ১৫০০টাকা কেজি কাঁচা মরিচ, আরো কত কি। গুম,খুন,অর্থ লুটপাট হেন কোনো নির্যাতন নাই যা বাংলাদেশের মানুষের চালায় নি হাসিনা। সেও নিয়মিত সময় পর পর নির্বাচন দিত। ফলাফল ছিলো শূন্য। জাতি কি পেয়েছে বিগত ৫৪ বছরের নির্বাচন গুলো হতে?


বওগত ৫৪ বছরে নির্বাচন ও গনতন্ত্রের চর্চার মাধ্যমে,

★ একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন ও জনগনের ভোটের নিশ্চিত অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে নি।


★ এ পর্যন্ত একটি শিক্ষা নীতি চালু করতে পারে নি।


★ দূর্নীতি দূর করতে পারে নি বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে।


★ এই নির্বাচন ও গনতন্ত্র আমাদেরকে হাজার হাজার লাশ উপহার দিয়েছে।


★ চাঁদাবাজীকে অঘোষিত বৈধতা দিয়েছে।


তাইলে যারা নিট্বাচন নির্বাচন বলে গলাবাজি করছেন তাদেরও উদ্দেশ্য কি আবারও নির্বাচন নামক ছেলে ভুলানো গান শুনিয়ে বাংলাদেশের মানুষে কারাগারে আটক করা?

একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন একটি জাতির মুক্তির অন্যতম উপায় হতে পারলেও বাংলাদেচের মত দেশের জন্য কতটুকু প্রজোয্য? এটিই একমাত্র উপায় নয়। নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ, যা জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার গঠনের সুযোগ তৈরি করে। একটি জাতির মুক্তি ও অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন শুধু নির্বাচন নয়, বরং একটি কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক শাসন ব্যবস্থা, আইনের শাসন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক ন্যায়বিচার, এবং জনগণের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি। 


নির্বাচন কেন গুরুত্বপূর্ণ: 

জনগণের ভোটাধিকার:

নির্বাচন জনগণের ক্ষমতায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এর মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে, যারা তাদের স্বার্থ রক্ষা করবে এবং তাদের জন্য কাজ করবে। কিন্তু বিগত ৫৪ বছরের নির্বাচন গুলো এসকল শর্ত পূরনে ব্যর্থ হয়েছে।


সরকারের জবাবদিহিতা:

নির্বাচন সরকারের কাজের ওপর জনগণের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখে। জনগণ তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাজের মূল্যায়ন করতে পারে এবং প্রয়োজনে তাদের পরিবর্তন করতে পারে।কিন্তু বাংলাদেশের বেলায় তা সম্পূর্ণ বিপরীত। 


রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা:

একটি সুষ্ঠু নির্বাচন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করে। যখন জনগণ তাদের পছন্দের সরকারকে নির্বাচিত করতে পারে, তখন রাজনৈতিক অস্থিরতা কমে আসে।বাংলাদেশে প্রত্যেক নির্বাচনের আগে ও পরে ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরী হয়, মানুষ মরে অগনিত।


অর্থনৈতিক উন্নয়ন:

একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। যখন সরকার জনগণের সমর্থনে থাকে, তখন অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও দ্রুত হতে পারে। বাংলাদেশের বেলায় মির্বাচন চাঁদাবাজি ও টাকা পাচারের পথ সুগম করে।


সামাজিক ন্যায়বিচার:

নির্বাচন সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যখন জনগণ তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয় এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের দাবি পেশ করে, তখন সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সহজ হয়।বাংলাদেশের বেলায় তা পরিলক্ষিত হয় নি।


তবে, নির্বাচনই শেষ কথা নয়। একটি জাতির মুক্তি ও অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন: 


সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রক্রিয়া:

নির্বাচন অবশ্যই অবাধ, সুষ্ঠু, এবং নিরপেক্ষ হতে হবে। এতে জনগণের ভোটাধিকারের উপর কোনো হস্তক্ষেপ করা যাবে না।

একটি কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক সরকার:

নির্বাচিত সরকার জনগণের জন্য কাজ করবে এবং তাদের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে।


আইনের শাসন:

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী আইনের ঊর্ধ্বে নয়।


অর্থনৈতিক উন্নয়ন:

অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে।


সামাজিক ন্যায়বিচার:

সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।

জনগণের ঐক্য ও সংহতি:

জনগণের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি থাকা প্রয়োজন।

কিন্তু বিগত ৫৪ বছরের নির্বাচন জাতির কোনো শর্তই পূরন করতে পারে নি বরং মানুষের অধিকার গুলো কেড়ে নিয়েছে। তাই বলি আগে সংস্কার নিশ্চিত হোক তার পর নির্বাচন। 


লেখকঃ চিকিৎসক, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে!

  দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে! এক.   শুনতে খারাপ শোনালেও এটা সত্য, রবীন্দ্রনাথের...