expr:class='"loading" + data:blog.mobileClass'>

Wikipedia

সার্চ ফলাফল

শুক্রবার, ২৮ মার্চ, ২০২৫

মুসলমানরা যেভাবে দৈনিক পাঁচবার আল্লাহর সাথে ওয়াদা ভঙ্গ করে

"মুসলমানরা যেভাবে দৈনিক পাঁচবার আল্লাহর সাথে ওয়াদা ভঙ্গ করে"


আমরা মুসলমানরা প্রতিদিন পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ি।  পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে ১৭ রাকাত ফরজ নামাজ পড়তে হয়। আর প্রতি নামাজেই সূরা ফাতিহা পাঠ করি আমরা। এই নামাজে ১৭ বার সূরা ফাতিহা পড়ে আমরা আল্লাহর সাথে বিনয়ের সাথে ওয়াদা করি। আসুন আগে জেনে নেই আমরা নামাজে আল্লাহর সাথে কি ওয়াদা করি? 

চলুন দেখে নিই:

الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ -

 যাবতীয় প্রশংসা মহান আল্লাহ তা’আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।

الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

 যিনি পরম করুনাময়, মেহেরবান ও দয়ালু।

مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ


 বিচার দিনের একমাত্র অধিপতি।

إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ

 আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।

اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ

আমাদের সরল পথ দেখাও।

صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ 

সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।



আসলে এ সূরাটিকে ইসলামি চিন্তাবিদরা  একটি দোয়া বলে বর্ননা করে । কেননা কোন ব্যক্তি এ আল কোরআন পড়তে শুরু করলে আল্লাহ প্রথমে তাকে এ দোয়াটি শিখিয়ে দেন। কোরআনের  শুরুতে এর স্থান দেয়ার অর্থই হচ্ছে এই যে, যদি যথার্থই এ গ্রন্থ থেকে তুমি লাভবান হতে চাও, তাহলে নিখিল বিশ্বের মালিক আল্লাহর কাছে দোয়া এবং সাহায্য প্রার্থনা করো। 

মানুষের মনে যে বস্তুটির আকাংখা ও চাহিদা থাকে স্বভাবত মানুষ সেটিই চায় এবং সে জন্য দোয়া করে। আবার এমন অবস্থায় সে এই দোয়া করে যখন অনুভব করে যে, যে সত্তার কাছে সে দোয়া করছে তার আকাংখিত বস্তুটি তারই কাছে আছে। কাজেই কোরআনের শুরুতে এই দোয়ার শিক্ষা দিয়ে যেন মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, সত্য পথের সন্ধান লাভের জন্য এ গ্রন্থটি পড়, সত্য অনুসন্ধানের মানসিকতা নিয়ে এর পাতা ওল্টাও এবং নিখিল বিশ্বের মালিক ও প্রভু মহান আল্লাহ হচ্ছেন জ্ঞানের একমাত্র উৎস। একথা জেনে নিয়ে একমাত্র তাঁর কাছেই পথনির্দেশনার আরজি পেশ করেই এ গ্রন্থটি পাঠের সূচনা কর। 

এ বিষয়টি অনুধাবন করার পর একথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, কুরআন ও সূরা ফাতিহার মধ্যকার আসল সম্পর্ক কোন বই ও তার ভূমিকার সম্পর্কের পর্যায়ভুক্ত নয়। বরং এ সম্পর্কটি দোয়া ও দোয়ার জবাবের পর্যায়ভুক্ত। সূরা ফাতিহা বান্দার পক্ষ থেকে একটি দোয়া। আর সম্পূর্ণ কুরআনে তার জবাব আল্লাহর পক্ষ থেকে। বান্দা দোয়া করে, হে মহান প্রভু! আমাকে পথ দেখাও। জবাবে মহান প্রভু এই বলে সমগ্র কুরআন তার সামনে রেখে দেন এই নাও সেই হিদায়াত ও পথের দিশা যে জন্য তুমি আমার কাছে আবেদন জানিয়েছ।

কিন্তু আমি মনে করি এই সূরাটি নামাজে পাঠের মাধ্যমে আমরা সৃষ্টি কর্তার সাথে প্রতি দিনই ওয়াদা করি একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে। আমরা এই সূরার একটি অংশে পাঠ করি:

اِیَّاكَ نَعْبُدُ وَ اِیَّاكَ نَسْتَعِیْنُؕ

আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদাত করি এবং একমাত্র তোমারই কাছে সাহায্য চাই।


এই ইবাদাত শব্দটিও আরবী ভাষায় তিনটি অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 

(১) পূজা ও উপাসনা করা আরাধনা।
(২) আনুগত্য ও হুকুম মেনে চলা এবং 
(৩) বন্দেগী ও দাসত্ব করা। 

এখানে একই সাথে এই তিনটি অর্থই প্রকাশিত হয়েছে। অর্থাৎ আমরা আল্লাহর উপাসনা করি, আল্লাহর আনুগত্য করি এবং আল্লাহর বন্দেগী ও দাসত্বও করি। আর আমরা তোমার সাথে এ সম্পর্কগুলো রাখি কেবল এখানেই কথা শেষ নয় বরং এ সম্পর্কগুলো আমরা একমাত্র তোমারই সাথে রাখি। এই তিনটি অর্থের মধ্যে কোনো একটি অর্থেও অন্য কেউ আমাদের মাবুদ নয়। 

 আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্ক কেবল ইবাদাতের নয় বরং আমাদের সাহায্য প্রার্থনার সম্পর্কও একমাত্র তাঁরই সাথে রয়েছে। আমরা জানি আল্লাহ সমগ্র বিশ্ব-জাহানের রব। সমস্ত শক্তি আল্লাহর হাতে কেন্দ্রীভূত এবং তিনি একাই যাবতীয় নিয়ামত ও অনুগ্রহের অধিকারী। তাই আমাদের অভাব ও প্রয়োজন পূরণের জন্য আমরা একমাত্র আল্লাহর দুয়ারে ধর্ণা দেই। আল্লাহর সামনে নিজেদের সপোর্দ করে দেই এবং তাঁর সাহায্যের ওপরই নির্ভর করি। এ জন্য আমাদের এই আবেদন নিয়ে আমরা তোমার দুয়ারে হাজির হয়েছি। আর এটিই আমাদের ওয়াদা প্রতিনদিন পাঁচ বেলা করে কমপক্ষে ১৭ বার। এ যেন বার বার ওয়াদা করছি আল্লাহর সাথে।

এই ওয়াদায় আমরা শপথ করি যে আমরা আল্লাহর সকল বিধি বিধান মেনে চলি এবং চলব। এই চলা কাদের মত করে চলব? যারা আল্লাহর হুকুম মেনে সীরাতুল মুসতাকীমের পথ অবলম্বন করে আল্লাহকে রাজী ও খুশি করেছেন এবং যাদেরকে আল্লাহ তাঁর অনুগত বান্দা হিসাবে কবুল করেছেন। ঐ অনুগত বান্দার মত করে আল্লাহর হুকুম মত আমরা আমাদের ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালনা করেই আমারা সীরাতুল মুসতাকীমের পথে যেতে চাই।

ঠিক এই কথা বলার পর আমরা আল্লাহকে আরো অনুরোধ করি আমাদের (সরল ও) অবিচল পথটি দেখিয়ে দাও,' হে আল্লাহ তায়ালা, আমাদের সোজা রাস্তা চিনিয়ে দাও ৷ হে আল্লাহ, এ পথ চিনিয়ে দেয়ার পর তাতে অটল থাকারও শক্তি দাও। কেননা পথ চেনা এবং সে পথে টিকে থাকা এ দু'টোই আল্লাহ তায়ালার হেদায়াত ও রহমতের ফলশ্রুতি মাত্র । এ ব্যাপারে আল্লাহর দিকে নিবিষ্ট হওয়া এই বিশ্বাসেরই অপরিহার্য পরিণাম যে, আল্লাহ তায়ালাই সাহায্যকারী এবং তিনিই মদদগার। 'সেরাতুল মোস্তাকিম' সঠিক পথের দিশাই সেই মহান নেয়ামত যা পাওয়ার জন্যে মোমেন আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে। সেরাতুল মোস্তাকিমের দিকে পথনির্দেশই দুনিয়া আখেরাতের সৌভাগ্যের নিশ্চয়তা বিধানকারী জিনিস । কেননা সঠিক পথের হেদায়াত হচ্ছে সঠিক অর্থে মানবীয় প্রকৃতির সেই আল্লাহর অভীষ্টের দিকে ধাবিত হওয়া, যা মানুষ ও এই সৃষ্টি জগতের প্রতিটি চলন বলনকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দিকে এককভাবে নিবিষ্ট রাখা।

আমরা কি নামাজ শেষে বের হয়ে ব্যক্তি জীবনে আল্লাহর দেওয়া বিধান মত চলি না শয়তানের কুমন্ত্রণা মত চলি? পারিবারিক জীবন কি আল্লাহর দেওয়া বিধান মত চালাই না বাতিল শক্তির চাকচিক্যময় নিয়মে চালিয়ে আল্লাহর অবাধ্যতা করি? আমাদের অর্থনৈতিক লেনদেন কি ইসলামি নিয়মানুযায়ী করি না সুদের মত জঘন্য পাপের মাধ্যমে করি?

আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবন কি আল্লাহর দেওয়া খিলাফতের নিয়মে করি না বাতিল, নাস্তিক ও সেক্যুলারদের সমাজ তন্ত্র, পুঁজিবাদ, গনতন্ত্রের মত খোদা দ্রোহী উপায়ে পরিচালানা করি? আমরা তো নামাজে দাঁড়িয়ে ওয়াদা করছি এসকল নিয়ম আল্লাহর দেওয়া বিধান মতে করব কিন্তু নামাজ শেষে কি তার নিয়ম মত চলি? যদি না হয় আমাদের ওযাদার কতটুকু বাস্তবায়ন করলাম? নাকি ওয়াদা ভঙ্গ করলাম?

আমরা কি একবারও ভেবে দেখেছি যে এই ওয়াদা করার পর নামাজ শেষ করে আমরা কি আমাদের শপথের উপর অবিচল থাকি? নাকি ওয়াদার কথা মুহূর্তে ভুলে আবার শয়তানের দেখনো পথে নিজেকে পরিচালনা করি? যদিমতা না হয় তবে মনে রাখবেন এই নামাজ পড়ার পর আমরা নিজের ওয়াদা ভঙ্গ করে শয়তানের দেখনো পথে যে নিজেকে পরিচালিত করি তা নিত্যান্তই স্ববিরোধীতা ও অবাধ্যতা আর এ অবাধ্যতার জন্য নিশ্চয়ই একদিন আল্লাহ আমাদের পাকড়াও করবেন। আল্লাহ সবাইকে নামাজে আল্লাহর সাথে করা ওয়াদা মেনে চলার তাওফিক দিক,(আমীন)।

লেখক:
ডা.বশির আহাম্মদ, চিকিৎসক, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী। 


বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০২৫

অযু নিয়ে নাস্তিকদের বিভ্রান্তিকর প্রশ্নের দাঁত ভাঙ্গা ভাঙ্গা

 

অযু নিয়ে নাস্তিকদের বিভ্রান্তিকর প্রশ্নের দাঁত ভাঙ্গা জবাব






অযু নিয়ে নাস্তিকদের বিভ্রান্তিকর প্রশ্নের দাঁত ভাঙ্গা ভাঙ্গা 
প্রশ্নঃপায়ু পথে বায়ু নির্গত হলে অজু করতে হয় কেন? বায়ু বের হয় পায়ু পথে আর ধূতে হয় হাত, মুখ বিষয়টা কি মজার নয়? এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি?
 
জবাবঃ
প্রশ্নটা মুসলমানদেরকে অপ্রস্তুত করার জন্য চমৎকার একটা কথা। আসলেই তো তাই, পায়ুপথে বায়ু বের হলে অযু করতে হয়, অথচ পায়ুপথ ধুতে হয় না। কি মজার বিষয় না? 

আসুন আগে শরীয়ত হতে ব্যাখ্যা দেই তার পর বিজ্ঞান হতে দেবো।

শরীয়ত হতে এই জবাবের জন্য আমাদের জানা দরকার অজু ও ইবাদত কি এবং ইবাদতের জন্য
অজুর প্রয়োজনীয়তা কি!

অজু কিঃ
অজু (وضوء) শব্দের আভিধানিক অর্থ সৌন্দর্য ( الحسن) ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা (النظافة)। অজুর মাধ্যমে বাহ্যিকভাবে অজুর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়। অপর দিকে অজুর কারণে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হতে গুনাহ ঝরে গিয়ে সেগুলো পাপমুক্ত হয়ে নূরানী ও উজ্জ্বল হয়ে যায়। শরিয়তের পরিভাষায় অজু হলো- নির্দিষ্ট অঙ্গসমূহে নির্ধারিত পদ্ধতিতে পানি প্রবাহিত করা।
[الفقه على المذاهب الاربعة পৃষ্ঠা ৪৬]

অজুর হুকুম -
অজু মানে নাপাকী ও অপবিত্রতা দূর করা। ফলে অজুর মাধ্যমে ফরজ ও নফল যেমন নামায, তেলাওয়াতে সেজদা, শোকরের সেজদা, বায়তুল্লাহ্র তাওয়াফ ইত্যাদি আদায় করা যায়। সুতরাং উপরিউক্ত কাজ সমূহ আদায়ের জন্য অজু করা ফরজ-আবশ্যক। অতএব, এ কাজগুলো অজুবিহীন ব্যক্তির জন্য জায়েয নয়। অনুরূপ ক্বোরআন শরীফ স্পর্শ করার জন্য অজু ফরজ।
অজুর আধ্যাতিক ফজিলতের পাশাপাশি রয়েছে শারীরিক(বৈজ্ঞানিক) উপকারিতা।দৈনিক পাঁচবার নামাজের জন্য অজু করলে শরীরে নির্ধারিত অংগের সকল ধুলো ময়লা পরিষ্কার হয় এতে রোগ জীবানু থেকে রক্ষা পেয়ে রোগাক্রান্ত হওয়া থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

ইবাদত কি ও কেনঃ
******************
‘ইবাদাত শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো:- চূড়ান্ত বিনয়, আনুগত্য ও বশ্যতা।

শারী‘আতের পরিভাষায়:-
প্রকাশ্য কিংবা গোপনীয় যতসব কথা ও কাজ আল্লাহ ভালোবাসেন ও পছন্দ করেন, সে সবের একটি সামষ্টিক নাম হলো ‘ইবাদাত।
তাই যতসব কথা-বার্তা ও কাজ-কর্মকে আল্লাহ পছন্দ করেন,
যেমন:-
সালাত (নামায) ক্বায়িম করা, সিয়াম (রোযা) পালন করা, ক্বোরবানী, নয্‌র-মানত প্রদান করা, সাদাক্বাহ, যাকাত প্রদান করা, আল্লাহ্‌র নিকট প্রার্থনা (দু‘আ) করা, আল্লাহ্‌কে ডাকা, আল্লাহ্‌র প্রতি ভয় ও আশা পোষণ করা, আল্লাহ্‌র উপর ভরসা করা, আল্লাহ্‌র তাছবীহ্‌ (মহিমা), তাহ্‌মীদ (প্রশংসা), তাকবীর (মহত্ব), তাহ্‌লীল (আল্লাহ্‌র একত্ব) বর্ণনা করা, ক্বোরআনে কারীম তিলাওয়াত করা, ক্বোরআন ও ছুন্নাহ্‌তে বর্ণিত ও নির্দেশিত দু‘আ ও যিকর-আযকার করা, রাছূলের প্রতি দূরুদ পাঠ করা ইত্যাদি, এ সব প্রতিটি কাজ হলো একেকটি ‘ইবাদাত।
রাছূলের (সাঃ) অনুসৃত ও প্রদর্শিত পন্থানুযায়ী একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের উদ্দেশ্যে, তাঁরই (আল্লাহ্‌র) সন্তুষ্টি লাভের নিমিত্তে, তাঁর (আল্লাহ্‌র) প্রতি শ্রদ্ধাপূর্ণ ভয় ও সর্বোচ্চ ভালোবাসা নিয়ে, তাঁর প্রতি পূর্ণ বশ্যতা ও আনুগত্য প্রদর্শন পূর্বক তাঁর (আল্লাহ্‌র) মহত্বের সম্মুখে অবনত মস্তকে চূড়ান্ত বিনয়ের সাথে আল্লাহ্‌র নিকট উত্তম প্রতিদান লাভের আগ্রহ ও সুদৃঢ় আশা নিয়ে উপরোক্ত যে কোন কর্ম সম্পাদন করাকে আল্লাহ্‌র ‘ইবাদাত বলা হয়।
যেসব ইবাদতের জন্য অজু বাধ্যতামূলক তার মধ্যে নামাজ প্রথম ও প্রধান। অন্যান্য ইবাদতের ক্ষেত্রে অজুর বাধ্যবাধকতায় কিছু বিশেষ ছাড় রয়েছে।
নামাজের জন্য শুধু শরীর পাকই যথেষ্ট নয়।প্রয়োজন দেহ,মন,পোশাক,নামাজের স্থান সব কিছুর পবিত্রতা ও মনের ঐকান্তিক একাগ্রতার সাথে চূড়ান্ত বিনয়, আনুগত্য ও বশ্যতা স্বীকার।এর যেকোন একটির অভাব ইবাদতের অপূর্ণতা এনে দিবে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে বায়ু ত্যাগে অজুর কি প্রয়োজন?
আগেই বলেছি একাগ্রতা ইবাদতের অন্যতম শর্ত। এখন আপনি নামাজে দাঁড়ালেন আর এসময় বিভিন্ন পাশ থেকে ভুটভাট বায়ু ছাড়ছে, পরিবেশ কেমন হবে? একাগ্রতা থাকবে নাকি পরিবেশ নষ্ট হবে?
একটা জাগতিক উদাহরণ দিচ্ছি--
ধরেন আপনি যদি কোন অফিসে চাকরি করেন সেই অফিসে আপনার বসের সামনে বসে আছেন তখন বায়ু নির্গমন করতে পারবেন? সেটা কেমন দেখাবে?
অফিস বাদ দেন!! কয়েকজন বসে আছেন- এ অবস্থায় বায়ু ত্যাগ কেমন লাগবে?
তাহলে ভেবে দেখুন আপনার প্রতিপালক, মহাবিশ্বের মালিকের সামনে দাঁড়াচ্ছেন ইবাদতের জন্য আর ভুট- ভাট বায়ু ত্যাগ করছেন !!! কেমন লাগবে বিষয়টা?
ইবাদতের একাগ্রতা কি আসবে নাকি পরিবেশ নষ্ট হবে?
স্বাভাবিকভাবে একাগ্রতা ও পরিবেশ উভয়ই নষ্ট হবে।
মহান রব সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাবান! তিনি যা কিছুরই নির্দেশ দেন তা তার বান্দার জন্য মঙ্গলজনক ও কল্যানকর। তিনি কোন বোঝা তার বান্দার উপর চাপিয়ে দেননা।
এজন্যই নামাজের সময় বায়ু নির্গত হওয়ার ব্যাপারে কিছু নির্দেশনা রয়েছে।
তা হচ্ছে-
যদি নামাজে শব্দ ও গন্ধ বিহীন বায়ু নির্গত হয় এবং তা নির্গমনকারীর সন্দেহ হয় কিন্তু নিশ্চিত না হয় তবে সন্দেহের মধ্যে নামাজ ত্যাগ না করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া মাজুর ব্যাক্তি যিনি বার বার বায়ু ত্যাগের সমস্যায় ভোগছেন তিনি এক অজুতেই নামাজ পড়বেন যদি নামাজে বায়ু নির্গত হয় তবুও।
সুতরাং বলতে পারি ইবাদতের মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব অনুধাবন ও একাগ্রচিত্তে ইবাদতে মনোনিবেশ করার জন্যই আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন বায়ু নির্গত হলে অজুর নির্দেশ দিয়েছেন অন্য কোন কারনে নয়।

এবার আসেন বিজ্ঞান হতে ব্যাখ্যা করি কারন বিজ্ঞানের ছাত্ররা নাস্তিক না হলেও কলা বিজ্ঞানের ছাত্ররা বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে নাস্তিকতা করে, যদিও তারা নিজেরাই বিজ্ঞান বুঝে না তবুও বিজ্ঞান হতেই বিস্তারিত বলছি।

পায়ু পথে নির্গত বায়ু নিয়ে যেহেতু বিতর্ক সেহেতু বায়ুর ভৌত বিজ্ঞান নিয়েই কিছু কথা বলি।বায়বীয় পদার্থ একটি নির্দ্দিষ্ট তাপ, চাপ ও ঘনত্বে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বজায় রাখে। যদি কোনো বায়বীয় পদার্থের এই তাপ, চাপ, ঘনত্ব পরিবর্তন করা হয় তাইলে তার স্বকীয়তা পরিবর্তন করে, এমনকি একটি নিয়ামক পরিবর্তন করলেও স্বকীয়তা পরিবর্তন করে।

উদাহরন-১:
আপনি যদি একটি জ্বলন্ত দিয়াশলাই কাঠি গ্যাসের চুলার নিকট রেখে চাবি অন করেন তাইলে ধপ করে আগুন জ্বলবে। কিন্তু দিয়াশলাই কাঠি যত দূরে নিবেন ততই আগুন জ্বলতে সময় লাগবে এবং একটি নির্দিষ্ট দূরুত্বে জলন্ত কাঠি সরিয়ে নিলে গ্যাসে আর আগুন ধরবে না কারন একটি নির্দিষ্ট দূরুত্বের বাহিরে গ্যাস এর চাপ ও ঘনত্ব এত কমে যায় যে তার আর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে পারে না।

উদাহরন-২:
আপনি আপনার বডিস্প্রে কাপড়ের খুব নিকটে স্প্রে করলে দেখবেন কাপড়টি ভিজে যায় এবং একটু পরই তা এমনি এমনি শুকিয়ে যায়। শুকিয়ে যাওয়ার পর এই স্প্রের আর বৈশিষ্ট্য থাকে না। এখানে স্প্রে বের হওয়ার সময় একটি নির্দ্দিষ্ট চাপে ও তাপে তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বজায় রাখে কিন্তু কিছুক্ষন পর চাপ কমে গেলে তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও কার্যকরিতা আর থাকে না।

উদাহরন-৩:
আপনি অর্ধেক গ্যাসে পূর্ন দিয়াশ লাইটে দেখবেন নীচের অংশ তরল আর উপরের অংশ খালি, ঐ খালি অংশ আসলে খালি নয় বরং এখানেও গ্যাস থাকে কিন্তু ঘনত্ব কম থাকে। গ্যাস কমতে কমতে এক সময় তরল অংশ শেষ হওয়ার পরও গ্যাস বের হয় কিছুক্ষণ।  তার পর চাপ কমে গেলে যে গ্যাস বের হয় তাতে আর আগুন ধরে না কারন তখন আর গ্যাসের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকে না।

ঠিক তেমনি আমাদের পেটের ভিতরের নাপাক বস্তু হতে যে বায়ু নির্গত হয় তা পায়ুপথ দিয়ে বের হওয়ার সময় তার নিজস্ব নাপাকী বৈশিষ্ট্য ধরে রাখে এবং খুব অল্প সময়ের জন্য পায়ুপথের মুখ ও নিকটস্থ কাপড় চোপড় নাপাক করে ফেলে কিন্তু খানিকক্ষণ পরই উদ্বায়ী স্বভাবের কারনে পেট হতে নির্গত বায়ু আবার উধাও হয়ে যায় এবং ঐ স্থান এমনি এমনি নাপাক মুক্ত হয়ে যায়। তাই অজু করার সময় আর পুনরায় ঐ স্থান ধৌত করতে হয় না। ওযু করতে হয় অল্প সময়ে যে নাপাকী ওযু নষ্ট করে তার জন্য।
আশা করি উত্তরটি পেয়েছেন।


বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

আল্লাহ নামের হাকীকত

 এক তরুণী স্প্যানিশ নারী “আল্লাহ” শব্দের অর্থ ব্যাখ্যা করলেন

আল্লাহ নামের ব্যাখ্যা


এই তরুণী স্প্যানিশ নারী বর্তমানে জর্ডানের ইয়ারমুক বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ভাষায় মাস্টার্স করছেন। একদিন, দ্বিতীয় বর্ষের একটি ক্লাসে অধ্যাপক ফাখরি কাতানাহ তার শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসা করলেন:


“তোমাদের মধ্যে কে ‘আল্লাহ’ নামটির অলৌকিক ও ধ্বনিবিজ্ঞানগত দিক থেকে ব্যাখ্যা করতে পারবে?”


কেউ হাত তুলল না—শুধুমাত্র একজন তরুণী স্প্যানিশ নারী, যার নাম হেলেন। যদিও তিনি স্প্যানিশ ও খ্রিস্টান ছিলেন, তিনি সাবলীলভাবে আরবি বলতেন। তিনি বললেন:


“আরবি ভাষায় আমি যে সবচেয়ে সুন্দর শব্দটি পড়েছি, সেটি হল ‘আল্লাহ’। এই নামটি মানব ভাষায় একটি অনন্য সুরধ্বনি তৈরি করে, কারণ এর সব অক্ষর গলা থেকে উচ্চারিত হয়, ঠোঁট থেকে নয়।

এই পবিত্র নামটি ঠোঁটের সাহায্যে উচ্চারিত হয় না, কারণ এতে কোনো ডায়াক্রিটিকাল চিহ্ন (বিন্দু) নেই। এখন ‘আল্লাহ’ উচ্চারণ করুন এবং খেয়াল করুন কীভাবে এটি বলছেন!

আপনি দেখবেন, এর অক্ষরগুলি গলার গভীর থেকে আসে, ঠোঁটের কোনো নড়াচড়া ছাড়াই। এর মানে হলো, যদি কেউ ‘আল্লাহ’ শব্দটি উচ্চারণ করতে চায়, তবে তার চারপাশের লোকেরা তা লক্ষ্যও নাও করতে পারে।”


তিনি আরও ব্যাখ্যা করলেন:


“এই নামের আরেকটি অলৌকিক দিক হলো, এর কিছু অক্ষর সরালেও এর অর্থ অটুট থাকে।”


সাধারণত ‘আল্লাহ’ শব্দটি ‘اللّٰهُ’ (Allahُ) রূপে উচ্চারিত হয়।


যদি প্রথম অক্ষর (আলিফ) সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে এটি ‘لِلّٰهِ’ (Lillah) হয়ে যায়, যা নিম্নলিখিত কুরআনের আয়াতে পাওয়া যায়:

﴿وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ﴾

“আল্লাহর জন্য রয়েছে সর্বোত্তম নামসমূহ, সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নাম ধরে ডাক।” (সুরা আল-আ‘রাফ: ১৮০)


যদি ‘আলিফ’ ও প্রথম ‘লাম’ সরানো হয়, তাহলে এটি ‘لَهُ’ (Lahu) হয়ে যায়, যেমন এই আয়াতে:

﴿لَهُۥ مَا فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلۡأَرۡضِۗ﴾

“আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই তাঁর।” (সুরা আল-বাকারা: ২৫৫)


যদি ‘আলিফ’ ও দ্বিতীয় ‘লাম’ সরানো হয়, তবে কেবল ‘هُوَ’ (Hu) থাকে, যা এখনো আল্লাহর প্রতিই ইঙ্গিত করে, যেমন এই আয়াতে:

﴿هُوَ ٱللَّهُ ٱلَّذِي لَآ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ﴾

“তিনি আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।” (সুরা আল-হাশর: ২২)


যদি প্রথম ‘লাম’ সরানো হয়, তবে এটি ‘إِلَـٰه’ (Ilah) হয়ে যায়, যেমন এই আয়াতে:

﴿ٱللَّهُ لَآ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلۡحَىُّ ٱلۡقَيُّومُ﴾

“আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সৃষ্টির ধারক-সংহারক।” (সুরা আল-বাকারা: ২৫৫)


তিনি আরও ব্যাখ্যা করলেন:


“বিদ্বানগণ গভীরভাবে ‘আল্লাহ’ নামটি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাওহিদের বাক্য, ‘لَا إِلَـٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ’ (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) তিনটি অক্ষর নিয়ে গঠিত: আলিফ, লাম, ও হা।

এই তিনটি অক্ষর হালকা ও সহজে উচ্চারিত হয়, যা ঠোঁট না নড়িয়েও বলা যায়।”


তিনি আরও ব্যাখ্যা করলেন:


“আপনারা কি জানেন কেন?

যেন মৃত্যুর সময় একজন ব্যক্তি সহজেই এটি উচ্চারণ করতে পারেন, ঠোঁট বা দাঁত না নাড়িয়েও।”


আজ, হেলেনের নতুন নাম রাখা হয়েছে ‘আবিদাহ’ (উপাসক)।


“আমরা মুসলিম হয়ে গর্ববোধ করি, অথচ আমরা ‘আল্লাহ’ নামটি ব্যাখ্যা করতে পারলাম না। আল্লাহ তাকে ইসলামের বরকত দান করুন।”


“কেন আমরা ধর্মীয় বার্তাগুলো মুছে ফেলি, কিন্তু সাধারণ বার্তাগুলো ফরওয়ার্ড করি?

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:


﴿بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً﴾

“আমার পক্ষ থেকে পৌঁছে দাও, যদিও তা একটি আয়াতই হয়।” (বুখারি: ৩৪৬১)


“হয়তো এই বার্তাটি শেয়ার করার মাধ্যমে, আপনি এমন একটি আয়াত পাঠাবেন যা কিয়ামতের দিন আপনার জন্য সুপারিশ করবে।”


সর্বশেষে:


﴿لَا إِلَـٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ مُحَمَّدٌ رَّسُولُ ٱللَّهِ﴾

“আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, এবং মুহাম্মদ ﷺ আল্লাহর রাসুল।”


আল্লাহু আকবার! সমস্ত শব্দ ও কর্মে তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ। আলহামদুলিল্লাহ।


(সংগৃহীত)

আল্লাহ নামের হাকীকত 

রমজান মাসে মানুষ এত পাপ করে কেমনে?

 

প্রশ্নঃ রমজান মাসে শয়তসন বন্দী থাকলে এত অপরাধ মানুষ করে কেমনে, আর মুসলমান ব্যতিত অন্য ধর্মের মানুষ অপরাধ কমায় না কেনো? 



প্রশ্নের বিশদ বিবরনঃ
শয়তানদেরকে নাকি রমযান মাসে বন্দী করে রাখা হয়?তাহলে রমযান মাসে মানুষ খারাপ কাজ করে কেন? রমযান মাসে কে মানুষকে কুমন্ত্রণা দেয়?

কিছু বর্ণনায় দেখা যায় বদরের যুদ্ধে শয়তান সুরাকা বিন মালিকের বেশে কুরাইশদের দলে ছিলো। বদরের যুদ্ধ হয় রমযান মাসে। রমযান মাসে বন্দী থাকলে শয়তান বদরের যুদ্ধে এসেছিলো কী করে?এই বিষয়গুলো স্ববিরোধী কিনা? 

রমজান মাসে মুসলমানরা পাপ কম করার চেষ্টা করে, বেশী বেশী ইবাদত করে, কিন্তু নাস্তিক কিংবা অন্য ধর্মের লোকেরা তো আর পাপকাজ বন্ধ করে না, তাইলে শয়তান বন্দি থাকলে ওরা পাপ কমায় না কেনো?
 
উত্তরঃ
 
হাদিসের বক্তব্যঃ
 
নবী করিম(ﷺ) বলেছেনঃ
 
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُرَغِّبُ فِي قِيَامِ رَمَضَانَ مِنْ غَيْرِ عَزِيمَةٍ، وَقَالَ: «إِذَا دَخَلَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ الْجَحِيمِ، وَسُلْسِلَتْ فِيهِ الشَّيَاطِينُ»
অর্থঃ “আবূ হুরায়রা(রা.) থেকে বর্ণিতঃ নবী(ﷺ) ফরয ব্যতীত রমযানের তারাবীহ্‌র সালাত আদায় করার জন্যও উৎসাহিত করতেন। তিনি বলতেন যে,যখন রমযান আগমন করে জান্নাতের দরজাসমূহ খূলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় আর শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়।” 
 
এটি একটি বিশুদ্ধ হাদিস। এই হাদিস থেকে সাধারণভাবে বোঝা যাচ্ছে যে রমযান মাসে শয়তান শৃঙ্খলবন্দী থাকে। তবে নবী(ﷺ) থেকে এই সংক্রান্ত আরো কিছু বিশুদ্ধ এবং বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। যা থেকে এর ব্যাখ্যা বোঝা যায়। 
 
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَتَاكُمْ رَمَضَانُ شَهْرٌ مُبَارَكٌ فَرَضَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ تُفْتَحُ فِيهِ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَتُغْلَقُ فِيهِ أَبْوَابُ الْجَحِيمِ وَتُغَلُّ فِيهِ مَرَدَةُ الشَّيَاطِينِ ... ...
অর্থঃ “আবূ হুরায়রাহ্(রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু(ﷺ) বলেছেনঃ তোমাদের জন্য রমাযানের বারাকাতময় মাস এসেছে। এ মাসে সাওম রাখা আল্লাহ তোমাদের জন্য ফরয করে দিয়েছেন। এ মাসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের সব দরজা। এ মাসে বিদ্রোহী শয়তানগুলোকে কয়েদ করা হয়। … …” 
 
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ إِذَا كَانَ أَوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ صُفِّدَتِ الشَّيَاطِينُ وَمَرَدَةُ الْجِنِّ ... ...
অর্থঃ “আবূ হুরায়রা(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেনঃ রামাযান মাসের প্রথম রাতেই শয়তান ও দুষ্ট জ্বীনদের শৃঙখলাবদ্ধ করে ফেলা হয়।…” 
 
عَنْ عَرْفَجَةَ، قَالَ: كُنْتُ فِي بَيْتٍ فِيهِ عُتْبَةُ بْنُ فَرْقَدٍ، فَأَرَدْتُ أَنْ أُحَدِّثَ بِحَدِيثٍ، وَكَانَ رَجُلٌ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كَأَنَّهُ أَوْلَى بِالْحَدِيثِ مِنِّي، فَحَدَّثَ الرَّجُلُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " فِي رَمَضَانَ، تُفْتَحُ فِيهِ أَبْوَابُ السَّمَاءِ، وَتُغْلَقُ فِيهِ أَبْوَابُ النَّارِ، وَيُصَفَّدُ فِيهِ كُلُّ شَيْطَانٍ مَرِيدٍ، … …
অর্থঃ “আরফাজা(রহ.) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ ‘আমি একটি ঘরে অবস্হান করছিলাম যেখানে উতবা ইব্‌ন ফারকাদ(রা.) ছিলেন। আমি একটি হাদীস বর্ণনা করতে চাইলাম, কিন্তু সেখানে রাসুলুল্লাহ্‌(ﷺ) -এর কাছে একজন সাহাবীও উপস্থিত ছিলেন, যিনি হাদীস বর্ণনার ব্যাপারে আমার চেয়ে অধিক অভিজ্ঞ ছিলেন। তিনি নবী(ﷺ) থেকে বর্ণনা করলেন যে, রাসুলুল্লাহ্‌(ﷺ) রমযান মাসের ব্যাপারে বলেছেন, রমযান মাসে আসমানের দরজাসমূহ খূলে দেয়া হয়, আর জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়, আর প্রত্যেক দুষ্টু শয়তানকে বন্দী করে রাখা হয়।"
 
আমরা দেখলাম সংক্ষিপ্ত বিবরণে সাধারণভাবে শুধু শয়তানের কথা আছে। কিন্তু বিস্তারিত বর্ণনায় জিন-শয়তানের ক্ষেত্রে مَرَدَةُ, مَرِيدٍ ইত্যাদি বিশেষণ ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলো একই জাতীয় শব্দ। অভিধানে এই শব্দগুলো এবং এদের সমজাতীয় কিছু শব্দের অর্থ করা হয়েছেঃ বিদ্রোহী হওয়া, বিদ্রোহ করা, ব্যতিক্রমধর্মী হওয়া, অনন্য হওয়া, উদ্ধত ইত্যাদি। 

 
উপরে হাদিসের বঙ্গানুবাদেও আমরা দেখেছি যে শয়তানের ক্ষেত্রে বিদ্রোহী, দুষ্টু ইত্যাদি বিশেষণ ব্যবহার করা হয়েছে।
অর্থাৎ, হাদিসের বিস্তারিত বিবরণে দেখা যাচ্ছে রমযান মাসে এক বিশেষ শয়তানকে বন্দী করা হয় যারা এই বিশেষণে বিশেষায়িত।
 
মুহাদ্দিসদের ব্যাখ্যাঃ
 
قال ابن خزيمة في صحيحه (3/187-188) : " لفظ عام مراده خاص في تصفيد الشياطين إنما أراد بقوله "صفدت الشياطين" مردة الجن منهم، لا جميع الشياطين، إذ اسم الشياطين قد يقع على بعضهم".
 
وقال ابن حبان في "الإحسان" (8/221) : "إنما يصفد الشياطين في شهر رمضان مردتهم دون غيرهم".
অর্থঃ  ইবন খুযাইমাহ(র.) তাঁর সহীহ (৩/১৮৭-১৮৮) গ্রন্থে বলেছেন, “এখানে শয়তানকে বন্দী করাকে সাধারণ একটি কথার দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে তবে এর উদ্যেশ্য সুনির্দিষ্ট। “শয়তানকে বন্দী করা হয়” এই কথার দ্বারা তিনি বলতে চেয়েছেন তাদের মধ্যে ‘মারাদাহ’ (বিদ্রোহী/দুষ্টু) জিনদেরকে বন্দী করা হয়। সব শয়তানকে না। কেননা ‘শায়াতিন’ (শয়তান এর বহুবচন) দ্বারা কিছু জিনকে বোঝানো হয়।” 
 
ইবন হিব্বান(র.) তাঁর ‘আল ইহসান’ (৮/২২১) গ্রন্থে বলেছেন, “রমাযান মাসে শুধুমাত্র ‘মারাদাহ’ শয়তানদেরকে বন্দী করা হয়। অন্যদেরকে বাদ দিয়ে।” 
 
এ প্রসঙ্গে ইমাম কুরতুবী(র.) বলেছেন,
 
إنما تغل عن الصائمين الصوم الذي حوفظ على شروطه
অর্থঃ “[শয়তানকে] শুধুমাত্র সেসব সাওম পালনকারীর (রোযাদার) জন্য শৃঙ্খলবদ্ধ করা হয় যারা সাওমের শর্তগুলো হেফাজত করে।” 
 
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়া(র.) বলেছেন, 
 
والمصفد من الشياطين قد يؤذي لكن هذا اقل وأضعف مما يكون فى غير رمضان فهو بحسب كمال الصوم ونقصه فمن كان صومه كاملا دفع الشيطان دفعا لا يدفعه دفع الصوم الناقص
অর্থঃ “বন্দীকৃত শয়তানেরাও ক্ষতি করতে পারে, কিন্তু তা রমযান মাসের বাইরের মাসগুলোর তুলনায় দুর্বলভাবে ও স্বল্প আকারে। এবং তা হয় সাওমের (রোযা) পরিপূর্ণতা ও ঘাটতি অনুসারে। কেউ যদি পরিপূর্ণভাবে [উত্তমভাবে, সব শর্তের হেফাজত করে] সিয়াম পালন করে, তার থেকে শয়তানকে দূরে রাখা হবে। যাদের সিয়ামে ঘাটতি রয়েছে [উত্তমভাবে হয়নি, শর্তগুলোর হেফাজত হয়নি], তাদের ক্ষেত্রে ঐভাবে শয়তানকে দূরে রাখা হবে না।” 
 
মানুষের পাপের কারণ শুধু শয়তান নয়ঃ
 
মানুষ শুধুমাত্র শয়তানের প্ররোচনাতেই খারাপ কাজ করে বিষয়টা এমন নয়। নিজ প্রবৃত্তি ও রিপুর তাড়নাতেও মানুষ খারাপ কাজ করে। পাপে লিপ্ত হয়। 
 
আল কুরআনে বলা হয়েছে,
 
أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَٰهَهُ هَوَاهُ
 অর্থঃ “তবে তুমি কি তাকে লক্ষ্য করেছ, যে তার প্রবৃত্তিকে আপন ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? …” 
 
وَمَا أُبَرِّئُ نَفْسِي ۚ إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّي ۚ إِنَّ رَبِّي غَفُورٌ رَّحِيمٌ
অর্থঃ ‘আর আমি আমার নাফসকে পবিত্র মনে করি না, নিশ্চয় নাফস মন্দ কাজের নির্দেশ দিয়ে থাকে, আমার রব যাকে দয়া করেন সে ছাড়া। নিশ্চয় আমার রব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। 
 
এ কারণেই নবী(ﷺ) বলেছেন,
 
عَنْ زِيَادِ بْنِ عِلاَقَةَ، عَنْ عَمِّهِ، قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ ‏"‏ ‏.
অর্থঃ যিয়াদ ইবনু ইলাক্বাহ (রহ.) হতে তার চাচা থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী(ﷺ) বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে গর্হিত চরিত্র, গর্হিত কাজ ও কু-প্রবৃত্তি হতে আশ্রয় চাই”। 
 
এ প্রসঙ্গে শায়খ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল (হাফি.) বলেছেন,
 
"মানুষ কেবল শয়তানের কুমন্ত্রণায় পাপ করে না বরং পাপাচার সংঘটিত হওয়ার পেছনে শয়তান ছাড়াও আরও কিছু কারণ আছে। যেমন: মানুষ রিপুর কামনা-বাসনা ও কু প্রবৃত্তির তাড়নায় পাপ করে। আবার মানুষরূপী শয়তানের খপ্পরে পড়ে এবং বদ অভ্যাসের বশবর্তী হয়েও পাপ করে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, যখন আল্লাহ তাআলা ইবলিশকে প্রথম মানব আদম আ. কে সেজদা করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন তখন সে আল্লাহর নির্দেশ লঙ্ঘণ করেছিলো। এখানে প্রশ্ন হল, কোন শয়তান তাকে আল্লাহর অবাধ্যতা করতে প্ররোচিত করেছিলো? না, কোনো শয়তান নয় বরং তার ভেতরের অহংবোধ ও কুপ্রবৃত্তির কারণে সে আল্লাহর অবাধ্যতা করেছিলো।
 
তাই তো হাদিসে রমাযান মাসে রোযাদারদেরকে কুপ্রবৃত্তি, বদ অভ্যাস ও খারাপ আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলা হয়েছে।” 


নাস্তিকদের বেশির ভাগ কলা অনুষদের ছাত্র হলেও তারা আবার বিজ্ঞান হতে প্রমান চায়। চলুন এবার একটু বিজ্ঞান দিয়ে প্রমান দেই।


এর জন্য গতি জড়তাকে সবচেয়ে বেশী উপযুক্ত উদাহরণ বলে আমার মনে হয়, তাই গতি জড়তা দিয়ে প্রমান দেই চলেন।

গতি জড়তা কিঃ
কোনো গতিশীল বস্তু যদি আপন গতিতে চলতে থাকে তার পর বস্তুটি গতিশীল থাকা অবস্থায় যদি যে শক্তি বস্তুটিকে গতিশীল রেখেছে তা হঠাৎ প্রয়োগ করা বন্ধ করা হয় কিংবা সরিয়ে নেওয়া হয় তার পরও গতিশীল বস্তুটি কিছু সময় ধরে চলমান থেকে তার পর থামে। এটা বস্তুর চিরন্তন ধর্ম। যেমন একটি রিক্সা কিছুক্ষণ ঠেলে চলমান করে যদি ঠেলা বন্ধ করে দেওয়া হয় তবুও রিক্সাটি কিছুক্ষন চলমান থাকে, এটাকে হতি জড়তা বলে। এটা চিরন্তন নীতি।

মানুষকে বলা হয় অভ্যাসের দাস। মানুষ কোনো বিষয়ে অভ্যাস্ত হয়ে গেলে তা ছাড়তে কষ্ট হয়। যেমন ধূমপায়ী মানুষ, ক্যান্সার হবে জেনও ধূমপান ছাড়তে পাড়ে না। অনুরুপ বছরে ১ মাস রোজা বাকী ১১ মাস শয়তান যে অপকর্মে মানুষকে অভ্যস্ত করে তা ১ মাসে পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া সম্ভব না।

এবার আসেন অন্য ধর্মের লোকেরা রমজান মাসে পাপ করেই যায় কেনো?

আল্লাহ বলেছেন যে একমাত্র আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলাম। বাকী ধর্মকে বাতিল করে দিয়েছে এবং নাস্তিকদের তো আল্লাহ সাময়িক সময়ের জন্য সুযোগ দিয়েই রেখেছেন। তারা তো ইসলাম মানে না, বছরে ১ দিনও রোজার প্রশিক্ষণ নেয় না। তাই তারা অভ্যাসগত কারনেই অপকর্মে লিপ্ত থাকে। 

একটা কথা মনে রাখতে হবে, শয়তান কোনো পথ ভ্রষ্ট মানুষের পেছনে লাগে না, কারন সে পথভ্রষ্টই, শয়তান সব সময় লেগে থাকে ভালো মানুষের পেছনে। তাই ভালো মানুষ গুলোকেই বেশি প্ররোচিত করে। 

 
অতএব উপরের কুরআন-হাদিস ও বিজ্ঞানের দলিল প্রমাণ এবং উলামাদের আলোচনার ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি—
 
রমযান মাসেও মানুষ খারাপ কাজ করে, কারণঃ
 
১। রমযান মাসে সব শয়তান বন্দী থাকে না, শুধু মারাদাহ বা মারিদ শয়তান বন্দী থাকে। অন্য শয়তানরা মুক্ত থাকে। 
২। বন্দী শয়তানেরা স্বল্প আকারে ক্ষতি করতে পারে। যারা পূর্ণাঙ্গভাবে শর্ত পালন করে সিয়াম পালন করে, তাদের থেকে শয়তানকে দূরে রাখা হয়। অন্যান্যরা এর আওতাভুক্ত না।
৩। শুধু শয়তানের কুমন্ত্রণায় না বরং মানুষ সাধারণভাবে নাফস বা প্রবৃত্তির তাড়নাতেও এবং অভ্যাসবশতও খারাপ কাজ করে থাকে।
 
রমযান মাসে বিদ্রোহী শয়তানের বন্দী থাকা বা ক্ষতিকর প্রভাব কমে যাবার নিদর্শন আমরা দেখতে পাই এই মাসে মানুষের অধিক পরিমাণে সলাত আদায়, দান-সদকাহ এবং অন্যান্য সৎকাজ করা এবং অপেক্ষাকৃত কম পাপ কাজে লিপ্ত থাকার প্রবণতা থেকে। 
 
বদরের দিন মুশরিকদের দলের মাঝে শয়তানের আগমন প্রসঙ্গঃ
 
এ ব্যাপারে আল কুরআনে উল্লেখ আছে, 
 
وَإِذْ زَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَإِنِّي جَارٌ لَّكُمْ ۖ فَلَمَّا تَرَاءَتِ الْفِئَتَانِ نَكَصَ عَلَىٰ عَقِبَيْهِ وَقَالَ إِنِّي بَرِيءٌ مِّنكُمْ إِنِّي أَرَىٰ مَا لَا تَرَوْنَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ ۚ وَاللَّهُ شَدِيدُ الْعِقَابِ
অর্থঃ “আর স্মরণ কর, যখন শয়তান তাদের জন্য তাদের কার্যাবলীকে শোভন করেছিল এবং বলেছিল, আজ মানুষের মধ্যে কেউই তোমাদের উপর বিজয় অর্জনকারী নেই, আর নিশ্চয় আমি তোমাদের পাশে অবস্থানকারী। অতঃপর দু দল যখন পরস্পর দৃশ্যমান হল তখন সে পিছনে সরে পড়ল এবং বলল, নিশ্চয় আমি তোমাদের থেকে সম্পর্কমুক্ত, নিশ্চয় আমি এমন কিছু দেখছি যা তোমরা দেখতে পাও না। নিশ্চয় আমি আল্লাহ্‌কে ভয় করি, আর আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর।” 
 
আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় বিভিন্ন তাফসির গ্রন্থে বদর যুদ্ধের ঘটনাবলি আলোচিত হয়েছে।
 
“…যখন মক্কার মুশরিক ও মুসলিম উভয় দল (বদর প্রাঙ্গণে) সম্মুখ সমরে লিপ্ত হল, তখন শয়তান পিছন ফিরে পালিয়ে গেল। বদর যুদ্ধে যেহেতু মক্কার মুশরিকদের সহায়তায় একটি শয়তানী বাহিনীও এসে উপস্থিত হয়েছিল, কাজেই আল্লাহ্ তাআলা তাদের মোকাবেলায় জিবরীল ও মিকাঈল(আ.) -এর নেতৃত্বে ফিরিশতাদের বাহিনী পাঠিয়ে দিলেন। ইমাম ইবন জরীর আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন যে, শয়তান যখন সুরাকাহ ইবন মালেকের রূপে স্বীয় বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিল, তখন সে জিবরীল-আমীন এবং তার সাথী ফিরিশতা বাহিনী দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। সে সময় তার হাত এক কুরাইশী যুবক হারেস ইবন হিশামের হাতে ধরা ছিল।
 
সঙ্গে সঙ্গে সে তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পালাতে চাইল। হারেস তিরস্কার করে বললঃ এ কি করছ? তখন সে বুকের উপর এক প্রবল ঘা মেরে হারেসকে ফেলে দিল এবং নিজের বাহিনী নিয়ে পালিয়ে গেল। হারেস তাকে সোরাকাহ মনে করে বললঃ হে আরব সর্দার সোরাকাহ! তুমি তো বলেছিলে আমি তোমাদের সমর্থনে রয়েছি। অথচ ঠিক যুদ্ধের ময়দানে এমন আচরণ করছ! তখন শয়তান সুরাকাহর বেশেই উত্তর দিল, আমি কৃত চুক্তি থেকে মুক্ত হয়ে যাচ্ছি। কারণ, আমি এমন জিনিস দেখছি যা তোমাদের চোখ দেখতে পায় না। অর্থাৎ ফিরিশতা বাহিনী। আর আমি আল্লাহকে ভয় করি। কাজেই তোমাদের সঙ্গ ত্যাগ করে চলে যাচ্ছি। [তাবারী]
 
শয়তান যখন ফিরিশতা বাহিনী দেখতে পেল এবং সে যেহেতু তাদের শক্তি সম্পর্কে অবহিত ছিল, তখন বুঝল যে, এবার আর পরিত্রাণ নেই। তবে তার বাক্য ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’ সম্পর্কে তাফসীর শাস্ত্রের ইমাম কাতাদাহ বলেন যে, কথাটি সে মিথ্যে বলেছিল। [ইবন কাসীর] ইবন ইসহাক বলেন, আর যখন সে বলেছিল যে, ‘আমি এমন জিনিস দেখছি যা তোমাদের চোখ দেখতে পায় না।’ এ কথাটি সত্যি বলেছে। [ইবন কাসীর] ” 
 
রমযান মাসে শয়তান যেভাবে বদরের ময়দানে উপস্থিত ছিলোঃ
 
১। রমযান মাসে সকল শয়তান বন্দী থাকে না, শুধুমাত্র মারাদাহ/মারিদ শয়তান বন্দী থাকে। অন্য শয়তানদের পক্ষে রমযান মাসেও এভাবে আবির্ভূত হওয়া সম্ভব।
২। বদরের যুদ্ধের ঘটনায় দেখা যায় শয়তান মুশরিকদের মাঝে ছিলো। মুসলিমদের মাঝে না। ঈমানদার মুসলিম, যারা যথাযথভাবে সিয়াম পালন করে, তাদের থেকে শয়তানকে দূরে রাখা হয়। মুশরিকরা ঈমানদার না, তাদের সিয়াম পালনের ব্যাপার নেই। তাদের থেকে শয়তানকে দূরে রাখা হয় না।  
 
অতএব রমযান মাসে শয়তানের বন্দী থাকার হাদিসের সাথে এই মাসে মানুষের খারাপ কাজ করা বা বদরের ময়দানে শয়তানের উপস্থিত থাকার ঘটনা মোটেও সাংঘর্ষিক বা পরস্পরবিরোধী কিছু না।
 

সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০২৫

রাজনীতির নেপথ্যের মানুষ: নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ছোটন কাহিনী(খোমেনী এহসান)

 রাজনীতির নেপথ্যের মানুষ: নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ছোটন কাহিনী

রাজনীতির নেপথ্যের মানুষ: নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ছোটন কাহিনী

বাংলাদেশের রাজনীতির ভেতরে যে খেলা চলে তা অনেকটাই বলে দেওয়া সম্ভব যদি আপনি খেলোয়াড় চেনেন। ধরেন আপনি জানেন কে লিওনেল মেসি, কে রোনালদো আর কে ক্রিস গেইল, কে আফ্রিদি, তাহলে খেলাটা ফুটবল না ক্রিকেট চোখ বুঝে বলতে পারবেন।

আমি ইদানিং বেশ কয়েকজনের মুখে নুরুল ইসলাম ভূইয়া ছোটনের নাম শুনেছি। তার নানা ভূমিকার কথা লোকজন বলছে। কিন্তু তার পরিচয় জিজ্ঞেস করলে বিস্তারিত বলতে পারছে না।

আমার ফেসবুকে থাকা একটু অগ্রসর লোকজনও হয়তো ছোটনের কথা শুনে থাকবেন। কিন্তু ওনার খুব সাধারণ কিছু পরিচয় আপনারা জানেন না।

কয়দিন আগে যে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মারা গেলেন, ওনার ভায়রা হলেন ছোটন৷ মানে শিরিন হকের বোন নাসরিন হকের স্বামী।

স্রেফ এই পরিচয়টুকু ধরে টান দিলে এবি পার্টি, জামায়াত, গণঅধিকার, চরমোনাই, হেফাজত, ডিজিএফআই, ফরহাদ মজহার, পিনাকী, মঞ্জু, তাহের, মেসবাহ সাঈদসহ কত কিছু যে বের হয়ে আসবে। তারপর ধরেন ওয়ান ইলেভেন, চার দলীয় সরকার, ভারত, প্রথম আলো পর্যন্ত চলে আসবে।

এত কিছু যে আসবে তার জন্য অবশ্যই আপনাকে নেটওয়ার্ক ও সমীকরণ বুঝতে হবে।

সেই সব আলাপের আগে আমার প্রশ্ন এটাই যে যারা ছোটনকে চিনেন তারা কতজন আগে জানতেন যে উনি ডা. জাফরুল্লাহর ভায়রা? 

মূলতঃ আপনারা বাংলাদেশকে তার ভেতর থেকে বুঝতে সম্পর্কগুলোই ঠিক মতো উদ্ঘাটন করতে পারেন না।

একে একে অনেকগুলো পর্ব লেখব। 


দুই.

ভয়ঙ্কর কুচক্রী একজন মানুষ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ক্লাস না করলেও আমার অভ্যাস ছিল নিয়মিত কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির রেফারেন্স সেকশনে যাওয়ার। সেখানে বাংলাদেশের অনেকের ইয়াং বয়সের কাজকর্ম পড়তাম। এরমধ্যে একটা জায়গায় প্রথম ছোটনের নাম জানতে পারি।

ঘটনাটি বেশ চমকপ্রদ। এখন যে সচিবালয়ের চারপাশে বিশাল ঊঁচু দেয়াল দেখেন তা আগে এমন ছিল না। বুক পর্যন্ত উঁচু দেয়াল ছিল।

কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে একবারই ওই দেয়াল টপকে সচিবালয়ে ঢুকে পড়েছিল কৃষক ও শ্রমিকরা৷ তারা অফিসারদের পিটিয়ে কাপড় ছিড়ে ফেলে।

ঘটনাটি হলো এরশাদকে হটাতে বিএনপি, লীগ ও বামপন্থীরা তিন দিক থেকে সচিবালয় ঘেরাও করে৷ হঠাৎ গুজব ছড়িয়ে পরে খালেদা জিয়াকে (১৮ বছর আগের স্মৃতি, হয়তো শেখ হাসিনা) গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ এ খবর শুনেই ঘেরাওয়ে আসা শ্রমিক ও কৃষকরা লাঠিসোঁটা নিয়ে সচিবালয়ে ঢুকে পড়ে। 

পরে জানা গেল, এরকম কিছু হয়নি। বরং তৎকালীন ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা ছোটন এই মিথ্যা খবর প্রচার করেছে। 

নুরুল ইসলাম ভূইয়া ছোটনকে নিয়ে পুরনো পত্রিকার ওই রিপোর্টের কথা পরবর্তীতে বহু সময় আমাকে ভাবিয়েছে। ছোটন কিভাবে কুচক্রী হিসাবে কাজ করে তা বুঝতে গেলেই তার এ অতীতের কথা মনে পড়ে যায়। 

তিন.

মূলতঃ নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ছোটনকে নিয়ে আশির দশক থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক শুরু হয় তার কুচক্রী ভূমিকার কারণে। 

বিশেষ করে তার বিরুদ্ধে সেনা গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আঁতাত থাকার অভিযোগ ওঠে। 

ছাত্র আন্দোলন, তিন জোটের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করা, ভুল তথ্য প্রদান ও একের বিরুদ্ধে অপরকে লাগানোর নানা ঘটনায় ছোট হয়ে পড়েন চরম বিতর্কিত।

মজার ব্যাপার হলো গত চার দশকে তার নামে থাকা অভিযোগগুলো আর অভিযোগে সীমিত নাই। 

বরং নানা ঘটনাচক্রে রাজনৈতিক ও সাংবাদিক মহলে এটি সুবিদিত যে ছোটন আসলে কী বা কেমন।

ছোটনের ছোবল ও বিএনপি

২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর কিভাবে ভারতপন্থীরা হাওয়া ভবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় তার কাহিনী শুনেছিলাম দেশ রূপান্তরের প্রয়াত সম্পাদক অমিত হাবিবের মুখ থেকে।

মানে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর হাওয়া ভবনের সঙ্গে ভারতের সংযোগটি ঘটেছিল সেখানকার শিল্পীদের নিয়ে ঢাকায় পারফর্ম করাকে কেন্দ্র করে। একাজে সহযোগিতা করে ছোটন ও তার সহযোগীরা। এরাই আবার বিএনপির সবচেয়ে বড় মিডিয়া প্রজেক্ট যায়যায়দিনে আশ্রিত হয় এবং তাদের কার্যক্রমের পুরোটা শুধু জাতীয়তাবাদ বিরোধী ছিল এমন নয়, বরং ২০০৬ সালের অক্টোবরে বিএনপি বিরোধী যে ডিজিএফআই প্রযোজিত আক্রমণ তার শুরুটা তারাই করে৷

এই পুরো ঘটনাটি বুঝতে গেলে আমাদের আরও পেছনে যেতে হবে। অন্য অনেক বামপন্থীর মতো ছোটনও এক সময় বিএনপিতে ভিড়ে যায়৷ কিন্তু আদর্শিকভাবে তাদের এজেন্ডা ইসলামী মূল্যবোধ ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ বিরোধীই থাকে।

ছোটন বিএনপিতে জায়গা করতে সিনিয়র সাংবাদিক শফিক রেহমানের সঙ্গে ভিড়ে যান। ১৯৯৮ সালে সাপ্তাহিক যায়যায়দিন দৈনিকে রূপান্তরিত হলে তাতে যোগ দেন ছোটন৷ কথিত আছে ছোটনের কারণেই যায়যায়দিন প্রতিদিন অকালে বন্ধ হয়ে যায়। 

পরে অনেক বছর লাগিয়ে ২০০৬ সালে যায়যায়দিন প্রকাশিত হলে তাতে নির্বাহী সম্পাদক হন তিনি। এর মালিকানায় শেয়ার ছিল তার। তবে যায়যায়দিনের ফিন্যান্স ছিল রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের এক জঘন্য উদাহরণ। পত্রিকাটির সিংহভাগ মালিক ছিলেন শফিক রেহমান, কিন্তু তার কোনো বিনিয়োগ ছিল না, এমন ছোটনেরও ছিল না। সরকারি খাস জমি আর ভূমিদস্যু বসু্ন্ধরার পয়সা ছিল যায়যায়দিনের অর্থের উৎস।

এরমধ্যে ছোটনের কারিশমা হলো, ভাববাদী শফিক রেহমানকে সামনে রেখে গোটা যায়যায়দিনের নিয়ন্ত্রক হয়ে যায় নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ছোটন। পত্রিকাটির রিপোর্টিং ও ডেস্কে নিয়োগ পায় ছোটনের অনুগতরা। শফিক রেহমান মূলতঃ ফিচার ও সম্পাদকীয় বিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতেন। যায়যায়দিনে কী রিপোর্ট হবে না হবে সম্পাদক হয়েও তার কিছুই তিনি জানতেন না। 

মজার ব্যাপার হলো, শফিক রেহমানকে তার প্রতিষ্ঠিত পত্রিকা থেকে সরিয়ে দিতে ছোটনকে নিয়মিত কুমন্ত্রণা দিতেন ফরহাদ মজহার ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীরা।

এক্ষেত্রে ছোটনের কৌশল ছিল চমকপ্রদ। হুমায়ুন কবির সাব্বির নামে বসুন্ধরা গ্রুপের এক পরিচালককে হত্যা করে গ্রুপটির চেয়ারম্যান শাহ আলম ওরফে আহমেদ আকবর সোবহানের দুই ছেলে সাফিয়াত সোবহান এবং সাদাত সোবহান।

ওই ঘটনার জেরে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার বসুন্ধরার বিরুদ্ধে লাগাতার রিপোর্ট করে। তখন শাহ আলম আশা করে যে তাদের অর্থায়নে পরিচালিত যায়যায়দিনে তাদের পক্ষে রিপোর্ট করবে৷ কিন্তু ছোটন বসুন্ধরার পক্ষে কোনো রিপোর্ট না করে এর দায় চাপান শফিক রেহমানের ওপর। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বসুন্ধরা যায়যায়দিনের সাংবাদিকদের বেতন ভাতা, নিউজ পেপার ও প্রেসের কালি বন্ধ করে দেয়। 

কার্যত পয়সাহীন শফিক রেহমান এতে বিপদে পড়ে যান। এদিকে হাওয়া ভবনকে দিয়ে বসুন্ধরাসহ ফাঁদ পাতেন ছোটন। আর তাহলো শফিক রেহমানকে বাদ দিয়ে ছোটনের দখলের যাবে যায়যায়দিন, তখন বসুন্ধরাও টাকা দেবে। বিপদ টের পেয়ে শফিক রেহমান যায়যায়দিন থেকে গোটা ছোটন বাহিনীকে অব্যাহতি দেন এবং তিনি লন্ডনে গিয়ে নিজের বাড়ি বিক্রি করে টাকা এনে যায়যায়দিন চালাতে উদ্যোগী হন।

এই সময়টাতে এসে দেখা যায় বিএনপির ভেতরেই বাসা বেধে আছে এক অপশক্তি যারা কাউকেই তোয়াক্কা করত না। বরং ওয়ান ইলেভেন ঘটাতে ভেতরে ভেতরে এক নেটওয়ার্ক বিস্তার করে বসে আছে। ফলে খোদ প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বক্তৃতা লেখক শফিক রেহমানকে বেআইনীভাবে বিমানের বোর্ডিং অবস্থায় নামিয়ে আনা হয়। এটি সম্ভব হয় ছোটনের উদ্যোগে ডিজিএফআইয়ের কারসাজিতে। 

তবে শফিক রেহমানের দৃঢ়তায় যায়যায়দিন ছোটন দখল করতে পারেনি। যদিও পরবর্তীতে মঈন উ আহমদের রোষাণলে পড়ে শফিক রেহমান পত্রিকাটি ডিজিএফআই নেটওয়ার্কের ব্যবসায়ী সাঈদ চৌধুরী তথা এইচআরসি গ্রুপকে লিখে দিতে বাধ্য হন। সাঈদের পরিচয় হলো তিনি আওয়ামী লীগ নেতা সাবেরের ভাই।


চার.

নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ছোটন মানুষ হিসাবে কেমন এবং নিজেদের টার্গেটে পৌঁছাতে কতটা আগ্রাসী তার আদর্শ প্রমাণ হলো ফরহাদ মজহারের গুমের ঘটনায় তার ভূমিকা।

২০১৭ সালের ৩ জুলাই ভোর ৫টা ৫ মিনিটে শ্যামলীর হক গার্ডেনের বাসা থেকে বের হন ফরহাদ। চোখের ওষুধ কেনার জন্য বের হয়েছিলেন বলে দাবি করেছিলেন তিনি ও তার পরিবার। মূলতঃ কড়াইল বসতির উদ্দেশ্যে এক গর্ভবতী হিন্দু তরুণীর উদ্দেশ্যে বের হন। ওই সন্তান ছিল ফরহাদের। তাকে গর্ভপাত করতে রাজি করাতে ও হাসপাতালে ভর্তির টাকা দিতেই ভোর বিহানের এ যাত্রা ছিল। 

কিন্তু ফরহাদ মজহারসহ অনেক ভারত বিরোধীই র'র নজরদারিতে ছিল। তাদের ফোন রেকর্ড থেকে শুরু করে গোপন অভিসারের সব কিছুই ছিল তাদের নখদর্পনে।

তবে ফরহাদ মজহারকে অনেকের নিরাপত্তাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে দেয়া হয়। এর নেপথ্যে বিদেশী কানেকশনের ব্যাপার আছে।

ফলে ফরহাদ তার বাসা থেকে বের হওয়া মাত্র তাকে র' তুলে নেওয়ার পরপরই ফরহাদের পরিবার সব জেনেও চুপচাপ থাকলেও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ঘটনাটি মিডিয়ায় আনা ও তাকে উদ্ধারে র‍্যাবকে মাঠে নামানোর ঘটনা ঘটে।

ফরহাদ গুম হওয়ার পরে তার গুমের খবরটি প্রথম প্রকাশিত হয় এমন একটি অনলাইনে যার দায়িত্বে ছিলেন সেই সাংবাদিক যিনি বিএনপি জামাত সরকারের সময় বাংলাদেশে বামপন্থী কমিউনিস্টদের ক্রসফায়ারের ঘটনা গুলো সবার আগে জানতেন, তিনি একাত্তরে পাকিস্তানে থাকা এক সেনা সদস্যের সন্তান।

মূলতঃ সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে ফরহাদ মজহারকে সীমান্তের ওপারে নেওয়া র'র পক্ষে অসম্ভব হয়ে যায়। কিন্তু দেশেও  র'র পক্ষে কাউকে হেনস্থা করার সুযোগ ছিল। ফলে ফরহাদকে র‍্যাব উদ্ধার করলেও তাদের থেকে তাকে পুলিশ এক প্রকার ছিনিয়ে নেয়, যার আইনী মুখোশ ছিল হস্তান্তর করা হয়। আর পুলিশ তাকে হাতে পেয়ে র'র কথামতো খুলনার মার্কেটে ঘুরতে বাধ্য করা, গর্ভবতী হিন্দু নারীকে বিকাশ করা, স্ত্রী ফরিদা আখতারকে ফোন করে ৩৫ লাখ টাকা যোগার করতে বলা এবং গফুর নামে হানিফ পরিবহনের বাসের টিকিট কেটে বাসের উদ্দেশ্যে রওনার ঘটনা ঘটে।

আমি ফরহাদ মজহারের গুম থেকে উদ্ধার পর্যন্ত প্রতি মুহূর্তেই ফেসবুকে লিখেছি৷ আলতাফ পারভেজ ভাই এনিয়ে আমাকে ধন্যবাদও দিয়েছিলেন।

তবে আমি যখন ফরহাদ মজহারকে গুমের বিষয়ে পুলিশের সাজানো নাটককেও তুলোধুনো করছিলাম, তখন ইন্টারেস্টিং ঘটনা ঘটে। ফরহাদের শিষ্য মোহাম্মদ রোমেল  আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে তার পক্ষে লেখালেখি বন্ধ করতে বলেন। বিষয়টা আমার জন্য ছিল শকিং। তিনি বলার পরেও মনে হয় আরও দু একটা স্ট্যাটাস লেখছি। তারপর আমার ঘনিষ্ঠ এক কবিও যোগাযোগ করলেন। আমরা উভয়েই রোমেলের বাসায় রহস্য জানতে আমন্ত্রিত হলাম। 

তারপর সেখানে গিয়ে রোমেলের কাছ থেকে শুনলাম যে ফরহাদের পুরা ঘটনাতেই নাকি ভেজাল। বস্তিতে গিয়ে হিন্দু মেয়ের সঙ্গে সেক্স করার ঘটনা সত্য। কড়াইল বস্তির অনেক দূরে গাড়ি রেখে হেঁটে যেতেন। ফরিদা আখতারের বিদেশ ভ্রমণের সময় এটি ঘটে। রোমেলের দাবি হলো, ফরহাদের এরকম ঘটনা অসংখ্য। এসব নিয়ে ঝামেলা হয় ফরিদ আখতারের সঙ্গে, তখন গৌতম দাশ সহ ইনার সার্কেলের লোকেরা মিটমাট করে। রোমেল জানাইল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার এক মেয়েকে সে পটিয়েছিল, কিন্তু ফরহাদ কুষ্টিয়ার লালন আখড়ায় সেই মেয়েকে হিপটোনাইজ করে সেক্স করে ফেলে। ওই মেয়ে প্রথমে এটাকে দেহতাত্ত্বিক সাধনা মনে করেছিল, কিন্তু সেক্স করার পর সে মনে করছে রেইপড হইছে এবং এ নিয়ে তার মানসিক সমস্যা হয়।

আমি যখন ঢাকায় তরুণ সরকার, পিনাকী রায়, মুন্নীসাহাদের সার্কেলে মিশতাম, এটা ২০০৪/৫ সালের কাহিনী, তখনো ফরহাদ মজহারের যৌনবিকারের কথা শুনি, কোনো এক বিদেশী মেয়ের বেলায় এমনটা ঘটেছিল।

কিন্তু বামপন্থীদের ভেতরকার যৌনতা সংক্রান্ত নানা আলাপ সত্ত্বেও আমাদের তরুণ জীবনে তাদের সঙ্গে চলাফেরা ছিল। ফরহাদ মজহারের সঙ্গে বলা যায় ২০১৬ পর্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলাম। কাটায় কাটায় ১২ বছর! তার ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা ও বিকার নিয়ে আগ্রহী ছিলাম না এসব জানতে ফুসুরফাসুরেও জড়াইনি।

কিন্তু রোমেল যখন গুমের ঘটনা সূত্রে সব টান দিলেন তখন পুরনো নানা কথা মনে পড়েছিল।

রোমেল তখন বলছিলেন, ফরহাদের নারী কেলেঙ্কারির বিষয়ে ছোটন, গৌতম দাশ, পিনাকী ভট্টাচার্যও নিশ্চিত জানেন, তাই তারা তার পক্ষে লেখা বন্ধ করে দিছে, শুধু আমিই একা ফরহাদ মজহারকে নিয়ে সোচ্চার। রোমেলরা চান আমি যেন লেখা বন্ধ করি।

রোমেল আমাকে থামাতে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের প্রসঙ্গও আনে। ফরহাদ যে গুমের সময় ফরিদাকে ফোন করে বলেছিল অপহরণকারীরা ৩৫ লাখ টাকা চায়, সেই টাকাটা মাহমুদুর রহমান দিছিলেন, ফরিদাকে টাকাটা রাখতে বলেছিল ফরহাদ। রোমেল বললো পুরো নাটক সাজিয়ে মাহমুদুর রহমানের টাকা নিজেদের কাছে রেখে দিছে।

কথা হলো ফরহাদকে নিয়ে রোমেলরা যা বলেছে তা মোটেই নতুন নয় এবং অসত্যও নয়। ফরহাদের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ হলো যেসব গরিব হিন্দু নারীরা ধর্ম বদলে খৃস্টান হয়েছিল তারা উবিনীগে চাকরি করতে গিয়ে তার সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ান এবং ঘটনা জানাজানি হলে ফরিদা আখতারের সঙ্গে দেন দরবার হয়ে ভিক্টিমদের তাড়িয়ে দেয়। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে গর্ভবতী হয়েও কোনো নারী ফরহাদের সন্তানের মা হতে পারে না বরং অকাল গর্ভপাত করতে হয়। রোমেল, গৌতম থেকে শুরু করে অন্য সব সাঙ্গপাঙ্গই আগে থেকে এসব কম বেশি জানে। তাহলে ফরহাদের গুমের ঘটনার সময় তার খাসলত ধরে টান দেওয়া কেন, এই প্রশ্নটি আমার মধ্যে ছিল।

পরবর্তীতে এর ব্যাখ্যা জাফরুল্লাহ ও ছোটনের ভূমিকা থেকে ট্যাগ করেছি।

সেক্ষেত্রে দেখা যায়, ২০১৩ সালের পর সরকার বিরোধীদের মধ্যে ভারত বিরোধী অংশকে কোনঠাসা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। মাঝখান থেকে এমন সব বিরোধী মুখকে সামনে আনা হয় যারা প্রচুর সরব থাকলেও ভেতরে ভেতরে বিরোধী মতের ইসলাম পছন্দ অংশটার চরম বিরোধী। এক্ষেত্রে তারা ইসলাম ও মুসলমান ইস্যুকেও কাজে লাগায় মূলধারার ইসলামপন্থাকে কোনঠাসা করতে। এই পুরো ঘটনাটা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক এমাজউদ্দীন, হেফাজত, মজিবুর রহমান মঞ্জু, গার্ডিয়ান প্রকাশনী চক্রদের মাধ্যমে ঘটে। যার মধ্যমণি হিসাবে আমরা নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ছোটনকে পাই।

আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন জাফরুল্লাহ চৌধুরীরা আমৃত্যু সরব থাকলেও মাহমুদুর রহমানকে সব সময় এড়িয়ে গেছেন। আবার ফরহাদ মজহারও গুমের পর পরিত্যক্ত হয়েছেন। অথচ ইসলামপন্থাকে ঘিরে যে ভাঙাগড়া ছিল তার সব কিছুতে ফরহাদ মজহার ও মাহমুদুর রহমান সম্পৃক্ত ছিলেন। আমাদের আলোচনায় সামনে আসবে যে খোদ এবি পার্টি প্রজেক্টটাও ফরহাদ-মাহমুদের ছিল। কিন্তু ছোটনদের ম্যাকানিজমে তা হাত ছাড়া হয়।

এই ব্যাপারগুলানের জায়গা থেকে দেখলে ফরহাদের গুম নিয়ে ছোটনদের পল্টি নেওয়ার চালটা বোঝা যায়।


মানে চারিত্রিকভাবে স্খলিত বেকুব ফরহাদ মজহারকে গুম করতে গিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর র' যে ভাষ্য তৈরি করে তাকে ছোটনরা লুফে নিয়েছিল যাতে করে তাদের তৎপরতা সহজ হয়। সেক্ষেত্রে ফরহাদ মজহারের পাশে দাঁড়ানোর বদলে উল্টা তার বিরুদ্ধে লোক চক্ষুর অন্তরালে বড় প্রচারণা চালিয়েছিল।


এখানে বলা দরকার, ফরহাদ মজহারের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে আমিও অবস্থান নিয়েছিলাম মূলতঃ ইসলাম বিকৃত করতে তার নানা লেখালেখির কারণে এবং কোথাও জায়গা না পেয়ে বামদের কাছে টানতে গিয়ে শাহবাগী ফ্যাসিবাদকে হাওয়া করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ায়, এবং সর্বশেষ ডিজিএফআইয়ের হয়ে জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি করার পর তাকে ছাড় দেওয়ার প্রশ্ন নাই।


পাঁচ.

এবি পার্টি যেভাবে ছোটনের খপ্পরে


জামায়াতের ভেতরে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে ভুল চিন্তা ও মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রিক বিকার তৈরি হয়েছে তার অন্যতম কারিগর হলো আদর্শচ্যুত বাম ও ডিপ স্টেটের খেলোয়াড় নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ছোটন।

ছোটনের খপ্পরে পড়ে জামায়াতেরই একটি অংশ সংস্কারবাদী ইসলাম চিন্তা থেকে বিচ্যুত হয়ে মু্ক্তিযুদ্ধের চেতনার গোলামে পরিণত হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে মূলতঃ ফরহাদ মজহারের একদল শিষ্যকে হাত করে তাদের দিয়ে জামায়াতের সংস্কারপন্থীদের মগজ ধোলাই করার মাধ্যমে।


ছোটনকে নিয়ে আমরা যে আলোচনা করছি তা ঠিকমতো বুঝতে ইসলামী সংস্কারপন্থীদের বিপথগামী হওয়ার ইতিহাসটা সবার কাছে স্পষ্ট হওয়া দরকার।

জামায়াতে ইসলামীতে সংস্কারবাদী চিন্তার উদ্ভব হয় মূলতঃ আমেরিকার ওয়ার অন টেররের নতুন ডাইমেনশন হিসাবে নির্বিচারে মুসলিম বিরোধিতার বদলে মুসলমানদের মধ্যকার উদারপন্থী আধুনিকতাবাদী লিবারেল একটা অংশকে কাছে টানার প্রকল্পের অংশ হিসাবে।

ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক হলেন বাংলাদেশের মডারেট লিবারেল ইসলামপন্থীদের গুরু, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার গভীর সখ্যতা ছিল, ঢাকা দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা তার বন্ধুও ছিলেন, আবদুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেওয়ার পর র' চেষ্টা করেছিল আবদুর রাজ্জাককে গ্রেপ্তার করাতে। ধরতে পারলে তার ফাঁসি হতো। তবে গ্রেপ্তারের রাতের আগেই আমেরিকান এম্বাসির সরাসরি হস্তক্ষেপে আবদুর রাজ্জাক দেশ ছাড়তে সক্ষম হন।

অনেকেই জানে না যে আবদুর রাজ্জাকের সংস্কারপন্থা প্রোমার্কিন ছিল এবং তিনি তুরস্কের গুলেন মুভমেন্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।


অন্যদিকে জামায়াতের আরেক সংস্কারবাদী নেতা ছিলেন শহীদ আলী আহসান মুহম্মদ মুজাহিদ। তিনি তুর্কির ক্ষমতাসীন একে পার্টি দিয়ে প্রভাবিত ছিলেন। 

জরুরি অবস্থার সময়, সম্ভবত, ১৬/১৭ বছর আগের ঘটনা, স্মৃতি থেকে বলছি, শহীদ মুজাহিদ তুর্কি সফর করে আসেন এবং তার সঙ্গে একে পার্টির গঠনতন্ত্র ছিল যা তিনি মিডিয়ায় প্রদর্শন করেন।

জামায়াতের এ দুই ধারার সংস্কারপন্থীদের মধ্যে শিবিরের নেতারা ছিল, যারা মূলতঃ ২০০৫ সালের শেষের দিক থেকে ঢাকার নাগরিক পর্যায়ে যাতায়াত করতে থাকে।

এদের মধ্যে আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল মূলতঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, মেডিকেল ও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অআঞ্চলিক নেতারা৷ এদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ছিল সাবেক সিপি জাহিদুর রহমান, শিশির মনির, মির্জা গালিব, যোবায়ের আহমেদ ভূঁইয়া, শাহ ফয়সাল রহমান প্রমুখরা।

অন্যদিকে শহীদ মুজাহিদপন্থী ছিল রফিকুল ইসলাম খান, শফিকুল ইসলাম মাসুদ, রেজাউল করিমরা।

তবে জামায়াত ও শিবিরের লোকদের মধ্যে একটা বড় ঘটনা হলো নয়াদিগন্ত পত্রিকা ও দিগন্ত টিভির আগমন।


এই দুই মিডিয়ার উদ্যোক্তা ছিলেন মীর কাসিম আলী। উনি ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্বে ছিলেন৷ তখন শিবিরের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে ইসলামী ব্যাংকের সিএসআর থেকে টাকা দেওয়া হতো। সেই সূত্রে জামায়াতপন্থী লেখক কবি শিল্পিদের সঙ্গে তার গভীর খাতির তৈরি হয়।


নয়াদিগন্ত ও দিগন্ত প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর জামায়াত শিবিরের সাংস্কৃতিক কর্মীদের অনেকে চাকরি পায়। এবং সাবেক শিবির নেতারাও দুই মিডিয়া পরিচালনায় বিনা অভিজ্ঞতাতেও বড় দায়িত্বে চলে আসে।

আমার পর্যবেক্ষণ হলো, মীর কাসিম আলীর রিক্রুট লেখক সাংবাদিক ও শিবির নেতারা কর্মসূত্রেই লতায়পাতায় জড়িয়ে ফরহাদ মজহারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়। তারা ফরহাদের কলাম ও বই দিয়ে প্রভাবিত হয়। বিশেষ করে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা আসার পর ফরহাদ নয়াদিগন্ত পত্রিকা কেন্দ্রিক অ্যাক্টিভিজম শুরু করলে এই ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে।

শিবিরের লোকদের মধ্যে বলা যায় মুজাহিদ ও আবদুর রাজ্জাকের গ্রুপিং লবিংয়ের অনেকটা বাইরেই ছিলেন মজিবুর রহমান মঞ্জু ও সেলিম উদ্দীন। এরমধ্যে মঞ্জু মীর কাসেম আলী কেন্দ্রিক হলেও আবদুর রাজ্জাক কেন্দ্রিক লোকদের তৎপরতায় তাকে তেমন দেখা যায়নি। আর সেলিম উদ্দিন গ্রুপিংয়ে না জড়াতে সংগঠনে মনোযোগী হন। এজন্য তিনি দিগন্তের ডিরেক্টর পদ ছেড়ে রমনা থানা জামায়াতের দায়িত্বে আসেন।

পরবর্তীতে বড় ঘটনা ঘটে, ২০১০ সালে মুজাহিদ গ্রুপের লোকেরা আবদুর রাজ্জাক গ্রুপের শিশির মনিরকে ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি হতে না দিয়ে উল্টা সেক্রেটারি জেনারেল পদ থেকে বিদায় দিলে দুই গ্রুপের বিবাদ প্রকাশ্যে চলে আসে।


আমার পর্যবেক্ষণ হলো, এই সময়টাতেই আবদুর রাজ্জাক গ্রুপ ও মীর কাসিম আলী ঘনিষ্ঠরা একীভূত হয়।

বিশেষ করে সাবেক শিবির সভাপতি ও জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের কে বা কারা শিবিরের গণ্ডগোলে কোন পক্ষ নিচ্ছে এমন প্রশ্ন আসলে দেখা যায় মুজাহিদ গ্রুপ একপক্ষে ও আবদুর রাজ্জাক ও মীর কাসেম গ্রুপ একপক্ষে চলে আসে।

এর মধ্যে বলা হয় শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা, শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, শহীদ মীর কাসেম আলী, আনম আবদুজ্জাহের, সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহম্মদ তাহের, মজিবুর রহমান মঞ্জু, মুহম্মদ জাহিদুর রহমানরা একপক্ষে ছিলেন।

অন্যদিকে রফিকুল ইসলাম খান, নুরুল ইসলাম বুলবুল, হামিদুর রহমান আযাদ, শফিকুল ইসলাম মাসুদরা ছিলেন এক পক্ষে।


শিশির মনির, পরবর্তীতে আবদুল্লাহ আল মামুন সহ শিবির নেতাদের বড় অংশ সংগঠন ছাড়া হয়। তাদের নিজেদের মধ্যে একটা নেটওয়ার্ক সক্রিয় থাকে। যার আওতায় জামায়াত ভেঙে একটা নতুন দল করার চিন্তা দানা বাঁধে।

এরমধ্যে ২০১২-১৩ সাল পর্যন্ত ফরহাদ মজহারের সঙ্গে মঞ্জুদের দহরম মহরম বাড়তে থাকে। 


২০১৪ সালে আমার কাছে তথ্য আসে যে, জামায়াত ভেঙে নতুন দল গঠনের বিষয়ে ফরহাদ মজহার গং সক্রিয়। এরমধ্যে মোসতাঈন জহিররা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারপন্থী সাবেক শিবির নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ করে।

আর এ তথ্যসূত্রে জানতে পারি, জামায়াতের সংস্কারপন্থীরা ফরহাদ মজহারকে যুক্তরাজ্য ও মালয়েশিয়ায় সফর করিয়েছে এবং সেখানকার প্রবাসী জামায়াতের বৈঠকে তিনি বক্তৃতা করেছেন।

এখানে বলা দরকার, ফরহাদ মজহার বাংলাদেশের প্রথম ব্যক্তি যে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে নব্বই দশকে বই লিখেছিল। অনেকেই হয়তো জানে না যে, মাওলানা সাঈদীসহ জামায়াত নেতাদের ফাঁসির রায় লিখে দিয়েছিল বেলজিয়ামের যেই জিয়াউদ্দিন, সেও মূলতঃ ফরহাদ মজহারের একজন ঘনিষ্ঠ লোক। 

এমনিতে ইনার সার্কেলে আমরা যখন বসতাম তখন ফরহাদ মজহার, গৌতম দাসরা জামায়াতের প্রতি নিজেদের বিদ্বেষ আড়াল করত না। 

এই যে বিএনপি যেন জামায়াত নেতাদের ফাঁসি হলে কোনো বিবৃতি না দেয়, এমনকি সালাউদ্দিন কাদের চৌধিরীর বিষয়েও দূরত্ব রাখে, এর কুমন্ত্রণাদাতাও ছিল ফরহাদ মজহার। বিএনপিতে জামায়াত বিদ্বেষী অংশটাকে মতাদর্শিকভাবে উস্কানি প্রদানও ছিল তার অন্যতম অপকীর্তি।

পরবর্তীতে একটা ঘটনা ঘটে। এর শুরু অবশ্য হয়েছিল ২০১১ সালে খালেদা জিয়ার ভারত সফরের মধ্য দিয়ে। বিএনপি ভারতমুখী হয়ে পড়ে। দলটির সঙ্গে সরাসরি র'র একটা যোগাযোগ তৈরি হয়েছিল। যার প্রভাবে ভারত বিরোধিতার জন্য আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও ফরহাদ মজহারের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব তৈরি হয়। বিএনপি ধারার সকল তৎপরতা থেকে এ দুজনকে বাদ রাখা হয়।

আর ঠিক এ সময়টাতে সামনে চলে আসেন ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী। আগেই উল্লেখ করেছি জাফর ও নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ছোটন হলো ভায়রা।

জাফরুল্লাহর সক্রিয়তার সময়টাতে দেখা যায়, ফরহাদ মজহারের পারিষদ ও জামায়াতের সংস্কারপন্থীদের প্রায় সবাইকে ছোটন মেইনটেন করছে।

এরমধ্যে গৌতম দাস, মোসতাঈন জহির ও মোহাম্মদ রোমেলরা ছিল। ছোটনের দিক থেকে যোগ হয়েছিল পিনাকী ভট্টাচার্য ও আবু মুস্তাফিজ হাসান শাপলুরা।


এদের তত্ত্বাবধানে যখন মঞ্জুদের গ্রুমিং হলো তখন তারা ইসলামী রাজনীতি সংস্কারের অবস্থান থেকে সরে গেল। বলা যায় মঞ্জুরা এক্স ইসলামপন্থী হয়ে গেল এবং আদর্শ হিসাবে কার্যত সেক্যুলারিজমকে গ্রহণ করল। এক্ষেতের জনআকাঙ্খার সংবাদ সম্মেলনের কপিটি মুসতাঈন জহির লিখে দিয়েছিল। তা একটা সেক্যুলার বয়ান ছাড়া কিছুই নয়। মঞ্জুকে দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রের তথাকথিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারকে নিজেদের আদর্শ বলতে চায়, এগুলান মূলত সেক্যুলার অঙ্গীকারই মাত্র।


মোট কথা হলো, যেহেতু ইসলাম প্রশ্নে ছোটন ছুপা বিদ্বেষী, সেহেতু ইসলামপন্থী রাজনীতির সংস্কারের স্লোগান তোলা মঞ্জুদেরকে ইসলামপন্থী রাজনীতি পরিত্যাগ করেই ছোটনের মন পেতে হয়। এক্ষেত্রে ছোটনদের মন পেতে মঞ্জুদেরকে গানবাজনা ও বেপর্দা নারীর উপস্থিতিও নিশ্চিত করতে হয়।


শেষ পর্ব

গার্ডিয়ানকে দিয়ে জামায়াতকে দূষণ: ছোটন: পিনাকী:মেসবাহ: নূররা


জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর মকবুল আহমেদসহ বড় বড় নেতারা মেসবাহ সাঈদের বাসায় আত্মগোপনে ছিল। মেসবাহর পরিবার আওয়ামী লীগ। তার এক ভাই সৌদি আওয়ামী নেতা। ফেনী থেকে নির্বাচন করতে চায়।

এই মেসবাহর বাসা ধানমন্ডির যেই ভবনে সেখানেই এক ফ্ল্যাটে থাকে নুরুল ইসলাম ভূইঁয়া ছোটন।


এ খবরটি জানার পর আমি নড়েচড়ে বসলাম। ডিজিএফআই কানেক্টেড ছোটন যে ভবনে থাকে, সেখানেই মেসবাহর বাসা! আবার সেখানে জামায়াত নেতারা পলাতক থাকেন! 


এসব কিছু কি আসলে ম্যাটার করে?

আমি এ প্রশ্নের জবাব আমলে নিতে বাধ্য হয়েছি। কারণ শিবিরের ও জামায়াতের বড় বড় সূত্রগুলো সাঈদকে ঘিরে কীর্তি কারখানার একটা এমন কিছু তথ্য দিয়েছে তাতে করে কিছুই উপেক্ষা করা যায় না।

একসূত্রের দাবি, সাঈদরা ফাইভ স্টার হোটেলে মদ্যপান করে। নারী ঘটিত অভিযোগও আছে। তারপরেও সাঈদকে প্রাইজ পোস্ট হিসাবে জামায়াতের ঢাকা মহানগরীর শুরা সদস্য করা হয়েছে। আদৌতে সে জামায়াতের নামকাওয়াস্তে রুকন। এর বাইরে কোনো দায়িত্বে না থাকলেও শুরা সদস্য। তাকে ফেনীতে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীও করা হয়েছে।

মজার ব্যাপার হলো সাঈদ এবি পার্টি গঠন প্রক্রিয়ায় ছিল। মজিবুর রহমান মঞ্জুর সঙ্গে সে গভীরভাবে সম্পৃক্ত ছিল। 

এর প্রমাণ হলো, এবি পার্টি গঠনে অন্যতম অর্থ যোগানদাতা বায়োফার্মার এমডি লকিয়তুল্লাহ, মজিবুর রহমান মঞ্জুদের ব্যবসায়িক উদ্যোগ নভ হেলথ সার্ভিসে মেসবাহ সাঈদও পার্টনার ছিল৷ এই প্রতিষ্ঠানটি গড়া হয়েছিল এবি পার্টিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই। তবে পরবর্তীতে জামায়াতের কাছ থেকে বেশি ফায়দা পাওয়ার প্রলোভন পেয়ে মেসবাহ যুবলীগের ঢাকা মহানগরের কিছু নেতার মাধ্যমে লকিয়তুল্লাহদের প্রতিষ্ঠান ও টাকা পয়সা মেরে দেয়।

এখন কথা হলো সাঈদের সঙ্গে এবি পার্টি ও ছোটনের সম্পর্ক কিভাবে ফাংশন করেছিল?

শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সন্তানরা আলাপকালে আমাকে এর বিস্তারিত জানিয়েছেন।

মূলতঃ এবি পার্টি গঠনের আগে মজিবুর রহমান মঞ্জুদের পক্ষে শিবিরের কেন্দ্রীয় আইটি বিভাগের সহকারী দায়িত্বশীলরা প্রচারণা চালিয়েছিল। এতে গার্ডিয়ান প্রকাশনীর নূর মোহাম্মদদের পুরো গ্যাং জড়িত ছিল। এরা ফিজিক্যালিও শিবিরের অনেক লোকককে সংস্কারপন্থা সমর্থন করতে বলেছে।


আর নূর মোহাম্মদদের এই পুরো গ্যাংটার সম্পর্ক হলো মেসবাহ সাঈদের সঙ্গে। 

মজার ব্যাপার হলো ছোটন ইসলামপন্থীদের কাছে যা চায় তাই সাঈদ-নূর৷ মোহাম্মদদরা ফেসবুক প্রচার করে।

এর বড় তিনটা প্রমাণ আছে। যার প্রথমটা হলো পিনাকী ভট্টাচার্য কানেকশন।।

পিনাকী কানেকশন

নুরুল ইসলাম ভূইয়া ছোটনদের এক চাওয়া ছিল ইসলামপন্থী তরুণরা যেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে ইসলামের জায়গা থেকেই সমর্থন করে। এমনটি করা গেলে একাত্তর প্রশ্নে জামায়াতে ইসলামী ও মুসলিম লীগের ঐতিহাসিক অবস্থানের পক্ষে জনজোয়ার বন্ধ হয়ে যাবে। বিশেষ করে জামায়াত নেতাদের ফাঁসি, সারা দেশে ম্যাসাকার, শাপলা চত্বরে ম্যাসাকারের ঘটনায় ইসলামপন্থীরাতো বটে, সাধারণ মুসলমানরা মুক্তিযুদ্ধকে যেভাবে ঘৃণা করছিল তা বানচাল করে দিয়ে একাত্তর নামক বিষই যেন ইসলামপন্থীরা পান করে তা ছিল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র', এর অনুগত ডিজিএফআই ও ছোটন দালালদের মাস্টার প্ল্যান।

এই কাজটি বাস্তবায়ন করা হয়েছিল পিনাকী ভট্টাচার্যকে দিয়ে। তিনিই ঘৃন্য মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বই লেখেন "মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম"। এই বইটির প্রকাশক হলো গার্ডিয়ান প্রকাশনী। মানে ২০১৩ সালের আন্দোলনসহ জামায়াত নেতাদের ফাঁসির ঘটনায় বাঁশেরকেল্লাসহ অনলাইন স্ফিয়ারে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধিতার দায়িত্ব পালন করছিল শিবিরের যে আইটি বিভাগ, তারাই ২০১৭ সালে এসে দায়িত্ব নিল মুক্তিযুদ্ধকে ইসলামী মোড়কে প্রচার করার। বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতির ইতিহাসে এটিই হলো সর্বোচ্চ গাদ্দারী।

ছোটন-পিনাকীদের এই মুক্তিযুদ্ধ প্রজেক্ট মেসবাহ সাঈদ, নূর মোহাম্মদ, কমরেড মাহমুদ গ্যাংয়ের মাধ্যমে শিবিরের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

এরপরের কাহিনী হলো, খোদ জামায়াতের মধ্যেই কথা শুরু হয় যে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধিতা থেকে জামায়াতকে বের হতে হবে।

এবং যেই শহীদ নেতাদের জন্য ২০১৪ সাল থেকে জামায়াত শিবিরের সর্বস্তরে প্রশ্নাতীত সমীহশ্রদ্ধা জারি হয়েছিল, সেই নেতারা একাত্তরে ভুল করেছিল নতুন করে বলাবলি শুরু হলো।

এক্ষেত্রে ছোটন লিঙ্কের সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের কতটা কটাক্ষ করে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে কথা বলেছেন তা ডয়েচেভেলেতে দেখা গেছে। গার্ডিয়ান প্রকাশনী গ্যাংয়ের লোকেরাতো নিয়মিতই একাত্তরের পজিশনকে কটাক্ষ করেই।

ছোটনদের আরেক চাওয়া হলো বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের যেন জোট না থাকে। এক্ষেত্রে দেখবেন মেসবাহ সাঈদ-নূর মোহাম্মদদের গ্যাং নিয়মিতই অতি জামায়াত প্রেম দেখিয়ে বিএনপি বিদ্বেষী প্রচারণা চালায়। এতে বিএনপির লোকদের সঙ্গে অনলাইনে মনোমালিন্য তৈরি হয়েছে, তেমনি জামায়াতের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিএনপির সঙ্গে জোটের বদলে লীগের সঙ্গে আঁতাত শ্রেয় মনোভাব তৈরি হয়েছে।

তৃতীয় প্রমাণ হলো ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র'র মদদপুষ্ট চরমোনাই পার্টিকে ইসলামপন্থী তরুণ প্রজন্মকে গ্রহণযোগ্য করাতে ছোটনদের মিশনের পক্ষ মেসবাহ সাঈদ-নূর মোহাম্মদ-কমরেড মাহমুদ গ্যাংয়ের প্রচারণা।

চরমোনাইয়ের লোকেরা জামায়াতের ফাঁসি হওয়া নেতাদের শহীদ মনে করে না৷ তারপরেও চরমোনাইয়ের পক্ষে জামায়াতের একাংশ ফেসবুকে প্রচারণা চালায়, এটি মূলতঃ ছোটনের ইচ্ছারই প্রতিফলন। তার অ্যাসাইনমেন্ট হিসাবেই নূরারা চরমোনাইয়ের গান গায়।

আমি ছোটনকে নিয়ে লেখা শুরুর পর ঢাকার একজন সাংবাদিক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। ভিন দেশ থেকে আমি যখন ছোটনকে ঘিরে নানা সমীকরণ মিলাচ্ছি তখন তিনি বলেছিলেন ডিজিএফআইয়ের একটা মিশন হলো জামায়াত ও চরমোনাইকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং এদেরকে দিয়ে বিএনপির প্রতিপক্ষ একটা জোট দাড় করানো, আর এটি করার দায়িত্ব হলো ছোটনের।

মজার ব্যাপার হলো, পরবর্তীতে বরিশাল সিটি নির্বাচন ঘিরে মেসবাহ-নূরা-মাহমুদ গ্যাং চরমোনাইয়ের এক পোলার পক্ষে প্রচারণা চালায়। তারপর সে আওয়ামী লীগের হাতে মার খেলে চরমোনাই ও জামায়াত ঐক্য নিয়ে এরা প্রোপাগান্ডা শুরু করে। 

পরবর্তীতে দেখা যায়, চরমোনাইকে সান্ত্বনা দিতে জামায়াত নেতারা ছুটে যায়, জামায়াত আমীর ফোনে কথা বলেন৷ আর চরমোনাইয়ের এক সভায় প্রথমবারের মতো জামায়াত দাওয়াত প্রাপ্ত হয়। এই পুরো ঘটনাপ্রবাহের নেপথ্যে ছোটন।

বাংলাদেশের রাজনীতির নেপথ্যের মানুষদের নিয়ে অনেক বিস্তারিত কাজ করার আছে। আমি চাইলে ছোটনের তৎপরতার সঙ্গে প্রথম আলোর সংযোগ ও এনজিও কর্মী লেলিনরা জড়িত তা নিয়েও লিখতে পারি। কিন্তু একটা ধারণা দিতেই ছোটনকে বেশ লম্বা আলোচনা করেছি। এখন আগ্রহীরা বিস্তারিত খুঁজতে পারেন। সময় সুযোগ হলে হয়তো নানা লোকদের তৎপরতা নিয়ে বলব। আমার কাজটা সহজ, লোকজনের চিন্তা, তৎপরতা ও নেটওয়ার্কগুলো শনাক্ত করা। ছোটনদের চারপাশে যারা ঘুরপাক খাচ্ছেন তারা আশা করি নেটওয়ার্ক সম্পর্কে ভালোমতো সচেতন হবেন।সমাপ্ত।


২৯ নভেম্বর ২০২৩ইং প্রথম প্রকাশিত।

বৃটিশ দালাল আব্দুল ওহাব নযদির সরূপ উম্মোচন

 বৃটিশ দালাল আব্দুল ওহাব নযদির সরূপ উম্মোচন


মোনাফেক আ:ওহাব নযদি


নজদী ওহাবীদের সম্পর্কে আলােচনা করার পূর্বে নজদ দেশ সম্পর্কে আলােকপাত করতে চাই। আরবের মক্কা নগরীর সােজা পূর্ব দিকের একটি প্রদেশের নাম নজদ । এখন উক্ত নজদ দেশটি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ নামে পরিচিত। এই এলাকার অধিবাসীরা ঐতিহাসিক ভাবে নানা কারনে অভিশপ্ত হয়ে আসছে। বিশ্ব মানবতার শ্রেষ্ঠতম ও পবিত্রতম ধর্ম ইসলামের আবির্ভাবেও অত্র অঞ্চলবাসী খুব কমই প্রভাবান্বিত হয়েছে। ইসলামের প্রারম্ভিক কাল হতে এরা ধর্মের সঙ্গে শত্রুতা করে আসছে। শেখ নজদী নামক এক ধুরন্ধর ব্যক্তি ঘুমন্ত অবস্থায় মহানবী (দঃ) কে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল। নজদবাসীদের দুষ্কর্মের জন্য মহানবী (দঃ) এর মনে ক্ষোভ প্রকাশ পাওয়ায় তাদের প্রদেশে আজ পর্যন্ত কোন উল্লেখযােগ্য ইমানদার ব্যক্তির জন্ম হয়নি বরং এখান থেকে শয়তানের শিং এর আবির্ভাব ঘটে। এখানে মাটির অভ্যন্তরে আজ পর্যন্ত কোন খনিজ সম্পদের উদ্ভব ঘটেনি। শেখ নজদী, মুসাইলামা, কাজ্জাব ও বৃটিশ দালাল মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব নজদী ছিলেন এই একই প্রদেশের অধিবাসী। বীরে মাউনার হৃদয় বিদারক ঘটনা এখানেই ঘটে। এই ঘটনায় নজদীর অনুচরেরা সত্তর জন নিরপরাধ সাহাবীকে নজদবাসীরা শহীদ করে। উক্ত ঘটনার পর সাহাবী সমন্বয়ে মহানবী (দঃ) নামাজান্তে কুনুতে নাজেলার মাধ্যমে নজদবাসীর জন্য বদদোয়া করেন। বর্তমানকালেও এর প্রতিশােধ হিসেবে নজদবাসীগণ হুজুর পাকের শানে কুলু হারাম রুহু বাক্যটি উচ্চারণ করে অর্থাৎ রওজার পাশে সব কিছু হারাম, এই স্থান ত্যাগকর সকল নজদবাসী এই নীতিতে বিশ্বাসী তারা নবীজীর প্রতি ঘৃণা পােষণ করে। নজদের অধিবাসীদের কঠিন দিল শয়তানী আচরণ ও ইসলামে ফেতনা ফেসাদ সৃষ্টির মূল ঘাঁটি হিসেবে বর্ণনা করে আরও বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। বাস্তব জীবনেরও দেখা গেছে এ প্রদেশের অধিবাসীদের অনুরূপ কঠিন আচরণ।

এই নজদ দেশটি সম্পর্কে মিশকাত শরীফের বরাত দিয়ে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত- একদা বিশ্ব নবী (দঃ) আরব ভূখণ্ডের জন্য দোয়া করছিলেন- হে আল্লাহ আমাদের শ্যাম দেশে বরকত প্রদান কর । হে আল্লাহ আমাদের ইয়ামেন দেশে কল্যাণ সাধন কর। এই দুই দেশের জন্য দোয়া করে তিনি হাত নামিয়ে ফেললেন। উপস্থিত শ্রোতাদের মধ্যে জনৈক সাহাবী আরজ করলেন- “হে আল্লাহর রাসূল আমাদের নজদের জন্য দোয়া করুন।
মহানবী (সা:) দ্বিতীয়বার হাত উঠিয়ে পূর্বের মত দোয়া করে হাত নামিয়ে ফেললেন। জনৈক সাহাবী পূর্বের মতই আরজ করলেন মহানবী (দঃ) তৃতীয়বার দোয়া শেষ করে সাহাবীদের প্রতি লক্ষ করে বললেন- “হে আমার বন্ধুরা তােমরা নজদের জন্য দোয়া করতে বার বার আরজ করছ আমিও নজদের জন্য দোয়া করতে চেষ্টা করছি কিন্তু নজদ ও নজদের অধিবাসীদের জন্য কোন দোয়া আমার অন্ত করণ থেকে আসছেনা। যে অঞ্চল সৃষ্টির আদি থেকে আল্লাহর অনুগ্রহ হতে বঞ্চিত সে ভূখণ্ডের জন্য দোয়া করি কিভাবে? আমার ওফাতের পর এই দেশ হতে ভূমিকম্প স্বরূপ তােলপাড়, ফেতনা ফ্যাসাদ সৃষ্টি হবে এবং এই দেশ হতে শয়তানী দলের আবির্ভাব ঘটবে।” মহানবী (দঃ) এর ওফাতের পর তার এই ভবিষ্যৎবাণী অক্ষরে অক্ষরে বাস্তব রূপ ধারণ করে। বােখারী এবং মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে হযরত আবু হােবায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে-মহানবী এরশাদ করেছেন- “নজদ হতে আমার ওফাতের পর শয়তানের তীক্ষ্ণধার দুটো শিং বেরুবে। মুসাইলামা কাজ্জাব নামের ভণ্ড নবীর দাবীদার সেই শয়তানের প্রথম শিং বলা হয় । সে হযরত আবুবকর (রাঃ) খেলাফতের সময় আবির্ভূত হয়। ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য সে একটি শক্তিশালী বাহিনী গঠন করে। তাকে সমূলে উৎপাটন করার জন্য হযরত আবুবকর হযরত একরামা ও হযরত সারজিল (রাঃ) কে প্রেরণ করেন। পরে তাদের বাহিনীর সাথে খালিদ বিন ওয়ালিদের বাহিনীও যােগদান করেন । এই যুদ্ধে মুসলিম পক্ষের বহু হাফেজে কোরআন ও হাক্কানী আলেম নিহত হন। ওহায়সী যিনি হযরত হামজা (রাঃ) কে ওহুদের যুদ্ধে শহীদ করেছিলেন তার তীরের আঘাতে মুসাইলামা কাজ্জারের ভবলীলা সাঙ্গ হয়। তার তিরােধানের পরও চোরাগুপ্তা নজদী বাসীর ইসলাম বিরােধী তৎপরতা মন্থর গতিতে অব্যাহত থাকে তবে এর পর প্রকাশ্যে এদের দুশমনী ধরা পড়েনি।

মিশকাত শরীফের প্রথম খণ্ডের কিয়াস শীর্ষক আলােচনায় মুরতাদদের (ধর্মদ্রোহীদের হত্যা) অধ্যায়ে নাসাই শরীফের উদ্ধৃতি দিয়ে হযরত আবু দারদা। (রাঃ) হতে বর্ণিত যে- একবার হুজুর (দঃ) কিছু গণিমতের মালবন্টন।করছিলেন, তখন পিছন থেকে একজন লােক বলে উঠল-“হে মুহাম্মদ আপনি। ন্যায়সঙ্গতভাবে বণ্টন করেন নাই।" হুজুর রাগান্বিত হয়ে বললেন- “আমার পর আমার থেকে বেশী কোন ইনসাফকারী ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি পাওয়া যাবে না।” অতঃপর তিনি বললেন- শেষ জমানায় প্রশ্ন উত্থাপনকারীর বংশ হতে একটি গােত্রের উদ্ভব হবে যারা কোরআন পাঠ করবে বটে কিন্তু কোরআন তাদের কণ্ঠদেশের নিচে নামবে না অধিকন্তু তারা ইসলাম থেকে এমনিভাবে দূরে চলে যাবে যেমনি করে তীর ধনুক হতে বের হয়ে যায়। তারপর বললেনমাথা মুড়ানাে হল তাদের বিশেষ চিহ্ন। তাদের দল একের পর এক বের হতে থাকবে শেষ পর্যন্ত তাদের একটি দল দাজ্জালের সাথে মিলিত হবে। যদি তােমরা সাক্ষাৎ পাও তারা হল সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে নৃশংস তারা মূর্তি পূজারীদের ছেড়ে দেবে কিন্তু মুসলমানদের হত্যা করবে। কিতাবুল আম্বিয়া ইয়াজুজ মাজুজ কাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত বর্ণনা মুসলিম ও মিশকাত শরীফে আল মুজমাত অধ্যায় প্রথম পরিচ্ছেদ দেখুন । হাদিস বিশারদগণ বলেন প্রথম শিং দ্বারা ভণ্ড নবী মুসাইলামা কাজ্জাবকে ইঙ্গিত করা হয়েছে সে হিজরী ১১ সনে আবির্ভূত হন। দ্বিতীয় শিং দ্বারা মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব নজদীকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এই ব্যক্তি মুসাইলামা কাজ্জাবের আবির্ভাবের প্রায় ১১শত বছর পর আবির্ভূত হন। বহুকালের প্রতিষ্ঠিত ইসলামের মূল কাঠামােতে এই ব্যক্তি এসে প্রবল ঝাঁকুনি দেয় সে সমস্ত আবর ভূখণ্ডে তােলপাড় এবং ফেতনা ফেসাদ সৃষ্টি করে।

মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব নজদী ওহাবী মতবাদের উদ্ভাবক সে ছিল মিথ্যা ভণ্ড নবী দাবীদার মুসাইলামা কাজ্জাবের বংশধর। এই পাপিষ্ঠ ব্যক্তি নজদ প্রদেশের বণি তামিম গােত্রের উযাইনা বস্তিতে ১১২২ হিঃ জন্মগ্রহণ করেন । ১২০৬ হিঃ ৯৭ বৎসর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তার মা শরিয়ত বিরােধী কাজ করলে শরীয়তের বিচারে তাকে নাকে দাগ দেয়া হয়। আব্দুল ওহাব নজদী ছােটবেলায় তার মার কোলে থেকে উক্ত দাগ দেখে এর কারণ জানার জন্য মাকে বার বার তাগিদ দিল । ফলে তার মা বলল- ইহা মােহাম্মদী শরিয়তের বিচারের চিহ্ন। এ কথা শুনে নজদী তখনই প্রতিজ্ঞা করল আমি মােহাম্মদের ধর্মের বিরােধিতা করব । এই নবীর দ্বীনকে দুনিয়া থেকে মিটাইয়া দেব । নজদীর মা তাকে বার বার নিষেধ করে বলল এসব কথা বল না যদি মুসলমানেরা শুনে তােমাকে কতল করে ফেলবে। বাবা আমার নসীবে যা লিখা ছিল তাই ঘটেছে তােমার প্রতিশােধ নিতে হবে না। ভাগ্যের কি পরিহাস। ছােটবেলায় মনের দাগ মিটলনা। মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব নজদী ক্রমান্বয়ে। বড় হতে লাগল ঐতিহাসিক বলতরণ বলেন- মুহাম্মদ বিন নজদী প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করে শেখ সুলাইমান কুরদি শাফেয়ী ও শেখ মােঃ হায়াত হােসেন সিন্ধী হতে। সে বাল্যশিক্ষার যুগ হতেই নবী করিম (দঃ) এর নবুয়ত ও রেসালাতের ঘাের বিরােধী ছিল । বাল্যকালে সে মুসাইলামা কাজ্জাব আসওয়াদ প্রমুখের বংশধরদের সাথে সংশ্রব ও আনা গােনা রেখে চলত । উক্ত দুজন শিক্ষকের শিক্ষা পরিত্যাগ করে খারেজী ও মৌলবাদীদের ভ্রান্ত কিতাবসমূহ অধ্যয়ন করতে লাগল। ( সূত্র: নযদের ইতিহাস)।

অবশেষে ১১৫০ হিঃ প্রথমে সে খারেজী আকিদা প্রচারে লিপ্ত হয় কিন্তু তখন খারেজী মতবাদকে জনগণ ঘৃণার চোখে দেখত তাই সে গােপনে খারেজী মতবাদের আড়ালে নিজস্ব ওহাবী আকিদা, প্রচার করতে থাকে। নজদীর আপন ভাই শেখ সােলাইমান নজদী আব্দুল ওহাব নজদীর প্রথমে বিরােধিতা করেন তার এই ভ্রান্ত মতবাদখানা আরবের কেউ বিশ্বাস করল না তবে একে সর্বপ্রথম মনেপ্রাণে গ্রহণ করলাে দারইয়ার বেদুইন সর্দার ইবনে সউদ।

মােহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব নজদীর প্রণীত দুখানা কুফরী পুস্তক রয়েছে। প্রথম পুস্তকের নাম কিতাবুত তৌহিদ, দ্বিতীয়টির নাম কাশাফুশ শুবাহাত । উক্ত দু'খানা পুস্তককে মুসলিম উম্মার ইমান ধ্বংসকারী ধর্মনাশক পুস্তকরূপে অভিহিত করেছেন। নজদী সাহেবের কুফরী উক্তিসমূহের মধ্যে রয়েছে সে বলে-হুজুর (দঃ) ক্ষমতাশূন্য লােক ছিলেন। তার ভালমন্দ কিছু করার ক্ষমতা ছিল না । হানাফী, মালেকী, হাম্বলী, সাফিই এই ইমামের অনুসরণ অনুকরণ করা শিরিকতুল্য অপরাধ । আম্বিয়া আউলিয়া কেরামগণকে ঘৃনা না করলে মুশরিক হয়ে যাবে । এরূপ আকিদার বিশ্বাসীদের বিবাহিত স্ত্রী অপহরণ করতঃ উপভােগ করা ভাল। পাপিষ্ঠ ওহাবী তার আরাে বহুসংখ্যক ভ্রান্ত মতবাদকে একত্রিত করে প্রথমে আরব ভূখণ্ডে প্রচার করতে থাকে। কিন্তু তার এই তথাকথিত মতবাদকে শুধু মুসলমান নয় তথাকার প্রত্যেক বিধর্মীগণ পর্যন্ত প্রত্যাখান করেছে । ইবনে সউদ ছিল আব্দুল ওহাব নজদীর ভগ্নিপতি । ওহাব নজদী তার স্বার্থ উদ্ধারের জন্য বহু প্রলােভন দিয়ে আপন বােনকে বেদুইন সর্দার সউদের নিকট বিবাহ দেন। ওহাব নজদী একদা তার দুজন শিক্ষক গুরুর সামনে মহানবী সম্পর্কে কটুক্তি করে মন্তব্য করে যে মহানবী ছিলেন একজন তারেস (ডাকপিয়ন)। শিক্ষকদ্বয় তার মন্তব্যের প্রতিবাদ করলে সে তাদেরকে চরম অপমান করে শ্রেণী কক্ষ ত্যাগ করে (দারারুস সানিয়া)। একদা ওহাব নজদী দারইয়ার মসজিদে ভাষণে বলেন- যে ব্যক্তি তার প্রবর্তিত
ওহাবী মতবাদ গ্রহণ করবে না সে কাফের হয়ে যাবে । যে ব্যক্তি হযরত মােহাম্মদ (দঃ) এর নামের ওছিলা করবে তার শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। উক্ত ভাষনের প্রতিবাদ করেন তার আপন ভাই শেখ সােলাইমান নজদী । মন্তব্যের কারণে ওহাব নজদী আপন ভাইকে হত্যার নির্দেশ দেন। অতঃপর শেখ সােলায়মান হত্যার ভয়ে মদিনায় গিয়ে আশ্রয় নেয় এবং ওহাবী মতবাদের বিরুদ্ধে একটি রেসালা লিখে জনগণকে তার চেতনা থেকে দূরে থাকার জন্য সতর্ক করে দেন।

ওহাব নজদী একবার মদীনা আগমন করে মসজিদুন্নবীর বাইরে সুন্নী উলামায়ে কেরামদের এক বাহাছ অনুষ্ঠানের আহবান করেন এবং তাদের সামনে শােচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে রাতের অন্ধকারে মদীনা ত্যাগ করেন। পরাজয়ের কথা সে যখন ইবনে সউদের কাছে ব্যক্ত করলেন তখন ইবনে সউদ তার শ্যালকের কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল । উভয় প্রতারক একত্রিত হয়ে সুন্নী ইমামগণকে জব্দ করার প্রস্তুতি নিতে লাগল এবং দুজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আরবের মূখ যাযাবর দ্বারা একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করার পর তারা সকলে সংঘবদ্ধ হয়ে মদীনার আশেপাশে চুরি, ডাকাতি, হত্যা লুণ্ঠনের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করল। গুণ্ডা বাহিনী আগ্রাসন পরিচালিত করে আরবের কতক এলাকা দখল করে নেয় তথা ওহাবী হুকুমত চালু করল। ১২১৮ খ্রিঃ পর্যন্ত ওহাবীরা আরব ভূখণ্ডে গােপনে এবং প্রকাশ্য একটি ভ্রান্ত মতবাদ প্রতিষ্ঠা করে যার নাম ওহাবী মতবাদ ও ওহাবী ধর্ম। মােহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব নজদী ছিল খারেজীপন্থী তকিউদ্দিন ইবনে তাই মিয়ার অনুসারী । তার দলভুক্তগণ বহু পূর্ব হতে নবী সাহাবী আউলিয়া ও শহীদগণের মাজার শরীফ এর জেয়ারত তার উদ্দেশে সফর সঙ্গী গ্রহণ করা হারাম আকিদা পােষন করে আসছে। ইবনে তাইমিয়া নামের একজন ওহাবী মুরুব্বী দামেস্কে অবস্থান করার ফলে একটি ফতােয়ার মধ্যে ঘােষণা দিয়েছিল যে- হুজুর পাক (দঃ) এর রওজা শরীফ জেয়ারত করার জন্য সফর করা হারাম । ইবনে তাইমিয়া কটুক্তি করে আরাে বলেছেন যে- হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে যে, রাতদিন মুহর্তে মুহুর্তে লক্ষ লক্ষ ফিরিস্তার দল আসমান হতে অবতরণ করে রওজা শরীফ জেয়ারত করেন এই হাদিসটি তাইমিয়ার বিশ্বাসযােগ্য নয় বলে অভিমত ব্যক্ত করে। ইবনে তাইমিয়ার ধর্মনাশা ফতােয়াখানা প্রকাশিত হওয়ার পর মিশর, শ্যাম ও দামেস্কের মধ্যে ধর্মপ্রাণ মুসলিম সমাজে হৈ চৈ পড়ে যায় এবং তাইমিয়ার প্রতিবাদে মুসলমানগণ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। সুন্নী উলামাগণ তাকে কোন ধরনের সাজা দেবেন এ সম্পর্কে সকল মুসলমান আল্লামা বােরহান বিন ফাবকার নিকট উপস্থিত হন। তিনি ৪০ পূঃ বিস্তত কোরআন সুন্নাহ ভিত্তিক একটি ফতােয়ার মধ্যে বলেন যে-ইবনে তাইমিয়া কাফের এবং ধর্মচ্যুত হয়েছে সে কঠিন শাস্তি পাওয়ার যােগ্য ইবনে। তাইমিয়ার কুফরি ধর্মের শাস্তি নির্ধারণের জন্য জনগণ তখন সাফেয়ী মালেকী, হানাফী প্রমুখ কাজীদের নিকট রক্ষ্ম হন । 
(১) কাজী বদর বিন জারিরী হানাফি বলেন যে- ইবনে তাই মিয়াকে গ্রেফতার করে গণপিটুনির মাধ্যমে মেরে ফেলা হােক।
 (২) কাজী হানাফি বলেন যে- ইবনে তাইমিয়াকে হত্যা করা হােক, কারণ হুজুর পাকের রওজা শরীফের বিরুদ্ধে ফতােয়া রচনা করা একটি প্রকাশ্য কুফরি কর্ম; দ্বিতীয়ত, যে কুফরী ফতােয়াকে ঘােষণা দেয় ইহা তাে প্রকাশ্য ধর্মচ্যুতির লক্ষণ। অবশেষে ইবনে তাইমিয়াকে মিশরে পলাতক থাকা অবস্থায় গ্রেফতার করা হয় । ৭২৬ হিঃ শাবান মাসে তাকে দামেস্কের কিল্লাতে বন্দী করা হয় । ৭২৮ হিঃ জিলকদ মাসের ২০ তারিখ খারেজী ও ওহাবী ধর্মের বড় মুরুব্বী সাহেব শােচনীয় অবস্থায় সেখানে বন্দী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। (সাইফুস সাকিল-১৫৬পৃঃ)

সূত্রঃ[https://rb.gy/3yjgx2]

দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে!

  দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে! এক.   শুনতে খারাপ শোনালেও এটা সত্য, রবীন্দ্রনাথের...