বাংলাদেশের মিশনারী প্রতারণা
বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকাকে ঘিরে এনজিও এবং আন্তর্জাতিক খ্রিষ্টান লবি ভিন দেশী সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে সুদীর্ঘ কাল ব্যাপী নানা মুখী চক্রান্ত চালিয়ে আসছে। চিকিৎসা, সমাজ ও মানবতার সেবার অভিনয়ে তারা মূলতঃ
পার্বত্য এলাকার দারিদ্র্যপীড়িত জনগোষ্ঠীকে ইউরোপীয় জীবনাচার ও দর্শনের দিকে আকৃষ্ট করার প্রয়াস চালাচ্ছে। মুঘল আমলেই এদেশের প্রতি এন জি ও এবং খ্রিষ্টান মিশনারীদের শ্যেন দৃষ্টি পতিত হয়।
ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসনামলে মিশনারীগণ ভিন দেশী সংস্কৃতির বিকাশ ও ধর্মান্তরের যে প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু করেন, পর্যায়ক্রমে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলে তার ক্রমবিকাশ সাফল্যের সাথে অব্যাহত থাকে। স্কুল প্রতিষ্ঠা, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, হাসপাতাল স্থাপন, ঋণ প্রদান, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ, দারিদ্র্য বিমোচন, কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ও নারীর ক্ষমতায়ন প্রভৃতি মুখরোচক কর্মসূচীর আড়ালে রয়েছে এ দেশে ইউরোপীয় সংস্কৃতি ও খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচার করার নীল নকশার বাস্তবায়ন। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় প্রায় ৪৫টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর অধিবাস। শত বছর ধরে বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে ২০ লাখ আদিবাসী ক্রমাগত প্রান্তীয় পরিণতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা, চরম দারিদ্র্য, ক্ষুধা, অনাহার, মৃত্যু, মহামারী, অপুষ্টি ও স্যানিটেশন সমস্যা তাদের নিত্যসঙ্গী। খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা ও বাসস্থান এই পাঁচটি মৌলিক মানবাধিকার থেকে তাঁরা বঞ্চিত। রাখাইন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মি.উসিথ মং বলেন, রাখাইনরা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী হিসেবে এই অঞ্চলে আদিম অধিবাসী। প্রায় ৩৩ শতাংশ রাখাইন এখন ভূমিহীন আর গত ৩৫ বছরে পটুয়াখালীতে প্রায় ৯০ শতাংশ রাখাইনকে নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ হতে হয়েছে।১৯৯১ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী কেবল পার্বত্য চট্টগ্রামের জন সংখ্যা ১০ লাখ ৫ হাজার ৩৬২ জন। অধিকাংশ চাকমা ও মারমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, টিপরা অধিবাসিরা হিন্দু ধর্মের আর মিজো বম ও থেয়াং খ্রিষ্টান। কিছু কিছু গোত্র আত্মা, প্রাণী ও উদ্ভিদের পূজারী। (বাংলাপিডিয়া, ৫খন্ড, পৃ.৩৭১-২)।সাধারণভাবে এসব ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী এবং বিশেষভাবে পাহাড়িরা অত্যন্ত কষ্টে আছে, 'মানুষ’করার জন্য নানামুখী সহযোগিতা প্রয়োজন, তাদের পৃথক সত্তা ও নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষা নিশ্চিত করতে হবে ইত্যাদি বক্তব্য দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও প্রচুর শোনা যায়। এর সূত্র ধরে বিদেশি ফান্ড দ্বারা পরিপুষ্ট ঝাঁকে ঝাঁকে এনজিও এখন তিন পার্বত্য জেলায় সক্রিয় আছে। কিন্তু এতদিনে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, আর্ত-মানবতার সেবার নামে এসব এনজিও’র বেশিরভাগই আসলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে ধর্মান্তরিত করার কাজে কোমর বেঁধে নেমেছে। এ কাজে তাদের সাফল্য রীতিমত চোখ ধাঁধানো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আমার দেশ-এ প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে,গত ২০ বছরে সেখানে ১২ হাজার উপজাতীয় পরিবারকে ধর্মান্তরিত করে খ্রিস্টান বানানো হয়েছে। ওই রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটিতে বর্তমানে ১৯৪টি গির্জা উপজাতীয়দের ধর্মান্তরিত করে খ্রিস্টান বানানোর ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। খাগড়াছড়ি জেলায় আছে ৭৩টি গির্জা। ১৯৯২ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এ জেলায় ৪ হাজার ৩১টি পরিবার খ্রিস্টান হয়েছে। বান্দরবান জেলায় গির্জা আছে ১১৭টি। এখানে একই সময়কালে খ্রিস্টান হয়েছে ৬ হাজার ৪৮০টি উপজাতীয় পরিবার। রাঙামাটিতে ৪টি চার্চ খ্রিস্টান বানিয়েছে ১ হাজার ৬৯০টি উপজাতীয় পরিবারকে। এগুলো তুলনামূলকভাবে হাল আমলের হিসাব। পাহাড়ি যেসব জনগোষ্ঠীর লোকসংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, তাদের প্রায় শতভাগ খ্রিস্টান হয়ে গেছে অনেক আগেই (এম. এ নোমান, আমার দেশ, ১২.০৮.২০১১)।
পাহাড়িদের নিজস্ব সংস্কৃতি অটুট রাখার জন্য কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জনকারী পশ্চিমা গোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ মদদে চলা ধর্মান্তকরণ সেখানে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে যে, উপজাতীয়দের নিজস্ব সংস্কৃতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ আজ আক্ষরিক অর্থেই বিপন্ন। তাদের সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। পার্বত্য চট্টগ্রামে খ্রিস্টান হয়ে যাওয়া পাহাড়িদের দ্রুত সংখ্যা বৃদ্ধি যারা ঘটাচ্ছে তারা যদি পাহাড়িদের রাষ্ট্রীয় আনুগত্যের শিকড় কেটে দিতে সক্ষম হয় তবে তা বাংলাদেশের অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে উঠবে। এভাবে দেশের একটি স্পর্শকাতর এলাকায় ডেমোগ্রাফির নাটকীয় পরিবর্তন স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়া যায় না। ত্রাণ ও সেবার নামে আসলে ওই অঞ্চলের দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া লোকজনকে ধর্মান্তরিত হতে প্রলুব্ধ করা হচ্ছে বলে জোরালো অভিযোগ রয়েছে। একথা সত্য যে, আমরা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ সমতলবাসী বাঙালিরা পাহাড়িদের আর্থ-সামাজিক উন্নতির জন্য পর্যাপ্ত সহযোগিতা করিনি। পাশাপাশি এটাও সত্য যে, ব্রিটিশ রাজশক্তি ঔপনিবেশিক আমলে বিশেষ মতলব নিয়ে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে বিভাজন রেখা টেনে দিয়েছিল যাতে পরস্পরের মধ্যে সার্বিকভাবে দূরত্ব তৈরি হয়। তাদের সেই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ফল এখন পাকতে শুরু করেছে বলে মনে হয় (এম. এ নোমান, আমার দেশ, ১২.০৮.২০১১)।
ড. ঊইলিয়াম কেরি, ড.টমাস, রিচার্ড হলওয়ে, ফাদার ক্লাউজ বার্লার, টরবেন ভি পিটারসন, আলফ্রেড রবিন মন্ডল ও ড.অলসন এর মতো লোকেরা বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাইবেলের শিক্ষা, কৃষ্টি ও আদর্শ প্রচারের জন্য বাংলা ভাষা রপ্ত করেন। ১৭৯৩ সালে মিশনারীদের একটি শক্তিশালী দল বাংলাদেশে আসেন। মি.কেরি ও মি. পাওয়েল মিলে দিনাজপুরে একটি ক্ষুদ্র চার্চ প্রতিষ্ঠা করেন যা বাংলাদেশে প্রথম ব্যাপ্টিস্ট ও প্রটেষ্ট্যান্ট চার্চ। মি.কেরি নতুন আঙ্গিকে বাংলা ব্যাকরণ সংশোধন করেন এবং ১৮০০ সালে ইংল্যান্ড থেকে বাংলা বর্ণ মালার ছক এনে কলকাতার শ্রীরামপূর মিশন থেকে বাংলায় বাইবেল মুদ্রন ও প্রচারের ব্যবস্থা করেন। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ড. কেরি ‘কথোপকথন’ ও ‘ইতিহাসমালা’ নামক বাংলায় দু’টি গ্রন্থ রচনা করেন। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিপ্লবের সময় ভারতীয় উপমহাদেশে ৯০টি প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টান মিশনারী সংস্থা কর্মরত ছিল। রোমান ক্যাথলিক চার্চের সংখ্যা এর বাইরে (মাসিক তরজমানুল কুরআন, লাহোর, মার্চ, ১৯৬১)।
এদেশে প্রতিকুল পরিবেশে খ্রিষ্ট ধর্ম-সংস্কৃতির প্রচার ও বিকাশে তাঁরা যে ত্যাগ ও সাধনা করেন তা রীতিমত বিস্ময়ের উদ্রেক করে। চন্দ্রঘোনা, মালুমঘাট, ময়মনসিংহ, রংপুর ও রাজশাহী সহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাসপাতাল ও মাতৃসদন প্রতিষ্ঠা করে কুষ্ঠ রোগ সহ জটিল ব্যাধির চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার চালিয়ে আসছে একটি মাত্র লক্ষ্যকে সামনে রেখে, তা হলো এ দেশে খ্রিষ্ট ধর্ম, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রচার ও প্রসার। এই সব হাসপাতাল হলো মূলতঃ মানুষ ধরার ফাঁদ ও ষড়যন্ত্রের নীল কুঠি। মিশনারীদের এই নিরন্তর সাধনা ব্যর্থ হয়নি। উপজাতীয় জন গোষ্ঠীর দরিদ্রতার সুযোগ নিয়ে তাদের শিক্ষা ও চিকিৎসার অভাবকে পুঁজি করে খ্রিষ্টান এনজিও কর্মি ও মিশনারী পাদ্রীরা দূর্গম পার্বত্য এলাকায় নীরবে-নিভৃতে ধর্মান্তরের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশে কর্মতৎপর এনজিও’র সংখ্যা ৩০ হাজার। এই দেশে বহুজাতিক কোম্পানির আর্থ-রাজনৈতিক স্বার্থে এবং অসহায়, নিঃস্ব, নিরক্ষর ও প্রপীড়িত মানুষকে সেবা করার নামে ইউরোপীয় সংস্কৃতির বিকাশ ও খ্রিষ্ট-ধর্মে দীক্ষিত করার অমানবিক তৎপরতায় যেসব এনজিও জড়িত রয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে: ১.কারিতাস ২.এমসিসি (মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি) ৩.বাংলাদেশ লুতারান মিশন ৪.দীপ শিখা ৫.স্যালভেশন আর্মি ৬.ওয়ার্ল্ড ভিশন ৭.সিডিএস (সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস) ৮.আরডিআরএস (রংপুর-দিনাজপুর রুরাল সার্ভিস) ৯.সিসিডিবি (খ্রিষ্টান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট) ১০.হিড বাংলাদেশ ১১.সেভেনথ ডে এ্যডভেঞ্চারিষ্ট ১২.চার্চ অব বাংলাদেশ ১৩.প্লান ইন্টারন্যাশনাল ১৪. সুইডিস ফ্রি মিশন ১৫.কনসার্ণ ১৬.এডরা ১৭.অষ্ট্রেলিয়ান ব্যাপটিষ্ট সোসাইটি ১৭. ফ্যামেলিজ ফর চিলড্রেন ১৮. ফুড ফর হাংরী ইন্টারন্যাশনাল। এই সব সংস্থার বাজেটের শতকরা ৯০ ভাগ অর্থ খ্রিষ্টানদের বা খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হবার সম্ভাবনাময় ব্যক্তিদের স্বার্থে, নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদেশী কনসালটেন্টের পেছনে ব্যয়িত হয়।
চার্চ অব বাংলাদেশ নামে একটি খ্রিষ্টান মৌলবাদী এন, জি, ও সংস্থা ১৯৬৫ সালে কক্সবাজারের মালুমঘাটে খ্রিষ্টান মেমোরিয়াল হাসপাতাল স্থাপন করে। স্থানীয় জনসাধারণের দরিদ্রতা, অভাব ও নিরক্ষরতার সুযোগ নিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডা. ভিগা বি অলসন বিগত ৩৮ বছর যাবত খ্রিষ্ট ধর্ম প্রচারে তৎপর রয়েছেন। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে অত্র এলাকায় যেখানে এক জন খ্রিষ্টানও ছিলনা সেখানে বর্তমানে দশ হাজার বয়স্ক নাগরিক খ্রিষ্টান হয়েছে এবং তাদের পরিবার সহ এই সংখ্যা বর্তমানে ৪০ হাজারে উন্নীত হয়েছে। মালুমঘাটের আশে পাশের জমি চড়া দামে উক্ত এনজিও কিনে নিচ্ছে ধর্মান্তরিতদের পুর্নবাসনের উদ্দেশ্যে। ইতোমধ্যে হায়দারের নাসি গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে বিশাল গীর্জা গড়ে উঠেছে এবং অত্র এলাকায় ভিন দেশী সংস্কৃতির বিকাশ চোখে পড়ার মতো। কয়েক বছর আগে মালুমঘাট হাসপাতালের ডা. অলসন ১৩টি মুসলিম পরিবারের ২৫ জন গরীব মুসলমানকে ফুসলিয়ে খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষিত করার অভিযোগে সংক্ষুব্ধ শত শত স্থানীয় মানুষ হাসপাতাল আক্রমন করে এবং যেসব ঘরে ধর্মান্তর করা হতো তা জালিয়ে দেয়। বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে ২০ জন পুলিশ সহ ১০০ ব্যক্তি আহত হয় (দৈনিক সংগ্রাম, ২৪অক্টোবর, ১৯৯২)।
ফস্টার প্যারেন্টস ইন্টারন্যাশনাল নামক একটি এনজিও সংস্থা বাংলাদেশের ৯৬ হাজার পরিবারের একটি শিশুকে পোষ্য সন্তান হিসেবে গ্রহণ করে খ্রিষ্টান বানানোর এক জঘন্য পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ইতঃপূর্বে ধর্মান্তরিতকরণের অভিযোগে উক্ত সংস্থাকে জাকার্তা, বালি ও সুদান থেকে বহিষ্কার করা হয়। সেভেনথ ডে এডভানচারিষ্ট চার্চ নামক একটি খ্রিষ্টান এনজিও ৮৫টি স্কুল পরিচালনা করে এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল বা এতিমখানায় কোন মুসলমান ছেলেকে ভর্তি করা হয় না। ভারতেও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এই সংস্থাটির প্রতিষ্ঠান রয়েছে। উচ্চ শিক্ষা ও প্রশিক্ষনের জন্য খ্রিষ্টান কর্মচারী ও খ্রিষ্টান ছাত্রদেরকে সেখানে পাঠিয়ে থাকে। এই সংস্থাটি সেবার নামে বাংলাদেশের মানুষকে খ্রিষ্টান বানানোর জন্য ১৯৯০-৯১ এবং ১৯৯১-৯২ আর্থিক বছরে ২৩০ মিলিয়ন টাকা খরচ করেছে। হিড বাংলাদেশ নামের এনজিও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে, ঢাকাস্থ বিহারী রিফিউজি ক্যাম্পে এবং সুন্দরবনে সেবার আড়ালে খ্রিষ্ট সংস্কৃতির প্রচার ও খ্রিষ্টান জনগনের উন্নয়নের জন্য বছরে ৬ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয় করে। খ্রিষ্টান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ (CCDB) জেনেভা ভিত্তিক একটি খ্রিষ্টান মিশনারী প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের পরিবার প্রথা, সামাজিক ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ধর্মীয় মূল্যবোধ ভেঙ্গে ইউরোপীয় আদলে নতুন সমাজ গড়ার কর্মসূচী বাস্তবায়নে লিপ্ত। সিসিডিবির বার্ষিক ৩.৫ মিলিয়ন মার্র্কিন ডলার বাজেট খেকে খ্রিষ্টান জনগণ এবং ভবিষ্যতে যারা খ্রিষ্টান হবে তারাই উপকৃত হয়। সিসিডিব’র বর্তমান মূল লক্ষ্য হচ্ছে উপজাতি ও আদিবাসীদের সকল জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন স্থিতিশীল ও অংশীদারিত্ব ভিত্তিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে নারীদের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চত করার জন্য তাদের ছোট ছোট উদ্যোগকে সমর্থন দান, সকল পর্যায়ে লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ ইত্যাদি। ইউরোপের কয়েকটি দেশ,অস্ট্রেলিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের দাতা সংস্থা ও খ্রিষ্টান মিশনারী সংগঠন বিশেষতঃ জেনেভার ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অব চার্চেস, ব্রাড ফর দি ওয়ার্ল্ড, ইংল্যান্ডের খ্রিষ্টান এইড, নিউজিল্যান্ডের চার্চ ওয়ার্ল্ড সার্ভিস এবং হল্যান্ডের ইন্টারন্যাশনাল চার্চ এইড ঢাকা সিসিডিবিকে অর্থ যোগান দেয়। ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অব চার্চেস বছরে একবার সিসিডিবি’র একটি গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। (বাংলাপিডিয়া,১০ খন্ড,পৃ.১৯৮-৯)। লুথারান ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব বাংলাদেশের কর্তৃত্বাধীনে পরিচালিত একটি শক্তিশালী এনজিও সংস্থার নাম রংপুর-দিনাজপুর রুরাল সার্ভিস (RDRS)। বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ৬ লাখ লুথারেন বিশ্বাসী এই সংস্থার সাথে জড়িত। নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ডের লুথারেন চার্চ এই সংস্থাকে অর্থের যোগান দেয়। মি. টরবেন ভি পিটারসনের নেতৃত্বে ১৯৮৬ সাল হতে এই সংস্থা নিরব-কৌশলে প্রায় ২১৮ কোটি ৬৯ লাখ ৯৮ হাজার ৪৭৬ টাকা ব্যয়ে বৃহত্তর দিনাজপুর ও রংপুর জেলার সীমান্ত অঞ্চলের আদিবাসী ও সাঁওতাল অধ্যুষিত এলাকায় ধর্ম প্রচারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সীমান্ত এলাকার বদলে দেশের অভ্যন্তরে প্রকল্প এলাকা সম্প্রসারণে সংস্থা অনাগ্রহী। ১৯৮১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী একমাত্র দিনাজপুরেই ৩৫ হাজার সাঁওতাল খ্রিষ্টান হয়ে গেছে। (মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, বাংলাদেশ-এনজিও উপনিবেশবাদের দূর্ভেদ্য জালে, ঢাকা, ১৯৯৬, পৃ.৬১-৭৩; দৈনিক ইত্তেফাক, ৬ ডিসেম্বর, ১৯৮১)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ