"শেখ হাসিনা নিজেই জুলাই বিপ্লবের মূল মাষ্টার মাইন্ড "
![]() |
হাসিনা নিজেই জুলাই বিপ্লবের মাষ্টার মাইন্ড |
জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে ইতিহাসের জঘন্য খুনী হাসিনাকে হটানোর পর হতে মূল মাষ্টার মাইন্ড কে এটা নিয়ে চলছে বিভিন্ন আলোচনা।কিন্তু আদতে কে সেই মাষ্টার মাইন্ড তা কেউ জানে না। চলুন আসল মাষ্টার মাইন্ড কে তা জানা যাক।
মাষ্টার মাইন্ড মানে কি?
মাস্টারমাইন্ড হল মূল ধারণা সংবলিত একজন সুস্পষ্ট চিন্তাবিদ,পরিকল্পনা কারী,পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী। যিনি রাজনৈতিক পরিবর্তন, বিপ্লব, দাবা কিংবা ফৌজদারী পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকারী হতে পারেন: যেভাবেই হোক, মানুষ তাকে বিনা সন্দহে মূল পরিকল্পনা কারী ও পরিকল্পনা নিয়ন্ত্র ও বাস্তবায়নকারী হিসাবে স্বীকৃতি দিতে কুন্ঠা করে না।
বুঝা গেলো কেউ কোনো ঘটনার বিষয়ে মাষ্টারমাইন্ড হওয়া মানে সে মূল ঘটনা পরিকল্পনা করে শুরু হতে শেষ পর্যন্ত একটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে সকল কাজ চালাবে।
মাষ্টার মাইন্ড হতে হলে ঘটনায়,
১। একজন মূল পরিকল্পনা কারী লাগবে।
২। এইকাজের সুস্পষ্ট একটা লক্ষ্য থাকবে।
৩।পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে এই পরিকল্পনা কারীর মর্জি মত।
৪।আগাগোড়া পরিকল্পনা কারিই নিয়ন্ত্রণ করবে।
জুলাই আন্দোলনের ঘটনা প্রবাহঃ
১। প্রথমে স্বৈরাচার হসিনা ভারতে সফরে গিয়ে ভারতকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বিনা শুল্কের করিডোর অনুমতি দিলো আর এই ঘটনা আলোচনার বাইরে রাখার জন্য আজগুবী রাসেলস ভাইপার সাপের ঘটনা মিডিয়ায় চালু করে দিলো।
২।তার পর সে চীনে গিয়ে খালি হাতে ফিরে সরকারী চাকুরীতে কোটা পদ্ধতি পুন:বহাল করালো ইচ্ছে করে যাতে ভারতকে দেওয়া অসম চুক্তিগুলো ধামাচাপা পড়ে যায়।
৩। এর পর হতে প্রতিদিন হাসিনা ছাত্রদের উসকানী দিতে থাকে যাতে ছাত্ররা আরো ক্ষীপ্ত হয়।
৪। তার পর হাসিনা বিরোধী মতের ছাত্রদের টার্গেট কিলিং শুরো করে।
৫।কোটা বিরোধী ছাত্ররা বারং বার বলে আসছিল এই আন্দোলনে কোনো রাজনৈতিক দলের হাত নাই, এটা শুধু ছাত্রদের আন্দোলন।
৬। সকল রাজনৈতিক দল একযোগে বলে আসছিলো এই আন্দোলনে তারা কেউ জড়িত না।
৭।৩০ জুলাইয়ের আগের দিন পর্যন্ত পরিস্থিত দিন দিন উত্তপ্ত হলেও হাসিনকে সরানোর কোনো দাবী কারো ছিলো না।বরং ৯ দফা দাবী ছিলো।
৮। একদফা দাবীর আগ পর্যন্ত আওয়ামি লীগেরও একটা বিশাল অংশ আন্দোলনের পক্ষে কাজ করেছিলো।পরে একদফা দাবী উঠলে তারাই ছাত্রদের পক্ষ হতে সরে পড়ে।
৯।হঠাৎ হাসিনার গন হত্যার বিভীষিকাময় পরিস্থিতি ও ছাত্রদের রক্ত দেখে আওয়ামী ডেভিলরা ব্যতিত দেশের সকল নাগরিক হাসিনা পদত্যাগের দাবীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছাত্রদের সাথে আন্দোলনে যুক্ত হয় দেশের সর্বস্তরের জনগন।
১০। আগা হতে গোড়া এই আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যেরই যেখানে মিল নাই সেখানে মাষ্টার মাইন্ড এর বিষয়টাই তো আসে না।
আন্দোলন যেখানে শুরু হয় টার্গেট নিয়ে হাসিনাকে নিয়ে যাবে ছাড়া বাড়ি, আন্দোলন হাসিনাকে নিয়ে চলে গেলো শ্বশুর বাড়ি। তাইলে এখানে একক মাস্টার মাইন্ড এর বিষয়টা আসলো কোত্থেকে?
মাস্টার মাইন্ড যদি কিছু হয়েই থাকে তাইলে হাসিনার পাগলামী আর ছাত্র-জনতার রক্তই হাসিনাকে পতনের মূল মাস্টার মাইন্ড।
কিভাবে হাসিনা মূল মাস্টার মাইন্ড হলো:
১। শেখ হাসিনাই জুলাই-আগস্ট এর ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। সে ভারতে গিয়ে বাংলাদেশ বিক্রয়ের চুক্তি ও চীনের ব্যর্থতা ঢাকতেই ডিজিএফআইয়ের মাধ্যমে জুলাই-আগস্ট ঘটনার আবহ তৈরী করেছিলো।
২। এই কাজের সুস্পষ্ট নিয়ন্ত্রন হাসিনার হাতেই ছিলো। হাসিনা ইচ্ছে করে।নমনীয়তার পরিবর্তে কঠোরতার পথ অবলম্বন করে ছিলো যাতে পরিস্থিতি কিছুদিন ঘোলাটে থাকে,পরে দেশে অর্থনৈতিক অভাব প্রকাশ্যে আসলে যেনো সব দোষ ছাত্র-জনতা ও বিরোধী দলের উপর বর্তায়।
৩। এই পরিকল্পনাটি সম্পূর্ণ রুপে শেখ হাসিনা নিজের মর্জি মত বাস্তবায়ন করছিলো। যেখানে হাসিনার একটু নমনীয়তা সম্পূর্ণ আন্দোলনটি সামলানোর পথ খোলা ছিলো সেখানে হাসিনা নিজেই ঝামেলা উসকে দিয়েছিল।
৪।আগা গোড়া হাসিনা নিজেই নিয়ন্ত্রন করতে গিয়ে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের বয়কটের মুখে হাসিনার পা আটকে ৫ই আগষ্ট পালাতে বাধ্য হয়েছে।
ছাত্র-জনতাঃ
হাসিনা যা করার করেছে কিন্তু বাকী কাজটা ছাত্র-জনতা ও নির্যাতিত মানুষ গুলো বাকী কাজটা তাদের বুকোর তাজা রত দিয়ে সম্পন্ন করেছে।
ঘটনার গভীরে যাইঃ
আমরা তাহলে আন্দোলন শুরুর প্রেক্ষাপটে যেতে হবে। জুনের শুরুতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল করে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল করে হাইকোর্ট রায় দেয় যার প্রেক্ষিতে ছাত্ররা আন্দোলনে নামে। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি মানতে সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে (আলটিমেটাম) দেয়। এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে তারা সর্বাত্মক আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয়। শিক্ষার্থীদের এই হুঁশিয়ারিকে সরকার পাত্তা না দিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতাবিরোধী প্রেতাত্মা বলে আখ্যা দিচ্ছিলো। আর তার সাথে শিক্ষার্থীদের তারা হাইকোর্ট দেখাচ্ছিলো। এদিকে স্বয়ং শেখ হাসিনা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলছে কোটাবিরোধী আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই। একদিকে সে হাইকোর্ট দেখাচ্ছিলো আর অন্য দিকে সে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উস্কে দিচ্ছিলো নানাবিধ বিরূপ মন্তব্য করে। আপনারা একটু তার শাসন আমল ভালোভাবে নজর দিলে দেখবেন সে একটা বড় জিনিস চাপা দিতে ছোট ছোট ইস্যু বানাতো।
আবার একটু জুনের ২২ তারিখে ফিরে যাই। বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করে ভারতের রেল ট্রানজিট ও তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। এছাড়াও আরো ১০ টি সমঝোতা স্মারকে সই করে দুই দেশ।শেখ হাসিনা জানতো বাংলাদেশের মানুষ ভারতের রেল ট্রানজিট বাংলাদেশের ভূখন্ডের উপর দিয়ে যাবে এটা মেনে নিবে না। তাই সে এবার ইস্যু হিসেবে ব্যবহার করে কোটাকে। বাংলাদেশের সবাই জানেন কিছুদিন আগেও সব সময় পত্রিকা এবং টিভিতে প্রধান বিষয় ছিলো রাসেল ভাইপার সাপ। আন্দোলনের পর থেকে আর এই সাপ নিয়ে কোনো নিউজ আমার চোখে পরে নাই,এই রাসেল ভাইপার ছিলো ডিজিএফআইয়ের তৈরী করা প্রজেক্ট। শেখ হাসিনা ছিলো একজন দাম্ভিক মানুষ। সে তার দাম্ভিকতা আর অহংকারের জন্য একটা সিম্পল দাবীকে বড় বানিয়ে তার পতন নিশ্চিত করলো। ইতিহাস থেকে জেনেছি যারা মানুষের অধিকার হরণ করে তাদের পতনের ইস্যু হয় ছোট। তারা অনেক ছোট ইস্যুকে অনেক বড় করে নিজের পতন নিশ্চিত করে। ইতিহাস বলে এই রকম স্বৈরশাসক যারা মানুষের অধিকার হরণ করে তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে দুইটা জিনিস সৃষ্টি করে। একটা হতাশা আর অন্যটা ভীতি। আমরা যতই চেষ্টা করি না কেনো যতই জীবন দেই না কেনো ওনাকে সরানো যাবে না এই হতাশা আর ভীতি এই দুইটা জিনিস শেখ হাসিনাও বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে অনেক অংশে সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলো।কেউ তার কোনো বিষয়ে বিপক্ষে মুখ খুললেই তার উপর নেমে আসতো কঠিন নির্যাতন।
শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলের দিকে তাকালে দেখতে পাবেন ভোটাধিকার ও বাকস্বাধীনতা হরণ, বিরোধী দল ও ভিন্নমতাবলম্বীদের গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও পুলিশি নিপীড়ন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ঋণের নামে ব্যাংক লুণ্ঠন, সরকার ঘনিষ্ঠদের ব্যাপক দুর্নীতি ও অর্থপাচার, সচিবালয় থেকে বিচার বিভাগ পর্যন্ত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক দলীয়করণ, দ্রব্যমূল্যের ব্যাপক ঊর্ধ্বগতি, ভারতের সঙ্গে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি কারণে সৃষ্ট গভীর জন অসন্তোষ।তার আমলে বিভিন্ন সময় জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়, ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, জনসংখ্যা, মাথাপিছু আয়, কৃষির উৎপাদন ও ভোগ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ইত্যাদি বহু পরিসংখ্যানে জালিয়াতি করা হয়। হাসিনার শাসনামলে রীতিমতো আইন করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করা হয়। এ জন্য ব্যবহার করা হয় ২০১৩ সালে সংশোধিত আইসিটি অ্যাক্ট-২০০৬, ২০১৮ সালে প্রণীত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং ২০২৩ সালে প্রণীত সাইবার নিরাপত্তা আইন। এসব আইনের মাধ্যমে ‘ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা’, ‘মানহানি’, ‘মিথ্যা তথ্য প্রচার’, ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’র বিরোধিতা করা ইত্যাদি কারণ দেখিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই যে কাউকে আটক ও অনির্দিষ্টকাল কারাগারে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। গণমাধ্যমের ওপর একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বানোয়াট পরিসংখ্যান আর বিভিন্ন দৃশ্যমান অবকাঠামো উন্নয়নকেন্দ্রিক প্রচারণার মাধ্যমে দুঃশাসনকে আড়াল করার চেষ্টা করে সে।
এখন মূল ঘটনায় আসি :
একদিকে সে ইন্ডিয়ার সাথে তার চুক্তি মতো কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো আর অন্য দিকে সে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উস্কে দিচ্ছিলো। সে চাচ্ছিলো এই আন্দোলন চলতে থাকুক আর তার সাথে ইন্ডিয়ার চুক্তি মোতাবেক ট্রেনের লাইনের কাজটা শুরু হোক। কিন্তু সে তখনও বুঝতে পারে নাই এই আন্দোলনটা কোন দিকে মোড় নিচ্ছে। এক সময় সম্পূর্ণ বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামতে শুরু করলে সে আগের পদ্ধতি অনুযায়ী তার পুলিশ বাহিনী এবং তার দলের লোকদের আন্দোলন দমন করতে নামায়। কিন্তু কোনমতেই সে এই আন্দোলনের স্পিরিট কমাতে পারছিলো না। দিন যত যাচ্ছিলো এই আন্দোলন তত বড় হচ্ছিলো। এক সময় সকল রাজনৈতিক দল, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার, নানা বয়সের লাখো মানুষ অংশ নিতে শুরু করে এই আন্দোলনে। তখন এই আন্দোলন গণ-আন্দোলনে রুপ নেয়। এক সময় তার সময় ফুরিয়ে আসে। অবশেষ সে ৫ই আগষ্ট দুপুর ২ টায় পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যায়। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর আওয়ামী লীগ যে বিপর্যয়কর অবস্থায় পড়েছিল, প্রায় ৫০ বছরের মাথায় দলটি আবার সেই একই অবস্থায় পড়েছে।
সে ভেবেছিলো ছোট একটা ইস্যু করে তার কাজটা হাসিল করবে।কিন্তু সাথে সাথে সে আরেকটা ভুল করে বসে শিক্ষার্থীদের উপর নির্বিচারে গুলি করে। সে ভেবেছিল যেভাবে এই ১৬ বছর বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নিপীড়ন করে আটকে রাখছিলো সেভাবেই এই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপরও নির্যাতন করে তার কাজ হাসিল করবে। ইতিহাস বলে তুমি যদি জয়ের নেশায় হারিয়ে যাও তাহলে এক সময় হেরে যাওয়ার শক্তিটুকুও থাকবে না। শেখ হাসিনার প্রতিটা ক্ষেত্রে জয় ছিলো শতভাগ। সে নিজেই খেলা সাজাতো। পরে সে নিজেই সেই খেলায় অংশগ্রহণ করতো। মনে রাখতে হবে এক সৈন্য দিয়েও রাজাকে বদ্ধ করা যায়। খেলার পাশার দান সব সময় নিজের দিকেই হয় না। মাঝে মাঝে পাশার দান উল্টে যায়। শেখ হাসিনাকে মাস্টারমাইন্ড বলার প্রধান কারণ এইটাই। সে নিজের সাজানো চালে নিজেই নিজের পতন ডেকে এনেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ