সৌদি রাজ পরিবার, আহলে বায়াতের দুশমন ওয়াহাবীরা মূলত ইহুদিদের দ্বারা চালিত
ফিলিস্তিন
বিক্রয় কারী এই সৌদি রাজপরিবার আসলে কারা? কাদের দ্বারা পরিচালিত? এদের
পরিচয় কি? তারা কাদের বংশোদ্ভূত? এবং তাদের আসল উদ্দেশ্য কি? তারা তুর্কি
বংশোদ্ভূত ইহুদী হয়েও সৌদি হলো কিভাবে?
রাসুল
(সাঃ) এর নাম দেয়া নাম - আল জাজিরাতুল আরব" নাম পরিবর্তন করে তারা এই
পবিত্র ভুমির নাম রাখল বাদশা সৌদের নামে সৌদি আরব। এটা হয়েছে ব্রিটিশ
গোয়েন্দা ড.হ্যাম্ফারের তৈরী শায়েখ, ইসলামের চিরদুশমন, হাদিসে বর্নিত নযদের
শয়তানেং শিং খ্যাত মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর ষড়যন্ত্রে। আজকের
সৌদিআরব হলো কোনো ব্যক্তির নামে প্রতিষ্ঠিত।
সৌদি
রাজপরিবারের সবাই ভালভাবেই অবগত যে, বিশ্বের সকল মুসলমানগণ জেনে গেছে
তাদের মূলে রয়েছে ইহুদী রক্ত। বিশ্বের সকল মুসলমান, তাদের রক্তাক্ত অতীত
এবং বর্তমানের কদর্য এবং নিষ্ঠুর অত্যাচারের ইতিহাসও জেনে গেছে। বর্তমানে
ইসলামের তথাকথিত লেবাস পরে (সুন্নতী পোশাক নয়) তারা প্রাণপণে তাদের ইহুদী
অস্তিত্ব ঢাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ কারণে বংশানুক্রমে তারা হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর্যন্ত পৌঁছেছে-এই দাবি
প্রমাণের জন্য যথেষ্ট অপচেষ্টাও চালাচ্ছে।
কিছু
মুনাফিক সৌদি ওয়াহাবির দালাল তাদের বিবেক বুদ্ধি বিক্রি করে দিয়ে, প্রকৃত
সত্য গোপন করে সউদী রাজ পরিবারের মিথ্যা ইতিহাস রচনা করেছে। উচ্ছিষ্ট ভোগী
কয়েকজন সাংবাদিক এবং ঐতিহাসিক সামান্য কিছু আর্থিক আনুকূল্যের কারণে সৌদী
রাজ পরিবারের বংশানুকূলের পরিচয়কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক বংশের সঙ্গে যুক্ত করেছে।
(নাউযুবিল্লাহ!) ওরা সব মিথ্যাবাদি।
সৌদি রাজ পরিবার “আনজা বিন ওয়াইল” গোত্রের সদস্য বলে দাবী করে আসলে তারা মিথ্যাচার করছে।
পবিত্র
কাবা এবং পবিত্র মদিনার সংরক্ষণের ভার থাকা উচিত হাশেমি বংশের। বর্তমান
সৌদি রাজ পরিবার কোনভাবেই হাশেমি বংশ্ নয়। তারা তুর্কি বংশোদ্ভূত ইহুদী
কালক্রমে সৌদিতে আসে। সৌদি রাজ পরিবার ক্বাবা শরিফের চাবি রাখার কোন
অধিকার নাই, এরা এক সময় ছিল ইয়েমনের বেদুইন এবং ভয়ঙ্কর জলদস্যু, মরু ডাকাত।
আব্দুল ওয়াহাব নজদীর অনুসারী সৌদের বংশধররা ইসলামের কোন কিছুই নিজেরা
মানেনা কিন্তু অন্যের উপর তারা ইসলাম চাপিয়ে দেয়।
এই সউদী রাজ পরিবারের প্রকৃত পূর্বপুরুষ কে?
৮৫১
হিজরী সনের কথা। আল-মাসালিক সম্প্রদায়ের একদল লোক একটি কাফিলা তৈরি করে
ইরাকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। আল-মাসালিক ছিল আনজা গোত্রের শাখা। এই
কাফিলার উদ্দেশ্য ছিল ইরাক থেকে খাদ্যশস্য এবং অন্যান্য সামগ্রী ক্রয় করে
এনে নজদে সরবরাহ করা। সেই কাফিলার প্রধান ছিল শামী-বিন-হাতলুল। কাফিলা যখন
বসরায় পৌঁছে, তখন খাদ্যশস্যের এক ইহুদী বড় ব্যবসায়ীর সাথে দলের লোকজন
সাক্ষাৎ করে। সেই ইহুদী ব্যক্তিটি ছিল মোরদাখাই বিন ইব্রাহীম বিন মোসেহ।
কোন কোন প্রাচীন ইতিহাসে ইহুদী মোরদাখাইকে মানি বিন রাবিয়া আল মুরাইদি
হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মোরদাখাই-এর বংশধরেরা ম্রুদা গোত্র হিসেবে
পরিচিতি লাভ করে। সেই ইহুদী ব্যবসায়ীর সাথে দর কষাকষির সময় ইহুদী
ব্যক্তিটি প্রশ্ন করে “আপনারা কোথা থেকে এসেছেন?” উত্তরে তারা বলেন, আমরা
আনজা গোত্রের এবং আল-মাসালিক সম্প্রদায়ভুক্ত। আল মাসালিক সম্প্রদায়ের কথা
শুনেই সেই ইহুদী ব্যবসায়ী আল-মাসালিক সম্প্রদায়ের উপস্থিত সবাইকে
আবেগাপ্লুত হয়ে মুয়ানাকা করতে শুরু করে এবং বলে সেও মূলত আল-মাসালিক
সম্প্রদায়ের তবে সে বসরায় এসে বসবাস করছে। তার পিতার সঙ্গে আনজা গোত্রের
কয়েকজন সদস্যের ঝগড়া বিবাদের ফলে সে এখন বসরায়।
এই
বানানো গল্প বলার পর পর সে-ই ইহুদী ব্যবসায়ী তার ভৃত্যকে সমস্ত গম,
খেজুর, অন্যান্য খাদ্য দ্রব্যসমূহের বস্তা উটের পিঠে চড়াতে বললো। সেই
সুদূর ইরাকে আনজা গোত্রের এবং আল-মাসালিক সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের
সম্প্রদায়ের একজন এত উদার ব্যক্তি পেয়ে বেশ গর্ব অনুভব করলো। তারা সেই
ইহুদীর সকল কথাই বিশ্বাস করলো। যদিও সে মাসালিক সম্প্রদায়ের ছদ্মবেশে ছিল
একজন ইহুদী। কিন্তু খাদ্যশস্যের একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হওয়াতে সে সহজেই
সবার কাছে বিশ্বস্ত হতে পেরেছিল।
যখন সেই কাফিলা
খাদ্যশস্য বোঝাই করে নজদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে সে সময় সেই ইহুদী
ব্যবসায়ী তাদের কাফিলার সঙ্গী হতে চাইলো। সে তার মাতৃভূমিতে ফিরে যাবার
জন্যে আকুল ইচ্ছা প্রকাশ করলো। তার এই অভিপ্রায়ের কথা শুনে কাফিলার সবাই
তাকে চরম উৎসাহে অভিনন্দন জানালো। সেই ছদ্মবেশী ইহুদী, কাফিলার সাথে নজদে
এসে উপস্থিত হল।
নজদে এসে শুরু হয় তার ভিন্ন রকমের
কার্যকলাপ। সে তার নিজস্ব কিছু লোক দিয়ে নিজের সম্পর্কে অনেক প্রোপাগান্ডা
শুরু করে এবং ধর্মীয় অনেক বিষয়ে নিজের মনমত ফতওয়াও দিতে থাকে। সেই
সুবাদে কিছু ভক্তও জুটিয়ে ফেলে। কিন্তু সে সময় আল-কাসিমে বসবাসরত একজন
বড় আলিম ও বুযূর্গ ব্যক্তি হযরত শায়খ সালেহ সালমান আব্দুল্লাহ আল তামিমী
রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক সেই ইহুদী বাধাগ্রস্ত হয়। মুসলমানের ছদ্মবেশে
সেই ইহুদীর প্রচারিত বহু ফতওয়ার বিরুদ্ধে তিনি চরম প্রতিবাদ করেন। হযরত
শায়খ সালেহ সালমান আব্দুল্লাহ আল তামিমী রহমতুল্লাহি আলাইহি নজদ, ইয়েমেন
এবং হিজাজেও তালিম দান করতেন। উনার প্রচেষ্টায় সেই ইহুদীকে (বর্তমান সউদী
রাজ পরিবারের পূর্ব পুরুষ) আল-কাসিম থেকে আল-ইহসাতে বিতাড়িত করেন। নতুন
এলাকায় এসে এই ইহুদী (মোরদাখাই) তার নাম পরিবর্তন করে হয় মারক্বান বিন
দিরিয়া এবং আল-কাতিফের নিকট বসবাস শুরু করে। সেখানে এসে, সেখানকার
অধিবাসীদের মধ্যে হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঢাল
সংক্রান্ত একটা মিথ্যা গল্প প্রচার করা শুরু করে।
গল্পটা
এ রকম- “মক্কার কাফিরদের সাথে মুসলমানদের যখন উহুদ পাহাড় প্রান্তে যুদ্ধ
হয়, সেই উহুদের যুদ্ধে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার একটি ঢালএক কাফিরের হস্তগত হয়। পরবর্তিতে সেই কাফির ব্যক্তি
সেই ঢাল বিক্রি করে দেয় ইহুদীদের বনু-কুনাইকা গোত্রের কাছে যা তারা পবিত্র
সম্পদ হিসেবে সংরক্ষণ করে আসছে। এভাবে সে ইসলাম ধর্মের প্রতি ইহুদীদের
ধর্মীয় সহানুভূতির কথা বোঝাতে চাইতো। একজন জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবেও সে
নিজের অবস্থান বেদুইনদের মধ্যে শক্ত করে নেয়। সে মুসলমানের ছদ্মবেশে
ইহুদীদের পক্ষে কাজ করতে থাকলো। ইহুদী মোরদাখাই বা মারক্বান বিন দিরিয়া
আল-কাতিফের নিকট দিরিয়া শহরে বসবাস শুরু করে। সে মনে মনে আরব ভূখণ্ডে একটি
ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উচ্চাশা পোষণ করতো। তার আশা পূরণের লক্ষ্যে, মূল
পরিকল্পনা গোপন করে আরব বেদুইনদের তার পক্ষ সমর্থনের জন্য আবেদন নিবেদন
করতে থাকে এবং নিজেই সেখানকার স্ব-ঘোষিত রাজা বলে দাবি করে। তার এই
অপচেষ্টাকালে, আরবের আজামান গোত্র এবং বনু খালিদ গোত্র একত্রে এই ইহুদীর
আসল পরিচয় পেয়ে তার পরিকল্পনা নস্যাৎ করার লক্ষ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
তারা দিরিয়া আক্রমণ করে দখল করে নেয়। কিন্তু সেই সুচতুর ইহুদী সেখান থেকে
পালিয়ে যায়।
বর্তমান
সউদী রাজপরিবারের পূর্বপুরুষ এই ইহুদী মোরদাখাই বা মারক্বান বিন দিরিয়া
আল-আরিদের নিকট আল মালিবিদ-গুশাইবা নামক একটি খামারে আশ্রয় গ্রহণ করে।
বর্তমানে একে বলা হয় আল-রিয়াদ। এই ইহুদী সেই খামারের মালিকের কাছে আশ্রয়
প্রার্থনা করে। সেই খামারের মালিক ছিল অত্যন্ত দয়ালু একজন মানুষ, সে তখনই
তাকে আশ্রয় দান করেন। কিন্তু এক মাসের কম সময়ের মধ্যেই সেই কুচক্রী
দুষ্ট ইহুদী, খামারের মালিকসহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করে। কিন্তু সে প্রচার
করে তারা লুটেরা কর্তৃক নিহত হয়েছে এবং সে খামার দখল করে নেয়। সে
দিরিয়া নামক যে স্থান থেকে বিতাড়িত হয়েছিল সেই নাম অনুসারে এই স্থানেরও
নাম আল-দিরিয়া রাখে। (কিছু সত্য গোপন করে কোন কোন ইতিহাসে লেখা আছে- ৮৭৩
হিজরী (কাছাকাছি) অর্থাৎ ১৪৪৬ সালের দিকে ইহুদী মোরদাখাইয়ের ম্রুদা গোত্র
দিরিয়া নামক স্থানে বসবাস করতে থাকে। আসলে মোরদাখাই পরিবারই ম্রুদা গোত্র
নামে পরিচিত। ইহুদী মোরদাখাই সেখানে তার আত্মীয় ইবনে দির কর্তৃক আমন্ত্রিত
হয়ে আল-রিয়াদে বসবাস শুরু করে বলেও কথিত আছে। ইবনে দির ছিল সেখানকার
শাসক এবং বহু ক্ষেত-খামারের অধিকারী। বলা হয়, ইবনে দির তাকে আল মুলাইবিদ
এবং গুশাইবা নামে দুটি খামার দান করে; যা সে পরবর্তিতে আল-দিরিয়া নামে
নামকরণ করে।)
বর্তমান
সউদী রাজপরিবারের পূর্বপুরুষ সেই ইহুদী মোরদাখাই সেখানে “মাদাফ্ফা” নামে
একটি অতিথিশালা খুলে এবং তার চারপার্শ্বে কিছু মুনাফিক জড়ো করে। সেই
মুনাফিকরা প্রচার করতো এই ইহুদী হচ্ছে একজন বড় আরব বণিক। সেখান থেকে সে
তার মূল শত্রু হযরত শায়খ সালেহ সালমান আব্দুল্লাহ আল তামিমী রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এবং আল-যালাফি নামক শহরের একটি মসজিদে
উনাকে শহীদ করে। হযরত আব্দুল্লাহ আল তামিমী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর
শাহাদাতের পর মোরদাখাই নিজেকে যথেষ্ট মুক্ত ও নিরাপদ মনে করে সেই দিরিয়া
গ্রামে বসবাস করতে থাকে। ইহুদী মোরদাখাই সেখানে অনেক বিয়ে করে এবং তার সকল
সন্তানের সে আরবীয় নাম রাখে। তার বংশধররা সেখানে সংখ্যায় বৃদ্ধি পেতে
থাকে এবং পরবর্তিতে সৌদী সম্প্রদায় হিসেবে পরিচিত হতে থাকে। তার বংশধররাও
আরবজাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে থাকে। তারা অনেক কৃষিক্ষেত্র
অবৈধভাবে দখল করে নেয় এবং যারাই তাদের দুষ্ট পরিকল্পনার বিরোধিতা করতো
তাদের তারা হত্যা করতো। তারা তাদের সাফল্যে পৌঁছবার লক্ষ্যে গোপনে বিভিন্ন
প্রকার দুরভিসন্ধি প্রয়োগ করেছিল। যারা এই ইহুদী পরিবারের সঠিক ইতিহাস
বলতে বা লিপিবদ্ধ করতে চেয়েছিলো তাদেরকেই ঘুষ প্রদান করা হয়েছিল। বিশেষত
সেই এলাকার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নারী ও অর্থের মাধ্যমে প্রলোভিত করে
দমিয়ে রাখা হয়েছিল। প্রচুর অর্থের বিনিময়ে তাদের কলঙ্কিত ইতিহাস মুছে
ফেলে তাদের বংশানুক্রম বিখ্যাত আরব গোত্র রাবিয়া, আনজা এবং আল-মাসালিকের
সাথে সম্পৃক্ত প্রমাণ করে তাদের ইতিহাসকে বিশুদ্ধ করতে চেয়েছিল।
(সৌদি
পরিবারের পূর্বপুরুষ যে ম্রুদা গোত্রের এ ব্যাপারে যথেষ্ট বিতর্ক আছে।
প্রচলিত আছে যে, তারা প্রাচীন রাবিয়া গোত্রের বিশেষত ‘ওয়াইল’-এর শাখা।
কিন্তু যে বিষয়ে সব ইতিহাসে বিতর্ক আছে তা হচ্ছে সৌদরা ওয়াইলের কোন
শাখার? বহু ঐতিহাসিক এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নজদের অধিবাসীরা বনু হানিফা
গোত্রের যারা নজদ ও রিয়াদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
অনেকে
জোর দিয়ে বলতে চায় তারা হচ্ছে আনজা নামক বড় বেদুইন গোত্রের। নজদে
বসবাসরত অন্যান্য আনজা গোত্রের পরিবারের মত তথাকথিত ম্রুদা গোত্রের কোন
লিখিত বা মৌখিক তথ্যও নেই যে ম্রুদা আনজা গোত্র থেকে মাইগ্রেশন করে নজদে
আসে।)
বর্তমান সময়ের
একজন চরম পর্যায়ের মুনাফিক হচ্ছে আমিন আল তামিমি, যে সউদী আরবের জাতীয়
লাইব্রেরীর ডাইরেক্টর। সে সৌদী আরবের এই ইহুদী শাসকগোষ্ঠীর বংশ তালিকা
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক বংশের সাথে
সম্পৃক্ত করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। তার এই মিথ্যা জালিয়াতি কর্মের জন্য
১৯৪৩ সালে মিশরে নিযুক্ত সৌদী আরবের রাষ্ট্রদূত ইব্রাহীম আল-ফাদেলের কাছ
থেকে আমিন আল তামিমি ৩৫ (পঁয়ত্রিশ) হাজার মিশরীয় পাউন্ডে পুরস্কৃত হয়।
সৌদী
রাজ পরিবারের পূর্বপুরুষ ইহুদী মোরদাখাই বহু আরবী মহিলাকে বিয়ে করে এবং
তাদের ঘরে বহু সন্তানের জন্ম হয়। সেই একই ধারাবাহিকতা বর্তমান সউদী রাজ
পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও প্রচলিত আছে। (সউদী আরবের বাদশাহ আব্দুল আজিজের
চুয়াল্লিশ জন ছেলে এবং অগণিত কন্যা সন্তান। বাদশাহ সউদের ছিল বায়ান্ন জন
পুত্র এবং চুয়ান্ন জন কন্যা) ইহুদী মোরদাখাই-এর এক পুত্রের নাম ছিল
আল-মারাক্বান কারো মতে আল মুক্বরিন। মূলত তার নাম আরবীকরণ করা হয়েছিল
ইহুদী নাম মেকরেন থেকে। সেই মেক-রেন বা আল মারাক্বান বা আল মুক্বরিন এর এক
পুত্র ছিল মুহম্মদ (মুহম্মদ বিন মুক্বরিন) এবং তার এক পুত্রের নাম ছিল সউদ
(সউদ বিন মুহম্মদ)। সেই সউদ থেকে হয়েছে সউদী রাজবংশের নাম। সউদের বংশধরগণ
বিশেষত সউদের পুত্র মুহম্মদ বিন সউদ আরবের বিভিন্ন গোত্র প্রধানদের উপর
হত্যাযজ্ঞ চালায়। তারা প্রচার করতো যে, সকল আরব ধর্মীয় নেতারা মুরতাদ
হয়ে গেছে এবং তারা ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা থেকে সরে গেছে। বিভিন্ন গোত্রের
নেতারা ধর্মের নামে শিরকে মশগুল- এই অজুহাতে অনেক মুসলমানকে শহীদ করা হয়।
সউদী
রাজ পরিবারের নিজস্ব ইতিহাসবিদ দিয়ে রচিত The history book of Saudi
familyi ৯৮ থেকে ১০১ পৃষ্ঠার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে যে, সউদী বংশের সবাই
নজদের সকল অধিবাসীদের মুরতাদ, কাফির মনে করতো। ফলে তাদের হত্যা করা,
সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা, তাদের মহিলাদের দাসীতে পরিণত করাকে জরুরী বলে মনে
করতো।
মূলত সে সময় নজদের প্রধান মুহম্মদ বিন সউদ ছিল ওহাবী আক্বীদা দ্বারা বিভ্রান্ত।
ওহাবী
মতবাদের প্রচার ঘটে আব্দুল ওহাব নজদীর মাধ্যমে যে ছিল বনু তামিম গোত্রের
(যদিও তার পূর্বপুরুষ ইহুদী ছিল) তার জন্ম হয় উয়াইনিয়া গ্রামে, নজদের
হুরাইমিলা শহরের পার্শ্বে, ১১১১ হিজরী অর্থাৎ ১৬৯৯ সালে। তার মৃত্যু হয়
১২০৬ হিজরী মোতাবেক ১৭৯২ সালে। প্রথমে সে ব্যবসার উদ্দেশ্যে ইরাকের বসরায়
যায়। পরে ইরান, ভারত, দামেস্কেও ভ্রমণ করে। সেখানে সে “নজদের শায়খ” নামে
নিজেকে পরিচয় দিত। সে ছিল অত্যন্ত চতুর। ইবনে আব্দুল ওহাব নজদী বিভিন্ন
দেশ ভ্রমণ করে অনেক কিছু শেখে এবং একজন নেতা হবার স্বপ্ন পোষণ করে। ১১২৫
হিজরী অর্থাৎ ১৭১৩ সালে তার সাথে পরিচয় হয় ব্রিটিশ গুপ্তচর ড.
হ্যাম্ফারের।
গুপ্তচর
হ্যাম্ফারের এই ওহাব নজদীর নেতা হবার অভিলাষ বুঝতে পেরে তার সাথে দীর্ঘ
সময়ের জন্য সখ্যতা গড়ে তোলে। ব্রিটিশ উপনিবেশ মন্ত্রণালয়ের শেখা অনেক
পদ্ধতি এবং মিথ্যা তার উপর সে প্রয়োগ করে। হ্যামপার ওহাব নজদীর মধ্যে সব
সময় ইসলাম ধর্মের নতুন অপব্যাখ্যা শুনতে পেত এবং তার মধ্যে ভিন্ন চিন্তার
এক শায়খ হবার সম্ভাবনা দেখতে পেত। আব্দুল ওহাব নজদে ফিরে এসে গ্রামের
লোকদের জন্য ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিন্ন চিন্তার বিভিন্ন লেখা লিখতে
থাকে। সে মু’তাযিলা সম্প্রদায় এবং ব্রিটিশ গুপ্তচরের কাছ থেকে যা শিখেছিল
তার উপর সে লিখতে ও বলতে থাকে। গ্রামের লোকজন এবং তাদের প্রধান ইহুদী
মোরদাখাই-এর বংশধর মুহম্মদ বিন সউদ তাকে অনুসরণ করতে থাকে। আরবদের কাছে বংশ
পরিচয় ছিল অনেক বড় কিন্তু' যেহেতু সে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য গোত্রের ছিল
না তাই সে মুহম্মদ বিন সৌদকে তার মত প্রচারে ব্যবহার করতে শুরু করে। যার
নাম দেয় সে ওহাবী মতবাদ। সে নিজেকে কাজী এবং মুহম্মদ বিন সৌদকে বাদশাহ
হিসেবে পরিচয় দিত। তারা দু’জন পরবর্তিতে চুক্তিতে আসে যে তাদের সন্তানরা
তাদের পরে ক্ষমতায় আসবে। এ চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইবনে আব্দুল
ওহাবের কন্যাকে বিন সউদের পুত্রের সাথে বিয়ে দেয়া হয়। ১১৫০ হিজরীতে
অর্থাৎ ১৭৩৭ সালে আব্দুল ওহাব নজদীর ওহাবী মতবাদ একটা রাজনৈতিক রূপ লাভ করে
সমগ্র আরবে ছড়িয়ে পড়ে।
সেই ধারাবাহিকতায় সৌদী
বাদশাহ আব্দুল আজিজ বিন মুহম্মদও ওহাবী মতবাদে বিশ্বাসী ছিল এবং সে প্রথম
১৭৯১ সালে মক্কা শরীফ-এর আমীর হযরত শরীফ গালিব ইফেন্দী রহমতুল্লাহি
আলাইহি-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। পূর্ব থেকেই গোপনে তারা ওহাবী মতবাদ
প্রচার করে যাচ্ছিল। তারা অনেক মুসলমানকে নিপীড়ন করে এবং শেষে হত্যা করে।
অনেক মহিলা ও শিশুদের বন্দি করে এবং তাদের সম্পদ দখল করে। যারা আব্দুল ওহাব
নজদীর (যার পূর্বপুরুষও ছিল ইহুদী এবং তুরস্কের অধিবাসী) আক্বীদার সাথে
মিল না রাখতো তাদেরকে তারা মুসলমান বলতো না। এই ওহাবী নজদীর ভুল ফতওয়ার
কারণে সউদী রাজ পরিবারের সন্ত্রাসী লোকজন সুন্নী অধ্যুষিত গ্রামের পর গ্রাম
ধ্বংস করে ফেলে। শিশুসহ বহু মানুষ হত্যা করে, মহিলাদের উপর নিপীড়ন চালায়
এমনকি গর্ভবতী মহিলাদের উদর চিড়ে ফেলে, শিশুদের হাত পা কেটে ফেলে আগুনে
নিক্ষেপ করতো। শুধু ওহাবী মতবাদে বিশ্বাসী না হওয়াতে মুসলমানদের মুরতাদ
আখ্যায়িত করে তাদের সকল সম্পত্তি আত্মসাৎ করতো।
মূলতঃ
মিথ্যা ধর্মীয় অনুশাসনের নামে এই ওহাবী আক্বীদা সম্পন্ন ইহুদীরা বিভিন্ন
প্রকার নৃশংসতা চালায়। আর এই অনুশাসনের প্রবর্তক ছিল ইহুদী মোরদাখাই, যে
সন্ত্রাসের বীজ বপন করেছিল তার সময় থেকে। এই ইহুদী পরিবার ১১৬৩ হিজরী সাল
থেকে সউদী আরবসহ মুসলিম দেশসমূহে নৃশংস কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
তারা
গোটা আরব ভূ-খণ্ডের নাম তাদের পরিবারের নাম অনুসারে রাখে “সৌদী আরব।
ভাবখানা এমন যে গোটা আরব তাদের বাপদাদার সম্পত্তি আর সেখানকার সকল অধিবাসী
তাদের গোলাম বা ক্রীতদাস, যারা সকাল সন্ধ্যা শুধু তার প্রভুর আরাম আয়েশের
জন্যই খেটে যাচ্ছে।
এই
সৌদী রাজ পরিবার দেশের সকল প্রাকৃতিক সম্পদকে নিজের সম্পত্তি বলে বিবেচনা
করে। যদি কোন সাধারণ নাগরিক তাদের এই ইহুদী শাসক গোষ্ঠীর স্বেচ্ছাচার এবং
অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তবে জনগণের সম্মুখে তার শিরোচ্ছেদ করা
হয়।
তাদের উৎপত্তি কোথা থেকে .........
রিয়াদের
নিকটস্থ দিরিয়া নামের একটি কৃষিবসতির প্রধান ছিলেন মুহাম্মদ বিন সৌদ। এই
উচ্চাভিলাষী মরুযোদ্ধা ১৭৪৪ সালে আরবের বিখ্যাত ধর্মীয় নেতা মুহাম্মদ বিন
ওয়াহাব [ওয়াহাবী মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা]-এর সাথে মৈত্রী চুক্তি করে
“দিরিয়া আমিরাত” গঠন করেন। তুরস্কের উসমানিয়া খিলাফতের বিরুদ্ধে
শিরক-বিদাত পালনের অভিযোগে এই দুজন ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ শুরু করেন। ওই
“দিরিয়া আমিরাত”-ই বিশ্বের প্রথম সৌদি রাজ্য/আমিরাত। মুহাম্মদ বিন সৌদ তার
পুত্র আবদুল আজিজের সাথে মুহাম্মদ বিন ওয়াহাবের মেয়ের বিয়ে দেন। এভাবেই
সৌদ পরিবার ও ওয়াহাবী মতবাদের মিলনযাত্রা শুরু হয়। ১৭৬৫ সালে মুহাম্মদ
বিন সৌদ-এর মৃত্যু হলে তার ছেলে আবদুল আজিজ দিরিয়ায় ক্ষমতাসীন হয়।
এই
আবদুল আজিজ তৎকালীন বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী মোড়ল ব্রিটেনের সাথে হাত
মিলিয়ে তুরস্কের খলিফাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতে থাকে। শ্বশুর ইবনে
ওয়াহাবের ধর্মীয় মতবাদকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তথাকথিত শিরক-বিদাত
উচ্ছেদের নামে ব্রিটিশদের সাথে তুর্কি খিলাফত ধ্বংসের কাজে লিপ্ত হয় আবদুল
আজিজ। ১৭৯২ সালে মুহাম্মদ বিন ওয়াহাবের মৃত্যু হয়। ১৮০১/২ সালে আবদুল
আজিজ তুর্কি খিলাফতের কাছ থেকে ইরাক দখল করে হজরত আলী (রা.) ও হজরত হুসাইন
(রা.)-এর মাজার শরিফ ভেঙে ফেলে। এর প্রেক্ষিতে ১৮০৩ সালে একজন কট্টর শিয়া
মুসলিম আজিজকে দিরিয়ায় আসরের নামাজরত অবস্থায় হত্যা করে।
এর
পর আবদুল আজিজের ছেলে সৌদ বিন আবদুল আজিজ ক্ষমতায় এসে তুর্কিদের পরাজিত
করে ১৮০৩ সালে মক্কা ও ১৮০৪ সালে মদিনা দখল করে নেয়। দুই পবিত্র নগরী দখল
করে তারা ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালায়। তারা মক্কা-মদিনার বহু মুসলিমকে হত্যা
করে। সবই করা হয় সেই শিরক-বিদাত উচ্ছেদের নামে! ওয়াহাবী মতবাদের ধর্মীয়
শুদ্ধি অভিযানের অজুহাতে তারা বহু সাহাবীর কবরস্থান ধ্বংস করে। এমনকি খোদ
মহানবী (সা.)-এর পবিত্র কবরে ছায়াদানকারী মিম্বরগুলোও এরা ভেঙে ফেলে! এসবই
চলে ব্রিটিশদের অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা নিয়ে।
খলিফা ২য় মাহমুদঃ
ইরাক-মক্কা-মদিনায়
সৌদিদের এই ধ্বংসযজ্ঞে তৎকালীন তুর্কি খলিফাগণ ভীষণ রুষ্ট হন। ১৮০৮ সালে
খলিফা ২য় মাহমুদ ক্ষমতাসীন হয়ে সৌদিদের দমনে শক্তিশালী সেনাদল পাঠান।
ষড়যন্ত্রকারী ব্রিটিশরা এবার আর সৌদিদের বাঁচাতে পারেনি। ১৮১৮ সালে সৌদের
ছেলে, তৎকালীন সৌদি শাসক আবদুল্লাহ বিন সৌদ তুর্কিদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
আবদুল্লাহ
বিন সৌদকে বন্দী করে ইস্তাম্বুলে নিয়ে যাওয়া হয়। দুই পবিত্র নগরী ও বহু
মসজিদ ধ্বংসের শাস্তি হিসেবে খলিফা ২য় মাহমুদ-এর নির্দেশে আবদুল্লাহ বিন
সৌদ ও তার দুই ছেলেকে ইস্তাম্বুলে প্রকাশ্যে শিরচ্ছেদ করা হয়।
এভাবেই প্রথম সৌদি আমিরাত (১৭৪৪-১৮১৮)-এর পতন হয় ও পবিত্র মক্কা-মদিনাসহ আরবে উসমানিয়া খিলাফতের শাসনকর্তৃত্ব ফিরে আসে।
সৌদ
পরিবারের দিরিয়ার আখড়া ১৮১৮ সালে ধ্বংস হয়ে গেলে প্রথম সৌদি আমিরাতের
শেষ আমীর আবদুল্লাহর তুর্কি নামের এক পুত্র মরুভূমিতে পালিয়ে যায়। এই
তুর্কি বিন আবদুল্লাহ পালিয়ে বনু তামিম গোত্রে আশ্রয় নেয়। পরে ১৮২১ সালে
সে আত্মগোপন থেকে প্রকাশ্যে এসে উসমানিয়া খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ
ঘোষণা করে।
১৮২৪ সালে
তুর্কি বিন আবদুল্লাহ উসমানিয়াদের নিয়োজিত মিশরীয়দের হটিয়ে দিরিয়া ও
রিয়াদ দখল করে নেয়। রিয়াদকে রাজধানী করে গঠিত এই “নজদ আমিরাত” ইতিহাসে
দ্বিতীয় সৌদি রাজ্য নামে পরিচিত। দ্বিতীয় সৌদি রাজ্যটি অবশ্য খুব কম
এলাকাই দখলে নিতে পেরেছিল। এটি বেশিদিন টিকেওনি। এই নজদ আমিরাতের প্রধানকে
“ইমাম” বলা হত এবং ওয়াহাবী মতাবলম্বীরাই ধর্মীয় বিষয়ে কর্তৃত্বশীল ছিল।
তবে
এবার সৌদ পরিবারে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কথিত ইমাম তুর্কি বিন
আবদুল্লাহকে তাঁর এক জ্ঞাতি ভাই মুশারি বিন আবদুর রহমান বিদ্রোহ করে ১৮৩৪
সালে হত্যা করে। তবে ক্ষমতা পায়নি মুশারি। তুর্কির ছেলে ফয়সাল এরপর নজদ
আমিরাতের ইমাম হয়।
আবদুর রহমান বিন ফয়সালঃ
সৌদ
পরিবারের অন্তর্দ্বন্দ্ব চলতেই থাকে। অবশেষে ১৮৯১ সালে মুলায়দার যুদ্ধে
উসমানিয়াদের অনুগত রাশিদী বাহিনীর হাতে দ্বিতীয় সৌদি আমিরাতের পতন ঘটে।
সৌদিদের শেষ ইমাম আবদুর রহমান বিন ফয়সাল তার সাঙ্গোপাঙ্গসহ পালিয়ে যায়।
বিশাল
বালুকাময় রুব আল খালি মরুভূমি পাড়ি দিয়ে আবদুর রহমান তার পুত্র আব্দুল
আজিজকে নিয়ে দক্ষিণপূর্বে মুররা বেদুইন গোত্রে গিয়ে পালায়। সেখান থেকে
তারা বাহরাইনের রাজপরিবারের কাছে গিয়ে কিছুদিন আশ্রয় নেয়। তার পর ১৮৯৩
সালে আবদুর রহমান ও তার পুত্র শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ দালাল কুয়েতি আল-সাবাহ
রাজপরিবারের আশ্রয় পায়।
কুয়েতি
রাজপরিবারের সহায়তায় সৌদিরা উসমানিয়া খিলাফতের কর্তৃত্বাধীন নজদে একের
পর এক চোরাগুপ্তা হামলা চালাতে থাকে। ওয়াহাবী মতবাদের আলোকে পরিশুদ্ধ
ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে উসমানিয়া খিলাফতের বিরুদ্ধে এসব হামলা চলতে থাকে।
কিন্তু এসব হামলায় সৌদিরা তেমন কোনো বড় সাফল্য পায়নি। ১৯০১ সালে শারিফের
যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে আবদুর রহমান তার হারানো রাজ্য পুনরুদ্ধারের সব উদ্যম
হারায়।
১৮৯৯ সালের জানুয়ারিতে কুয়েতের আমির মুবারক
আল সাবাহ ব্রিটেনের সাথে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করে কুয়েতকে ব্রিটেনের
করদরাজ্য (Protectorate)-এ পরিণত করেন। তুরস্কের উসমানিয়া খিলাফতের
প্রভাবের বিরুদ্ধেই কুয়েত এই চুক্তি করে ব্রিটেনের সাথে
আবদুল
আজিজ ইবনে সৌদ – বর্তমান সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা সৌদ পরিবারের লড়াইটিও
ছিল উসমানিয়া খিলাফতের বিরুদ্ধেই। তাই ১৯০১ সালে শারিফের যুদ্ধে পরাজয়ের
ফলে পিতা আবদুর রহমান হতোদ্যম হলেও পুত্র আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ আবারও আশার
আলো দেখে। আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ ১৯০১ সালের শেষের দিকে কুয়েতের আমির
মুবারকের কাছে উসমানিয়াদের নিয়ন্ত্রিত রিয়াদ আক্রমণের জন্য সাহায্য
চায়। ব্রিটিশ মদদপুষ্ট কুয়েত সানন্দে ইবনে সৌদকে ঘোড়া ও অস্ত্র সরবরাহ
করে।
১৯০২ সালের ১৩ জানুয়ারি ইবনে সৌদ সৈন্যসহ
রিয়াদের মাসমাক দুর্গ আক্রমণ করে। মাসমাকের উসমানিয়া অনুগত রাশিদী
প্রশাসক ইবনে আজলানকে হত্যা করে সৌদিরা। ইবনে সৌদ যুদ্ধজয় শেষে ইবনে
আজলানের ছিন্ন মস্তকটি নিয়ে দুর্গশীর্ষে আসে এবং নিচে সমবেত উদ্বিগ্ন
রিয়াদবাসীর দিকে ছুঁড়ে মারে ।
আবদুল আজিজ ইবনে সৌদের রিয়াদ আমিরাত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইতিহাসে তৃতীয় সৌদি রাজ্যের সূচনা হয়।
এর
পর সৌদিরা একে একে রাশিদীদের নজদের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হটিয়ে দিতে থাকে।
১৯০৭ সালের মধ্যে সৌদিরা নজদের বিরাট এলাকা নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়।
১৯০৯
সালে ব্রিটিশরা সামরিক অফিসার William Henry Irvine Shakespear-কে কুয়েতে
নিয়োগ দিলে সৌদ পরিবার আরো শক্তিশালী হয়ে উঠে। শেক্সপিয়ারকে ইবনে সৌদ
সামরিক উপদেষ্টা বানিয়ে নেয়।
১৯১৩
সালে সৌদিরা উসমানিয়া সৈন্যদের কাছ থেকে পূর্ব আরবের গুরুত্বপূর্ণ
মরুদ্যান হাসা শহর দখল করে নেয়। এর পর পার্শ্ববর্তী কাতিফ শহরও সৌদিরা
দখলে নেয়।
১৯১৩ সালে কুয়েত এবং বুরাইদার মধ্যভাগে
আতাউইয়া নামক মরুদ্যানে বাদশাহ আব্দুল আজিজ বিন সউদ প্রথম ইখওয়ান জনপদ
প্রতিষ্ঠা করে। রাজ্য শাসনে ইবনে সৌদকে ওহাবী উলামাদের সমর্থনের প্রয়োজন
ছিলো। সে ইখওয়ান জনপদ তৈরি করে সেখানে ওহাবী উলামাদের দ্বারা কট্টর ওহাবী
মতবাদ প্রচার-প্রসার করতে থাকে। এভাবে আতাউইয়া রিয়াদের মতো একটি বিশাল
জনপদে পরিণত হয়। এ থেকে ইবনে সউদ যে কোনো সময় যে কোনো সংখ্যক সৈন্য
সংগ্রহ করতো। ফলে ইখওয়ান তার ক্ষমতার উৎস বা কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত
হয়েছিলো।
১৯১৪ সালে
বিশ্বজুড়ে ১ম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। ব্রিটেন-ফ্রান্স-রাশিয়ার মিত্রশক্তি
জার্মানি-উসমানিয়া খিলাফতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। রিয়াদে ব্রিটিশরা
শেক্সপিয়ারের মাধ্যমে সৌদিদের সাথে উসমানিয়া অনুগত রাশিদীদের যুদ্ধ
লাগায়।
১৯১৫ সালের
জানুয়ারিতে সংঘটিত এই যুদ্ধে রাশিদীরা জয়ী হয় ও শেক্সপিয়ারকে হত্যা
করে। রাশিদীরা শেক্সপিয়ারের শিরশ্ছেদ করে ও তার হেলমেট উসমানিয়াদের কাছে
হস্তান্তর করে। উসমানিয়ারা সৌদিদের সাথে ব্রিটিশদের সম্পর্কের
প্রমাণস্বরূপ শেক্সপিয়ারের হেলমেট মদিনার প্রধান ফটকে ঝুলিয়ে দেখায়।
শেক্সপিয়ারকে
হারিয়ে বিপর্যস্ত ইবনে সৌদ ১৯১৫ সালের ডিসেম্বরে ব্রিটিশদের সাথে দারিন
চুক্তি স্বাক্ষর করে। ব্রিটিশদের পক্ষে ব্রিটেনের মধ্যপ্রাচ্য প্রধান মেজর
জেনারেল স্যার পার্সি কক্স ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি মোতাবেক সৌদি
রাজত্ব ব্রিটিশদের করদরাজ্য এ পরিণত হয়।
প্রথম
বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেন- ফ্রান্স- রাশিয়ার মিত্রশক্তির বিরুদ্ধে
জার্মান-উসমানিয়া খিলাফতের দুর্বল অবস্থা ও আল-সৌদ পরিবারের সাথে
ব্রিটিশদের সখ্য দেখে চিন্তিত হয়ে ওঠেন মক্কার উসমানিয়া সমর্থিত শাসক
হুসাইন বিন আলী।
১৯১৫
সালের ১৪ জুলাই থেকে হুসাইন মিশরের ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার হেনরি
ম্যাকম্যাহনের গোপনে পত্র যোগাযোগ শুরু করেন। ৩০ জানুয়ারি ১৯১৬ পর্যন্ত এই
পত্র আদান-প্রদান চলতে থাকে। উসমানিয়া খিলাফতের অন্তর্ভুক্ত বিশাল আরব
ভূ-খণ্ডের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা মতবিনিময় করে।
া
ব্রিটেন
ও ফ্রান্সের মদদে মক্কার শাসক সেই হুসাইন বিন আলী উসমানিয়াদের বিরুদ্ধে
আরব বিদ্রোহ তৈরি করে। ব্রিটিশ সামরিক অফিসার টি.ই. লরেন্সের প্রত্যক্ষ
পরিচালনায় বিশ্বাসঘাতক হুসাইন মিডল-ইস্টার্ন ফ্রন্টে উসমানিয়াদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধে শুরু করলে বহু উসমানিয়া সৈন্য বন্দী হয় ও অবশেষে
উসমানিয়ারা ১ম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত হয়।
ব্রিটিশ সামরিক অফিসার টি.ই. লরেন্স – আরববিশ্বে আরব জাতীয়তাবাদের স্রষ্টা – হলিউডের বিখ্যাত “Lawrence of Arabia” (১৯৬২) মুভিটি একে নিয়েই নির্মিত
১৩০০ বছর পর মধ্যপ্রাচ্য মুসলিম খিলাফতের হাতছাড়া হয়ে যায়।
পুরস্কার
হিসেবে ব্রিটিশরা ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর হুসাইন বিন আলীর দ্বিতীয় ছেলে
আব্দুল্লাহকে জর্ডানের রাজত্ব ও তৃতীয় ছেলে ফয়সালকে ইরাকের রাজত্ব দেয়।
হুসাইনকে রাখা হয় হেজাজ (পবিত্র মক্কা-মদিনা ও তাবুক অঞ্চল)-এর শাসক
হিসেবে।
হুসাইন বিন আলীঃ
এভাবে
১ম বিশ্বযুদ্ধ আল-সৌদ পরিবারকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলে। কেননা ব্রিটিশদের
লেজুরবৃত্তির ক্ষেত্রে তাদের প্রতিপক্ষ হুসাইন পরিবার এগিয়ে যায় এবং
যুদ্ধ শেষে হুসাইন ও তার দুই ছেলে মিলে তিন দেশের রাজত্ব পায়। তবে নজদ
(রিয়াদ ও তদসংলগ্ন অঞ্চল)-এর শাসক সৌদরাই থেকে যায়।
দারিন চুক্তির আওতায় আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ ব্রিটিশদের কাছ থেকে বহু অস্ত্র ও মাসে ৫,০০০ পাউন্ড ভাতা (দালালির পুরস্কার) পেতে থাকে।
যুদ্ধের
পর ব্রিটিশরা ইবনে সৌদকে ১ম বিশ্বযুদ্ধের উদ্বৃত্ত বিপুল গোলাবারুদ দিয়ে
দেয়। ওই ব্রিটিশ অস্ত্র ও গোলাবারুদের সম্ভার নিয়ে সৌদিরা ক্রমধ্বংসমান
উসমানিয়া খিলাফতের অনুগত রাশিদীদের ওপর দক্ষিণ-পশ্চিম আরব অঞ্চলে আক্রমণ
শুরু করে। ১৯২০ থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত লড়ে রাশিদীরা শেষ পর্যন্ত সৌদিদের
হাতে পুরোপুরি পরাজিত হয়। ফলে আরবে আল-সৌদ পরিবার নিয়ন্ত্রিত ভূ-খণ্ডের
পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে ওঠে। ইরাকে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত Percy Cox-এর
মধ্যস্থতায় ১৯২২ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত Uqair Protocol-এর আওতায় ওই
বিশাল অঞ্চলে সৌদি রাজত্ব স্বীকৃতি লাভ করে।
এ-সময় পর্যন্ত আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ কখনোই ব্রিটিশ অনুগত হেজাজের শাসক হুসাইনের সাথে সংঘাতে জড়ায়নি।
এদিকে
ব্রিটিশ সরকার আব্দুল আজিজকে মাসিক ৫ হাজার পাউন্ড করে দিতো। কিন্তু প্রথম
বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ সরকার ইবনে সউদকে এবং তখন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার
গভর্নর শরীফ হুসাইনকে ভাতা বন্ধ করে দেয় ১৯২৩ সালে। আব্দুল আজিজ আর্থিক
সঙ্কটে পড়ে এবং এ থেকে উত্তরণের জন্য সে হিজাজ আক্রমণ করে। হিজাজ অভিযান
করে হাজীদের নিকট থেকে হজ্জ কর আদায় করার চেষ্টা করে। আব্দুল আজিজ বিন সউদ
জানতো পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ধর্মীয় কেন্দ্র পবিত্র মক্কা শরীফ, পবিত্র
মদীনা শরীফ-এ আধিপত্য বিস্তার না করলে মুসলিম বিশ্বে ইবনে সউদের
মান-মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে না। ফলে হিজাজ দখল ছিলো তার জন্য জরুরী।
১৯২৪
সালে পবিত্র মক্কা শরীফ ইবনে সউদের দখলে আসে। ইবনে সউদ স্বৈরাচারী
একনায়কতন্ত্র সর্বত্র চালু করে। সে ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য
মুসলিম বিশ্বের সাথে সখ্যতা রক্ষার জন্য গোল আলু নীতি, অনুসরণ শুরু করে।
তাকে এমন কিছু করতে হয় যা কট্টরপন্থী ওহাবীদের ক্ষুদ্ধ করে। ইখওয়ানদের
ব্যবহার করে তার রাজ্য সম্প্রসারিত হয়েছে, সে বাদশাহও হয়েছে এখন আর
ইখওয়ানদের প্রয়োজন নেই, ফলে ইখওয়ান ভ্রাতৃসংঘ বিলুপ্ত করতে থাকে। সে
ইখওয়ানদের হিজাজ থেকে নিজ গোত্রে ফিরে যেতে নির্দেশ দেয়। ফলে ইখওয়ানদের
মধ্যে হতাশা, নিরাশা এবং উচ্ছৃঙ্খলতা দেখা দেয়। ১৯২১ সালের ৩ মার্চ আরেক
ব্রিটিশ দালাল মুস্তাফা কামাল পাশা তুরস্কে অফিসিয়ালি খিলাফত বিলুপ্ত করে।
সারা বিশ্বের মুসলিমদের সাথে মক্কার হুসাইন বিন আলীও মহানবী (সা.) আমল
থেকে ১৩০০ বছর পর্যন্ত চলমান মুসলিমদের রাষ্ট্র খিলাফতের পতনে ব্যথিত হন।
পৃথিবী থেকে খিলাফত মুছে গেছে। ব্রিটিশদের ক্ষিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা
সত্ত্বেও ৫ মার্চ হুসাইন নিজেকে মুসলিমদের খলিফা ঘোষণা করেন।
ব্যস,
এ-সুযোগটিই কাজে লাগায় খিলাফতের দীর্ঘদিনের শত্রু আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ।
ব্রিটিশরা স্বাভাবিকভাবেই হুসাইনের নিজেকে খলিফা ঘোষণা করা মেনে নেয়নি এবং
হেজাজের শাসক হিসেবে হুসাইনের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়।
আবদুল
আজিজ ইবনে সৌদ কালবিলম্ব না করে হেজাজ আক্রমণ করে এবং ১৯২৫ সালের শেষ
নাগাদ পুরো হেজাজ দখলে নিয়ে নেয়। ১৯২৬ সালের ৮ জানুয়ারি আবদুল আজিজ ইবনে
সৌদ মক্কা-মদিনা-জেদ্দার গোত্রীয় নেতাদের সমর্থনে নিজেকে হেজাজের
“সুলতান” ঘোষণা করে। ১৯২৭ সালের ২৭ জানুয়ারি ইবনে সৌদ আগের নজদ ও বর্তমান
হেজাজ মিলিয়ে Kingdom of Nejd and Hejaz ঘোষণা করে। ৪ মাস পর সেই বছরের ২৭
মে জেদ্দা চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশরা Kingdom of Nejd and Hejaz-কে
স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।
নতুন জেদ্দা চুক্তি, ১৯২৭-এর মাধ্যমে ব্রিটিশ-সৌদের “Protectorate” স্ট্যাটাসের দারিন চুক্তি, ১৯১৫-এর সমাপ্তি ঘটে।
পরবর্তী
৫ বছর আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ তার দুই রাজত্বকে আলাদা রেখেই শাসন করে। অবশেষে
১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ইবনে সৌদ তার দুই রাজত্বকে একত্রিত করে তার
নিজের ও বংশের পদবি অনুসারে দেশের নাম “Kingdom of Saudi Arabia” (আরবি:
المملكة العربية السعودية al-Mamlakah al-‘Arabiyyah as-Su‘ūdiyyah) ঘোষণা
করে।
এভাবেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির উসমানিয়া
খিলাফতবিরোধী নীতির প্রকাশ্য সমর্থক হিসেবে, পদে পদে ব্রিটিশদের মদদ নিয়ে,
দালাল আল-সৌদ পরিবার ১৯৩২ সাল থেকে Kingdom of Saudi Arabia নামে
মুসলিমদের পবিত্র ভূমি দখলে রেখে শাসন করে যাচ্ছে।
১./মিশরের
মুরসি সরকারের পতনের পর সৌদি সরকারের ভূমিকায় মুসলিম উম্মাহর মধ্যে
ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এই দালাল রাজপরিবারের ইতিহাস তাই মুসলিম
উম্মাহর জেনে রাখা প্রয়োজন।
২./সৌদ পরিবার মুসলিম
উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক উসমানিয়া খিলাফত ভাঙতে ওয়াহাবী মতবাদকে ব্যবহার
করেছিল। আর সৌদ পরিবার জেনে-বুঝে দালালি করেছে তত্কালীন বিশ্বমোড়ল ও
খিলাফতের শত্রু ব্রিটেনের।
৩./মাজারকেন্দ্রিক শিরকের
চর্চা আর কবর জিয়ারত এক কথা নয়। মাজারকেন্দ্রিক শিরক পরিত্যাজ্য, কিন্তু
কবর জিয়ারত একটি প্রতিষ্ঠিত সুন্নাহ।
জাজিরাতুল আরবের প্রদেশ সমূহঃ
বর্তমান
এই যুগে আরব বলতে আমরা উপলব্ধি করতে পারি মুসলিম জাহানের ঐতিহাসিক স্থান ও
ইসলামের প্রাণকেন্দ্র মক্কাতুল মুয়াজ্জামা,এটি পূর্বে বাক্কা নামে
প্রসিদ্ধ ছিল। মহান আল্লাহ তা'লা তার ঐশীগ্রন্থ কুরআনে পাকে ঐ স্থানকে
"উম্মুল কুরা" তথা "আদি নগর" হিসেবে অবহিত করেছেন, এই মক্কা নগরীকে কেন্দ্র
করেই ইসলামের প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় এবং এর অন্তর্নিহিত ইতিহাস ইসলাম ও
মুসলিম বিশ্বের এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হয়।
১৮৮০
সালের পূর্বে আরব ইতিহাসের যে পরিচয় পাওয়া যায়,সে সম্পর্কে ব্যাখ্যা
দিতে গেলে ইতিহাস বলে,সে সময়ের আরবীয়দের মধ্যে ছিল সত্যের উজ্জীবিত
আদর্শ, নিয়মনীতি, সাম্য,মৈত্রীর এক আভিনব কানুন শৃংখলার বিশ্ময়কর পরিবেশ।
আরবীয়দের আদর্শের জাগরণের সৌরভে সুশোভিত হয় সারা বিশ্ব। ততকালীন সময়ে
তাদের জীবনাচার ও শিষ্টাচার এমনিভাবে প্রভাবিত করে ছিল যে অন্যান্য মুসলিম
রাষ্ট্রগুলো আরবীয়দের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থেকে শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে
তাদের রীতি-নীতি অনুস্বরন করত। তারাই ছিল সমগ্র মুসলিম বিশ্বের পরিচালক ও
সংস্কারক।কেননা,তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার সংবিধান রচনা হয়েছিল বিশ্ব
জাহানের মুক্তির দিশারী মানবতার পথ প্রদর্শক বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (দ.)
এর আলোকিত সত্যের আদর্শ থেকে এবং তিনি কুরআন-সুন্নাহের আলোকে তাহার
উম্মতগণকে ইসলামী গণতন্ত্র-এর যে শিক্ষা দিয়েছেন,তার বিস্তার লাভ করেছিল
আরব ভূ-খন্ড থেকেই।
সেক্ষেত্রে
তখনকার আরবীয়দের আদর্শ ছিল শিক্ষনীয় এবং তাদের শাসন ব্যবস্থার
প্রতিক্রিয়া ছিল দৃষ্টান্তমূলক। সে আমলে আরবে বসবাসরত অন্যান্য ধর্মের
অনুসারিগণ তাদের একতা, ভ্রাতৃত্ব ও আদর্শে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম ধর্মের প্রতি
আকৃষ্ট হয়ে দলে দলে ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিতে
থাকে এবং মুসলমানদের দিনে দিনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায়। এই মুসলিম
সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রভাব দেখে আরবে অবস্থানরত অন্যান্য কাফির, ইয়াহুদি,
নাসারারা ভীষণভাবে ব্যাথিত ও আতংকিত হতে থাকে। তারা তাদের ঐতিহ্য,
সংস্কৃতি, রীতি-নীতি হারানোর ভয়ে মুসলমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে
ষড়যন্ত্র করতে থাকে।তারা তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী মুসলিম ছদ্মবেশে
মুসলমানদের আদর্শ দুর্বল ও ধ্বংস করার নিমিত্তে সর্বদা চেষ্টা চালাতে থাকে।
শত চেষ্টার পরেও তারা খুব কমই সফল হয়। কারণ, মুসলমানদের অন্তরে ছিল
আল্লাহ ও তার হাবিবের একনিষ্ঠ ভালবাসা এবং কুরআন-সুন্নাহের আদর্শে গড়া
প্রবিত্র ঈমান। তারা তখন আরবের মুখোশদারী কিছু মুসলমান তথা মুনাফিকদের
সহযোগীতায় তাদের প্রক্রিয়াকে বেগবান করে। যেমন মুসলমানগণ যখন ইবাদতে
মাশগুল থাকতেন,তখন তারা মুসলমানদের ন্যায় রূপধারণ করে মুসলমানদের ইবাদাত ও
ধর্ম-কর্ম নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করত। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা'লা তাঁহার
প্রবিত্র কুরআনুল কারীমে "সূরা মায়েদা"এর ৫৭ নং আয়াত থেকে ৬০ আয়াত
পর্যন্ত মুনাফিকদের কার্যক্রম সম্পর্কে ঈমানদারগণকে সাবধান করেছেন।
ওসমানীয় সম্রাজ্য (১৯১৪ সাল):
কিন্তু
আল্লাহ ও রাসুলের দুশমনের দল তথা ইয়াহুদি, নাসারা, কাফের,মুনাফিকরা
অন্যান্য সকল ইবাদত বন্দেগিতে ক্ষতিসাধন করলেও কিন্তু তাদের দ্বারা নবী
কারীম (দ.)-এর গুণগাণ,দরুদ ও সালাম পড়া তাদের নিকট আসম্ভব হয়ে পড়ত। ফলে
তাদের কার্যক্রম ব্যহত হতো। পরে তারা সম্মিলিতভাবে চিন্তা করতে লাগল
যে,মুসলমাদের অন্তর থেকে কিভাবে নবীর প্রেম তথা দরুদ সালাম বের করা যায়।
তারা উপলব্ধি করতে পারল যে,নবীর প্রতি ভালবাসাই হচ্ছে মুসলমানের ঈমান ও
আদর্শ মজবুত থাকার প্রধান ভিত্তি। আর তা ধ্বংস করতে পারলেই তাদের উদ্দেশ্য
সিদ্ধ হবে। ফলে মুসলমানদের একতা ও ভ্রাতৃত্ব বিনষ্ট হলে তাদের মধ্যে হিংসা
বিদ্বেষ দেখা দিলে অন্য ধরমের অনুসারীরা মুসলমানদেরকে ঘৃনা অবজ্ঞা করতে
থাকবে। আর তা যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, তাহলে মুসলমানদের সাথে
বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। তখনই তাদের দৃষ্টি পড়ল মুসলিম
বিশ্বের বৃহত্তরশক্তিশালী দেশ তুরস্কের দিকে। ১৮৮০ সালের দিকে তুরস্কবাসী
ছিল অন্যান্য মুসলিম দেশের চেয়ে অধিক নবী প্রেমে উজ্জীবিত। তারা
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হিসেবে মিলাদুন্নাবী (দ.) এবং কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক
অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইসলামের মাহাত্ম্য ও মূলমন্ত্রকে প্রচার প্রসার করতেন।
তুরস্কবাসীর এই ধরণের অনুষ্ঠান তাদের সহ্য হত না। ফলে তারা তুরস্ক
প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে থাকে। তখন তৎকালীন
তুরস্কের শাসক গোষ্ঠীর নাম ছিল সুলতানাতুল ওসমানিয়া এবং বাদশা ছিলেন
মুস্তফা কামাল পাশা এবং রাজধানী ছিল ইস্তাম্বুল। তখন প্রশাসনের নেত্রীত্বে
অধিকাংশ আরব ভূমিকে শাসন করা হত। তার মধ্যে তুরস্কের বিভিন্ন প্রদেশের
মধ্যে অন্যতম প্রদেশ হলো 'নজদ',যা এখন সৌদ আরবের রাজধানী রিয়াদ নামে
খ্যাত।
মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাব নজদীঃ
তৎকালীন
আমলে নজদের গভর্নর ছিলেন রশিদ। আর গভর্নর রশিদ কর্তৃক গঠিত গোত্র শাখার
নাম ছিল রশিদীয়া গোত্র এবং রশিদীয়া গোত্রের মাধ্যমে নজদের সকল প্রকার
কার্যক্রম সম্পাদন করা হতো। তখন রশিদীয়া গোত্রের আদর্শ ছিল সুন্নি মতাদর্শ
ভিত্তিক। কিন্তু নজদের কিছু সংখ্যক লোক এবং তাদের শীর্ষ নেতা সৌদ ও তার
পুত্র আব্দুল আজিজ ছিল খারেজী মতাদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত। ইসলামের ইতিহাসে
কথিত আছে যে,৬৬১ খ্রি: বিদ্রোহী খারেজীগণ হযরত আলী (রা:)কে ইসলামের
শান্তি-শৃংখলা কারণ বলে দায়ী করে। পরে খারেজী গোত্রের একজন সদস্য যার নাম
ছিল আব্দুর রহমান ইবনে মূলজিম হযরত আলী (রা:)কে নামায থেকে ফেরার পথে
বিষাক্ত ছুরির অব্যর্থ আঘাতে ৬৬১ খ্রি: ২৭ জানুয়ারি ২১ রমজান হযরত আলী
(রা:) কে শহীদ করে দেয়। সেই খারেজী মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা ও প্রচার প্রসারের
লক্ষে সৌদ এবং তার পুত্র আব্দুল আজিজ একনিষ্ঠভাবে কাজ করতে থাকে এবং তাদের
গঠিত গোত্র পতিদের নিয়ে ধীরে ধীরে সুন্নি মতাদর্শের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও
মতানৈক্য করতে থাকে। এখানে উল্লেখ্য যে, ওহাবীদের গোঁমর ফাঁস নামক গ্রন্থে
উল্লেখ আছে যে, প্রখ্যাত ভন্ড নবী মুসাইলামাতুল কাজ্জাবের একজন বংশধর, সে
নজদ প্রদেশের আল উয়ানীয়া নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, যার নাম ছিল
"মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাব নজদী, সে ছিল সৌদের শ্বশুর। সে বাল্যকাল
থাকে ধর্ম বিরোধী ছিল এবং খারেজী মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার লক্ষে সর্বদা জামাতা
সৌদকে সহযোগীতা করত। শেষ পর্যন্ত সৌদের গোত্র খারেজী আদর্শে উদ্ভুদ্ধ হয়ে
দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে। একথা অবশ্যই নবী কারীম (দ:) এর হাদীসে বর্ণিত
আছে যে, মসজিদে নববীতে নবী কারীম (দ:) আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে
ফরিয়াদ কালে তিনি বিভিন্ন প্রদেশের নাম ধরে এবং সমস্ত উম্মতে মুহাম্মদীর
জন্য দোয়া করা অবস্থায় একজন নজদের অধিবাসী সাহাবী,তাঁর নাম ছিল আবুল
মুকাররাম, তিনি নবী কারীম (দ:) এর প্রতি আরজ করলেন,ইয়া রাসূলুল্লাহ (দ:)!
আমি নজদ থেকে এসেছি, আমার মাতা-পিতা ও আমার নজদ প্রদেশের জন্য একটু দোয়া
করুন। এভাবে ক্রমান্বয়ে তিন তিনবার বলা সত্বেও নবী কারীম (দ:) তার নজদ
প্রদেশের জন্য দোয়া করেননি। নবী কারীম (দ:) আবুল মুকাররাম (রা:) কে ডেকে
বল্লেন- হে আবুল মুকাররাম! আমি এই কারণে নজদের জন্য দোয়া করিনি যে, কেননা ঐ
নজদ থেকে শয়তানের শিং বের হবে (আমার কুরআন সুন্নাহ ও সালাতুস সালামের
বিপক্ষে প্রচার আরম্ভ হবে এবং ঐ নজদী শাসকগোষ্ঠী আমার আহলে বাইতকে ভালবাসে
না)। সমগ্র বিশ্বের মুসলিম উম্মাহকে তারা নির্যাতিত করবে। আবুল মুকাররাম
নবী কারীম (দ.) এর এইরূপ বর্ননা শ্রবণ করার পর কান্নাকাটি করতে লাগলেন এবং
পরে নবী কারীম (দ.) তাহার পিতা-মাতার জন্য দোয়া করলেন। রাসূলুল্লাহ (দ:)
এক বাক্যে বুঝিয়েছেন যে,ঐ নজদ থেকে ইসলামের ক্ষতি সাধনকারী শত্রু নির্গত
হবে। নবী কারীম (দ:) এর দেড় হাজার বছর আগের বাণী,যা আজ প্রমাণিত। নবী
কারীম (দ:) এবং তাঁর খলিফাগণ যেভাবে ইসলামি গণতন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিম
সম্রাজ্যকে বৃদ্ধি করেছিলেন, তা বর্তমান আরবে বিলুপ্ত। কেননা, বর্তমান আরব
দেশগুলোতে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত। যা নবী কারীম(দ:) এর আদর্শের বিপরীত। ফলে
আজ সমস্ত মুসলিম বিশ্ব অস্থিতিশীলতায় নিমজ্জিত ও পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ।
অতঃপর
আল্লাহর রাসূলের দেওয়া সুন্নি মতাদর্শ বিরোধীদের নেতা সৌদ ও তার পুত্র
আব্দুল আজিজ এবং তার গোত্রের সকল কর্মীদেরকে নজদের গভর্নর রশিদ নজদ প্রদেশ
থেকে বিতাড়িত করেন। তখন তারা কুয়েত চলে যায় এবং সেখানে বসবাস শুরু করে।
কুয়েতে অবস্থানরত অবস্থায় সেখানে এক মার্কিন কোম্পানি তাদের সাথে সাক্ষাৎ
করে। কোম্পানিটির নাম ছিল "আরামকু কোম্পানি। তারা তাদের সাথে সহযোগীতার
আলোচনা করে।ঐ আলোচনায় আরামকু কোম্পানি সৌদ গোত্রকে বলেছিল যে,'তোমরা একটি
কমিটি গঠন কর। আমরা তোমাদের প্রতি মাসে পাঁচ হাজার পাউন্ড স্বর্ণ দিয়ে
সাহায্য করব। এবং তোমাদেরকে আমরা উন্নত প্রশিক্ষনের মাধ্যমে এমনভাবে গড়ে
তুলব,যাতে তোমরা তোমাদের দেশে ফিরে যেতে পার। তোমাদের থাকা খাওয়ার
ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করে দেব।' তারা মার্কিন আরামকু কোম্পানির সহযোগীতার
প্রস্তাবিত কথাবার্তা শুনে অত্যন্ত আনন্দিত হল।অতএব সৌদ গোত্র আরামকু
কোম্পানির সিদ্ধান্তানুযায়ী ১৮৮০ সালে কমিটি গঠন করল। কমিটির নাম ছিল
"ইখওয়ানুল মুসলিমিন" অর্থাৎ মুসলমানগন ভাই ভাই। অত:পর আরামকু কোম্পানি
তাদের পাঁচ হাজার পাউন্ড সাহায্য দেয়া আরম্ভ করল এবং উন্নত অস্ত্রশস্ত্রের
কৌশলের মধ্যমে তাদের প্রশিক্ষণও দেয়। অথচ ইতিপূর্বে সৌদ গোত্র পেশায় ছিল
জেলে। আর এমনিভাবে মার্কিন আরামকু কোম্পানি সৌদ গোত্রের দূরবলতার সুযোগে
সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র তুরুস্কে মুসলমানে-মুসলমানে ফেতনা ফ্যাসাদ সৃষ্টি
করে। অপরদিকে ঠিক এভাবেই ভারতবর্ষের ইতিহাসে ইহুদী নাছারার একটি ব্রিটিশ
চক্র ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নামের বেশ নিয়ে ভারত উপমহাদেশে প্রবেশ করে।
তারা ভারতে প্রবেশ করার পর ঐতিহ্যবাহী মুসলিম সম্রাজ্যের মহান সম্রাট নবাব
সিরাজুদ্দৌলার সাথে বন্ধুত্বপুর্ণ সম্পর্কের কথা বলে এবং তারা তাঁহার সাথে
একটি সন্ধি চুক্তি করে। সে সন্ধির নাম ছিল "আলিগড়ের সন্ধি"। এই সন্ধির নাম
দিয়ে ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতবর্ষের মুসলিম নওয়াব শাসকদের
থেকে মীর জাফরের সহায়তায় ১৭৫৭ সালে ভারতবর্ষে মুসলিম নওয়াবদের ক্ষমতা
কেড়ে নেয়। ফলে ভারত উপমহাদেশে চিরতরে মুসলিম সম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যায়।
তদ্রূপ মার্কিন আরামকু কোম্পানি সৌদ গোত্রের সৈন্যদেরকে সংগে নিয়ে নবী
করীম (দ.) এর জীবনাদর্শ ও শানে-রেসালাত ক্ষুন্ন করতে থাকে।
এমনিভাবে
সৌদ গোত্রের সৈন্যরা বিশ বছর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হওয়ার পর ১৯০১ সালে তারা
নজদে হামলা করে। তখন তারা সর্বপ্রথম নজদের গভর্নর রশিদকে সুবহে সাদিকের
সময় নামায পড়া অবস্থায় ধরে ফেলে এবং তারা রশিদের বুকের উপর বসে তার ঘাড়
কেটে শরীর থেকে মাথাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। পরে তারা সেখানে আশিকে
রাসূলদের অবস্থানস্থল চিহ্নিত করে এবং তার মধ্য হতে জ্ঞানীগুণী ও গন্যমান্য
ব্যক্তিদের উপর হঠাৎ অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এমনকি তারা সুন্নী
মতাদর্শের অনুসারী আশেকে রাসূল ও আওলাদে রাসূলগণের ৩/৪ দিনের নিষ্পাপ ছোট
ছোট শিশুদেরকে পর্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করে। ঘরে যা পেত সব লুটপাট করে
নিত। ঘরে কারপেট থাকলে তা বের করে টুকরো টুকরো করে ফেলত ও তাদের মাঝে তা
ভাগাভাগি করে নিত।এবং যেখানে মাটির স্থান দেখা যেত, সেখানে পানি দ্বারা
ভিজিয়ে ফেলত। পানি দিয়ে ভিজিয়ে ফেলার কারণ ছিল মাটির নীচে নজদবাসীগণ
তাদের মুল্যবান দ্রব্যসামগ্রী, যেমন:স্বর্ণ, রৌপ্য চুরি- ডাকাতির ভয়ে
নিরাপদ হিসেবে মাটির নীচে পুতে রাখত। আর যেখানে মূল্যবান সামগ্রী থাকত,
সেখানে পানি তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যেত।
এভাবেই
সৌদ সৈন্যরা মার্কিন "আরামকু কোম্পানির" পরিকল্পনা অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে
নজদের নিরীহ সুন্নি মুসলমানদের উপর নির্মমভাবে অত্যাচার নিপীড়ন করে। নবী
করীম (দ:) এর বাণী:- তিনি ইরশাদ করেন-'সকল মুসলমান পরস্পর ঈমানী ভাই। সে
হিসেবে প্রত্যেক ঈমানদার মুসলমানদের রক্ত,ধন-সম্পদ ভক্ষণ করা অপর মুসলমানের
জন্য হারাম। 'তিনি আরো ইরশাদ করেন:-
একজন
মুসলমান যদি অন্য মুসলমানের হাত ও মুখ দ্বারা সংগঠিত অত্যাচার ও অনিষ্টতা
থেকে নিরাপদ না থাকে, তবে সে প্রকৃত ঈমানদার মুসলমান নয়। তারা জান্নাতে
প্রবেশ করবে না।
মানবজাতির
মহান সংবিধান মহাগ্রন্থ প্রবিত্র কুরআনে পাকের ২৫তম পারার সূরা আশশূ'রা এর
২২-২৩নং আয়াতে কারীমাগুলোতে আল্লাহ তা'লা ইরশাদ করেন
হে রাসূল(দ:)! আপনি বলে দিন, তোমাদের কাছে আমার আহলে বাইত তথা নবী পরিবারের ভালবাসা ছাড়া কোনো প্রতিদান চাই না।
হে আমার মুসলমান ভাইগণ! আপনাদের কাছে কুরআন-হাদীসের আলোকে প্রশ্ন রাখলাম, তারা কোন ধরণের মুসলমান?
অতঃপর
সৌদ গোত্রের সৈন্যরা পরিকল্পনা করতে থাকে কিভাবে মক্কা শরীফের জান্নাতুল
মুয়াল্লা এবং মদীনা শরীফের জান্নাতুল বাকীতে হামলা করা যায়। তৎকালীন আমলে
মক্কা শরীফের গভর্নর ছিলেন হুসাইন শরীফ। তাঁর শাসনামলে তারা মক্কা শরীফে
আক্রমণ করে ও সাথে সাথে মক্কা শরীফের গভর্নর হুসাইন শরীফকে আটক করে। অবশেষে
১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম উম্মাহের ঐতিহাসিক স্থান মক্কা ও মদীনা শরীফের
জান্নাতুল মুয়াল্লা এবং জান্নাতুল বাকী শরীফের পবিত্র মাটিতে দাফনকৃত
প্রত্যেক সাহাবায়ে কেরাম ও আনসার, মুহাজির এবং আশেকে রাসূলগণের কবর ও
রাওযা শরীফকে বিভিন্ন ধারালো ট্রাক্টর তথা মাটি কাটার গাড়ি বিশেষ দ্বারা
উল্টিয়ে দেয় এবং তাতে কোনো প্রকার চিহ্ন পর্যন্ত রাখেনি। এমনকি তারা
ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান (রা.) এর রাওযা শরীফ ভেঙে ফেলে। পরে রাসূল
(দ.) এর রাওযা শরীফের দিকে অগ্রসর হয়। ওহাবীদের গোঁমর ফাঁক নামক গ্রন্থে
লেখক উল্লেখ করেছেন যে, ওয়াহাবী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা আআব্দুল ওহাব নজদী
এবং অন্যদিকে সে আবার সৌদের শ্বশুরও হয়। অতএব সৌদের শ্বশুর আব্দুল ওহাব
নজদীর নেতৃত্বে এই হামলা পরিচালনা করা হয় এবং সে এমন ব্যক্তি,যে সর্বপ্রথম
রাসুলে কারীম (দ.)এর রাওযা শরীফের দিকে গেল। তখন আল্লাহ তা'লার হুকুমে
আকস্মিকভাবে দুটি সাপ এসে তাদেরকে নবীজীর রাওযার দিকে পৌছার পথে তৎক্ষণাৎ
বাধাগ্রস্ত করল। ফলে তারা ব্যর্থ হয়ে সেখান থেকে বিতাড়িত হলো এবং পরে তা
আর সম্ভবপর হয়নি। তাই আজ পর্যন্ত নবী কারীম (দ.)এর রাওযা ব্যতীত অন্য কোন
সাহাবীর রাওযা শরীফের চিহ্ন বা নিশান দেখা যায় না। এই কারণে বিশ্বের
মুসলিম উম্মাহ ও হাজীগণ উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় না যে, এখানে পূর্বে পৃথক
পৃথক মাজার শরীফ অবস্থিত ছিল। মক্কা শরীফের জান্নাতুল মুয়াল্লা ও মদীনা
শরীফের জান্নাতুল বাকীর পূর্বের অবস্থার চিত্র এবং সেখানে সাহাবায়ে
কেরামের রাওযা শরীফের পূর্বের দৃশ্য ও নবী করীম (দ.) এর বিভিন্ন মু'জিযার
দর্শনীয় স্থানসমূহের বর্তমান ধ্বংসাবশেষ চিত্র নিয়ে লিখিত "আল মুকাদ্দেস"
নামক গ্রন্থে চিত্রসহ স্ববিস্তারে মক্কা ও মদীনা শরীফের পূর্বের অবস্থা
এবং বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেছেন। এই গ্রন্থখানা আপনাকে দলিল স্বরূপ সহায়তা
করবে। অতঃপর এভাবেই সৌদের গোত্র মার্কিন "আরামকু কোম্পানি"-র সহযোগীতায়
আরবের বুকে সুন্নি মতাদর্শকে ধ্বংস করতে সমর্থ হলো এবং খারেজী মতাদর্শ
প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছিল।
পরবর্তীতে
সে সময়ের মদীনাবাসীরা তাদের কঠোর নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করতে না পেরে
মদিনা ছেড়ে পাহাড়ে-পর্বতে চলে যায় এবং সেখানেই বসবাস শুরু করেন। তার
প্রমাণ হলো মদীনার অদূরে পাহাড়-পর্বতে অবস্থানরত বর্তমান অধিবাসী। এমনকি
আওলাদে রাসূল ও আশেকে রাসূল (দ.) বণিকগণ আপন জন্মভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য
হয়েছিল। ফলে নিজ বাসস্থান ছেড়ে জানমাল রক্ষার্থে বিভিন্ন দেশে চলে
গিয়েছিলেন। যারা যেখানে গিয়েছিলেন, সেখানে সুন্নি মতাদর্শ ও সালাতুস
সালাম এবং তৌহিদ এবং রিসালাত প্রতিষ্ঠা করেন। তাই আজ পর্যন্ত সেই সালাতুস
সালামের ঝান্ডা সারা বিশ্বে উড়ছে। খারেজীরা এখনও কাফের মুনাফিকদের
সহযোগীতায় বিভিন্ন দেশে ও জেলায় এবং গ্রামে-গঞ্জে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র
চালিয়ে যাচ্ছে। যাতে নবী প্রেমিকগণ জেগে উঠতে না পারে। কেননা তাদের মূল
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে নবীর প্রেম যাতে মুসলমানদের অন্তর থেকে চিরতরে
মুছে যায়। আর নবীর প্রেম ও আদর্শ ধ্বংস করতে পারলেই মুসলমানদের ঈমান, আমলও
নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে মুসলমান মুসলমানে লড়াই চলতে থাকবে। এটাই হলো খারেজী
-ওয়াহাবীদের মূল প্রচেষ্টা। অতএব পরবর্তী পর্যায়ে যখন ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে
নির্যাতিত আওলাদে রাসূল ও আশেকে রাসূলগণ হেজাজুল আরব থেকে চলে যান। তখন
সৌদের গোত্র ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে তুরস্ক থেকে নজদ ও মক্কা -মদীনা শরীফ দখল
করে শাসনভার তাদের অধীনে নিয়ে আসে এবং সাথে সাথে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ২৩ শে
সেপ্টেম্বর হেজাজুল আরবের নাম পাল্টিয়ে দেয় এবং নিজ নামানুসারে "সৌদ আরব
" রাখে,নজদ প্রদেশের নাম পরিবর্তন করে "রিয়াদ" নামকরণ করে। উল্লেখ্য
যে,এখানে তুরস্কের বাদশাহ মুস্তফা কামাল পাশার কিছুই করার ছিল না। কারণ,
মার্কিন আরামকু কোম্পানি সৌদ গোত্রকে সবদিক থেকে এমনিভাবে গড়ে তুলে ছিল
যে,তাদের দমন করা তুরস্কের বাদশার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে।
পরিশেষে এইভাবেই তারা আরবের মূল ভূ-খন্ডে খারেজী এবং ওয়াহাবী মতবাদ ও তাদের ধ্বংসাত্মক শাসন ক্ষমতা যুগে যুগে প্রতিষ্ঠিত রাখে।
রুমিন ফারহানা. Press tab to insert.
| ![]() ![]() ![]() |
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ