"পাকিস্তান-ইসরায়েল সম্পর্ক ও বাংলাদেশ জন্মের ইতিকথা"
পাকিস্তান-ইসরায়েল সম্পর্ক ও বাংলাদেশ জন্মের ইতিকথা
১৯৫২ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার জাররুল্লাহ খান ইসরাইলের ব্যাপারে দেশটির বৈরিনীতি প্রনয়ন করেন এবং আরব জাতীয়তাবাদ গড়ার দিকে জোড় দেন। এভাবেই আরব বিশ্বের সাথে পাকিস্তানের নিবিড় সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং ইসরায়েলের চক্ষুশূলে পরিনত হতে থাকে।
দখলদার ইসরাইলের তথাকথিত স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন ওয়াশিংটনের ইসরাইলের দূতাবাসকে এই মর্মে অবহিত করা হয় যে, পাকিস্তান মধ্যপ্রাচ্যে সৈন্য প্রেরণ করতে যাচ্ছে। আরও বলা হয় যে, দেশটি আরবদের জন্য চকোশ্লোভাকিয়া থেকে ২৫০০০০ রাইফেল ও মিসরীয় বাহিনীর জন্য ইতালি থেকে ৩ টি প্লেন ক্রয় করবে।
পাকিস্তানের বিমান বাহিনী ১৯৬৭ সালের "৬ দিনের যুদ্ধ" ও ১৯৭৩ সালের "ইওম কাপোর যুদ্ধে" সরাসরি অংশগ্রহণ করে। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তান ও পিএলও এক সমঝোতায় আসে যার ফলে পিএলওর অফিসাররা পাকিস্তানের মিলিটারি স্কুলগুলোতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবে। ১৯৮২ সালের লেবানন যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের স্বেচ্ছাসেবী সৈনিকরা অংশগ্রহণ করে এবং বৈরুত অবরোধের সময় ৫০ জনকে আটক করা হয়।
ফরাসী প্রবীণ সাংবাদিক বার্নার্ড হেনরি লেভি টাইম সাময়িকীতে অভিযোগ করেন যে, ডেনিয়াল পার্ল নামক এক মার্কিন-ইসরাইলি সাংবাদিক আল কায়েদার ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে তাকে ইসরাইলে চর সন্দেহে পাকিস্তানি গোয়েন্দারা আটক করে এবং হত্যা করে ( যদিও লেভি কোন নির্ভরযোগ্য প্রমাণ দিতে পারেন নি )। বিবিসি ও নিউইয়র্ক টাইমসের অন্য একটি প্রতিবেদনে বলা হয় যে পার্লকে সাংবাদিক বেশধারী মোসাদের চর সন্দেহে আটক করে শিরশ্ছেদ করে হত্যা করা হয়।
এই ঘটনার পরে পাকিস্তানের ধর্মীয় রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য সংগঠন যেমন জামাত-ই-ইসলাম, জামিয়াত উলামাহ-ই-ইসলাম ও লস্করে তইয়্যেবাহ পৃথক বিবৃতিতে ইসরাইলের সাথে সকল সম্পর্কের বিরোধিতা করে এবং ইসরাইলকে ইসলাম ও পাকিস্তানের শত্রু ঘোষণা দেয়।
পাকিস্তানি পাসপোর্টে এই মর্মে উল্লেখ আছে যে, "এই পাসপোর্ট ইসরাইল ব্যতীত পৃথিবীর সকল দেশের জন্য প্রযোজ্য।"
বলা হয় যে, ১৯৮০ এর দিকে ভারতের সহযোগিতা সহ বা ছাড়া ইসরাইল পাকিস্তানের বোমার মজুদের উপর সম্ভাব্য আক্রমণের পরিকল্পনা করে। ১৯৮১ সালে ইরাকি পারমাণবিক চুল্লীতে আক্রমণের পড় ইসরাইল ভারতের সহযোগিতা নিয়ে পাকিস্তানের কাহুতা পারমাণবিক স্থাপনার উপর অনুরূপ আক্রমণের পরিকল্পনা করে। স্যাটেলাইট চিত্র ও গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করে এই আক্রমণের পরিকল্পনা করা হয় যেখানে এফ-১৫ ও এফ-১৬ বিমান দ্বারা উসকানিমূলক আক্রমণ রচিত হবে।
"দি এশিয়ান এজ" এর সাংবাদিক আদ্রেয়ান লেভি ও ক্যাথরিন স্কট ক্লার্কের বই "Deception: Pakistan, the US and the Global Weapons Conspiracy" এ বলা হয় যে ইসরাইল ১৯৮০ এর মধ্য ভাগে গুজরাটের জামনগর বিমান ঘাঁটি ব্যবহার করে কাহুতা নিউক্লিয়ার স্থাপনায় হামলা চালাতে চেয়েছিল। আরও বলা হয় যে, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নিজেদের সীমানার খুব কাছে তিনটি দেশের এমন সম্ভাব্য পারমাণবিক বিপর্যয়ের আশংকায় পরিকল্পনাটি রদ করে দেন।
এখানে লক্ষ্য করার বিষয় এটাই যে পাকিস্তান যেমন গোড়া হতেই দখলদার ইসরায়েলকে ইসলামের শত্রু মনে করে ইসরায়েলের অস্তিত্ব অস্বীকার করছে তেমনি ইসরায়েলও গোড়া হতেই পাকিস্তানের স্থিতিশীলতার বিরোধিতা করে আসছে। পাকিস্তান সরাসরি ইসরায়েলের বিরোধিতা করছে আর ইসরায়েল কৌশলে পাকিস্তানকে দূর্বল রাষ্ট্রের তালিকায় ফেলার জন্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং সফলও হয়েছে। তারা ১৯৫২ সাল হতে পাকিস্তানি শাসকদের মূর্খতা ও গোয়ার্তমিকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানকে ভেঙ্গে টুকরো করার ফন্দি আঁটে এবং বাংলাদেশে শোষিত ও নির্যাতিত অসহায় মানুষ গুলোকে উদ্ধারে ভারতকে সুকৌশলে সহায়তা করে ইসরায়েল ও ভারত উভয়ের চির দুশমন পাকিস্তানকে ভেঙ্গে বাংলাদেশ নামক একটি দেশের অভ্যূদয় ঘটায় আর আমরা পাই আমাদের মহান স্বাধীনতা। অপর দিকে পাকিস্তানে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে লেলিয়ে দিয়ে ঘাওড়া পাকিস্তানকে দিন দিন ভেতরগত ভাবে আরো দূর্বল করে দিচ্ছে।
যাই হোক বুঝতেই পারছেন দুই সাপে-নেউল দখলদার ইসরায়েল-পাকিস্তানের দন্দ্বের কারন আমাদের মহান স্বাধীনতাকে নিঃসন্দেহে ত্বরানিত করেছে এবং অখন্ড পাকিস্তান ও ভারত বিরোধীরা আজও দেশের মাটিতে কোন ঠাসা আছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ