"সাবধান মুসলমান, আর কত প্রতারিত হবেন, তাগুতের সহযোগী হয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা আর না"
আসসালামু আলাইকুম, আজকের লেখাটি শুধু মাত্র আলেম সমাজ ও মুসলমানদের জন্য। বাংলাদেশের ইসলামি রাজনীতির অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে। এই ব্রিটিশ ভারত যে দ্বিজাতিতত্ত্বে বিভাজিত হয়ে ছিলো এর দুটি জাতি ছিল হিন্দু আর মুসলিম।
১৯৪৭ সালে তৎকালীন পূর্ব বাংলার নেতৃবিন্দ এ দেশকে ইসলামের সুরক্ষা ও মুসলমানদের অধিকারের কথা ভেবেই পাকিস্তানের সাথে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। পাকিস্তানের নেতারা একটি শরিয়াহ ভিত্তিক ইসলামিক দেশ প্রতিষ্ঠা করবে মর্মে অঙ্গীকার করেই দেশটি আলাদা করে ভারত হতে। কিন্তু অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় তখন মুসলমানদের মুখোশের আড়ালে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, তখনকার সেনা প্রধান হতে প্রায় সবাই ছিলো নামধারী স্যেকুলার শিয়া মুসলিম। আর জেনে শোনেই ইংরেজরা মুসলমানদের জন্য বরাদ্দকৃত ভুখন্ডটি এই স্যেকুলারদের হাতে তুলে দেশ, কেননা তারা জানত যে এই নাম ধারী মুসলমানদের হাতে মুসলমানদের ভাগ্যের চরকা তুলে দিলে কি হবে ভবিষ্যৎ। এখানে বোকা আলেম সমাজ কৌশলের কাছে প্রতারিত হলো। সাইনবোর্ড দেখালো ইসলামের, পতাকা দেখলো চাঁদ তারকা খচিত, আর ভেতরে ভেতরে তৈরি করলো অমসুলিম দেশ।
ফলাফল যা হওয়ার তাই হলো, পাকিস্তান নামে একটি ইসলামি দেশ হলেও আদতে পাকিস্তানেও একটি তাগুতী শক্তি ঝেঁকে বসল, শুরু হলো অশান্তির দাবানল। সর্ব প্রথম প:পাকিস্তানের মুসলিম নামধারী তাগুতি শক্তির জালিম শাসকরা আঘাত হানে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের কপালে। যা হওয়ার তাই হলো, পূর্ব পাকিস্তান তাদের স্বাধিকারের দাবীতে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃবে এক ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে দেশ স্বাধীন করে।
স্বাধীনতার পূর্বে ব্রিটিশ আমলে এদেশ মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ ছিলো, তাই তারা কথিত ইসলামি প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানের সাথে মুসলিম দেশের অংশ হিসাবে যুক্ত হয়। এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশই এটি।
এই স্বাধীন বাংলাদেশের যত ইতিহাস পড়েছি সব জায়গায়ই দেখেছি পশ্চিমাদের শোষনের হাত হতে জাতিকে মুক্তির জন্য এদেশ স্বাধীন হয়েছে। কোথাও কোন ইতিহাসে কিংবা কোন নেতার বক্তৃতায় একথা পড়িনি বা শুনিনি যে পূর্ব পাকিস্তান ধর্মীয় বিদ্বেষ থেকে এদেশ স্বাধীন হয়েছে। নেতারা এমন কথা কথাও বলে থাকলে কিংবা আপনারা যদি কোথাও শোনে থাকেন তাইলে আমাকে জানাবেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হলো স্বাধিকারের জন্য, বাংলাদেশ তখনও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ছিলো। স্বাধীনতার পর এদেশের সংবিধান ইসলামের ভিত্তিতে রচিত না হয়ে কোনো এক অজানা শক্তির প্রভাবে হয়ে গেলো ধর্ম নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে। শুরু হলো স্যেকুলার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাজ। আবারও প্রতারিত হলো মুসলমান, মুসলিম দেশটি হয়ে গেলো ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। অপরদিকে স্বাধীনতার স্থপতি মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে ওআইসিতে যুক্ত করে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মহলে মুসলিম দেশ হিসাবে পরিচিত করলো, ইসলামি ফাউন্ডেশন তৈরী করল, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম করল, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় করল। এতে মনে হলো এটি একটি মুসলিম দেশ, কিন্তু সংবিধান দেশ পরিচালনার মূলমন্ত্র হলো ধর্ম নিরপেক্ষতা। এমন দ্বৈত নীতি দুনিয়ার কোন জাতির ভাগ্যে জুটেছে কিনা তা আমার জানা নাই, এখানেও প্রতারিত হলো মুসলমানরা।
যাইহোক শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপরিবারে নিহত হওয়ার পর সংবিধান স্থগিত হলো, একের পর এক দেশে ক্ষমতার পালাবদল হতে হতে মরহুম মেজর জিয়াউর রহমানের শাসনামল আসল। উনি চালু করলো বহুদলীয় গনতন্ত্র। সকল দলের কার্যক্রম চালু হলো। চালু হলো ইসলামি দল গুলোর কার্যক্রমও। মেজর জিয়াউর রহমানও বেশীদিন দেশ শাসন করতে পারে নি। উনি বহুদলীয় গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামি দল গুলোর রাজনীতি করার অনুমতি দিলেও তার পেছনেও ছিলো একটি উদ্দেশ্য যা অনেকে বুঝতে পারে না।
মেজর জিয়াউর রহমান একজন সেনা অফিসার হতে রাতারাতি হয়ে যায় একজন রাষ্ট্রপতি।রাতারাতি আবার এরকম রাষ্ট্রপতিরা কখনোই জনপ্রিয়তার পায় না। এই জানপ্রিয়তার জন্যই তিনি বহুদলীয় গনতন্ত্র চালু করেন আবার জাতীয়তাবাদী আদলে একটি দলও কেন্টনমেন্ট হতে জন্ম দেন। এখানে উল্লেখ্য যে যারা বলেন যে ইসলামি দল গুলো জিয়াউর রহমানের কাছে ঋনি থাকা উচিত তাদের যদি প্রশ্ন করি যে কেনো ইসলামিনদলগুলো একাই ঋনী থাকবে? উনি কি কোন ইসলামি দলকে ক্ষমতায় বসিয়েছে? নাকি উনি নিজে একটি ইসলামি দল গঠন করেছে? উনি তো জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টায় মত্য ছিল যা আদতে একটি ইসলাম বিরোধী মতবাদ। আর বহু দলীয় গনতন্ত্রের জন্য যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করার কথা বলেন তাইলে সকল দলেরই জিয়াউর রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। এমন কি বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামিলীগ সরকারও। কেননা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে দেশে এনে রাজনীতিতে সক্রিয় করার পেছনেও মেজর জিয়ার অবদান রয়েছে।
যাই হোক, জিয়াউর রহমানের শাসনামলের পরে আসল স্বৈর শাসক বিশ্ব বেহায়া এরশাদের আমল। ১৯৮৬ তে একটি সাজানো নির্বাচন হলো। নির্বাচনে আপোষহীন নেত্রী খালেদা জিয়া প্রতিবাদ সরুপ অংশগ্রহন করে নি। সর্বদলীয় জোটের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তখন আওয়ামিলীগ ও জামায়াতে ইসলামি নির্বাচনে অংশগ্রহন করে বসে যদিও সর্বদলীয় সিদ্ধান্ত ছিলো এই ইলেকশনে যে দল অংশগ্রহন করবে সে দল জাতীয় বেইমান হিসাবে চিহ্নিত হবে। এই ইলেকশনে অংশগ্রহন করে এরশাদ সরকারকে বৈধতা দেওয়া যদি জাতির সাথে বেঈমানী হয়ে থাকে তাইলে তখনকার ঘটনার দায়ে জামায়াত ও আওয়ামিলীগ উভয়ই এই অপরাধে সমান অপরাধী। এখানেও মুসলমানরা ইসলামি দলের নিকট ঈনসাফ হতে বঞ্চিত হয়। আর এখানে জামায়াত তাদের রাজনৈতিক অপরিপক্বতার কারনেই আওয়ামিলীগ এর পাল্লায় পড়ে নিজেও প্রতারিত হয়ে বেঈমানের খতায় নাম উঠিয়ে বসে।
তার পর ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। জামায়াতে ইসলামী ১৮ টি আসনে বিজয়ী হয়। যেহেতু আওয়ামিলীগ ও বিএনপির দুই নেতাই মহিলা ছিলো, সেহেতু মুসলমানদের নারী নেতৃত্ব হারাম হলেও অনিচ্ছায় বিএনপিকে সরকার গঠনে সমর্থন করে। কিন্তু ঐ সংসদেও জামায়াতে ইসলামিকে তার ন্যায্য অধিকার দেয় নি তৎকালীন বিএনপি। আসে ১৯৯৬ সালের নির্বাচন। তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে জামায়াত আবার আওয়ামিলীগের সাথে মিলে বহু আন্দোলন আর দেন দরবার করে তত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তন করে। শেষে সফল হয়ে জানায়াতের আন্দোলনের পুরাতন সঙ্গী আওয়ামিলীগ ক্ষমতায় আসে। এসেই লীগ সরকার একে একে ইসলাম বিদ্বেষী কর্যক্রম শুরু করে। দেশকে আবার ধর্ম নিরপেক্ষতার আদলে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদেরকে ডি-ইসলামাইজেশন শুরু করে। জামায়াত বুঝতে পারে তারা যে আওয়ামিলীগ কে বন্ধু ভাবত তা আসলে ভুল ছিলো, ততক্ষনে বিষয়টা হাতের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। প্রতারিত হয় মুসলমানরা।
তার পর ২০০১ সালে বিএনপির সাথে জোট করে জামায়াতে ইসলামি। ইসলামে নারী নেতৃত্ব হারাম হলেও জামায়াত নারীর নেতৃত্বে বিএনপির সাথে এবার শক্ত রাজনৈতিক গাঁটছড়া বেঁধে বসে। নিরঙ্কুশ ভাবে ক্ষমতায় যায়। শাসন করে ৫ বছর। এই বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ৫ বছর শান্তিতে দেশ শাসন করলেও ২১শে আগষ্ট বোমা হামলা নিয়ে বিএনপিকে কোন জবাব দিহীতার আওতায় আনতে পারে নি এবং আনার চেষ্টাও করে নি। তখন ভাবছিলো আওয়ামিলীগ দূর্বল হলে পরবর্তী উদিয়মান রাজনৈতিক দল জামায়াত, আর খলেদা মারা গেলে এমনিতেই বিএনপি শেষ হয়ে যাবে এই আশায় বুক বেঁধে শান্তির ঢেঁকুর তোলে কানে তুলা গোঁজে চোখ বন্ধ করে থাকে। এই শান্তির নিশ্চলতা ২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবর জামায়াতের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। জামায়াত এই ঘটনার কিছুদিন পূর্বেও বুঝেনি যে এই বিএনপি মেজর জিয়ার বিএনপি হতে সম্পূর্ণ আলাদা, এই বিএনপির সূঁতো এখন খালেদা জিয়ার হাতে নয়, এটা মি টেনপার্সেন্ট তারেকের হাতে। যা হবার তাই হলো, ২১ আগস্টের আদলে এবার আওয়ামিলীগকে দিয়ে জামায়াতকে চির বিদায়ের জন্য নাটক মঞ্চস্থ করে।২৮শে অক্টোবর ২০০৬ সালে হামলার বিষয়ে বার বার এনএসআই ও ডিজিএফআইয়ের সতর্ক বার্তা আসলেও এই খাম্বা তারেক এই রিপোর্ট গুলো খলেদা জিয়ার চোখের আড়াল করে ৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তখনকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী চুল খাড়া বাবরের মাধ্যমে এই লগিবৈঠার তান্ডবের ঘটনা ঘটায়।তখনও বোকা আবেগী জামায়াত বুঝতে পারেনি তারেকের নেতৃত্বে বিএনপির প্রতারনা। আর এখনও বুঝতে পারছে না।
জামায়াতে ইসলামী এই লীগ সরকারের আমলে সাজানো মামলায় অনেক নেতা হারিয়েছে এবং নিবন্ধনও হারিছে। কিন্তু বিএনপির সংস্পর্শ এখনও ছাড়তে পারে নি। ইসলাম পন্থিরা ভাবছে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে জামায়াত সহ ইসলামি দল গুলোর হিল্লে হবে, কিন্তু হবে না। ইসলামি দল গুলো এখনও উপলব্ধি করতে পারছে না যে জিয়াউর রহমানে বিএনপি আর এখনকার বিএনপি এক না। আপোষ হীন এক জবানের নেত্রী খালেদার হাতে আর বিএনপির নেতৃত্ব নাই। এখন বিএনপির ক্ষমতা বারতের "র" এর নিয়ন্ত্রনে, নাস্তিকদের হাতে, সর্বোপরি ইসলাম বিদ্বেষীদের মির্জা ফকরুলদের হাতে, ২৮শে অক্টোবরের কুশীলব মি.টে পার্সেন্ট ওরফে খাম্বা তারেকের হাতে।
এ বিএনপি এমন একটি দল যে দল ভারতের নূপূর শর্মা মহানবীকে অপমানের পরও একটি বক্তব্য দেয় নি, এদেশের হাজার হাজার আলেম নিধনের পরও আলেমদের পক্ষে একটাও বক্তব্য দেয় নি। বর্তমান ফিলিস্তিন ইস্যুতে একটা বিবৃতিও দেওয়ার মত নৈতিকতা নাই। ওদের নেতা মির্জা ফকরুল প্রকাশ্যে বলে আমরা ইসলামকে প্রমোট করি না। এমন কি চট্টগ্রামে বিএনপির সাবেক নেতার ছেলে হুম্মাম কাদেরের নারায়ে তাকবীর আল্লাহুআকবার স্লোগানে নাকি কেন্দ্রীয় নেতারা বিব্রত বোধ করে, আবার তা মিডিয়ার সামনে প্রকাশ্যে বলেও বেড়ায়। এবার ভাবুন এই দলটি তলে তলে কতটা ইসলাম বিদ্বেষীদের নিয়ন্ত্রনে আছে? কিন্তু বোকা ইসলামি দল গুলো বুঝে না। এরা মনে করে বিএনপি আওয়ামিলীগ হতে বেশী ইসলাম সহনশীল, আসলে তা নয়। আবারও প্রতারিত হচ্ছে।
আমি বলি কোন অনৈসলামিক দলকে সাপোর্ট দিয়ে নয়, বরং ইসলামি দল গুলোকেননিজেরা নিজেদেরকে সঙ্গে নিয়ে ইসলামি দল গুলোর আগাতে হবে। আর কোন ইসলামী দলের সাথে পরস্পর সহবস্থানে না থাকতে পারলে একলা চল নীতিতে অটল থাকতে হবে। ইসলামি দল গুলোর আদতে কোন বন্ধু নাই এটা উপলব্ধি করতে হবে। এক আল্লাহকে ভরসা করেই চলতে হবে। এটা তালেবান, হামাসকে দেখে শিখতে হবে।
আপনারা যে বাতিলের সহযোগী হয়ে ইসলাম কায়েম করতে চাচ্ছেন তা নিত্যন্তই ভুল। এ পথে প্রতারিত হওয়া ছাড়া আর কিছুই পাবেন না।
লেখক:চিকিৎসা, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ