expr:class='"loading" + data:blog.mobileClass'>

Wikipedia

সার্চ ফলাফল

শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

আরব-ইসরায়েল গোপন যোগসাজশ ফাঁস

"আরব-ইসরায়েল গোপন যোগসাজশ ফাঁস"

সৌদি--ইসরায়েল গোপন সম্পর্ক ফাঁস

১৯৪৮ সালের ১৪ মে, ইতিহাসের পাতায় নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হয়। ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদে আরব ভূখণ্ড ফিলিস্তিনের একটা বড় অংশ দখল করে জায়নবাদী ইসরায়েল স্বাধীনতা ঘোষণা করে। 

এরপর চালানো হয় একের পর এক ফিলিস্তিনি গণহত্যা। গ্রামের পর গ্রাম ফিলিস্তিনি বসতি উজার করে গড়ে তোলা হয় ইসরায়েলি সেটেলার বসতি। 

আরবের কয়েকটি দেশ একত্রিত হয়ে যুদ্ধ করে দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত চার দফা যুদ্ধ হলেও পশ্চিমা দেশগুলোর সার্বিক সহযোগিতায় ইসরায়েলি দখলদারিত্ব আরো বৃদ্ধি পায়। যুদ্ধ, দখলদারিত্ব ও ফিলিস্তিনি অধিকারের প্রশ্নে বেশিরভাগ আরব শাসক প্রকাশ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখে না। তবে গোপনে আরব-ইসরায়েলি যোগসাজশের ইতিহাস বহু পুরনো। 

স্বৈরশাসক হোক, অথবা রাজতান্ত্রিক- আরব শাসকরা সবসময়ই তাদের নিজেদের ক্ষমতা কাঠামোকে ফিলিস্তিনি জনগণের ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছে। ওই শাসকরা বিভিন্ন সময়ে ইসরায়েলের কাছ থেকে গোপনে সামরিক, গোয়েন্দা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়েছে। 

সম্প্রতি শান্তির নামে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফিলিস্তিনি আত্মসমর্পণের প্রস্তাব, কথিত ডিল অব দ্য সেঞ্চুরিতে সমর্থন দিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি প্রকাশ্যে এনেছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশের শাসকরা। তবে ১ ফেব্রুয়ারি মিসরের রাজধানী কায়রোতে ডাকা আরব লিগের এক জরুরি সভার পর দেয়া বিবৃতিতে ট্রাম্পের প্রস্তাবকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমালোচনা করা হয়। 

এজন্য ইসরায়েলি লবি এ সময়ে আরো বেশি সক্রিয়। গত মাসে ইসরায়েলি নেতাদের উপসাগরীয় অঞ্চলসহ মরক্কো ও সুদানেও সম্পর্কোন্নয়নে তৎপর হতে দেখা যায়। আরব শাসকদের তারা বোঝাতে চাইছে, ইরানই তাদের শত্রু  আর ইসরায়েল হলো ‘প্রকৃত মিত্র’। ইসরায়েলি তৎপরতায় আরব শাসকদের অবস্থানেও সুস্পষ্ট পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। পূর্বের গোপন আঁতাত এখন চলে আসছে প্রকাশ্যে। 

উল্লেখ্য, ট্রাম্পের কথিত শান্তি প্রস্তাবে বলা হয়- জেরুজালেম হবে ইসরায়েলের অবিভক্ত রাজধানী। কোনো ইসরায়েলি বা ফিলিস্তিনিকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হবে না। যার মানে দাঁড়াচ্ছে- কোনো অবৈধ ইসরায়েলি বসতিই তারা উচ্ছেদ করবে না। প্রস্তাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের কথা বলা হলেও, নেই কোনো রূপরেখা। যে মানচিত্র ট্রাম্পের প্রস্তাবে তুলে ধরা হয়েছে, সে হিসেবে- ফিলিস্তিন হবে ইসরায়েলের মাঝে টুকরো টুকরো ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত রাষ্ট্র; যেখানে ফিলিস্তিনিদের আত্মরক্ষার অধিকারও থাকবে না, সীমান্ত পর্যন্ত পাহারা দেবে ইসরায়েলি বাহিনী!

ভ্রান্তিকর তত্ত্ব

ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বৈধতা দিতে ব্যবহার করা হয় ‘আত্মরক্ষা’ তত্ত্ব। আর এ কাজে আরবের শাসকগোষ্ঠী ছাড়াও ইসরায়েলপন্থী আরব বুদ্ধিজীবীদের ব্যবহার করা হয়। এখানে সরাসরি ইসরায়েলি দখলদারিত্বকে সমর্থন দেয়া বুদ্ধিজীবীদের পাশাপাশি তারাও রয়েছেন, যারা মৃদু সমালোচনার মধ্য দিয়ে সংবাদমাধ্যম, গ্রন্থ বা সেমিনারে কৌশলে এ কথাটাই ফেরি করেন- ইসরায়েল যে আগ্রাসন চালায়, সেটা তারা আত্মরক্ষার্থেই করে থাকে! তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের পক্ষে বরাবরই বলে আসছেন। 

তবে সম্প্রতি ওই বুদ্ধিজীবীরা প্রচার করছেন, এখনই সময় নিজের দেশকে ফিলিস্তিনি স্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দেয়ার, যে অবস্থান আগের চেয়ে নীতিগতভাবে ভিন্ন।

সম্প্রতি সৌদিভিত্তিক মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের মহাসচিব ড. মোহাম্মদ আল-ইসা ওয়াশিংটনের হলোকাস্ট মিউজিয়ামে এক খোলা চিঠি দিয়েছেন। তিনি নিধনযজ্ঞের শিকার হওয়া ইহুদিদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন ও যারা ‘হলোকাস্ট আদৌ ঘটেনি’ বলে একে অস্বীকার করেন তাদের নিন্দা করেছেন। এমন ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই খুব সাধুবাদ পেয়েছে। 

কিন্তু এ বিষয়টি আমলে নেয়া জরুরি, এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আরবি ভাষার মিডিয়াগুলোতে হিটলারের ইহুদি নিধনের বিষয়টিকে সামনে এনে ইসরায়েলের গঠনকে ন্যায্যতা দেয়া হচ্ছে। কৌশলে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের পক্ষে অবস্থান নিয়ে জনমত গঠনের কাজটি করে থাকেন ইসরায়েলপন্থী বুদ্ধিজীবীরা।

গোপন সম্পর্ক ফাঁস

গত ২০১৯ সালে ইসরায়েল ও বেশ কয়েকটি উপসাগরীয় দেশের মধ্যকার গোপন সম্পর্কের কথা ফাঁস করেছেন সৌদি আরবের সাবেক গোয়েন্দা প্রধান প্রিন্স তুর্কি আল ফয়সাল। ইসরায়েলি সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল-১৩ এর সাংবাদিক বারাক রাভিদকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ নিয়ে কথা বলেন। 

কাতারের সংবাদপত্র আল-আরিব জানিয়েছে, ‘উপসাগরীয় গোপন কথা’ অনুষ্ঠানের জন্য বারাক রাভিদ ইসরায়েলের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক নিয়ে উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্তত ২০ জন কূটনীতিকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তাদের অনেকেই ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। তবে আল-ফয়সাল প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হন। 

রাভিদ দাবি করেন, প্রকাশ্যে স্বীকৃতি না দিলেও সৌদি আরব, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ উপসাগরীয় দেশগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামরিক ও রাজনৈতিক গোপন সম্পর্ক রেখে আসছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও তাদের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এসব সম্পর্ক রক্ষা করে থাকে।

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে গোপন সহযোগিতা সম্পর্ক রয়েছে বলে দাবি করেছে সুইজারল্যান্ডের একটি দৈনিক পত্রিকা বাসলার সাইটুং। পত্রিকাটির প্রতিবেদক পিয়েরে হিউমান লিখেছেন, অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক থাকলেও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত সমাধান ও আরব দেশগুলো তা ঘোষণার আগ পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে রাষ্ট্রদূত বিনিময় করবে না সৌদি আরব। এ ঘনিষ্ট গোপন সম্পর্কের লক্ষ্য হচ্ছে ইরানের প্রভাব বৃদ্ধি ঠেকানো। 

সৌদি আরবের একটি অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছ থেকে এরই মধ্যে রিয়াদ ট্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে। 

পত্রিকাটি লিখেছে, ইয়েমেন থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে চায় সৌদি আরব। তেল আবিব ও রিয়াদের পর্যবেক্ষকরা নিশ্চিত করেছেন ইসরায়েল ও সৌদি আরবের গোয়েন্দাদের মধ্যে সহযোগিতা অনেক উচ্চ পর্যায়ে। সুইডিশ পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের সাবেক গোয়েন্দা প্রধান প্রিন্স তুর্কি আল-ফয়সাল ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান এফ্রেইম হ্যালেভির সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। 

২০১৭ সালের ডিসেম্বরের প্রথম দিকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রধান মাইক পম্পেও জানিয়েছিলেন, ইসরায়েলি প্রতিনিধির সাথে বৈঠকের ভয় অনেক আগেই দূর হয়েছে সৌদি অভিজাতদের। সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধে সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি সুন্নি রাষ্ট্র ইসরায়েলের সাথে সরাসরি কাজ করছে। 

এর আগে ইসরায়েলের জ্বালানিমন্ত্রী ইয়ুভাল স্টেইনিৎজ এক রেডিও সাক্ষাৎকারে নিশ্চিত করেছিলেন, সৌদি আরবের সাথে ইসরায়েলের একাধিক চুক্তি রয়েছে। কিন্তু রিয়াদের অনুরোধে তা গোপন রাখা হয়েছে।


ইরানবিরোধী জোট

ইরানের উত্থান, উপসাগর থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত পুরো অঞ্চলজুড়ে তাদের প্রভাব বৃদ্ধি, এবং তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিতে বিশেষ করে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে সৌদি আরব, মিসর ও জর্দান। বিবিসির রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোনাথন মার্কাস লিখেছেন, পরিস্থিতির চাপে সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ কয়েকটি আরব দেশ ইসরায়েলের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছে। এখন আরব বিশ্বে এমন অনেক ঘটনা ঘটছে যা জোড়া দিলে পরিবর্তনটা আরো স্পষ্ট হয়। 

সিরিয়ায় এখন যে শুধু মার্কিন, রুশ, তুর্কি ও ইরানি সৈন্যরাই তৎপরতা চালাচ্ছে, তা নয়- তৎপর রয়েছে ইসরায়েলও। ইসরায়েল স্বীকার করেছে যে, ২০১১ সাল থেকে তারা সিরিয়ার ভেতরে শতাধিক গোপন বিমান হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, তারা ‘ইরান-সংশ্লিষ্ট’ লক্ষ্যবস্তুর ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। 

সম্প্রতি ইরানি কমান্ডার জেনারেল সুলেইমানির গুপ্তহত্যায়ও আরব শাসকদের সমর্থনের বিষয়টি সামনে এসেছে। এক্ষেত্রে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্টারসেপ্টে ফাঁস হওয়া একটি বৈঠকের তথ্যে নজর দেয়া যাক। ২০১৬ সালের ৩ আগস্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার তিন মাস আগে ব্ল্যাকওয়াটারের (মার্কিন নিরাপত্তা কোম্পানি) প্রতিষ্ঠাতা এরিক প্রিন্স ট্রাম্প টাওয়ারে ওই বৈঠকের আয়োজন করেন। বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন মার্কিন নাগরিক জর্জ নেডার। ব্ল্যাকওয়াটার ও প্রিন্সের হয়ে কাজ করা নেডার চেক প্রজাতন্ত্রে শিশু যৌন নিপীড়নকারী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ও যুক্তরাষ্ট্রেও তার বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে। নেডার আমিরাতি রাজন্যদের উপদেষ্টা ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বেশ ঘনিষ্ঠ সহযোগী। 

ট্রাম্প টাওয়ারের বৈঠকে একজন ইসরায়েলিও ছিলেন- জোয়েল জামেল। তিনি সোশ্যাল মিডিয়া কারসাজিতে ট্রাম্পের দলে কয়েক মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেন বলে ধারণা করা হয়। জামেলের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, সাই-গ্রুপ কার্যত সাবেক ইসরায়েলি গোয়েন্দা সদস্যে পূর্ণ। 

নিউইয়র্ক টাইমসের মতে, ট্রাম্প টাওয়ারের ওই বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের একটি বড় এজেন্ডা ছিল ইরানের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন। এ লক্ষ্যে ট্রাম্পকে ক্ষমতায় আনতে ওই আন্তর্জাতিক চক্র তৎপর হয়।

জায়নবাদের আস্থায় রাজতন্ত্র

সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত বা কাতারই শুধু নয়, বেশিরভাগ আরব শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গেই ইসরায়েল ও পূর্ববর্তী জায়নবাদী আন্দোলনের ঐতিহাসিক গোপন যোগসাজস ছিল ও আছে। 

১৯১৯ সালের ৩ জানুয়ারি তৎকালীন হেজাজ আমির ও পরবর্তী সময়ে ইরাকের রাজা ফয়সাল ইবনে আল-হুসেইন ওয়ার্ল্ড জায়নিস্ট অরগানাইজেশনের প্রেসিডেন্ট শাইম ওয়েইজম্যানের সাথে একটি চুক্তি করেন। যার মূল শর্ত ছিল- ফয়সাল ফিলিস্তিনে ইহুদি উপনিবেশকে সমর্থন করবেন, এর বিপরীতে অবিভক্ত সিরিয়াসহ এক বৃহৎ আরব রাজতন্ত্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে জায়নবাদীরা ফয়সালকে সহযোগিতা করবে। 

একইভাবে ১৯৫১ সালে ট্রান্সজর্দানের আমির আবদুল্লাহ গুপ্তহত্যায় নিহত হওয়ার আগপর্যন্ত জায়নবাদীদের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রক্ষা করেছেন। তিনি জায়নবাদীদের সহায়তায় ট্রান্সজর্ডানসহ ফিলিস্তিনের আমির থাকতে চেয়েছিলেন। ১৯৬০ এর দশকে আবদুল্লাহর নাতি জর্ডানের রাজা হুসেইন ইসরায়েলের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক গড়ে তোলেন। 

১৯৬৩ সালে লন্ডনে তার ডাক্তারের অফিসে ইসরায়েলি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। আর ১৯৭০ এর দশকে ইসরায়েলি নেতাদের সঙ্গে করা বৈঠকগুলো অনুষ্ঠিত হতো ইসরায়েলে। 

উত্তর আফ্রিকায় ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ট মিত্র মরক্কোর রাজা হাসান দ্বিতীয়। যদিও ১৯৫০-এর দশকেই ইসরায়েলের সাথে মরক্কোর সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তবে এতে ঘনিষ্টতা বৃদ্ধি পায় ১৯৬০ এর দশকে, রাজা হাসান সিংহাসনে আরোহনের পর। এ সময়ে মরক্কোর ইহুদিদের ইসরায়েলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৭৬ সালে গোপনে ইসরায়েলি নেতা আইজ্যাক রবিন মরক্কো সফর করেন। ১৯৮৬ সালে শিমন পেরেজ প্রকাশ্যে মরক্কো সফর করেন। ১৯৯৪ সাল থেকে ইসরায়েলের সাথে মরক্কো প্রকাশ্য কূটনৈতিক যোগাযোগ শুরু করে।


রাজতন্ত্রের বাইরেও জায়নবাদী ঐক্য

সম্প্রতি উগান্ডায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর সাথে হওয়া এক সাক্ষাতের পর সুদানি সেনা কমান্ডার আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান সুদানের ইসরায়েলি সংযোগ সম্পর্কে কথা বলেন। তবে সুদানের কোনো পদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে ইসরায়েলের এটাই প্রথম প্রকাশ্য বৈঠক। 

এ প্রসঙ্গে নিউইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রফেসর জোসেফ মাসাদ বলেন, ১৯৫০ এর দশকে উম্মা পার্টি সুদানি স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ইসরায়েলি সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছিল, তখন সুদান শাসিত হতো ব্রিটিশ ও মিসরীয়দের দ্বারা। স্বাধীনতার পর ১৯৫৭ সালে সুদানি প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ খলিল প্যারিসে ইসরায়েলের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেইরের সঙ্গে বৈঠক করেন। ১৯৮০ এর দশকে সুদানি প্রেসিডেন্ট গাফার নিমেইরি ইথিওপীয় ইহুদিদের ইসরায়েলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন, যা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি সেটেলার বসতি নির্মাণকে আরও তরান্বিত করেছে। 

২০১৬ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির জানান, ইসরায়েলের সাথে প্রকাশ্য সম্পর্কে যেতে আগ্রহী তিনি, তবে বিনিময়ে সুদানের ওপর দেয়া মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে। তার মতে, জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার জন্য ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন জরুরি!

লেবাননের ম্যারোনাইট চার্চ ও ম্যারোনাইট ফ্যাসিবাদী নেতাদের সাথে ১৯৪০ এর দশক থেকেই সংযোগ রয়েছে জায়নবাদীদের। জায়নবাদীদের মত ছিল, তারা যেভাবে বাইরে থেকে এসে উপনিবেশ বানিয়ে ইসরায়েল নামক ইহুদি রাষ্ট্র গড়ে তুলেছে, একইভাবে লেবাননে ম্যারোনাইটরাও খ্রিস্টান রাষ্ট্র গড়ে তুলতে পারে। 

১৯৫০ এর দশকে তিওনিশীয় জাতীয়তাবাদী নিও দেসতোর পার্টির প্রতিনিধি দল ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতা লাভ করতে জাতিসংঘে ইসরায়েলের সহযোগিতা চান। পরবর্তী সময়কালে তিওনিশীয় স্বৈরাচারী শাসক হাবিব বোরগুইবা ১৯৮৭ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগপর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত রাখেন। 

মিসরের সঙ্গে আগে থেকেই গোপন সামরিক, কূটনৈতিক যোগাযোগ থাকলেও ১৯৭০ এর দশক থেকে তা প্রকাশ্য রূপ ধারণ করে। ১৯৯১ সাল থেকে ইসরায়েলি নেতা, খেলোয়াড় ও পেশাজীবীরা প্রকাশ্যে কাতার, হাবরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান সফর করছে। তবে সৌদি আরবে এ সফরগুলো হয় গোপনে। এসব দেশে ইসরায়েলের কূটনৈতিক, সামরিক ও বাণিজ্যিক সংযোগ এখন অনেকটা প্রকাশ্যই বলা চলে।

আর এ ইসরায়েলি যোগসাজসের মূলে রয়েছে ট্রাম্পের ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’।


সূত্রঃ সাম্প্রতিক দেশকাল, ২মার্চ ২০২০ইং।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে!

  দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে! এক.   শুনতে খারাপ শোনালেও এটা সত্য, রবীন্দ্রনাথের...