expr:class='"loading" + data:blog.mobileClass'>

Wikipedia

সার্চ ফলাফল

রবিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৫

আহলে হাদিস মতবাদের উৎপত্তির ইতিহাস, এরা ভন্ড

 আহলে হাদিস মতবাদের উৎপত্তির ইতিহাস, এরা ভন্ড





ওহাবী’ শব্দ থেকে ‘আহলে হাদীস’ নামমঞ্জুর যেভাবে?

‘আহলে হাদীস নামক এই দলটি আঠারো শতকের মধ্যভাগে সৈয়দ নজির হোসেন এবং সিদ্দিক হাসান খানের শিক্ষা থেকে উত্তর ভারতে উত্থিত হয়েছিল।’ এর আগে এধরণের মতবাদের কোনো অস্তিত্বই ছিলনা। নামধারী আহলে হাদীস মতবাদের ফাউণ্ডার ব্যক্তিত্ব শীয়া থেকে কনভার্টেট মিয়া নজির হোসেন দেহলভী সাহেবের অনুরোধেই এবং একখানা দরখাস্তের মাধ্যমে ৩রা ডিসেম্বর ১৮৮৯ ইং তদানিন্তন ব্রিটিশ-ভারত সরকারের উচ্চমহল থেকে পূর্বনাম ‘ওহাবী‘ বাদ দিয়ে নতুন নাম ‘আহলে হাদীস‘ নাম মঞ্জুর করেন (প্রামাণ্য স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য)। আধুনিক অনেক আহলে হাদীস ভাই-বেরাদর ব্রিটিশদের এই সহানুভূতি স্বীকার করতে নারাজ। অথচ এটি এমন একটি সত্য ইতিহাস যা অস্বীকার করার কোনো জো নেই। আহলে হাদীস শীর্ষ আলেম, মওলানা সানাউল্লাহ অমৃতসরী (রহ.) রচিত ‘রাসায়েলে সানায়িয়্যাহ‘ (পৃষ্ঠা নং ১০২) কিতাব হতেও এই ইতিহাস পরিষ্কার। 

নতুন এ দলটির মূল টার্গেট ছিল, নানা চটকদার স্লোগানের আড়ালে সাধারণ মানুষের মনে মাযহাব সম্পর্কে সংশয় তৈরি করে দেয়া। মাযহাবকে শির্ক/শিরিক, ব্যক্তিপূজা, বাপ-দাদারধর্ম ইত্যাদি বলে কটাক্ষ করা। অথচ মাযহাব শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘চলার পথ’। পরিভাষায়, ইখতিলাফি মাসয়ালায় নির্ভরযোগ্য কোনো মুজতাহিদের গবেষণালব্ধ ফিকহের (মতের) অনুসরণকে মাযহাব বলে। সিয়াহ সিত্তাহ-র ইমামগণসহ পূর্বেকার বড় বড় ইমামগণও মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। এ সম্পর্কে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য, শ্রেষ্ঠ ধর্মতত্ত্ববিদ শায়খ ছালেহ বিন আল ফাউযান (হাফিঃ) লিখেছেন, و ها هم الأئمة من المحدثين الكبار كانوا مذهبيين، فشيخ الاسلام ابن تيمية وابن القيم كانا حنبليين، والإمام النووي وابن حجر شافعيين، والإمام الطحاوي كان حنفيا وابن عبدالبر كان مالكيا অর্থাৎ বড় বড় হাদীস বিশারদ ইমামগণ মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া, ইমাম ইবনুল কাইয়ুম দুইজনই হাম্বলি মাযহাবের, ইমাম নববী, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী দুইজনই শাফেয়ী মাযহাবের, ইমাম আবু জা’ফর আত ত্বহাবী ছিলেন হানাফী মাযহাবের, ইমাম ইবনে আব্দুল বার ছিলেন মালেকী মাযহাবের। (ই’য়ানাতুল মুস্তাফীদ বি-শারহে কিতাবুত তওহীদ, খণ্ড নং ১ পৃষ্ঠা নং ১২)। এখন মাযহাব মানা শির্ক হলে ঐ সমস্ত বড় বড় ইমামগণও কি মুশরিক ছিল বলবেন? এ পর্যায় আহলে হাদীস নামধারণকারীদের উদ্দেশ্যে শুধু একটা প্রশ্ন করছি, ‘আহলে হাদীস’ শব্দটি তো হাদীস গবেষকদের একটি উপাধি মাত্র। এখন আপনারাও কি প্রত্যেকে হাদীস গবেষক? নইলে আপনাদের জন্য “আহলে হাদীস” পরিচয় ব্যবহার করা সুস্পষ্ট কপিরাইট আইন লঙ্ঘন নয় কি?

নামধারী আহলে হাদীস কিংবা সালাফি দলটির উৎপত্তি ইতিহাস : ‘মুজাহেরে হক্ব’ কিতাবের স্বনামধন্য লেখক মাওলানা কুতুব উদ্দীন (রহ.) তাঁর ‘তুহফাতুল আরব ওয়াল আজম’ (تحفة العرب والعظم) বইতে উল্লিখিত দলটির উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে গেছেন। যার সারসংক্ষেপ এখানে পেশ করা হল, (তিনি লিখেছেন) ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বীর সেনানী সাইয়েদ আহমদ শহীদ, মওলানা ইসমাইল শহীদ ও মওলানা আব্দুল হাই যখন পাঞ্জাবে আগমন করেন তার পরপরই কতিপয় বিভ্রান্ত্রি সৃষ্টিকারীর সমন্বয়ে মাযহাবের (ফিকহ) বিরোধিতাকারী নতুন একটি দলের আত্মপ্রকাশ হয়। যারা হযরত সাইয়েদ আহমদ শহীদ (রহ.)-এর গঠিত ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতাকামী দলের নীতি আদর্শের বাহিরে ও বিদ্রোহী গ্রুপের সদস্য ছিল। এদের মুখপাত্র ছিল মৌলভী আব্দুল হক বেনারসী (মৃত ১২৭৫ হিজরী)। তার এ ধরণের অসংখ্য ভ্রান্ত কর্মকাণ্ডের কারণে সাইয়েদ আহমদ শহীদ পূর্বেই (১২৪৬ হিজরীতে) তাকে নিজ দল থেকে বহিষ্কার করেছিলেন। তখনি গোটা ভারতবর্ষের সকল ধর্মপ্রাণ জনগণ, বিশেষকরে সাইয়েদ আহমদ শহীদ (রহ.)-এর শিষ্য ও অনুসারীগণ মক্কা মদীনার সেসময়কার মুফতীগণের নিকট এ ব্যাপারে ফতুয়া তলব করেন। ফলে সেখানকার তৎকালীন সম্মানিত মুফতীগণ সর্বসম্মতিক্রমে মৌলভী আব্দুল হক আর তার অনুসারীদেরকে পথভ্রষ্ট ও বিভ্রান্ত্রি সৃষ্টিকারী বিচ্ছিন্ন ফেরকা বলে রায় প্রদান করেন। মুফতীগণ একই ফতুয়ায় আব্দুল হককে রাষ্ট্রিয়ভাবে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশও করেন। আরব-জাহানের মুফতীগণের এই ফতুয়া ১২৫৪ হিজরীতে ‘তাম্বীহুদ্দাল্লীন ওয়া হিদায়াতুস সালেহীন’ (পৃষ্ঠা নং ৩) নামে প্রকাশ করা হয়। কিতাবটির রচয়িতা মওলানা আব্দুল খালেক যিনি সৈয়দ নজির হুসাইন দেহলভীর উস্তাদ এবং শ্বশুর। ‘বর সগীর পাক ওয়া হিন্দ কে ছন্দ তারিখি হাক্বায়েক‘ (পৃষ্ঠা ১১৫) এর উদ্ধৃতিতে স্ক্রিনশট নিচে প্রদত্ত হল। ডাক্তার আল্লামা খালেদ মাহমুদ লিখেছেন, یہ صحیح ہے کہ ہندوستان میں ترکِ تقلید کے عنوان سے جس شخص نے پہلے زبان کھولی وہ عبدالحق بنارسی تھا۔ অর্থাৎ একথা সত্য যে, ভারতবর্ষে মাযহাব বা তাকলীদ উপেক্ষা করার জন্য যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম মুখ খুলেছিল সে ছিল আব্দুলহক বেনারসী (আসারুল হাদীস খণ্ড ২ পৃষ্ঠা নং ৩৭৫)।

এই ফতুয়াজারির পরপরই আব্দুল হক বেনারসী আত্মগোপনে চলে যায়। উপরোক্ত বিবরণ থেকে এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে, আব্দুল হক বেনারসীর হাত ধরেই ১২৪৬ হিজরীতে ভারতবর্ষে বর্তমানের এই ‘আহলে হাদীস’ নামক নতুন দলটির জন্ম। এরা সময় সময় নাম পরিবর্তন করে। কখনো সালাফী, কখনো মুহাম্মদী।

• সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনকে ইসলামী রাষ্ট্রের উপর প্রাধান্য দেয়া : ভারত উপমহাদেশে এই দলের প্রধান মুখপাত্র সৈয়দ নজির হোসেন-এর অন্যতম শিষ্য মৌলভী মুহাম্মদ হুসাইন বাটালভী লিখেছেন, “আহলে হাদীস দলটি ব্রিটিশ সরকারের কল্যাণ প্রত্যাশী, চুক্তি রক্ষাকারী ও অনুগত হওয়ার অত্যন্ত উজ্জ্বল ও বলিষ্ঠ প্রমাণ হচ্ছে, তারা ব্রিটিশ সরকারের অধীনে থাকাকে কোনো ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনে থাকার চাইতে উত্তম মনে করে।” (দেখুন, আল-হায়াত বা’দাল মামাত, পৃষ্ঠা নং ৯৩)। এই থেকেও পরিষ্কার হয়ে গেল যে, এই নতুন দলটি উপমহাদেশীয় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে গোপনে ব্রিটিশদেরই পক্ষাবলম্বী ছিল। আল্লাহু আ’লাম।

আহলে হাদীসদের কিছু মতবাদ : নতুন এই দলটির উৎপত্তি ইতিহাস নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর এবার তাদের কিছু বইপুস্তক থেকে প্রধান প্রধান কিছু বক্তব্য তুলে ধরছি,

১। (কলেমা সম্পর্কে) : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ উচ্চারণ করলে বা লিখলে শিরিকী অর্থ প্রকাশ পায়। (আকীদার মানদণ্ডে ইসলামের মূলমন্ত্র কালিমাহ তাইয়্যিবাহ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, পৃষ্ঠা নং ৬৯, লিখক-আব্দুল্লাহ আল ফারূক)।

২। (মাযহাব মানা সম্পর্কে) : ঠিক এই কাফিরদের মতই বর্তমানে যারা মাযহাবের অনুসারী তারা চার মাযহাবের যে কোনো একটির অনুসরণ করে তাদের বাপ দাদাদের মাযহাব অনুযায়ী। অর্থাৎ বাবা যদি হানাফী হয় তাহলে ছেলেও হানাফী হয় এবং বাবা যদি শাফেয়ী হয় তাহলে ছেলেও শাফিয়ী হয়। যে কারণে এইভাবে মাযহাবের অনুসরণ করা শিরকও কুফর। (আমাদের মাযহাব কি বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত? পৃষ্ঠা নং ২২, লিখক-মুহাম্মদ ইকবাল বিন ফাখরুল)।

৩। (মাযহাব অনুসারীদের হত্যা করা সম্পর্কে) : যে ব্যক্তি নির্দিষ্ট এক ইমামের তাকলীদকে ওয়াজিব করে নিবে তাকে তাওবাহ করানো হবে, অন্যথায় হত্যা করতে হবে। (অধ্যাপক ডক্টর রঈসুদ্দীন সম্পাদিত ‘চার মাযহাবের নির্দিষ্ট কোনো এক মাযহাবের অনুসরণ করতে মুসলিম কি বাধ্য?’ পৃষ্ঠা নং ৪৩; শায়েখ আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালাম সম্পাদিত ‘মুসলিম কি চার মাযহাবের কোন একটির অনুসরণে বাধ্য?’ পৃষ্ঠা নং ৩২)।

৪। (মাযহাবের অনুসারীরা নাকি জাহান্নামী) : হানাফী মাযহাবের আলেম/ওলামাগণের ইজমা [ঐক্যবদ্ধতা] মান্য করা বিদয়াত। হানাফী মাযহাব পালনকারী জনগণ বিদআতী কাজ করে চলেছেন বলে তাদের পরিণাম জাহান্নাম। (ফিকহে ইসলাম বনাম দ্বীন ইসলাম পৃষ্ঠা নং ১৭৯, লেখক-ইঞ্জিনিয়ার শামসুদ্দিন আহমদ)।

৫। (তাবলীগ নিয়ে অপপ্রচার) : তাবলীগ জামাত শিরক জনিত আকীদার জালে আবদ্ধ এক ফেরকা। (সহীহ আকীদার মানদণ্ডে তাবলীগী নিসাব-লিখক মুরাদ বিন আমজাদ)। উল্লেখ্য, এই মুরাদ বিন আমজাদ আহলে হাদীসের শায়খ ছিল। বর্তমানে সে ঈসায়ী মিশনারীদের এজেন্ট এবং হাদীস অস্বীকারকারী দলের সক্রিয় সদস্য।


৬। (শির্ক কালাম সম্পর্কে) : সাপ বিচ্ছু ইত্যাদি বিষাক্ত প্রাণীর কাটাস্থানে শির্ক/শিরিকি শব্দ দিয়ে কোনো অমুসলিম বা মুসলিম ঝাড়ফুঁক করার দ্বারাও কোনো সমস্যা নেই। (করাচী থেকে প্রকাশিত আহলে হাদীস দলের প্রধান মুখপাত্র পাক্ষিক ‘সহীফায়ে আহলে হাদীস’, জমাদিউস সানী, ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ)।

৭। (নামায ত্যাগকারী সম্পর্কে) : নামায ত্যাগকারী ব্যক্তি মুরতাদ তথা ইসলামত্যাগী। এমন ব্যক্তি নাকি আত্মীয় স্বজনের উত্তরাধিকারী হওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। এমন ব্যক্তির জন্য নাকি মক্কা মদীনার সীমানায় প্রবেশ নিষিদ্ধ। এমন ব্যক্তির যবেহকৃত পশুর গোশত ভক্ষণকরাও নাকি হারাম। মৃত্যুর পর নাকি তার জানাযাও পড়া যাবে না। এমন ব্যক্তির জন্য নাকি মুসলিম মহিলা বিবাহ করাও হারাম। (জামাআতে সালাত ত্যাগকারীর পরিণাম, পৃষ্ঠা নং ২৭, ২৮, ২৯, ৩০; লিখক-খলীলুর রহমান বিন ফযলুর রহমান, আত-তাওহীদ প্রকাশনী)।

৮। (রমজানে রাত জেগে কুরআন তেলাওয়াত সম্পর্কে) : রমযান মাসে কারীগণের রাত জেগে কুরআন পাঠ করা নাবীর শিক্ষা ছিল না। (‘মৃত ব্যক্তির নিকট কুরআন পাঠের সওয়াব পৌঁছে কি?’ লেখক-খলীলুর রহমান বিন ফযলুর রহমান-৩৯)।

৯। (পবিত্রতা ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা সম্পর্কে) : অজু তথা পবিত্রতা ছাড়াই কুরআনুল কারীম স্পর্শ করা জায়েজ। (শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ-এর ভিডিও হতে সংগৃহীত, এছাড়াও ‘দলীলুত ত্বালিব আ’লা আরযাহিল মাত্বালিব’, লিখক-নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান, পৃষ্ঠা নং ৫২)।

১০। (অমুসলিমদের যবেহ সম্পর্কে) : অমুসলিমদের যবেহকৃত পশুর মাংস খাওয়া হালাল। (উরফুল জাদী পৃষ্ঠা নং ১০, লিখক, সাইয়েদ নূরুল হাসান আল কুনুজী [নওয়াব নূরুল হাসান খান ভূপালী নামে পরিচিত])।

১১। (হালাল প্রাণীর প্রস্রাব পায়খানা সম্পর্কে) : প্রতিটি হালাল প্রাণীর প্রস্রাব এবং পায়খানা পবিত্র। কাপড়ে লাগলেও তা নিয়ে নামায পড়া জায়েজ। এমনকি ঔষধ হিসেবেও সেবনকরা বৈধ। (ফাতওয়ায়ে সাত্তারিয়াহ খণ্ড ১ পৃষ্ঠা নং ৫৩, শায়খ আলী মুহাম্মদ সা’দী)।

১২। (মহিলা মুয়াজ্জিন হওয়া) : মহিলাও মুয়াজ্জিন হতে পারে। (হাদিয়াতুল মাহদী পৃষ্ঠা নং ২৩)। এছাড়া আরও বহু নতুন নতুন এমন সব বিষাক্ত মতবাদ নিয়ে তারা সামনের দিকে এগুচ্ছে যার ফলে একদম খুব সহজেই মুসলিম উম্মাহাকে বেঈমান বানানো সম্ভব। কিন্তু আমাদের অধিকাংশ দ্বীনি ভাই-বোন তাদের সম্পর্কে ভালো মত জানা না থাকায় তাদের কথিত ‘সহীহ আকীদা’ এর চটকদার স্লোগানে দুর্বল হয়ে পড়ে। যা খুবই বেদনাদায়ক।


• তাকলীদ প্রসঙ্গ : 

তাকলীদ অর্থ অনুকরণ-অনুসরণ। কুরআনুল কারীম থেকে দলিল, আল্লাহতালা ইরশাদ করছেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহতালার আনুগত্য করো এবং রাসূল ও তোমাদের মধ্যে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্তদের আনুগত্য করো। (সূরা নিসা: ৫৯)। আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ.) লিখেছেন, বিশিষ্ট সাহাবী হযরত ইবনে আববাস (রা.) আয়াতটির أُولِي الْأَمْرِ হতে يعنى أهل الفقه والدين তথা ফোকাহায়ে কেরাম এবং দ্বীনের ধারকবাহকগণ উদ্দেশ্য। আবার কেউ কেউ أُولِي الْأَمْرِ এর ব্যাখ্যায় উলামায়ে কেরাম ও শাসকশ্রেণীও বলেছেন। বরেণ্য মুহাদ্দিস শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলবী (রহ.) কৃত রচনা ‘ইকদুল জীদ’ (عقد الجيد) কিতাবে যে কোনো নির্দিষ্ট একজন মুজতাহিদের তাকলীদ করা জরুরী বলে উল্লেখ রয়েছে। কেননা মুজতাহিদগণের উসূল (নীতিমালা) ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। (হানাফী মাযহাবের মূলনীতি সম্পর্কে জানুন)।

• মাযহাব সম্পর্কে যারা ডিপ্রেশনের শিকার তাদের জন্য আরব-বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ইসলামিক স্কলার ও বরেণ্য হাদীসবিদ শায়খ মুহাম্মদ বিন ছালেহ আল উসাইমিন (রহ.)-এর নির্দেশনা : (ক) তিনি (রহ.) লিখেছেন, أن يكون المقلد عاميا لا يستطيع معرفة الحكم بنفسه، ففرضه التقليد، لقوله تعالي ( فاسألوا أهل الذكر إن كنتم لا تعلمون) অর্থাৎ যেসব সাধারণ মানুষ সরাসরি শরীয়তের বিধি-বিধান জানতে সক্ষম নন তাদের জন্য তাকলীদ করা ফরজ। কেননা আল্লাহতালা ইরশাদ করেছেন, (অর্থ) তোমরা যদি না জানো তাহলে আহলে ইলমদের জিজ্ঞাসা কর। (মাজমু’ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল [مجموع فتاوى ورسائل], খণ্ড ১১ পৃষ্ঠা নং ৮২)। (খ) শায়খ উসাইমিন (রহ.) যার যার অঞ্চল/দেশের আলেমগণের অনুসরণের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে আরও লিখেছেন, لا يسوغ لك هذا، لأن فرضك أنت هو التقليد وأحق من تقلد علماؤك، لو قلدت من كان خارج بلادك أدى ذلك إلى الفوضى في أمر ليس عليه دليل شرعي… فالعامي يجب عليه أن يقلد علماء بلده الذين يثق بهم অর্থাৎ (জনৈক প্রশ্নকারীর প্রশ্নের উত্তরে) এটা তোমার জন্য পছন্দ হবে না। তাই তোমার কর্তব্য হল তাকলীদ করা। আর তোমার তাকলীদের সবচে বড় হকদার হলেন তোমার (অঞ্চল/দেশের) আলেমগণ। যদি তুমি তা না করে বাহিরের দেশের আলেমদের তাকলীদ কর তবে তা লাগামহীনতা আর বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করবে। সুতরাং সাধারণ মানুষের কর্তব্য নিজ দেশের আলেমদের অনুসরণ করা। (সিলসিলাতু লিক্বাইল বাবিল মাফতূহ [سلسلة لقاء الباب المفتوح] খণ্ড ১৯ পৃষ্ঠা নং ৩২)। (গ) শায়খ ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.)ও প্রায় একই কথা লিখেছেন। তিনি লিখেন, وتقليد العاجز عن الاستدلال للعالم يجوز عند الجمهور অর্থাৎ সর্বসম্মতিক্রমে দলিল-প্রমাণ উপস্থাপনে অক্ষম জনসাধারণের জন্য আলেমের [ফকিহগণের] অনুসরণ জায়েজ। (মাজমু’ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়াহ খণ্ড ১৯ পৃষ্ঠা নং ২৬২)। এভাবে আরও বহু প্রমাণ উপস্থাপন করা যাবে। 


আহলে হাদীসদের চটকদার স্লোগানের আড়ালে থাকা কিছু ভণ্ডামী : এদের প্রায় প্রতিটি লিখক, বক্তা বা ডিবেটার কথায় কথায় সহীহ হাদীস আর সহীহ আকীদার বয়ানের ফুলঝুরিতে মুখে ফেনা তুলে ফেলে। তাদের বক্তব্য, মাযহাবের কারণেই নাকি ইসলামে চার চারটা ভাগের জন্ম হয়ে গেছে। অথচ এই নির্বোধদের যদি ‘ফিকহি ইখতিলাফ’ বিষয়ে উসূল জানা থাকত বা একাডেমিক পড়াশোনাটাও থাকত, তাহলেও এধরণের পাতলা অভিযোগ কপচানোর দুঃসাহস কোনোদিন হত না। অথচ ‘মাযহাব’ এসেছে মতভেদপূর্ণ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো সমাধান যদি কুরআন সুন্নাহ কিবা ইজমায় পাওয়া না যায় শুধুমাত্র তখনি মীমাংসায় পৌঁছার জন্য মাযহাব বা ফিকহ। মাযহাব কখনোই কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমার বিপরীত বস্তু নয়, বরং সমাধানের চতুর্থ স্তরীয় অথেনটিক সোর্স মাত্র। সহীহ বুখারীতে এসেছে, মুজতাহিদের ইজতিহাদে ভুল হলেও মুজতাহিদ (গবেষক) একটি সওয়াব পান। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৯১৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৫৮৪)। তা সত্ত্বেও এই ফেতনাবাজদের বলতে শুনা যায়, কুরআন সুন্নাহ থাকতে মাযহাব কেন? এর উত্তরে আমি তাদেরকে পালটা প্রশ্ন করেছিলাম যে, তাহলে তো প্রশ্ন আসবে—চোখ থাকতে চশমা কেন? আজ থেকে তোমাদের শায়খদের বল, তারা যেন চশমার বিরুদ্ধেও আওয়াজ তুলে! এবার দেখুন, ওনাদের সহীহ’র মোড়কে একেকটা বিষয়ে কতটা ভিন্ন ভিন্ন মত!

১–নামাযে কিরাত পড়া প্রসঙ্গে,
(ক) শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানীর মতে, সশব্দে সূরা পড়া হয় এরকম নামাযে ইমামের পেছনে মুক্তাদির জন্য কিরাত পড়া [ফাতিহা পড়া] রহিত। (শায়েখ আলবানী’র ‘নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছলাত সম্পদনের পদ্ধতি পৃষ্ঠা নং ৮৩)।
(খ) ডক্টর আসাদুল্লাহ আল গালিবের মতে, কিরাত পড়া ফরজ। (আসাদুল্লাহ গালিব সাহেব রচিত, ছালাতুর রাসূল সা. পৃষ্ঠা নং ৮৮)।

২–বিসমিল্লাহ প্রসঙ্গে,
(ক) ‘বিসমিল্লাহ’ সূরা ফাতিহার অংশ হবার পক্ষে কোনো সহীহ দলীল নেই। (আসাদুল্লাহ আল গালিব সাহেব রচিত, ছালাতুর রাসূল সা. পৃষ্ঠা নং ৮৬)।
(খ) সূরা ফাতিহা কুরআনের অংশ। (অধ্যাপক হাফিজ আইনুল বারী রচিত, আইনী তুহফা সলাতে মুস্তাফা পৃষ্ঠা নং ১০৫)।


৩–বিসমিল্লাহ জোরে পড়া,
(ক) গালিব সাহেবের মতে, ‘বিসমিল্লাহ’ জোরে বা আস্তে পড়ার কোনো ভিত্তি নেই। (আসাদুল্লাহ আল গালিব সাহেব রচিত, ছালাতুর রাসূল সা. পৃষ্ঠা নং ৮৬)।
(খ) জোরে আস্তে উভয়ভাবে পড়া সহীহ সনদে বর্ণিত। (আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালাম সম্পাদিত, ছালাত আদায় পদ্ধতি পৃষ্ঠা নং ২৮)

৪–রুকু সম্পর্কে,
(ক) সালাতে রুকু পেলে রাকাআত পাওয়া যায়। (আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালাম সম্পাদিত, ছালাত আদায় পদ্ধতি পৃষ্ঠা নং ৩৩)।
(খ) সালাতে শুধু রুকু পেলে উক্ত রাকাত পায়নি, ধরা হবে। (আসাদুল্লাহ গালিব সাহেব রচিত, ছালাতুর রাসূল সাঃ পৃষ্ঠা নং ৯৬)।

৫–সালাম সম্পর্কে,
(ক) ডান দিকে ফিরে ‘ওয়াবারাকাতুহু’ বলতে হবে (আকরামুজ্জামান সম্পাদিত, ছালাত আদায় পদ্ধতি পৃষ্ঠা নং ৬২)।
(খ) উভয় দিকেই ওয়াবারাকাতুহু বলতে হবে। (ইবনে ফজলের ‘সহীহ নামায ও দুআ শিক্ষা’ পৃষ্ঠা নং ১০৩)।

৬–জনাযায় ফাতিহা পড়া সম্পর্কে,
(ক) আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, জানাযায় ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। (ছালাতুর রাসূল পৃষ্ঠা নং ২১৩)
(খ) শায়খ আলবানী বলেন, সুন্নত। (সিফাতু সালাতিন্নবী পৃষ্ঠা নং ১১১)। উল্লেখ্য, সঠিক মাসয়ালা হচ্ছে, এটি বড়জোর জায়েজ, যেহেতু ইবনে আব্বাসের বিচ্ছিন্ন একটি আমলে পাওয়া গেছে কিন্তু সুন্নাতে রাসূল হিসেবে প্রমাণিত নয়।


৭- রুকু থেকে উঠে হাত বাঁধা,
(ক) শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন এবং শায়খ ইবনে বাজ বলেন, রুকুর থেকে উঠে হাত বাঁধা সুন্নাত (ফাতওয়া আরকানুল ইসলাম পৃষ্ঠা নং ২৭৩)।
(খ) শায়েখ নাসিরুদ্দীন আলবানী বলেন, বিদয়াত। (আসলু সিফাতিস সালাহ খণ্ড ২ পৃষ্ঠা নং ৭০০)।

এখন প্রশ্ন হল, সব ক্ষেত্রেই নিয়ম যদি একই হবে, ফিকহি মাসয়ালাতেও সুন্নাহ পালনে নানা বৈচিত্রময় নিয়ম বা একাধিক পদ্ধতির অবকাশ নাই থাকবে তবে কেন আহলে হাদীস নামক শায়খ ও তাদের অনুকরণীয় বিশিষ্টজনদের মধ্যেও একই বিষয়ে ভিন্ন মত সৃষ্টি হল? মাযহাবের ইমামগণের ফিকহি মতভিন্নতার দরুন ইসলাম বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হলে তবে কি উল্লিখিত শায়খদের মতভিন্নতার দরুন ইসলামে ঐক্যবদ্ধতা সৃষ্টি হল? আসলে যাদের মাযহাব সম্পর্কে একাডেমিক জ্ঞান নেই, ইজতিহাদের উসূল (নীতিমালা) সম্পর্কেও অন্ধকারে, ফলে সার্ক্ষণিক কথিত ‘সহীহ’ ডিপ্রেশনের শিকার, তাদের এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হচ্ছে দেশের গবেষক কোনো আলেমের সান্নিধ্যে থেকে এসব বিষয়ে কিছুদিন একাডেমিক পড়াশোনায় আত্মনিয়োগ করা।

• আহলে হাদীস ছদ্মনামী এই নতুন দল সম্পর্কে রাষ্ট্র ব্যক্তিবর্গের মূল্যায়ন :

১. ‘প্রথম আলো’ পত্রিকার শিরোনাম, ‘সালাফি মতাদর্শী ব্যক্তিদের নিয়ে উত্থান জেএমবির।’ নিউজে উল্লেখ করা হয় যে, আহলে হাদিস ধারাটি আগে ‘ওহাবি’ নামে বেশি পরিচিত ছিল। মধ্যপ্রাচ্যসহ বহির্বিশ্বে এরা ‘সালাফি’ হিসেবে পরিচিত। ধারাটি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হলেও মধ্যপ্রাচ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ। সৌদি আরবের মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে সালাফি ধারার ‘জিহাদি’ সংগঠন প্রতিষ্ঠার ধারণা পান বা আগ্রহী হন জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত শায়খ আবদুর রহমান। (দৈনিক প্রথম আলো ০৩-১১-২১৬ইং)।

২. রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অনুষ্ঠিত উগ্রবাদবিরোধী জাতীয় সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের প্রধানের দায়িত্ব পালনের সময় দেখেছি আমাদের দেশের উগ্রবাদের সঙ্গে জড়িত ৯০ শতাংশই আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের।’ (দৈনিক ইনকিলাব, ১১-১২-২০১৯ ইং)।


আহলে হাদীস নামক দলটির ফেতনার মুকাবিলায় আমাদের করণীয় :

১. সাধারণ যুবক যুবতীদের কোনো দোষ নেই। তারা এটিকে সরল মনে বিশ্বাস করে নিয়েছে, এটুকুই। তাদের যুক্তিযুক্তভাবে মাযহাবের সংজ্ঞা ও তার সঠিক প্রয়োগ সম্পর্কে বুঝানো হলে তারা এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে ফিরে আসবে, ইনশাআল্লাহ।

২. এরা বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। আমাদের করণীয় হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান শিক্ষক ও কমিটির সাথে সংলাপে বসা। দালিলিকভাবে তাদের ভ্রান্ত মতবাদের খণ্ডন করে বুঝিয়ে দেয়া যে, হানাফী ফিকহের আলোকে প্রচলিত আমল-ও সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত। কাজেই এর বিপরীতে নতুন কোনো নিয়ম চালু করার ফলে সমাজে/এলাকায় কোনো গোলযোগ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে তার সম্পূর্ণ দায়ভার তাদেরকেই নিতে হবে।

৩. প্রতিটি মসজিদের ইমাম-খতিবদের নিয়ে আহলে হাদীস/সালাফি নামধারীদের ফেতনার রদে তারবিয়তের ব্যবস্থা করতে হবে। স্থানীয় বড় জামে মসজিদের কমিটিকেই এর উদ্যোগ নিতে হবে। তবে কোনোভাবে নিজেদের মধ্যে শত্রুতা মনোভাব সৃষ্টি হয় এমন কোনো কার্যকলাপ করা যাবেনা। একমাত্র ঐক্য ও সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনাই উদ্দেশ্য থাকতে হবে।


রাজনীতির নেপথ্যের মানুষ: নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ছোটন কাহিনী

  রাজনীতির নেপথ্যের মানুষ: নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ছোটন কাহিনী

রাজনীতির নেপথ্যের মানুষ: নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ছোটন কাহিনী

বাংলাদেশের রাজনীতির ভেতরে যে খেলা চলে তা অনেকটাই বলে দেওয়া সম্ভব যদি আপনি খেলোয়াড় চেনেন। ধরেন আপনি জানেন কে লিওনেল মেসি, কে রোনালদো আর কে ক্রিস গেইল, কে আফ্রিদি, তাহলে খেলাটা ফুটবল না ক্রিকেট চোখ বুঝে বলতে পারবেন।

আমি ইদানিং বেশ কয়েকজনের মুখে নুরুল ইসলাম ভূইয়া ছোটনের নাম শুনেছি। তার নানা ভূমিকার কথা লোকজন বলছে। কিন্তু তার পরিচয় জিজ্ঞেস করলে বিস্তারিত বলতে পারছে না।

আমার ফেসবুকে থাকা একটু অগ্রসর লোকজনও হয়তো ছোটনের কথা শুনে থাকবেন। কিন্তু ওনার খুব সাধারণ কিছু পরিচয় আপনারা জানেন না।

কয়দিন আগে যে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মারা গেলেন, ওনার ভায়রা হলেন ছোটন৷ মানে শিরিন হকের বোন নাসরিন হকের স্বামী।

স্রেফ এই পরিচয়টুকু ধরে টান দিলে এবি পার্টি, জামায়াত, গণঅধিকার, চরমোনাই, হেফাজত, ডিজিএফআই, ফরহাদ মজহার, পিনাকী, মঞ্জু, তাহের, মেসবাহ সাঈদসহ কত কিছু যে বের হয়ে আসবে। তারপর ধরেন ওয়ান ইলেভেন, চার দলীয় সরকার, ভারত, প্রথম আলো পর্যন্ত চলে আসবে।

এত কিছু যে আসবে তার জন্য অবশ্যই আপনাকে নেটওয়ার্ক ও সমীকরণ বুঝতে হবে।

সেই সব আলাপের আগে আমার প্রশ্ন এটাই যে যারা ছোটনকে চিনেন তারা কতজন আগে জানতেন যে উনি ডা. জাফরুল্লাহর ভায়রা? 

মূলতঃ আপনারা বাংলাদেশকে তার ভেতর থেকে বুঝতে সম্পর্কগুলোই ঠিক মতো উদ্ঘাটন করতে পারেন না।

একে একে অনেকগুলো পর্ব লেখব। 


দুই.

ভয়ঙ্কর কুচক্রী একজন মানুষ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ক্লাস না করলেও আমার অভ্যাস ছিল নিয়মিত কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির রেফারেন্স সেকশনে যাওয়ার। সেখানে বাংলাদেশের অনেকের ইয়াং বয়সের কাজকর্ম পড়তাম। এরমধ্যে একটা জায়গায় প্রথম ছোটনের নাম জানতে পারি।

ঘটনাটি বেশ চমকপ্রদ। এখন যে সচিবালয়ের চারপাশে বিশাল ঊঁচু দেয়াল দেখেন তা আগে এমন ছিল না। বুক পর্যন্ত উঁচু দেয়াল ছিল।

কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে একবারই ওই দেয়াল টপকে সচিবালয়ে ঢুকে পড়েছিল কৃষক ও শ্রমিকরা৷ তারা অফিসারদের পিটিয়ে কাপড় ছিড়ে ফেলে।

ঘটনাটি হলো এরশাদকে হটাতে বিএনপি, লীগ ও বামপন্থীরা তিন দিক থেকে সচিবালয় ঘেরাও করে৷ হঠাৎ গুজব ছড়িয়ে পরে খালেদা জিয়াকে (১৮ বছর আগের স্মৃতি, হয়তো শেখ হাসিনা) গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ এ খবর শুনেই ঘেরাওয়ে আসা শ্রমিক ও কৃষকরা লাঠিসোঁটা নিয়ে সচিবালয়ে ঢুকে পড়ে। 

পরে জানা গেল, এরকম কিছু হয়নি। বরং তৎকালীন ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা ছোটন এই মিথ্যা খবর প্রচার করেছে। 

নুরুল ইসলাম ভূইয়া ছোটনকে নিয়ে পুরনো পত্রিকার ওই রিপোর্টের কথা পরবর্তীতে বহু সময় আমাকে ভাবিয়েছে। ছোটন কিভাবে কুচক্রী হিসাবে কাজ করে তা বুঝতে গেলেই তার এ অতীতের কথা মনে পড়ে যায়। 

তিন.

মূলতঃ নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ছোটনকে নিয়ে আশির দশক থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক শুরু হয় তার কুচক্রী ভূমিকার কারণে। 

বিশেষ করে তার বিরুদ্ধে সেনা গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আঁতাত থাকার অভিযোগ ওঠে। 

ছাত্র আন্দোলন, তিন জোটের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করা, ভুল তথ্য প্রদান ও একের বিরুদ্ধে অপরকে লাগানোর নানা ঘটনায় ছোট হয়ে পড়েন চরম বিতর্কিত।

মজার ব্যাপার হলো গত চার দশকে তার নামে থাকা অভিযোগগুলো আর অভিযোগে সীমিত নাই। 

বরং নানা ঘটনাচক্রে রাজনৈতিক ও সাংবাদিক মহলে এটি সুবিদিত যে ছোটন আসলে কী বা কেমন।

ছোটনের ছোবল ও বিএনপি

২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর কিভাবে ভারতপন্থীরা হাওয়া ভবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় তার কাহিনী শুনেছিলাম দেশ রূপান্তরের প্রয়াত সম্পাদক অমিত হাবিবের মুখ থেকে।

মানে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর হাওয়া ভবনের সঙ্গে ভারতের সংযোগটি ঘটেছিল সেখানকার শিল্পীদের নিয়ে ঢাকায় পারফর্ম করাকে কেন্দ্র করে। একাজে সহযোগিতা করে ছোটন ও তার সহযোগীরা। এরাই আবার বিএনপির সবচেয়ে বড় মিডিয়া প্রজেক্ট যায়যায়দিনে আশ্রিত হয় এবং তাদের কার্যক্রমের পুরোটা শুধু জাতীয়তাবাদ বিরোধী ছিল এমন নয়, বরং ২০০৬ সালের অক্টোবরে বিএনপি বিরোধী যে ডিজিএফআই প্রযোজিত আক্রমণ তার শুরুটা তারাই করে৷

এই পুরো ঘটনাটি বুঝতে গেলে আমাদের আরও পেছনে যেতে হবে। অন্য অনেক বামপন্থীর মতো ছোটনও এক সময় বিএনপিতে ভিড়ে যায়৷ কিন্তু আদর্শিকভাবে তাদের এজেন্ডা ইসলামী মূল্যবোধ ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ বিরোধীই থাকে।

ছোটন বিএনপিতে জায়গা করতে সিনিয়র সাংবাদিক শফিক রেহমানের সঙ্গে ভিড়ে যান। ১৯৯৮ সালে সাপ্তাহিক যায়যায়দিন দৈনিকে রূপান্তরিত হলে তাতে যোগ দেন ছোটন৷ কথিত আছে ছোটনের কারণেই যায়যায়দিন প্রতিদিন অকালে বন্ধ হয়ে যায়। 

পরে অনেক বছর লাগিয়ে ২০০৬ সালে যায়যায়দিন প্রকাশিত হলে তাতে নির্বাহী সম্পাদক হন তিনি। এর মালিকানায় শেয়ার ছিল তার। তবে যায়যায়দিনের ফিন্যান্স ছিল রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের এক জঘন্য উদাহরণ। পত্রিকাটির সিংহভাগ মালিক ছিলেন শফিক রেহমান, কিন্তু তার কোনো বিনিয়োগ ছিল না, এমন ছোটনেরও ছিল না। সরকারি খাস জমি আর ভূমিদস্যু বসু্ন্ধরার পয়সা ছিল যায়যায়দিনের অর্থের উৎস।

এরমধ্যে ছোটনের কারিশমা হলো, ভাববাদী শফিক রেহমানকে সামনে রেখে গোটা যায়যায়দিনের নিয়ন্ত্রক হয়ে যায় নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ছোটন। পত্রিকাটির রিপোর্টিং ও ডেস্কে নিয়োগ পায় ছোটনের অনুগতরা। শফিক রেহমান মূলতঃ ফিচার ও সম্পাদকীয় বিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতেন। যায়যায়দিনে কী রিপোর্ট হবে না হবে সম্পাদক হয়েও তার কিছুই তিনি জানতেন না। 

মজার ব্যাপার হলো, শফিক রেহমানকে তার প্রতিষ্ঠিত পত্রিকা থেকে সরিয়ে দিতে ছোটনকে নিয়মিত কুমন্ত্রণা দিতেন ফরহাদ মজহার ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীরা।

এক্ষেত্রে ছোটনের কৌশল ছিল চমকপ্রদ। হুমায়ুন কবির সাব্বির নামে বসুন্ধরা গ্রুপের এক পরিচালককে হত্যা করে গ্রুপটির চেয়ারম্যান শাহ আলম ওরফে আহমেদ আকবর সোবহানের দুই ছেলে সাফিয়াত সোবহান এবং সাদাত সোবহান।

ওই ঘটনার জেরে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার বসুন্ধরার বিরুদ্ধে লাগাতার রিপোর্ট করে। তখন শাহ আলম আশা করে যে তাদের অর্থায়নে পরিচালিত যায়যায়দিনে তাদের পক্ষে রিপোর্ট করবে৷ কিন্তু ছোটন বসুন্ধরার পক্ষে কোনো রিপোর্ট না করে এর দায় চাপান শফিক রেহমানের ওপর। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বসুন্ধরা যায়যায়দিনের সাংবাদিকদের বেতন ভাতা, নিউজ পেপার ও প্রেসের কালি বন্ধ করে দেয়। 

কার্যত পয়সাহীন শফিক রেহমান এতে বিপদে পড়ে যান। এদিকে হাওয়া ভবনকে দিয়ে বসুন্ধরাসহ ফাঁদ পাতেন ছোটন। আর তাহলো শফিক রেহমানকে বাদ দিয়ে ছোটনের দখলের যাবে যায়যায়দিন, তখন বসুন্ধরাও টাকা দেবে। বিপদ টের পেয়ে শফিক রেহমান যায়যায়দিন থেকে গোটা ছোটন বাহিনীকে অব্যাহতি দেন এবং তিনি লন্ডনে গিয়ে নিজের বাড়ি বিক্রি করে টাকা এনে যায়যায়দিন চালাতে উদ্যোগী হন।

এই সময়টাতে এসে দেখা যায় বিএনপির ভেতরেই বাসা বেধে আছে এক অপশক্তি যারা কাউকেই তোয়াক্কা করত না। বরং ওয়ান ইলেভেন ঘটাতে ভেতরে ভেতরে এক নেটওয়ার্ক বিস্তার করে বসে আছে। ফলে খোদ প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বক্তৃতা লেখক শফিক রেহমানকে বেআইনীভাবে বিমানের বোর্ডিং অবস্থায় নামিয়ে আনা হয়। এটি সম্ভব হয় ছোটনের উদ্যোগে ডিজিএফআইয়ের কারসাজিতে। 

তবে শফিক রেহমানের দৃঢ়তায় যায়যায়দিন ছোটন দখল করতে পারেনি। যদিও পরবর্তীতে মঈন উ আহমদের রোষাণলে পড়ে শফিক রেহমান পত্রিকাটি ডিজিএফআই নেটওয়ার্কের ব্যবসায়ী সাঈদ চৌধুরী তথা এইচআরসি গ্রুপকে লিখে দিতে বাধ্য হন। সাঈদের পরিচয় হলো তিনি আওয়ামী লীগ নেতা সাবেরের ভাই।


চার.

নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ছোটন মানুষ হিসাবে কেমন এবং নিজেদের টার্গেটে পৌঁছাতে কতটা আগ্রাসী তার আদর্শ প্রমাণ হলো ফরহাদ মজহারের গুমের ঘটনায় তার ভূমিকা।

২০১৭ সালের ৩ জুলাই ভোর ৫টা ৫ মিনিটে শ্যামলীর হক গার্ডেনের বাসা থেকে বের হন ফরহাদ। চোখের ওষুধ কেনার জন্য বের হয়েছিলেন বলে দাবি করেছিলেন তিনি ও তার পরিবার। মূলতঃ কড়াইল বসতির উদ্দেশ্যে এক গর্ভবতী হিন্দু তরুণীর উদ্দেশ্যে বের হন। ওই সন্তান ছিল ফরহাদের। তাকে গর্ভপাত করতে রাজি করাতে ও হাসপাতালে ভর্তির টাকা দিতেই ভোর বিহানের এ যাত্রা ছিল। 

কিন্তু ফরহাদ মজহারসহ অনেক ভারত বিরোধীই র'র নজরদারিতে ছিল। তাদের ফোন রেকর্ড থেকে শুরু করে গোপন অভিসারের সব কিছুই ছিল তাদের নখদর্পনে।

তবে ফরহাদ মজহারকে অনেকের নিরাপত্তাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে দেয়া হয়। এর নেপথ্যে বিদেশী কানেকশনের ব্যাপার আছে।

ফলে ফরহাদ তার বাসা থেকে বের হওয়া মাত্র তাকে র' তুলে নেওয়ার পরপরই ফরহাদের পরিবার সব জেনেও চুপচাপ থাকলেও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ঘটনাটি মিডিয়ায় আনা ও তাকে উদ্ধারে র‍্যাবকে মাঠে নামানোর ঘটনা ঘটে।

ফরহাদ গুম হওয়ার পরে তার গুমের খবরটি প্রথম প্রকাশিত হয় এমন একটি অনলাইনে যার দায়িত্বে ছিলেন সেই সাংবাদিক যিনি বিএনপি জামাত সরকারের সময় বাংলাদেশে বামপন্থী কমিউনিস্টদের ক্রসফায়ারের ঘটনা গুলো সবার আগে জানতেন, তিনি একাত্তরে পাকিস্তানে থাকা এক সেনা সদস্যের সন্তান।

মূলতঃ সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে ফরহাদ মজহারকে সীমান্তের ওপারে নেওয়া র'র পক্ষে অসম্ভব হয়ে যায়। কিন্তু দেশেও  র'র পক্ষে কাউকে হেনস্থা করার সুযোগ ছিল। ফলে ফরহাদকে র‍্যাব উদ্ধার করলেও তাদের থেকে তাকে পুলিশ এক প্রকার ছিনিয়ে নেয়, যার আইনী মুখোশ ছিল হস্তান্তর করা হয়। আর পুলিশ তাকে হাতে পেয়ে র'র কথামতো খুলনার মার্কেটে ঘুরতে বাধ্য করা, গর্ভবতী হিন্দু নারীকে বিকাশ করা, স্ত্রী ফরিদা আখতারকে ফোন করে ৩৫ লাখ টাকা যোগার করতে বলা এবং গফুর নামে হানিফ পরিবহনের বাসের টিকিট কেটে বাসের উদ্দেশ্যে রওনার ঘটনা ঘটে।

আমি ফরহাদ মজহারের গুম থেকে উদ্ধার পর্যন্ত প্রতি মুহূর্তেই ফেসবুকে লিখেছি৷ আলতাফ পারভেজ ভাই এনিয়ে আমাকে ধন্যবাদও দিয়েছিলেন।

তবে আমি যখন ফরহাদ মজহারকে গুমের বিষয়ে পুলিশের সাজানো নাটককেও তুলোধুনো করছিলাম, তখন ইন্টারেস্টিং ঘটনা ঘটে। ফরহাদের শিষ্য মোহাম্মদ রোমেল  আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে তার পক্ষে লেখালেখি বন্ধ করতে বলেন। বিষয়টা আমার জন্য ছিল শকিং। তিনি বলার পরেও মনে হয় আরও দু একটা স্ট্যাটাস লেখছি। তারপর আমার ঘনিষ্ঠ এক কবিও যোগাযোগ করলেন। আমরা উভয়েই রোমেলের বাসায় রহস্য জানতে আমন্ত্রিত হলাম। 

তারপর সেখানে গিয়ে রোমেলের কাছ থেকে শুনলাম যে ফরহাদের পুরা ঘটনাতেই নাকি ভেজাল। বস্তিতে গিয়ে হিন্দু মেয়ের সঙ্গে সেক্স করার ঘটনা সত্য। কড়াইল বস্তির অনেক দূরে গাড়ি রেখে হেঁটে যেতেন। ফরিদা আখতারের বিদেশ ভ্রমণের সময় এটি ঘটে। রোমেলের দাবি হলো, ফরহাদের এরকম ঘটনা অসংখ্য। এসব নিয়ে ঝামেলা হয় ফরিদ আখতারের সঙ্গে, তখন গৌতম দাশ সহ ইনার সার্কেলের লোকেরা মিটমাট করে। রোমেল জানাইল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার এক মেয়েকে সে পটিয়েছিল, কিন্তু ফরহাদ কুষ্টিয়ার লালন আখড়ায় সেই মেয়েকে হিপটোনাইজ করে সেক্স করে ফেলে। ওই মেয়ে প্রথমে এটাকে দেহতাত্ত্বিক সাধনা মনে করেছিল, কিন্তু সেক্স করার পর সে মনে করছে রেইপড হইছে এবং এ নিয়ে তার মানসিক সমস্যা হয়।

আমি যখন ঢাকায় তরুণ সরকার, পিনাকী রায়, মুন্নীসাহাদের সার্কেলে মিশতাম, এটা ২০০৪/৫ সালের কাহিনী, তখনো ফরহাদ মজহারের যৌনবিকারের কথা শুনি, কোনো এক বিদেশী মেয়ের বেলায় এমনটা ঘটেছিল।

কিন্তু বামপন্থীদের ভেতরকার যৌনতা সংক্রান্ত নানা আলাপ সত্ত্বেও আমাদের তরুণ জীবনে তাদের সঙ্গে চলাফেরা ছিল। ফরহাদ মজহারের সঙ্গে বলা যায় ২০১৬ পর্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলাম। কাটায় কাটায় ১২ বছর! তার ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা ও বিকার নিয়ে আগ্রহী ছিলাম না এসব জানতে ফুসুরফাসুরেও জড়াইনি।

কিন্তু রোমেল যখন গুমের ঘটনা সূত্রে সব টান দিলেন তখন পুরনো নানা কথা মনে পড়েছিল।

রোমেল তখন বলছিলেন, ফরহাদের নারী কেলেঙ্কারির বিষয়ে ছোটন, গৌতম দাশ, পিনাকী ভট্টাচার্যও নিশ্চিত জানেন, তাই তারা তার পক্ষে লেখা বন্ধ করে দিছে, শুধু আমিই একা ফরহাদ মজহারকে নিয়ে সোচ্চার। রোমেলরা চান আমি যেন লেখা বন্ধ করি।

রোমেল আমাকে থামাতে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের প্রসঙ্গও আনে। ফরহাদ যে গুমের সময় ফরিদাকে ফোন করে বলেছিল অপহরণকারীরা ৩৫ লাখ টাকা চায়, সেই টাকাটা মাহমুদুর রহমান দিছিলেন, ফরিদাকে টাকাটা রাখতে বলেছিল ফরহাদ। রোমেল বললো পুরো নাটক সাজিয়ে মাহমুদুর রহমানের টাকা নিজেদের কাছে রেখে দিছে।

কথা হলো ফরহাদকে নিয়ে রোমেলরা যা বলেছে তা মোটেই নতুন নয় এবং অসত্যও নয়। ফরহাদের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ হলো যেসব গরিব হিন্দু নারীরা ধর্ম বদলে খৃস্টান হয়েছিল তারা উবিনীগে চাকরি করতে গিয়ে তার সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ান এবং ঘটনা জানাজানি হলে ফরিদা আখতারের সঙ্গে দেন দরবার হয়ে ভিক্টিমদের তাড়িয়ে দেয়। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে গর্ভবতী হয়েও কোনো নারী ফরহাদের সন্তানের মা হতে পারে না বরং অকাল গর্ভপাত করতে হয়। রোমেল, গৌতম থেকে শুরু করে অন্য সব সাঙ্গপাঙ্গই আগে থেকে এসব কম বেশি জানে। তাহলে ফরহাদের গুমের ঘটনার সময় তার খাসলত ধরে টান দেওয়া কেন, এই প্রশ্নটি আমার মধ্যে ছিল।

পরবর্তীতে এর ব্যাখ্যা জাফরুল্লাহ ও ছোটনের ভূমিকা থেকে ট্যাগ করেছি।

সেক্ষেত্রে দেখা যায়, ২০১৩ সালের পর সরকার বিরোধীদের মধ্যে ভারত বিরোধী অংশকে কোনঠাসা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। মাঝখান থেকে এমন সব বিরোধী মুখকে সামনে আনা হয় যারা প্রচুর সরব থাকলেও ভেতরে ভেতরে বিরোধী মতের ইসলাম পছন্দ অংশটার চরম বিরোধী। এক্ষেত্রে তারা ইসলাম ও মুসলমান ইস্যুকেও কাজে লাগায় মূলধারার ইসলামপন্থাকে কোনঠাসা করতে। এই পুরো ঘটনাটা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক এমাজউদ্দীন, হেফাজত, মজিবুর রহমান মঞ্জু, গার্ডিয়ান প্রকাশনী চক্রদের মাধ্যমে ঘটে। যার মধ্যমণি হিসাবে আমরা নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ছোটনকে পাই।

আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন জাফরুল্লাহ চৌধুরীরা আমৃত্যু সরব থাকলেও মাহমুদুর রহমানকে সব সময় এড়িয়ে গেছেন। আবার ফরহাদ মজহারও গুমের পর পরিত্যক্ত হয়েছেন। অথচ ইসলামপন্থাকে ঘিরে যে ভাঙাগড়া ছিল তার সব কিছুতে ফরহাদ মজহার ও মাহমুদুর রহমান সম্পৃক্ত ছিলেন। আমাদের আলোচনায় সামনে আসবে যে খোদ এবি পার্টি প্রজেক্টটাও ফরহাদ-মাহমুদের ছিল। কিন্তু ছোটনদের ম্যাকানিজমে তা হাত ছাড়া হয়।

এই ব্যাপারগুলানের জায়গা থেকে দেখলে ফরহাদের গুম নিয়ে ছোটনদের পল্টি নেওয়ার চালটা বোঝা যায়।


মানে চারিত্রিকভাবে স্খলিত বেকুব ফরহাদ মজহারকে গুম করতে গিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর র' যে ভাষ্য তৈরি করে তাকে ছোটনরা লুফে নিয়েছিল যাতে করে তাদের তৎপরতা সহজ হয়। সেক্ষেত্রে ফরহাদ মজহারের পাশে দাঁড়ানোর বদলে উল্টা তার বিরুদ্ধে লোক চক্ষুর অন্তরালে বড় প্রচারণা চালিয়েছিল।


এখানে বলা দরকার, ফরহাদ মজহারের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে আমিও অবস্থান নিয়েছিলাম মূলতঃ ইসলাম বিকৃত করতে তার নানা লেখালেখির কারণে এবং কোথাও জায়গা না পেয়ে বামদের কাছে টানতে গিয়ে শাহবাগী ফ্যাসিবাদকে হাওয়া করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ায়, এবং সর্বশেষ ডিজিএফআইয়ের হয়ে জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি করার পর তাকে ছাড় দেওয়ার প্রশ্ন নাই।


পাঁচ.

এবি পার্টি যেভাবে ছোটনের খপ্পরে


জামায়াতের ভেতরে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে ভুল চিন্তা ও মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রিক বিকার তৈরি হয়েছে তার অন্যতম কারিগর হলো আদর্শচ্যুত বাম ও ডিপ স্টেটের খেলোয়াড় নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ছোটন।

ছোটনের খপ্পরে পড়ে জামায়াতেরই একটি অংশ সংস্কারবাদী ইসলাম চিন্তা থেকে বিচ্যুত হয়ে মু্ক্তিযুদ্ধের চেতনার গোলামে পরিণত হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে মূলতঃ ফরহাদ মজহারের একদল শিষ্যকে হাত করে তাদের দিয়ে জামায়াতের সংস্কারপন্থীদের মগজ ধোলাই করার মাধ্যমে।


ছোটনকে নিয়ে আমরা যে আলোচনা করছি তা ঠিকমতো বুঝতে ইসলামী সংস্কারপন্থীদের বিপথগামী হওয়ার ইতিহাসটা সবার কাছে স্পষ্ট হওয়া দরকার।

জামায়াতে ইসলামীতে সংস্কারবাদী চিন্তার উদ্ভব হয় মূলতঃ আমেরিকার ওয়ার অন টেররের নতুন ডাইমেনশন হিসাবে নির্বিচারে মুসলিম বিরোধিতার বদলে মুসলমানদের মধ্যকার উদারপন্থী আধুনিকতাবাদী লিবারেল একটা অংশকে কাছে টানার প্রকল্পের অংশ হিসাবে।

ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক হলেন বাংলাদেশের মডারেট লিবারেল ইসলামপন্থীদের গুরু, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার গভীর সখ্যতা ছিল, ঢাকা দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা তার বন্ধুও ছিলেন, আবদুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেওয়ার পর র' চেষ্টা করেছিল আবদুর রাজ্জাককে গ্রেপ্তার করাতে। ধরতে পারলে তার ফাঁসি হতো। তবে গ্রেপ্তারের রাতের আগেই আমেরিকান এম্বাসির সরাসরি হস্তক্ষেপে আবদুর রাজ্জাক দেশ ছাড়তে সক্ষম হন।

অনেকেই জানে না যে আবদুর রাজ্জাকের সংস্কারপন্থা প্রোমার্কিন ছিল এবং তিনি তুরস্কের গুলেন মুভমেন্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।


অন্যদিকে জামায়াতের আরেক সংস্কারবাদী নেতা ছিলেন শহীদ আলী আহসান মুহম্মদ মুজাহিদ। তিনি তুর্কির ক্ষমতাসীন একে পার্টি দিয়ে প্রভাবিত ছিলেন। 

জরুরি অবস্থার সময়, সম্ভবত, ১৬/১৭ বছর আগের ঘটনা, স্মৃতি থেকে বলছি, শহীদ মুজাহিদ তুর্কি সফর করে আসেন এবং তার সঙ্গে একে পার্টির গঠনতন্ত্র ছিল যা তিনি মিডিয়ায় প্রদর্শন করেন।

জামায়াতের এ দুই ধারার সংস্কারপন্থীদের মধ্যে শিবিরের নেতারা ছিল, যারা মূলতঃ ২০০৫ সালের শেষের দিক থেকে ঢাকার নাগরিক পর্যায়ে যাতায়াত করতে থাকে।

এদের মধ্যে আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল মূলতঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, মেডিকেল ও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অআঞ্চলিক নেতারা৷ এদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ছিল সাবেক সিপি জাহিদুর রহমান, শিশির মনির, মির্জা গালিব, যোবায়ের আহমেদ ভূঁইয়া, শাহ ফয়সাল রহমান প্রমুখরা।

অন্যদিকে শহীদ মুজাহিদপন্থী ছিল রফিকুল ইসলাম খান, শফিকুল ইসলাম মাসুদ, রেজাউল করিমরা।

তবে জামায়াত ও শিবিরের লোকদের মধ্যে একটা বড় ঘটনা হলো নয়াদিগন্ত পত্রিকা ও দিগন্ত টিভির আগমন।


এই দুই মিডিয়ার উদ্যোক্তা ছিলেন মীর কাসিম আলী। উনি ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্বে ছিলেন৷ তখন শিবিরের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে ইসলামী ব্যাংকের সিএসআর থেকে টাকা দেওয়া হতো। সেই সূত্রে জামায়াতপন্থী লেখক কবি শিল্পিদের সঙ্গে তার গভীর খাতির তৈরি হয়।


নয়াদিগন্ত ও দিগন্ত প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর জামায়াত শিবিরের সাংস্কৃতিক কর্মীদের অনেকে চাকরি পায়। এবং সাবেক শিবির নেতারাও দুই মিডিয়া পরিচালনায় বিনা অভিজ্ঞতাতেও বড় দায়িত্বে চলে আসে।

আমার পর্যবেক্ষণ হলো, মীর কাসিম আলীর রিক্রুট লেখক সাংবাদিক ও শিবির নেতারা কর্মসূত্রেই লতায়পাতায় জড়িয়ে ফরহাদ মজহারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়। তারা ফরহাদের কলাম ও বই দিয়ে প্রভাবিত হয়। বিশেষ করে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা আসার পর ফরহাদ নয়াদিগন্ত পত্রিকা কেন্দ্রিক অ্যাক্টিভিজম শুরু করলে এই ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে।

শিবিরের লোকদের মধ্যে বলা যায় মুজাহিদ ও আবদুর রাজ্জাকের গ্রুপিং লবিংয়ের অনেকটা বাইরেই ছিলেন মজিবুর রহমান মঞ্জু ও সেলিম উদ্দীন। এরমধ্যে মঞ্জু মীর কাসেম আলী কেন্দ্রিক হলেও আবদুর রাজ্জাক কেন্দ্রিক লোকদের তৎপরতায় তাকে তেমন দেখা যায়নি। আর সেলিম উদ্দিন গ্রুপিংয়ে না জড়াতে সংগঠনে মনোযোগী হন। এজন্য তিনি দিগন্তের ডিরেক্টর পদ ছেড়ে রমনা থানা জামায়াতের দায়িত্বে আসেন।

পরবর্তীতে বড় ঘটনা ঘটে, ২০১০ সালে মুজাহিদ গ্রুপের লোকেরা আবদুর রাজ্জাক গ্রুপের শিশির মনিরকে ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি হতে না দিয়ে উল্টা সেক্রেটারি জেনারেল পদ থেকে বিদায় দিলে দুই গ্রুপের বিবাদ প্রকাশ্যে চলে আসে।


আমার পর্যবেক্ষণ হলো, এই সময়টাতেই আবদুর রাজ্জাক গ্রুপ ও মীর কাসিম আলী ঘনিষ্ঠরা একীভূত হয়।

বিশেষ করে সাবেক শিবির সভাপতি ও জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের কে বা কারা শিবিরের গণ্ডগোলে কোন পক্ষ নিচ্ছে এমন প্রশ্ন আসলে দেখা যায় মুজাহিদ গ্রুপ একপক্ষে ও আবদুর রাজ্জাক ও মীর কাসেম গ্রুপ একপক্ষে চলে আসে।

এর মধ্যে বলা হয় শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা, শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, শহীদ মীর কাসেম আলী, আনম আবদুজ্জাহের, সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহম্মদ তাহের, মজিবুর রহমান মঞ্জু, মুহম্মদ জাহিদুর রহমানরা একপক্ষে ছিলেন।

অন্যদিকে রফিকুল ইসলাম খান, নুরুল ইসলাম বুলবুল, হামিদুর রহমান আযাদ, শফিকুল ইসলাম মাসুদরা ছিলেন এক পক্ষে।


শিশির মনির, পরবর্তীতে আবদুল্লাহ আল মামুন সহ শিবির নেতাদের বড় অংশ সংগঠন ছাড়া হয়। তাদের নিজেদের মধ্যে একটা নেটওয়ার্ক সক্রিয় থাকে। যার আওতায় জামায়াত ভেঙে একটা নতুন দল করার চিন্তা দানা বাঁধে।

এরমধ্যে ২০১২-১৩ সাল পর্যন্ত ফরহাদ মজহারের সঙ্গে মঞ্জুদের দহরম মহরম বাড়তে থাকে। 


২০১৪ সালে আমার কাছে তথ্য আসে যে, জামায়াত ভেঙে নতুন দল গঠনের বিষয়ে ফরহাদ মজহার গং সক্রিয়। এরমধ্যে মোসতাঈন জহিররা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারপন্থী সাবেক শিবির নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ করে।

আর এ তথ্যসূত্রে জানতে পারি, জামায়াতের সংস্কারপন্থীরা ফরহাদ মজহারকে যুক্তরাজ্য ও মালয়েশিয়ায় সফর করিয়েছে এবং সেখানকার প্রবাসী জামায়াতের বৈঠকে তিনি বক্তৃতা করেছেন।

এখানে বলা দরকার, ফরহাদ মজহার বাংলাদেশের প্রথম ব্যক্তি যে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে নব্বই দশকে বই লিখেছিল। অনেকেই হয়তো জানে না যে, মাওলানা সাঈদীসহ জামায়াত নেতাদের ফাঁসির রায় লিখে দিয়েছিল বেলজিয়ামের যেই জিয়াউদ্দিন, সেও মূলতঃ ফরহাদ মজহারের একজন ঘনিষ্ঠ লোক। 

এমনিতে ইনার সার্কেলে আমরা যখন বসতাম তখন ফরহাদ মজহার, গৌতম দাসরা জামায়াতের প্রতি নিজেদের বিদ্বেষ আড়াল করত না। 

এই যে বিএনপি যেন জামায়াত নেতাদের ফাঁসি হলে কোনো বিবৃতি না দেয়, এমনকি সালাউদ্দিন কাদের চৌধিরীর বিষয়েও দূরত্ব রাখে, এর কুমন্ত্রণাদাতাও ছিল ফরহাদ মজহার। বিএনপিতে জামায়াত বিদ্বেষী অংশটাকে মতাদর্শিকভাবে উস্কানি প্রদানও ছিল তার অন্যতম অপকীর্তি।

পরবর্তীতে একটা ঘটনা ঘটে। এর শুরু অবশ্য হয়েছিল ২০১১ সালে খালেদা জিয়ার ভারত সফরের মধ্য দিয়ে। বিএনপি ভারতমুখী হয়ে পড়ে। দলটির সঙ্গে সরাসরি র'র একটা যোগাযোগ তৈরি হয়েছিল। যার প্রভাবে ভারত বিরোধিতার জন্য আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও ফরহাদ মজহারের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব তৈরি হয়। বিএনপি ধারার সকল তৎপরতা থেকে এ দুজনকে বাদ রাখা হয়।

আর ঠিক এ সময়টাতে সামনে চলে আসেন ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী। আগেই উল্লেখ করেছি জাফর ও নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ছোটন হলো ভায়রা।

জাফরুল্লাহর সক্রিয়তার সময়টাতে দেখা যায়, ফরহাদ মজহারের পারিষদ ও জামায়াতের সংস্কারপন্থীদের প্রায় সবাইকে ছোটন মেইনটেন করছে।

এরমধ্যে গৌতম দাস, মোসতাঈন জহির ও মোহাম্মদ রোমেলরা ছিল। ছোটনের দিক থেকে যোগ হয়েছিল পিনাকী ভট্টাচার্য ও আবু মুস্তাফিজ হাসান শাপলুরা।


এদের তত্ত্বাবধানে যখন মঞ্জুদের গ্রুমিং হলো তখন তারা ইসলামী রাজনীতি সংস্কারের অবস্থান থেকে সরে গেল। বলা যায় মঞ্জুরা এক্স ইসলামপন্থী হয়ে গেল এবং আদর্শ হিসাবে কার্যত সেক্যুলারিজমকে গ্রহণ করল। এক্ষেতের জনআকাঙ্খার সংবাদ সম্মেলনের কপিটি মুসতাঈন জহির লিখে দিয়েছিল। তা একটা সেক্যুলার বয়ান ছাড়া কিছুই নয়। মঞ্জুকে দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রের তথাকথিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারকে নিজেদের আদর্শ বলতে চায়, এগুলান মূলত সেক্যুলার অঙ্গীকারই মাত্র।


মোট কথা হলো, যেহেতু ইসলাম প্রশ্নে ছোটন ছুপা বিদ্বেষী, সেহেতু ইসলামপন্থী রাজনীতির সংস্কারের স্লোগান তোলা মঞ্জুদেরকে ইসলামপন্থী রাজনীতি পরিত্যাগ করেই ছোটনের মন পেতে হয়। এক্ষেত্রে ছোটনদের মন পেতে মঞ্জুদেরকে গানবাজনা ও বেপর্দা নারীর উপস্থিতিও নিশ্চিত করতে হয়।


শেষ পর্ব

গার্ডিয়ানকে দিয়ে জামায়াতকে দূষণ: ছোটন: পিনাকী:মেসবাহ: নূররা


জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর মকবুল আহমেদসহ বড় বড় নেতারা মেসবাহ সাঈদের বাসায় আত্মগোপনে ছিল। মেসবাহর পরিবার আওয়ামী লীগ। তার এক ভাই সৌদি আওয়ামী নেতা। ফেনী থেকে নির্বাচন করতে চায়।

এই মেসবাহর বাসা ধানমন্ডির যেই ভবনে সেখানেই এক ফ্ল্যাটে থাকে নুরুল ইসলাম ভূইঁয়া ছোটন।


এ খবরটি জানার পর আমি নড়েচড়ে বসলাম। ডিজিএফআই কানেক্টেড ছোটন যে ভবনে থাকে, সেখানেই মেসবাহর বাসা! আবার সেখানে জামায়াত নেতারা পলাতক থাকেন! 


এসব কিছু কি আসলে ম্যাটার করে?

আমি এ প্রশ্নের জবাব আমলে নিতে বাধ্য হয়েছি। কারণ শিবিরের ও জামায়াতের বড় বড় সূত্রগুলো সাঈদকে ঘিরে কীর্তি কারখানার একটা এমন কিছু তথ্য দিয়েছে তাতে করে কিছুই উপেক্ষা করা যায় না।

একসূত্রের দাবি, সাঈদরা ফাইভ স্টার হোটেলে মদ্যপান করে। নারী ঘটিত অভিযোগও আছে। তারপরেও সাঈদকে প্রাইজ পোস্ট হিসাবে জামায়াতের ঢাকা মহানগরীর শুরা সদস্য করা হয়েছে। আদৌতে সে জামায়াতের নামকাওয়াস্তে রুকন। এর বাইরে কোনো দায়িত্বে না থাকলেও শুরা সদস্য। তাকে ফেনীতে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীও করা হয়েছে।

মজার ব্যাপার হলো সাঈদ এবি পার্টি গঠন প্রক্রিয়ায় ছিল। মজিবুর রহমান মঞ্জুর সঙ্গে সে গভীরভাবে সম্পৃক্ত ছিল। 

এর প্রমাণ হলো, এবি পার্টি গঠনে অন্যতম অর্থ যোগানদাতা বায়োফার্মার এমডি লকিয়তুল্লাহ, মজিবুর রহমান মঞ্জুদের ব্যবসায়িক উদ্যোগ নভ হেলথ সার্ভিসে মেসবাহ সাঈদও পার্টনার ছিল৷ এই প্রতিষ্ঠানটি গড়া হয়েছিল এবি পার্টিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই। তবে পরবর্তীতে জামায়াতের কাছ থেকে বেশি ফায়দা পাওয়ার প্রলোভন পেয়ে মেসবাহ যুবলীগের ঢাকা মহানগরের কিছু নেতার মাধ্যমে লকিয়তুল্লাহদের প্রতিষ্ঠান ও টাকা পয়সা মেরে দেয়।

এখন কথা হলো সাঈদের সঙ্গে এবি পার্টি ও ছোটনের সম্পর্ক কিভাবে ফাংশন করেছিল?

শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সন্তানরা আলাপকালে আমাকে এর বিস্তারিত জানিয়েছেন।

মূলতঃ এবি পার্টি গঠনের আগে মজিবুর রহমান মঞ্জুদের পক্ষে শিবিরের কেন্দ্রীয় আইটি বিভাগের সহকারী দায়িত্বশীলরা প্রচারণা চালিয়েছিল। এতে গার্ডিয়ান প্রকাশনীর নূর মোহাম্মদদের পুরো গ্যাং জড়িত ছিল। এরা ফিজিক্যালিও শিবিরের অনেক লোকককে সংস্কারপন্থা সমর্থন করতে বলেছে।


আর নূর মোহাম্মদদের এই পুরো গ্যাংটার সম্পর্ক হলো মেসবাহ সাঈদের সঙ্গে। 

মজার ব্যাপার হলো ছোটন ইসলামপন্থীদের কাছে যা চায় তাই সাঈদ-নূর৷ মোহাম্মদদরা ফেসবুক প্রচার করে।

এর বড় তিনটা প্রমাণ আছে। যার প্রথমটা হলো পিনাকী ভট্টাচার্য কানেকশন।।

পিনাকী কানেকশন

নুরুল ইসলাম ভূইয়া ছোটনদের এক চাওয়া ছিল ইসলামপন্থী তরুণরা যেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে ইসলামের জায়গা থেকেই সমর্থন করে। এমনটি করা গেলে একাত্তর প্রশ্নে জামায়াতে ইসলামী ও মুসলিম লীগের ঐতিহাসিক অবস্থানের পক্ষে জনজোয়ার বন্ধ হয়ে যাবে। বিশেষ করে জামায়াত নেতাদের ফাঁসি, সারা দেশে ম্যাসাকার, শাপলা চত্বরে ম্যাসাকারের ঘটনায় ইসলামপন্থীরাতো বটে, সাধারণ মুসলমানরা মুক্তিযুদ্ধকে যেভাবে ঘৃণা করছিল তা বানচাল করে দিয়ে একাত্তর নামক বিষই যেন ইসলামপন্থীরা পান করে তা ছিল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র', এর অনুগত ডিজিএফআই ও ছোটন দালালদের মাস্টার প্ল্যান।

এই কাজটি বাস্তবায়ন করা হয়েছিল পিনাকী ভট্টাচার্যকে দিয়ে। তিনিই ঘৃন্য মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বই লেখেন "মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম"। এই বইটির প্রকাশক হলো গার্ডিয়ান প্রকাশনী। মানে ২০১৩ সালের আন্দোলনসহ জামায়াত নেতাদের ফাঁসির ঘটনায় বাঁশেরকেল্লাসহ অনলাইন স্ফিয়ারে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধিতার দায়িত্ব পালন করছিল শিবিরের যে আইটি বিভাগ, তারাই ২০১৭ সালে এসে দায়িত্ব নিল মুক্তিযুদ্ধকে ইসলামী মোড়কে প্রচার করার। বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতির ইতিহাসে এটিই হলো সর্বোচ্চ গাদ্দারী।

ছোটন-পিনাকীদের এই মুক্তিযুদ্ধ প্রজেক্ট মেসবাহ সাঈদ, নূর মোহাম্মদ, কমরেড মাহমুদ গ্যাংয়ের মাধ্যমে শিবিরের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

এরপরের কাহিনী হলো, খোদ জামায়াতের মধ্যেই কথা শুরু হয় যে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধিতা থেকে জামায়াতকে বের হতে হবে।

এবং যেই শহীদ নেতাদের জন্য ২০১৪ সাল থেকে জামায়াত শিবিরের সর্বস্তরে প্রশ্নাতীত সমীহশ্রদ্ধা জারি হয়েছিল, সেই নেতারা একাত্তরে ভুল করেছিল নতুন করে বলাবলি শুরু হলো।

এক্ষেত্রে ছোটন লিঙ্কের সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের কতটা কটাক্ষ করে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে কথা বলেছেন তা ডয়েচেভেলেতে দেখা গেছে। গার্ডিয়ান প্রকাশনী গ্যাংয়ের লোকেরাতো নিয়মিতই একাত্তরের পজিশনকে কটাক্ষ করেই।

ছোটনদের আরেক চাওয়া হলো বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের যেন জোট না থাকে। এক্ষেত্রে দেখবেন মেসবাহ সাঈদ-নূর মোহাম্মদদের গ্যাং নিয়মিতই অতি জামায়াত প্রেম দেখিয়ে বিএনপি বিদ্বেষী প্রচারণা চালায়। এতে বিএনপির লোকদের সঙ্গে অনলাইনে মনোমালিন্য তৈরি হয়েছে, তেমনি জামায়াতের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিএনপির সঙ্গে জোটের বদলে লীগের সঙ্গে আঁতাত শ্রেয় মনোভাব তৈরি হয়েছে।

তৃতীয় প্রমাণ হলো ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র'র মদদপুষ্ট চরমোনাই পার্টিকে ইসলামপন্থী তরুণ প্রজন্মকে গ্রহণযোগ্য করাতে ছোটনদের মিশনের পক্ষ মেসবাহ সাঈদ-নূর মোহাম্মদ-কমরেড মাহমুদ গ্যাংয়ের প্রচারণা।

চরমোনাইয়ের লোকেরা জামায়াতের ফাঁসি হওয়া নেতাদের শহীদ মনে করে না৷ তারপরেও চরমোনাইয়ের পক্ষে জামায়াতের একাংশ ফেসবুকে প্রচারণা চালায়, এটি মূলতঃ ছোটনের ইচ্ছারই প্রতিফলন। তার অ্যাসাইনমেন্ট হিসাবেই নূরারা চরমোনাইয়ের গান গায়।

আমি ছোটনকে নিয়ে লেখা শুরুর পর ঢাকার একজন সাংবাদিক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। ভিন দেশ থেকে আমি যখন ছোটনকে ঘিরে নানা সমীকরণ মিলাচ্ছি তখন তিনি বলেছিলেন ডিজিএফআইয়ের একটা মিশন হলো জামায়াত ও চরমোনাইকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং এদেরকে দিয়ে বিএনপির প্রতিপক্ষ একটা জোট দাড় করানো, আর এটি করার দায়িত্ব হলো ছোটনের।

মজার ব্যাপার হলো, পরবর্তীতে বরিশাল সিটি নির্বাচন ঘিরে মেসবাহ-নূরা-মাহমুদ গ্যাং চরমোনাইয়ের এক পোলার পক্ষে প্রচারণা চালায়। তারপর সে আওয়ামী লীগের হাতে মার খেলে চরমোনাই ও জামায়াত ঐক্য নিয়ে এরা প্রোপাগান্ডা শুরু করে। 

পরবর্তীতে দেখা যায়, চরমোনাইকে সান্ত্বনা দিতে জামায়াত নেতারা ছুটে যায়, জামায়াত আমীর ফোনে কথা বলেন৷ আর চরমোনাইয়ের এক সভায় প্রথমবারের মতো জামায়াত দাওয়াত প্রাপ্ত হয়। এই পুরো ঘটনাপ্রবাহের নেপথ্যে ছোটন।

বাংলাদেশের রাজনীতির নেপথ্যের মানুষদের নিয়ে অনেক বিস্তারিত কাজ করার আছে। আমি চাইলে ছোটনের তৎপরতার সঙ্গে প্রথম আলোর সংযোগ ও এনজিও কর্মী লেলিনরা জড়িত তা নিয়েও লিখতে পারি। কিন্তু একটা ধারণা দিতেই ছোটনকে বেশ লম্বা আলোচনা করেছি। এখন আগ্রহীরা বিস্তারিত খুঁজতে পারেন। সময় সুযোগ হলে হয়তো নানা লোকদের তৎপরতা নিয়ে বলব। আমার কাজটা সহজ, লোকজনের চিন্তা, তৎপরতা ও নেটওয়ার্কগুলো শনাক্ত করা। ছোটনদের চারপাশে যারা ঘুরপাক খাচ্ছেন তারা আশা করি নেটওয়ার্ক সম্পর্কে ভালোমতো সচেতন হবেন।সমাপ্ত।


২৯ নভেম্বর ২০২৩ইং প্রথম প্রকাশিত।

শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫

ওয়াকারের ফ্যাসিবাদ হতে দেশপ্রেম

 "ওয়াকারের ফ্যাসিবাদ হতে দেশপ্রেম"

ওয়াকারের ূদেশপ্রেম



সেনা প্রধান ওয়াকারকে অনেকেই সম্মুখ সারির যোদ্ধা বলে দাবী করছেন, আসলেই উনি ৫ই আগষ্টে ছাত্রদের বিষয়ে সফ্ট ছিলো যার কারনে হাসিনাকে হঠানো সহজ হয়েছিলো এবং অপেক্ষাকৃত কম রক্ত ঝড়েছে, তা না হলে আরো ঝড়তো। এজন্য অনেক আবেগী বাংলাদশীরা এই ওয়াকারকে জুলাই বিপ্লবের যোদ্ধা পর্যন্ত বলে।

চলুন এই ওয়াকার কি আসলেই জুলাই আন্দোলনের সহযোগী ছিলো না বিরোধী ছিলো তা জেনে নেই, তবে তার আগে ওয়াকারের উত্থানের ইতিহাস হ্জানা ফরজ।

জেনারেল ওয়াকারের উত্থানঃ
১। জেনারেল ওয়াকার শেখ হাসিনার তৈরী করা সেনা প্রধান। হাসিনা নিজের অনুগত না হলে কাউকে এই পদে দপয় না।

২। হাসিনার রকৃত সম্পর্কের আত্মীয় ওয়াকার, রক্ত কখনো নিজের বিরোধিতা করে মা।

৪। হাসিনাই নিজের কার্য সিদ্ধির জন্য অনেক মেধাবী অফিসারকে রেখে ওয়াকারকে সেনা প্রধান বানিয়েছে নিজের আনুগত্যের জন্যে।


সেনা প্রধান কিভাবে দেশপ্রেমিক সাজলোঃ
সেনা প্রধানের দেশপ্রেমিক সাজা হলো পীঠ বাঁচানোর জন্য শুধু মাত্র। কারন,
১। জুলাই মাসে সেনাবাহিনীর রাইফেল হতে যতগুলো গুলি ছাত্র জনতার উপর করা হয়েছে তার একটাও সেনা প্রধানের নির্দেশ ছাড়া হয় নি।

২। সেনা অফিসারদের বাসায় বাসায় গিয়ে যখন আওয়ামী লীগ ও পুলিশ ছাত্রদের খোঁজে বের করা শুরু করে ছিলো তখন জুনিয়র অফিসাররা ফুঁসে উঠেছিলো।

৩। সাবেক সেনা অফিসাররাও ক্ষেপে গিয়েছিলো।

৪।২০২৪ এর ডামী নির্বাচনে বাংলাদেশ সপনা বাহিনী স্বৈরাচারকে সহযোগীতার কারনে অলরেডি৷ বাংকাদেশ সেনাবাহিনূর উপর আমেরিকা ও জাতিসঙ্ঘের নিষেধাজ্ঞা আসা অওেক্ষমান ছিলো।

৫।জুলাই হত্যাকান্ডে জাতিসংঘের শান্তি মিশনের জন্য ইউ এন লেখা ভেহিকল ব্যবহার করে ছাত্রজনতার উপর গুলি চালানোর দায়ে বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর উপর বড় নিষেধাজ্ঞা অপেক্ষমান ছিলো। 

৬,। জুনিয়র অফিসারেরা অলরেডি বিদ্রোহ শুরু করে দিয়েছিলো।


সেনা প্রধান যে এখনও আওয়ামী লীগের দালাল তার প্রমানঃ
১) হাসিনাকে সেইফ এক্সিট দেওয়া।

২) হত্যাকারী ৬৫০ জনকে ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় দেওয়া ও পরে নিরাপদে পালাতে সাহায্য করা।

৩) পিলখানা হত্যার কমিশন হতে বাধা দেওয়া।

৪) পিলখানা হত্যার পুরো দায় বিডিআরকে দিয়ে দেওয়া।

৫) ট্রাইবুনাল থেকে পরোয়ানা জারি হওয়া সেনা কর্মকর্তাদের ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় দেওয়া।

৬) গুম,খুনে জড়িত সেনাকর্মকর্তাদের দেশ ছাড়তে সহায়তা করা।

৭) প্রধান উপদেষ্টাকে ড: ইউনুস বলে সম্বোধন করা।

৮) সরকারকে পাশ কাটিয়ে সেনাবাহিনি থেকে জাতিসংঘের দাবীর বিরুদ্ধে স্ট্যাটমেন্ট দেওয়া।

৯) সবচেয়ে বিপজ্জনক হইলো আয়নাঘর পরিদর্শন করতে ইউনুসকে বাধা দেওয়া। সব আলামত নষ্ট করার পর বুকে পাথর বেধে পরিদর্শন করাটা মেনে নেওয়া।

নিজেই ভাবুন ওয়াকার কি জিনিস!!!

বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০২৫

পাকিস্তান-ইসরায়েল সম্পর্ক ও বাংলাদেশ জন্মের ইতিকথা

 "পাকিস্তান-ইসরায়েল সম্পর্ক ও বাংলাদেশ জন্মের ইতিকথা"

পাকিস্তান-ইসরায়েল সম্পর্ক ও বাংলাদেশ জন্মের ইতিকথা

পাকিস্তান-ইসরায়েল দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বন্ধন গঠনের প্রাথমিক উদ্যোগ গৃহীত হয় ১৯৪৭ সালে, যখন ইসরাইলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেনগারিন পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মাদ আলি জিন্নাহকে একটি তারবার্তা প্রেরণ করেন, কিন্তু জিন্নাহ কোন প্রকার সাড়া দেয়া থেকে বিরত থাকেন আর তখন থেকেই ইসরায়েল পাকিস্তানকে চির শত্রু মনে করতে শুরু করে ইসরায়েল এবং পাকিস্তানের জাত শত্রু ভারতকে বন্ধু ভাবতে শুরু করে,কারননতখন ভারতের মুসলিম বিরোধী মহাত্মা গান্ধী মুসলমানদের আরেক জাত শত্রু ইহুদিদেরকে সমর্থন শুরু করে । ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত ইসরাইলের কর্তাব্যক্তিরা বিশ্বাস করতেন যে করাচীর সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক নির্মাণ করা সম্ভব, অন্তত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে হয়ত। ১৯৫০ এর প্রথম দিকে লন্ডনের পাকিস্তান দূতাবাস ও ইহুদী-ইসরাইলের প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক হয়। ভারত কিছু আফগান ইহুদীদের ইসরাইলে প্রত্যাবাসনের জন্য পাকিস্থানের মাটি ব্যবহারের করার অনুমতি চায়।কিন্তু পাকিস্তান এতে অস্বীকৃতি জানালে ইহুদীরা ইরানের মাটি ব্যবহার করে আর পাকিস্তানের সাথে বৈরী মনোভাব পোষন করতে শুরু করে।

১৯৫২ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার জাররুল্লাহ খান ইসরাইলের ব্যাপারে দেশটির বৈরিনীতি প্রনয়ন করেন এবং আরব জাতীয়তাবাদ গড়ার দিকে জোড় দেন। এভাবেই আরব বিশ্বের সাথে পাকিস্তানের নিবিড় সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং ইসরায়েলের চক্ষুশূলে পরিনত হতে থাকে।


দখলদার ইসরাইলের তথাকথিত স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন ওয়াশিংটনের ইসরাইলের দূতাবাসকে এই মর্মে অবহিত করা হয় যে, পাকিস্তান মধ্যপ্রাচ্যে সৈন্য প্রেরণ করতে যাচ্ছে। আরও বলা হয় যে, দেশটি আরবদের জন্য চকোশ্লোভাকিয়া থেকে ২৫০০০০ রাইফেল ও মিসরীয় বাহিনীর জন্য ইতালি থেকে ৩ টি প্লেন ক্রয় করবে। 


পাকিস্তানের বিমান বাহিনী ১৯৬৭ সালের "৬ দিনের যুদ্ধ" ও ১৯৭৩ সালের "ইওম কাপোর যুদ্ধে" সরাসরি অংশগ্রহণ করে। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তান ও পিএলও এক সমঝোতায় আসে যার ফলে পিএলওর অফিসাররা পাকিস্তানের মিলিটারি স্কুলগুলোতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবে। ১৯৮২ সালের লেবানন যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের স্বেচ্ছাসেবী সৈনিকরা অংশগ্রহণ করে এবং বৈরুত অবরোধের সময় ৫০ জনকে আটক করা হয়। 

ফরাসী প্রবীণ সাংবাদিক বার্নার্ড হেনরি লেভি টাইম সাময়িকীতে অভিযোগ করেন যে, ডেনিয়াল পার্ল নামক এক মার্কিন-ইসরাইলি সাংবাদিক আল কায়েদার ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে তাকে ইসরাইলে চর সন্দেহে পাকিস্তানি গোয়েন্দারা আটক করে এবং হত্যা করে ( যদিও লেভি কোন নির্ভরযোগ্য প্রমাণ দিতে পারেন নি )। বিবিসি ও নিউইয়র্ক টাইমসের অন্য একটি প্রতিবেদনে বলা হয় যে পার্লকে সাংবাদিক বেশধারী মোসাদের চর সন্দেহে আটক করে শিরশ্ছেদ করে হত্যা করা হয়। 

এই ঘটনার পরে পাকিস্তানের ধর্মীয় রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য সংগঠন যেমন জামাত-ই-ইসলাম, জামিয়াত উলামাহ-ই-ইসলাম ও লস্করে তইয়্যেবাহ পৃথক বিবৃতিতে ইসরাইলের সাথে সকল সম্পর্কের বিরোধিতা করে এবং ইসরাইলকে ইসলাম ও পাকিস্তানের শত্রু ঘোষণা দেয়। 

পাকিস্তানি পাসপোর্টে এই মর্মে উল্লেখ আছে যে, "এই পাসপোর্ট ইসরাইল ব্যতীত পৃথিবীর সকল দেশের জন্য প্রযোজ্য।"


বলা হয় যে, ১৯৮০ এর দিকে ভারতের সহযোগিতা সহ বা ছাড়া ইসরাইল পাকিস্তানের বোমার মজুদের উপর সম্ভাব্য আক্রমণের পরিকল্পনা করে। ১৯৮১ সালে ইরাকি পারমাণবিক চুল্লীতে আক্রমণের পড় ইসরাইল ভারতের সহযোগিতা নিয়ে পাকিস্তানের কাহুতা পারমাণবিক স্থাপনার উপর অনুরূপ আক্রমণের পরিকল্পনা করে। স্যাটেলাইট চিত্র ও গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করে এই আক্রমণের পরিকল্পনা করা হয় যেখানে এফ-১৫ ও এফ-১৬ বিমান দ্বারা উসকানিমূলক আক্রমণ রচিত হবে। 

"দি এশিয়ান এজ" এর সাংবাদিক আদ্রেয়ান লেভি ও ক্যাথরিন স্কট ক্লার্কের বই "Deception: Pakistan, the US and the Global Weapons Conspiracy" এ বলা হয় যে ইসরাইল ১৯৮০ এর মধ্য ভাগে গুজরাটের জামনগর বিমান ঘাঁটি ব্যবহার করে কাহুতা নিউক্লিয়ার স্থাপনায় হামলা চালাতে চেয়েছিল। আরও বলা হয় যে, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নিজেদের সীমানার খুব কাছে তিনটি দেশের এমন সম্ভাব্য পারমাণবিক বিপর্যয়ের আশংকায় পরিকল্পনাটি রদ করে দেন। 


এখানে লক্ষ্য করার বিষয় এটাই যে পাকিস্তান যেমন গোড়া হতেই দখলদার ইসরায়েলকে ইসলামের শত্রু মনে করে ইসরায়েলের অস্তিত্ব অস্বীকার করছে তেমনি ইসরায়েলও গোড়া হতেই পাকিস্তানের স্থিতিশীলতার বিরোধিতা করে আসছে। পাকিস্তান সরাসরি ইসরায়েলের বিরোধিতা করছে আর ইসরায়েল কৌশলে পাকিস্তানকে দূর্বল রাষ্ট্রের তালিকায় ফেলার জন্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং সফলও হয়েছে। তারা ১৯৫২ সাল হতে পাকিস্তানি শাসকদের মূর্খতা ও গোয়ার্তমিকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানকে ভেঙ্গে টুকরো করার ফন্দি আঁটে এবং বাংলাদেশে শোষিত ও নির্যাতিত অসহায় মানুষ গুলোকে উদ্ধারে ভারতকে সুকৌশলে সহায়তা করে ইসরায়েল ও ভারত উভয়ের চির দুশমন পাকিস্তানকে ভেঙ্গে বাংলাদেশ নামক একটি দেশের অভ্যূদয় ঘটায় আর আমরা পাই আমাদের মহান স্বাধীনতা।  অপর দিকে পাকিস্তানে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে লেলিয়ে দিয়ে ঘাওড়া পাকিস্তানকে দিন দিন ভেতরগত ভাবে আরো দূর্বল করে দিচ্ছে।

যাই হোক বুঝতেই পারছেন দুই সাপে-নেউল দখলদার ইসরায়েল-পাকিস্তানের দন্দ্বের কারন আমাদের মহান স্বাধীনতাকে নিঃসন্দেহে ত্বরানিত করেছে এবং অখন্ড পাকিস্তান ও ভারত বিরোধীরা আজও দেশের মাটিতে কোন ঠাসা আছে।


বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০২৫

ফিলিস্তিনিদের রক্তের বিনিময়ে সৌদি রাজ পরিবারের ক্ষমতা রক্ষার দলিল

 "ফিলিস্তিনিদের রক্তের বিনিময়ে সৌদি রাজ পরিবারের ক্ষমতা রক্ষার দলিল"

এই সেই দলিল।

আমি বার বার বলে আসছিলাম যে সৌদি টাজ পরিবার কেনো মুসলিম পরিবার না, এরা ইহুদিদের দালাল, মোনাফিক ও ক্ষমতার জন্য মুসলমানদের জবাই করতে দ্বিধা বোধ করে না, ফিলিস্তিনের আজ রক্ত ঝরার পেছনে সৌদি রাজারাই দায়ী। কেউ আমার কথা বিশ্বাস করত না। আজ আমি ব্রিটিশ মিউজিয়াম হতে সংগ্রহ করা কত গুলো দলিল পেশ করবো, দেখি কে আছে এগুলো অস্বীকার করে, কার বাবার ক্ষমতা আছে।

সৌদি রাজা, আ:ওহাব নযদি ও স্যার পার্শি কক্সের বৈঠক।

 এই ঐতিহাসিক দূর্লভ দলিলটি সবাই শেয়ার করার অনুরোধ রইলো। এটা সকল মুসলমানের ইমানী দ্বায়িত্ব বলে মনে করি।

৩রা নভেম্বর ২০১১ ইং ব্রিটেন হতে প্রকাশিত ইসলাম টাইমস নাক একটি পত্রিকায় এই প্রতিবেদনটি ছাপা হয়, পরে এই প্রতিবেদন ছাপার কারণে সৌদি সরকারের অনুরোধে ২০১২ ইং এই পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। আমি পত্রিকাটির প্রতিবেদন হুবহু তুলে ধরলাম অনুবাদ করে। কেউ যদি চ্যালেঞ্জ করতে চান আমার দলিল গুলো ফ্যাক্ট চেক করে দেখতে পারেন।

সৌদি-ব্রিটিশ মাখামাখি



ফিলিস্তিন নিয়ে যুক্তরাজ্যকে আশ্বস্ত করেছেন সৌদি রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা 

পেপারের স্টোরি কোড: ১১৪৪৭

ইসলাম টাইমস - একটি প্রাচীন নথি প্রকাশ করেছে যে কীভাবে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান আবদুল আজিজ ব্রিটেনকে ফিলিস্তিনের ভূমিতে একটি ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, একটি সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। 

ইসলাম টাইমস: নথিটি, যুক্তরাজ্যের প্রতি প্রথম সৌদি বাদশাহর গভীর প্রতিশ্রুতি এবং ইহুদিদের ফিলিস্তিন দেওয়ার জন্য ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের প্রতি তার অঙ্গীকারকে তুলে ধরে।




তৎকালীন ব্রিটিশ প্রতিনিধি মেজর জেনারেল স্যার পার্সি জাকারিয়া কক্সকে নোটিশ হিসাবে লেখা বিতর্কিত নথিটি ফিলিস্তিনি জাতির প্রতি সৌদি রাজপরিবারের বৈরী ও ঘৃন্য মনোভাবের আরেকটি প্রমাণ।দলিলে সৌদি বাদশা লিখেন, "আমি সুলতান আবদুল আজিজ বিন আবদুল রহমান আল সৌদ আল-ফয়সাল এবং আমি গ্রেট ব্রিটেনের প্রতিনিধি স্যার পার্সি কক্সের কাছে হাজার বার বিটেনের বশ্যতা স্বীকার করেছি এবং স্বীকার করছি যে, দরিদ্র ইহুদিদের ফিলিস্তিনের ভূমি প্রদান করিতে আমার কোনো আপত্তি নেই এবং কখনো আপত্তি করবেও না। ইহুদিরা এবং আমি(বাদশা আব্দুল আজিজ) কখনই তাদের [যুক্তরাজ্যের] আদেশ লঙ্ঘন করব না,”। 

বাদশাহ আবদুল আজিজ স্বাক্ষরিত নোটটি পড়ুন। নোটটি যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি সৌদি রাজপরিবারের বিশ্বস্ততার পরিমাণও প্রকাশ করে।

১৯৩০-এর দশকে ব্রিটেন সৌদি আরবকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছিল, কারণ এটি লোহিত সাগর জুড়ে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে ছোট সমুদ্রপথ এবং পূর্বে সংক্ষিপ্ত তম বিমান পথ বরাবর অবস্থিত ছিল। সৌদি আরব ট্রান্সজর্ডান হয়ে ইরাক ও ফিলিস্তিনের মধ্যে প্রধান ব্রিটিশ মোটর রুট এবং তেল পাইপলাইনের কাছাকাছি ছিল। আল সৌদ পরিবারের শাসন ব্রিটেনের জন্য সৌদি আরবের গুরুত্বকেও যুক্ত করেছে, কারণ যুক্তরাজ্য বিশ্বাস করেছিল ইবনে-ই সৌদ রাজারা আরব দেশগুলিতে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। 




ইসলাম টাইমস, ০৩ নভেম্বর ২০১১, গল্প-১১১৪৪৭।


ইসলামিক রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় বসার গনতান্ত্রিক হাকীকত

 "ইসলামিক রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় আসার গনতান্ত্রিক হাকীকত"

ইসলামিক রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় বসার গনতান্ত্রিক হাকীকত



ভোটের সংখ্যাধিক্যে জিতে ইসলামিক দল কি বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় কখনো আসা উচিত? ভোট আর নির্বাচনের যে গণতন্ত্র, সেই গণতন্ত্র কি ইসলামী কোনো দলের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা পাবার উপযোগী? ইসলামী রাজনীতিতে নির্বাচন ও ভোটের হিসেব কতটুকু প্রাসঙ্গিক?

আমি মনে করি বাংলাদেশের ৭৫%~৮০% ভোটার যেদিন ইসলামিক দলকে ভোট দেবে, কেবলমাত্র সেদিনই তার রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করার উপযুক্ত সময়। এর আগে কখনোই নয়। ৭৪% ভোট নিয়েও ইসলামিক দলের উচিত হবে না রাষ্ট্রক্ষমতা নেওয়া। আমাদের স্বাভাবিক যে অভিজ্ঞতা – ৩৫ থেকে ৪৫ ভাগ ভোট পেলে পতিত ফ্যাসিস্ট লীগ বা বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতা পায় এবং তাদের মতো করে দেশ চালায়। কিন্তু কোনো ইসলামীক দল কখনই এরকম ৩৫/৪০ বা ৫১% ভোটের ক্ষমতা দিয়ে দেশ চালাতে পারবে না। বরং দেশ, জাতি ও দলের জন্য বিরাট নিরাপত্তাহীনতা ডেকে নিয়ে আসবে।

এরকম কথা শুনে, এই ধরনের চিন্তাভাবনায় বিভ্রান্ত হয়েই অনেক গ্রুপ ইসলামে গণতন্ত্র হারাম বলে প্রচার চালায়, কেউ৷ কোউ আবার সেনাবাহিনীর সহায়তায় ক্ষমতা নিতে চায়, ইসলামী দলের কোনো কোনো কর্মী পথভ্রষ্ট হয়ে চরমপন্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ৭৫-৮০ ভাগ ভোট পাওয়া সুদূরপরাহত ব্যাপার, তাই ইসলামিক দল কখনো ক্ষমতায় যেতে পারবে না—এই হতাশা যদি পেয়ে বসে, সেটা এক বড় সমস্যা তৈরি করবে। কিন্তু এটাই বাস্তবতা। এই হতাশা কি অন্যদের ব্যাঙ্গবিদ্রুপ করে - দমিয়ে দিয়ে ঢেকে রাখা স্বাস্থকর? ইসলামী দলের সাথে গণতন্ত্রের সম্পর্কটা সাধারণের বোধগম্য করে বলা তো সোজা কথা না।

গণতন্ত্র চর্চা করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা কে করেছে?  ৭০-৮০ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন মুসলিমপ্রধান দেশের খবর নিলে এটা ধ্রুব সত্য হয়ে দেখা দেয় যে, ভোটের গণতন্ত্রের মাধ্যমে ইসলামপন্থীদের রাষ্ট্রক্ষমতা চর্চা করা কতটা অসম্ভব। আলজেরিয়া, মিশর, ফিলিস্তিনের গাজায় ভোটে জেতা ইসলামী দলের পরিণতি ভয়াবহ! তুর্কীরা নানান রকম সমঝোতা করে, অনেক ছাড় দিয়ে, এমনকি ইসরাইলের সঙ্গে পর্যন্ত সম্পর্ক রেখে এখনো ক্ষমতায় টিকে আছে—যদিও মাঝখানে একবার লাল সুতো বের করে দিয়েছিল প্রায়- অভ্যুত্থান ঘটিয়ে। ইরান-আফগানিরা বিপ্লব ও যুদ্ধের মাধ্যমে টিকে আছে।

গণতন্ত্রের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে জবাব কি? চরমপন্থীরা যে গোমরাহীর মধ্যে ঘুরপাক খায়, তা তো গনতান্ত্রিক দলের আক্রান্ত হওয়াকালীন সময়ের চেয়েও বেশি বেদনাদায়ক। আবার আমাদের দেশটার যে ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান তা অগণতান্ত্রিক বিপ্লব ও অভুত্থানের জন্য কি উপযোগী? কখনোই না।

ইসলাম প্রতিষ্ঠাকে কি এলাকাভিত্তিক আলাদাভাবে সংজ্ঞায়িত ও ব্যাখ্যা দেওয়ার অনুমতি আছে? যদি তা থাকে, তাহলে আমরা কিছু উপায় চিন্তা করতে পারি।

ইসলামকে একমাত্র জীবনব্যাবস্থা হিসেবে বিশ্বাস যারা করি, তাদের কাছে জনগনের ব্যাপারে যে চিন্তা থাকা দরকার,  তা হলো -  সকল মুসলমানের প্রাণ, ইজ্জত, সম্পদ, নিরাপত্তা, মর্যাদা ও স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনযাপনের স্বাধীনতা রয়েছে। মুসলিম রাষ্ট্রের ভূমি ও মুসলমানদের বাসস্থানের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা রাজনৈতিক ইসলামে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন বিষয়। যেকোন মূল্যে এই স্বাধীনতা রক্ষা করা ইসলামী রাজনীতির মৌলিক উদ্দেশ্য। এই ব্যাপারে স্থুল উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, দেশের সীমানা রক্ষার যুদ্ধ চলাকালীন নামাজ কাজা করা যেতে পারে। ...জীবনোপকরণের স্বাচ্ছন্দ্য ও ভূমির স্বাধীনতা বর্তমান বিশ্বের মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য সর্বাধিক জরুরী প্রয়োজন।

এই প্রয়োজন মেটানো ও স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে যেহেতু দেশী শত্রু আর বিশ্বমোড়লদের চক্ষুশুল হয়ে স্বাধীনতা হারানোর ঝুঁকি তৈরী হয়, সেহেতু উপযুক্ত সময় আসার আগ পর্যন্ত শক্তিশালী ও প্রভাবশালী বিরোধীদল থাকাটাই অধিক কল্যাণকর হতে পারে। সকল ধরনের থ্রেট সামলানোর দক্ষতা অর্জন করার আগ পর্যন্ত  গনতান্ত্রিক সিস্টেমের মধ্যে থেকেই জনগনের স্বাচ্ছন্দ, স্বাধীনতা ও নিরাপদ সমাজ গঠনে অবদান রাখা ও জনগনকে প্রস্তুত করা সম্ভব।
 
মূল রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থেকে, অর্থাৎ সরকারি দল না হয়ে, বাকি সমস্ত জায়গায় ভোটের রাজনীতি করতে হবে। ভোটে জেতার সব ধরনের চেষ্টা চালাতে হবে।

ইউনিয়ন, জেলা পরিষদ, মেয়র ও কমিশনার নির্বাচনে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে জেতার চেষ্টা করতে হবে। জিততে হবে। প্রভাব বিস্তার করতে হবে।

সকল সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে জেতার জন্য চেষ্টা চালানো যাবে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাবসায়ী আইনজীবীদের ফোরামগুলোতে নিজস্ব লোকদের নেতৃত্বে রাখতে হবে।শ্রমিকদের সকল ইউনিয়নে নেতৃত্বে থাকতে হবে।প্রাইভেট কোম্পানিগুলোতে জিএম/সিইও/ডিরেক্টর পদে যোগ্যতার মাধ্যমে বসতে হবে। বহি:বিশ্বে বিশেষ করে ইউরুপ ও আমেরওকার মত দেশে বাংলাদেশী অভিবাসী যারা ইসলাম প্রিয় তাদের স্থান করে নিতে হবে।

আসল কথা হলো, বিদেশে ও দেশের সব জায়গায় গণতন্ত্র ও নির্বাচনি রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান রাখতে হবে… কিন্তু সব কিছুর পরেও জাতীয় সংসদের সরকারি দল হওয়া যাবে না, যতক্ষণ না ৭৫% এর বেশি ভোট পাওয়া যায়।

৭৫% এর বেশি অর্গানিক বৈধ ভোট যেদিন কোন ইসলামপন্থী দল পাবে, তখন সম্ভাবনা আছে যে, ক্ষমতা নেবার পর ইসলামী ঐ দলটির জন্য যে থ্রেটগুলো তৈরি হবে,  সেগুলো সামলানো জন্য প্রভাবশালী দক্ষ লোকজন বিভিন্ন কী পয়েন্টে প্রস্তুত  থাকবে। দেশের ৭৫% লোক যাকে ভোট দেবে, আশা করা যায় সেনাবাহিনীতে তার অন্তত ৪০ ভাগ প্রভাবশালী অফিসার থাকবে, বিদেশি মিশনগুলোতে - জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে ঐ দলের লোকেরা ভালো অবস্থানে থাকবে, শক্তিশালী দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের ব্যক্তিগত বন্ধু হিসেবে বিশ্বজুড়ে৷ ড.ইউনিসের মতো অন্তত একশো মানুষ থাকবে। 

আল্লাহ যেন একটি ইসলামী দলকে বাংলাদেশকে ৭৫%+ ভোট পাবার উপযুক্ত করে নিরাপদ রাষ্ট্রক্ষমতা দান করেন। আল্লাহ আমাদের হঠকারীতা, অনৈক্য ও স্বাধীনতার নিরাপত্তাহীনতা থেকে রক্ষা করুন। 

ইসলামিক রাজনৈতিক কৌশল ও নেতৃত্বে হাজারো সমস্যা থাকতে পারে, কিন্তু উপমহাদেশের ইসলামী রাজনীতির মহীরূহ হিসেবে জামায়াতই কোটি কোটি মানুষের একমাত্র নিরাপদ অবিভাবক, এক শক্তিশালী নিরাপত্তা দেয়াল। এই দেয়াল ভেঙ্গে গেলে মুসলমানের স্বাধীনতা, জীবন ও ইজ্জত ঘুর্নিঝড়ের খরকুটোর মত উড়ে যাবে। 

নতুন কোন প্লাটফর্ম যখন তৈরী হয়, আমরা একবুক আশা নিয়ে স্বাগতম জানাই, যে, তারা এমন যায়গায় এক্সেস নেবে যেখানে প্রচলিত ইসলামী রাজনীতি এক্সেস পাচ্ছেনা। তারা এমন লোকদের ঐক্যবদ্ধ করবে যারা প্রচলিত ইসলামী আন্দোলনে আসতে অনিচ্ছুক। আমাদের সবার অভিন্ন স্বপ্ন তো এক শক্তিশালী স্বাধীন সার্বভৌম স্বচ্ছল বাংলাদেশের। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে যারা কাজ করার জায়গা পাচ্ছেনা, কম্ফোর্ট জোন পাচ্ছেনা - তাদেরকে একত্রিত করে এক দুইটা না - অসংখ্য প্লাটফর্ম হোক না!  যারা অলরেডি এই একই স্বপ্ন নিয়ে একটা জায়গায় কাজ করে যাচ্ছেন প্রাণপন ডেডিকেশন নিয়ে, তাদেরকে খোঁচানো, আঘাত দেয়া, টেনে ধরা, ছোট করার মত ভুলকে সমর্থন দেয়া যায়না। এধরনের ভ্রাতৃঘাতি সাংঘর্ষিক চিন্তাভাবনা ও মানসিকতা থেকে আল্লাহ নতুন যুগের কান্ডারিদের হেফাজত করুন।

সংকলিত  সংশোধিত।
google.com, pub-2637311997853796, DIRECT, f08c47fec0942fa0

মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫

ভারতীয় রক্ত স্রোত বহনকারী তুলসী গ্যাবার্ড উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন সদস্য

 "ভারতীয় রক্ত স্রোত বহনকারী তুলসী গ্যাবার্ড উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন সদস্য"

হিন্দুত্ববাদী তুলসী গ্যাবার্ড

তুলসী গ্যাবার্ড ১২ এপ্রিল ১৯৮১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামোয়ার প্রধান দ্বীপ তুতুইলার লেলোলোয়া, মাওপুতাসি কাউন্টিতে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি ক্যারল (পোর্টার) গ্যাবার্ড এবং মাইক গ্যাবার্ডের পাঁচ সন্তানের মধ্যে চতুর্থ।১৯৮৩ সালে, গ্যাবার্ড যখন দুই বছর বয়সী, তখন তার পরিবার হাওয়াইয়ে ফিরে যায়, যেখানে তারা ১৯৭০-এর দশকের শেষ দিকে বাস করেছিল।

গ্যাবার্ডের পূর্বপুরুষরা ইউরোপীয় এবং সামোয়ান ছিলেন।তিনি একটি বহুসাংস্কৃতিক পরিবেশে বড় হয়েছেন।তার মা ইন্ডিয়ানাতে জন্মগ্রহণ করেন এবং মিশিগানে বড় হন। তার বাবা, যিনি সামোয়ান এবং ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামোয়ায় জন্মগ্রহণ করেন এবং শৈশবে হাওয়াই এবং ফ্লোরিডায় ছিলেন। হাওয়াইয়ে যাওয়ার পর, গ্যাবার্ডের মা হিন্দুধর্মে আগ্রহী হন এবং তার সমস্ত সন্তানকে হিন্দু নাম দেন। গ্যাবার্ডের নিজের নাম "তুলসি," যা সংস্কৃত শব্দ, যার অর্থ পবিত্র তুলসী গাছ। এটি দেবী তুলসীর পৃথিবীতে অবতারের প্রতীক।

গ্যাবার্ডের শৈশব কাটে হাওয়াইয়ে, যেখানে তিনি সার্ফিং, মার্শাল আর্ট এবং যোগ শিখেছিলেন।তিনি প্রাচীন ভারতীয় ধর্মগ্রন্থ ভগবদ্গীতা থেকে কর্মের মতো আধ্যাত্মিক নীতিগুলি শেখেন।স্কুল জীবনে তিনি হাওয়াইয়ের একটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী বৈষ্ণব হিন্দু সংগঠন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ তথা ইসকন সম্পর্কিত সাইন্স অব আইডেন্টিটি ফাউন্ডেশনের শিক্ষায় পরিচালিত হন।কিশোর বয়সে তিনি হিন্দুধর্মে বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। গ্যাবার্ড বেশিরভাগ সময় হোমস্কুলিংয়ের মাধ্যমে পড়াশোনা করেছেন।

তার শুরুর দিকে কর্মজীবনে গ্যাবার্ড বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, যার মধ্যে ৯/১১ হামলার পরে তার বাবা প্রতিষ্ঠিত "স্ট্যান্ড আপ ফর আমেরিকা" (SUFA) রয়েছে। ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি "দ্য অ্যালায়েন্স ফর ট্র্যাডিশনাল ম্যারেজ অ্যান্ড ভ্যালুজ" নামে একটি রাজনৈতিক কমিটিতে কাজ করেন, যা হাওয়াইয়ের আইনসভাকে সমলিঙ্গ বিয়ে নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা দেওয়ার জন্য একটি সংশোধনী পাশ করতে সহায়তা করেছিল। এছাড়াও তিনি "দ্য হেলদি হাওয়াই কোয়ালিশন"-এ কাজ করেছেন, যা হাওয়াইয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার প্রচার করত।

২০০২ সালে, মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করার সময়, গ্যাবার্ড লিউয়ার্ড কমিউনিটি কলেজ থেকে টেলিভিশন প্রোডাকশন পড়া বাদ দিয়ে হাওয়াই হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে নির্বাচনে দাঁড়ান এবং জয়লাভ করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে নির্বাচিত নারী রাজ্য প্রতিনিধি হন। ২০০৯ সালে, তিনি হাওয়াই প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি থেকে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।




শৈশবের কথাঃ

গ্যাবার্ড তাঁর শৈশবের বেশিরভাগ সময় হাওয়াইতে কাটিয়েছেন এবং তিনি আজীবন সার্ফার। তিনি যোগব্যায়াম অনুরাগী এবং নিয়মিত সকালে যোগব্যায়াম ও ধ্যান চর্চা করেন। তিনি নিজেকে একজন নিরামিষভোজী বলেছেন, যদিও কিছু সূত্রে তাঁকে ভেগান হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে। গ্যাবার্ড বলেছেন, তিনি হিন্দু মূল্যবোধে বড় হয়েছেন।তিনি বৈষ্ণব হিন্দু ঐতিহ্য অনুসরণ করেন এবং তাঁর আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক হিসেবে গীতা থেকে কর্ম ও ধর্মের আদর্শকে মূল্যায়ন করেন। তিনি নিজেকে কর্মযোগী (কর্ম যোগী) হিসেবেও বর্ণনা করেছেন। ২০১৩ সালে তিনি গীতার একটি ব্যক্তিগত কপির ওপর শপথ গ্রহণ করেছিলেন।

ওয়াশিংটন, ডি.সি. তে যাওয়ার পর, গ্যাবার্ড আনাকোস্টিয়া নদীর ওপারে তাঁর বোন বৃন্দাবনের সঙ্গে বসবাস করতেন, যিনি একজন মার্কিন মার্শাল। তিনি সামরিক প্রবীণদের জন্য কাজ করেছেন এবং প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। ডি.সি.-তে তিনি ভারতীয়-মার্কিন সম্প্রদায়ের সঙ্গে দীপাবলি উৎসব উদযাপনেও অংশগ্রহণ করেছেন। ২০১৬ সালে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে দীপাবলির একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রচারাভিযানে সমর্থন দিয়েছিলেন, এই উৎসবের নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি সম্মান জানিয়ে।

হাওয়াইতে থাকার সময়, তিনি সংক্ষিপ্তভাবে সাইন্স অব আইডেন্টিটি ফাউন্ডেশনের (SIF) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যা বৈষ্ণব হিন্দু এবং ভক্তি যোগ আন্দোলনের একটি সংগঠন।তিনি বলেন, এই সংগঠনের নেতা মিস্টার বাটলার তাঁর প্রাথমিক জীবনে এক ধরনের আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক ছিলেন।তিনি উল্লেখ করেছেন যে, গীতার নিঃস্বার্থ কর্মের শিক্ষা তাঁকে সামাজিক কাজে অনুপ্রাণিত করেছে। ২০১৪ সালে, একজন কংগ্রেস সদস্য হিসেবে, তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে গীতার একটি কপি উপহার দেন এবং জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস ঘোষণার জন্য মোদির প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানান।

২০০২ সালে, ২১ বছর বয়সে গ্যাবার্ড এদুয়ার্দো তামায়োকে বিয়ে করেন।২০০৪ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিনি ইরাকে মোতায়েন ছিলেন এবং ২০০৬ সালে তাঁরা বিবাহবিচ্ছেদ করেন। তিনি যুদ্ধকালীন চাপের কারণে বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।২০১৫ সালে, তিনি আব্রাহাম উইলিয়ামস নামে একজন ফ্রিল্যান্স সিনেমাটোগ্রাফার এবং সম্পাদককে ঐতিহ্যবাহী বৈদিক বিবাহ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে করেন। ২০২৪ সালে মেঘান ম্যাককেইনের পডকাস্টে তিনি জানান যে, তাঁরা সন্তান নিতে চেয়েছিলেন এবং কয়েকটি ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতি চেষ্টা করেও সফল হননি।

গ্যাবার্ড হাওয়াই সংস্কৃতি এবং এর 'আলোহা স্পিরিট'-এর প্রতি আজীবন শ্রদ্ধা জানিয়ে এসেছেন। আলোহা স্পিরিট শান্তি, সহানুভূতি এবং সৌহার্দ্যের প্রতীক। তিনি প্রায়ই আলোহা সম্ভাষণ ব্যবহার করেন, যা তিনি ব্যাখ্যা করেন, "আমি আপনাকে সম্মান এবং ভালোবাসা নিয়ে অভিবাদন জানাচ্ছি।





সূত্রঃ

১।উইকিপিডিয়া,

২। [https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%B8%E0%A7%80_%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A1]



দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে!

  দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে! এক.   শুনতে খারাপ শোনালেও এটা সত্য, রবীন্দ্রনাথের...