expr:class='"loading" + data:blog.mobileClass'>

Wikipedia

সার্চ ফলাফল

শুক্রবার, ৮ আগস্ট, ২০২৫

ফ্যাসিবাদ বিরোধী একজন সিরাজ শিকদার

ফ্যাসিবাদ বিরোধী একজন সিরাজ শিকদার 

সিরাজ সিকদার 


 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পাশে শিরাজ শিকদারের গ্রাফিতি রয়েছে। কমরেড শিরাজ শিকদারের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক মতাদর্শ অনেকের অপছন্দ। তবে তার আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মতাদর্শ ছিলো আধিপত্যবাদীদের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। 


আদর্শিক বিরোধিতা না করে জুতা নিক্ষেপের কালচারটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা এনেছে,বামদের মোকাবেলা করতে না পেরে যারা গ্রাফিতি মুছতে যায়- তারা নিরেট অশিক্ষিত। 


নিচের লেখাটি তাদের উদ্দেশ্যে -


১৯৭২ সালে সিরাজ সিকদারের সেই খোলা চিঠিঃ ইন্দিরা গান্ধী জবাব দেবেন কি?


১৯৭২ সালের মার্চ মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এলে এই প্রচারপত্রটি রচনা ও প্রচার করা হয় ]


১। আপনার সেনাবাহিনী মিত্র বাহিনী। কিন্তু মিত্র বাহিনী কিভাবে পাক সামরিক ফ্যাসিস্টদের কয়েকশত কোটি টাকার অস্ত্র-যুদ্ধ সরঞ্জাম ভারতে নিয়ে গেল, পূর্ববাংলার বহু কলকারখানা, তার খুচরো অংশ, গাড়ী, উৎপাদিত পণ্য, পাট, চা, চামড়া, স্বর্ণ, রৌপ্য ভারতে পাচার করল?


আপনি আপনার দখলদার বাহিনী প্রত্যাহার করার কথা বলে জনগণকে ভাওতা দিচ্ছেন। আপনার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো বাঙালীদের দ্বারা আপনার উপনিবেশ পাহারা দেওয়া, বাঙালীদের দমন করা। এছাড়া অসংখ্য ভারতীয় দখলদার সৈন্য আপনি সাদা পোশাকে এবং বাংলাদেশ বাহিনী ও বাংলাদেশ রাইফেলের ইউনিফর্মে পূর্ববাংলায় রেখেছেন। আপনার সৈন্য প্রত্যাহারের কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা।


২। আপনি নিজেকে মুক্তি সংগ্রামের বন্ধু বলে জাহির করেন। কিন্তু নাগা, মিজো, কাশ্মিরী, শিখদের মুক্তি সংগ্রামকে কেন ফ্যাসিবাদী উপায়ে দমন করছেন?


ইহা কি প্রমাণ করে না আপনি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে পূর্ববাংলার মুক্তি সংগ্রামের সহায়তয়ার বেশ ধরেছেন? এ উদ্দেশ্য হলো পূর্ববাংলায় আপনার উপনিবেশ স্থাপন, আপনার হারানো পশ্চাদভূমি পুনরুদ্ধার, পূর্ববাংলা শোষণ ও লুন্ঠন করে আপনার আর্থিক ও রাজনৈতিক সংকট হ্রাস করা, চীন ও কমিউনিজম প্রতিহত করার ঘাঁটি স্থাপন করা।


৩। আপনি মিত্রের বেশে পূর্ববাংলার মাছ-মাংস-ডিম-তরকারী-ধান-চাল ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য, পাট, চা, চামড়া ও অন্যান্য কাঁচামাল, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, ভূমি, প্রাকৃতিক সম্পদ, প্রশাসন, দেশরক্ষা, শিক্ষা, সংস্কৃতি প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে শোষণ ও লুন্ঠন করেছেন, পূর্ববাংলায় আপনার উপনিবেশ কায়েম করেছেন।


এ উপনিবেশ কায়েমের জন্য আপনি পূর্ববাংলার দেশপ্রেমিকদের খোরাক হিসেবে ব্যবহার করেছেন।


যে সকল দেশপ্রেমিক বিশেষ করে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির কর্মী যারা আপনার গোলাম হতে রাজী হয়নি তাদেরকে ‘নকশাল’ অভিহিত করে আপনি খতম করিয়েছেন। এভাবে পূর্ববাংলার দেশপ্রেমিকদের রক্তে আপনি হাত কলঙ্কিত করেছেন।


এতদিন আপনি এ শোষণ ও লুন্ঠন গোপন চুক্তির মাধ্যমে করেছেন। বর্তমানে ২৫ বৎসরের শান্তি, মৈত্রী ও সহযোগিতার চুক্তির নামে আপনার তাবেদার বাংলাদেশ পুতুল সরকার প্রকাশ্যে আপনাকে বাঙালী জাতির দসখত লিখে দিয়েছে এবং আপনার শোষণ-লুন্ঠনকে ন্যায়সঙ্গত করেছে।


আপনার ও আপনার তাবেদারদের শোষণ ও লুন্ঠনের ফলে পূর্ববাংলায় ৭০-৮০ টাকা মণ হয়েছে চাল, নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্য হয়েছে অগ্নিমূল্য। অনাহার-অর্ধাহার ও বেকারীর হাহাকার উঠেছে পূর্ববাংলায়। পূর্ববাংলায় দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেছে। না খেয়ে লোক মরছে। পূর্ববাংলার জন্য আপনার দরদ উছলে পড়ছে, চাল ও অন্যান্য সাহায্য দ্রব্য পূর্ববাংলায় পাঠাবার কথা বলে বেড়াচ্ছেন, কিন্তু কত গুণ বেশী লুটে নিচ্ছেন তা তো বলেন না, এর ফলেই আজ ভারতে চাল ও খাদ্যদ্রব্যের দাম কমেছে।

এভাবে ভারতের অর্থনৈতিক সংকট আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ে আপনি উদ্ধার পাবার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন।

৪। আপনি গণতন্ত্রের কথা বলেন। কিন্তু আপনার দেশে কি আপনি সামরিক বাহিনী, রিজার্ভ পুলিশ, পুলিশ, সশস্ত্র যুব কংগ্রেসের পাণ্ডাদের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শাসন চালাচ্ছেন না? ‘নকশাল’ অভিহিত করে শত-সহস্র জনগণকে হত্যা করছেন, পাক সামরিক ফ্যাসিস্টদের সাথে আপনার নির্যাতনের কোন পার্থক্য আছে কি?

৫। আপনি গলাবাজি করে বেড়ান আপনি ধর্ম নিরপেক্ষ। বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী দস্যুদের তাবেদার কংগ্রেসস্থ হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রতিক্রিয়াশীল জমিদার, জোতদার, পুঁজিপতি ও বুদ্ধিজীবীরা যদি পূর্ববাংলার মুসলিম জনগণের উপর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক নিপীড়ন না চালাতো তবে কি পূর্ববাংলার জনগণ পৃথক ভূ-খণ্ড দাবী করতো? তারা এ কারণেই বঙ্গভঙ্গ প্রস্তাব সমর্থন করেছে।

১৯৪৭-এর পরে ভারতে মুসলিম বিরোধী কয়েক শত রায়ট হয়েছে। অবাঙালী মুসলমান, কলিকাতা, আসাম, ত্রিপুরার লক্ষ লক্ষ নিরীহ বাঙালী মুসলমান জনগণকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাদেরকে বলপূর্বক কপর্দকহীন অবস্থায় পূর্ববাংলায় ঠেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী যারা ১৯৪৭ সালে ভারতে গিয়েছিল তাদেরকে আপনি শরনার্থীর বেশে পূর্ববাংলায় পাঠাচ্ছেন, আপনার পুতুল সরকারের মাধ্যমে তাদের ভূ-সম্পত্তি ফেরত দেওয়াচ্ছেন।

কিন্তু ভারত থেকে বিতাড়িত বিহারী এবং বাঙালী জনগণকে আপনি তাদের জন্মস্থান ভারতে ফেরত নিতে, তাদের সম্পত্তি ফেরত দিয়ে তাদেরকে পুনর্বাসন করতে কেন রাজী হচ্ছেন না? আপনি আফ্রিকা, বার্মা, সিংহল থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ফেরত নিয়েছেন। কিন্তু ভারত থেকে বিতাড়িত বাঙালী মুসলমানদের ফেরত না নিয়ে আপনি কি প্রমাণ করছেন না যে, ‘মুসলিম’ এই কারণে তাদেরকে ফেরত নিচ্ছেন না? ইহা প্রমাণ করে আপনি সাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ নন। আপনার ধর্মনিরপেক্ষতার বুলির উদ্দেশ্য হলো পূর্ববাংলায় আপনার উপনিবেশ বজায় রাখার পথে মুসলিম ধর্মের বাধা দূর করা এবং ধর্মীয় নিপীড়ন চালানো।

৬। আপনি ‘সমাজন্ত্র’, ‘গরিবী হটাও’ বুলি কপচাচ্ছেন। এটা কি জনগণকে ভাওতা দেওয়া ছাড়া আর কিছু? সমাজতন্ত্রের নামে ভারতে চলছে সোভিয়েট সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ, সামন্তবাদ এই চার পাহাড়ের নির্মম শোষণ-লুন্ঠন। এর ফলে জনগণ অকল্পনীয় খারাপ অবস্থায় পতিত হয়েছে।

আপনার ‘গরিবী হটাও’, ‘সমাজতন্ত্র’-এর বুলির ভাওতা ঢাকার জন্য অন্য দেশ শোষণ ও লুন্ঠন করে চরম অর্থনৈতিক সংকট কাটাবার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন।

অতীতে জাপানী ফ্যাসিস্টরা ‘এশিয়াসহ উন্নত অঞ্চল’ এর বুলিকে এশিয়ায় উপনিবেশ স্থাপনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। তাদের দখলকৃত এলাকায় তথাকথিত স্বাধীন পুতুল সরকার বসায়।

আপনিও জাপানী ফ্যাসিস্টদের কবরে যাওয়ার পদচিহ্ন বেয়ে অগ্রসর হচ্ছেন, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার বুলিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আপনার সম্প্রসারণবাদী আকাঙ্খা পূরণের চেষ্টা করছেন।

পূর্ববাংলার জাতীয় সমস্যার সুযোগ গ্রহণ করে পূর্ববাংলায় ছয় পাহাড়ের দালাল মীরজাফরদের সহায়তায়

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে!

  দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে! এক.   শুনতে খারাপ শোনালেও এটা সত্য, রবীন্দ্রনাথের...