expr:class='"loading" + data:blog.mobileClass'>

Wikipedia

সার্চ ফলাফল

বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫

জ্যান্টাইলদের প্রতি ইহুদিদের দৃষ্টিভঙ্গি

 

জ্যান্টাইলদের প্রতি ইহুদিদের দৃষ্টিভঙ্গি

জ্যান্টাইলদের প্রতি ইহুদিদের দৃষ্টিভঙ্গি

ইহুদি বিতর্ক নিয়ে আমরা ততদিন পর্যন্ত কোনো সমাধানে পৌঁছতে পারব না, যতদিন না তারা নিজ উদ্যোগে এ বিতর্কের সমাধানে এগিয়ে আসে। জ্যান্টাইলদের পত্রিকা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ইহুদিদের অভিযোগ—

‘মেনে নিলাম আপনারা যা প্রকাশ করছেন তা সত্য এবং কিছুসংখ্যক ইহুদি সত্যিই অপরাধী। তাই বলে প্রতিবার নাম প্রকাশের সময় “ইহুদি” শব্দটি উল্লেখ করতে হবে কেন? আপনারা চাইলে A1 Wood, Morris Gest, Louis Marshall, Samuel Untermyer, Edward Lauterbach Felix Warburg নামগুলোকে অপরাধী বলে সাব্যস্ত করতে পারেন। যখন আপনার ইহুদি উচ্চারণ করেন, তখন কি পুরো সম্প্রদায়কে এক কাতারে নিয়ে আসা হচ্ছে না? এর দরুন পুরো সম্প্রদায় অভিযুক্ত হচ্ছে।’

এমন যদি হতো, শুধু জড়িত ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে এবং জাতিগত পরিচয় প্রকাশ করা হচ্ছে না, তবুও কিন্তু সমাজে আহামরি কোনো পরিবর্তন আসত না।

হাজারো বছর ধরে জ্যান্টাইলদের সাথে ইহুদিদের যে সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব, তার কোনো অবসান হতো না। কিছুদিন পরপর ইউরোপজুড়ে যে অ্যান্টি-সেমেটিক আন্দোলন জেগে ওঠে, তা থেকে ইহুদিরা কখনো পরিত্রাণ পেত না। জ্যান্টাইল প্রতিষ্ঠানগুলো, বিশেষত Dearborn Independent ইহুদিদের সমালোচনা করে যে অসংখ্য আর্টিকেল প্রকাশ করেছে, তার উদ্দেশ্য—জ্যান্টাইলদের মনে ইহুদিবিদ্বেষী চেতনা জাগিয়ে তোলা নয়; এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য হলো—ইহুদি বিতর্ক সম্পর্কে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সজাগ করে তোলা। মূলত পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, নিরপেক্ষ ও সত্য তথ্য প্রকাশ করতে গেলেও তা ইহুদি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে জ্যান্টাইলদের মনে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দেবে। এ পর্যন্ত পত্রিকা প্রতিষ্ঠানটি ইহুদিদের সম্পর্কে যে পরিমাণ তথ্য ছাপিয়েছে, তার একটিও যদি ভুল হতো, তবে এত দিনেও তারা কোনো মামলা করল না কেন?


এক্ষেত্রে ইহুদিরা নিরুপায়। জ্যান্টাইল পত্রিকাগুলো দ্বারা প্রকাশিত তথ্যসমূহ ভুল প্রমাণিত করার জন্য কোনো রকম তথ্য-প্রমাণ ইহুদিদের হাতে নেই। তারা চায়, প্রকাশিত আর্টিকেল ও কলামগুলো সমাজের মানুষ না পড়ুক। তারা অনেক প্রচেষ্টা চালিয়েছে আমাদের প্রতিষ্ঠানকে বাজারে হাস্যরসের পাত্র বানানো যায় কি না। তা ছাড়া নিজ জাতিগোষ্ঠীর জন্য জ্যান্টাইলের ছাপানো এ জাতীয় আর্টিকেল ও কলাম পড়া তো একেবারে নিষিদ্ধ, যা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ, ইহুদিরা চায় না—অ্যান্টি- সেমিটিক বিক্ষোভ তাদের সম্প্রদায়ের মধ্য জাগ্রত হোক। আমাদের অভিযোগসমূহ শোনার পর ইহুদি সংগঠনগুলো যে জবাব দিলো, তা শুনে সত্যি অবাক হবেন। এমন কয়েকটি জবাব সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ নিচে উপস্থান করা হলো—

১. ‘তোমরা যা বলছ—তার সবই সত্যি, তবুও তোমরা আমাদের অভিযুক্ত করতে পারো না।’ সাংবাদিকতা শিল্পে ইহুদিদের বেশ কিছু মূলনীতি রয়েছে, যার একটি হলো—ইহুদিরা কখনো গণ-আলোচনার বিষয়বস্তু হতে পারবে না। যদি তাদের নিয়ে কোনো বিতর্ক হয়, তবে তা কেবল ভালোর জন্যই হতে হবে। ইহুদিদের প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে—এমন কোনো বিতর্ক জনসম্মুখে আনা যাবে না। এর উদ্দেশ্য হলো—ইহুদিদের অপকর্মগুলো যেন জনসম্মুখে প্রকাশ না পায়। শুধু জ্যান্টাইলরাই নয়; ইহুদিদের কোনো মুখপাত্র পর্যন্ত এমন কোনো কাজ করতে পারবে না।

২. ‘আপনারা যা বলছেন, তার সবই সত্যি। কিন্তু আপনারা যে সমাধান চাইছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। আপনাদের জন্য ইহুদিরা কখনো পরিবর্তিত হবে না; বরং আমাদের জন্য আপনাদের পরিবর্তন হতে হবে।’

তারা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছে, ইহুদিরাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি এবং তাদের প্রয়োজনে আমাদেরকেই পরিবর্তীত হতে হবে। তাহলে থিয়েটার ও চলচ্চিত্র শিল্পে ইহুদিরা যে নগ্ন সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে, তা কি আমাদের মেনে নিতে হবে? পুঁজিবাজার ও অর্থবাজারকে পৃথক করে যে ধ্বংসাত্মক সমাজব্যবস্থার জন্ম দিয়েছে, তা কি আমাদের মেনে নিতে হবে? সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থায় তারা যেভাবে আমাদের ব্যক্তিগত সম্পদ দখল করে যাচ্ছে, তা কি আমাদের মেনে নিতে হবে? খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মিশিয়ে ইহুদিরা প্রতিদিন বিষ পান করাচ্ছে, তা কি আমাদের মেনে নিতে হবে?

তারা নিজেদের যে Mosaic Law-এর অনুসারী দাবি করে থাকে—সত্যি বলতে মোজেস যদি এই যুগে বেচে থাকতেন, তবে তিনি কখনো ইহুদিদের এই বানানো আইনসমূহ গ্রহণ করতেন না।

৩. ‘আপনাদের দাখিল করা অভিযোগসমূহের সমাধান তখনই সম্ভব, যখন আমরা চাইব। কিন্তু আমাদের এমন কোনো প্রয়োজন পড়েনি যে, আপনাদের অভিযোগগুলো মাথা পেতে নিতে হবে।’

যারা নিজেদের প্রকৃত ইহুদি বলে দাবি করে, তাদের ওপর অভিসম্পাৎ বর্ষণের কথা হাজার বছর আগে ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলো জিহুদিয়া (Judah), প্যালেস্টাইনে ফিরে যাওয়ার অর্থ হলো—বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড ধ্বংসের পথ পরিষ্কার করা। ইহুদিরা যে নিজেদের মোজেসের অনুসারী বলে দাবি করে, সেই মোজেস কখনো জিহুদিয়ার ওপর সন্তুষ্ট ছিলেন না। নিজেদের মাঝে শান্তি ফিরিয়ে আনতে ইজরাইলবাসী একত্রিত হয়ে এই গোত্রটিকে হাজার বছর আগে বহিষ্কার করে। এমন নয় যে, তাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে; বরং শাস্তিস্বরূপ ইজরাইল থেকে নির্বাসিত করা হয়েছে। তাহলে কীসের ভিত্তিতে আজকের জায়োনিস্টরা দাবি করে, তারা প্যালেস্টাইনের প্রকৃত মালিক?

যখন কেউ বাইবেল পড়বে, তার খুব সতর্কতার সাথে বাইবেল পড়া উচিত। ইহুদিরা দাবি করে তারা পয়গম্বর Abraham-এর অনুসারী। একটি বিষয় পরিষ্কার করে বলতে চাই, ওল্ড টেস্টামেন্টের নয়-দশমাংশ হলো ইজরাইলি গ্রন্থ, যা ইজরাইলবাসীর জন্য অবতীর্ণ হয়েছে। Abraham, Isaac, Jacob, Moses, Joshua, Gideon, Samuel, Esther ও Mordecai সবাই ছিলেন ইজরাইলবাসীর পয়গম্বর। তারা কেবল জুদাহদের জন্য পয়গম্বর হয়ে আসেনি। এমনকী যীশু যে অনুসারীদের খুঁজে পান, তাদের অবস্থান ছিল গ্যালিলি অঞ্চলে—যা ছিল জুদাহ থেকে অনেক দূরে। তাঁর অনুসারীদের মধ্যে কেবল একজনকে পাওয়া যায়, যিনি বেনজামিন প্রদেশ হতে যীশুর অনুসারী হতে গ্যালিলিতে আসেন। তার নাম হলো St. Paul। তিনি হলেন যীশুর একমাত্র ইহুদি অনুসারী।

আমেরিকান ইহুদিদের উচিত, নিজেদের চরিত্রে আত্মসমালোচনার অভ্যাস গড়ে তোলা। তারা যদি জীবনের অর্ধেকটা সময় কেবল নিজেদের সমালোচনায় ব্যয় করত, তবে কখনোই এতসব আক্রমণের মুখোমুখি হতে হতো না; বরং সাধারণ মানুষের উন্নয়নকল্পে তারা বিশেষ অবদান রাখতে পারত। যেখানে ইহুদিরা জ্যান্টাইলদের যেকোনো কাজের প্রতি উচ্চ সংবেদনশীল মনোভাব পোষণ করে, সেখানে নিজেদের সকল ভুলত্রুটিতে থাকে নীরব।

ইহুদিদের ওপর আসা যেকোনো অভিযোগ ও সমালোচনা মোকাবিলা করতে তারা বদ্ধপরিকর। কিন্তু অসংযত জীবন পরিহার করে ইহুদিরা যে সুন্দর সমাজব্যবস্থায় ফিরে আসবে—এমনটা তাদের মাঝে কখনো দেখা যায় না। এমন নয় যে, জ্যান্টাইলরা ইহুদিবিদ্বেষী হয়ে জন্মগ্রহণ করে; বরং তাদের নিয়মিত কার্যকলাপই জ্যান্টাইলদের ধীরে ধীরে ইহুদিবিদ্বেষী করে তোলে।

Walter Lippmann, in The American Hebrew

জ্যান্টাইলদের দৈনন্দিন জীবনচক্রে ইহুদিদের দৌরাত্ম্য

একটা সময় ছিল, যখন অর্থের চেয়ে সৃজনশীলতায় মানুষ বেশি আনন্দ খুঁজে পেত। বেছে বেছে এমন জিনিসকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করত, যা করে আনন্দ পাওয়া যেত। অর্থের চেয়ে মানসিক প্রশান্তিই ছিল অধিক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ তার মনস্ততত্ত্বকে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে পূর্ণরূপে ব্যবহার করত। নিজেকে স্রষ্টারূপে কল্পনা করতে পারাটা তাদের কাছে ছিল গর্বের বিষয়।

মনের সুখে গান গেয়ে সকাল-সন্ধ্যা মাঠে কাজ করে যেত কৃষাণের দল। রোগে-শোকে তাদের সাহায্য করতে মাঠে এগিয়ে আসত কৃষাণীর দল। তাদের মাঝে পারস্পরিক সম্মান, মায়া, ভালোবাসা ইত্যাদি কোনোটির কমতি ছিল না। মৌসুম শেষে তারা যতটুকু ফসল পেত, তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকত। তাদের মনে অতি লোভ বলতে কোনো বিষয় ছিল না। তা ছাড়া একের বিপদে অন্যজন এগিয়ে আসা ছিল সামাজিক রীতি।

গৃহপালিত প্রাণীগুলোর প্রতি ভালোবাসার কোনো কমতি ছিল না। নিজ সন্তানের মৃত্যুতে কৃষাণীর বুক চিরে যতটা আর্তনাদ শোনা যেত, ততটাই আর্তচিৎকার ভেসে উঠত দুই মাসের একটা বাছুর মারা গেলেও। পাড়া-প্রতিবেশীরা সবাই তাকে সহমর্মিতা জানাতে ছুটে আসত। এমনও দিন যেত, যখন ক্ষরা বা অতি বৃষ্টির দরুন মাঠের সব ফসল নষ্ট হয়ে যেত, তবুও তাদের গোয়াল ঘরে থাকা নিষ্পাপ প্রাণীগুলো কখনো অভুক্ত থাকেনি। সন্তানদের অভুক্ত না রাখতে বাবা-মায়েরা যেমন কম খেয়ে দিনাতিপাত করত, তেমনি নিষ্পাপ এই প্রাণীগুলোর জন্যও তারাও অর্ধভুক্ত থাকত।


অভাব-দরিদ্রতা কেবল পেট পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল; বুক পেরিয়ে মগজ পর্যন্ত উঠতে পারেনি। কারণ, এই চিন্তা বুক পেরিয়ে মাথায় উঠে গেলে—তা লোভ-লালসায় রূপ নিতে পারে, যা পৃথিবীর সকল ধন-সম্পদ দিয়েও মেটানো সম্ভব নয়। এই সুন্দর সমাজব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়ার একমাত্র উপায় হলো—মানুষের মগজে লোভ-লালসার বীজ ঢুকিয়ে দেওয়া। এটাই একমাত্র অস্ত্র, যা পৃথিবীর যেকোনো সুন্দর সমাজব্যবস্থাকে মুহূর্তে ধ্বংস করে দিতে পারে। আর ইহুদিদের সুদি ব্যাংকগুলো এই বিশেষ অস্ত্রের পেছনেই কাজ করেছে।

ডলারভিত্তিক অর্থব্যবস্থা চালু হওয়ায় আমেরিকার প্রতিটি মানুষ এটিকে বিনিময়মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। নিরুপায় হয়ে কৃষকরা নিজেদের সকল সম্পদ (স্বর্ণ- রৌপ্য) তুলে দেয় ব্যাংকের হাতে। আর সঙ্গী করে নেয় বিভিন্ন অঙ্কের ঋণ। আগেই বলা হয়েছে, ফেড চালু হওয়ার পর বাছাই করে করে শুধু উৎপাদনশীল খাতগুলোর ওপরই অধিক সুদের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়।

এই সুদের বর্ধিত খরচ মেটাতে কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের বিক্রয় মূল্য বাড়িয়ে দিতে বাধ্য হয়। এই ধাক্কায় মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি জিনিসের দাম মুহূর্মুহু করে বাড়তে শুরু করে। সীমিত আয়ের মানুষদের ছটফটিয়ে মরে যাওয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়। এদিকে কৃষকেরই-বা কী করার আছে? তাদেরও তো বর্ধিতমূল্যে পণ্য বিক্রি করতে হবে; নতুবা সুদের অর্থ পরিশোধ করবে কীভাবে? সমাজে যারা অভিজাত এলাকায় বসবাস করে, তারা কি আদৌ গ্রামের এই কৃষকদের আর্তনাদ শুনতে পায়?

ইহুদিভিত্তিক পত্রিকা প্রতিষ্ঠানগুলোও নিজদের কাজে নেমে পড়ে। তাদের হাতে আছে কলম, যা পৃথিবীর যেকোনো মরণাস্ত্রের চেয়ে অধিক ধ্বংসাত্মক। তারা একের পর এক কলাম প্রকাশ করতে শুরু করে। যেখানে গ্রামের কৃষকদের অতি মুনাফালোভী, মজুতদার, অন্ন ডাকাত ইত্যাদি বলে প্রচার শুরু করে। সামাজিক বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে এগিয়ে আসে আমেরিকান প্রশাসন।

সরকারিভাবে প্রতিটি পণ্যের বিক্রয়মূল্য বেঁধে দেওয়া হয়, যেন শহরে বসবাসরত মধ্যবিত্তদের কোনো সমস্যা না হয়। কিন্তু সরকারি ভাবে যে বিক্রয়মূল্য বেঁধে দেওয়া হয়, তা দিয়ে কৃষকদের উৎপাদন খরচই উঠে না। তার ওপর প্রাকৃতিক দুর্যোগের দরুন ফসল নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি তো রয়েছেই! রাগে-দুঃখে তারা নিজেদের শস্যখেত নিজেরাই পুড়িয়ে দেয়। দুধ-ডিমের অপ্রত্যাশিত কম বিক্রয়মূল্য দেখে কৃষকরা নিজের হাতেই সব নষ্ট করতে শুরু করে।

তবে পৃথিবীতে তো বেঁচে থাকতে হবে! শুরু হয় খাদ্যে ভেজাল মেশানোর যুগ। যে কৃষকরা একসময় নিজের রক্ত-ঘামে ভেজা হাতে ফসল ফলাত, সেই হাত দিয়েই তারা আজ খাদ্যে বিষ মেশাতে শুরু করে। নিজেদের এই অধঃপতন দেখে ভগ্ন হৃদয়ে সন্তানদের বলছে—’শহরে গিয়ে পড়ালেখা করে অন্য কোনো কাজ করো; কৃষক হওয়ার প্রয়োজন নেই।’ এভাবেই আমাদের সমাজ থেকে হারিয়ে যায় সৃজনশীলতার স্বর্ণালি অধ্যায়। সেই সন্তানরা পড়ালেখা করে আজ যেসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে, তার সবই প্রায় ইহুদিদের অঙ্গ সংগঠন!

শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ইহুদিদের ষড়যন্ত্রের গল্প তো আগেই বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিটি শিক্ষাবোর্ডের ওপর কমিউনিস্টরা সিংহাসন গেড়ে বসেছে। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে গড়ে তুলেছে ফেমিনিস্ট সোসাইটি। বলে রাখছি, এই তথাকথিত নারীবাদী ফেমিনিস্ট সোসাইটি একদিন প্রতিটি রাষ্ট্রেরই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সমাজের যে নারীরা একসময় স্বামীর বুকে আশ্রয় খুঁজত, আজ সেই নারীরা ইহুদিদের প্ররোচনায় পড়ে অর্ধনগ্ন হয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছে। তাদের চোখে যীশু তো নারী অধিকার লুণ্ঠনকারী দোসর!

ধর্মীয় শিক্ষা বন্ধ করে দেওয়ার দরুন ফেমিনিজমের মতো নতুন নতুন অজস্র পরগাছা পুরো পৃথিবীজুড়ে গড়ে উঠবে। নতুন প্রজন্ম হয়তো আর জানতে পারবে না, যীশুর প্রকৃত পরিচয় কী এবং কেন তিনি এই পৃথিবীতে এসেছিলেন। তারা বুঝবে না, কেন বাইবেলে মেয়েদের শালীন ও পর্দানশীল হতে বলা হয়েছে। শিক্ষাঙ্গন থেকে বহু আগেই প্রার্থনা সংগীতের চর্চা উঠে গেছে। লাইব্রেরিগুলোতে ধর্মতত্ত্বের পরিবর্তে ইহুদি সাহিত্য জায়গা করে নিয়েছে। সেখানে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে মনগড়া সব গল্পের বই।

ইহুদিরা ধর্মের শিকড় কেটে দেওয়ার যত চেষ্টাই করুক না কেন, এই পৃথিবী থেকে তো সৃষ্টিকর্তার পরিচয় মুছে দেওয়া সম্ভব নয়। সামান্য চিন্তাশীল মানুষও যদি হৃদয়ের চোখ দিয়ে প্রকৃতির দিকে তাকাতে শুরু করে, তবে অবশ্যই মহান সৃষ্টিকর্তার সাড়া খুঁজে পাবে। তাই শিকড় কাটতে হলে প্রতিটি মানুষকে হৃদয় শূন্য করতে হবে। যেহেতু তা করা সম্ভব নয়, তাই এই আবেগকে নিয়ে ইহুদিরা ভিন্ন খেলায় মেতে উঠেছে। গির্জাগুলোতে আজ পাদরিদের চেয়ে রাবাইদের দৌরাত্ম্য যেন অধিক বেশি। তারা বলে—

‘আমরাই সৃষ্টি কর্তার মনোনীত সম্প্রায়। আমরা তোমাদের নিকট রক্ষাকর্তা পাঠিয়েছি। আমরা তোমাদের নিকট বাইবেল পাঠিয়েছি। সুতরাং ইজরাইল যাও এবং আশীর্বাদ নিয়ে এসো।

Karl Marx-এর ধ্বংসাত্মক সমাজতন্ত্রের নাম করে ইহুদিরা পুরো রাশিয়াজুড়ে কী তাণ্ডব চালিয়েছে, সে গল্প আশা করি আপনাদের মনে আছে। ‘ন্যায়ভিত্তিক’ সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার নাম করে তারা রাশিয়ার সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণ করেছে। আগেই বলেছি, বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এই পৃথিবী এমন এক সময় পার করেছে, যখন অর্থনীতির ওপর লেখা দশটি বইয়ের মধ্যে আটটিই লিখেছে ইহুদি লেখকরা। সেগুলো আজ পৃথিবীর বিখ্যাত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠ্যবই হিসেবে পড়ানো হচ্ছে। নতুন প্রজন্মগুলো গড়ে উঠছে মানসিক প্রতিবন্ধীরূপে।

স্কুল-কলেজ ও গির্জাগুলো আজ যেন কমিউনিস্টদের দুর্গ হয়ে উঠেছে। আমাদের পূর্বপুরুষদের রক্ত-ঘামে নির্মিত যে সমাজ, তা নিজেদের অজ্ঞতার জন্যই ধ্বংস হতে বসেছে। যে জাতির ইতিহাসে শিক্ষা নেই, সে জাতিকে মেরুদণ্ডহীন বলাই শ্রেয়। আমরা হলাম তেমনই এক মেরুদণ্ডহীন জাতি।

১৯১৭-১৮ সালের দিকে কোনো এক ম্যাগাজিন পত্রিকা একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করে, যাতে কিছু প্রশ্ন করা হয়। যেমন : আমাদের সমাজের কী হয়েছে? আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কী পড়ানো হচ্ছে? আমাদের তরুণ-তরুণীরা এত উগ্রতায় মত্ত হয়ে পড়ছে কেন?এর উত্তর খুবই সহজ; শিক্ষা ব্যবস্থা। বলশেভিক আন্দোলনকারীরা ইতোমধ্যে পৃথিবীর অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু বামপন্থি দলের জন্ম দিয়েছে। প্রতিটি জায়গায় একদল প্রফেসর এবং তাদের অনুগত কিছু শিষ্য শিক্ষার্থীদের মাঝে লেনিন-ট্রটস্কিকে বিপর্যস্ত মানবতার আদর্শ নেতা হিসেবে উপস্থাপনে চেষ্টা করে যাচ্ছে; অনেকাংশে সফলও হয়েছে। অনেক সময় বিভিন্ন প্রফেসরকে তারা অর্থের বিনিময়ে কিনেও নেয়, যা রাষ্ট্রীয় প্রশাসন পর্যন্ত জানে না। পরে এই শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কমিউনিস্ট আন্দোলনের ঝান্ডা হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। খুব অল্পতে উঠতি বয়সি শিক্ষার্থীরা নিজেদের নেতা-কর্মী বলে ভাবতে শেখে। তারা কল্পনা করে, তাদের হাতেই দুনিয়া পালটে যাবে। কিন্তু তারা বুঝতে পারে না, এই ক্ষমতার দৌড় কতটুকু। তারা নিজেদের রুশ বিপ্লবের লাল পতাকাবাহী বলে কল্পনা করে। তাদের দ্বারা বিপ্লব চালিয়ে নিতে ইহুদিভিত্তিক ব্যাংকগুলো থেকে আসতে থাকে পানির মতো বিনিয়োগ।

রুশ বিপ্লবে ছাত্র রাজনীতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, সে কথা কেবল তারাই বলতে পারবে, যারা এই বিপ্লব নিজ চোখে দেখেছে। তাই বিপ্লবকালে খাদ্য সংকট যেন মহামারি রূপ ধারণ না করে, সে জন্য Maxim Gorky ছাত্র রাজনীতিবিদদের জন্য নিয়মিত খাদ্যের ব্যবস্থা করতেন। বলতে বাধা নেই, এই বামপন্থি দলগুলোর সহায়তা বলেই ইহুদিদের বিষাক্ত সংস্কৃতি আমাদের সমাজকে প্রতিনিয়ত কলুষিত করে যাচ্ছে।

তর্ক-বিতর্ক কখনো সকল সমস্যার সমাধান হতে পারে না। আমরা যে মানসিক দাসত্বের বন্ধনে ইতোমধ্যেই আটকে পড়েছি, তা থেকে নিজেদের রক্ষা করার একটাই উপায়; শিক্ষার আলো জাগ্রত করা। অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের চাদরে যে ইউরোপ একসময় চাপা পড়েছিল, সেও আলোর সন্ধান পেয়েছে কেবল প্রকৃত শিক্ষার বদৌলতে।

মহান সৃষ্টিকর্তা এ পর্যন্ত আমাদের মাঝে অসংখ্য পয়গম্বর পাঠিয়েছেন, যাদের কল্যাণে এই অসভ্য মানবজাতি সভ্যতার সন্ধান পেয়েছে। যে মনীষীদের কল্যাণে আমরা আজকের আলোকিত সমাজব্যবস্থা পেয়েছি, তাদের গল্প সন্তানদের শোনাতে হবে। যদিও এই সমাজের চৌকাঠগুলোতে ঘুণ ধরেছে, তবুও আশা রাখি—উপযুক্ত পদক্ষেপ নিলে চৌকাঠগুলো ঘুণমুক্ত করা সম্ভব হবে। আমাদের সন্তানরা যদি জানত, তাদের শরীরের কাদের রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে, তাদের ইতিহাস কতটা গৌরবময়, তাহলে কখনো এই মানবরূপী ভণ্ড ইহুদিদের বানোয়াট সব মতবাদে নিজেদের উজার করে দিত না।

প্রকৃত খ্রিষ্টানরূপে এই পৃথিবীতে টিকে থাকতে চাইলে ইজরাইলের ইতিহাস নিয়েও অধ্যয়ন করতে হবে। আব্রাহাম, জ্যাকব, মোজেস, জোসেফ ও ইজরাইলের ১২টি গোত্রের প্রতিটির পরিচয় জানতে হবে। কেন তাদের ওপর অভিশাপ এলো এবং কেন তাদের জেরুজালেম থেকে বিতাড়িত করা হলো; সব জানতে হবে। এই শিক্ষার কোনো শেষ নেই; নতুবা ইহুদিরা ভালো মানুষরূপে প্রতিবার আমাদের ধোঁকা দিয়ে যাবে।


ইহুদি বিতর্ক নিয়ে জ্যান্টাইলদের প্রতি কিছু সতর্কবাণী

আমাদের একটি সমস্যায় প্রায়ই পড়তে হয়, যখন চিন্তা করি নন-ইহুদি সম্প্রদায়দের একত্রে কী বলে সম্বোধন করা উচিত?

জ্যান্টাইল শব্দটি এক্ষেত্রে প্রকৃত সমাধান হতে পারে না। যখন আমরা ইহুদিদের কোনো সদস্যকে উদ্দেশ্য করে মন্তব্য করি, তখন সে ভালো করেই জানে, সে একজন ইহুদি। ইহুদিদের প্রতিটি সদস্য একে অপরকে শনাক্ত করতে সক্ষম। এ কারণে যদি ইহুদিদের কোনো এক সদস্যকে উদ্দেশ্য করে কেউ সমালোচনা করে, তবে তাকে রক্ষায় পুরো জাতি ঝাঁপিয়ে পড়ে। পৃথিবীর যেখানেই ইহুদিরা অবস্থান করুক না কেন, নিজ জ্ঞাতি-ভাইদের সকল প্রয়োজনীয় তথ্য তাদের নিকট মজুদ থাকে। দূরত্ব বাড়লেও ইহুদিদের বন্ধন কখনো দুর্বল হয় না।

এ জাতীয় বৈশিষ্ট্য জ্যান্টাইলদের মাঝে পাওয়া যাবে না। পুরো বিশ্বে ইহুদিদের লক্ষ্য- উদ্দেশ্য যেমন এক ও নির্দিষ্ট, জ্যান্টাইলদের বেলায় তেমনটা নয়। এ কারণে জ্যান্টাইলদের পক্ষে একতাবদ্ধ জাতিতে পরিণত হওয়া সম্ভব নয়। জ্যান্টাইলদের রয়েছে বহু ভাষা, ধর্ম, জাতীয়তা ও সংস্কৃতি। এ কারণে প্রকৃতিগতভাবেই জ্যান্টাইলরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত, যা থেকে তাদের কোনো মুক্তি নেই।

তাদের এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ইহুদিরা হাতিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন রকমের সুবিধা, যা ইতিহাসে অসংখ্যবার প্রমাণিত হয়েছে। তারপরও জ্যান্টাইলদের মধ্যে এমন অনেকে রয়েছে, যারা এই জাতিগোষ্ঠীটির নানান অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পক্ষে সাফাই গেয়ে তাদের সকল উদ্দেশ্যের প্রতি পূর্ণ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও যাবে। এ কারণে বলতে হয়—

‘স্রষ্টা কিছু কিছু মানুষের অন্তরে সিলমোহর মেরে দিয়েছেন, যারা চোখ থাকতেও দেখে না এবং কান থাকতেও শুনতে পায় না।’

আন্তর্জাতিক বিশ্বে ইহুদিরা যে ক্ষমতার কাঠামো তৈরি করেছে, তা দেখে মনে হয়—তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে কখনোই সফল হওয়া যাবে না। খ্রিষ্টানদের অবস্থা আজ এমন, যেন ইহুদিদের পরিয়ে দেওয়া চশমা ব্যতীত বাইবেল পাঠ করা অসম্ভব। এ কারণে তারাও বিশ্বাস করে, ইহুদিরা স্রষ্টা মনোনীত সম্প্রদায় এবং একদিন তারাই বিশ্ব শাসন করবে। অন্ধের মতো বাইবেলের এমন সব ব্যাখ্যা মেনে নেওয়ার দরুন খ্রিষ্টানরা আজ ভয়ানক রকমের বিভ্রান্তিতে পড়েছে।

ইহুদিদের ‘শান্তি! শান্তি!’ নামক মিথ্যা বুলির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা ইতোমধ্যে অনেকটা সময় পার করেছি। সততা ও আদর্শ প্রতিষ্ঠার নামে তারা যা করছে, তা এককথায় ভণ্ডামি। গত কয়েক দশক ধরে Kehillah, American Jewish Committee, Anti-Defamation League-সহ বিভিন্ন সংগঠনের সাথে তাল মিলিয়ে জ্যান্টাইল সমাজ বহু লজ্জার জন্ম দিয়েছে।

বর্তমানে আমরা এমন এক যুগে বাস করছি, যেখানে বিশ্ব গণমাধ্যমের সিংহভাগ অংশ‍ই ইহুদিরা নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে চাইলেও ঘুমিয়ে থাকা জ্যান্টাইল জাতিকে জাগিয়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। যেখানে আমাদের সন্তানরা ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থায় জীবনের এক-তৃতীয়াংশ সময় পার করছে, সেখানে পরিণত বয়সে বিশেষ এই জাতিগোষ্ঠীটির বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রমের ব্যাপারে তাদের মস্তিষ্কে আমূল পরিবর্তন আনা সহজ কোনো কাজ নয়।

বলে রাখা উচিত, যেকোনো বড়ো ধরনের বিপ্লবের শুরুটা কিন্তু অল্প কিছুসংখ্যক মানুষের হাত ধরেই হয়। আমরা যদি নিয়মিত ইহুদিদের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত থাকি এবং তাদের উৎপাদিত পণ্যসমূহ (যা বিষাক্ত) বর্জনের তালিকায় নিয়ে আসি, তবেই তা জায়োনিস্টদের অন্তরে কাঁপুনি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আরও ভালো হয়, যদি আমরা পুনরায় আমাদের হারিয়ে যাওয়া নৈতিকতাকে জাগিয়ে তুলতে পারি।

আধুনিক অর্থব্যবস্থা চালু হওয়ার পূর্বে আমাদের পূর্বপুরুষগণ যেভাবে ব্যবসায়-বাণিজ্য করত, আমাদের উচিত সে প্রক্রিয়ায় ফিরে যাওয়া। ব্যবসায়ে অধিক মুনাফা উপার্জনের পরিবর্তে আমাদের উচিত, পণ্যের গুণগত মানের দিকে লক্ষ্য স্থির রাখা। তবে এটা ঠিক, ইহুদিরা কখনো হাল ছাড়বে না। তারা চারদিক দিয়ে আমাদের আক্রমণ করে যাবে এবং মনুষ্যত্বহীন জাতিতে পরিণত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।

একটা যুগ ছিল যখন ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ে মূল্য তালিকার পরিবর্তে পণ্যের গুণগত মানকে বেশি প্রধান্য দিত, সে সময়ে বাজার ছিল জ্যান্টাইলদের নিয়ন্ত্রণে। এরপর আসে ইহুদি বণিকদের যুগ, যাদের দৌড়াত্ম্যে বাজার হয়ে পড়ে একচেটিয়া।

নকল করার কাজে ইহুদিরা কতটা দক্ষ—তা ইতোমধ্যেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অসহায় ক্রেতারা না বুঝে, পণ্যের গুণগত মানের কথা না ভেবে, ঝাঁকে ঝাঁকে ইহুদি বিপণিগুলোতে হাজির হতে শুরু করে। অপরদিকে বিক্রি কমে যাওয়ার দরুন জ্যান্টাইল বণিকরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে তারাও ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়। সাধারণ মানুষ যখন বুঝতে পারে, সস্তা মূল্যে তারা যা খাচ্ছে তা কেবলই বিষ, তখন তারা পুনরায় জ্যান্টাইলদের বিপণিগুলোতে ফিরে আসতে শুরু করে। কিন্তু ততদিনে চারদিক ভেজাল পণ্যের ব্যবসায়ীতে ভরে গেছে।

ইহুদিদের ধ্বংসাত্মক আক্রমণ হতে নিজেদের রক্ষা করার আরেকটি উপায় হলো—তথাকথিত উদারপন্থি ও মুক্তচিন্তাধার নীতির নামে যে মতবাদগুলো নিয়মিত সমাজে ঢুকে পড়ছে, তা গ্রহণ করার পূর্বে এর উৎস, উদ্দেশ্য ও ইতিহাস পূর্ণরূপে অধ্যয়ন করা। আমোদ- বিনোদনের খোরাক হিসেবে যেসব চলচ্চিত্র, নাটক-থিয়েটার ও কৌতুক-অভিনয়ের পেছনে আমরা নির্বোধের মতো সময় পার করছি, বুঝতে পারছি না—এর ভেতরে কী ভয়ংকর ষড়যন্ত্র কাজ করছে। সুকৌশলে উচ্ছৃঙ্খলতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিষ আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

সংবাদপত্রে যা নিয়মিত পাঠ করছি, তার কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা, তা বোঝা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ইহুদিদের অনুমতি ছাড়া আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মীয়  পাঠ করানো যেন একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়; কীভাবে পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলো পাঠ করে ব্যাখ্যা করতে হবে, সে কায়দা-কানুনও এখন ইহুদিদের কাছে শিখতে হচ্ছে! বুঝতে পারছি না, আমাদের সন্তানরা যে সকল গল্প, কবিতা ও উপন্যাসের বই নিয়মিত পাঠ করছে, তার ছলে না জানি কোন চেতনার বিষ মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ধীরে ধীরে আমাদের প্রকৃত নেতাদের পরিচয় একেবারে ভুলতে বসেছি। আমরা একদল মানুষের অনুসরণ করতে শুরু করেছি, যারা কিনা আমাদের ভাষায় ঠিকমতো কথাও বলতে পারে না। আজ না আছে এমন কেউ, যে আমাদের সঠিক পথের নির্দেশনা দেবে, আর না আছে এমন কেউ, যে ঈশ্বরের নিকট সঠিক পথের প্রার্থনা করবে। পুরো মাঠ আজ বিরান ভূমি। সেখানে সবাই নখ-দন্তহীন অসহায় বাঘের সমতুল্য। এমতাবস্থায় আমরা যদি হিংস্র কোনো প্রাণী দ্বারা আক্রমণের স্বীকার হই, তবে আমাদের রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসবে না।

আমাদের যে পুনরায় পূর্বের সমাজব্যবস্থায় ফিরে যেতে হবে, তা এখন আর বিবেকের দাবি নয়; বরং সময়ের দাবি। এর চেয়ে আরও অধঃপতনের দিকে চলে গেলে সমাজকে আর শুধরে নেওয়া সম্ভব হবে না। আমাদের স্কুল-কলেজগুলোকে এক্ষুনি ইহুদিদের শয়তানি প্রভাব থেকে মুক্ত করতে হবে। আমাদের সন্তানদের শিক্ষা কার্যক্রম এবং সিলেবাসের ওপর ইহুদিরা যে প্রভাব বিস্তার করেছে, তা এক্ষুনি সরিয়ে দিতে হবে। আমাদের আদালত ব্যবস্থাকে তাদের থাবা থেকে সরিয়ে নিরপেক্ষরূপে গড়ে তুলতে হবে। ধর্মীয় উপাসনাগুলোতে পূর্বের পবিত্র সব রীতি পুনরায় চালু করতে হবে। মত প্রকাশের প্রকৃত স্বাধীনতা তথা প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে হবে।

১৯২২ সালের জানুয়ারিতে Atlantic Monthly পত্রিকায় নিউইয়র্কের এক রাবাইয়ের মন্তব্য প্রকাশ করা হয়। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ইহুদিরা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ঘৃণিত সম্প্রদায়। তারপরও এ জাতির সদস্য হতে পেরে তিনি ভীষণ গর্বিত। এ জাতির ওপর সহস্র বছর ধরে যে নিপীড়ন চলেছে, তার প্রধানতম কারণ হলো—জ্যান্টাইলদের অ্যান্টি-সেমিটিক মনোভাব। কিন্তু আগের অধ্যায়গুলোতে তুলে ধরা হয়েছে, কেন ইহুদিদের বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এত সব নিপীড়ন চালিয়েছে।

এতসব কিছুর পরও ইহুদিদের জন্য সম্মান উপার্জনের একটি পথ খোলা আছে। আর তা হলো—সত্য স্বীকার করা। ইহুদিদের প্রকৃত ইতিহাস; কেন সাধারণ মানুষ তাদের এত বেশি ঘৃণা করে এবং কেন তাদের এত নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছে, এসবের প্রকৃত ইতিহাস কেবল ইহুদিদের কাছ থেকেই জানা সম্ভব। আমরা তাদের ব্যাপারে যা বলি এবং যেসব তথ্য প্রকাশ করি, তার অধিকাংশই মূলত ব্যক্তিগত অনুসন্ধান এবং ঐতিহাসিক দলিলের ওপর ভিত্তি করে। আমরা ইহুদিদের সম্পর্কে জানতে যেখানে বিভিন্ন দলিলের অনুসন্ধান করি, সেখানে তারা সকল ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। সুতরাং ইহুদিদের ব্যাপারে প্রকৃত তথ্য কেবল তাদের মুখ থেকেই জানা সম্ভব। কিন্তু ইতিহাস বলে, ইহুদিরা সবচেয়ে বেশি ভয় পায় সত্যকে। তাদের ক্ষমতার ভিত্তি কেবল মিথ্যা ও ধোঁকাবাজি।

বাইবেলে ইহুদিদের সম্পর্কে হাজার বছর পূর্বে যে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, তা এখন বাস্তবায়ন হতে চলেছে। নব্য ইজরাইল প্রতিষ্ঠার পথে তারা অনেকদূর এগিয়ে গেছে। তবে এই নব্য ইজরাইল বিশ্ব মানবতার জন্য কতটা হুমকিস্বরূপ—তা দিনে দিনে আরও পরিষ্কার হয়ে উঠবে।

আলোচনার শেষাংশে বলতে চাই, যে হাজার হাজার পাঠক ও সমালোচক Dearborn Independent-এর নিকট তাদের মতামত পাঠিয়েছেন, তাদের একটি বিষয় বেশ ভালো লেগেছে, তারা কেউ-ই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম নিয়ে অপ্রীতিকর মন্তব্য করেনি। শুরুর দিকে বেশ কিছু রাবাই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম নিয়ে বহু উসকানিমূলক মন্তব্য ছড়ালেও ধীরে ধীরে নীরব হয়ে গেছে। অর্থাৎ তারা নতুন কোনো ফন্দি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

যে আলোচনার দ্বার বহুকাল মানবসমাজে রুদ্ধ অবস্থায় পড়েছিল, তা উন্মুক্ত করতে Dearborn Independent-এর যে প্রচেষ্টা, তা থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে সাধারণ মানুষ আরও বেশি মুক্ত আলোচনামুখী হয়ে উঠবে—এটাই প্রতিষ্ঠানটির প্রত্যাশা। এই আলোচনায় যুক্ত হতে হবে আন্তর্জাতিক পত্রিকা সংস্থাগুলোকে; নতুবা সাধারণ মানুষকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। মনে রাখতে হবে, সত্য যতই তিক্ত হোক না কেন, এটাই একমাত্র ওষুধ—যা পুরো মানবজাতিকে অশুভ শয়তানের বিরুদ্ধে এক করতে পারে।


মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫

হাদিসে বর্নিত নযদে অভিশপ্ত মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাবের ইসলাম নিয়ে ষড়য়ন্ত্রের ইতিহাস

হাদিসে বর্নিত নযদে অভিশপ্ত মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাবের ইসলাম নিয়ে ষড়য়ন্ত্রের ইতিহাস 

অভিশপ্ত আব্দুল ওহাব নযদি

 আরবের বিখ্যাত মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব নজদী একজন ঐতিহাসিক বিতর্কিত ব্যাক্তি । তিনি ১১১৫ হিজরীতে (১৭০৩ খ্রীষ্টাব্দ) আরবের উয়াইনা অঞ্চলে বনু তামিম গোত্রের একটি শাখা বনু সিনান বংশে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি দুজন শিক্ষকের নিকট শিক্ষালাভ করেন । মদীনায় সুলাইমান আল কুর্দী ও মুহাম্মাদ হায়াত আল সিন্ধীর নিকট শিক্ষালাভ করেন । কিন্তু তাঁর দুজন শিক্ষকই ধর্মবিরোধী মনোভাবের জন্য তাঁকে দোষারোপ করেন । তাঁর জীবনের অধীকাংশ সময় দেশ ভ্রমনে অতিবাহিত হয়েছে । জাস্টিস আব্দুল মওদুদ লিখেছেন,

“প্রথমে তিনি চার বছর বসরার কাযী হুসেনের বাটিতে গৃহশিক্ষক ছিলেন । পরে পাঁচ বছর তিনি বাগদাদে বসবাস করেন এবং সেখানের জনৈকা ধনবতী বিধবাকে শাদী করেন । এ স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি পুনরায় পথে বের হন এবং এক বছর কুর্দিস্তান ও দু’বছর হামাদানে অবস্থান করার পর ইসপাহানে উপস্থিত হন । তখন নাদির শাহের শাসন শুরু হয়েছে (১১৪৮ হিঃ, ১৭৩৬ খ্রীঃ) । এখানে তিনি চার বছর অবস্থান করেন এবং এরিস্টটলের দর্শন ও সুফিতত্ত্বে উচ্চজ্ঞান লাভ করেন । এক বছর তিনি সুফি-মতবাদে বহু ছাত্রকে শিক্ষাদান করেন । পরে কুম শহরে গমন করেন এবং হামবলী মযহাবের একজন গোঁড়া সমর্থক হন । শেষে তিনি জন্মভূমিতে প্রত্যাগমন করেন এবং প্রকাশ্যে নিজের মতবাদ প্রচার করতে থাকেন । ‘কিতাব অল-তওহীদে’ তাঁর বিষেশ মতামতগুলি বিধৃত আছে । তাঁর অনুগামীদের দল বর্ধিত হলেও তাঁর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন আরম্ভ হয় । এমনকি তাঁর সহোদর ভ্রাতা সুলায়মান তাঁকে আক্রমন করে একটি পুস্তিকা প্রচার করেন । তাঁকে কেন্দ্র করে বিবাদ ও রক্তপাত হওয়ায় স্থানীয় শাসক তাঁকে বহিস্কার করেন । তখন তিনি সপরিবারে দারিয়াপল্লীতে উপস্থিত হন । দারিয়ার আমীর মুহম্মাদ ইবনে সউদ তাঁকে আদরের সংগে গ্রহণ করেন ও তাঁর নিকট দীক্ষা নিয়ে তাঁর মতবাদ প্রচারে উৎসাহী হয়ে উঠেন ।” (ওহাবী আন্দোলন, পৃষ্ঠা-৭৬/৭৭)।

জাস্টিস আব্দুল মওদুদ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাবের রাজনৈতিক ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন,

“শীঘ্রই আবদুল ওহহাবের প্রচারণা রাজনৈতিক রুপ গ্রহণ করে এবং রাষ্ট্রীয় অগ্রগতি ইসলামের প্রথম যুগে রাজ্য-বিস্তৃতির মতোই বিস্ময়কর হয়ে উঠে । ইবনে সউদের নেতৃত্বে একটা শক্তিশালী আরব লিগ গঠিত হয়, এবং দারিয়াকে কেন্দ্র করে সউদী অধীকার বর্ধিত হতে থাকে । ‘কিতাব অল তওহীদের’ শিক্ষাদানের সংগে আগ্নেয়াস্ত্রের শিক্ষাদানও চলতে থাকে । ফলে রিয়াদের শেখের সংগে ১৭৪৭ সালে সংঘর্ষ উপস্থিত হয় । এ সংঘর্ষ চলে প্রায় আট বছর ধরে এবং ইবনে সউদ ও তাঁর মৃত্যুর পর (১৭৬৫ খ্রীঃ) তাঁর সুযোগ্য পুত্র আবদুল আযীয ইঞ্চি ইঞ্চি করে রিয়াদ অধিকার করেন । ১৭৬৬ সালে আবদুল ওহহাব মক্কার শরীফের নিকট একজন প্রতিনিধি প্রেরণ করে নিজের মতবাদ গ্রহণ করতে আহ্বান করেন । মক্কার শরীফ আবদুল ওহহাবের মতবাদ ইমাম হামবলের মযহাব অনুযায়ী বিবেচনা করে সেসব শ্রদ্ধার সংগে প্রচারের নির্দেশ দেন । কিন্তু ১৭৭৩ সালে রিয়াদের শাসক দাহহাম আবদুল ওহহাবের তীব্র বিরোধীতা করেন, কিন্তু আবদুল আজীজের নিকট পরাজিত হয়ে পলায়ন করেন । দলে দলে বেদুইনরা আবদুল ওহহাবের পতাকাতলে সমবেত হতে থাকে এবং যুদ্ধের পর যুদ্ধে তাঁর শিরেই বিজয়মাল্য শোভিত হয় । উত্তরে কাসিম থেকে দক্ষিণে খরজ পর্যন্ত সমগ্র নেজদ ভূমিতে আবদুল আজীজের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করে আবদুল ওহহাব ১৭৮৭ খ্রীষ্টাব্দে জান্নাতবাসী হন ।” (ওহাবী আন্দোলন, পৃষ্ঠা-৭৭)।

জাস্টিস আব্দুল মওদুদ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাবের রাজনৈতিক ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন,

“শীঘ্রই আবদুল ওহহাবের প্রচারণা রাজনৈতিক রুপ গ্রহণ করে এবং রাষ্ট্রীয় অগ্রগতি ইসলামের প্রথম যুগে রাজ্য-বিস্তৃতির মতোই বিস্ময়কর হয়ে উঠে । ইবনে সউদের নেতৃত্বে একটা শক্তিশালী আরব লিগ গঠিত হয়, এবং দারিয়াকে কেন্দ্র করে সউদী অধীকার বর্ধিত হতে থাকে । ‘কিতাব অল তওহীদের’ শিক্ষাদানের সংগে আগ্নেয়াস্ত্রের শিক্ষাদানও চলতে থাকে । ফলে রিয়াদের শেখের সংগে ১৭৪৭ সালে সংঘর্ষ উপস্থিত হয় । এ সংঘর্ষ চলে প্রায় আট বছর ধরে এবং ইবনে সউদ ও তাঁর মৃত্যুর পর (১৭৬৫ খ্রীঃ) তাঁর সুযোগ্য পুত্র আবদুল আযীয ইঞ্চি ইঞ্চি করে রিয়াদ অধিকার করেন । ১৭৬৬ সালে আবদুল ওহহাব মক্কার শরীফের নিকট একজন প্রতিনিধি প্রেরণ করে নিজের মতবাদ গ্রহণ করতে আহ্বান করেন । মক্কার শরীফ আবদুল ওহহাবের মতবাদ ইমাম হামবলের মযহাব অনুযায়ী বিবেচনা করে সেসব শ্রদ্ধার সংগে প্রচারের নির্দেশ দেন । কিন্তু ১৭৭৩ সালে রিয়াদের শাসক দাহহাম আবদুল ওহহাবের তীব্র বিরোধীতা করেন, কিন্তু আবদুল আজীজের নিকট পরাজিত হয়ে পলায়ন করেন । দলে দলে বেদুইনরা আবদুল ওহহাবের পতাকাতলে সমবেত হতে থাকে এবং যুদ্ধের পর যুদ্ধে তাঁর শিরেই বিজয়মাল্য শোভিত হয় । উত্তরে কাসিম থেকে দক্ষিণে খরজ পর্যন্ত সমগ্র নেজদ ভূমিতে আবদুল আজীজের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করে আবদুল ওহহাব ১৭৮৭ খ্রীষ্টাব্দে জান্নাতবাসী হন ।” (ওহাবী আন্দোলন, পৃষ্ঠা-৭৭)

পরবর্তীকালে আব্দুল আজীজ ও তাঁর পুত্র সউদ বিন আব্দুল আজীজ বীর বিক্রমে অভিযান চালাতে থাকেন । ১৭৯১ খ্রীষ্টাব্দে মক্কায় হামলা চালানো হয় এবং ইরাকের বিভিন্ন স্থানে বারংবার অভিযান চালাতে থাকেন । এই নতুন শক্তির অভ্যত্থানে আতঙ্কিত হয়ে তুর্কী সুলতান বাগদাদের পাশাকে নির্দেশ দেন যে এই নবজাগ্রত শক্তিতে প্রশ্রয় না দিয়ে অচিরেই ধ্বংশ করে দিতে । কিন্তু ১৭৯৭ খ্রীষ্টাব্দে সউদ বিন আব্দুল আজীজ বাগদাদের পাশাকে বিশেষভাবে লাঞ্ছিত করেন এবং এশিয়ার অধিনস্ত সমগ্র তুর্কী অধিগ্রহণ করে নেন । ১৮০৩ খ্রীষ্টাব্দে গালিব পাশা মক্কা থেকে বিতাড়িত হন এবং সউদ বিন আব্দুল আজীজ সেখানে তাঁর অনুচরদের নিয়ে মক্কায় প্রবেশ করেন । কিন্তু সউদ বিন আব্দুল আজীজ সাময়িকভাবে সেখান থেকে বহিস্কৃত হন, কিন্তু তিনি ১৮০৪ সালে পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করে হেজাজে আক্রমণ করেন এবং মদিনা দখল করেন । পরে ১৮০৬ খ্রীষ্টাব্দে মক্কা ও তারও কিছুদিন পর জেদ্দা সম্পূর্ণভাবে দখল করে নেন । ১৮০১ খ্রীষ্টাব্দে সউদ বিন আব্দুল আজীজের বাহিনী ইসলাম ধর্মকে তার বিভিন্ন সুফি মতবাদ ও বিভিন্ন নিত্যনতুন মনগড়া কুপ্রথা আবিস্কারের (বিদআত) হাত থেকে রক্ষা করার আদর্শ নিয়ে কারবালা এলাকায় তাণ্ডব চালায় । এভাবে পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে সমগ্র জাজিরাতুল আরব ওহাবীরা সম্পূর্ণভাবে দখল করে নেয় । এই প্রসঙ্গে জাস্টিস আব্দুল মওদুদ লিখেছেন,“১৮১১ সালে ওহাবী সাম্রাজ্য উত্তরে আলেপ্পা থেকে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত এবং পারস্য উপসাগর ও ইরাক সীমান্তের পরবর্তী পূর্বে লোহিত সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।” (ওহাবী আন্দোলন, পৃষ্ঠা-৭৮)

সমগ্র ইসলাম জগত সউদ বিন আব্দুল আজীজের বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন চালাতে থাকে এবং তুর্কীরা ও তাদের ইউরোপীয় বন্ধুরা সহযোগিতা করে । এই আন্দোলন তুর্কী সাম্রাজ্যের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক পরিলক্ষিত হয় । চারিদিকে প্রচার করা হয়েছিল, মুসলিম বিশ্বের মূল কেন্দ্র মক্কা ও মদিনা শহর দুটিতে ওহাবী মতবাদ গ্রহণ করতে যারা অস্বীকার করে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করে । এরা কুরআন-সুন্নত জীবিত করার নাম করে আলেম-উলামা ও সাধারণ মুসলমান যাঁরা তাঁদের মতবাদ মানে না তাঁদের মুশরিক ও কাফের বলতে শুরু করে । এরা তাঁদের হত্যা করে মুসলমানের রক্তে হোলী খেলার আনন্দে মেতে উঠে । ১২২১ হিজরী সনে রোম সম্রাটের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে রাজ্য লিপ্সায় মত্ত হয়ে এই ওহাবী দল মক্কা ও মদিনায় বিদ্রোহ ঘোষনা করে ।  সুন্নতের ধ্বজাধারী এই দলটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে পবিত্র হারামাইন শরীফাইন অর্থাৎ মক্কা ও মদিনা এবং হারামের বাসিন্দাদের উপর অকথ্য আক্রমণ এবং তাণ্ডবলীলা চালায় । ওলী-আউলিয়া এমনকি সাহাবায়ে কেরামদের মাযারগুলি পর্যন্ত ধুলিস্যাৎ করে দেয় । মাযহাব মান্যকারী মুসলমান ও আলেম-উলামাদেরকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে এবং তাঁদের মাল ও আসবাবপত্র লুঠতরাজ করে নেয় । তাদের মাল ও আসবাবপত্র লুন্ঠন করাকে হালাল বলে ফতোয়া দেয় । এমনকি ওহাবীদের হাত থেকে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর রওজা-মুবারকও রেহাই পায়নি । আরবের যেসব মসজিদে কারুকাজ করা ছিল ও যেসব শোভা বর্ধনকারী বহুমূল্য জিনিস ছিল সেগুলিও ওহাবীরা বিলুপ্ত ও লুন্ঠন করেছিল । বিভিন্ন দেশ থেকে মুসলিম সুলতান, বাদশাহ ও ভক্তবৃন্দরা দীর্ঘ এগারো শতাব্দী ধরে স্বদেশের জন্য ভক্তির নিদর্শনস্বরুপ যেসব বহুমূল্য ও দুস্প্রাব্য উপহার পাঠিয়েছিলেন সেসমস্তও মরুবাসী বেদুইন ওহাবীরা লুন্ঠিত ও কুক্ষিগত করেছিল ।

W.W. Hunter লিখেছেন,

“তুর্কী জাতি তাহাদের পূর্বতন গুণাবলী বর্জিত হইয়া বিলাস ব্যাসনের মধ্যে হাবুডুবু খাইয়া ঘৃণ্য প্রবৃত্তি পরায়ন হইয়াছিল । এমন কি তাঁহাদের মধ্যে যাঁহারা পবিত্রভূমি মক্কা-মদিনায় আগমন করিত তাহাদেরও অনেকেই নিন্দনীয় আচরন দ্বারা পবিত্রভূমিকে কলুষিত করিতে দ্বিধাবোধ করে নাই । একাধিক স্ত্রী বিদ্যমান থাকা সত্বেও তাহাদের অনেকে চরিত্রহীনা নারীদের সংস্পর্শে আসিত, পবিত্র হজব্রত পালনের জন্য মক্কাধামে গমনকালেও তাহাদের অনেকে চরিত্রহীনা নারী সঙ্গে রাখিত এবং মাদকদ্রব্য সঙ্গে লইত এবং উহা সেবন করিয়া পবিত্রভূমিকে অপবিত্র রাখিত ।” (The Indian Musalman, অনুবাদ-মাওলানা আহমদ আলী)

তুর্কী জাতির এইসব কুকর্ম দেখেই ওহাবীরা উপরিউক্ত কুকর্ম করতে বাধ্য হয়েছিল । তবে উইলিয়াম হান্টার যেসব তথ্য তুর্কী জাতি সম্পর্কে পরিবেশন করেছেন তাতে ঐতিহাসিক বিতর্ক রয়েছে । তবে যাই হোক ওহাবীদের কর্মকাণ্ড সমগ্র মুসলিম জগতে দারুনভাবে মহাপাপ হিসেবে গণ্য হতে থাকে । মুসলিম জাহান ওহাবীদের বিরুদ্ধে রোষ ও ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হয়ে আতঙ্কিত হয়ে উঠে এবং তুর্কীর সুলতান কাবা শরীফ ও মক্কা মদিনা শরীফ ওহাবীদের হাত থেকে রক্ষা করার মানসে ও ওহাবীদের ধ্বংস করার জন্য এগিয়ে আসেন । তাতে সমগ্র মুসলিম জগৎ তুর্কী সুলতানের পক্ষপাত অবলম্বন করেন । এখানে উল্লেখ্য যে, উইলিয়াম হান্টার সাহেব তাঁর গ্রন্থে তুর্কী জাতি সম্পর্কে যে তথ্য পরিবেশন করেছেন তা যদি সত্য হত তাহলে সমগ্র মুসলিম জাহান তুর্কী সুলতানের পক্ষপাত অবলম্বন করে “ওহাবীদলনে’ এগিয়ে আসতেন না । কেননা, হান্টার সাহেবের থেকে তৎকালীন যুগের মুসলমানরাই তুর্কী জাতি সম্পর্কে বেশী অবগত ছিলেন । যাইহোক মিশরের পাশা মুহাম্মাদ আলী পাশাকে ‘ওহাবী’ ধ্বংসের দায়িত্ব অর্পন করা হয় । তিনি তাঁর পুত্র তুসুনকে ইউরোপীয় প্রণালীতে সুশিক্ষিত সৈন্য হেজাজ অধিকার করতে পাঠান । ফলে মুহাম্মাদ আলী পাশার পুত্র তুসুন তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে ১৮১২ খ্রীষ্টাব্দে মদিনা ও ১৮১৩ খ্রীষ্টাব্দে মক্কা দখল করেন এবং মুহাম্মাদ আলী পাশা স্বয়ং ১৮১৩ খ্রীষ্টাব্দে মিশরবাহিনীর অধিনায়কত্ব গ্রহণ করেন । ফলে ওহাবী বাহিনীর নেতা সউদ বিন আব্দুল আজীজ ১৮১৪ খ্রীষ্টাব্দে ১লা মে ইন্তেকাল করেন । সউদ বিন আব্দুল আজীজের পুত্র আব্দুল্লাহ বিন সউদ ততো সাহসী ও বীর ছিলেন না । তিনি অটোমান সুলতানের বশ্যতা স্বীকার করবেন ও মিশরবাহিনী নজদ ত্যাগ করে চলে যাবে এই শর্তে তুসুনের সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করেন । কিন্তু মুহাম্মাদ আলী পাশা এই সন্ধি ভঙ্গ করে ইবরাহীম পাশাকে পুনরায় ১৮১৫ খ্রীষ্টাব্দে ভয়াবহ যুদ্ধের পর মে মাসে রাজধানী দারিয়ায় উপস্থিত হন এবং সেপ্টেম্বর মাসে ওহাবীদের রাজধানী দারিয়া সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেন । আব্দুল্লাহ বিন সউদকে বন্দী করে কনস্টান্টিনোপলে নিয়ে যাওয়া হয় । জাস্টিস আব্দুল মওদুদের ভাষায় –

“আরব মরিচিকার মতোই সহসা চক্ষু ঝলসিয়ে দিয়ে ‘ওহাবীদের’ বিশাল সাম্রাজ্য ও ক্ষাত্র শক্তি কোথায় মিলিয়ে গেল – তার কোনও অস্তিত্বই রইল না ।” (ওহাবী আন্দোলন, পৃষ্ঠা-৭৮)

তবে ঐতিহাসিক Philip K. Hitti লিখেছেন,“ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও ওয়াহাবীদের মতবাদ প্রসার লাভ করতে থাকে। পূর্বে সুমাত্র থেকে পশ্চিমে নাইজেরিয়ে পর্যন্ত এই মতবাদের প্রভাব দেখা যায় ।” (History of the Arabs, Page-834)

১৮৩৩ খ্রীষ্টাব্দের শুরুর দিকে ওহাবীরা পুনরায় নতুন করে ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের প্রয়াস করে । তাও ছিল খুব স্বল্প সময়ের জন্য । পরবর্তীকালে ওহাবী রাষ্ট্র ও বংশের পুনরুদ্ধারকারী আব্দুল আজীজ বিন সুয়ুদ-এর উত্থান হয় । প্রথম জীবনে তিনি কুয়েতে নির্বাসিত ছিলেন । বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে হেইলের ইবনে রশীদ পরিবার এবং মক্কার বাদশাহ শরীফ হোসেনের পরিবারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে পারস্য উপসাগর থেকে লোহিত সাগর পর্যন্ত তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তার করেন । ১৯১৬ খ্রীষ্টাব্দে মক্কার বাদশাহ শরীফ হোসেন ব্রিটিশদের সমর্থন পেয়ে নিজেকে ‘আরবের রাজা’ বলে ঘোষনা করেন এবং ১৯২৪ খ্রীষ্টাব্দে ‘আমীরুল মোমেনীন’ (মোমীন মুসলমাদের খলিফা) আখ্যা পান । আব্দুল আজীজ ১৯২১ খ্রীষ্টাব্দে রশীদ পরিবারের অবসান ঘটান এবং ১৯২৪ খ্রীষ্টাব্দে মক্কা দখল করেন ও ১৯২৫ খ্রীষ্টাব্দে মদিনা ও হেজাজ দখল করেন । ১৯৩২ খ্রীষ্টাব্দে তিনি সুয়ুদ আরবীয় সাম্রাজ্য গঠন করেন যার অধিশ্বর ছিলেন তিনি নিজেই ।

ওহাবীদের আকিদা ও ধ্যানধারণা

জাস্টিস আব্দুল মওদুদ লিখেছেন,“আবদুল ওহহাবের ধর্মীয় শিক্ষা ও মতবাদের আলোচনায় প্রথমেই বলে রাখা ভাল, আরবদেশে ‘ওহাবী’ নামাংকিত কোনও মযহাব বা তরিকার অস্তিত্ব নেই । এ সংজ্ঞাটির প্রচলন আরব দেশের বাইরে এবং মতানুসারীদের বিদেশী দুশমন, বিশেষত তুর্কীদের ও ইউরোপীয়দের দ্বারা ‘ওহাবী’ কথাটির সৃষ্টি এবং তাদের মধ্যেই প্রচলিত । কোনও কোনও ইউরোপীয় লেখক, যেমন নীবর (Neibuhr) আবদুল ওহহাবকে পয়গম্বর বলেছেন । এসব উদ্ভট চিন্তার কোন যুক্তি নেই । প্রকৃতপক্ষে আবদুল ওহহাব কোনও মযহাব সৃষ্টি করেন নি, চার ইমামের অন্যতম ইমাম হামবলের মতানুসারী ছিলেন তিনি, এবং তাঁর প্রযত্ন ছিল বিশ্বনবী ও খুলাফায়ে রাশেদীনের আমলে ইসলামের যে রুপ ছিল, সেই আদিম সহজ সরল ইসলামে প্রত্যাবর্তন করা ।” (ওহাবী আন্দোলন, পৃষ্ঠা-৭৯)

এখানে জাস্টিস আব্দুল মওদুদের বক্তব্যের উপর ঐতিহাসিক বিতর্ক আছে । একথা অবশ্যই ঠিক যে ‘ওহাবী’ কথাটি মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাবের শত্রু দ্বারা প্রচারিত । কিন্তু “তার প্রযত্ন ছিল বিশ্বনবী ও খুলাফায়ে রাশেদীনের আমলে ইসলামের যে রুপ ছিল, সেই আদিম সহজ সরল ইসলামে প্রত্যাবর্তন করা ।” এ নিয়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক মহলে ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের আলেম উলামারা একমত নন । যেমন শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা হোসেন আহমদ মাদানী (রহঃ) ওহাবী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে লিখেছেন,

“মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব নজদী ১৩ শতাব্দীর প্রথম দিকে আরবের নজদ নামক স্থান হতে প্রকাশ হয়েছে । যেহেতু তার বদ আকিদাহ-ভ্রান্ত ধারণা ছিল । এই কারণেই সে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের সঙ্গে হত্যাকাণ্ড করেছিল । আহলে সুন্নতকে জোরপূর্বক তাঁর মতাবলম্বী করতে চেয়েছিল । সুন্নীদের সম্পদ জোরপূর্বক নেওয়া হালাল ধারণা করত । ওতের কতল (হত্যা) করা সওয়াবের কাজ মনে করত । আরববাসীকে বিশেষ করে মক্কা ও মদিনাবাসিকে অত্যান্ত নির্যাতন করেছিল । পুর্ব্বর্তী বুযুর্গদের সম্পর্কে অত্যান্ত খারাপ ভাষা প্রয়োগ করেছিল । তাঁর কঠিন অতাচারে বহু মানুষ পবিত্র মক্কা ও মদিনা শরীফ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। হাজার হাজার মানুষ তাঁর এবং তাঁর সৈনিকদের হাতে শহীদ হয়েছিল । মোট কথা, তিনি একজন অত্যাচারী, বিদ্রোহী, রক্তপিপাসু ও ফাসেক মানুষ ছিলেন। মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাবের ধারণা ছিল যে, সমস্ত মুসলমান মুশরিক ও কাফের । তাদের হত্যা করা এবং তাদের সম্পদ লুঠ করে নেওয়া হালাল-জায়েজ এবং ওয়াজীব । – আজও নজদী ও তার অনুসারীদের এই ধারণা রয়েছে যে, নবীগণ যতদিন পৃথিবীতে ছিলেন, ততদিন হায়াতে ছিলেন মাত্র । ইন্তেকালের পর তাদের অবস্থা এবং সাধারণ মানুষের অবস্থা ছিল সমান । হুজুর (সাঃ) এর রওজা মুবারক জিয়ারত করতে যাওয়া তারা বিদআত, হারাম ইত্যাদি বলে থাকে । জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা নাজায়েজ মনে করে । এমনকি হুজুরের রওজা জিয়ারত করবার জন্য সফর করা ব্যাভিচারের সমপর্যায় বলে । তারা যদি মসজিদে নববীতে যেত তাহলে আল্লাহর রাসুলের প্রতি দরুদ সালাম পাঠ করত না । এমনকি রওজা পাকের দিকে তাকিয়ে দোয়া করত না । জিয়ারত সম্পর্কে যে সমস্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তারা সেগুলিকে মিথ্যা বলত । তারা হুজুর (সাঃ) এর শাফায়াত অস্বীকার করে থাকে । তারা রাসুলে পাককে নিজেদের ন্যায় ধারণা করে থাকে । আরও বলে থাকে যে, আমাদের প্রতি আল্লাহর রাসুলের কোন অধিকার নাই । আমাদের প্রতি তাঁর অবদান নেই । তাঁর ইন্তেকালের পরে তাঁর দ্বারা আমাদের কোন উপকার হয় নাই । এই কারণে হুজুরের ওসীলা দিয়ে দোওয়া চাওয়া নাজায়েজ বলে থাকে । তারা বলে থাকে যে, আল্লাহর রাসুল অপেক্ষা আমাদের হাতের লাঠি বেশী সাহায্যকারী । আমরা লাঠি দ্বারা কুকুর তাড়াতে পারি । নবীর দ্বারা এতটুকুও সাহায্য পাই না । তাদের ধারণায় ইলমে মারেফত, আউলিয়া কেরামদের মুরাকাবা ইত্যাদি বিদআত ও গুমরাহী এবং আউলিয়া কেরামদের কার্যকলাপ শিরক বলে থাকে । চার ইমাম এবং তাদের অনুসরণকারীদের প্রতি অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করে থাকে । হুজুর (সাঃ) এর প্রতি বেশী দরুদ সালাম পাঠ করা ভীষন অপছন্দ করে থাকে ।” (আশশিহাবুস সাকিব, পৃষ্ঠা-৪২/৬৬)

‘ফতোয়ায়ে শামী’ গ্রন্থের রচয়িতা আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (রহঃ) লিখেছেন,“যেমন আমাদের কালে একটা ঘটনা ঘটেছে, আব্দুল ওহাব নজদীর অনুগামীরা নজদ থেকে বিদ্রোহ ঘোষণা করে পবিত্র মক্কা মদিনার হারাম শরিফে আক্রমণ চালায়। তারা মুখে নিজেদেরকে হাম্বলী বলে পরিচয় দেয়, কিন্তু তাদের বিশ্বাস তারাই শুধু (বিশ্ব মাঝে) মুসলমান, আর যারা তাদের অনুগামী নয় তারা সকলেই মুশরিক । এই বিশ্বাস বশতঃ আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের লোকজনকে ও উলামাদেরকে হত্যা করা হালাল মনে করত । অতঃপর এমন দিন আসল, আল্লাহ তায়ালা তাদের এই উদ্ধত্য ক্ষমতা চুর্ণ বিচুর্ণ করে দিলেন । তাদের জনপদ ধ্বংস করে দিলেন । মুসলমান সৈন্যগণ তাদের ধ্বংস করে ১২৩৩ হিজরী সনে পুনরায় জয়লাভ করলেন ।” (ফতোয়ায়ে শামী, বাবুল লোগাত, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৩৭)।

জাস্টিস আব্দুল মওদুদ তাঁর গ্রন্থে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহা নজদীর শিক্ষাসমূহ তাঁর লেখা ‘কিতাবুত তাওহীদ’ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন,

“(১) আল্লাহ ব্যাতিত অন্য কারও ইবাদত বা আরাধনা পাপ এবং যারাই অন্য কারো উপাসনা করে, তারা বধার্হ ।

(২) অধিকাংশ মানুষই তওহীদ বা একেশ্বরবাদী নয়, তারা ওলী বা সন্তদের মাযারে গমন করে ও আশীষ প্রার্থনা করে; তাদের এসব আচার কুরআনে বর্ণিত ‘মক্কার মুশরেকীন’দের অনুরুপ ।

(৩) ইবাদতকালে নবী, ওলী, ফেরেশতাদের নাম গ্রহণ করা ‘শিরক’ বা বহু দেবার্চনার মতোই নিন্দনীয় ।

(৪) আল্লাহ ব্যাতিত অন্য কারও মধ্যবর্তিতার আশ্রয় গ্রহণ করা শিরক মাত্র ।

(৫) আল্লাহ ব্যাতিত অন্য কারও নিকট উৎসর্গ বা মানত করা শিরক মাত্র ।

(৬) কুরআন, হাদীস এবং যুক্তির সহজ ও অবশ্যম্ভাবী নির্দেশ ব্যাতিত অন্য জ্ঞানের আশ্রয় করা কুফর বা অবিশ্বাস মাত্র ।

(৭) কদর বা আল্লাহর অমোঘ বিধানে সন্দেহ প্রকাশ বা অবিশ্বাস করা ধর্মদ্রোহীতা (ইলহাদ) ।

(৮) কুরআনের ‘তা’বিল বা উপাদানগত ব্যাখ্যাদান ধর্মবিরুদ্ধতা ।

ইবনে হামবল থেকে আবদুল ওহহাবের বিরুদ্ধ মতামত নিম্নলিখিত বিষয়ে সুস্পষ্টঃ

(১) জামাতে সালাত আদায় অবশ্যকর্তব্য ।

(২) তাকাব সেবন নিশিদ্ধ এবং এরুপ অপরাধে চল্লিশের অনধিক বেত্রদণ্ড যথেষ্ট । দাড়ী কামানো ও গালি দেওয়ার শাস্তি কাযীর ইচ্ছানুযায়ী ।

(৩) অপ্রকাশ্য মুনাফার, যেমন ব্যাবসায়িক মুনাফার উপর যাকাত দিতে হবে । ইমাম হামবল মাত্র প্রকাশ্য আয়ের উপর যাকাত দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন ।

(৪) কেবলমাত্র কলেমার উচ্চারণই মোমেন বা বিশ্বাসী হওয়ার পক্ষে যথেষ্ট নয়, যাতে তার জবেহ করা জীব হালাল হতে পারে । তার চরিত্র নিখুঁত কিনা, তারও অনুসন্ধান করা উচিত ।

এছাড়াও মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব নজদীর অনুসারীরা মালার ন্যায় তসবীহ গণনা করাকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন, কারণ তাঁরা মনে করেন এই আচরণটি বৌদ্ধদের নিকট থেকে নেওয়া । তাঁরা মনে করেন, তসবীহ বদলে আঙ্গুলের গিঁঠে গিঁঠে আল্লাহর নাম গণনা করা উচিৎ । তাঁরা মসজিদে, মাজারে যেসব নক্সার কাজ করা ছিল তা সবকিছুই তুলে ফেলে দেন । তুর্কীরা যেসব মিনার নির্মান করেন তাও ওহাবীরা ধ্বংস করে দেন । তার পরিবর্তে সাধারণ ও অলঙ্কারশূন্য মসজিদ নির্মান করেন । তবে যাইহোক ওহাবী নেতা মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব নজদীর ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপে তৎকালীন যুগের সমগ্র মুসলিম জাহান ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল তার বর্ণনা এর আগে করা হয়েছে ।

নজদী ওহাবী সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ভবিষ্যৎবাণী

হযরত রাসুলে কারীম (সাঃ) এর একটা ভবিষ্যৎবাণী সহীহ বুখারী শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে । ঐ ভবিষ্যৎবাণীটি হুজুর (সাঃ) এর জ্বলন্ত মু’জিজা ছিল । যা ১২০০ বছর পর প্রকাশ পেয়েছিল ।হাদীসটি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত নবী কারীম (সাঃ) বলেছেন, হে আল্লাহ! আমাদের শামে, আমাদের ইয়ামানে বরকত দান করুন । উপস্থিত লোকেদের কেউ বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের ‘নজদের’ জন্যও দোয়া করুন । বললেন, হে আল্লাহ! আমাদের শামে, আমাদের ইয়ামানে বরকত দান করুন । পুনরায় উপস্থিত লোকেরা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের ‘নজদের’ জন্যও দোয়া করুন । আমার মনে হয় তৃতীয়বার তিনি বললেন, সেখানে তো ভূমিকম্প, ফিৎনা এবং শয়তানের সিং উদিত হবে । (বুখারী শরীফ, পৃষ্ঠা-১০৪৭, অনুবাদ-শায়খুল হাদীস মাওলানা মুহাম্মাদ আজীজুল হক সাহেব, হাদীস নং-৬৬১৩)।

এই পবিত্র বাণী হুজুর (সাঃ) এর মৃত্যুর বারো শত (১২০০) বছর পর অক্ষরে অক্ষরে প্রতিফলিত হয় । যখন আরবের নজদ এলাকায় মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব নজদীর জন্ম হয় । রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর পবিত্র ভবিষ্যৎবাণীতে নজদ নামক স্থানের জন্য বলেছিলেন “সেখানে তো ভূমিকম্প, ফিৎনা এবং শয়তানের সিং উদিত হবে” আর এই ‘নজদ’ এলাকাতেই মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব নজদী ১১১৫ হিজরী (১৭০৩ খ্রীষ্টাব্দ) জন্মগ্রহণ করেন এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ভবিষ্যৎবাণী অলৌকিকভাবে বাস্তবায়িত হয় । আর এই মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব নজদী কিভাবে ইসলাম ধর্মের সরলতা ও স্বাধীনতার নাম করে, কুরআন সুন্নত জীবিত করার নাম করে মুসলিম উম্মাহকে ধোকা দিয়ে মক্কা ও মদিনা সহ আরববিশ্বে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছিল তা এর আগে মুসলিম বুদ্ধিজীবি ও নিরপেক্ষ ঐতিহাসিকদের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে ।”হাদীস শরীফে আরও বর্ণিত আছে, হযরত আবু সায়ীদ খুদরী (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, আমরা হুজুর (সাঃ) এর খিদমতে উপস্থিত ছিলাম । হুজুর গণীমতের লাম বন্টন করছিলেন । এমতাবস্থায় বনু তামিম বংশের ‘জুল খুরাই সারাহ’ নামক এক ব্যাক্তি এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ, ইনসাফ করে কাজ করুন । হুজুর (সাঃ) বললেন, তোমার সাহস দেখে দুঃখ হচ্ছে । যদি আমি ইনসাফ না করি, তাহলে ইনসাফ কে করবে? যদি আমি ইনসাফ না করতাম, তাহলে তুমি ধ্বংস হয়ে যেতে । হযরত ওমর (রাঃ) বলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ, আপনি অনুমতি দিন । আমি ওকে কতল করে দেব । হুজুর বললেন, ওকে ছেড়ে দাও । ওর অনেক সঙ্গী রয়েছে । তাদের নামায ও রোযা দেখে তোমাদের নামায ও রোযাকে তুচ্ছ মনে করবে । তারা কুরআন পাঠ করবে । কুরআন তাদের গলদেশের নিচে নামবে না । তারা ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে, যেমন তীর শিকারকে ভেদ করে বের হয়ে যায় । (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)”।

এই ঘটনাটি অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, এক ব্যাক্তি এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! খোদাকে ভয় কর । হুজুর বললেন, যদি আমি আল্লাহর অবাধ্য হই, তাহলে খোদার অনুগত কে হবে ? আল্লাহ পাক জগৎবাসীর জন্য আমাকে আমীন করে প্রেরণ করেছেন । কিন্তু তুমি আমাকে আমী বলে স্বীকার কর না । জনৈক সাহাবী তাকে কতল করার অনুমতি চাইলে হুজুর নিষেধ করলেন । যখন সে চলে গেল, তখন হুজুর (সাঃ) বললেন, তার বংশ থেকে একটি জামাআত বের হবে, যারা কুরআন পাঠ করবে। কিন্তু কুরআন তাদের গলদেশের নিচে নামবে না । তারা ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে যেমন তীর শিকারকে ভেদ করে বের হয়ে যায় । তারা মুসলমানদেরকে হত্যা করবে এবং প্রতিমাপূজকদের ছেড়ে দেবে । (মিশকাত শরীফ)

উপরিউক্ত হাদীস শরীফে ‘জুল খুরাই সারাহ’ নামক ব্যাক্তি সম্পর্কে হাদীসে এও বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বলেছিল, “ইয়া রাসুলুল্লাহ! ইনসাফ করে কাজ করুন” সেই লোকটি বনু তামিম বংশের লোক ছিল । যার জন্য রাসুলুল্লাহ (সাঃ) উপরিউক্ত হাদীসে বলেছেন, তার বংশ থেকে একটি জামাআত বের হবে এবং সেই দল মুসলমানদেরকে হত্যা করবে এবং প্রতিমাপূজকদের ছেড়ে দেবে । আর এর আগে বর্ণনা করা হয়েছে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব নজদী ছিলেন বনু তামিম বংশের মানুষ । যিনি আরববিশ্বে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের নিরীহ মুসলমান ও আলেম উলামাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছিলেন । যা এর আগে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে । আরবের বিখ্যাত ও বিশ্বস্ত ঐতিহাসিক আল্লামা জীনি দাহলান লিখেছেন,

“সব চাইতে পরিস্কার কথা এই যে, মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব নজদী বনি তামিম বংশের মানুষ । এই কারণে খুবই সম্ভব যে, মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব ‘জুল খুরাই সারাহ’ তামিমির বংশধর । যার সম্পর্কে বুখারী শরীফে হযরত আবু সায়ীদ খুদরী (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে ।” (আদ দুরার, পৃষ্ঠা-৫১)

সুতরাং উপরিউক্ত হাদীস দ্বারা পরিস্কার প্রমাণ হয়ে গেল রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন তা মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব নজদী সম্পর্কে । এবং ইচ্ছা করেই রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নজদের জন্য দোয়া করেন নি, কেননা তিনি জানতেন যে, সেখান থেকে ভূমিকম্প, ফিৎনা এবং শয়তানের সিং উদিত হবে । আর যে জায়গার জন্য স্বয়ং নবী (সাঃ) দোয়া করেন নি সেই স্থান এবং সেই স্থানে জন্মগ্রহণকারী মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব নজদী যে অভিশপ্ত একথা সহজেই অনুমেয় ।

লেখকঃ মুহাম্মদ আব্দুল আলিম।


“শীঘ্রই আবদুল ওহহাবের প্রচারণা রাজনৈতিক রুপ গ্রহণ করে এবং রাষ্ট্রীয় অগ্রগতি ইসলামের প্রথম যুগে রাজ্য-বিস্তৃতির মতোই বিস্ময়কর হয়ে উঠে । ইবনে সউদের নেতৃত্বে একটা শক্তিশালী আরব লিগ গঠিত হয়, এবং দারিয়াকে কেন্দ্র করে সউদী অধীকার বর্ধিত হতে থাকে । ‘কিতাব অল তওহীদের’ শিক্ষাদানের সংগে আগ্নেয়াস্ত্রের শিক্ষাদানও চলতে থাকে । ফলে রিয়াদের শেখের সংগে ১৭৪৭ সালে সংঘর্ষ উপস্থিত হয় । এ সংঘর্ষ চলে প্রায় আট বছর ধরে এবং ইবনে সউদ ও তাঁর মৃত্যুর পর (১৭৬৫ খ্রীঃ) তাঁর সুযোগ্য পুত্র আবদুল আযীয ইঞ্চি ইঞ্চি করে রিয়াদ অধিকার করেন । ১৭৬৬ সালে আবদুল ওহহাব মক্কার শরীফের নিকট একজন প্রতিনিধি প্রেরণ করে নিজের মতবাদ গ্রহণ করতে আহ্বান করেন । মক্কার শরীফ আবদুল ওহহাবের মতবাদ ইমাম হামবলের মযহাব অনুযায়ী বিবেচনা করে সেসব শ্রদ্ধার সংগে প্রচারের নির্দেশ দেন । কিন্তু ১৭৭৩ সালে রিয়াদের শাসক দাহহাম আবদুল ওহহাবের তীব্র বিরোধীতা করেন, কিন্তু আবদুল আজীজের নিকট পরাজিত হয়ে পলায়ন করেন । দলে দলে বেদুইনরা আবদুল ওহহাবের পতাকাতলে সমবেত হতে থাকে এবং যুদ্ধের পর যুদ্ধে তাঁর শিরেই বিজয়মাল্য শোভিত হয় । উত্তরে কাসিম থেকে দক্ষিণে খরজ পর্যন্ত সমগ্র নেজদ ভূমিতে আবদুল আজীজের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করে আবদুল ওহহাব ১৭৮৭ খ্রীষ্টাব্দে জান্নাতবাসী হন ।” (ওহাবী আন্দোলন, পৃষ্ঠা-৭৭)
পরবর্তীকালে আব্দুল আজীজ ও তাঁর পুত্র সউদ বিন আব্দুল আজীজ বীর বিক্রমে অভিযান চালাতে থাকেন । ১৭৯১ খ্রীষ্টাব্দে মক্কায় হামলা চালানো হয় এবং ইরাকের বিভিন্ন স্থানে বারংবার অভিযান চালাতে থাকেন । এই নতুন শক্তির অভ্যত্থানে আতঙ্কিত হয়ে তুর্কী সুলতান বাগদাদের পাশাকে নির্দেশ দেন যে এই নবজাগ্রত শক্তিতে প্রশ্রয় না দিয়ে অচিরেই ধ্বংশ করে দিতে । কিন্তু ১৭৯৭ খ্রীষ্টাব্দে সউদ বিন আব্দুল আজীজ বাগদাদের পাশাকে বিশেষভাবে লাঞ্ছিত করেন এবং এশিয়ার অধিনস্ত সমগ্র তুর্কী অধিগ্রহণ করে নেন । ১৮০৩ খ্রীষ্টাব্দে গালিব পাশা মক্কা থেকে বিতাড়িত হন এবং সউদ বিন আব্দুল আজীজ সেখানে তাঁর অনুচরদের নিয়ে মক্কায় প্রবেশ করেন । কিন্তু সউদ বিন আব্দুল আজীজ সাময়িকভাবে সেখান থেকে বহিস্কৃত হন, কিন্তু তিনি ১৮০৪ সালে পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করে হেজাজে আক্রমণ করেন এবং মদিনা দখল করেন । পরে ১৮০৬ খ্রীষ্টাব্দে মক্কা ও তারও কিছুদিন পর জেদ্দা সম্পূর্ণভাবে দখল করে নেন । ১৮০১ খ্রীষ্টাব্দে সউদ বিন আব্দুল আজীজের বাহিনী ইসলাম ধর্মকে তার বিভিন্ন সুফি মতবাদ ও বিভিন্ন নিত্যনতুন মনগড়া কুপ্রথা আবিস্কারের (বিদআত) হাত থেকে রক্ষা করার আদর্শ নিয়ে কারবালা এলাকায় তাণ্ডব চালায় । এভাবে পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে সমগ্র জাজিরাতুল আরব ওহাবীরা সম্পূর্ণভাবে দখল করে নেয় । এই প্রসঙ্গে জাস্টিস আব্দুল মওদুদ লিখেছেন,

দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে!

  দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে! এক.   শুনতে খারাপ শোনালেও এটা সত্য, রবীন্দ্রনাথের...