expr:class='"loading" + data:blog.mobileClass'>

Wikipedia

সার্চ ফলাফল

মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২৫

কওমী ও দেওবন্ধীদের পথ ভ্রষ্টতা,(অপারেশন ব্ল্যাক নাইফ)

 "কওমী ও দেওবন্ধীদের পথ ভ্রষ্টতা,(অপারেশন ব্ল্যাক নাইফ)

কওমী-দেওবন্ধীদের পথ ভ্রষ্টতা 

আজ আপনাদের দেখাব কওমী ও দেওবন্ধীদের কোন পথ ভ্রষ্টতার কারনে, কিভাবে আজও ভারতের মুসলমানরা এত নির্যাতিত হচ্ছে।

১। ভারত বর্ষের স্বাধীনতার পূর্বক্ষনে যখন মুসলিম নেতারা দেখল যে ভারতীয় কংগ্রেসের নিকট মুসলমানদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হচ্ছে এবং হিন্দুরা আমাদের বোকা বানাচ্ছে তখন সকল মুসলমান স্কলার মুসলিম লীগ গঠন করে এবং মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র দাবী করে পাকিস্তান আন্দোলন শুরু করে। যদিও প্রথমেই অনেক আলেম পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থা অনুমান করতে পেরেছিল আর তাই পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরোধীতা করেছিল কিন্তু পরবর্তীতে বৃহৎ স্বার্থের কথা ভেবে মুটামুটি সকল আলেম (একমাত্র দেওবন্দ বাদে) আপাতত পাকিস্তান আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেন কিন্তু দেওবন্দ আলেমরা মুসলিম লীগে যোগদান না করে গান্ধী জী, বল্লভ ভাই পাতিল প্রমুখদের সাথে হিন্দু নেতৃত্বের জোট কংগ্রেসে যোগদান করে অখন্ড ভারত মাতার আন্দোলনে কাজ শুরু করে।

২। বরং তৎকালে যেসকল মুসলিম নেতারা পাকিস্তান আন্দোলনের পক্ষে কথা বলত তাদেরকে মানুষের নিকট বিভিন্ন ফতোয়া বানে জর্জরিত করে মুসলমানদের বিরাট একটা অংশকে বিভ্রান্ত করে ফেলে।( প্রমানের লিংক নিচে দেয়া হবে)

৩। যদিও এখনও দেওবন্দ ও তার সারগেদরা বলে যে তারা বস্তুবাদী রাজনীতি করে না আদতে তারা এখনো হিন্দুদের নেতৃতত্বের কংগ্রেস রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন বটে, এটানল কোন ধরনের কৌশননতারা কি বলতে পারবে?

৩। ঐ দিন যদি এই ওলামায়ে দেওবন্দ অখন্ড ভারত মাতা নামক মিথ্যা, জোৎচুরি ও কুফুরী আন্দোলনের পক্ষে কাজ না করত তাইলে হয়তো মুসলমানরা আরো বড় স্বাধীন ভুমি ব্রিটিশদের হতে নিজেদের জন্য আদায় করতে পারত এবং আরো বেশী মুসলমান নিরাপদ দেশ পেত আর আজকে বিজেপি'র এত অত্যাচার সহ্য করতে হত না।

৪। ভারতে আজ লক্ষ লক্ষ মুসলমান হিন্দুদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছে কিন্তু এর বিরুদ্ধে ওলামায়ে দেওবন্দের অদ্যবধি কোন বক্তব্য আমরা এমনকি ভারতের মুসলমানরাও শোনতে পায়নি। ভারত এখন সরাসরি প্যালেস্টাইনের বিপক্ষে িহুদিদপর সাহায্য করছে, কিন্তু দেওবন্ধ চুপ।

৫। গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের সময় এক হিন্দু দাঙ্গা কালীন সময়ে এক মুসলমানের হাতে মারা যায়, আর এই সুযোগে গান্ধীজি সুকৌশলে উগ্র হিন্দুদেরকে মুসলমানদের উপর লেলিয়ে দেয়,  আর হিন্দুরা বর্তমানে বিজেপির মত মুসলমানদের কচুকাটা শুরু করে কিন্তু তখনও ওলামায়ে দেওবন্দ এ জুলুমের প্রতিবাদ করে নি বরং কংগ্রেসের সাথে থেকে দিল্লীর মসজিদের ইমাম অখন্ড ভারতের দোহাই দিয়ে হিন্দু-মুসলিম একজাতি তত্ব নামক কুফুরী মতবাদের পক্ষে জুমার খুতবায় বক্তব্য দেয়।

৬। এখন আসেন গুজরাটের দাঙ্গার ব্যাপারে, ঐ দাঙ্গায় হাজার হাজার মুসলমানকে পুড়িয়ে মারলো, কিন্তু এদের জন্য প্রতিবাদ তো দূরের কথা, মায়া কান্নাটুকুও দেওবন্দ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।

৭। ভারতে এন.আর.সি ও নাগরিকত্ব আইনে  মুসলমানদের বাস্তু চ্যুত করার ব্যবস্থা করেছে, কিন্তু এ ব্যাপারেও তাদের কোন স্পষ্ট বক্তব্য আমরা শোনতে পাই নি।

৮। সম্প্রীতি ভারতে হিজাব আন্দোলন নিয়েও ওলামায়ে দেওবন্দ কোন প্রতিনাদ করেন নি।

৯।  কাশ্মীরের উপর ভারত সরকার এমন কোন অত্যাচার নাই যে করে না, কাশ্মীরের সবাই মুসলমান হলেও ওলামায়ে দেওবন্দ তাদের জন্য একটি প্রতিবাদী বক্তব্যও প্রদান করে নি।

১০। বর্তমানে ভারতে অসম প্রদেশের প্রাদেশিক সরকার গরু জবাই নিষিদ্ধ সহ মুসলমানদের বাংলাদেশী আখ্যা দিয়ে বাস্তুহারা করছে, কিন্তু এ ব্যাপারে দেওবন্দের ওলামাদের কোন প্রতিবাদ দূরে থাক বক্তব্য টুকুও দেয় নাই।

১১। যারা ইতিহাস পড়েন তারা জানেন যে ১৯৪৮ সালে ভারত মুসলমানদের স্বাধীন ও স্বার্বভৌম হায়দারাবাদ রাষ্ট্র হঠাৎ করে দখল করে নেয়। ঐদিন ৪০,০০০(চল্লিশ হাজার) মুসলমানকে মেরে ভারতীয় হানাদার বাহিনী হায়দরাবাদের নদীতে ফেলে দিয়েছিল(প্রমান দেখুন আমার লেখা ”উপ মহাদেশে হিন্দু ধর্মের ভীতিকর ইতিহাস ও আধুনিক ভারতের সম্রাজ্যবাদীতা”)। যাদের মেরেছিল তাদের সবাই মুসলমান ও এই দেওবন্দীদের চোখে জল আসে নি, বরং ঐ খুনী কংগ্রেস সরকারের সাথে বহাল তবিয়্যতেই কংগ্রেসের অংগ সংগঠন হিসেবে চুপ ছিল, আজও আছে।( আমার লেখা "  উপমহাদেশে হিন্দু ধর্মের ভীতিকর ইতিহাস ও আধুনিক ভারতের সম্রাজ্যবাদিতা, ৬ষ্ঠ পর্ব নেটে সার্চ দিয়ে পড়লে ডকুমেন্টারী সহ দেখতে পাবেন, কমেন্টে লিংক দেব)।


১২। জুনাগর ও আলীগড় নামেও দুটি মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ স্বাধীন দেশ ভারত জোর পূর্বক দখল করে নিয়েছে কংগ্রেসের নেতৃত্বে, আর তখনো ঐ কংগ্রেসে অংগ সংগঠনই ছিল এই ওলামায়ে দেওবন্দ।


১৩। বর্তমান বিশ্বের সর্বজন স্বীকৃত ইসলামী স্কলার ডা. জাকির নায়েককে ভারত সরকার সম্পূর্ন অন্যায় ভাবে দেশ ছাড়া করে তার সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে, তিনি মুসলমান হলেও তার উপর করা অত্যাচারের প্রতিবাদতো দূরে থাক বরং ডা. নায়েককে আলেম নয়, ইহুদির দালাল ইত্যাদি কুফুরী ফতোয়া দিয়ে তাকে বিতর্কীত করার চেষ্টা করেছে এই দেওবন্দী আলেমগন।


১৪। এই দেওন্ধীদের দল কংগ্রেস বাবরীর মসজিদ ভাংলো, আবার মসজিদের জায়গায় মান্দির করলো, এই বিষয়ে দেওবন্ধী আলেমরা চুপ কেনো?


১৫। ২০০৯ সালে দেবন্ধ মাদরাসায় হুসািন আহাম্মদ মাদানীর উপস্থিতিতে হিন্দু যোগী মুসলমান আলেম ছাত্রদের যোগ ব্যায়াম শিখালো, এখন প্রশ্ন হলো যোগ ব্যায়াম কি ইসলামে বৈধ? এটাতো হিন্দুদের তপস্যার আসন।

আকীদা গত সমস্যাঃ

৪. “আল্লাহর নবীর নিকট নিজের পরিণতি এবং দেয়ালের পেছনের জ্ঞানও নেই।”

[বারাহীন-ই ক্বাতি‘আহ্,পৃষ্ঠা ৫১,কৃত: খলীল আহমদ আম্বেটভী দেওবন্দী]


৫. “হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ্ তা‘আলা তেমনি জ্ঞান দান করেছেন,যেমন জ্ঞান জানোয়ার,পাগল এবং শিশুদের নিকটও রয়েছে।”

[হিফযুল ঈমান,পৃষ্ঠা ৭,কৃত: মৌং আশ্রাফ আলী থানভী দেওবন্দী]।

৬. “নামাযে হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি শুধু খেয়াল যাওয়া গরু-গাধার খেয়ালে ডুবে যাওয়া অপেক্ষাও মন্দতর।”

[সেরাতে মুস্তাক্বীম,পৃষ্ঠা ৮৬,কৃত: মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]।


৭. “‘রাহমাতুল্লিল ‘আলামীন’ (সমস্ত বিশ্বের জন্য রহমত) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এঁর খাস উপাধি নয়।হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া অন্যান্য বুযুর্গকেও ‘রাহমাতুল্লিল ‘আলামীন’ বলা যেতে পারে।”

[ফাতাওয়া-ই রশীদিয়া,২য় খণ্ড,পৃষ্ঠা-১২, কৃত মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গূহী দেওবন্দী]।


৮. “‘খাতামুন্নবিয়্যীন’ অর্থ ‘আখেরী বা শেষনবী’ বুঝে নেওয়া সাধারণ লোকদের খেয়াল মাত্র।জ্ঞানী লোকদের মতে এ অর্থ বিশুদ্ধ নয়।হুযূর আক্রামের যুগের পরও যদি কোন নবী পয়দা হয়, তবে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ নবী হওয়ায় কোন ক্ষতি হবে না।”

[তাহযীরুন্নাস,পৃষ্ঠা ৩ ও ২৫, কৃত দারুল উলূম দেওবন্দ মাদরাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মৌং কাসেম নানুতভী]।


৯. “হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেওবন্দের আলেমদের সাথে সম্পর্কের সুবাদে উর্দূ শিখতে পেরেছেন।”

[বারাহীন-ই ক্বাতি‘আহ্, পৃষ্ঠা ২৬,কৃত: মৌং খলীল আহমদ আম্বেটভী দেওবন্দী]।


১০. “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এঁর সম্মান শুধু বড় ভাইয়ের মতই করা চাই।”

[তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান,পৃষ্ঠা ৫৮,কৃত: মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী] ১১. “আল্লাহ্ তা‘আলা ইচ্ছা করলে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমকক্ষ কোটি কোটি পয়দা করতে পারেন।”


১১. আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করলে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমকক্ষ কোটি কোটি পয়দা করতে পারেন।

 [তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান,পৃষ্ঠা ১৬,কৃত: মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]।


১২. নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মরে মাটিতে মিশে গেছেন। [তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৫৯, কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী]।


১৩. “নবী-রসূল সবাই অকেজো।”

[তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান,পৃষ্ঠা ২৯,কৃত: মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী] 


১৪। নবী প্রতিটি মিথ্যা থেকে পবিত্র ও মাসুম হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।

[তাক্বভিয়াতুল আকাঈদ পৃষ্ঠা ২৫ কৃত মৌং কাসেম নানুতবী]।


১৫. “নবীর প্রশংসা শুধু মানুষের মতই কর; বরং তা অপেক্ষাও সংক্ষিপ্ত কর।”

[তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান,পৃষ্ঠা ৬১,কৃত: মৌং ইসমাঈল দেহলভী]


[১।তথ্য সূত্র: আনজুমান-ই রহমানিয়া আহমাদিয়া সুন্নিয়া ট্রাষ্ট,

২।মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা),

৩।(আবুল হাসান নাদভী, সীরাতে সাইয়েদ আহমাদ শহীদ এবং ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, আহলেহাদীছ আন্দোলন : উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষিতসহ,পিএইচ.ডি. থিথিস)।  ]

৪।[omarfaruk.home.blog]


১৬. “বড় অর্থাৎ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আর ছোট অর্থাৎ অন্যসব বান্দা বেখবর ও অজ্ঞ।”

[তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান,পৃষ্ঠা ৩,কৃত: মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]


১৭. “বড় মাখলূক অর্থাৎ নবী, আর ছোট মাখলূক অর্থাৎ অন্যসব বান্দা আল্লাহর শান বা মর্যাদার সামনে চামার অপেক্ষাও নিকৃষ্ট।”

[তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান,পৃষ্ঠা ১৪,কৃত: মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]


১৮. “নবীকে ‘তাগূত’ (শয়তান) বলা জায়েয।”

[তাফসীর-ই বুলগাতুল হায়রান, পৃষ্ঠা ৪৩, কৃত. মৌং হুসাইন আলী ওয়াঁভচরান ওয়ালা]


১৯. “নবীর মর্যাদা উম্মতের মধ্যে গ্রামের চৌধুরী ও জমিদারের মত।”

[তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান,পৃষ্ঠা ৬১,কৃত: মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]


২০. “যার নাম মুহাম্মদ কিংবা আলী তিনি কোন কিছুর ইখতিয়ার রাখেন না। নবী ও ওলী কিছুই করতে পারেন না।”

[তাক্ব্ভিয়াতুল ঈমান,পৃষ্ঠা ৪১,কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]


২১. “উম্মত বাহ্যিকভাবে আমলের মধ্যে নবী থেকেও বেড়ে যায়।”

[তাহযীরুন্নাস,পৃষ্ঠা ৫,কৃত: মৌং কাসেম নানুতভী]


২২. “দেওবন্দী মোল্লা হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পুলসেরাত হতে পতিত হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন।”

[তাফসীর-ই বুলগাতুল হায়রান,পৃষ্ঠা ৮, মৌং হুসাইন আলী]


২৩. “‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ আশরাফ আলী রসূলুল্লাহ্’ আর ‘আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা সায়্যিদিনা ওয়া নবীয়্যিনা আশরাফ আলী’ বলার মধ্যে সান্ত্বনা রয়েছে, কোন ক্ষতি নেই।”

[রিসালা-ই ইমদাদ,পৃষ্ঠা ৩৫,সফর – ১৩৩৬ হিজরি সংখ্যা


[১।তথ্য সূত্র: আনজুমান-ই রহমানিয়া আহমাদিয়া সুন্নিয়া ট্রাষ্ট,

২।মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা),

৩।(আবুল হাসান নাদভী, সীরাতে সাইয়েদ আহমাদ শহীদ এবং ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, আহলেহাদীছ আন্দোলন : উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষিতসহ,পিএইচ.ডি. থিথিস)।  

৪।[omarfaruk.home.blog]


এই পর্বে আপনাদের দেখাব কওমী ও দেওবন্ধীদের কোন পথ ভ্রষ্টতার কারনে কিভাবে আজও ভারতের মুসলমানরা এত নির্যাতিত হচ্ছে।


১। ভারত বর্ষের স্বাধীনতার পূর্বক্ষনে যখন মুসলিম নেতারা দেখল যে ভারতীয় কংগ্রেসের নিকট মুসলমানদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হচ্ছে এবং হিন্দুরা আমাদের বোকা বানাচ্ছে তখন সকল মুসলমান স্কলার মুসলিম লীগ গঠন করে এবং মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র দাবী করে পাকিস্তান আন্দোলন শুরু করে। যদিও প্রথমেই অনেক আলেম পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থা অনুমান করতে পেরেছিল আর তাই পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরোধীতা করেছিল কিন্তু পরবর্তীতে বৃহৎ স্বার্থের কথা ভেবে মুটামুটি সকল আলেম (একমাত্র দেওবন্দ বাদে) আপাতত পাকিস্তান আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেন কিন্তু দেওবন্দ আলেমরা মুসলিম লীগে যোগদান না করে গান্ধী জী, বল্লভ ভাই পাতিল প্রমুখদের সাথে হিন্দু নেতৃত্বের জোট কংগ্রেসে যোগদান করে অখন্ড ভারত মাতার আন্দোলনে কাজ শুরু করে।


২। বরং তৎকালে যেসকল মুসলিম নেতারা পাকিস্তান আন্দোলনের পক্ষে কথা বলত তাদেরকে মানুষের নিকট বিভিন্ন ফতোয়া বানে জর্জরিত করে মুসলমানদের বিরাট একটা অংশকে বিভ্রান্ত করে ফেলে।( প্রমানের লিংক নিচে দেয়া হবে)


৩। যদিও এখনও দেওবন্দ ও তার সারগেদরা বলে যে তারা বস্তুবাদী রাজনীতি করে না আদতে তারা এখনো হিন্দুদের নেতৃতত্বের কংগ্রেস রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন বটে, এটানল কোন ধরনের কৌশননতারা কি বলতে পারবে?


৩। ঐ দিন যদি এই ওলামায়ে দেওবন্দ অখন্ড ভারত মাতা নামক মিথ্যা, জোৎচুরি ও কুফুরী আন্দোলনের পক্ষে কাজ না করত তাইলে হয়তো মুসলমানরা আরো বড় স্বাধীন ভুমি ব্রিটিশদের হতে নিজেদের জন্য আদায় করতে পারত এবং আরো বেশী মুসলমান নিরাপদ দেশ পেত আর আজকে বিজেপি'র এত অত্যাচার সহ্য করতে হত না।


৪। ভারতে আজ লক্ষ লক্ষ মুসলমান হিন্দুদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছে কিন্তু এর বিরুদ্ধে ওলামায়ে দেওবন্দের অদ্যবধি কোন বক্তব্য আমরা এমনকি ভারতের মুসলমানরাও শোনতে পায়নি। ভারত এখন সরাসরি প্যালেস্টাইনের বিপক্ষে িহুদিদপর সাহায্য করছে, কিন্তু দেওবন্ধ চুপ।


৫। গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের সময় এক হিন্দু দাঙ্গা কালীন সময়ে এক মুসলমানের হাতে মারা যায়, আর এই সুযোগে গান্ধীজি সুকৌশলে উগ্র হিন্দুদেরকে মুসলমানদের উপর লেলিয়ে দেয়,  আর হিন্দুরা বর্তমানে বিজেপির মত মুসলমানদের কচুকাটা শুরু করে কিন্তু তখনও ওলামায়ে দেওবন্দ এ জুলুমের প্রতিবাদ করে নি বরং কংগ্রেসের সাথে থেকে দিল্লীর মসজিদের ইমাম অখন্ড ভারতের দোহাই দিয়ে হিন্দু-মুসলিম একজাতি তত্ব নামক কুফুরী মতবাদের পক্ষে জুমার খুতবায় বক্তব্য দেয়।


৬। এখন আসেন গুজরাটের দাঙ্গার ব্যাপারে, ঐ দাঙ্গায় হাজার হাজার মুসলমানকে পুড়িয়ে মারলো, কিন্তু এদের জন্য প্রতিবাদ তো দূরের কথা, মায়া কান্নাটুকুও দেওবন্দ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।


৭। ভারতে এন.আর.সি ও নাগরিকত্ব আইনে  মুসলমানদের বাস্তু চ্যুত করার ব্যবস্থা করেছে, কিন্তু এ ব্যাপারেও তাদের কোন স্পষ্ট বক্তব্য আমরা শোনতে পাই নি।


৮। সম্প্রীতি ভারতে হিজাব আন্দোলন নিয়েও ওলামায়ে দেওবন্দ কোন প্রতিনাদ করেন নি।


৯।  কাশ্মীরের উপর ভারত সরকার এমন কোন অত্যাচার নাই যে করে না, কাশ্মীরের সবাই মুসলমান হলেও ওলামায়ে দেওবন্দ তাদের জন্য একটি প্রতিবাদী বক্তব্যও প্রদান করে নি।


১০। বর্তমানে ভারতে অসম প্রদেশের প্রাদেশিক সরকার গরু জবাই নিষিদ্ধ সহ মুসলমানদের বাংলাদেশী আখ্যা দিয়ে বাস্তুহারা করছে, কিন্তু এ ব্যাপারে দেওবন্দের ওলামাদের কোন প্রতিবাদ দূরে থাক বক্তব্য টুকুও দেয় নাই।


১১। যারা ইতিহাস পড়েন তারা জানেন যে ১৯৪৮ সালে ভারত মুসলমানদের স্বাধীন ও স্বার্বভৌম হায়দারাবাদ রাষ্ট্র হঠাৎ করে দখল করে নেয়। ঐদিন ৪০,০০০(চল্লিশ হাজার) মুসলমানকে মেরে ভারতীয় হানাদার বাহিনী হায়দরাবাদের নদীতে ফেলে দিয়েছিল(প্রমান দেখুন আমার লেখা ”উপ মহাদেশে হিন্দু ধর্মের ভীতিকর ইতিহাস ও আধুনিক ভারতের সম্রাজ্যবাদীতা, ১ম থেকে পর্ব ১৩”)। যাদের মেরেছিল তাদের সবাই মুসলমান হলেও এই দেওবন্দীদের চোখে জল আসে নি, বরং ঐ খুনী কংগ্রেস সরকারের সাথে বহাল তবিয়্যতেই কংগ্রেসের অংগ সংগঠন হিসেবে চুপ ছিল, আজও আছে।( আমার লেখা "  উপমহাদেশে হিন্দু ধর্মের ভীতিকর ইতিহাস ও আধুনিক ভারতের সম্রাজ্যবাদিতা, ৬ষ্ঠ পর্ব নেটে সার্চ দিয়ে পড়লে ডকুমেন্টারী সহ দেখতে পাবেন, কমেন্টে লিংক দেব)।


১২। জুনাগর ও আলীগড় নামেও দুটি মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ স্বাধীন দেশ ভারত জোর পূর্বক দখল করে নিয়েছে কংগ্রেসের নেতৃত্বে, আর তখনো ঐ কংগ্রেসে অংগ সংগঠনই ছিল এই ওলামায়ে দেওবন্দ।


১৩। বর্তমান বিশ্বের সর্বজন স্বীকৃত ইসলামী স্কলার ডা. জাকির নায়েককে ভারত সরকার সম্পূর্ন অন্যায় ভাবে দেশ ছাড়া করে তার সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে, তিনি মুসলমান হলেও তার উপর করা অত্যাচারের প্রতিবাদতো দূরে থাক বরং ডা. নায়েককে আলেম নয়, ইহুদির দালাল ইত্যাদি কুফুরী ফতোয়া দিয়ে তাকে বিতর্কীত করার চেষ্টা করেছে এই দেওবন্দী আলেমগন।


১৪। এই দেওন্ধীদের দল কংগ্রেস বাবরীর মসজিদ ভাংলো, আবার মসজিদের জায়গায় মান্দির করলো, এই বিষয়ে দেওবন্ধী আলেমরা চুপ কেনো?


১৫। ২০০৯ সালে দেবন্ধ মাদরাসায় হুসািন আহাম্মদ মাদানীর উপস্থিতিতে হিন্দু যোগী মুসলমান আলেম ছাত্রদের যোগ ব্যায়াম শিখালো, এখন প্রশ্ন হলো যোগ ব্যায়াম কি ইসলামে বৈধ? এটাতো হিন্দুদের তপস্যার আসন।

আগের পর্ব গুলোতে আমি আপনাদের শুরু হতে অদ্যবদি ভারতের মাটিতে দেওবন্দের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত বর্ননা করেছি।

এই পর্বে চেষ্টা করব যে দেওবন্দের পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ অংশে তাদের কর্ম তৎপরতা কেমন তা জানাতে।

আমি দেওবন্দি আলেম দের কিছু কিছু দোষ সংশোধনের উদ্দেশ্যে মুসলমানদের সামনে তুলে ধরছি, এর মানে এই নয় যে আমি ইসলামী শিক্ষা বা দেওবন্দের ঘোর বিরোধী। আবার এমনটাও না যে দেওবন্দী আলেমদের সবাই খারাপ, বরং অনেক ভাল মানুষও আছে।


বাংলাদেশে তথা তদানীন্ত পূর্ব পাকিস্তানে এই দেওবন্দিদের শাখা বা প্রতিনিধিরা হল কওমীওয়ালা বা কওমী এবং বর্তমানে হেফাজতে ইসলাম।


এখন দেখি ইসলাম এর জন্য কওমীওয়ালারা বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডে কি কি ভুমিকা রেখেছে।


১। ১৯৪৭ থেকে ২০২২ পর্যন্ত কওমীদের ইতিহাস ঘাটলে কখনোই খোঁজে পাবেন না যে কওমীরা সম্মিলিত ভাবে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কিংবা ইসলামের জন্য এমন কোন ভুমিকা রেখেছে।২০১৪ সাল ও তৎপরবর্তী কর্মকান্ড আলাদা প্রেক্ষিতে, তাও শেষের অংশে বলব।


২। আমরা জানি যে ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল, এতে দেশের আপামর জনতা যোগ দিলেও ইতিহাস ঘেটে কওমী ওয়ালাদের কোন সম্মিলিত ভুমিকা দেখা যায় না।


৩। ১৯৬৬ এর আন্দোলনেও তাদের কোন ভুমিকা আমরা ইতিহাসে পাইনা।


৪। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তি যোদ্ধে কওমীওয়ালাদের কোন জোড়ালো ভুমিকা বা সম্মিলিত কোন কর্মকান্ডের ইতিহাস খোঁজে পাওয়া যায় না। বরং এই যোদ্ধে তারা চুপ থেকে নিজেদের পীঠ বাঁচিয়েছিল।


৫।এবার দেখুন বঙ্গ বন্ধুর স্বপরিবারে হত্যাকান্ড, আঃসত্তার সাহেবের ক্ষমতা দখল, মেজর জিয়ার সিপাহী বিপ্লব, এরশাদের স্বৈর শাসন ইত্যাদি কোন বিষয়েই তাদের কোন ভূমিকা নেই।


৬। কওমীরা কখনোই এদেশের মাটিতে কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করেনি আর করবেও না। বরং ইসলামের অন্যান্য এদেশীয় দল ও কওম গুলোকে বিভিন্ন ফতোয়া বানে জর্জরিত করার মাধ্যমে জনগনকে বিভ্রন্তি ছাড়া আর কিছুই দেয় নি।


৭। কওমীদের দেখলে বুঝতে পারবেন যে তারা কখনোই ইসলামী ঐক্যের জন্য প্রচেষ্টা করেনি বরং যখনই ঐক্যের কথা হলেই বিভিন্ন আকিদার ফতোয়া দিয়ে ঐক্যকে প্রতিহত করে পেছনে ইসলাম বিদ্বেষী দলকে প্রকাশ্যে ও গোপনে সাহায্য করেছে(প্রমান ২০০৮ সালে নির্বাচনে তাদের অবস্থান)।


"কওমী ও দেওবন্ধীদের পথ ভ্রষ্টতা (অপারেশন ব্ল্যাক নাইফ) পর্ব-৬"


এ পর্বে হাক্বানী দাবীদার ও হক্বের ডিলার ব*ল*দ*কা*র বাহিনীর হাক্বানী সাইনবোর্ডের আড়ালে পথ ভ্রষ্টতা ও ফেরজায়ে বাতেলার যে চর্চাকারী তা প্রমান করব।


এ পর্যায়ে এই শিশু ব*ল*দ*কা*র কারী কওৃীদের সবচেয়ে জনপ্রিয় পীরের কিছু কুফুরী আকিদার প্রৃান দেব এবং পরবর্তীতে ক্রমান্বয়ে অন্যান্য পীরদেরও বর্ননা দপব। লেখাটি একটু দীর্ঘ হলেও প্রত্যাকটা লাইনে নতু নতুন তথ্য পাবেন।


আজ সহীহ আকিদা এবং চরমোনাই ও তাদের নিজেদের ঘোষনা মতে কুফুরী পীর দেওয়ানবাগীর কুফুরীর সাথে এই কওমীর হাক্বানী পীরের মিল দেখাব।


এ পর্বটি বুঝার জন্য একটি শব্দ চয়ন করব তা হল, অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীন। অপেক্ষাকৃত সহীহ এ কারণে বলছি যে আমার মতে বর্তমানে দুনিয়ায় কোথাও ১০০% ইসলাম যেখানে প্রতিষ্ঠিত নাই সেখানে শত ভাগ সহীহ ইসলামী দল নাও পেতে পারি, এটা একান্ত আমার ব্যক্তিগত মতামত।


দেওয়ানবাগীর পীর মৃত্যুবরণ করার সাথে সাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে নিয়ে তোলপার শুরু হয়েছিল। ইতিমধ্যে চরমোনাই পীর আকিদার দোহাই দিয়ে অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীন গুলোকে ভ্রান্ত আখ্যা দিয়ে বলেছে পৃথিবীর সবাই ঐ দল গুলোর সাথে ঐক্য করলেও চরমোনাই ঐক্য করবে না।  


এর প্রধান কারণ হল- অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীন গুলো কখনোই চরমোনাইর আকিদা লালন করে না। আমরাও জানি বাতিলশক্তি সঠিক ইকামতে দ্বীন গুলোকে ঠেকাতে অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীনের বিপক্ষে যত দলকে মাঠে নামিয়েছে তার প্রধান দল চরমোনাই। তাই অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীন সাথে চরমোনাই ঐক্য অসম্ভব বলা যেতেই পারে। 

যাইহোক, চরমোনাই যেহেতু আকিদার প্রশ্ন তুলেছে এবং আমাদের অনেক লোক ধারণা করে যে, এদেশে সবচেয়ে বড় ভণ্ডপীর দেওয়ানবাগী আর বড় হক্কানী পীর চরমোনাই; সেহেতু এ দুই পীরের কতিপয় আকিদা ও কারামতির সাথে অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীন আকিদা তুলে ধরা জরুরী মনে করছি। 


১। দেওয়ানবাগী:  

দেওয়ানবাগী পীর তার আকিদা পেশ করে বলেন, আপনারা যে মুর্শিদ ধরেছেন, আরশ মোকামে গিয়ে দেখবেন সেই (দেওয়ানবাগী) মুর্শিদই বসা। অর্থাৎ দেওয়ানবাগী পীরই আল্লাহ বা আল্লাহর সমকক্ষতা অর্জন করেছে। (নাউযূবিল্লাহ) 


চরমোনাই: 

চরমোনাই এই সমকক্ষতা অর্থাৎ "আনাল হক" আমি খোদা- হওয়ার ক্ষমতা বহু দিন আগেই অর্জন করেছেন। (আশেক মাশুক বা এস্কে এলাহী, পৃঃ ৪১-৪৩)

এছাড়াও চরমোনাই আল্লাহর নিকট থেকে জোরপূর্বক রূহ ছিনতাই করার ক্ষমতা অর্জন করেছেন। (ভেদের মারেফাত বা ইয়াদে খোদা পৃঃ ১৫) অর্থাৎ চরমোনাই আকিদা হল- শক্তির দিক দিয়ে চর্মনাই আল্লাহরও এক ধাপ উপরে। আল্লাহকে চর্মনাই পীরগং পরাজিত করতে সক্ষম (নাউযূবিল্লাহ)। 


অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীনের আকিদা হল-


ﻭَﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟِﻴُﻌْﺠِﺰَﻩُ ﻣِﻦْ ﺷَﻲْﺀٍ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﻟَﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ۚ ﺇِﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠِﻴﻤًﺎ ﻗَﺪِﻳﺮًﺍ.


আল্লাহ তো এমন নন যে, আসমান ও জমিনের কোন কিছু তাকে অক্ষম বা পরাজিত করে দেবে। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। (সূরা ফাতিরঃ৩৫/৪৪)।


অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীনের আকিদাও তাই।

.

২। দেওয়ানবাগী:

 দেওয়ানবাগী পীর সরাসরিভাবে আল্লাহর সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে কথাবার্তা বলার দাবী করে থাকে। 


চরমোনাই: 

চরমোনাই পীরেরা আল্লাহর সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করেই ক্ষান্ত হয় না বরং তারা আল্লাহর সাথে নাকি মিলন দেয় সেভাবে উত্তেজিত হয়ে, যেভাবে তারা স্ত্রী মিলনের সময় উত্তেজিত হয়। (নাউযূবিল্লাহ) (ভেদে মারেফাত বা ইয়াদে খোদা পৃঃ ৬৯)


অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীনের আকিদা হল- 

مَا لَهُمْ بِهِ مِنْ عِلْمٍ وَلَا لِآبَائِهِمْ ۚ كَبُرَتْ كَلِمَةً تَخْرُجُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ ۚ إِنْ يَقُولُونَ إِلَّا كَذِبًا.

এ ব্যাপারে তাদের কোন জ্ঞান নেই এবং তাদের পিতৃপুরুষদেরও না। বড় মারাত্মক কথা, যা তাদের মুখ থেকে বের হয়। মিথ্যা ছাড়া তারা কিছুই বলে না! (সূরা কাহ্ফঃ১৮/৫)।


অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীন আরো বিশ্বাস করে,

سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُونَ.

তারা যা ব্যক্ত করে তোমার রব তা থেকে পবিত্র মহান, সম্মানের মালিক। (সূরা সাফফাতঃ৩৭/১৮০)।


অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীনের আকিদাও তাই।


৩।দেওয়ানবাগী: 

দেওয়ানবাগী পীরের আকিদা তিনি তার মুরীদের জন্য সুপারিশকারী।


চরমোনাই:

 চোরমনাই আকিদা হল- চরমোনাই পীর গং যাকে খুশী তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। এমন কি কাফন চোরকেও চরমোনাই পীরেরা জান্নাতে নিয়ে যেতে পারে। (ভেদে মারেফাত বা ইয়াদে খোদা পৃঃ ২৭-২৮) 


অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীন আকিদা হল: 


এ অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীন আকিদা বিশ্বাস সেটাই যেটি আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, 

وَاتَّقُوا يَوْمًا لَا تَجْزِي نَفْسٌ عَنْ نَفْسٍ شَيْئًا وَلَا يُقْبَلُ مِنْهَا شَفَاعَةٌ وَلَا يُؤْخَذُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلَا هُمْ يُنْصَرُونَ.


আর তোমরা সে দিনকে ভয় কর, যেদিন কেউ কারো কোন কাজে আসবে না। আর কারো পক্ষ থেকে কোন সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না এবং কারও কাছ থেকে কোন বিনিময় নেয়া হবে না। আর তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। (সূরা বাকারাঃ ২/৪৮) 


তবে আল্লাহ তা'য়ালা যাকে অনুমতি দিবেন, তিনি সুপারিশ করতে পারবেন। (বাকারাঃ ২/২৫৫)


৪।দেওয়ানবাগী:

দেওয়ানবাগী তার মুরীদদের জান্নাতে নেওয়ার লোভ দেখালেও কিয়ামতের ময়দানে বড় বড় জাহাজে করে তার মুরীদদের জান্নাতে নেওয়ার আকিদা তার দরবারে প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।


 চরমোনাই: 

চোরমোনাই আকিদা হল- কিয়ামতের ময়দানে কঠিন মসিবতের সময় যখন নবী রাসূলগণ পর্যন্ত নাফসি নাফসি বলতে থাকবে তখন চরমোনাইর পীরেরা বড় বড় জাহাজে করে মুরীদদের জান্নাতে নিয়ে যাবে। 


 অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীন আকিদা হল: 


এ বিষয়ে অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীনের পরিষ্কার আকিদা বিশ্বাস সেটাই যা কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,

 

أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللَّهُ الَّذِينَ جَاهَدُوا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِينَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ ۖ مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّىٰ يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَىٰ نَصْرُ اللَّهِ ۗ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ.


তোমরা কি মনে করেছ যে, তোমরা এমনি এমনি (যেমন- পীর ধরে জাহাজে চড়ে) জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ এখনো তোমাদের নিকট তাদের মত কিছু আসেনি, যারা তোমাদের পূর্বে বিগত হয়েছে। তাদেরকে স্পর্শ করেছিল কষ্ট-নির্যাতন ও দুঃখ-দুর্দশা এবং তারা (জালিমের নির্যাতনে) কম্পিত হয়েছিল। এমনকি রাসূল ও তার সাথি মুমিনগণ বলছিল, ‘কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে’? জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী। (সূরা বাকারাঃ২/২১৪)


  সংক্ষিপ্ত আলোচনায়, এ কথা পরিষ্কার হয়েছে দেওয়ানবাগী চোরমনাই পীরদের সাথে অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীনের আকিদার অনেক তফাৎ রয়েছে। 


অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীন এসব ভণ্ডপীরের শিরকি ও কুফুরী আকিদা বিশ্বাস করা তো দূরের কথা বরং তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে এবং কুরআন সুন্নাহর আলোকে প্রতিষ্ঠিত আকিদা লালন করে। 


আজব ব্যাপার হল- যাদের আকিদা শিরক কুফুরীতে ভরা তারা অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীন গুলোর আকিদার বিরুদ্ধে কথা বলে। বস্তুত তারা অর্থের লোভে বাতিলশক্তির এজেন্ট হয়ে আল্লাহর দ্বীন বিজয়ের পথে বাধা দান করে। 


আল্লাহ তা'আলা তাদের ব্যাপারে মুমিনদের সতর্ক করে বলেন,


یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِنَّ كَثِیْرًا مِّنَ الْاَحْبَارِ وَ الرُّهْبَانِ لَیَاْكُلُوْنَ اَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ وَ یَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِیْلِ اللّٰهِ١ؕ وَ الَّذِیْنَ یَكْنِزُوْنَ الذَّهَبَ وَ الْفِضَّةَ وَ لَا یُنْفِقُوْنَهَا فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ١ۙ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِیْمٍۙ


হে ঈমানদারগণ! এ আহলে কিতাবদের অধিকাংশ আলেম ও দরবেশের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তারা মানুষের ধন-সম্পদ অন্যায় পদ্ধতিতে খায় এবং তাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে। যারা সোনা রূপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদেরকে যন্ত্রণাময় আযাবের সুখবর দাও।

(সূরাঃতাওবা, আয়াতঃ৩৪)।


অর্থাৎ এ জালেমরা শুধু ফতোয়া বিক্রি করে, ঘুষ খেয়ে এবং নজরানা লুটে নিয়েই ক্ষান্ত হয় না। এ সঙ্গে তারা এমন সব ধর্মীয় নিয়ম-কানুন ও রসম-রেওয়াজ উদ্ভাবন ও প্রবর্তন করে যেগুলোর সাহায্যে লোকেরা তাদের কাছ থেকে নিজেদের পরকালীন মুক্তি কিনে নেয়। তাদের উদর পূর্তি না করলে লোকের জীবন-মরণ বিয়ে-শাদী এবং আনন্দও বিষাদ কোন অবস্থাই অতিবাহিত হতে পারে না। তারা এদেরকে নিজেদের ভাগ্য ভঙ্গা-গড়ার একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী মনে করে। উপরন্তু নিজেরদের এমনসব স্বার্থ উদ্ধারের মতলব তারা আল্লাহর বান্দাদেরকে গোমরাহীতে লিপ্ত করে রাখে। যখনই কোন সত্যের দাওয়াত সমাজের সংশোধনের উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসে তখনই সবার আগে এরাই নিজেদের জ্ঞানীসুলভ প্রতারণা ও ধান্দাবাজীর অস্ত্র ব্যবহার করে তার পথ রোধ করে দাঁড়ায়।

আজ এই কওমে লূতের অভিশপ্ত সমকামী ও শিশু বলাদকার কারী এই চরিত্রহীন দেওবন্ধী ও কওমীদের চরিত্র যেন আজ সূরাহ তাওবার ৩৪ নং আয়াতের সাথে মিলে যাচ্ছে।




বাংলাদেশের ইসলাম ও আলেম সমাজ

 বাংলাদেশের ইসলাম ও আলেম সমাজ

ইসলাম ও আলেম সমাজ


বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আপনি কাউকে জিজ্ঞেস করেন, আলেম কাকে বলে?
শতকরা ৯৯ জন উত্তর দিবেন, আলেম মানে তো হুজুর,মাদরাসায় পড়ুয়া, মাথায় বড় পাগড়ী,লম্বা কোর্তা ওয়ালারাই আলেম!

বলা বাহুল্য উত্তরটি নিঃসন্দেহে ভুল! মাদ্রাসায় পড়লেন, দাঁড়ি টুপি পড়লেই কেউ আলেম হয়ে যান না। আলেম মানে হচ্ছে জ্ঞানী। যিনি কোন বিষয়ে সঠিক ও সুক্ষ জ্ঞান ধারন করেন তিনিই আলেম। তবে শব্দিক অর্থ দিয়ে আলেমের পরিচয় সম্ভব না, পারিভাষিক অর্থ দ্বারা আলেমের পরিচয় পাওয়া যায়। আলেম হবার জন্য কারো মাদ্রাসায় পড়া জরুরী নয়। ধার্মিক প্রেক্ষাপটে বিশেষ করে ইসলামি প্রেক্ষাপটে যে ব্যক্তি কোরআন, হাদীস, ইজমা,কিয়াস ও অন্যান্য বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হবেন এবং যিনি পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থার সাথে প্রচলিত দ্বীনের সঠিক সমন্বয় ঘটানোর ব্যাপারে নিজ অবস্থানকে যৌক্তিকভাবে প্রমান করতে পারবেন, তিনিই একজন ধর্মীয় আলেম।বর্তমানে আমাদের দেশে প্রকৃত কোন ধর্মীয় আলেম আছে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। অন্য ধর্মের কথা জানি না, তবে মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশে ইসলামিক আলেমদের সংখ্যা দিন দিন আশংকাজনক হারে কমে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যানে যে সকল তথাকথিত আলেম বিখ্যাত হয়েছেন বা শ্রোতা প্রিয়তা পেয়েছেন দুই একজন বাদ দিয়ে অধিকাংশই বিভিন্ন দল, আকীদা বা মতে বিভক্ত। সেই সাথে আছে আত্ম অহংকার, ক্ষমতার দাপট, একে অন্যের সাথে রেঁষারেষি ও গীবত। অথচ একজন প্রকৃত আলেম কখনই অহংকারী হবেন না। তিনি কখনই নিজের ক্ষমতার কথা, নিজের প্রভাবের কথা মানুষকে জোর গলায় জানাবেন না। কিন্তু আমরা ইউটিউব সহ বাস্তবে দেখেছি আমাদের বিখ্যাত সব আলেমরা কি পরিমান অহংকারী, গোঁয়ার, মূর্খ, অশালীন, অশ্লীল কথাবার্তায় পারদর্শী, ক্ষমতা প্রয়োগ করতে চায়, নিজ সুবিধার কারনে কোরআন হাদীস ব্যবহার করে। আমাদের দেশের মানুষ এই সব জেনে বুঝেও এদেরকে অনুসরন করে। কারন অলস বাংলাদেশী মুসলমানরা নিজে কোরআন হাদীস পড়বে না, বুঝবে না। তারা শটকার্ট প্রিয়। অন্যের লেজ না ধরলে আমরা সাহস পাই না। অবশ্য তাদেরকে ধন্যবাদ কারন এত লেজ ধরে টানাটানির কারনে অনেক কিছুই দৃশ্যমান হচ্ছে।

তবে ঢালাও ভাবে দায়ী কছি নাআলেম-উলামারাও মানুষ, তারা ফেরেশতা নন। সুতরাং তাদের দ্বারা অন্যায় হতে পারে না, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। সুতরাং আলেমদের থেকে কোনো অপরাধ প্রকাশ পেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এমতাবস্থায় অপরাধীকে আড়াল না করে তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো দরকার। এ কথা অনস্বীকার্য যে, আলেম সমাজ আমাদের সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এদেশে ইসলাম আবির্ভাবের সময় থেকেই কথিত আলেম সমাজের আবির্ভাব। এদেশে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই আলেম সমাজ সামাজিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
ব্রিটিশ আমলে প্রথম একশ বছর আলেম সমাজই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.)-এর প্রবর্তিত আন্দোলন, সৈয়দ আহমদ বেরেলভী (রহ.) ও শাহ ইসমাঈল (রহ.)-এর আন্দোলন, বাংলায় তিতুমীর (রহ.) ও হাজী শরিয়তুল্লাহ (রহ.) এর আন্দোলন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ধর্মীয়-সামাজিক ক্ষেত্রেও এসব আন্দোলন আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো। 

তবে ফেনীর সোনাগাজীতে একটি মাদ্রাসায় আগুনে পুড়িয়ে নুসরাত জাহান রাফিকে হত্যার ঘটনাপ্রবাহ চারটি বিষয় সামনে এনেছে: 
এক নারীর যৌন নিপীড়ন, মাদ্রাসার ভেতরে অধ্যক্ষের দ্বারা ছাত্রীর যৌন নিপীড়ন, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের দায়িত্বহীন ভূমিকা এবং স্থানীয় রাজনীতির কলুষিত বৃত্তচক্র যদিও অধ্যক্ষ পরে নির্দোষ প্রমানিত হয়েছে। এর প্রতিটি বিষয় আলাদাভাবে আমাদের মনোযোগ দাবি করে। সম্প্রতি দু’জন মাদরাসার শিক্ষককে একাধিক শিক্ষার্থী ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং অহরহ এরকম ঘটনা ঘটেই চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক অবস্থায় তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েচ্ছেন। তবে ইলিয়াস হোসেনের অনুসন্ধানে পরবর্তীতে আলেমরা নির্দোষ প্রমান হওয়ায় বুঝাই যাচ্ছে আলেমরাও বিশাল চক্রান্তের স্বীকার এবং এ চক্রান্তে আরেক দল আলেমই জড়িত।

জয়পুরহাট শহরের আরাম নগর হাফেজিয়া মাদ্রসার এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষক তার অপকর্মের খবর জানাজানি হওয়ার পর মাদ্রাসা বন্ধ করে পালিয়ে গেছেন। এগুলো নিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে সংগত কারণেই উদ্ব্যেগ ও আশঙ্কা আছে। সমাজের বড় একটি অংশের মধ্যে যদি মনুষত্বের চেয়ে পশুত্বের পরিমাণ বেশি দেখা যায়, তাহলে ওই সমাজের নাগরিকদের উদ্ব্যেগ উৎকণ্ঠা এমনিতেই বেড়ে যায়।

শীতকালে বাংলাদেশে ওয়াজ মাহফিল হয়। মানুষ ধর্মীয় নানা বিষয়ে জানতে পারেন, আলোচনা সভা হয়। এই ওয়াজ হচ্ছে গ্রামীন অঞ্চলে অন্যতম বিনোদন, ধর্মীয় দোহাই দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি।  ছোট ছোট শিশুরা ভিক্ষা করে টাকা আদায় করে মাহফিলের আয়োজন করে আর ওয়ায়েজিন সেই ভিক্ষার টাকা দিয়ে নিজের উদর পূর্তি করে, অথচ ইসলামের দাওয়াতের বিনিময়ে অর্থ গ্রহন সম্পূর্ণ হারাম,তার পরও কথিত মাহফিল ব্যবসায়ী আলেম গুলো এই হারাম ব্যবসাটাই চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে বর্তমানে ওয়াজের হট টপিক হচ্ছে - কোন হুজুর কি বলেছে, সেটার পক্ষে বিপক্ষে কথা বলা, অন্যের গীবত করা। 

দুই, আত্ম অহংকার করা, নিজের প্রচারনা করা, নিজের ক্ষমতা জাহির করা, কে কত ওয়াজ করেছেন, কিভাবে গিয়েছেন ইত্যাদি।

যে কয়টা ওয়াজে আমি গিয়েছে বা দেখেছি বা শুনেছি প্রায় সব ওয়াজের বক্তাদের কথা শুনলে মনে হয়- দেশে আন্তর্জাতিক চিৎকার প্রতিযোগিতা চলছে কিংবা তাদেরকে বলা হইছে ওয়ার ক্রাই বা প্রতিপক্ষের মনে ভয় ধরার জন্য যুদ্ধকালীন চিৎকার দেয়ার জন্য। ইয়া আল্লাহ! উনাদের কে বুঝাবে - ইসলাম শান্তির ধর্ম।

গত কয়েক বছর থেকে লক্ষ্য করে আসছি, আমাদের মাদ্রাসাগুলোতে শিশু নির্যাতন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ছেলে-মেয়ে কারো রক্ষা নাই। কয়েকদিন আগে এক শিশু বালককে যৌন নির্যাতনের কারনে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিলো।কিছুদিন আগে গাজীপুরের কালীগঞ্জে এক মাদ্রাসা শিক্ষকের থাকার কক্ষের ওয়ারড্রোব থেকে চার বছরের এক ছেলে শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আমরা কি কেউ বলতে পারি, শুধুমাত্র মাদ্রাসায় কেন শিশুকামী এই সব জানোয়ারদের দেখা যায়? কেন এই চুড়ান্ত ভয়াবহতা, বিকৃতি? এর জবাব অনেকেরই ভালো লাগবে না। দেশের অনেক মাদ্রাসা আছে যেখানে নুন্যতম মানবিক সুযোগ সুবিধা নাই। দরিদ্র এতিম বাচ্চাদের নিয়ে চলছে অমানবিকতার চুড়ান্ত। পড়া শিখানোর নামে, মুখস্ত করার নামে চলে ভয়াবহ শারিরীক নির্যাতন। এই সব নির্যাতনের কোন কোন পর্যায়ে তা রূপ নেয় পাশবিক যৌন নির্যাতনেও। যে প্রচন্ড মানসিক চাপে এই ছোট বাচ্চাগুলোর শৈশব কাটে তাতে বড় হয়ে তাদের মানসিক বিকৃতি ঘটা অস্বাভাবিক কিছু না। বরং সেটাই যৌক্তিক সম্ভবনা। মহিলা মাদরাসা গুলার অবস্থাআরো ভয়াবহ।এদের উপরে আমি একটা স্টাডি প্রকাশ করেছিলাম গত মার্চে, ওখানে মাদরাসার মেয়েদের উপর কি পরিমান নির্যাতন হয় তা দেখানো হয়েছে অপারেশন ব্ল্যাক নাইফ নামে। ইদানীং আবার মাদরাসার হিজাবী মেয়েরা বোরকার ফাঁকে দুটি হরিনীর চোখ দেখিয়ে বিভিন্ন আপত্তিকর ভঙ্গীতে ছবি ও ভিডিও আপলোড করে বলে একজন দ্বীনদার জীবন সঙ্গী চায়, কি আশ্চর্য!!!  এটা তো তার পরিবারের কাজ, ফেসবুক তো ইলুমিনাতি রুপের শয়তানদের তৈরী যা নারীদের ঘরের খবর মানুষের কাছে প্রকাশ করে দেয়। কত বড় দূরাবস্থার মাঝে বাংলাদেশের আলেম ও ইসলামি শিক্ষার বাস্তবতা।


দেশের আলেম-উলামা, মাদরাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমাম ও খানকার পীরদের প্রতি সাধারণ মানুষের অপরিসীম শ্রদ্ধা রয়েছে। আমিও তাদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রাখি। তারপরও কিছু লেবাসধারীদের শিশু নির্যাতন, স্ত্রী নির্যাতন ও যৌন হয়রানিসহ নানা অপরাধের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হন গোটা আলেম সমাজ। বলতেও লজ্জা লাগে, ভাবলেও ঘৃণা হয়। মাদরাসায় শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের বিষয়টি মোটেও নতুন নয়। যখন শুধু ছেলে মাদরাসা ছিল তখন অনেক ছেলে নির্যাতনের শিকার হতো আর এখন মেয়েরা দানবরূপী শিক্ষকের যৌন লালসার শিকার হচ্ছে। বিষয়টি খুবই লজ্জার ও ঘৃণার। যেহেতু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ জাতীয় কেলেঙ্কারির ঘটনা দিন দিন বাড়ছে, এটা থেকে পরিত্রাণের জন্য নেতৃস্থানীয় আলেমদের ভাবতে হবে। নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। এখনই এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়ে যাবে, ভরসার জায়গাটুকুও শেষ হয়ে যাবে।

আফসোসের বিষয়, এই বিকৃত অনাচার নিয়ে আমাদের হুজুররা বা আলেমরা তেমন সোচ্চার নন। আজকে আপনি অনুগ্রহ করে ইউটিউবে একটু সার্চ দিয়ে দেখবেন দেশের মাদ্রাসায় এই ধরনের ঘটনার ব্যাপারে কয়টি ওয়াজ পান, প্রকাশ্যে কে কি বলেছেন। আমি হয়ত খারাপ মানুষ, শয়তান ( এই লেখা পড়লে প্রিয় হুজুররা আমাকে হয়ত এই নামেই ডাকবেন) তাই হুজুরদের ভালো কথা খুঁজে পাই নি, খুঁজে পেয়েছি মাদ্রাসার সাথে বাংলা ও ইংলিশ মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে অসুস্থ তুলনা। আমাদের আলেমরা, আমাদের হুজুররা বাংলা বা ইংরেজি মাধ্যমের খারাপ দিক দিয়ে মাদ্রাসায় সংঘটিত ভয়াবহ অন্যায়ের তুলনা করে ভালো মন্দের বিচার করেন। অথচ একটা খারাপ বা অন্যায় দিয়ে আরেকটি খারাপ বা অন্যায় জাস্টিফাইড হয় না। এটাই প্রকৃত আলেম আর তথাকথিত আলেমদের মধ্যে পার্থক্য। আমি খুব আশাবাদী মানুষ, আমি বিশ্বাস করি, নিশ্চয় আমাদের কোন না কোন আলেম, এই বিষয়ে ওয়াজ করেছেন, কথা বলেছেন, কালোকে কালো আর সাদাকে সাদা বলতে তিনি কোন ভয় করেন নি, দ্বিধা করেন নি।


যাইহোক, যদি আপনি ধার্মিক হন, তাহলে মনে রাখবেন - যে জাতির আলেমরা মিথ্যে নিয়ে পড়ে আছে, গীবত নিয়ে পড়ে আছে, অহংকার করে, মিথ্যে অপব্যাখ্যা করে কোরান ও সুন্নাহের সেই জাতীর অবস্থা ভয়াবহ হতে যাচ্ছে। আর যদি অধার্মিক হন তাহলে মনে রাখবেন প্রকৃতির বিচার বলে একটা ব্যাপার আছে। এই বিচার খুবই সুক্ষ এবং ভয়াবহ!


আদিবাসী বাগদি নৃগোষ্ঠীর অজানা কথা

 বাংলাদেশের বাগদি নৃগোষ্ঠী 

বাগদি আদিবাসী

বাগদিরা হল আদিবাসী , যারা দ্রাবিড় লিঙ্কের লোকদের থেকে এসেছে , যারা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে পাওয়া যায় যারা চাষাবাদ এবং মাছ ধরার মতো পেশার সাথে যুক্ত ছিল। তারা দুলে বর্ণের সাথে সম্পর্কিত।  বাগদিরা পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম প্রান্তের বাঁকুড়া , বীরভূম এবং অন্যান্য জেলায় জনবহুল। দুলে সহ বাগদিরা পশ্চিমবঙ্গের সর্বাধিক অসংখ্য তফসিলি জাতির প্রতিনিধিত্ব করে। বাগদিরা নিজেদের ' বর্গা ক্ষত্রিয় ' বলে দাবি করে।

বাগদিদের ইতিহাস:
এদের সুস্পষ্ট ইতিহাস এখনো জানা যায় নি, তবে যতটুকু জানা যায় ভারতের জেএন ভট্টাচার্য বাগদিদের একটি আদিবাসী উপজাতি হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যারা জেলে, কাঠমিস্ত্রি এবং লিটার বাহক ছিলেন। বাগদিরা ব্রিটিশদের ফৌজদারি উপজাতি আইনের অধীনে বাংলার অপরাধী উপজাতি হিসেবেও পরিচিত ছিল।

বাগদি জনসংখ্যা ও স্বাক্ষরতা:
২০০১ সালের ভারতীয় আদমশুমারিতে পশ্চিমবঙ্গে বাগদিদের সংখ্যা ছিল 2,740,385 এবং তারা পশ্চিমবঙ্গের তফসিলি জাতি জনসংখ্যার 14.9 শতাংশ। বাগদিদের মধ্যে 47.7 শতাংশ শিক্ষিত - 60.4 শতাংশ পুরুষ এবং 34.8 শতাংশ মহিলা শিক্ষিত।

বাংলাদশ বাগদি উপজাতি:
বাংলাদেশের দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতেই সাধারণত এ সম্প্রদায়ের মানুষদের দেখা যায়। সমাজে অচ্ছুত বলে পরিচিত এ সম্প্রদায়ের মানুষ মাছ-কাঁকড়া-কুইচ্যা-কচ্ছপ-খরগোশ শিকার করে, ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান কুড়িয়ে চলে তাদের জীবন। বর্তমানে বিভিন্ন কারণে চরম অস্তিত্ব সংকটে রেয়েছে সম্প্রদায়টি।

অস্তিত্ব সংকট নিয়েও  ঝিনাইদহ, মাগুরা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট এলাকাতেই এখনো কিছু বাগদী জনপদ টিকে আছে।

সরেজমিনে জানা যায়, ঐতিহাসিক ভাবেই বাগদী জাতি জলাভূমি প্রতিবেশী এলাকায় বসতি গড়ে তুলেছিলো। বিল, বাওড়, নদীর কিনার, নালা ও খালের ধারেই জলাভূমি থেকে কুড়িয়ে পাওয়া সহায় সম্পদে গড়ে ওঠা সেই দুঃসাহসী স্বনির্ভর বাগদী আখ্যান এখন আর নেই। জীবন ধারণের জন্য নদি, বিল-হাওড়ে বা কৃষি খামারে নামতে গেলেই ঘটে বিপত্তি। বিল-বাওড় নদীর ইজারাদার কিম্বা খামারের মালিকের হাতে অনেক সময় হতে হয় শারীরিকভাবে নির্যাতিত।

এককালে বাগদীরাও নিজস্ব সর্বপ্রাণবাদী ধর্ম পালন করতেন কিন্তু বাঙালি হিন্দু সমাজের সাথে বসবাসের ফলে তারাও নিজস্ব ধর্ম থেকে বাধ্য হয়েছেন সনাতন হিন্দুধর্মে আত্তীকরণের। বাঙালি হিন্দু সমাজের কঠোর বর্ণপ্রথা বাগদীদের অচ্ছুত ও নিচুজাত বানিয়ে রেখেছে এখনো। এখনো বাগদীদের সাথে কথিত বর্ণহিন্দুর জলচল নেই।

আমন ধান কাটার পরই বাগদী সমাজও আপন জাতিগত আচাররীতিতে টানটান হয়ে ওঠে। বাঙালি কৃষকরা অগ্রহায়ণ থেকে পৌষের প্রথম দিকে বিল এলাকার আমন ধান কেটে ঘরে তুলেন। আমন মওসুমে বিল এলাকার দেশি আমন ধানের শীষ কেটে কেটে ইঁদুরেরা গর্তে নিয়ে যায়। আর তখন বাগদিরা ইন্দুরগাতি উৎসব পালন করে থাকে। কারণ এই ইঁদুরের গর্ত থেকে তারা ধান সংগ্রহ করে। কিন্তু বর্তমান সময়ে বাগদি সম্প্রদায়ের মধ্যে এই উৎসবে অনেকখানি ভাটা পড়েছে।

সমাজের মূল ধারার বাইরে থাকায় এ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় তেমন কোনো উন্নয়ন ঘটেনি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকার ভোগ করতেই এদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। অভিযোগ আছে, কয়েক বছর আগেও এ বাগদিরা কোন ধরনের সরকারি সাহায্য ভোগ করতে পারতো না। এমনকি তাদের ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়েও ভর্তির সুযোগ তেমনভাবে পেতো না।

এদিকে রয়েছে চিকিৎসা সংকট। এখনো এ সম্প্রদায়টি ঝাড়ফুঁকের ওপরই নির্রভশীল। এছাড়াও রয়েছে সুষ্ঠু পরিবেশের ঘাটতি। বাল্য বিবাহ যেন হরহামেশাই হচ্ছে। অপুষ্ট শিশুগুলোর দুরন্ত দৌড়ঝাঁপ আসলে বুঝতে দেয় না তাদের জীবন করুণ দিকটিকে। আর বয়স্কদের টিকে থাকার বিষয়টি আরো বেদনাদায়ক। এতোকিছুর পরও তাদেরকে ঘিরে নেই কোন সুষ্ঠু পরিকল্পনা।


কালের বিবর্তনে অনেকেই ভারতসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছে বাগদি সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী। এখন এই গ্রামে ১৫/১৬ টি বাগদি সম্প্রদায় পরিবারের বসবাস।  আমরা সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি তারা হিন্দু ধর্মের অনুসারী হলেও হিন্দুরাদের কাছে তাদের মূল্যায়ন সেইভাবে আসেনি। বাগদি সম্প্রদায়ের লোকেরা পূজাপার্বন সবই হিন্দুদের নিয়ম নীতিতেই করতে দেখে আসছি। আগে তারা সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা না পেলেও এখন কিছু কিছু সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে যেমন, প্রতিবন্ধি ভাতা, বসষ্কভাতা, গর্ভবতি ভাতা ইত্যাদি। তবে পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্টির দিকে সরকারি আরো সুযোগ সুবিধা পেলে তারা অস্তিত্ব সংকট থেকে মুক্তি পাবে।



পাহাড়ের কান্নার আসল কারন কি কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ?

 "কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প কি পাহাড়ের কান্না ও অসন্তেষের মূল কারন"

কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ 

পার্বত্য চট্টগ্রাম, ১৮৬০ সালে লর্ড ক্যানিংয়ের বাইশতম প্রশাসনিক আদেশক্রমে সৃষ্টি হয়। গভীর অরণ্যে ঢাকা পার্বত্য এলাকায় বেশিরভাগ বাসিন্দাই ছিলেন বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্গত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম। ষাটের দশকে পাকিস্তান সরকার এবং দাতা সংস্থা ইউসএইড (USAID) এর সহায়তায় শুরু হয় কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে একটি সমন্বিত প্রকল্পের মাধ্যমে জলবিদ্যুৎ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচকাজ এবং ড্রেনেজ সুবিধা পাওয়া যাবে। কিন্তু এই বাঁধ নির্মাণের সময় থেকেই শুরু হয় সমস্যা। বাঁধ তৈরির সময় ৬৫৫ বর্গ কিলোমিটারে এলাকা প্লাবিত হয়, যার মধ্যে ছিলো ২২ হাজার একর চাষাবাদযোগ্য জমি। পার্বত্য চট্টগ্রামে মোট চাষাবাদযোগ্য জমির যা প্রায় ৪০ শতাংশ। কাপ্তাই লেক নির্মাণে প্রায় ১৮ হাজার মানুষের ঘরবাড়ি বিলুপ্ত হয়েছে, প্রায় ১ লক্ষ মানুষকে তাদের আবাসভূমি থেকে সরে যেতে হয়েছে, যার মধ্যে ৭০ শতাংশই চাকমা জনপদের মানুষজন। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনপদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ, বিভিন্ন সময়ে সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যার বহিঃপ্রকাশ হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামকে মূলত কয়েকটি নদীর উপত্যকায় ভাগ করা যেতে পারে। এর মধ্যে আছে চেঙ্গি, মৈনি, কাসালং, রানখিয়াং আর সাঙ্গু নদী। সাঙ্গু বাদে বাকি সবগুলোই কর্ণফুলীর শাখা। একেকটি পাহাড়ঘেরা উপত্যকা ৩০-৮০ কিলোমিটার লম্বা আর ৩-১০ কিলোমিটার চওড়া। পাহাড়গুলোর উচ্চতা কোথাও কয়েকশ থেকে হাজার মিটারের কাছাকাছি। পাহাড়ঘেরা এই উপত্যকাগুলো কৃষিকাজের জন্য উপযুক্ত। এখানে আদিবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে জুমচাষের মাধ্যমে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।



কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ নির্মাণের প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯০৬ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে। ১৯২৩ সালে চালানো হয় জরিপ এবং বাঁধ নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখা হয়। ১৯৪৬ সালে পূর্ব বাংলায় নিযুক্ত ব্রিটিশ প্রকৌশলী ই.এ. মুর কাপ্তাইয়ের ৪০ মিটার ওজানে ‘বারকাল’ নামক স্থানে বাঁধ নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বেশ কয়েকবার স্থান পরিবর্তনের পর ১৯৫১ সালে প্রকৌশলী খাজা আজিমউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল বাঁধের স্থানটি চুড়ান্ত করে। এই বাঁধের কাজে সহায়তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার পাকিস্তানকে অর্থ সহায়তা দিতে রাজি হয়। বাঁধ নির্মাণে ঠিকাদার কোম্পানি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের ‘উটাহ ইন্ট্যারন্যাশনাল ইনকর্পোরেশন’ নামক প্রতিষ্ঠানকে। ১৯৫৭ সালের অক্টোবর মাসে বাঁধ নির্মাণের মূল কাজ শুরু হয়।

জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূল প্রক্রিয়াই হলো নদী কিংবা জলের গতিপথে বাঁধ দিয়ে প্রথমে পানি জমা করা হয়। এরপর জমা হওয়া বিপুল পরিমাণ পানিকে নির্দিষ্ট চ্যানেলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করা হয়। এতে জমা হওয়া পানির বিভব শক্তিকে কাজে লাগিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে পাওয়া যায় বিদ্যুৎ।

কাপ্তাই হ্রদ

কোনো ধরনের কার্বন নিঃসরণ না করেই পাওয়া যায় পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ। এই লক্ষ্যেই সব যাচাই বাছাই শেষে কাপ্তাইতে ৬৭০.৬৫ মিটার লম্বা আর ৪৫.৭ মিটার উঁচু বাঁধ দেওয়া হয়। এটি নির্মাণে মোট খরচ হয় ৪.৯ কোটি রুপি। ১৯৬২ সালের ৩০ মার্চ যখন এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রাথমিক কাজ শেষ হয়, তখন এর বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট ছিলো দুটি, প্রতিটির সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা ছিলো চল্লিশ মেগাওয়াট করে। তাই শুরুতে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ ছিলো ৮০ মেগাওয়াট। বর্তমানে এর ৫টি বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট এবং মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ ২৩০ মেগাওয়াট।

লেকের কারনে ভূমিহারানোর ইতিহাস:

বিশাল আকারের এই কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের সময় যে ১ লক্ষ মানুষকে তাদের আবাসভূমি থেকে সরানো হয়েছিলো তাদের সঠিক উপায়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি। নির্মাণের সময় নৃগোষ্ঠী অধিবাসীদের মতামতের তোয়াক্কা করা হয়নি। বিশাল এই কর্মযজ্ঞের পরে ১ লক্ষ মানুষের পুনর্বাসনের জন্য নেওয়া পুরো ব্যবস্থাটিই ছিলো ত্রুটিপূর্ণ। দাতা এবং কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের অধিবাসীদের জীবনযাত্রা এবং সংস্কৃতির ব্যাপারটিকে আমলে নেয়নি। নৃগোষ্ঠীর জীবনযাত্রাকে তাদের কাছে মনে হয়েছিলো ‘যাযাবর’ প্রকৃতির এবং পাহাড়ের এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ঘুরে ঘুরে জুম চাষ করে বেড়ায়। তবে একটু তলিয়ে দেখলে বোঝা যায় পাহাড়ি বা পাহাড়ের নৃগোষ্ঠী জুম চাষের একেকটি চক্র ছিলো সাত থেকে দশ বছরের, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা দশ থেকে পনের বছর পর্যন্ত হতে পারে। অর্থাৎ পাহাড়ের অধিবাসীরা সত্যিকার অর্থে মোটেও যাযাবর নয়। পাশাপাশি পাহাড়িদের একটা বড় অংশ জুম চাষ ছাড়াও নদী উপত্যকার উর্বর সমতল ভূমিতে কৃষিকাজ শুরু করেছিল। বাঁধ নির্মাণের পর বন্যায় পাহাড়ি জনপদের আবাসভূমির পাশাপাশি প্রায় চল্লিশ শতাংশ কৃষিকাজ উপযোগী ভূমিও তলিয়ে যায়। 

কিছু গবেষণা থেকে উঠে এসেছে, এক লক্ষ লোকের পুনর্বাসনের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ ছিলো না। প্রাথমিকভাবে যখন বাঁধের কাজ শুরু হয় তখন অনেক মানুষকেই কাসালং উপত্যকায় নিয়ে আসা হয়। সংরক্ষিত বনাঞ্চল সাফ করে সেখানে জমি তৈরি করে বসবাসের সুযোগ করে দেওয়া হয় বাস্তহারাদের। ১৯৬২ সালের বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার পর সেই এলাকাও প্লাবিত হয়। পাকিস্তান সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন এরপর জোরালোভাবে আর কখনোই পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়নি। 

এই উদ্যোগ না নিতে পারার পেছনেও আছে কিছু কারণ, এর মধ্যে একটি ছিলো অর্থনৈতিক সংকট। এই প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য যে পরিমাণ অর্থ ছাড় দেওয়া উচিত ছিলো, সরকার সেটি দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে তাদেরকে সমপরিমাণ উর্বর চাষাবাদযোগ্য জমি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল সেটিও রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। প্রথমত, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় এমন ভূমি সংকটের কারণে সমস্যা আরো ঘনীভূত হয়েছে। আবার অনেক পরিবারকেই নদী উপত্যকার উর্বর জমির বদলে দেওয়া হয়েছে পাহাড়ি অনুর্বর জমি। ব্রিটিশদের আসার পর থেকেই দীর্ঘদিন ধরেই পাহাড়ি জনপদ সমতলে কৃষিকাজে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলো। ফলে এই অনুর্বর জমি আপাতভাবে জীবনধারণের জন্য কোনো কাজেই আসছিলো না পাহাড়ী জনপদের। ন্যায্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ থেকেও বঞ্চিত ছিলো আদিবাসীরা। বাঁধ এলাকায় যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে তাদেরকে হেক্টরপ্রতি পাঁচশত থেকে সাতশত টাকা দেওয়া হয়েছে, যেখানে একই পরিমাণ উর্বর জমি কিনতে খরচ করতে হয় প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। 

বাঁধ নির্মাণের শুরু থেকেই পাহাড়ি নেতারা ছিলেন এর বিরুদ্ধে। তবে সরকার এবং বাঁধ নির্মাণকারী স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তাদেরকে বাঁধ নির্মাণের পরে পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছিল। পাশাপাশি এর মাধ্যমে এলাকার উন্নয়ন হবে বলেও বোঝানো হয়েছিল। তবে অনেক পরিবেশবিদ এবং বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে দিয়েছিলেন বাঁধ নির্মাণের পর বিশাল এলাকা প্লাবিত হয়ে পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। তাই বর্তমান বাঁধের আরো উজানে বিকল্প একটি স্থান বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রাস্তবও করা হয়েছিল। কিন্তু প্রস্তাবিত সেই স্থানটি ভারতের সীমান্তরেখার কাছাকাছি হওয়ায় রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কথা ভেবেই তা বাদ দেওয়া হয়েছিল।

পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্বপুরুষদের আবাসভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে প্রায় চল্লিশ হাজার চাকমা ভারতের অরুণাচল প্রদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়। অরুণাচলে আশ্রয় নেওয়া এই চাকমা শরণার্থীদের চিহ্নিত করা হয়েছে ‘পরিবেশগত কারণে সৃষ্ট শরণার্থী’ হিসেবে। অরুণাচল প্রদেশে আশ্রয় নেওয়া এই চাকমারা এখনো রাষ্ট্রহীন, ভারত কিংবা বাংলাদেশ কোনো দেশেরই নাগরিকত্ব নেই এই ভুক্তভোগীদের। 

কাপ্তাই হ্রদের কান্নার ইতিহাস:

পার্বত্য চট্টগ্রামের কথা জানলেও কত জনই বা জানে কাপ্তাই হ্রদের কথা? কত জনই বা অনুধাবন করে? কত জনই বা অনুভব করে কাপ্তাই হ্রদের কান্না!! বেশ তো বলেন উপজাতি উপজাতি? একবার ও কি ভেবে দেখেছেন উপজাতি বলার মধ্যে স্বার্থ কতটুকু? কখনও জানার চেষ্টা করেছেন এদের ইতিহাস কি? সংস্কৃতি কি? রাজনীতি কি? এরা কেন আজও সংগ্রাম করছে? এসব মাথায় কেন আসছেনা জানেন?

 একটা জাতির পিছনে যখন কোন নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করে তখন ওই জাতি মাথা খুড়ে দাড়ানোর একটু হলেও সাহস পায়। আর তাদের পিছনে যে শান্তিবাহিনী নামক নিরাপত্তা বাহিনী থাকছে বর্তমান সেনাবাহিনী শাসক ও সেটেলার বাঙালিরা এদের সন্ত্রাসী চাদাবাজঁ বলে ছাপিয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়। অথচ বলছে না যে ওরা কেন এইসব করছে?? আর আপনারাও ওইসব রহস্যময় গল্পশুনে জানার চেষ্টা গুলোকে উড়িয়ে দিয়েছেন শোষক শ্রেণীর বেড়াজালে। পার্বত্য ইতিহাের রাজনীতি সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে প্রথমেই চোখ রাখতে হবে কাপ্তাই হ্রদের দিকে। আচ্ছা আপনার মনে কি কোনদিন প্রশ্ন জাগেনি যে পাহাড়িরা কেন আজও কাপ্তাই হ্রদের দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলছে??? তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার কিসের লোভে কাপ্তাই হ্রদ তৈরি করেছিল??

সর্বপ্রথম হ্রদ সৃষ্টির জন্য রাঙামাটির সুবলং চিলাকধাঁক নামক জায়গায় বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাই অতপর বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও জায়গার অকার্যপূর্নতায় তা সরিয়ে কাপ্তাইয়ের দিকে আনা হয়। এর ফলে ১টি শহর, একটি জনপদ, রাজমহল, ১৮হাজার পরিবার, ১ লাখের অধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ও ইউতাহ ইন্টারন্যাশনাল ইনকর্পোরেট কোম্পানি উদ্যোগে ১৯৫৬ সালের দিকে বাধ নির্মাণ শুরু হয় এবং ১৯৬২ সালে বাধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়। হ্রদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যঃ
কাপ্তাই হ্রদে জলবিদ্যুৎ সৃষ্টি ছাড়াও আরো ছয়টি উদ্দেশ্যে নিয়ে এই হ্রদ সৃষ্টি করা হয়। 

তা
হল-
১. পাহাড়ের বনজ সম্পদ আহরণ
২. প্রত্যন্ত উপজেলার সাথে নৌ-
যোগাযোগ সৃষ্টি 

৩. মৎস্য চাষ ও প্রজনন
৪.পর্যটন শিল্পের বিকাশ
৫. কর্ণফুলির ভাটিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও
৬. কৃষি ও সেচ সুবিধা বৃদ্ধি।


উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন কতদুরঃ–
যে ছয়টি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে
কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টি করা হয়েছিল,
সেসব উদ্দেশ্য কতটুকুইবা বাস্তবায়ন
হয়েছে, সে প্রশ্ন সচেতন
রাঙামাটিবাসীর।


বিদ্যুৎ উৎপাদনে গত ৫৩ বছরেও অর্জন করেনি ওই সকল লক্ষ্যমাত্রা ও বাস্তবায়িত হয়নি ওই সব প্রতিশ্রুতি। ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন যেন রাঙামাটি বাসীর স্বপ্নই। অথচ সামান্য ৭/৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেলে পুরো পার্বত্য এলাকা জ্বলে ওঠত আলোয়। ।। অথচ এইসকল ইতিহাস জেনেও অনেকে না জানার মত ভান করে থাকে। আজ ও সেই বাস্তুচ্যুত আদিবাসী সমাজ স্বপ্ন দেখে অধিকার নিয়ে বেচেঁ থাকার। ফিরে না পেলেও চলবে অন্তত থাকার জায়গাগুলো যেন কেউ কেড়ে না নেই ওই স্বপ্ন আকড়ে ধরে আছে আজও। আমরা বহির হতে বিচার করি,মূল জায়গায় যেতে চাই না তাই আমাদের এসকল সমস্যা।

কাপ্তাইর মনোরম চিত্র


অধিকার ফিরে পাক পাহাড়ি জনগোষ্ঠী,  ওরাও বাংলাদেশের নাগরিক। 

হাজং জনগোষ্ঠীর জীবন ধারা

 হাজং জনগোষ্ঠীর জীবন ধারা

হাজং জনগোষ্ঠী 

হাজং জনগোষ্ঠী আসামের একটি ছোট উপজাতি] যাদের বেশিরভাগই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যে বাস করে এবং অল্প সংখ্যক মানুষ মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশ রাজ্যে বাস করে। হাজংদের অধিকাংশই ভারতে বাস করে। হাজংরা সাধারণত ধান চাষ করেন। তারা গারো পাহাড়ে ধান চাষ শুরু করেছিলেন বলে জানা যায়। ভারতের সংবিধান অনুযায়ী হাজংদের তফসিলি উপজাতির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। হাজংদের সংস্কৃতি হল লেভাতানা।


উৎপত্তিঃ
হাজংরা বোড়ো-কাচারি উপজাতির অন্তর্গত, যাদের পূর্বপুরুষরা প্রাচীন অতীতে তিব্বত থেকে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় স্থানান্তরিত হয়েছিল, যেখান থেকে তারা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল] হাজংদের কোনো নথিভুক্ত ইতিহাস নেই এবং যা কিছু ঐতিহাসিক উল্লেখ পাওয়া যায় তা কিংবদন্তি, লোককাহিনী এবং ঐতিহ্যগত বিশ্বাসের আকারে পাওয়া যায়। হাজংরা বিশ্বাস করে যে তাদের পৈতৃক জমি ছিল বর্তমান আসামের নলবাড়ি জেলার হাজো এলাকায়। 'হাজং' এর অর্থ এইভাবে 'হাজোর বংশধর' হিসেবে বোঝা যায়। এটা বিশ্বাস করা হয় যে বারো হাজার হাজং হাজো ছেড়ে গারো পাহাড়ের উত্তর পাদদেশে বসতি স্থাপন করেছিল।; সেখান থেকে তারা ধীরে ধীরে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে গারো পাহাড় এবং খাসি-জৈন্তিয়া পাহাড়ের পাদদেশে তাদের বসতি বিস্তার করে । তাদের অভিবাসন সম্পর্কে এই ঐতিহ্যগত বিশ্বাস হাজংদের অনেক লোককাহিনীতে প্রমাণিত।হাজংদের মধ্যে প্রচলিত একটি কিংবদন্তি অনুসারে, তারা হলেন সূর্যবংশী বা সুরজোদ্যাও বা বিলা ( সূর্যদেবতা ) এর বংশধর এবং ক্ষত্রিয় ।  জানা যায় যে, ১৯৩৯ সালে, হাজংরা সম্প্রদায়ের কল্যাণে এবং তাদের ঐতিহ্য পালনের জন্য একটি ক্ষত্রিয় সন্মেলনের আয়োজন করেছিল।
হাজং নারী



বসতি এরিয়াঃ

ভারত:

এটা বিশ্বাস করা হয় যে গারো পাহাড়ে হাজংদের আদি প্রাণভূমি ছিল গারো পাহাড়ের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম পাদদেশ এবং খাসি ও জৈন্তিয়া পাহাড়ের দক্ষিণ পাদদেশের অংশের সাথে অবস্থিত অঞ্চলে। পাদদেশে এই প্রশস্ত এবং সমতল ভূমির সুইচ, এই দুটি পাহাড়ের অর্ধেক ঘেরা আংশিকভাবে বর্তমান আসামের গোয়ালপাড়া জেলায়, আংশিকভাবে মেঘালয়ের গারো পাহাড় জেলায় এবং আংশিকভাবে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ ও সিলেট জেলায় পড়েছে। লোককাহিনী অনুসারে, হাজংদের বসতি গারো পাহাড়ের পাদদেশের উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত হাওয়ারকুনা নামক একটি ছোট হাজং গ্রাম থেকে শুরু হয়েছিল এবং জৈন্তিয়া পাহাড়ের পাদদেশের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত জুমাকুনা নামক অন্য একটি ছোট হাজং গ্রামে গিয়ে শেষ হয়েছিল।

বাংলাদেশ:

হাজং বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্ব একটি আদিবাসী গোষ্ঠী। হজংরা অধিকাংশই ভারতে বসতি স্থাপন করে। বাংলাদেশে এদের বাস নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা উপজেলা ও দুর্গাপুর উপজেলায় এবং শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলা ও ঝিনাইগাতী উপজেলায়ময়মনসিংহ জেলার উত্তর অঞ্চলে, ধোবাউড়া উপজেলা ও হালুয়াঘাট উপজেলায়সিলেট জেলার এদের বসবাস । এছাড়া বাংলাদেশের আর কোথাও এদের কোন অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বর্তমানে এদের সংখ্যা ভারতে ১,৫০,০০০ এবং বাংলাদেশে ৫০,০০০ এর বেশি। হাজংরা প্রধানত ধান চাষী। হাজং ভারতে একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ জনগোষ্ঠীর অবস্থায় রয়েছে। গত শতাব্দির মাঝামাঝি সময়ে এরা খুব দাপটের সাথে বসবাস করেছে এবং ঐতিহাসিক হাজং বিদ্রোহ, তেভাগা আন্দোলনটঙ্ক আন্দোলন, ইত্যাদির নেত্রিত্বের সারিতে এদের অগ্রণী ভূমিকা ছিল।


পোশাক পরিচ্ছদঃ

হাজংরা তাদের বোনা পোশাকের জন্য পরিচিত।হাজংরা তাদের বয়ন ও হস্তশিল্পের জন্য ব্যাপক পরিচিত; তাদের দক্ষ ক্রিয়াকলাপগুলি এখনও অক্ষত রয়েছে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে যুগে যুগে পরিচালন করা হয়েছে, যদিও পশ্চিমা জীবনধারার প্রভাবে জীবনধারায় সামান্য পরিবর্তনও হয়েছে। বয়ন করা মহিলাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অবিচ্ছেদ্য গৃহস্থালির কাজ এবং বেশিরভাগ সময় হাজং মহিলাদেরকে তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক বুনতে এবং পরিধান করতে দেখা যায়। এটি এই জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে পরিলক্ষিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য এবং এটি তাদের ঐতিহ্যগত মূল্যবোধের প্রতি তাদের স্নেহ প্রকাশ করে। হাজং মহিলারা গর্বিত বোধ করে যে তারা তাদের নিজের এবং তার সন্তান এবং পরিবারের সদস্যদের পোশাক বুনতে পারে।কুমারীদের জন্য, বিয়ের আগে বয়ন জ্ঞান একটি প্রধান প্রয়োজনীয়তা হিসাবে বিবেচিত হয়, কিন্তু পাশ্চাত্য প্রভাবের কারণে অবিবাহিত মহিলাদের দ্বারা এই ঐতিহ্য কঠোরভাবে মেনে চলে না। প্রতিটি বাড়িতে বানা নামে একটি ঐতিহ্যবাহী তাঁত রয়েছে ; দুই ধরনের ঐতিহ্যবাহী তাঁত রয়েছে, শালবানা এবং সিপনিবানা । সিপনিবানা শুধুমাত্র হাত দিয়ে চালিত হয় এবং পা ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না।


হাজং অলংকার


এই উপজাতির মহিলারা প্রধানত প্যাথিন পরেন, একটি মোড়ানো স্কার্ট যা বক্ষ থেকে বাছুর পর্যন্ত শরীরের উপরের এবং নীচের অংশকে ঢেকে রাখে।পায়ের উচ্চ শ্রেনীর মহিলারা একটি লম্বা প্যাথিন পরতেন যা মেঝেতে পড়ে যায় যখন নিম্ন শ্রেণীর মহিলারা একটি ছোট প্যাথিন পরতেন যার দৈর্ঘ্য গোড়ালি পর্যন্ত পৌঁছায়। প্যাথিন হল একটি অনুভূমিকভাবে ডোরাকাটা, রঙিন, আয়তক্ষেত্রাকার কাপড়ের টুকরো যা লাল ফিতে এবং পুরু অনুভূমিক সীমানার মধ্যে বিভিন্ন রঙের বিকল্প স্তর রয়েছে। পাথিন, যাকে পেট বা পাথনিও বলা হয়, দুটি প্রধান স্ট্রাইপ নিয়ে গঠিত: কান এবং গাও। যদি প্যাথিনকে দিগন্তের সমান্তরাল ফিতে দিয়ে দেখা যায়, তাহলে কান প্যাথিনের উপরের এবং নীচের প্রান্তে দেখা যায়, যখন গাও হল প্যাথিনের বৃহত্তর কেন্দ্রীয় অংশ। রঙ্গপাথিনে ব্যবহৃত প্রধান রং হল লাল, যা যুবতী মহিলাদের দ্বারা ধৃত হয়; যখন মধ্যবয়সী মহিলারা সবুজ থেকে কম ডোরাকাটা প্যাথিন পরেন। মহিলারা মাঠে কাজ করার সময় কোম্পগুলিকে ব্যানং বা বেল্ট হিসাবে ব্যবহার করে। কমপেস হল একটি ব্রোকেড স্কার্ফ যা বেশিরভাগ পুরুষদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়, তবে প্রায়শই মহিলারা তাদের কোমর বাঁধতে এটি ব্যবহার করে। পুরুষরা নিংটি বা ভিজা কাপুর নামে একটি বোনা কাপড় পরে, এটি একটি ধুতির ফ্যাশনে পরা হয় । শীতকালে, পুরুষ এবং মহিলা উভয়েই তাদের শরীরকে আর্গন নামে একটি ঐতিহ্যবাহী ব্রোকেডেড শাল দিয়ে ঢেকে রাখে এবং পুরুষরা তাদের ঘাড় একটি কোম্পেস দিয়ে উষ্ণ রাখে। হাজংদের দ্বারা ব্যবহৃত অন্যান্য জামাকাপড় অসমীয়া গামছার, একটি সূচিকর্ম হালকা শাল। বুকসুলি হল পুরুষদের ব্যবহৃত ঐতিহ্যবাহী শার্ট।


হাজংদের অলংকারঃ

হাজং নারী, তরুণ-তরুণী উভয়েই ঐতিহ্যবাহী অলঙ্কারে নিজেদের সাজাতে পছন্দ করেন। বেশিরভাগ হাজং অলঙ্কার রূপার তৈরি ; স্বর্ণ , হাতির দাঁত , প্রবাল ও শঙ্খের ব্যবহারও লক্ষ্য করা গেছে। ঐতিহ্যগতভাবে, সমস্ত অলঙ্কারগুলি এই উপজাতির মহিলাদের অন্তর্গত; পুরুষদের শুধুমাত্র তাদের বিবাহের আংটি পরতে হবে যাকে মানিক আংথি বলা হয় এবং একটি সোনার চেইন। যদিও পুরুষদের দেখা যায় তাদের কোমরে লাল সুতো পরা থাকে যার নাম bâstâ বা bâita , তাদের বাম কাঁধে লুগুন এবং চন্দন কাঠের তৈরি জপমালা , সোনার আপেল এবংপবিত্র তুলসী বিবাহিত মহিলারা শাঁখার চুড়ি পরেন যাকে বলা হয় হাকা এবং বিয়ের আংটি, মানিক আংথি । মহিলাদের ব্যবহৃত কিছু অলঙ্কার নীচে তালিকাভুক্ত করা হল:

  • গালহিছা (Galahicha): গলায় পরা অলংকার।
  • মুগা মালা (Mugâ mala): লাল এবং কালো পুঁতি সহ একটি সোনার নেকলেস।
  • হারসুরা (Harsura): ফুলের নকশা সহ  একটি চেইন, সোনা বা রৌপ্য দিয়ে তৈরি।
  • চন্দ্রহর (Chondrohar) বা সানচিসুরা (Sunchisura): এই ঐতিহ্যবাহী নেকলেস রূপার তৈরি, ওজন ৩৫ থেকে ৫০ গ্রাম, এবং ফুলের মোটিফ সহ তিন থেকে পাঁচ সারি চেইন রয়েছে।
  • সিকা মালা (Sikâ mala): মুদ্রা দিয়ে তৈরি একটি নেকলেস।
  • কাটবাজু (Katbaju): এই ঐতিহ্যবাহী নেকলেস রূপার তৈরি, ওজন ৩৫ থেকে ৫০ গ্রাম, এবং ফুলের মোটিফ সহ তিন থেকে পাঁচ সারি চেইন রয়েছে।
  • বক খারু (Nol Kharu): রুপার তৈরি গোড়ালিতে পরা খোলা আংটির জোড়া, ওজন প্রায় ৩৫ থেকে ৫০ গ্রাম।
  • বুইলা (Buila): একজোড়া রূপার চুড়ি
  • বক খারু (Bak kharu): রুপার তৈরি গোড়ালিতে পরা খোলা আংটির জোড়া, ওজন প্রায় ৩৫ থেকে ৫০ গ্রাম।
  • বক গুঞ্জুরি (Bak Gunjuri): এটি আরেকটি জোড়া আংটি যা দৈর্ঘ্য বরাবর ছোট ছোট ঘণ্টাসহ ভারী রূপালী দণ্ড দিয়ে তৈরি অ্যাঙ্কলেটে পরা, একটি আংটিতে বাঁকা। ঘন্টাধ্বনি বাজানোর জন্য এটি জনপ্রিয়।
  • বোনকো (Bonko): জিগজ্যাগ প্যাটার্ন সহ একজোড়া রৌপ্য অ্যাঙ্কলেট।
  • কোরমফুল (Koromphul): কানের রিংগুলির জোড়া, উভয় পাশে শঙ্কুযুক্ত প্রোট্রুশন রয়েছে।
  • কাঙ্কুর্য (Kankurya): এক জোড়া বাঁকা কানের দুল।
  • কানপসা (Kanpasa): হুক সহ এক জোড়া ফ্ল্যাট কানের দুল।
  • নট (Not): সোনার তৈরি একটি নাকের আংটি, বিবাহিত মহিলারা বাম দিকে পরিধান করে।
  • নোলক (Nolok): সেপ্টামে  পরা নাকের আংটি , এই বিভাগে তিতলিপাতা , কুমারবিসি , জিবলি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।

হাজংদের ভাষাঃ
হাজং ভাষা তিব্বতি-বর্মী শব্দমূলবিশিষ্ট একটি ইন্দো-আর্য ভাষা। ভাষাটি বাংলা-অসমীয়া লিপিতে লেখা হয়।

হাজংদের ধর্মঃ
হাজংরা পুরোপুরিভাবে হিন্দুধর্ম অবলম্বী। জন্মের সময় থেকেই সমস্ত হিন্দু রীতিনীতি মেনে চলে। হিন্দু বিশ্বাসগুলি তাদের মূল সংস্কৃতির সাথে মেশা এবং তাদের আলাদা করা অসম্ভব।  হাজংদের দ্বারা চর্চা করা বর্তমান ধর্মীয় রীতিগুলিকে তাদের লোকধর্ম এবং হিন্দুধর্মের সংমিশ্রণ হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে, কারণ এটি তাদের ঐতিহ্যগত অ্যানিমিস্টিক ধর্মের আচার-অনুষ্ঠানের সাথে বিরোধ দেখা যায় না, যা একটি নতুন বৈচিত্র্যের জন্ম দেয়।

হাজংদের বিবাহ রীতিঃ
হাজংরা প্রধানত নিজ জাতির মধ্যে বিবাহ করে,তাদের গোত্রের বাইরের কোন ব্যক্তির সাথে বিবাহ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, এই ধরনের বিবাহের ঘটনা বিরল। একবিবাহ বিবাহের প্রচলিত রূপ; বহুবিবাহ নিষিদ্ধ নয়, তবে এই ধরনের বিবাহ বিরল। সমঝোতামূলক জোট হল বিবাহের স্বাভাবিক রূপ। হাজং সমাজে মাতৃতন্ত্র ততটা দেখা যায় না, যতটা পিতৃতন্ত্রের ক্রমবর্ধমান আধিপত্যের দেখা যায়।হাজং সংস্কৃতির মধ্যে, রোমান্টিক প্রেম এবং বিধবা পুনর্বিবাহ অনুমোদিত আছে। যখন একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে, তখন তারা একে অপরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তবে ঘনিষ্ঠ মাতৃত্ব ও পৈতৃক আত্মীয়দের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ।

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যঃ
হাজংদের একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ সংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে। হাজং সংস্কৃতি ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে এবং মেঘালয়ের কোচ, বানাইস এবং ডালুসের মতো অন্যান্য উপজাতির ভাষা, পোশাক এবং সংস্কৃতির উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। পাথিন নামক উজ্জ্বল ডোরাকাটা লাল পোশাকের মাধ্যমে হাজং নারীদের সহজেই চিহ্নিত করা যায় । ঐতিহ্যগতভাবে, এবং বর্তমানের অনেক গ্রামে, মহিলারা নিপুণ তাঁতি যারা তাদের নিজস্ব পোশাক বুনেন। হাজংরা প্রত্যেক মহিলার জন্য বয়ন শিল্প জানা বাধ্যতামূলক করে, যা বিবাহের জন্য একজন মহিলার যোগ্যতা হিসাবে বিবেচিত হয়। হাজংরা কৃষিপ্রধান জনগণের একটি দল, তাদের বেশিরভাগ সাংস্কৃতিক চর্চা, লোককাহিনী এবং ঐতিহ্য তাদের কৃষি চর্চার সাথে সম্পর্কিত। হাজংরা দক্ষকাঠের কাজ এবং ঝুড়ি , তারা তাদের কৃষির সমস্ত সরঞ্জাম এবং গৃহস্থালীর জিনিসপত্র নিজেরাই তৈরি করে। ধান চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ছাড়াও, হাজং পরিবারের অনেক বাঁশ মাছ ধরার সরঞ্জাম রয়েছে।

অলংকার


উৎসবঃ

পুস্না হল হাজংদের দ্বারা পালিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উত্সবগুলির মধ্যে একটি যা শীতের শেষ এবং পুস মাসকে (পৌষ মাস) চিহ্নিত করে ; এটি মকর সংক্রান্তি উদযাপন , যা এক সপ্তাহ ধরে চলে। হাজং জনগণ দুর্গাপূজা ও কামাখ্যা পূজার মতো হিন্দু উৎসব পালন করে। তারা কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী উৎসবও পালন করে। ঐতিহ্যবাহী আচারগুলি একজন ডিউশি বা নুংটাং  বা  একজন হাজং শামান দ্বারা সঞ্চালিত হয়। বাস্তু পূজা, ঐতিহ্যবাহী উত্সবগুলির মধ্যে একটি, এতে মূর্তি পূজা জড়িত নয় এবং এটি গ্রামের প্রাঙ্গনের বাইরে একটি এলাকায় উদযাপিত হয়, যাকে বাস্তু হালি বা বাস্তু বলা হয় । বাস্তু পূজায় কচ্ছপ ও কবুতরকে বাস্তু দিয়োর জন্য বলি। আরেকটি উৎসবকে ময়মনসিংহে চোরমাগা এবং ভারতে চোরখিলা বলা হয়। মেঘালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম গারো পার্বত্য জেলায় অক্টোবর মাসে চোরখিলা পালিত হয়। এই উৎসবের সময়, যুবক-যুবতীরা গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে বা গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরে বেড়ায়, গান বাজায় এবং ফলসঙ গায়, কখনও কখনও রামায়ণের গল্প শোনায় । দলগুলো তাদের পারফরম্যান্সের বিনিময়ে কিছু চাল বা টাকা পায়। যেহেতু প্রত্যেক ব্যক্তি, তরুণ এবং বৃদ্ধ উভয়ই নাটকটি দেখতে বেরিয়ে আসে, তাই এটি সম্ভাব্য পাত্র-পাত্রীকে দেখার একটি সুযোগ বলে মনে করা হয়। হাজংরা 'বিশ্ব' নামে পরিচিত তাদের প্রাক-বর্ষা ফসলের উৎসবও উদযাপন করে। কানি পূজা, কটক পূজা, শ্রাবণ ও কার্তিক মাসের শেষ দিনেও করা হয় । শারদ পূর্ণিমার দিনটি হাজংদের মধ্যে কুজাই ঘোর নামে পরিচিত।


হাজংদের সঙ্গীতঃ

ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীতের মধ্যে রয়েছে গীতলু গহেন , গুপনি গহেন এবং কৃষি ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কিত বেশ কিছু গান। কিছু ঐতিহ্যবাহী যন্ত্র নিচে তালিকাভুক্ত করা হলো:

  • ঢুলুক (ঢোল)  : একটি প্রশস্ত ড্রাম যার প্রতিটি প্রান্তে ঝিল্লি দুটি প্রান্ত থেকে বাজানো হয়।
  • বেসি  : একটি বাঁশি ।
  • খোল (মৃদঙ্গ)  : পিতলের তৈরি এক জোড়া ছোট করতাল।
  • দোতারা  : একটি তারযুক্ত যন্ত্র।
  • ধাপা কুর্তাল  : এক জোড়া বড় করতাল ।
  • হুরিন্দো  : একটি বাঁশি ।
  • হামুকটাল : আপেল শামুকের খোল দিয়ে তৈরি যন্ত্র ।
  • গুগ্না  : একটি ল্যামেলোফোন যন্ত্র, যার মধ্যে একটি ফ্রেমের সাথে সংযুক্ত একটি নমনীয় বাঁশের জিহ্বা থাকে।


বিখ্যাত হাজং ব্যক্তিত্বঃ
অনিমেস রায়, নাসেক নাসেক গানের গায়ক।

শিল্পী অনিমেষ হাজং



বিখ্যাত মহীয়সী নারীঃ
ব্রিটিশ বিরোধী, জমিদার বিরোধী এসব আন্দোলনে অনেক বিখ্যাত হাজং ব্যক্তিত্বরা অবদান রেখেছেন। কুমুদিনী হাজং এবং যাদুমনি হাজং টঙ্ক আন্দোলন এবং জমিদার বিরোধী আন্দোলনে ব্যপক ভূমিকা রাখেন। এই আন্দোলনে রাসিমণি হাজং প্রথম শহীদ হন। অশ্বমনি হাজং এবং ভদ্রমনি হাজং লেংগুড়া বাজারের ঐতিহাসিক টংক বিরোধী মিছিল থেকে গ্রেপ্তার হন এবং তাদের বারো বছরের জেল হয়।

কুমুদিনী হাজং




দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে!

  দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে! এক.   শুনতে খারাপ শোনালেও এটা সত্য, রবীন্দ্রনাথের...