expr:class='"loading" + data:blog.mobileClass'>

Wikipedia

সার্চ ফলাফল

শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫

ভোলাগঞ্জের পাথরের নীচে চাপা পড়া সত্য, ভারতের দালালির পোস্টমর্টেম

 ভোলাগঞ্জের পাথরের নীচে চাপা পড়া সত্য, ভারতের দালালির পোস্টমর্টেম 



প্রকৃতি ধ্বংশ ও তার বিরূপ আচরনের পেছনে যতটা না প্রকৃতি নিজেই দায়ি তার চেয়ে শত গুন বেশী দায়ি মানুষ। এই বন ভূমি উজার করা হতে নদী ধ্বংশ আর পরিবেশ ধ্বংস সব কিছুর পেছনেই মানুষের অতি বাড়াবাড়ি দায়ি। 


তবে মানুষ ও জীব জন্তু কিন্তু এই পরিবেশেই থাকতে হয়, এই ধরনী সৃষ্টির উদ্দেশ্যই হলো মানুষ ও জীব জন্তুকে তাতে বিচরন করে বেঁচে থাকার জন্যই। আর কোনো বিকল্প নাই। বাস্তু সংস্থান নামক একটি সৃষ্টিগত বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রকৃতি তার ভারসাম্য রক্ষা করে।


দুনিয়ার যে কাজই মানুষ পরিবেশে করে তার একটা না একটা পরিবেশের ক্ষতি করতেই হবে।যেমন সিগারেট খেলে বায়ু দূষন হবে, সিএনজি চালিত গাড়ি চালালেও পরিবেশ দূষন হয় এবং মাটির নীচের গ্যাস কমে যায়, আবার মাটির নীচের গ্যাস যত বেশি উত্তোলন হবে তত বেশী ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হয়। এই আপনি যে এই মোবাইলে আমার লেখা পড়ছেন কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন তাতেও পরিবেশের মারাত্মক প্রভাব পড়বে, কেননা আপনাদের মনে আছে ২০১৩ সালে বাংলাদেশে থ্রিজি মোবাইল নেটওয়ার্ক চালুর পর পরিবেশবাদীরা আন্দোলন পর্যন্ত করেছে এই বলে জীব বৈচিত্র্যে প্রভাব ফেলবে এই মোবাইল টাওয়ারের নেটওয়ার্ক। কিন্তু আজ তারাই ফোর জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে টিভি চ্যানেলে বসে বড় বড় লেকচার ছাড়ে।


এই পরিবেশ সচেতনতা নিয়ে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা ইউরোপ ও আমেরিকার উদাহরন টানে। আসলেই এই সকল দেশের পরিবেশ আমাদের দেশের পরিবেশ হতে খুব ভালো কিন্তু আদতে বিশ্ব ভ্রম্মান্ডের পরিবেশ কারা ধ্বংস করছে? বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিবেশের ক্ষতি হয় কার্বন নি:সরন, কেননা এটা ওজন স্তরের ক্ষয় ক্ষতি করে। আর এই কার্বন উৎপাদনের শীর্ষে কারা আছে জানেন? এক নম্বরে আমেরিকা,দ্বিতীয় চীন, তৃতীয় রাশিয়া, চতুর্থ ভারত। এসকল দেশকে জাতিসংঘ বার বার কার্বন নি:সরন কমানোর জন্য বিগত ২৫ বছর যাবত বলে আসলেও দেশগুলো এ প্রস্তাবে রাজি হয় না কারন এতে এদের প্রচু অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে কেননা এটা করতে হলে এই সকল দেশের কলকারখানায় উৎপাদন কমিয়ে দিতে হবে। কারন ওরা শিল্পোন্নত দেশ। আরো অনুরূপ হাজারো উদাহরন দেওয়া যায়। তারা নিজেরা বসতিকে ধ্বংস করে আবার অন্যান্য দেশে দালাল বসিয়ে পরিবেশ নিয়ে মাতামাতি করায়।


এবার আসেন বাংলাদেশের বেলায় কি হচ্ছে। আমার এই লেখার শুরুর অংশ পড়ে আবার ভাববেন না আমি পরিবেশ ধ্বংস কারী। না আমি বরং এখানে উন্নত রাষ্ট্রগুলোর একটা দ্বিমুখী আচরনের কথা বলবো। বাংলাদেশ এমনিতেই প্রাকৃতিক ঝুঁকির দেশ, বন্যা, অনাবৃষ্টি, অতি বর্ষন, জলোচ্ছ্বাস ও নদী ভাঙ্গনের দেশ বাংলাদেশ। এদেশের পরিবেশ সম্পর্কে আমরাই সচেতন থাকতে হবে, সচেতন থাকাই জরুরী।


কথাটা হলো সিলেটের সাদা পাহাড়ের পাথর সরানোর বিষয়ে। গত কিছুদিন যাবত এই পাথর উত্তোলন নিয়ে খুব মাতামাতি হচ্ছে, পরিবেশ গেলো, সাদা পাথর গেলো, রাজনৈতিক দল গুলো চাদাবাজী করছে এইসব নিয়ে। আদতে কি এই কারনেই এসকল মাতামাতি নাকি তার পেছনেও ঘটনা আছে? আমরা আবেগী জাতি,আমাদের আবেগ জাগলে বিবেক লোপ পায়। 


২০১৬ সালের পূর্ব পর্যন্ত ভোলাগঞ্জের এসকল কোয়ারিতে পাথর ক্রাশ করা হত। বাংলাদেশ থেকে সেই পাথরই তামাবিল হয়ে মেঘালয় আসাম ত্রিপুরাতে রপ্তানি হত ভারত হতে আসা পাথর গুলো।


ভারতের জন্যে ঐতিহাসিক দুর্ভাগ্য ছিল এই ভোলাগঞ্জ জাফলং হাতছাড়া হওয়া। মেঘালয়ের পাহাড় থেকে স্রোতের সাথে গড়িয়ে আসা পাথর সারি ও ডাউকি নদী হয়ে এসে থামতো এই বাংলাদেশের ভোলাগঞ্জের জাফলংয়ে। 


এ্বাংলাদেশের এই অঞ্চলে সেই পাথর উত্তোলনের ফলে ভারত তার অংশে পাথর জমা রাখতে পারতো না। যার কারনে তারা নিজের পাহাড়ের পাথরই তাকে আবার বাংলাদেশ থেকে কিনে নিতে হত।


ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরির র(Raw) মেটারিয়ালস ছিলো এই পাথর। অনেকে হয়তো জানে না সিলেটের এই সিমেন্ট ফেক্টরিতে বিশ্বের অন্যতম উন্নত ও সেরা সিমেন্ট উৎপাদন হতো এক সময়। পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দিয়ে এই কারখানাটাকেই অচল বানিয়ে দেয়া হইছে এদেশীয় ভারতের দালালদের দিয়ে,এটা কাদের স্বার্থে হলো? যে দেশ হতে বাংলাদেশে পাথর গুলো আসে সে দেশে যেসকল পাথর এখন আটকে থাকে তারা কি পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখছে? না রাখে নি,বরং তারাই এখন বাংলাদেশের পাথর উত্তোলন না করার ফলে নিজের দেশে জমা হওয়া পাথর নিজেরাই উত্তোলন করছে আর বিপরীতে বাংলাদেশে পরিবেশ ধ্বংশের অজুহাতে তাদের দালালদের দিয়ে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ আহরন হতে বিরত রাখছে।


এই পরিবেশেই তো মানুষ থাকবে, এই পরিবেশ হতেই মানুষ সম্পদ আহরন করতে হবে। পৃথিবীর কাছাকাছি এমন কোনো গ্রহও নাই যে মানুষ এসকল সম্পদ আহরন করবে। তবে কথা হলো এই প্রকৃতিক সম্পদ আহরন যেন মানুষের কল্যান যতক্ষণ হয় ততক্ষনই করা হয়, সাম্যাবস্থা ধ্বংস না করে এটা মাথায় রেখেই করতে হবে।


পরিবেশ রক্ষার নামে পাথর উত্তোলন বন্ধ করার পর ভারত তার অংশে পাথর জমা করার সুযোগ পায়। সেখানে সে শত শত কোয়ারি স্থাপন করে। বাংলাদেশের কোয়ারি বন্ধ করিয়ে ভারত বছরে গড়ে ৫০০-৭০০ মিলিয়ন ডলারের ক্রাশড স্টোন বাংলাদেশের কাছেই বিক্রি করে। আর এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করে ভারতের চরন দাসী সাবেক পলাতক প্রধান মন্ত্রী, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার মাধ্যমেই। 


দেশের চাহিদা মিটিয়ে যে পাথর আমরা তাদের কাছে বিক্রি করতাম সেই পাথরই পরিবেশ রক্ষার আড়ালে ত্নিজেরা সংগ্রহ করে ভারত আমাদের কাছে বিক্রি করছে। আমরা ফ্রীতে পাওয়া পাথর বিপুল ডলারের বিনিময়ে কিনে আনচ্ছি ভারত হতে। লাভ হচ্ছে ভারতীয় দাদাদের।


বিনিময়ে আমাদের হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, অর্ধশত কোয়ারি বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। আর এর ফাঁকে কপালে ডেকে এনেছি বন্যা নামক ভয়ংকর অভিশাপ।   


২০২২ এবং ২৪ সালে সিলেট অঞ্চলে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার আগমন ঘটে। ২২ সালের জুনে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল ১৪৫২ মিমি আর ২৪ এর জুনে ২১৫৫ মিমি। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির বৃষ্টির পানি পাহাড়ি ঢল হয়ে ডাউকি নদী ও সারি নদী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।


পাথর উত্তোলন বন্ধের ফলে এই নদীগুলোর নাব্যতা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়,গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। পরিবেশ রক্ষার প্রতিদানে আমরা ডেকে নিয়ে আসি ভয়াল বন্যার করাল গ্রাসকে। ভয়াবহ বন্যায় মানুষ ও পশুপাখির জীবন হারায়, এই বিষয়ে সুন্দরী কোটার উপদেষ্টা রেজওয়ানাদের কোনো কথা নাই। এখানে পরিবেশ ধ্বংসের কোনো নজির তারা দেখছে না,কেননা এতে কোনো বিদেশী প্রভুর স্বার্থ জড়িত নাই।


এই অঞ্চলের পাথর ছিল আমাদের জন্যে আশীর্বাদ, প্রকৃতির অন্যন্য অর্থনৈতিক উপহার। রাষ্ট্র এই পাথর শিল্পকে চালু রাখলেই আমাদের অর্থনীতি শক্তিশালী হত, নির্মাণ শিল্পের আমদানি নির্ভরতা কাটিয়ে আমরা রপ্তানিতে এগিয়ে যেতাম। 


আপনারা দেখেন চিন্তা করে যে মধ্যপ্রাচ্যে প্রচুর পরিমান তেল উত্তোলন হচ্ছে,আর এই খনিজ তেল গুলো আহরন ও জমা করছে আমেরিকা,ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশ গুলো। ঐখানে খনি উত্তোলনের কারনে যে আশেপাশের দেশ গুলো ভুমিকম্পের ঝুঁকিতে পড়ছে, মরুকরন বাড়ছে, পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে, সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদীদের কোনো শব্দ করতে দেখবেন না, আইন যত প্রয়োগ হয় তা শুধু গরিবের বউয়ের জন্যই।


বাংলাদেশের মানুষ গুলো প্রচন্ড আবেগ প্রবন,তাদের আবেগ একবার জাগিয়ে তুলতে পারলেই কেল্লাফতে।আর পাথরের আবেগকে পুঁজি করেই ভারত আমাদের পকেট কেটে ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে অপর দিকে আমরা সাদা পাথরের ঝলকানিতে অন্ধ হয়ে বানের পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছি প্রতি বছর!


আমি বলি সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় পাথর তুলে কাজে লাগানো এবং ভারতের পানির স্রোতে সেইখানে পুনরায় নতুন পাথর আসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক। মানুষ প্রকৃতি হতেই সম্পদ আহরন করতে হবে, মানুষও প্রকৃতির দান, বাস্তুসংস্থানের সর্বোচ্চ স্তরের প্রানী মানুষ, এই পরিবেশই সম্পদ প্রদান করবে আবার বাস্তুসংস্থানের মাধ্যমেই প্রকৃতি তার ক্ষয়ক্ষতি পূরন করে নিবে,এটা নিয়ে এত উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নাই। তবে এই সম্পদ আহরন যেন প্রয়োজন অনুপাতে হয়, এটা যেনো আগ্রাসী না হয়।


লেখক:চিকিৎসক, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

ভোলাগঞ্জের পাথরের নীচে চাপা পড়া সত্য, ভারতের দালালির পোস্টমর্টেম

  ভোলাগঞ্জের পাথরের নীচে চাপা পড়া সত্য, ভারতের দালালির পোস্টমর্টেম  প্রকৃতি ধ্বংশ ও তার বিরূপ আচরনের পেছনে যতটা না প্রকৃতি নিজেই দায়ি তার চে...