expr:class='"loading" + data:blog.mobileClass'>

Wikipedia

সার্চ ফলাফল

সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

বিএনপিতে থাকা রাজাকারদের তালিকা

 গতকাল সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ভাই এর একটা বক্তব্য দেখলাম সেখানে উনি বলেছেন "বিএনপি একমাত্র বলতে পারে বিএনপিকে কেউ কোনদিন বলতে পারবে না বিএনপি রাজাকারের দল। স্বাধীনতা বিরোধী দল"


এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন "মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের ছবক শুনতে জাতি রাজি নয়।"


কিন্তু আমরা কি দেখি? 


(১) শাহ আজিজুর রহমান (বাংলাদেশের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী) 


(২) আবদুর রহমান বিশ্বাস (বাংলাদেশের ১১তম রাষ্ট্রপতি)


(৩) মশিউর রহমান যিনি যাদু মিয়া নামে পরিচিত (প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদায় সিনিয়র মন্ত্রী) 


(৪) মোশাররফ হোসেন শাহজাহান (পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ছিলেন)


(৫) আহসানুল হক মোল্লা যিনি পচা মোল্লা নামেও পরিচিত। (সাবেক ডাক ও টেলি যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী)


(৬) চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ ( সাবেক খাদ্যে ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় মন্ত্রী) 


(৭) চৌধুরী আকমল ইবনে ইউসুফ (ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ)


(৮) আবদুল মোমিন তালুকদার খোকা (বগুড়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক) 


(৯) কাজী ফারুক কাদের  (নীলফামারী-৩ প্রাক্তন সংসদ সদস্য সাবেক)


(১০) মির্জা রুহুল আমিন (প্রাক্তন মন্ত্রী ও ঠাকুরগাঁও-২-এর অঞ্চলের সাবেক সংসদীয় প্রতিনিধি)


(১১) ড. ওসমান ফারুক (বাংলাদেশের সাবেক প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী) 


(১২) আব্দলু আলিম (জয়পুরহাট-১ এর সাবেক সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রী)


(১৩) আবদুর রহমান বিশ্বাস (বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ছিলেন)


(১৪) মাহমুদুন্নবী চৌধুরী, যিনি নবী চৌধুরী নামেও পরিচিত (চট্টগ্রামের ডবলমুরিং-সীতাকুন্ড থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্রথমে গণ-যোগাযোগ মন্ত্রী এর পর ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন)


(১৫) সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী যিনি সাকা চৌধুরী নামেও পরিচিত (জাতীয় সংসদের চট্টগ্রাম-২, চট্টগ্রাম-৬, চট্টগ্রাম-৭ আসন থেকে নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্য) 


যাদের নাম লিখেছি তারা সবাই জাতীয়তাবাদী প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ যারা সবাই ছিলেন ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষে এবং স্বাধীনতার বিপক্ষে। উনাদেরকে বিএনপি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, উপপ্রধান মন্ত্রী,  মন্ত্রী, এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতা বানিয়েছে। উনাদের সম্পর্কে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং বিএনপি কি বলবে? 


বিঃদ্রঃ যাদের নাম লিখেছি আমি উনাদের সম্মান করি এবং শ্রদ্ধা করি আমি উনাদের স্বাধীনতা বিরোধীতা বলবো না বরং বলবো ৭১-এ ভারতের বি

জালেম শাসক নিয়ে আহলে হাদিস আলেমদের ফাঁকিবাজি ও আমার জবাব

 যেসকল দলিল দিয়ে আহলে হাদিস ফেতনাবাজ গন ইক্বামতে দ্বীনকে গোড়া হতে কেটে দেয় এবং আমার জবাব





জাল সালাফি ও কথিত আহলে হাদিসের জালিম শাসকের পক্ষে দলিল গুলো নিম্নরুপঃ

আহলে হাদিস নামক ফেতনাবাজরা নিচের দলিল গুলো দিয়ে মুসলমানদের পথ ভ্রষ্ট করে আর ইক্বামতে দ্বীনকে গোড়া হতে ধ্বংস করে।

জালেম শাসকদের নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে কথোপকথন...!!!

১) শাসক জালেম হলে আমরা কিভাবে তার থেকে রেহাই পাব??

>রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "যে তার শাসকের কাছে থেকে অপছন্দনীয় কিছু দেখে সে যেন ধৈর্য ধরে।" -(বুখারী/৩৮৭০)

২) কিন্তু সে তো শরীয়ত মোতাবেক শাসন করে না!!
>রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "আমার পরে এমন কিছু শাসক হবে যারা না আমার হেদায়াত মানবে আর না আমার সুন্নাত। আর তাদের মধ্যে এমন কিছু লোক থাকবে যারা মানব দেহে শয়তানের অন্তর লালন করবে।" আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল, এরকম সময়ে আমি কি করব?? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তুমি শাসকের কথা শুনবে ও মানবে, যদিও সে তোমাকে মেরে তোমার সম্পদ দখল করে নেয়। তথাপিও তুমি তার আনুগত্য করবে।" -(মুসলিম/১৮৪৭)।

৩) শাসক তো আমার সবকিছু নিয়ে নিল!!আমাকে সে কষ্ট দিচ্ছে!!
>রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তুমি শাসকের কথা শুনবে ও মানবে, যদিও সে তোমাকে মেরে তোমার সম্পদ দখল করে নেয়। তথাপিও তুমি তার আনুগত্য করবে।" -(মুসলিম/১৮৪৭)।

৪) কিন্তু সে তো আমাদের সবকিছু নিয়ে জুলুম করছে, আমাদের বঞ্চিত করছে ?!!
> রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "তাদের হক তোমরা ঠিক ঠিক দাও আর তোমাদের হক আল্লাহর কাছে চাও!" -(বুখারী/৩৬০৩)

৫) আচ্ছা সে যদি আমাকে আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কোনো কাজ করার কথা বলে??
> রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: "আল্লাহর আনুগত্য মূলক বিষয়েই কেবল অনুসরণ।" -(বুখারী/৭২৫৭)।

৬) আমি যদি তাকে উপদেশ দিতে চাই ??
> রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: "যে শাসককে উপদেশ দিতে চায়, সে যেন প্রকাশ্যে না বলে বরং তার হাত ধরে গোপনে বলে। গ্রহণ করলে তো হলোই, না হলে সে তার দায়িত্ব পালন করেছে।" -(কিতাবুস সুন্নাহ/১০৯৭; ছহীহ)

৭) গোপনে উপদেশ দেয়ার সময় সে যদি আমাকে হত্যা করে??
> রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: "শ্রেষ্ঠ শহীদ হলো: হামযা বিন আব্দুল মুত্তালিব এবং ঐ ব্যক্তি যে শাসককে ভালো-মন্দের উপদেশ দিল আর শাসক তাকে হত্যা করে দিল।" -(হাকেম, ৩/২১৫; সিলসিলাহ ছহীহাহ/৩৭৪)

৮) আর আমাকে যদি হত্যা না করে??
> রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: "সর্বোত্তম জিহাদ হলো, জালেম শাসকের সামনে হক কথা বলা।" -(আবূ দাঊদ/৪৩৪৪; ছহীহ)

৯) আমি প্রকাশ্যে বললে সমস্যা কি, সে তো আমাকে জুলুম করেছে??
> রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "যে জামাত থেকে বিঘত পরিমাণ বের হয়ে যাবে, সে যেন ইসলাম থেকেই বেরিয়ে গেল।" -(তিরমিযী/২৮৬৩; ছহীহ)

১০) আমি মিছিল করার সময় সরকার যদি আমাকে হত্যা করে??
>রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: "এই অবস্থায় যারা মারা যায়, তারাই তো নিকৃষ্ট নিহত।" -(ইবনু মাজাহ/১৭৬; হাসান ছহীহ)

১১) তাহলে শেষমেশ কি দাঁড়ালো?এটাই কি তাহলে (حسن الخاتم) উত্তম সমাপ্তি??(কণ্ঠে অসন্তুষ্টির ছাপ)
> তিনি বললেন: "খারিজীরা (বিদ্রোহিরা) তো জাহান্নামের কুত্তা।" -(ইবনু মাজাহ/১৭৩; ছহীহ)

১২) এখন তাহলে আমাদের করণীয় কি??
>তিনি জবাবে বললেন: "নিশ্চয়ই তোমরা আমার পরে (অন্যায়) প্রাধান্য দেখতে পাবে। তো তখন তোমরা আমার সাথে হাউযে কাউছারে দেখা হওয়ার আগ পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরবে।" -(বুখারী/৩৭৯২)

আমার জবাবঃ

 আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, 
وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ.
আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে যারা বিচার-ফয়সালা করবে না, তারাই জালিম। (সূরা মায়িদা ৫/৪৫)

তাই শাসকের ফরজ দায়িত্ব হল, কুরআনের বিধানের আলোকে বিচার শাসন পরিচালনা করা। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) মদিনায় গিয়ে রাষ্ট্র গঠন করার পর আল্লাহ তা'য়ালা তাঁকে বলেন,
ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﻨَﺎ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﺑِﺎﻟْﺤَﻖِّ ﻟِﺘَﺤْﻜُﻢَ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﺭَﺍﻙَ ﺍﻟﻠَّﻪُ. 
“(হে নবী) আমি ন্যায় ও সত্যসহ তোমার কাছে এই কিতাব নাযিল করেছি যাতে আল্লাহ তোমাকে যে আলো দেখিয়েছেন তার সাহায্যে তুমি মানুষের মধ্যে বিচার-শাসন ফায়সালা করো।” (সূরা নিসা ৪/১০৫)

★এখন প্রশ্ন হল, শাসক যদি তার দায়িত্ব পালন না করে, সে ক্ষেত্রেও তার আনুগত্য করতে হবে কি না? এ বিষয়ে কি ইসলামে রাজনৈতিক দিক নির্দেশনা নেই? আসুন, তা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (ﷺ) থেকে জেনে নেয়। 

আল্লাহ তা'য়ালা আরো বলেন, 
وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ.
আর যারা আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে বিচার ফয়সালা করে না, তারাই কাফির। (সূরা মায়িদা ৫/৪৪)। অতএব কাফিরের আনুগত্য জায়েজ নাই।

হযরত উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেনঃ 
دَعَانَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَبَايَعْنَاهُ فَقَالَ فِيمَا أَخَذَ عَلَيْنَا أَنْ بَايَعَنَا عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِي مَنْشَطِنَا وَمَكْرَهِنَا وَعُسْرِنَا وَيُسْرِنَا وَأَثَرَةً عَلَيْنَا وَأَنْ لَا نُنَازِعَ الْأَمْرَ أَهْلَهُ إِلَّا أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا عِنْدَكُمْ مِنْ اللَّهِ فِيهِ بُرْهَانٌ.
মহানাবী (ﷺ) আমাদের (বায়আতের জন্য) আহবান করলেন। আমরা তার কাছে বায়আত করলাম। এরপর তিনি (উবাদা) বললেনঃ আমাদের থেকে যে ওয়াদা তিনি গ্রহণ করেছিলেন তাতে ছিল যে, আমরা আমাদের সুখে-দুঃখে, বেদনায় ও আনন্দে এবং আমাদের উপর অন্যকে অগ্রাধিকার দিলেও পূর্ণাঙ্গরুপে শোনা ও মানার উপর বায়আত করলাম। আরও (বায়আত করলাম) যে আমরা ক্ষমতা সংক্রান্ত বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংঘর্ষ-বিদ্রোহে লিপ্ত হব না। কিন্তু যদি এমন স্পষ্ট কুফুরী দেখ, যে বিষয়ে তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান, তাহলে বিদ্রোহ করবে। (সহীহ বুখারী, কিতাবুল ফিতান, হাঃ ৭০৫৫, ৭০৫৬; আধুনিক প্রকাশনী হাঃ ৬৫৬৫; ইসলামিক ফাউন্ডেশন হাঃ ৬৫৭৮; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ইমারত, হাঃ ১৭০৯; ইসলামিক ফাউন্ডেশন হাঃ ৪৬১৯, ইসলামিক সেন্টার হাঃ ৪৬২০; মুসনাদে আহমদ হাঃ ২২১৭১)

অর্থাৎ কোন মুসলিম শাসক যদি সুস্পষ্ট ভাবে কুফুরী করে (যেমন- আল্লাহর বিধান বর্জন করে কুফুরী মতবাদ কায়েম করে, হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল হিসাবে রাষ্ট্রে বাস্তবায়ন করে) তাহলে সে শাসক ক্ষমতায় থাকার অধিকার হারায়। এমন শাসকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এবং তাকে অপসারণ করা মুসলিম উম্মাহর উপর ওয়াজিব হয়ে যায়। 

ইমাম কাযী ইয়ায (রাহঃ) বলেন, 
فلو طرأ عليه كفر وتغيير للشرع أو بدعة -يعني بدعة مكفرة -خرج من حكم الولاية وسقطت طاعته ووجب على المسلمين القيام عليه وخلعه”. 
যদি শাসকের ওপর আপতিত হয় কোনো কুফর বা শরীয়াত পরিবর্তন বা বিদআতে মুকাফফিরা, তাহলে সে শাসক কর্তৃত্বের বিধান থেকে বেরিয়ে যায়, তার আনুগত্য বাতিল হয়ে যায় এবং মুসলিমদের ওপর ওয়াজিব তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ও তাকে অপসারণ করা। (শারহু সহীহ মুসলিম লিন-নবাবী, ১২/২২৯)

ইমাম সাফাকুসী (রাহঃ) বলেন, 
أجمعوا على أن الخليفة إذا دعا إلى كفر أو بدعة يثار عليه
ইমামগণ একমত হয়েছেন যে, শাসক যদি কুফরের দিকে ডাকে বা বিদআতের দিকে ডাকে, তাহলে তার ওপর আক্রমণ করা হবে। (ইরশাদুস সারী বিশারহি সহীহুল বুখারী ১০/২১৭) 

ইমাম ইবন হাজার আসকালানী (রাহঃ) বলেন
ينعزل بالكفر إجماعاً فيجب على كل مسلم القيام في ذلك.
কুফরে জড়িত হলে শাসকের অপসারিত হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ইজমা রয়েছে। তখন সকল মুসলিমের ওপর ওয়াজিব এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। (ফাতহুল বারী, ১৩/১৩৩)

★এমনকি মুসলিম শাসক যদি সালাত আদায় না করে অথবা রাষ্ট্রীয়ভাবে সালাত কায়েম না রাখে তাহলে তাকেও অপসারণ করতে হবে। হযরত উন্মু সালামা (রাঃ), আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) ও আউফ বিন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী (ﷺ) বলেছেনঃ  
سَتَكُونُ أُمَرَاءُ فَتَعْرِفُونَ وَتُنْكِرُونَ فَمَنْ عَرَفَ بَرِئَ وَمَنْ أَنْكَرَ سَلِمَ وَلَكِنْ مَنْ رَضِيَ وَتَابَعَ قَالُوا أَفَلَا نُقَاتِلُهُمْ قَالَ لَا مَا صَلَّوْا. وفى رواية ﻣَﺎ ﺃَﻗَﺎﻣُﻮْﺍ ﻓِﻴْﻜُﻢُ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓ.
"শীঘ্রই তোমাদের মধ্যে এমন কিছু ব্যক্তি শাসক হবে যাদের কতগুলো কাজ তোমরা পছন্দ করবে এবং কতগুলো কাজ অপছন্দ করবে। যে লোক তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে, সে দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে, আর যে লোক তাকে ঘৃণা করবে সেও দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে। কিন্তু যে লোক তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে এবং তার অনুসরণ করবে সে অন্যায়ের অংশীদার বলে গণ্য হবে। প্রশ্ন করা হলোঃ হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করব না? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জবাব দেনঃ না, যতদিন তারা সালাত আদায় করতে থাকবে। অন্য বর্ণনায় এসেছে, যতদিন তারা তোমাদের মধ্যে সালাত কায়েম রাখবে।" (সহীহ মুসলিম হাঃ ১৮৫৪, ১৮৫৫; জামে তিরমিযী হাঃ ২২৬৫; আবু দাউদ হাঃ ৪৭৬০; মুসনাদে আহমদ হাঃ ১০৮৪০, ১০৮৪৭, ২৩৪৬১, ২৫৯৮৯, ২৬০৩৭, ২৬০৬৬; সুনান দারেমী হাঃ ২৭৯৭)।

ইমাম কাযী ইয়ায (রাহঃ) বলেন
أجمع العلماء على أن الإمامة لا تنعقد لكافر، وعلى أنه لو طرأ عليه الكفر انعزل، وكذا لو ترك إقامة الصلوات، والدعاء إليها.

আলিমগণ একমত হয়েছেন যে, কাফিরের জন্য ইমামত বা নেতৃত্ব অনুষ্ঠিত/সম্পন্ন হবে না। এ ব্যাপারেও একমত যে, তার ওপর কুফর আপতিত হলে অপসারণ করা হবে। একই বিধান হবে তিনি যদি সালাত প্রতিষ্ঠা ও সালাতের দিকে দাওয়াত দেওয়া ছেড়ে দেন। (শারহু সহীহ মুসলিম লিন-নবাবী ১২/২২৯)

ইমাম কুরতুবী (রাহঃ) বলেন, 
“وكذلك لو ترك -أي الحاكم -إقامة قاعدة من قواعد الدين، كإقامة الصلاة وصوم رمضان، وإقامة الحدود، ومنع من ذلك، وكذلك لو أباح شرب الخمر، والزنى، ولم يمنع منهما لا يختلف في وجوب خلعه. 
অনুরূপভাবে যদি শাসক দ্বীনের কোনো মূলনীতি/ভিত্তি ছেড়ে দেয়, যেমন—সালাত প্রতিষ্ঠা করা, রমাযানের রোজা, শরয়ী দণ্ডবিধি কায়েম করা এবং তা থেকে বাধা দেয়, অনুরূপভাবে যদি মদপান ও ব্যভিচারকে বৈধতা দেয় এবং উভয় থেকে বাধা না দেয়, তাহলে তাকে অপসারণ করা ওয়াজিবের ব্যাপারে কোনো মতভেদ নেই। (আল-মুফহিম লিমা আশকালা মিন তালখীসি কিতাবি মুসলিম ৩/৪১৫)

কুরআন, হাদীস ও মুজতাহিদ ইমামদের কাওল দ্বারা প্রমাণিত যে, শাসক যদি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচার ও শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা না করে অর্থাৎ তার দায়িত্ব পালন না করে বরং হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল হিসাবে রাষ্ট্রে বাস্তবায়ন করে শরীয়ত পরিবর্তন করে বা অন্য কোনো ভাবে সুস্পষ্ট কুফুরী করে তাহলে শাসকের আনুগত্য করা যাবে না। তখন তাকে অপসারণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। একইভাবে যদি শাসক দ্বীনের কোনো মূলনীতি ছেড়ে দেয়, যেমন—সালাত প্রতিষ্ঠা করা, রমাযানের রোজা, শরয়ী দণ্ডবিধি কায়েম করা এবং তা থেকে বাধা দেয়, অনুরূপভাবে যদি মদপান ও ব্যভিচারের মত হারাম কাজোর বৈধতা দেয় এবং হারাম কাজে বাধা না দেয়, তাহলে তাকে অপসারণ করা ওয়াজিব। এ বিষয়ে ইমামদের কোনো মতভেদ নেই বরং ইজমা হয়েছে। কিন্তু আফসোস! সেকুলার শাসকের দালালী করতে গিয়ে সেকুলার সালাফি মাদখালী শায়েখ আবু বকর যাকারিয়া এই ওয়াজিব ও ইজমাকে অস্বীকার করেছেন।

লেখক:চিকিৎসক, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী। 

মুসলিমরা প্রচলিত রাষ্ট্রীয় আইন মানা কুফুরী

 মুসলমানরা প্রচলিত রাষ্ট্রীয় আইন মানা ফরজ না বরং কুফুরী

মুসলমানরা প্রচলিত রাষ্ট্রীয় আইন মানা ফরজ না বরং কুফুরী



এ পৃথিবীতে মানুষ যদি নিজ থেকে আপনা-আপনি সৃষ্টি হয়ে থাকতো, তা হলে তারা যেমন খুশী চলতে পারতো। তাদের জীবনের যাবতীয় দিক ও বিভাগ শাসন ও পরিচালনা করার জন্য নিজেরাই স্বাধীনভাবে আইন ও বিধান রচনা করতে পারতো। কিন্তু মানুষ আল্লাহর সৃষ্ট জীব হওয়ায় তাদের এ স্বাধীনতা নেই; কেননা, তিনি নিজেই তাদের এ প্রয়োজন পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। এ জন্য দিয়েছেন সর্বকাল ও সর্বস্থানে প্রয়োগের উপযোগী সর্বশেষ অহীর বিধান আল-কুরআন ও তাঁর শেষ নবীর সহীহ সুন্নাহ। এ দু’য়ের মাঝে বর্ণিত যাবতীয় বিধি-বিধান মানুষের ব্যক্তি, পরিবার, ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনে বাস্তবায়ন করা বা না করার ব্যাপারে আল্লাহ তাদেরকে সৃষ্টিগত স্বাধীনতা দিয়ে থাকলেও শরী‘আতগত দিক থেকে তা পালন করা বা না করার ব্যাপারে তিনি তাদেরকে কোনো স্বাধীনতা দান করেন নি,অর্থাদ শরীয়ত অবশ্যই পালনীয়, এটা পালন না করলে কেউ মুসলমান হবে না।

বরংমহান আল্লাহ এ কথা বলে দিয়েছেন যে, যারা স্বেচ্ছায় তা তাদের জীবনে বাস্তবায়ন করবে বা এ জন্য চেষ্টা করবে, তারা আল্লাহর আইনের কাছে আত্মসমর্পণকারী ও তাঁর দাস হিসেবে গণ্য হবে অর্থাদ মুমিন। তারা আল্লাহকেই তাদের জীবনের পরিচালনাকারী ও রব হিসেবে স্বীকৃতি দানকারী হবে। আর যারা তা করবে না, তারা আল্লাহর অবাধ্য হয়ে তাঁর দাসত্বকে অস্বীকারকারী হয়ে নিজেদেরকে নিজেদের ইলাহ ও রব হিসেবে স্বীকৃতি দানকারী হবে। কুরআন ও হাদীসের দ্বারা এ বিষয়টি অত্যন্ত পরিষ্কার থাকা সত্ত্বেও দেখা যায়- বর্তমান বিশ্বে নিজেদেরকে মুসলিম বলে দাবী করেন, তাদের অধিকাংশই তাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে সে ওহীর বিধান বাস্তবায়ন করতে রাজি নন।

তারা এটাকে সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ বলে আখ্যায়িত করেন। বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম ইসলামী রাজনীতির পরিবর্তে পাশ্চাত্য রাজনীতির অনুসরণ ও অনুকরণ করার ফলে দেশে যেমন ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হচ্ছে না, তেমনি শুধুমাত্র বিবাহ, তালাক, উত্তরাধিকার ও পারিবারিক আইন ব্যতীত মানব জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে অহীর যে সব বিধান রয়েছে, তা রাষ্ট্রীয়ভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ যেখানে যাবতীয় আইনের মূল উৎস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার কথা, সেখানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিজেই আইনের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশ পরিচালনার জন্য সংবিধান রচনা করে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি যে, এ সংবিধানে বর্ণিত বিধানের সাথে অপর কোনো বিধানের বিরোধিতা করার কোনো আইনগত অধিকার নেই এবং করলে তা আপনিতেই বাতিল বলে গণ্য হবে। যেমন বাংলাদেশের সংবিধানের ৭ম ধারার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি যে,

This Constitution is, as the solemn expresson of the will of the people, the supreme law of the Republic, and if any other law is inconsistent with this Constitution that other law shall, to the extent of the inconsistency, be void.”

এ সিদ্ধান্তের দ্বারা আমরা নিজেদের রচিত সংবিধানের আইন ও বিধানকে কুরআন ও সুন্নাহের আইন ও বিধানের উপর মর্যাদা দান করেছি। বিচার কার্য অহীর বিধানানুযায়ী পরিচালিত না করে তা পাশ্চাত্য বা নিজেদের রচিত বিধানানুযায়ী করছি। এভাবে আমরা সৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও নিজেদেরকে স্রষ্টার আসনে বসিয়ে দিয়েছি এবং এ জাতীয় কর্ম করে নিজেদের অজান্তেই নিজেদেরকে আল্লাহর রুবূবিয়্যাতে শরীক করে নিয়েছি।

এ হেন অভিযোগ থেকে কেবল তারাই মুক্তি পেতে পারেন যারা আল্লাহর আইন ও বিধানকে কোনো প্রকার অবজ্ঞা না করে সর্বকালে তা বাস্তবায়নের যোগ্য বলে মনে করেন, ক্ষমতায় যেতে না পারলে ইসলাম বিরোধী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক যাবতীয় ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে কোনো প্রকার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছাড়াই শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতায় যেয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা ও তদবীর করেন।

কিন্তু যারা শুধু সেমিনার, সেম্মোজিয়াম ও বক্তৃতায় দাঁড়িয়ে ইসলামী বিধানের মৌখিকভাবে প্রশংসা করেন এবং শুধুমাত্র সমস্যাদির কথা ভেবে তা বাস্তবায়ন করার জন্য কোনো প্রকার বাস্তব উদ্যোগ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন, তারা আল্লাহর রুবূবিয়্যাতে শির্ক করা থেকে বাঁচতে পারলেও কোনো অবস্থাতেই তারা কবীরা গুনাহ থেকে মুক্ত হতে পারবেন না কেননা, একজন মুসলিম বা একটি মুসলিম রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও অনুসারীদের ঈমানী দায়িত্ব হচ্ছে- ক্ষমতায় গিয়ে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী দেশ ও বিচার কার্য পরিচালনার জন্য সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করা, যারা তা চায় তাদের সহযোগিতা গ্রহণ করা। নিজে চাইবো না বা যারা তা চায় তাদের সহযোগিতাও করবো না, এমন মুনাফিকী চরিত্র নিজের আখেরাত সম্পর্কে সচেতন কোনো মুসলিমের কশ্মিনকালেও হতে পারে না।


আল্লাহ سبحانه و تعالى পবিত্র কোরআনে বলেন,

“অতঃপর (হে নবী), আমি তোমাকে দ্বীনের এক (বিশেষ) পদ্ধতির উপর এনে স্থাপন করেছি,অতঃএব তুমি শুধু তারই অনুসরণ কর, (শরীয়তের ব্যপারে) সেসব লোকদের অনুসরণ করো না,যারা (আখেরাত সম্পর্কে) কিছুই জানেনা” (৪৫.জাসিয়া : ১৮)

আয়াতে ব্যবহৃত ‘এক (বিশেষ) পদ্ধতি’ বলতে শরিয়াহ বোঝানো হয়েছে, যে আইন ব্যবস্থার প্রত্যকটি হুকুম আল্লাহর سبحانه و تعالى পক্ষ থেকে মোহাম্মাদ (সাঃ) মাধ্যমে সরাসরি এসেছে অথবা উৎসরিত হয়েছে। শরীয়ার ব্যপারে একটি প্রচলিত ভুল ধারণা হল (যা West promoted,সাধারণ জনতার মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে), এটি শুধু মাত্র ধর্মীয় কিছু ব্যপারে আদেশ-নিষেধ সম্বলিত রীতি-নীতি বিশেষ। উপরোল্লেখিত আয়াত থেকে আমরা দেখি, আল্লাহ سبحانه و تعالى আমাদের জাহেল (যারা মানব রচিত আইনে বিশ্বাসী) ও নাস্তিকদের অনুসরণ না করার জন্য আদেশ করেছেন। কেউ যদি আল্লাহর বিরোদ্ধচারী আইন (মানব রচিত/মানব উৎসরিত আইন) অনুসরণ করে অথবা নিজের খেয়াল খুশির মত চলে, তখন সে তাদের (জাহেল/নাস্তিক) অনুসরণ করলো,যা আল্লাহ سبحانه و تعالى পরিষ্কার ভাবে নিষেধ করে দিয়েছেন। এ ব্যপারে একটি হাদিস আছে, যা আলি (রাঃ) থেকে বর্ণিত,

মোহাম্মাদ (সাঃ) বলেন “সেখানে কোন আনুগত্যের নেই,যেখানে আল্লাহর আনুগত্য নেই, বস্তুতঃ আনুগত্য সেখানেই, যেটা সঠিক” (বুখারি এবং মুসলিম)।

আইন প্রণয়ন (যার উৎস মানুষ) অথবা ভিন্ন কোন আইন প্রতিষ্ঠা অথবা যেসব আইন ইসলাম থেকে উৎসরিত নয়, সেসব হচ্ছে শিরক এবং নিজেকে আল্লাহর سبحانه و تعالى ক্ষমতার বিরুদ্ধে নিজেকে উপস্থাপন করা। যেটা এই আয়াতে বলে হয়েছে,

“এদের কি এমন কোন শরীক আছে, যারা এদের জন্য এমন কোন বিধান প্রণয়ন করে নিয়েছে,যার অনুমতি আল্লাহ তায়ালা দান করেননি, যদি (আযাবের মাধ্যমে) সিদ্ধান্ত নেওয়া হত তাহলে কবেই তাদের মধ্যে একটা ফয়সালা হয়ে যেত; অবশ্যই যালেমদের জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে” (৪২.আশ শুরা : ২১)


আল্লাহ سبحانه و تعالى এ আয়াতে পরিষ্কার ভাবে ঘোষনা করেছেন যে, আল্লাহর আইনের পাশাপাশি কোন আইন উদ্ভাবন বা প্রতিষ্ঠা করা হলো তাঁর سبحانه و تعالى বিরুদ্ধে শরীক করা (শিরক হলো আল্লাহর ক্ষমতার সাথে ভিন্ন কোন ক্ষমতার ঘোষনা দেয়া/প্রতিষ্ঠা করা, যা আল্লাহ سبحانه و تعالى নিজের উপর ‘জুলুম’ হিসেবে ঘোষনা করেছেন,যার গোনাহ কখনো ক্ষমা হবার নয়)। প্রত্যেক মুসলিমই জানে (যাদের ইসলাম সম্পর্কে কিঞ্চিত জ্ঞান আছে) যে, ইসলাম শুধু মাত্র কিছু আধ্যাতিক অনুষ্ঠান পালন সর্বস্ব কোন ধর্ম নয়- বরং তার চেয়ে বেশি কিছু,এটি পুর্ণাঙ্গ ঐশ্বরিক জীবন ব্যবস্থা। তাই, কোন আইন, যা আমাদের রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালনা করে, তা কেবল আল্লাহরই سبحانه و تعالى অধিকার, যিনি আসমান ও যমিন সমূহের অধিকর্তা।

আমাদের বিচার-ফয়সলা (আদালত) সবসময় অবশ্যই শরিয়াহ মোতাবেক হতে হবে,যা আল্লাহ سبحانه و تعالى প্রদত্ত। আল্লাহ سبحانه و تعالى বলেন,

“ হে ঈমানদার মানুষেরা, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর,আনুগত্য কর (তাঁর) রাসূলের এবং সে সব লোকদের,যারা তোমাদের মাঝে দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত,অতঃপরও কোন ব্যপারে যদি তোমরা মতবিরোধ করো, তাহলে সে বিষয়টি (ফয়সলার জন্য) আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাও,যদি তোমরা (সত্যিকার অর্থে) আল্লাহর উপর ও শেষ বিচার দিবসের উপর ঈমান এনে থাকো! (তাহলে) এ পদ্ধতিই হবে (তোমাদের বিরোধ মীমাংসার) সর্বোৎকৃষ্ট উপায় এবং বিরোধপুর্ণ বিষয় সমূহের ব্যাখ্যার দিক থেকেও (এটি) হচ্ছে উত্তম পন্থা ” (৪.নিসা : ৫৯)

আল্লাহ سبحانه و تعالى মানবজাতিকে তাঁর সাথে শিরক করা থেকে সাবধান করে দিয়েছেন। আল্লাহ سبحانه و تعالى বলেন,

“ (যারা অহঙ্কারী) তাদের মধ্যে যদি কেউ এ কথা বলে আল্লাহ তায়ালার বদলে আমিই হচ্ছি মাবুদ,তাহলে তাকে আমি জাহান্নামের (কঠিন) শাস্তি দেবো, (মূলত) আমি জালেমদের এভাবেই শাস্তি দেই” (২১. আল-আম্বিয়া : ২৯)


আমি আল্লাহর ওপর ভরসা করে বলছি যে, আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত বিধান দিয়ে রাষ্ট্র চালানো বা বিচার-ফয়সালা করা তাওহীদে রুবূবীয়্যাতের অন্তর্ভুক্ত। কেননা তাতে আল্লাহর রুবূবিয়্যাত, পরিপূর্ণ রাজত্ব এবং পরিচালনা ক্ষমতার দাবী অনুযায়ী তাঁর হুকুম কার্যকর করার নামান্তর। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ٱتَّخَذُوٓاْ أَحۡبَارَهُمۡ وَرُهۡبَٰنَهُمۡ أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِ وَٱلۡمَسِيحَ ٱبۡنَ مَرۡيَمَ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُوٓاْ إِلَٰهٗا وَٰحِدٗاۖ لَّآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۚ سُبۡحَٰنَهُۥ عَمَّا يُشۡرِكُونَ ٣١﴾ [التوبة: ٣١]

“তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের আলিম ও ধর্ম-যাজকদেরকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে এবং মারইয়ামের পুত্র মাসীহকেও অথচ তাদের প্রতি শুধু এ আদেশ দেওয়া হয়েছে যে, তারা শুধুমাত্র এক মা‘বূদের ইবাদাত করবে, যিনি ব্যতীত মা‘বূদ হওয়ার যোগ্য কেউ নয়। তিনি তাদের অংশী স্থাপন করা হতে পবিত্র।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৩১]

এখানে আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহূদী-নাসারাদের ধর্ম-যাজকদেরকে রব হিসেবে নাম করণ করেছেন। কারণ, তারাও আল্লাহর বিধানের মত বিধান রচনা করত। তাদের রচিত বিধানের অনুসারীদেরকে গোলাম বা বান্দা হিসেবে নাম দেওয়া হয়েছে। কারণ, তারা আল্লাহর বিধানের বিরোধীতা করে ঐ সব পাদ্রি ও আলিমদের কাছে নতি স্বীকার করত এবং তাদের অনুসরণ করত। আদী ইবন হাতেম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, তারা তো তাদের ইবাদাত করে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা হালালকে হারাম করে এবং হারামকে হালাল করে। আর সাধারণ লোকেরা তাদের অনুসরণ করে থাকে। এটার নামই ইবাদাত।


আপনি জেনে নিন, যে ব্যক্তি আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করে না; বরং অন্যের বিধান দ্বারা বিচার-ফায়সালা করতে চায়, তাদের ব্যাপারে কুরআনের আয়াতগুলো দু’ভাগে বিভক্ত। প্রথম প্রকারের আয়াতে তাদেরকে ঈমানহীন (মুনাফিক) দ্বিতীয় প্রকারের আয়াতে কাফির, যালেম ও ফাসিক বলা হয়েছে। ,

﴿أَلَمۡ تَرَ إِلَى ٱلَّذِينَ يَزۡعُمُونَ أَنَّهُمۡ ءَامَنُواْ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ وَمَآ أُنزِلَ مِن قَبۡلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُوٓاْ إِلَى ٱلطَّٰغُوتِ وَقَدۡ أُمِرُوٓاْ أَن يَكۡفُرُواْ بِهِۦۖ وَيُرِيدُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَن يُضِلَّهُمۡ ضَلَٰلَۢا بَعِيدٗا ٦٠ وَإِذَا قِيلَ لَهُمۡ تَعَالَوۡاْ إِلَىٰ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ وَإِلَى ٱلرَّسُولِ رَأَيۡتَ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ يَصُدُّونَ عَنكَ صُدُودٗا ٦١ فَكَيۡفَ إِذَآ أَصَٰبَتۡهُم مُّصِيبَةُۢ بِمَا قَدَّمَتۡ أَيۡدِيهِمۡ ثُمَّ جَآءُوكَ يَحۡلِفُونَ بِٱللَّهِ إِنۡ أَرَدۡنَآ إِلَّآ إِحۡسَٰنٗا وَتَوۡفِيقًا ٦٢ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ يَعۡلَمُ ٱللَّهُ مَا فِي قُلُوبِهِمۡ فَأَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَعِظۡهُمۡ وَقُل لَّهُمۡ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ قَوۡلَۢا بَلِيغٗا ٦٣ وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ وَلَوۡ أَنَّهُمۡ إِذ ظَّلَمُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ جَآءُوكَ فَٱسۡتَغۡفَرُواْ ٱللَّهَ وَٱسۡتَغۡفَرَ لَهُمُ ٱلرَّسُولُ لَوَجَدُواْ ٱللَّهَ تَوَّابٗا رَّحِيمٗا ٦٤ فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥﴾ [النساء: ٦٠، ٦٥]

“আপনি কি তাদেরকে দেখেন নি, যারা দাবী করে যে, আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে তারা সে সমস্ত বিষয়ের উপর ঈমান এনেছে। তারা বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলো সমাধানের জন্য শয়তানের কাছে নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদেরকে আদেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা ওকে মান্য না করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়। আর যখন আপনি তাদেরকে বলবেন, তোমরা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান এবং তাঁর রাসূলের দিকে এসো তখন আপনি মুনাফিকদিগকে দেখবেন, ওরা আপনার কাছ থেকে সম্পূর্ণভাবে সরে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় যদি তাদের কৃতকর্মের দরুন বিপদ আরোপিত হয়, তখন কেমন হবে? অতঃপর তারা আল্লাহর নামে কসম খেয়ে ফিরে আসবে যে, কল্যাণ ও সমঝোতা ছাড়া আমাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। এরা হলো সে সমস্ত লোক, যাদের মনের গোপন বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা অবগত।

অতএব, আপনি ওদেরকে উপেক্ষা করুন এবং ওদেরকে সদুপদেশ দিয়ে এমন কোনো কথা বলুন, যা তাদের জন্য কল্যাণকর। বস্তুতঃ আমি একমাত্র এ উদ্দেশ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি, যাতে আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী তাদের (রাসূলগণের) আদেশ-নিষেধ মান্য করা হয়। আর সেসব লোক যখন নিজেদের অনিষ্ট সাধন করেছিল, তখন যদি আপনার কাছে আসত অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং রাসূলও যদি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন, অবশ্যই তারা আল্লাহকে ক্ষমাকারী, মেহেরবান রূপে পেত। অতএব, তোমার রবর কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর আপনার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা সন্তুষ্ট চিত্তে কবূল করে নিবে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬০-৬৫]

এখানে আল্লাহ তা‘আলা ঈমানের দাবীদার মুনাফিকদের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন:

(১) মুনাফিকদের প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো, তারা তাগুতের নিকট বিচার-ফায়সালার জন্য গমণ করে থাকে। প্রত্যেক ঐ বিষয় বা ব্যক্তির নামই তাগুত, যে আল্লাহর বিধানের বিরোধীতা করে। সমস্ত বিচার-ফায়সালা এবং হুকুমের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। বলেন,

﴿أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ﴾ [الاعراف: ٥٤]

“জেনে রাখ! তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ করা। আল্লাহ বরকতময় যিনি বিশ্বজগতের রব।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৪]

(২) তাদেরকে আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয় এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে আহ্বান করা হলে তারা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

(৩) তারা কোনো বিপদে পড়লে অথবা তাদের কৃতকর্ম মানুষের কাছে প্রকাশিত হয়ে গেলে শপথ করে বলে থাকে যে, সৎ উদ্দেশ্য এবং পরিস্থিতি শান্ত রাখা ব্যতীত আমাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। বর্তমানে যারা ইসলামের বিধান বাদ দিয়ে মানব রচিত বিধান দিয়ে রাষ্ট্র চালায়, তাদের কথাও একই রকম। তারা বলে, আমাদের উদ্দেশ্য হলো যুগোপযোগী শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষের উপকার সাধন করা।

আল্লাহ তা‘আলা উপরোক্ত চরিত্রের অধিকারী মুনাফেকদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্তরের খবর জানেন এবং তাদেরকে নসীহত করার জন্য এবং কঠোর ভাষায় কথা বলার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ দিয়েছেন। রাসূল পাঠানোর উদ্দেশ্য হলো, যাতে শুধুমাত্র তাঁদেরই অনুসরণ করা হয়। অন্য মানুষের অনুসরণ নয়। তাদের চিন্তাধারা ও মতবাদ যতই শক্তিশালী হোক না কেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নিজের রুবূবীয়্যাতের শপথ করে তাঁর রাসূলকে বলছেন যে, তিনটি বিষয়ের সমন্বয় ব্যতীত কারও ঈমান সংশোধন হবে না।

  1. সকল প্রকার বিরোধপূর্ণ বিষয়ে রাসূলের দিকে ফিরে আসা।
  2. রাসূলের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার জন্য অন্তরকে প্রশস্ত করা।
  3. পরিপূর্ণভাবে রাসূলের ফায়সালাকে মেনে নেওয়া এবং কোনো প্রকার শীথিলতা ব্যতীত তা বাস্তবে রূপদান করা।

দ্বিতীয় প্রকারের আয়াতসমূহে আল্লাহ বলেন,

﴿وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡكَٰفِرُونَ﴾ [المائ‍دة: ٤٤]

“যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করে না, তারা কাফির।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৪৪]

﴿وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ﴾ [المائ‍دة: ٤٥]

“যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করে না, তারা যালেম।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৪৫]

﴿وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ﴾ [المائ‍دة: ٤٧]

“যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করে না, তারা ফাসিক।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৪৭]

যারা আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করে না তাদেরকে আল্লাহ উপরের তিনিটি আয়াতে পরপর কাফির, যালেম এবং ফাসিক বলেছেন। তিনটি গুণই কি এক ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে? অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করল না, সে কাফির, ফাসিক এবং যালেমও বটে। কেননা আল্লাহ কাফিরদেরকে যালেম এবং ফাসিক হিসেবেও বর্ণনা করেছেন।


আল্লাহ বলেন,

﴿وَٱلۡكَٰفِرُونَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ﴾ [البقرة: ٢٥٤]

“বস্তুতঃ কাফিররাই প্রকৃত যালেম।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৫৪]

আল্লাহ বলেন,

﴿إِنَّهُمۡ كَفَرُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَمَاتُواْ وَهُمۡ فَٰسِقُونَ﴾ [التوبة: ٨٤]

“তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফুরী করেছে এবং ফাসিক অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৮৪]

প্রত্যেক কাফির-ই কি যালেম এবং ফাসিক? নাকি আল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা না করার কারণে বিভিন্ন প্রকার মানুষের ওপর অবস্থাভেদে এ সমস্ত বিধান প্রযোজ্য হবে। দ্বিতীয় মতটি আমার নিকট গ্রহণযোগ্য। অর্থাৎ আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার না করলে মানুষ কখনো কাফির হয়, কখনো যালেম হয় আবার অবস্থাভেদে কখনো ফাসিক হয়।

সুতরাং আমি বলব যে, যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানকে অবজ্ঞা ও তুচ্ছ মনে করে এবং অন্য বিধানকে অধিক উপযোগী ও উপকারী মনে করে তার মাধ্যমে মানুষের বিচার-ফায়সালা করে, তারা ইসলাম থেকে বের হয়ে কাফির হয়ে যাবে। এদের অন্তর্ভুক্ত ঐ সমস্ত লোক, যারা মানুষের জন্য পথ হিসাবে ইসলাম বিরোধী বিধান রচনা করে। তারা তাদের রচিত বিধানকে মানুষের জন্য অধিক উত্তম ও উপযোগী মনে করেই তৈরি করে থাকে। এ কথা স্বাভাবিকভাবেই জ্ঞাত হওয়া যায় যে, মানুষ এক পথ ছেড়ে দিয়ে যখন অন্য পথে চলে, তখন এটা মনে করেই চলে যে, প্রথম পথের চেয়ে দ্বিতীয় পথটি উত্তম।

আর যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে অন্যের বিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করে এবং বিচার-ফায়সালা করে, কিন্তু সে আল্লাহর বিধানকে অবজ্ঞা করে না এবং অন্য বিধানকে অধিক উপকারী এবং উপযোগীও মনে করে না; বরং সে অন্যের উপর প্রভাব বিস্তার কিংবা প্রতিশোধ গ্রহণ করার জন্য এরূপ করে থাকে, তাহলে কাফির হবে না বরং যালেম হিসাবে গণ্য হবে।

এধরনের মানব সৃষ্ট আইনের আনুগত্য করা বা মানব সৃষ্ট আইন রাষ্ট্রে বলবত রাখা মুসলমানের জন্য জায়েজ নাই বরং এটানকরা কুফুরী।









এ পৃথিবীতে মানুষ যদি নিজ থেকে আপনা-আপনি সৃষ্টি হয়ে থাকতো, তা হলে তারা যেমন খুশী চলতে পারতো। তাদের জীবনের যাবতীয় দিক ও বিভাগ শাসন ও পরিচালনা করার জন্য নিজেরাই স্বাধীনভাবে আইন ও বিধান রচনা করতে পারতো। কিন্তু মানুষ আল্লাহর সৃষ্ট জীব হওয়ায় তাদের এ স্বাধীনতা নেই; কেননা, তিনি নিজেই তাদের এ প্রয়োজন পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। এ জন্য দিয়েছেন সর্বকাল ও সর্বস্থানে প্রয়োগের উপযোগী সর্বশেষ অহীর বিধান আল-কুরআন ও তাঁর শেষ নবীর সহীহ সুন্নাহ। এ দু’য়ের মাঝে বর্ণিত যাবতীয় বিধি-বিধান মানুষের ব্যক্তি, পরিবার, ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনে বাস্তবায়ন করা বা না করার ব্যাপারে আল্লাহ তাদেরকে সৃষ্টিগত স্বাধীনতা দিয়ে থাকলেও শরী‘আতগত দিক থেকে তা পালন করা বা না করার ব্যাপারে তিনি তাদেরকে কোনো স্বাধীনতা দান করেন নি,অর্থাদ শরীয়ত অবশ্যই পালনীয়, এটা পালন না করলে কেউ মুসলমান হবে না।

বরংমহান আল্লাহ এ কথা বলে দিয়েছেন যে, যারা স্বেচ্ছায় তা তাদের জীবনে বাস্তবায়ন করবে বা এ জন্য চেষ্টা করবে, তারা আল্লাহর আইনের কাছে আত্মসমর্পণকারী ও তাঁর দাস হিসেবে গণ্য হবে অর্থাদ মুমিন। তারা আল্লাহকেই তাদের জীবনের পরিচালনাকারী ও রব হিসেবে স্বীকৃতি দানকারী হবে। আর যারা তা করবে না, তারা আল্লাহর অবাধ্য হয়ে তাঁর দাসত্বকে অস্বীকারকারী হয়ে নিজেদেরকে নিজেদের ইলাহ ও রব হিসেবে স্বীকৃতি দানকারী হবে। কুরআন ও হাদীসের দ্বারা এ বিষয়টি অত্যন্ত পরিষ্কার থাকা সত্ত্বেও দেখা যায়- বর্তমান বিশ্বে নিজেদেরকে মুসলিম বলে দাবী করেন, তাদের অধিকাংশই তাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে সে ওহীর বিধান বাস্তবায়ন করতে রাজি নন।

তারা এটাকে সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ বলে আখ্যায়িত করেন। বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম ইসলামী রাজনীতির পরিবর্তে পাশ্চাত্য রাজনীতির অনুসরণ ও অনুকরণ করার ফলে দেশে যেমন ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হচ্ছে না, তেমনি শুধুমাত্র বিবাহ, তালাক, উত্তরাধিকার ও পারিবারিক আইন ব্যতীত মানব জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে অহীর যে সব বিধান রয়েছে, তা রাষ্ট্রীয়ভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ যেখানে যাবতীয় আইনের মূল উৎস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার কথা, সেখানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিজেই আইনের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশ পরিচালনার জন্য সংবিধান রচনা করে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি যে, এ সংবিধানে বর্ণিত বিধানের সাথে অপর কোনো বিধানের বিরোধিতা করার কোনো আইনগত অধিকার নেই এবং করলে তা আপনিতেই বাতিল বলে গণ্য হবে। যেমন বাংলাদেশের সংবিধানের ৭ম ধারার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি যে,

This Constitution is, as the solemn expresson of the will of the people, the supreme law of the Republic, and if any other law is inconsistent with this Constitution that other law shall, to the extent of the inconsistency, be void.”

এ সিদ্ধান্তের দ্বারা আমরা নিজেদের রচিত সংবিধানের আইন ও বিধানকে কুরআন ও সুন্নাহের আইন ও বিধানের উপর মর্যাদা দান করেছি। বিচার কার্য অহীর বিধানানুযায়ী পরিচালিত না করে তা পাশ্চাত্য বা নিজেদের রচিত বিধানানুযায়ী করছি। এভাবে আমরা সৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও নিজেদেরকে স্রষ্টার আসনে বসিয়ে দিয়েছি এবং এ জাতীয় কর্ম করে নিজেদের অজান্তেই নিজেদেরকে আল্লাহর রুবূবিয়্যাতে শরীক করে নিয়েছি।

এ হেন অভিযোগ থেকে কেবল তারাই মুক্তি পেতে পারেন যারা আল্লাহর আইন ও বিধানকে কোনো প্রকার অবজ্ঞা না করে সর্বকালে তা বাস্তবায়নের যোগ্য বলে মনে করেন, ক্ষমতায় যেতে না পারলে ইসলাম বিরোধী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক যাবতীয় ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে কোনো প্রকার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছাড়াই শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতায় যেয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা ও তদবীর করেন।

কিন্তু যারা শুধু সেমিনার, সেম্মোজিয়াম ও বক্তৃতায় দাঁড়িয়ে ইসলামী বিধানের মৌখিকভাবে প্রশংসা করেন এবং শুধুমাত্র সমস্যাদির কথা ভেবে তা বাস্তবায়ন করার জন্য কোনো প্রকার বাস্তব উদ্যোগ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন, তারা আল্লাহর রুবূবিয়্যাতে শির্ক করা থেকে বাঁচতে পারলেও কোনো অবস্থাতেই তারা কবীরা গুনাহ থেকে মুক্ত হতে পারবেন না কেননা, একজন মুসলিম বা একটি মুসলিম রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও অনুসারীদের ঈমানী দায়িত্ব হচ্ছে- ক্ষমতায় গিয়ে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী দেশ ও বিচার কার্য পরিচালনার জন্য সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করা, যারা তা চায় তাদের সহযোগিতা গ্রহণ করা। নিজে চাইবো না বা যারা তা চায় তাদের সহযোগিতাও করবো না, এমন মুনাফিকী চরিত্র নিজের আখেরাত সম্পর্কে সচেতন কোনো মুসলিমের কশ্মিনকালেও হতে পারে না।


আল্লাহ سبحانه و تعالى পবিত্র কোরআনে বলেন,

“অতঃপর (হে নবী), আমি তোমাকে দ্বীনের এক (বিশেষ) পদ্ধতির উপর এনে স্থাপন করেছি,অতঃএব তুমি শুধু তারই অনুসরণ কর, (শরীয়তের ব্যপারে) সেসব লোকদের অনুসরণ করো না,যারা (আখেরাত সম্পর্কে) কিছুই জানেনা” (৪৫.জাসিয়া : ১৮)

আয়াতে ব্যবহৃত ‘এক (বিশেষ) পদ্ধতি’ বলতে শরিয়াহ বোঝানো হয়েছে, যে আইন ব্যবস্থার প্রত্যকটি হুকুম আল্লাহর سبحانه و تعالى পক্ষ থেকে মোহাম্মাদ (সাঃ) মাধ্যমে সরাসরি এসেছে অথবা উৎসরিত হয়েছে। শরীয়ার ব্যপারে একটি প্রচলিত ভুল ধারণা হল (যা West promoted,সাধারণ জনতার মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে), এটি শুধু মাত্র ধর্মীয় কিছু ব্যপারে আদেশ-নিষেধ সম্বলিত রীতি-নীতি বিশেষ। উপরোল্লেখিত আয়াত থেকে আমরা দেখি, আল্লাহ سبحانه و تعالى আমাদের জাহেল (যারা মানব রচিত আইনে বিশ্বাসী) ও নাস্তিকদের অনুসরণ না করার জন্য আদেশ করেছেন। কেউ যদি আল্লাহর বিরোদ্ধচারী আইন (মানব রচিত/মানব উৎসরিত আইন) অনুসরণ করে অথবা নিজের খেয়াল খুশির মত চলে, তখন সে তাদের (জাহেল/নাস্তিক) অনুসরণ করলো,যা আল্লাহ سبحانه و تعالى পরিষ্কার ভাবে নিষেধ করে দিয়েছেন। এ ব্যপারে একটি হাদিস আছে, যা আলি (রাঃ) থেকে বর্ণিত,

মোহাম্মাদ (সাঃ) বলেন “সেখানে কোন আনুগত্যের নেই,যেখানে আল্লাহর আনুগত্য নেই, বস্তুতঃ আনুগত্য সেখানেই, যেটা সঠিক” (বুখারি এবং মুসলিম)।

আইন প্রণয়ন (যার উৎস মানুষ) অথবা ভিন্ন কোন আইন প্রতিষ্ঠা অথবা যেসব আইন ইসলাম থেকে উৎসরিত নয়, সেসব হচ্ছে শিরক এবং নিজেকে আল্লাহর سبحانه و تعالى ক্ষমতার বিরুদ্ধে নিজেকে উপস্থাপন করা। যেটা এই আয়াতে বলে হয়েছে,

“এদের কি এমন কোন শরীক আছে, যারা এদের জন্য এমন কোন বিধান প্রণয়ন করে নিয়েছে,যার অনুমতি আল্লাহ তায়ালা দান করেননি, যদি (আযাবের মাধ্যমে) সিদ্ধান্ত নেওয়া হত তাহলে কবেই তাদের মধ্যে একটা ফয়সালা হয়ে যেত; অবশ্যই যালেমদের জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে” (৪২.আশ শুরা : ২১)


আল্লাহ سبحانه و تعالى এ আয়াতে পরিষ্কার ভাবে ঘোষনা করেছেন যে, আল্লাহর আইনের পাশাপাশি কোন আইন উদ্ভাবন বা প্রতিষ্ঠা করা হলো তাঁর سبحانه و تعالى বিরুদ্ধে শরীক করা (শিরক হলো আল্লাহর ক্ষমতার সাথে ভিন্ন কোন ক্ষমতার ঘোষনা দেয়া/প্রতিষ্ঠা করা, যা আল্লাহ سبحانه و تعالى নিজের উপর ‘জুলুম’ হিসেবে ঘোষনা করেছেন,যার গোনাহ কখনো ক্ষমা হবার নয়)। প্রত্যেক মুসলিমই জানে (যাদের ইসলাম সম্পর্কে কিঞ্চিত জ্ঞান আছে) যে, ইসলাম শুধু মাত্র কিছু আধ্যাতিক অনুষ্ঠান পালন সর্বস্ব কোন ধর্ম নয়- বরং তার চেয়ে বেশি কিছু,এটি পুর্ণাঙ্গ ঐশ্বরিক জীবন ব্যবস্থা। তাই, কোন আইন, যা আমাদের রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালনা করে, তা কেবল আল্লাহরই سبحانه و تعالى অধিকার, যিনি আসমান ও যমিন সমূহের অধিকর্তা।

আমাদের বিচার-ফয়সলা (আদালত) সবসময় অবশ্যই শরিয়াহ মোতাবেক হতে হবে,যা আল্লাহ سبحانه و تعالى প্রদত্ত। আল্লাহ سبحانه و تعالى বলেন,

“ হে ঈমানদার মানুষেরা, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর,আনুগত্য কর (তাঁর) রাসূলের এবং সে সব লোকদের,যারা তোমাদের মাঝে দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত,অতঃপরও কোন ব্যপারে যদি তোমরা মতবিরোধ করো, তাহলে সে বিষয়টি (ফয়সলার জন্য) আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাও,যদি তোমরা (সত্যিকার অর্থে) আল্লাহর উপর ও শেষ বিচার দিবসের উপর ঈমান এনে থাকো! (তাহলে) এ পদ্ধতিই হবে (তোমাদের বিরোধ মীমাংসার) সর্বোৎকৃষ্ট উপায় এবং বিরোধপুর্ণ বিষয় সমূহের ব্যাখ্যার দিক থেকেও (এটি) হচ্ছে উত্তম পন্থা ” (৪.নিসা : ৫৯)

আল্লাহ سبحانه و تعالى মানবজাতিকে তাঁর সাথে শিরক করা থেকে সাবধান করে দিয়েছেন। আল্লাহ سبحانه و تعالى বলেন,

“ (যারা অহঙ্কারী) তাদের মধ্যে যদি কেউ এ কথা বলে আল্লাহ তায়ালার বদলে আমিই হচ্ছি মাবুদ,তাহলে তাকে আমি জাহান্নামের (কঠিন) শাস্তি দেবো, (মূলত) আমি জালেমদের এভাবেই শাস্তি দেই” (২১. আল-আম্বিয়া : ২৯)


আমি আল্লাহর ওপর ভরসা করে বলছি যে, আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত বিধান দিয়ে রাষ্ট্র চালানো বা বিচার-ফয়সালা করা তাওহীদে রুবূবীয়্যাতের অন্তর্ভুক্ত। কেননা তাতে আল্লাহর রুবূবিয়্যাত, পরিপূর্ণ রাজত্ব এবং পরিচালনা ক্ষমতার দাবী অনুযায়ী তাঁর হুকুম কার্যকর করার নামান্তর। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ٱتَّخَذُوٓاْ أَحۡبَارَهُمۡ وَرُهۡبَٰنَهُمۡ أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِ وَٱلۡمَسِيحَ ٱبۡنَ مَرۡيَمَ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُوٓاْ إِلَٰهٗا وَٰحِدٗاۖ لَّآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۚ سُبۡحَٰنَهُۥ عَمَّا يُشۡرِكُونَ ٣١﴾ [التوبة: ٣١]

“তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের আলিম ও ধর্ম-যাজকদেরকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে এবং মারইয়ামের পুত্র মাসীহকেও অথচ তাদের প্রতি শুধু এ আদেশ দেওয়া হয়েছে যে, তারা শুধুমাত্র এক মা‘বূদের ইবাদাত করবে, যিনি ব্যতীত মা‘বূদ হওয়ার যোগ্য কেউ নয়। তিনি তাদের অংশী স্থাপন করা হতে পবিত্র।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৩১]


এখানে আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহূদী-নাসারাদের ধর্ম-যাজকদেরকে রব হিসেবে নাম করণ করেছেন। কারণ, তারাও আল্লাহর বিধানের মত বিধান রচনা করত। তাদের রচিত বিধানের অনুসারীদেরকে গোলাম বা বান্দা হিসেবে নাম দেওয়া হয়েছে। কারণ, তারা আল্লাহর বিধানের বিরোধীতা করে ঐ সব পাদ্রি ও আলিমদের কাছে নতি স্বীকার করত এবং তাদের অনুসরণ করত। আদী ইবন হাতেম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, তারা তো তাদের ইবাদাত করে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা হালালকে হারাম করে এবং হারামকে হালাল করে। আর সাধারণ লোকেরা তাদের অনুসরণ করে থাকে। এটার নামই ইবাদাত।


আপনি জেনে নিন, যে ব্যক্তি আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করে না; বরং অন্যের বিধান দ্বারা বিচার-ফায়সালা করতে চায়, তাদের ব্যাপারে কুরআনের আয়াতগুলো দু’ভাগে বিভক্ত। প্রথম প্রকারের আয়াতে তাদেরকে ঈমানহীন (মুনাফিক) দ্বিতীয় প্রকারের আয়াতে কাফির, যালেম ও ফাসিক বলা হয়েছে। ,

﴿أَلَمۡ تَرَ إِلَى ٱلَّذِينَ يَزۡعُمُونَ أَنَّهُمۡ ءَامَنُواْ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ وَمَآ أُنزِلَ مِن قَبۡلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُوٓاْ إِلَى ٱلطَّٰغُوتِ وَقَدۡ أُمِرُوٓاْ أَن يَكۡفُرُواْ بِهِۦۖ وَيُرِيدُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَن يُضِلَّهُمۡ ضَلَٰلَۢا بَعِيدٗا ٦٠ وَإِذَا قِيلَ لَهُمۡ تَعَالَوۡاْ إِلَىٰ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ وَإِلَى ٱلرَّسُولِ رَأَيۡتَ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ يَصُدُّونَ عَنكَ صُدُودٗا ٦١ فَكَيۡفَ إِذَآ أَصَٰبَتۡهُم مُّصِيبَةُۢ بِمَا قَدَّمَتۡ أَيۡدِيهِمۡ ثُمَّ جَآءُوكَ يَحۡلِفُونَ بِٱللَّهِ إِنۡ أَرَدۡنَآ إِلَّآ إِحۡسَٰنٗا وَتَوۡفِيقًا ٦٢ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ يَعۡلَمُ ٱللَّهُ مَا فِي قُلُوبِهِمۡ فَأَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَعِظۡهُمۡ وَقُل لَّهُمۡ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ قَوۡلَۢا بَلِيغٗا ٦٣ وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ وَلَوۡ أَنَّهُمۡ إِذ ظَّلَمُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ جَآءُوكَ فَٱسۡتَغۡفَرُواْ ٱللَّهَ وَٱسۡتَغۡفَرَ لَهُمُ ٱلرَّسُولُ لَوَجَدُواْ ٱللَّهَ تَوَّابٗا رَّحِيمٗا ٦٤ فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥﴾ [النساء: ٦٠، ٦٥]

“আপনি কি তাদেরকে দেখেন নি, যারা দাবী করে যে, আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে তারা সে সমস্ত বিষয়ের উপর ঈমান এনেছে। তারা বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলো সমাধানের জন্য শয়তানের কাছে নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদেরকে আদেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা ওকে মান্য না করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়। আর যখন আপনি তাদেরকে বলবেন, তোমরা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান এবং তাঁর রাসূলের দিকে এসো তখন আপনি মুনাফিকদিগকে দেখবেন, ওরা আপনার কাছ থেকে সম্পূর্ণভাবে সরে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় যদি তাদের কৃতকর্মের দরুন বিপদ আরোপিত হয়, তখন কেমন হবে? অতঃপর তারা আল্লাহর নামে কসম খেয়ে ফিরে আসবে যে, কল্যাণ ও সমঝোতা ছাড়া আমাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। এরা হলো সে সমস্ত লোক, যাদের মনের গোপন বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা অবগত।


অতএব, আপনি ওদেরকে উপেক্ষা করুন এবং ওদেরকে সদুপদেশ দিয়ে এমন কোনো কথা বলুন, যা তাদের জন্য কল্যাণকর। বস্তুতঃ আমি একমাত্র এ উদ্দেশ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি, যাতে আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী তাদের (রাসূলগণের) আদেশ-নিষেধ মান্য করা হয়। আর সেসব লোক যখন নিজেদের অনিষ্ট সাধন করেছিল, তখন যদি আপনার কাছে আসত অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং রাসূলও যদি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন, অবশ্যই তারা আল্লাহকে ক্ষমাকারী, মেহেরবান রূপে পেত। অতএব, তোমার রবর কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর আপনার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা সন্তুষ্ট চিত্তে কবূল করে নিবে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬০-৬৫]

এখানে আল্লাহ তা‘আলা ঈমানের দাবীদার মুনাফিকদের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন:

(১) মুনাফিকদের প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো, তারা তাগুতের নিকট বিচার-ফায়সালার জন্য গমণ করে থাকে। প্রত্যেক ঐ বিষয় বা ব্যক্তির নামই তাগুত, যে আল্লাহর বিধানের বিরোধীতা করে। সমস্ত বিচার-ফায়সালা এবং হুকুমের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। বলেন,

﴿أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ﴾ [الاعراف: ٥٤]

“জেনে রাখ! তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ করা। আল্লাহ বরকতময় যিনি বিশ্বজগতের রব।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৪]

(২) তাদেরকে আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয় এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে আহ্বান করা হলে তারা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

(৩) তারা কোনো বিপদে পড়লে অথবা তাদের কৃতকর্ম মানুষের কাছে প্রকাশিত হয়ে গেলে শপথ করে বলে থাকে যে, সৎ উদ্দেশ্য এবং পরিস্থিতি শান্ত রাখা ব্যতীত আমাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। বর্তমানে যারা ইসলামের বিধান বাদ দিয়ে মানব রচিত বিধান দিয়ে রাষ্ট্র চালায়, তাদের কথাও একই রকম। তারা বলে, আমাদের উদ্দেশ্য হলো যুগোপযোগী শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষের উপকার সাধন করা।

আল্লাহ তা‘আলা উপরোক্ত চরিত্রের অধিকারী মুনাফেকদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্তরের খবর জানেন এবং তাদেরকে নসীহত করার জন্য এবং কঠোর ভাষায় কথা বলার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ দিয়েছেন। রাসূল পাঠানোর উদ্দেশ্য হলো, যাতে শুধুমাত্র তাঁদেরই অনুসরণ করা হয়। অন্য মানুষের অনুসরণ নয়। তাদের চিন্তাধারা ও মতবাদ যতই শক্তিশালী হোক না কেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নিজের রুবূবীয়্যাতের শপথ করে তাঁর রাসূলকে বলছেন যে, তিনটি বিষয়ের সমন্বয় ব্যতীত কারও ঈমান সংশোধন হবে না।

  1. সকল প্রকার বিরোধপূর্ণ বিষয়ে রাসূলের দিকে ফিরে আসা।
  2. রাসূলের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার জন্য অন্তরকে প্রশস্ত করা।
  3. পরিপূর্ণভাবে রাসূলের ফায়সালাকে মেনে নেওয়া এবং কোনো প্রকার শীথিলতা ব্যতীত তা বাস্তবে রূপদান করা।

দ্বিতীয় প্রকারের আয়াতসমূহে আল্লাহ বলেন,

﴿وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡكَٰفِرُونَ﴾ [المائ‍دة: ٤٤]

“যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করে না, তারা কাফির।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৪৪]

﴿وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ﴾ [المائ‍دة: ٤٥]

“যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করে না, তারা যালেম।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৪৫]

﴿وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ﴾ [المائ‍دة: ٤٧]

“যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করে না, তারা ফাসিক।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৪৭]

যারা আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করে না তাদেরকে আল্লাহ উপরের তিনিটি আয়াতে পরপর কাফির, যালেম এবং ফাসিক বলেছেন। তিনটি গুণই কি এক ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে? অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করল না, সে কাফির, ফাসিক এবং যালেমও বটে। কেননা আল্লাহ কাফিরদেরকে যালেম এবং ফাসিক হিসেবেও বর্ণনা করেছেন।


আল্লাহ বলেন,

﴿وَٱلۡكَٰفِرُونَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ﴾ [البقرة: ٢٥٤]

“বস্তুতঃ কাফিররাই প্রকৃত যালেম।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৫৪]

আল্লাহ বলেন,

﴿إِنَّهُمۡ كَفَرُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَمَاتُواْ وَهُمۡ فَٰسِقُونَ﴾ [التوبة: ٨٤]

“তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফুরী করেছে এবং ফাসিক অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৮৪]

প্রত্যেক কাফির-ই কি যালেম এবং ফাসিক? নাকি আল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা না করার কারণে বিভিন্ন প্রকার মানুষের ওপর অবস্থাভেদে এ সমস্ত বিধান প্রযোজ্য হবে। দ্বিতীয় মতটি আমার নিকট গ্রহণযোগ্য। অর্থাৎ আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার না করলে মানুষ কখনো কাফির হয়, কখনো যালেম হয় আবার অবস্থাভেদে কখনো ফাসিক হয়।

সুতরাং আমি বলব যে, যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানকে অবজ্ঞা ও তুচ্ছ মনে করে এবং অন্য বিধানকে অধিক উপযোগী ও উপকারী মনে করে তার মাধ্যমে মানুষের বিচার-ফায়সালা করে, তারা ইসলাম থেকে বের হয়ে কাফির হয়ে যাবে। এদের অন্তর্ভুক্ত ঐ সমস্ত লোক, যারা মানুষের জন্য পথ হিসাবে ইসলাম বিরোধী বিধান রচনা করে। তারা তাদের রচিত বিধানকে মানুষের জন্য অধিক উত্তম ও উপযোগী মনে করেই তৈরি করে থাকে। এ কথা স্বাভাবিকভাবেই জ্ঞাত হওয়া যায় যে, মানুষ এক পথ ছেড়ে দিয়ে যখন অন্য পথে চলে, তখন এটা মনে করেই চলে যে, প্রথম পথের চেয়ে দ্বিতীয় পথটি উত্তম।

আর যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে অন্যের বিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করে এবং বিচার-ফায়সালা করে, কিন্তু সে আল্লাহর বিধানকে অবজ্ঞা করে না এবং অন্য বিধানকে অধিক উপকারী এবং উপযোগীও মনে করে না; বরং সে অন্যের উপর প্রভাব বিস্তার কিংবা প্রতিশোধ গ্রহণ করার জন্য এরূপ করে থাকে, তাহলে কাফির হবে না বরং যালেম হিসাবে গণ্য হবে।

এধরনের মানব সৃষ্ট আইনের আনুগত্য করা বা মানব সৃষ্ট আইন রাষ্ট্রে বলবত রাখা মুসলমানের জন্য জায়েজ নাই বরং এটা করা কুফুরী।


প্রশ্ন:মানব সৃষ্টা আইনে গঠিত দেশে মুসলমানদের করনীয় কি?

উত্তর: আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার চপষ্টা করা। 

রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

আমি কেনো ৭১ চেতনা ঘৃনা ভরে প্রত্যাখ্যান করি

 আমি কেনো ৭১ চেতনা ঘৃনা ভরে প্রত্যাখ্যান করি

চেতনা ৭১ ঘৃনা ভরে প্রত্যাখ্যান করি


১। এই ৭১ চেতনাই শেখ মুজিবের মত একজন জনপ্রিয় নেতাকে স্বৈরাচার বানিয়েছে।

২। বাকশাল নামক একদলীয় স্বৈরাচারী শাসন জন্ম দিয়েছে।

৩। এই ৭১ চেতনাই বাংলাদেশকে ভারতের গোলাম বানিয়েছে।

৪। এ চেতনাই রক্ষী বাহিনীর অত্যাচারকে বৈধতা দিয়েছে।

৫। এই চেতনা স্বাধীনতা পরবর্তীতে দূর্ভিক্ষের কারন।

৭। এই চেতনাই মুজিব পরিবারকে বাংলাদেশের ব্যাংক লুটের লাইসেন্স দিয়েছে।

৮। এই চেতনা মহান মুক্তিযুদ্ধের পর শহীদের তালিকা প্রনয়নে বাঁধা দিয়েছে।

৯। একাত্তর চেতনা গনতন্ত্র ধ্বংস করেছে।

১০। একাত্তর চেতনা শেখ পরিবারকে বাংলাদেশের মানুষকে তাদের পারিবারিক গোলাম ভাবতে শিখিয়েছে।

১১। এই চেতনাই মানুষকে ধর্মহীনতার দিকে টেনে নিয়ে যায়।

১২। চেতনা ৭১ মানুষকে হাসিনার স্বৈরশাসনের সুযোগ তৈরী করেছে।

১৩। এই চেতনাই বাংলাদেশে জিকে শামীম, সম্রাট, পাপিয়াদের মত ডাকাতদের তৈরী করেছে।

১৪। এই চেতনাই আয়নাঘরের জন্ম দিয়েছে।

১৫। একাত্তর চেতনা আলেম ও ইসলামের উপর তীব্র আঘাত এনেছে।

১৬। এই চেতনাই রডের বদলে বাঁশের জন্ম দিয়েছে।

১৭। এই চেতনা সীমান্তের কাঁটা তারে ফেলানীর লাশ ঝুলিয়েছে।

১৮। এই চেতনা বিডিআর কে ধ্বংশ করেছে।

১৯।এই চেতনাই ১৪০০এর উপর ছাত্র জনতাকে হত্যা করেছে এবং বহু ছাত্র-জনতাকে পঙ্গুু করেছে।

২০। এই চেতনাই হেলিকপ্টার হতে গুলি চালিয়ে শিশু মায়ের কোলে শিশু হত্যা করেছে।

বাংলাদেশে বিগত ৫৪ বছরে যত রাজনৈতিক অবিচার ও অনবিচার জন্ম হয়েছ সব কিছুরই জন্ম দাতা এই চেতনায় একাত্তর।

তাইতো আমি চেতনায় ৭১ ধারন ও লালন লরি না, বরং ঘৃনা ভরে প্রত্যাখ্যান করি। 
কিন্তু আপনি কোন যুক্তিতে চেতনায় ৭১ লালন করেন?

পলাতক শেখ হাসিনা আইনত এখনও প্রধানমন্ত্রী!!

পলাতক শেখ হাসিনা আইনত এখনও প্রধানমন্ত্রী!!!

হাসিনা পালাইছে


মানব জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য শাসক শেখ হাসিনা বিগত ১৪বছর ৭মাস যাবত বাংলাদেশের মানুষকে কঠিন শাসন ও নির্যাতন করেছে, এ যেন ফেরাউনকেও হার মানায়। তার পর ৫ আগষ্ট ২০২৪ ছাত্র-জনতার আন্দোলনের তোপে পড়ে বিনা ঘোষনায় কিংবা পূর্ব ঘোষনা ব্যাতিতই পদত্যাগ করে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।পালিয়ে যাওয়ার পর এখন আবার নতুন ডায়লগ দিচ্ছে শেখ হাসিনা নাকি পদত্যাগ করে নি, সে আইনত বাংলাদেশের এখনও বৈধ প্রধানমন্ত্রী। আসুন এই খুনী হাসিনার প্রধান মন্ত্রীত্বের বৈধতা নিয়ে আলোচনা করি।

হাসিনা বৈধ প্রধানমন্ত্রী দাবী করে যে যুক্তিগুলো ফ্যাসিস্টের সমর্থকরা দাঁড় করায় সে গুলো হলো:
১। সে পদত্যাগ করে নি।

২। সে পদত্যাগ করলে পদত্যাগ পত্র কোথায়?

৩।সে কার কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছে?

হাসিনা যদি বৈধ প্রধানমন্ত্রী হোন তাইলে আওয়ামিলীগ এর বেহায়াদের নিকট আমারও কিছু প্রশ্ন আছে:
১। সে বৈধ প্রধানমন্ত্রী হলে দেশ ছেড়ে পালালো কেনো?

২। যদি ধরেই নেই তাকে ছাত্র জনতা বাধ্য করেছে দেশ ছাড়তে তাইলে যে দেশের জনগন তাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছ, সে দেশের জনগন তাকে আর চায় না এটাই সত্য, তো দেশের লোক তাকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে যেহেতু চায় না সেহেতু তিনি কোন কারনে নিজেকে নির্লজ্জের মত প্রধানমন্ত্রী দাবী করে?

৩।যে দিন পালিয়েছিলো এবং যখন পালিয়ে ছিলো তখন তো আর ছাত্র জনতা গনভবনে ছিলো না, তখন তার নিয়োগ করা প্রশাসনই ছিলো, তার প্রশাসন তাকে রক্ষা করলো না কেনো?

৪। সে যদি দেশ ও দেশের জনগন এবং তার কর্মীদের ভালোই বাসতো তাইলে জেলে না গিয়ে স্বার্থপরের মত পালিয়ে গেলেো কেনো?তাও আবার কাউকে না জানিয়ে?

৫। হাসিনা কোন সংসদের প্রধান মন্ত্রী? সংসদ বর্তমানে যেখানে বিলুপ্ত সেখানে ওনি কোন সংসদের রায়ে প্রধান্ত্রী?কে তাকে মানে?

৬। সংসদ যদি বৈধও হয়ে থাকে তাইলে ৯০ দিনের বেশী কেউ সংসদে অনুপস্থিত থাকলে তার সংসদ সদস্য পদ আর থাকে না। ৩০০ জন এমপি যেখানে মাস যাবত অনুপস্থিত ও পলাতক সেখানে সকলের সংসদ সদস্য পদ অটোমেটিক বাতিল, তাইলে তিনি কোন সংসদের রায়ে প্রধানমন্ত্রী?

৭। স্বৈরাচারী হাসিনা যদি বৈধ প্রধানমন্ত্রী হয়েই থাকেন তাইলে পৃথিবীর কোন দেশ তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে গন্য করে না কেনো? কেউ তাকে গন্য করে তা দেখতে পারবে? এমন কি ভারত হতেও স্বীকৃতি আনতে পারবে?

দেশে থাকা লীগ কর্মীদের নিকট কিছু প্রশ্ন:
১। আপনারা কি জুলাই হত্যাকান্ডে হাসিনার সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন?

২। আপনারা কি এই ছাত্র জনতাকে যে হত্যা করেছে হাসিনা তা বৈধ মনে করেন?

৩।আপনারা কি মনে করেন খুনী হাসিনা ছাত্র জনতাকে হত্যা করে নি? তাইলে যে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে পুলিশের লোক ভিডিও দেখিয়ে বলে ছিলো একটা গুলি করলে ১০টা দাঁড়িয়ে যায়, পালায় না, এটাও অস্বীকার করবেন?

৪।আপনারা যে হাসিনার জন্য কাঁদেন সে হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার সময় কি আপনাদের কথা ভেবে ছিলো?আপনারা এত বেহায়া ও নির্লজ্জ কেনো?যে নেত্রী আপনাকে পোঁছে না সে নেত্রীর জন্য এত দরদ কেনো?

৫। আওয়ামিলীগ এর কর্মীরা নিজেকে ছাড়া সবাইকে মানুষ মনে করেন না কেনো? মানুষ মনে করলে এই ছাত্র জনতাকে হত্যার পরও আপনাদের দল অপরাধ স্বীকার না করে বিদেশে গিয়ে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র করছে হাসিনা, আর তা আপনারা সমর্থন করছেন কেনো?

৬। যে হাসিনা আপনাদের এতিম করে পালিয়ে গেলো সে হাসিনার জন্য এখনও কাঁদেন, আপনাদের কি লজ্জা নাই?

৭। এত এত মানুষ হত্যার পরও খুনী হাসিনাকে আপনারা সমর্থন করেন আর এদেশের মানুষেরই প্রধান মন্ত্রী ভাবেন হাসিনাকে? আপনাদের কি নূন্যতম লজ্জা নাই?

৮। কিশোর কুমারের গাওয়া একটা গান মনে পড়ছে আপনাদের কথা ভেবে, " কি আশায় বাঁধি খেলা ঘর বেদনার বালি চরে......"। আমি বলি কতটা নিলজ্জ, বেহায়া আর নির্বোধ হলে মানুষ আওয়ামীলীগকে এখনও সমর্থন করতে পারে?

আমি অভাগা বলে দিলাম আওয়ামিলীগ আর কোনো দিন এদেশে দাঁড়াতে পারবে না।

শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

শাবান মাসে হালুয়া রুটির ফজিলত

 শাবান মাসে হালুয়া রুটির ফজিলত

শবে বরাতের হালুয়া রুটি


হাদিসের ভাষায় "লাইলাতুম মিন নিসফি শাবানকে" উপমহাদেশে শবে বরাত বলা হয়। ‘শবে বরাত’ ফারসি শব্দ। ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত, ‘বরাত’ অর্থ নাজাত বা মুক্তি। এই দুই শব্দ মিলে অর্থ হয় মুক্তির রজনী। 

এই রাতের ফজিলত হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত। হাদিসে এসেছে, এ রাতে আল্লাহ তাঁর সাথে শিরক কারী ও হিংসুক ছাড়া সব সৃষ্টিকে ক্ষমা করেন। এই রাতে মানুষজন বিভিন্ন ধরনের নফল ইবাদত পালন করে থাকেন। ইবাদতের পাশাপাশি শবে বরাত উপলক্ষে হালুয়া রুটি খাওয়ারও প্রচলন রয়েছে অনেকের মাঝে। তবে এটি ইসলামি বিধান সম্মত কোনও বিষয় নয়।

নবীজি কিংবা সাহাবিদের যুগে "শবে বরাতের রাত কিংবা লাইলাতুম মিন নিসফি শাবানকে" কেন্দ্র করে হালুয়া রুটি খাওয়া বা প্রতিবেশিদের মাঝে বিলানোর কোনও প্রচলন ছিলো বলে হাদিসে পাওয়া যায় না। তবে বাংলাদেশে ১৯'শ শতকের শেষের দিকে শব-ই- বরাত পালনের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয় বলে মতামত দিয়েছেন অনেক ইতিহাস বিশ্লেষক।

অনেকে আবার হালুয়া রুটির প্রচলনের বিষয়ে উহুদ যুদ্ধে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাঁত শহিদ হওয়ার ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসেন। বলতে শোনা যায়, উহুদ যুদ্ধে যখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দানদান মোবরক শহীদ হয়েছিল, তখন কিছুদিন কোনো প্রকার শক্ত খাবার খেতে পারতেন না। সেই ঘটনার প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এই দিনে ঘটা করে হালুয়া রুটি খাওয়া হয়। 

এ বিষয়ে দারুর রাশাদ মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস ও মিরপুর বায়তুল ফালাহ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী ঢাকা পোস্টকে বলেন, উহুদ যুদ্ধ তো শাবান মাসের ১৫ তারিখে হয়নি তা হয়েছে শাওয়ালের ৭ তারিখে। সুতরাং যদি সে কেন্দ্রিক কোনো বিষয় থাকত তাহলে তা শাওয়াল মাসের ৭ তারিখে থাকত শাবানের ১৫ তারিখে নয়।

তিনি বলেন, আমাদের এই অঞ্চলে অনেক কাজ-কর্মে শিয়াদের কিছু প্রভাব রয়েছে। তাদের মাধ্যমে মুসলিম সমাজে শবে বরাত উপলক্ষে হালুয়া রুটি খাওয়ার এই প্রচলন শুরু থাকতে পারে।


এই রাতের ফজিলত সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে (শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (সহিহ ইবনে হিববান, হাদিস: ৫৬৬৫; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস: ৬২০৪)।(হাদিসবিশারদদের মতে, হাদিসটির মান সহিহ তথা বিশুদ্ধ)।


তাই সবার উচিত হাদিসে এ রাতের যতটুকু ফজিলত প্রমাণিত আছে শুধু ততটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকা। নবী-সাহাবিদের যুগে প্রচলন ছিলো না এমন কোনও বিষয় ও রসম-রেওয়াজের পিছে পড়ে এর মূল ফজিলত থেকে বঞ্চিত হওয়া কোনও ভাবে ঠিক নয়।


প্রশ্ন: শবে বরাতে হালুয়া রুটি খাওয়া যাবে কি?

উত্তর: শুধু শবেবরাতে নয় সারা বছরই হালুয়া রুটি খেতে পারে যে কোনো মুসলমান, কোনো সমস্যা নাই, তবে বিশেষ দিনে,বিশেষ মাসে এবং বিশেষ সময়ে, বিশেষ সাওয়াবের আশায় হালুয়া রুটি খাওয়া বিদা'ত।



যে ইতিহাস আওয়ামিলীগের মুখে শোনবেন না

 যে ইতিহাস আওয়ামিলীগের মুখে শোনবেন না

আওয়ামী স্বৈরাচার 


আওয়ামিলীগ এই করেছে,সেই করেছে,জাতির স্বাধীনতা এনেছে বলে অনেক কথা শোনবেন তাদের মুখে কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্বৈরাচার,  গৌরী বালা ও অরন্যকুমার চক্রবর্তীর অবৈধ সন্তান শেখ মুজিবের ১৯৭২  থেকে ১৯৭৫ এই চার বছরের শাসনামলের কোনো কথা তাদের মুখে শোনবেন না। এই চার বছর ছিলো ২০০৯ হতে ২০২৪ এই ১৬ বছরের মতই জঘন্য।


আওয়ামী লীগ ৭১-এর স্বাধীনতা থেকে সোজা ৭৫-এর ১৫ আগস্টে চলে যায়। মধ্যখানের ৪ বছর নিয়ে কোনো আলাপ করে না কিংবা করতে কখনো দেখবেন না তাদের। প্রশ্ন হলো, স্বাধীতার পরের ৪ বছরের ইতিহাস প্রজন্ম থেকে আড়াল করার কারণ কী?

সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায় উদ্দাম বিচার এই তিনটি বিষয়ের উপর ঐক্যমতেই ১৯৭১ সালে মুজিনগর সরকার কর্তৃক ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে ছিল। প্রশ্ন হলো, যে ৩টি অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীনতাযুদ্ধ হলো, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সাম্য, ন্যায়বিচার এবং মানবিক মর্যাদা কতটুুকু প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন? ১৯৭২ হতে ১৯৭৫ এই চার বছরে?

১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু লাহোরে ৬ দফা পেশ করেছিল।  প্রথম দফা ছিল, 'লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান রচনা করে পাকিস্তানকে একটি ফেডারেল রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে, যেখানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার থাকবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত আইন পরিষদ সার্বভৌম হবে।' 

প্রশ্ন হলো, যে শেখ মুজিব মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য আন্দোলন করল, তিনি কেন স্বাধীনতার পরই বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে স্বৈরাচার হতে গেলো? কাদের প্ররোচনায় তিনি এমনটি করলেন? এগুলো প্রজন্মের চোখের আড়ালে রাখা হয়েছে যুগ যুগ ধরে।

রাজনৈতিকভাবে সফল নেতা বঙ্গবন্ধু শাসক হিসেবে কেন ব্যর্থ হলেন? আওয়ামী লীগের উচিত ছিল সেটা খতিয়ে দেখা। ভুল সংশোধন করে এগিয়ে যাওয়া। কিন্তু তারা শিক্ষা  না নিয়ে নতুন বাকশালের পথে এগিয়েছিল। নেতা থেকে বঙ্গবন্ধুকে প্রভুর আসনে বসাতে চেয়েছিল!

স্বৈরশাসক শেখ মুজিবের শাসনের ধারাবাহিকতায় দেখা গেলো তারই সুযোগ্য স্বৈরাচার মাফিয়া রানী শেখ হাসিনাও একই কায়দায় ১৬ বছর দেশ শাসন করলো। তৈরী করলো আয়নাঘর নামক নির্যাতন শেল।

ক্ষমতা আর অস্ত্র দিয়ে আপনি মানুষের সাময়িক আনুগত্য পেতে পারেন; কিন্তু হৃদয়ে জায়গা পাবেন না! আশা করি বাংলাদেশের ক্ষমতায় যারা যাবেন, আওয়ামী লীগ থেকে শিক্ষা নেবেন! ইতিহাস আপন গতিপথে চলে। ইতিহাস মুছে ফেলা সম্ভব না!


দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে!

  দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে! এক.   শুনতে খারাপ শোনালেও এটা সত্য, রবীন্দ্রনাথের...