"ইসলামিক রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় আসার গনতান্ত্রিক হাকীকত"
ইসলামিক রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় বসার গনতান্ত্রিক হাকীকত
ভোটের সংখ্যাধিক্যে জিতে ইসলামিক দল কি বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় কখনো আসা উচিত? ভোট আর নির্বাচনের যে গণতন্ত্র, সেই গণতন্ত্র কি ইসলামী কোনো দলের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা পাবার উপযোগী? ইসলামী রাজনীতিতে নির্বাচন ও ভোটের হিসেব কতটুকু প্রাসঙ্গিক?
আমি মনে করি বাংলাদেশের ৭৫%~৮০% ভোটার যেদিন ইসলামিক দলকে ভোট দেবে, কেবলমাত্র সেদিনই তার রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করার উপযুক্ত সময়। এর আগে কখনোই নয়। ৭৪% ভোট নিয়েও ইসলামিক দলের উচিত হবে না রাষ্ট্রক্ষমতা নেওয়া। আমাদের স্বাভাবিক যে অভিজ্ঞতা – ৩৫ থেকে ৪৫ ভাগ ভোট পেলে পতিত ফ্যাসিস্ট লীগ বা বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতা পায় এবং তাদের মতো করে দেশ চালায়। কিন্তু কোনো ইসলামীক দল কখনই এরকম ৩৫/৪০ বা ৫১% ভোটের ক্ষমতা দিয়ে দেশ চালাতে পারবে না। বরং দেশ, জাতি ও দলের জন্য বিরাট নিরাপত্তাহীনতা ডেকে নিয়ে আসবে।
এরকম কথা শুনে, এই ধরনের চিন্তাভাবনায় বিভ্রান্ত হয়েই অনেক গ্রুপ ইসলামে গণতন্ত্র হারাম বলে প্রচার চালায়, কেউ৷ কোউ আবার সেনাবাহিনীর সহায়তায় ক্ষমতা নিতে চায়, ইসলামী দলের কোনো কোনো কর্মী পথভ্রষ্ট হয়ে চরমপন্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ৭৫-৮০ ভাগ ভোট পাওয়া সুদূরপরাহত ব্যাপার, তাই ইসলামিক দল কখনো ক্ষমতায় যেতে পারবে না—এই হতাশা যদি পেয়ে বসে, সেটা এক বড় সমস্যা তৈরি করবে। কিন্তু এটাই বাস্তবতা। এই হতাশা কি অন্যদের ব্যাঙ্গবিদ্রুপ করে - দমিয়ে দিয়ে ঢেকে রাখা স্বাস্থকর? ইসলামী দলের সাথে গণতন্ত্রের সম্পর্কটা সাধারণের বোধগম্য করে বলা তো সোজা কথা না।
গণতন্ত্র চর্চা করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা কে করেছে? ৭০-৮০ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন মুসলিমপ্রধান দেশের খবর নিলে এটা ধ্রুব সত্য হয়ে দেখা দেয় যে, ভোটের গণতন্ত্রের মাধ্যমে ইসলামপন্থীদের রাষ্ট্রক্ষমতা চর্চা করা কতটা অসম্ভব। আলজেরিয়া, মিশর, ফিলিস্তিনের গাজায় ভোটে জেতা ইসলামী দলের পরিণতি ভয়াবহ! তুর্কীরা নানান রকম সমঝোতা করে, অনেক ছাড় দিয়ে, এমনকি ইসরাইলের সঙ্গে পর্যন্ত সম্পর্ক রেখে এখনো ক্ষমতায় টিকে আছে—যদিও মাঝখানে একবার লাল সুতো বের করে দিয়েছিল প্রায়- অভ্যুত্থান ঘটিয়ে। ইরান-আফগানিরা বিপ্লব ও যুদ্ধের মাধ্যমে টিকে আছে।
গণতন্ত্রের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে জবাব কি? চরমপন্থীরা যে গোমরাহীর মধ্যে ঘুরপাক খায়, তা তো গনতান্ত্রিক দলের আক্রান্ত হওয়াকালীন সময়ের চেয়েও বেশি বেদনাদায়ক। আবার আমাদের দেশটার যে ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান তা অগণতান্ত্রিক বিপ্লব ও অভুত্থানের জন্য কি উপযোগী? কখনোই না।
ইসলাম প্রতিষ্ঠাকে কি এলাকাভিত্তিক আলাদাভাবে সংজ্ঞায়িত ও ব্যাখ্যা দেওয়ার অনুমতি আছে? যদি তা থাকে, তাহলে আমরা কিছু উপায় চিন্তা করতে পারি।
ইসলামকে একমাত্র জীবনব্যাবস্থা হিসেবে বিশ্বাস যারা করি, তাদের কাছে জনগনের ব্যাপারে যে চিন্তা থাকা দরকার, তা হলো - সকল মুসলমানের প্রাণ, ইজ্জত, সম্পদ, নিরাপত্তা, মর্যাদা ও স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনযাপনের স্বাধীনতা রয়েছে। মুসলিম রাষ্ট্রের ভূমি ও মুসলমানদের বাসস্থানের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা রাজনৈতিক ইসলামে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন বিষয়। যেকোন মূল্যে এই স্বাধীনতা রক্ষা করা ইসলামী রাজনীতির মৌলিক উদ্দেশ্য। এই ব্যাপারে স্থুল উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, দেশের সীমানা রক্ষার যুদ্ধ চলাকালীন নামাজ কাজা করা যেতে পারে। ...জীবনোপকরণের স্বাচ্ছন্দ্য ও ভূমির স্বাধীনতা বর্তমান বিশ্বের মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য সর্বাধিক জরুরী প্রয়োজন।
এই প্রয়োজন মেটানো ও স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে যেহেতু দেশী শত্রু আর বিশ্বমোড়লদের চক্ষুশুল হয়ে স্বাধীনতা হারানোর ঝুঁকি তৈরী হয়, সেহেতু উপযুক্ত সময় আসার আগ পর্যন্ত শক্তিশালী ও প্রভাবশালী বিরোধীদল থাকাটাই অধিক কল্যাণকর হতে পারে। সকল ধরনের থ্রেট সামলানোর দক্ষতা অর্জন করার আগ পর্যন্ত গনতান্ত্রিক সিস্টেমের মধ্যে থেকেই জনগনের স্বাচ্ছন্দ, স্বাধীনতা ও নিরাপদ সমাজ গঠনে অবদান রাখা ও জনগনকে প্রস্তুত করা সম্ভব।
মূল রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থেকে, অর্থাৎ সরকারি দল না হয়ে, বাকি সমস্ত জায়গায় ভোটের রাজনীতি করতে হবে। ভোটে জেতার সব ধরনের চেষ্টা চালাতে হবে।
ইউনিয়ন, জেলা পরিষদ, মেয়র ও কমিশনার নির্বাচনে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে জেতার চেষ্টা করতে হবে। জিততে হবে। প্রভাব বিস্তার করতে হবে।
সকল সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে জেতার জন্য চেষ্টা চালানো যাবে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাবসায়ী আইনজীবীদের ফোরামগুলোতে নিজস্ব লোকদের নেতৃত্বে রাখতে হবে।শ্রমিকদের সকল ইউনিয়নে নেতৃত্বে থাকতে হবে।প্রাইভেট কোম্পানিগুলোতে জিএম/সিইও/ডিরেক্টর পদে যোগ্যতার মাধ্যমে বসতে হবে। বহি:বিশ্বে বিশেষ করে ইউরুপ ও আমেরওকার মত দেশে বাংলাদেশী অভিবাসী যারা ইসলাম প্রিয় তাদের স্থান করে নিতে হবে।
আসল কথা হলো, বিদেশে ও দেশের সব জায়গায় গণতন্ত্র ও নির্বাচনি রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান রাখতে হবে… কিন্তু সব কিছুর পরেও জাতীয় সংসদের সরকারি দল হওয়া যাবে না, যতক্ষণ না ৭৫% এর বেশি ভোট পাওয়া যায়।
৭৫% এর বেশি অর্গানিক বৈধ ভোট যেদিন কোন ইসলামপন্থী দল পাবে, তখন সম্ভাবনা আছে যে, ক্ষমতা নেবার পর ইসলামী ঐ দলটির জন্য যে থ্রেটগুলো তৈরি হবে, সেগুলো সামলানো জন্য প্রভাবশালী দক্ষ লোকজন বিভিন্ন কী পয়েন্টে প্রস্তুত থাকবে। দেশের ৭৫% লোক যাকে ভোট দেবে, আশা করা যায় সেনাবাহিনীতে তার অন্তত ৪০ ভাগ প্রভাবশালী অফিসার থাকবে, বিদেশি মিশনগুলোতে - জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে ঐ দলের লোকেরা ভালো অবস্থানে থাকবে, শক্তিশালী দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের ব্যক্তিগত বন্ধু হিসেবে বিশ্বজুড়ে৷ ড.ইউনিসের মতো অন্তত একশো মানুষ থাকবে।
আল্লাহ যেন একটি ইসলামী দলকে বাংলাদেশকে ৭৫%+ ভোট পাবার উপযুক্ত করে নিরাপদ রাষ্ট্রক্ষমতা দান করেন। আল্লাহ আমাদের হঠকারীতা, অনৈক্য ও স্বাধীনতার নিরাপত্তাহীনতা থেকে রক্ষা করুন।
ইসলামিক রাজনৈতিক কৌশল ও নেতৃত্বে হাজারো সমস্যা থাকতে পারে, কিন্তু উপমহাদেশের ইসলামী রাজনীতির মহীরূহ হিসেবে জামায়াতই কোটি কোটি মানুষের একমাত্র নিরাপদ অবিভাবক, এক শক্তিশালী নিরাপত্তা দেয়াল। এই দেয়াল ভেঙ্গে গেলে মুসলমানের স্বাধীনতা, জীবন ও ইজ্জত ঘুর্নিঝড়ের খরকুটোর মত উড়ে যাবে।
নতুন কোন প্লাটফর্ম যখন তৈরী হয়, আমরা একবুক আশা নিয়ে স্বাগতম জানাই, যে, তারা এমন যায়গায় এক্সেস নেবে যেখানে প্রচলিত ইসলামী রাজনীতি এক্সেস পাচ্ছেনা। তারা এমন লোকদের ঐক্যবদ্ধ করবে যারা প্রচলিত ইসলামী আন্দোলনে আসতে অনিচ্ছুক। আমাদের সবার অভিন্ন স্বপ্ন তো এক শক্তিশালী স্বাধীন সার্বভৌম স্বচ্ছল বাংলাদেশের। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে যারা কাজ করার জায়গা পাচ্ছেনা, কম্ফোর্ট জোন পাচ্ছেনা - তাদেরকে একত্রিত করে এক দুইটা না - অসংখ্য প্লাটফর্ম হোক না! যারা অলরেডি এই একই স্বপ্ন নিয়ে একটা জায়গায় কাজ করে যাচ্ছেন প্রাণপন ডেডিকেশন নিয়ে, তাদেরকে খোঁচানো, আঘাত দেয়া, টেনে ধরা, ছোট করার মত ভুলকে সমর্থন দেয়া যায়না। এধরনের ভ্রাতৃঘাতি সাংঘর্ষিক চিন্তাভাবনা ও মানসিকতা থেকে আল্লাহ নতুন যুগের কান্ডারিদের হেফাজত করুন।
সংকলিত সংশোধিত।
google.com, pub-2637311997853796, DIRECT, f08c47fec0942fa0
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ