expr:class='"loading" + data:blog.mobileClass'>

Wikipedia

সার্চ ফলাফল

বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

ভারতের সম্রাজ্যবাদের গোপন তথ্য

 "ভারতের সম্রাজ্যবাদের গোপন তথ্য"

জওহারলাল নেহেরু



ভারত এমন একটা দেশ যাদের বিদেশ নীতি চলে চাণক্যের নীতিতে, আর এই চাণকযের নীতি অনুযায়ী ভারতের জওহরলাল নেহেরু একটি নীতি চালু করেন তার নাম "নেহেরু ডক্ট্রিন"।

ভারত অবশ্যম্ভাবীভাবে তার আধিপত্য বিস্তার করবে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারত হবে সব রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র। ছোট জাতিরাষ্ট্রগুলোর সর্বনাশ ঘটবে। তার সাংস্কৃতিকভাবে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে থাকবে, কিন্তু রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন থাকবে না।

মোটামুটি এটাই ছিল ভারতের স্বাধীনতার অন্যতম স্তম্ভ পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর বহুল প্রচলিত ‘ইন্ডিয়া ডকট্রিন’, যা নেহেরু ডকট্রিন নামেও পরিচিত। ১৯৪৭ সালে প্রকাশিত তার ‘ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া’ বইয়ে এর প্রথম আভাস পাওয়া যায়। মূলত ‘অখন্ড ভারত’ ধারণা থেকেই এর উদ্ভব, এবং একে একে কাশ্মীর, হায়দ্রাবাদ, সিকিম এবং নেপালের মাওবাদ, শ্রীলংকার তামিল টাইগার বিদ্রোহ এবং সর্বোপরি ১৯৭১ এর যুদ্ধ এবং তার পর থেকে বাংলাদেশে অযাচিত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ইন্ডিয়া ডকট্রিন তার স্বরূপ উন্মোচন করছে সবার সামনে; খুব সাম্প্রতিক নেপালের তরাই অঞ্চলের গণভোট এবং এর পরবর্তী জ্বালানী অবরোধও এর বাইরে নয়। প্রাচীণ ভারতবর্ষের মহামতি সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের প্রধাণ অমাত্য কৌটিল্য, যিনি চানক্য নামেই সুপরিচিত, তার একটি শিক্ষা ছিল – “ক্ষমতা অর্জনের লোভ ও অন্য দেশ বিজয়ের আকাঙ্ক্ষা কখনও মন থেকে মুছে ফেল না। সব সীমান্তবর্তী রাজাকে শত্রু বলে মনে করবে।”

হাজার বছর পর এসেও কি এই মূলনীতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ভারত ?


হায়দ্রাবাদ, নিজাম ও আগ্রাসী ভারত:

নিজাম পরিষদ


ভারতের দক্ষিনাংশে মুসলমান অধ্যুষিত এক রাজ্যের নাম হায়দ্রাবাদ। সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ১৭২১ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সুবাদার কামারুদ্দীন খান হায়দ্রাবাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং নিজাম-উল-মূলক উপাধি নিয়ে হায়দ্রাবাদ রাজ্য শাসন করতে থাকেন। মজার ব্যাপার হলো,পার্শ্ববর্তী মহীশূরের সুলতান হায়দার আলী এবং তার পুত্র টিপু সুলতান যখন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিলেন,তখন হায়দ্রাবাদের তৎকালীন নিজাম নির্লজ্জভাবে ব্রিটিশের পক্ষাবলম্বন করেন। কিন্তু এই নতজানু নীতি তাদের বাঁচাতে পারেনি।


১৯৪৭ সালে ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা পাবার পর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ভারত হায়দ্রাবাদে নানা রকম অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করলেও সর্বশেষ নিজাম তা শক্ত হাতে দমন করেন। এরপর ১৯৪৮ সালের জুলাই মাসে জওহরলাল নেহেরু ঘোষণা করলেন,‘যখন প্রয়োজন মনে করবো তখন হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান শুরু করা হবে।’এক পর্যায়ে ভারত বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করে,যার অংশ হিসেবে হায়দ্রাবাদের অভ্যন্তরে কংগ্রেস স্বেচ্ছাসেবকদের সক্রিয় করা হয়,হায়দ্রাবাদের রাজনীতিকে কলুষিত করা হয়। শিক্ষাঙ্গন,সাংস্কৃতিক জগৎ,বুদ্ধিজীবী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনুগত লোক তৈরি করা হয়,সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে অনুগত দালাল সৃষ্টি করা হয় এবং হিন্দু মৌলবাদীদের দিয়ে নানা রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড উস্কে দেয়া হয়। কংগ্রেসের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হিন্দু মহাসভা,আরএসএস ও আর্যসমাজ এতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ১৯৪৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তেলেঙ্গনায় কম্যুনিস্ট বিদ্রোহ দমনের অজুহাতে ‘অপারেশন পোলো’ নামে ভারতীয় সৈন্যবাহিনী হায়দ্রাবাদে আক্রমণ চালায়। সর্বগ্রাসী এ আক্রমণ শুরুর আগেই স্বাধীন হায়দ্রাবাদের সেনাপ্রধান আল ইদরুসকে কিনে নিয়েছিল ভারত। আল ইদরুস দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তগুলো অরক্ষিত রেখেছিল, সেনাবাহিনীকে রেখেছিল অপ্রস্তুত অবস্থায়। এরপর ভারত সেনাপ্রধানের সহায়তায় হায়দ্রাবাদে তার বিপুল সেনাশক্তি,পদাতিক বাহিনী ও বিমান বাহিনী সহকারে শুরু করলো সামরিক আক্রমণ। প্রথমে ট্যাংক এবং এরপর বিমান আক্রমণে বিপর্যস্ত মানুষের ওপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাথে একাত্ব হয়ে আর্যসমাজ ও অন্যান্য হিন্দু মৌলবাদী সংগঠনগুলো হায়দ্রাবাদে প্রায় দুই লাখ মুসলিমদের উপর নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। ভারতীয় সৈন্যবাহিনী মুসলিম নিরীহ নারী-পুরুষ,শিশুদের হত্যা করেছে,বিমান হামলায় শহর বন্দর গ্রাম গুঁড়িয়ে দিয়েছে এবং মসজিদ,মাদ্রাসা ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে। তাদের এই ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর একটি মাত্র উদ্দেশ্যে তা হচ্ছে হায়দ্রাবাদের শেষ নিজামকে ক্ষমতাচ্যুত করা। অনেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছে। ১৮ সেপ্টেম্বর ভারতীয় বাহিনী রাজধানীর দিকে ধাবিত হয় এবং হায়দ্রাবাদ ভারতের দখলে পরিণত হয়। এরপর হায়দ্রাবাদ ভারতের পদানত রাজ্যে পরিণত হওয়ার পর একে অন্ধ্র,কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্র এই তিন রাজ্যে বিভক্ত করা হয়।


এ বিষয়ে লোকসভার হিন্দু সদস্য পণ্ডিত সুন্দরলালের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে অন্য ঘটনা প্রকাশ পায়। এ প্রতিবেদনে প্রকাশ পায় অভিযানের সময় ভারতীয় বাহিনী নির্বিচার হত্যা,লুণ্ঠন,অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক ধর্ষণের মতো যুদ্ধাপরাধ করেছে। অভিযানকালে বেসামরিক নাগরিকদের তেমন মৃত্যু হয়নি বলে সরকারীভাবে দাবী করা হলেও তদন্ত প্রতিবেদনে প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়,যাদের অনেককেই লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে গুলি করে মারে ভারতীয় সেনারা। সরকারি ওই তদন্ত প্রতিবেদন কোনোদিন প্রকাশ করা হয়নি। খুব অল্পসংখ্যক ভারতীয় নাগরিকই এ গণহত্যার কথা জানেন।


সিকিম, চোগিয়াল ও কৌশলী ভারত:

লেন্দুপ দর্জি


সিকিম ভারতের উত্তরাংশে অবস্থিত তিব্বতের পাশের একটি রাজ্য। রাজ্যটির স্বাধীন রাজাদের বলা হত চোগিয়াল। ভারতে বৃটিশ শাসন শুরুর পুর্বে সিকিম তার পার্শ্ববর্তী নেপাল আর ভুটানের সাথে যুদ্ধ করে স্বাধীন অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিল। বৃটিশরা আসার পর তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে নেপালের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় সিকিম। এসময় রাজা ছিলেন নামগয়াল। কিন্তু বৃটিশরা তিব্বতে যাওয়ার জন্য এক সময় সিকিম দখল করে নেয় এবং ১৮৮৮ সালে রাজা নামগয়াল আলোচনার জন্য কলকাতা গেলে তাঁকে বন্দী করা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৮৯২ সালে তাকে মুক্তি দেয়া হয় এবং সিকিমের স্বাধীনতাকে মেনে নেয়া হয়। এরপর তার পুত্র টুলকু নামগয়াল ক্ষমতায় বসে সিকিমের ব্যাপক উন্নতি সাধন করেন। এসময় বৃটিশের কাছে সিকিম তার স্বাধীনতার নিশ্চয়তা লাভ করে। পরবর্তী চোগিয়াল থাসী নামগয়ালের সময়ে বৃটিশরা ভারত ছেড়ে গেলে গণভোটে সিকিমের মানুষ ভারতের বিরুদ্ধে রায় দেয় এবং ভারতের পন্ডিত নেহরু সিকিমকে স্বাধীন রাজ্য হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হন। ১৯৬২ সালের ভারত – চীন যুদ্ধের পর কৌশলগত কারণে সিকিমের গুরুত্ব বেড়ে যায়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সর্বশক্তি নিয়োগ করেন সিকিমকে দখল করার জন্য। তিনি কাজে লাগান সিকিমের প্রধানমন্ত্রী লেন্দুপ দর্জিকে।


মূলত চীন সীমান্তে ৩টি স্বাধীন রাষ্ট্র (নেপাল, ভুটান ও সিকিম) নয়াদিল্লির জন্য অস্বস্তিকর ছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও ১৯৭৪ সালে ভারতের পারমাণবিক বোমার সফল বিস্ফোরণ ইন্দিরা গান্ধীর আত্মবিশ্বাস বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। কংগ্রেস নেত্রী নয়াদিল্লিতে তার ক্ষমতাকে সুসংহত করেন এবং এরপর সিকিমের ওপর তার নজর পড়ে। নয়াদিল্লি উদ্বিগ্ন ছিল সিকিমের স্বাধীন সত্তার বিকাশ নিয়ে। ভুটানের পথ ধরে সিকিম যদি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জাতিসঙ্ঘের সদস্যপদ লাভ করে ফেলত,তাহলে তা হতো নয়াদিল্লির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে বড় রকম বাধা। তাই দ্রুত কার্যোদ্ধারের জন্য তারা অগ্রসর হতে থাকে।


১৯৭০ সাল থেকেই নেহেরু প্রভাবিত সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেসকে লেন্দুপ দর্জি ব্যবহার করে অরাজকতা সৃষ্টি করেন। রাজপ্রাসাদের সামনে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়লে ইন্দিরা সরকার রাজার নিরাপত্তার কথা বলে ভারতীয় বাহিনী পাঠায়। কিন্তু তারা মূলত রাজাকে গৃহবন্দী করেন, বহির্বিশ্বের সাথে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং বি এস দাশকে ভারত সরকার সিকিমের প্রধান প্রশাসক নিয়োগ করে। এই সময় এক মার্কিন পর্বতারোহী গোপনে সিকিম প্রবেশ করেন এবং সিকিমের স্বাধীনতা হরণের খবর বিশ্বের নিকট তুলে ধরেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে যায়। সিকিম জাতিসংঘের সদস্যপদভুক্তিরও প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এর মধ্যে ভারতের তাঁবেদার লেন্দুপ দর্জির নেতৃত্বাধীন সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস (এসএনসি) ১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পার্লামেন্টের ৩২ আসনের মধ্যে ৩১টি আসনে জয়লাভ করে। নির্বাচনে জিতে ২৭ মার্চ ১৯৭৫ প্রথম ক্যাবিনেট মিটিং এ প্রধানমন্ত্রী লেন্দুপ দর্জি রাজতন্ত্র বিলোপ ও জনমত যাচাইয়ে গণভোটের সিদ্ধান্ত নেন। ততদিনে সিকিমে ভারতীয় সেনাবাহিনী ঘাঁটি গেড়ে ফেলেছে। তারা বন্দুকের মুখে ভোটারদের ‘হ্যাঁ’ভোট দিতে বাধ্য করে। পুরো ঘটনাই ছিল সাজানো। ৬ এপ্রিল ১৯৭৫ সালের সকালে সিকিমের রাজা যখন নাস্তা করতে ব্যস্ত সে সময় ভারতীয় সৈন্যরা রাজপ্রাসাদ আক্রমণ করে এবং রাজাকে বন্দী করে প্রাসাদ দখল করে নেয়। তারা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রকে গ্রাস করে ভারতের প্রদেশে পরিণত করে। সিকিম সেনাবাহিনীকে সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। ভারতীয় সাংবাদিক সুধীর শর্মা ‘পেইন অব লুজিং এ নেশন’(একটি জাতির হারিয়ে যাওয়ার বেদনা) নামে একটি প্রতিবেদনে জানান,ভারত তার স্বাধীনতার গোড়া থেকেই সিকিম দখলের পরিকল্পনা করেছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু অনেকের সাথে কথোপকথনে তার ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সাবেক পরিচালক অশোক রায়না তার বই ‘ইনসাইড স্টোরী অব ইন্ডিয়াস সিক্রেট সার্ভিস’-এ সিকিম সম্পর্কে লিখেন, ভারত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ১৯৭১ সালেই সিকিম দখল করে নেয়া হবে। সে লক্ষ্যে সিকিমে প্রয়োজনীয় অবস্থা সৃষ্টির জন্য আন্দোলন, হত্যা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছিল। তারা ছোট ছোট ইস্যুকে বড় করার চেষ্টা করে এবং সফল হয়। তার মধ্যে হিন্দু – নেপালী ইস্যু অন্যতম। ‘র’ দুই বছর সময় নেয় সিকিমে একটি উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য। এ ক্ষেত্রে নেপালী বংশোদ্ভূত হিন্দু ধর্মাবলম্বী সিকিমি নাগরিকদের ক্ষোভকে ব্যবহার করা হয়। তাদের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ ছিল, সিকিমের বৌদ্ধ রাজা স্থানীয় নেপালী হিন্দু প্রজাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করছেন। সাংবাদিক সুধীর শর্মা লিখেন,লেন্দুপ দর্জি নিজেই তাকে বলেছেন,‘ভারতের ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর লোকেরা বছরে দু’তিনবার তার সাথে দেখা করে পরামর্শ দিত কিভাবে আন্দোলন পরিচালনা করা যাবে। তাদের একজন এজেন্ট তেজপাল সেন ব্যক্তিগতভাবে তাকে অর্থ দিয়ে যেতো এ আন্দোলন পরিচালনার জন্য। এ অর্থ দিয়ে রাজনৈতিক সন্ত্রাস পরিচালিত হতো।’শর্মা আরো লিখেছেন,এই ‘সিকিম মিশনের’প্রধান চালিকাশক্তি ছিল ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা,যা সর্বত্র ‘র’নামে পরিচিত। সিকিমের চোগিয়ালের তৎকালীন এডিসি ক্যাপ্টেন সোনাম ইয়াংজু লিখেছেন,ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সদস্যরা বেসামরিক পোশাকে রাজার বিরুদ্ধে গ্যাংটকের রাস্তায় মিছিল,আন্দোলন ও সন্ত্রাস করত। নেহেরুর পরামর্শ,মদদ ও উৎসাহে সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস গঠন করেছিলেন লেন্দুপ দর্জি। শ্লোগান তুলেছিলেন, ‘গণতন্ত্রের সংগ্রাম চলছে,চলবে’। লেন্দুপ দর্জির গণতন্ত্রের শ্লোগান শুনে সিকিমের সাধারণ জনগণ ভাবতেই পারেনি,এই শ্লোগানের পিছনে প্রতিবেশী দেশ একটি জাতির স্বাধীনতা হরণ করতে আসছে। সিকিমের জনগণকে দ্বিধাবিভক্ত করে ভারত তার আগ্রাসন সফল করতে এবং এক পক্ষকে ক্ষমতায় এনে তাদের দ্বারা দেশ বিক্রির প্রস্তাব তুলে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছিল।


ভারতীয় আধিপত্যবাদের সেবাদাস লেন্দুপ দর্জিকে ২০০২ সালে ভারত ‘পদ্মবিভূষণ’ খেতাবে ভূষিত করে। সিকিমের রাজ্য সরকার ২০০৪ সালে তাকে ‘সিকিমরত্ন’ উপাধি দেয়। তবে মাতৃভূমির স্বাধীনতা ভারতের হাতে তুলে দেয়ার জন্য তিনি এক অভিশপ্ত জীবন বয়ে বেড়িয়েছেন। সিকিমে তার ঠাঁই হয়নি। রাজনীতি থেকে তাকে বিদায় করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের নিজ শহর কালিম্পং এ একাকী,নিঃসঙ্গ,নিন্দিত ও ভীতসন্ত্রস্ত্র এক জীবনযাপন শেষে ২০০৭ সালের ৩০ জুলাই লেন্দুপ দর্জি মারা যান। তার বয়স হয়েছিলো ১০৩ বছর।

বাংলাদেশ, আওয়ামী লীগ এবং সর্বগ্রাসী ভারত:

বড় দেশ হিসেবে ভারতের অন্যতম কৌশল হলো, ছোট দেশের কবি,শিল্পী,সাহিত্যিক,ব্যবসায়ী,কূটনীতিক পর্যায়ের প্রভাব সৃষ্টিকারী ব্যক্তিবর্গের মগজগুলো কিনে নেয়া। বিভিন্ন আঙ্গিকে এবং মাত্রায় এর প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি খুব সহজেই। আমাদের দেশের মধ্য দিয়ে অবমাননাকর এবং ব্যবসায়িকভাবে অত্যন্ত লোকসান দিয়ে করিডোর সুবিধা দেওয়া হয়েছে দেশটিকে। দেশের শিল্প এবং বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একচেটিয়া আধিপত্য (পণ্য আমদানী ও রফতানী উভয়ক্ষেত্রেই) এর পাশাপাশি সীমান্ত চৌকির সংখ্যা বৃদ্ধি, কাটাতারের বিদ্যুতায়িত বেড়া এবং ক্রমবৃদ্ধিমান হত্যাকান্ড বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক মানুষকে ক্রমশই সন্দিহান ও ভীত করে তুলছে। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত সীমান্ত আউট পোস্টগুলোর (বিওপি) একটি থেকে আরেকটির দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার থেকে হ্রাস করে ৪/৫ কিলোমিটারে নিয়ে আসা হচ্ছে এবং এগুলোতে বিএসএফ-এর শক্তি দ্বিগুণ করা হচ্ছে। এই সীমান্তে থারমাল নাইটভিশন ডিভাইস,টেলিস্কোপিক বন্দুকসহ উচ্চমানের হাতিয়ার মোতায়েন রেখেছে। যদিও ১৯৭৪ সালের ভারত-বাংলাদেশ চুক্তি অনুযায়ী সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোন প্রতিরক্ষা কাঠামো নির্মাণ করা নিষিদ্ধ,তবুও ভারত তা করেই চলেছে। টিপাইমুখসহ উজানের নদীগুলোর পানি নিয়ে প্রভুত্ব সেই স্বাধীনতার অর থেকেই চলছে। এর পাশাপাশি পাঠ্যপুস্তক ছাপানো থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজের দায়িত্ব (সর্বশেষঃ আইটি খাতের উপদেষ্টা হিসেবে ভারতীয় নাগরিক বিক্রম দাশের নিয়োগ) ভারতীয় নাগরিকদের হাত ন্যস্ত করা হচ্ছে। গার্মেন্টস শিল্প ষড়যন্ত্রমূলক নাশকতা হোক আর যে ভাবেই হোক, এক এক ভারতীয় নাগরিকদের হাতে চলে যাচ্ছে বড় বড় ফ্যাক্টরীর মালিকানা।এর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কথা বলাই বাহুল্য। এ কথা আজ সবাই জানেন যে, বাংলাদেশের কোন টিভি চ্যানেলকে ভারতে প্রচারিত হতে দেওয়া হয় না, অথচ আমাদের বিনোদন জগতের প্রায় সকল চ্যানেলগুলোই ভারত নিয়ন্ত্রিত; পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ের চলচ্চিত্র আমদানীর নামে আমাদের দেশের দর্শকের এক বিশাল বাজারকে তুলে দেওয়া হয়েছে ভারতের হাতে, যা ধীরে ধীরে দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পকে মৃত্যুর দুয়ারে টেনে নিয়ে যাবে।সর্বশেষ, রাজনৈতিক ভাবেও আমরা দেখেছি বাংলাদেশের সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং এর অযাচিত হস্তক্ষেপ, যা কোন ধরণের কূটনৈতিক শিষ্টাচারের ধারে কাছেও আসে না। (প্রসঙ্গত উল্ল্যেখ করা যেতে পারে, সুজাতা সিং এর বাবা টিভি রাজ্যেশ্বর ছিলেন সত্তরের দশকে ভারতের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধাণ, এবং সিকিমকে ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত করবার প্রধাণতম আর্কিটেক্ট; এর পুরস্কার স্বরূপ সিকিম রাজ্যের প্রথম গভর্নর হিসেবে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তার কন্যা যদি বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এরকম কোন মিশন নিয়ে এগুতে থাকেন তাতে খুব একটা আশ্চর্য হবার কিছ থাকবে না।) এর পাশাপাশি আমরা আরও দেখেছি বহির্বিশ্বের প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশীদের উদাত্ত আহবান, ‘ভারতের চোখ দিয়েই বাংলাদেশকে দেখতে হবে’। এ সব কিছুই সম্ভব হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের নতজানু ভারতমুখী নীতির কারণে। দেশের সামরিক, গোয়েন্দা এবং নিরাপত্তা রক্ষার মত স্পর্শকাতর দফতরগুলোতে ভারতীয় হস্তক্ষেপ এবং সরাসরি অংশগ্রহণ এখন ওপেন সিক্রেটে পরিণত হয়েছে। অনেকে বলেন, এই আওয়ামী শাসনামলে পরিচালিত ঘৃণ্য কিছু গনহত্যায় (বিডিআর বিদ্রোহ, ৫ই মে শাপলা চত্বর হত্যাকান্ড) সশস্ত্র ভারতীয় সৈনিকের অংশগ্রহণের মত কথাও। বাংলাদেশকে যদি আক্রমণাত্মক নেহরু ডকট্রিনের বিরুদ্ধে টিকে থাকতে হয় তবে বাংলাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান রিসার্চ ইনস্টিটিউট থাকতে হবে। যেখানে পড়ানো হবে ভারতীয় সংস্কৃতি, ধর্ম ও রাজনীতি। বাংলাদেশের গোয়েন্দা কাজে নিয়োজিত সংস্থাগুলোকে উন্নত করতে হবে এবং ‘র’ সদস্যদের কর্মতৎপরতার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। তাদের স্বরূপ জনগণের সামনে উন্মোচন করতে হবে। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগকে সমর্থন করে পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু আস্থার সঙ্গে সহকর্মীদের বলেছিলেন,পশ্চিম পাকিস্তান স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে টিকলেও টিকতে পারে, কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) টেকার কোনো সম্ভাবনা নেই। নেহেরু ধারণা করেছিলেন,পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা এবং দুই প্রদেশের জনগণের সাংস্কৃতিক ভিন্নতার কারণে এক সময়ের পূর্ববঙ্গ বাংলা ভাষাভাষী পশ্চিমবঙ্গের মাঝে মিলিত হয়ে বৃহৎ ভারতে বিলীন হয়ে যাবে।


কিন্তু আল্লাহর অশপষ রহমতে ২০২৪ বিপ্লবের শহীদদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের বাংলাদেশ ভারতের আগ্রাসন হতে রক্ষা পেয়েছে। 


জুনাগরের পরাধীনতার ইতিহাসঃ

১৭৪৮ খ্রিষ্টাব্দে জুনাগড়ের ফৌজদার মহম্মদ বাহাদুর খানজী মুঘল শাসনকর্তাকে জুনাগড় থেকে বিতাড়িত করে স্বাধীনতা ঘোষণা করে নবাব উপাধি ধারণ করেন ও জুনাগড় রাজ্যে বাবি রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। তার পুত্র প্রথম মহম্মদ মহবত খানজী ১৭৫৮ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেন কিন্তু দুই বছরের মধ্যে তার মাতুল মুজফফর খানজী তাকে সিংহাসনচ্যূত করে বন্দী করেন। ১৭৬২ খ্রিষ্টাব্দে রাধনপুর রাজ্যের নবাব জওয়ান মর্দ খান মুজফফর খানজীকে পরাজিত করে জুনাগড় রাজ্যকে নিজের রাজ্যভুক্ত করলে প্রথম মহম্মদ মহবত খানজী কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে পুনরায় সিংহাসন লাভ করেন।

এই রাজবংশের ষষ্ঠ নবাব দ্বিতীয় মহম্মদ বাহাদুর খানজীর শাসনকালে ১৮১২ খ্রিষ্টাব্দে ঊমর মুখসম নামক আনন্দ রাও গায়কওয়াড়ের একজন কর্মী দ্বিতীয় মহম্মদ বাহাদুর খানজীর সাথে চুক্তি করে তার নিকট হতে অমরেলি, কোডিনর, দামনগর ও শিয়ানগরের কিছু অংশ বরোদা রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। পরবর্তীকালে ঊমর মুখসম নবাবের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করলে নবাব ব্রিটিশদের সাহায্য প্রার্থনা করেন। ১৮১৬ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশরা তাকে ঊমর মুখসমকে জুনাগড় থেকে বিতাড়ণ করেন। ১৮২২ খ্রিষ্টাব্দে নবাব প্রত্যক্ষ ভাবে কর সংগ্রহের অধিকার ত্যাগ করেন ও ব্রিটিশদের মাধ্যমেই কর সংগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন।

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই জুলাই ভারতীয় স্বাধীনতা অধিনিয়ম ১৯৪৭ পাশ হলে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুইটি রাষ্ট্রের জন্মের সিদ্ধান্তের পাশাপাশি দেশীয় রাজ্যগুলিকে এই দুই রাষ্ট্রে যোগ দেওয়া বা স্বাধীন থাকার মধ্যে একটি পথ বেছে নেওয়ার কথা বলা হয়।[১] রাজ্যের একাদশ নবাব তৃতীয় মহম্মদ মহবত খানজী ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই সেপ্টেম্বর পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে তার রাজ্যকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করেন। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জুনাগড় রাজ্যে সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা নেওয়া হলে তিনি ২৪শে অক্টোবর সপরিবারে পাকিস্তান চলে যান। ঐ বছর ৯ই নভেম্বর ভারতীয় আধিকারিকেরা জুনাগড় পৌঁছে রাজ্যের প্রশাসনিক দায়িত্বভার গ্রহণ করলে নবাবী শাসনের বিলোপ ঘটে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে!

  দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে! এক.   শুনতে খারাপ শোনালেও এটা সত্য, রবীন্দ্রনাথের...