expr:class='"loading" + data:blog.mobileClass'>

Wikipedia

সার্চ ফলাফল

শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৪

গ্রামগুলো আজ মাকাল ফল




আমারা ছোট বেলা হতে এটা জেনে, শোনে ও দেখে বড় হয়েছি যে গ্রাম হলো শান্তির জায়গা, বিশেষ করে বাংলাদেশের গ্রাম গুলো। এখানে এক সময় ছিলো স্নিগ্ধতা, নম্রতা, ভদ্রতা আর ভালবাসায় ভরা একটা সমাজ। পাখির কলতান, নদীর প্রবাহমান স্রোত আর মানুষ গুলোর সারল্যতা। আজ আর এমনটা নাই। যারা এখনও গ্রামে আছে তারা বুঝতে না পারলেও যারা শহরে সারা বছর মানুষের কোলাহলে থাকে তারাই আজও এটা হৃদয় হতে অনুভব করে এবং বুঝতে পারে।

আপনি সারা বছর টাকার জন্য বাধ্য হয়ে দেশ বিদেশ হতে বছরে একবার যাবেন গ্রামে শান্তির জন্য, একটু হাফ ছেড়ে নি:শ্বাস ফেলার জন্য? উপায় নাই, শান্তি পাবেন না, এখন আর এই গ্রাম সেই গ্রাম নাই। আগে মুরব্বীরা বলতো গ্রামের মানুষ আগে স্বর্গে যাবে, আর এখন গেলে দেখবেন গ্রামের লোক গুলো এতই নীচু চিন্তভাবনা ধারন করে আদতে তারা স্রষ্টার নিকট ক্ষমা পাবে কিনা তাহাই অনিশ্চিত। 

গ্রামে এখন একজন ভদ্রলোক গেলে তাকে কিভাবে অপমান করে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করা যায় তা নিয়ে প্রতিযোগীতা করে একদল নিরক্ষর মানুষের দল, আরেক দল বসে থাকে বছরে একবার গ্রামে আসা লোকটাকে ঠকিয়ে কিছু টাকা আনার আশায়, আরেক দল বসে থাকে কোনো ভাবে তার বাসায় দরবার বসিয়ে তার বাড়ুতে কিভাবে শালীশ বসানো যায়। হিংসার আগুনে সুপ্ত আগ্নেয় গিরির মত গ্রামের মানুষ গুলোর হৃদয়, কিন্তু কাউকে বুঝতে দেয় না।

আমার মতে সামর্থ্য থাকলে কোন ভদ্রলোকের কখনোই গ্রামে থাকা উচিত না। এখানে বেশিরভাগ মানুষ এতটাই টক্সিক যে তারা তাদের ব্যাক্তিগত জীবনের থেকে আপনার জীবন নিয়ে বেশি চিন্তিত। আপনার চুল বড় কেন, আপনি বোরকা পড়েন না কেন, অনার্সে পড়লেও মেয়ের বিয়ে দেয়না কেন, মেয়ের ভাই নাই কেন, বয়স ২৫ পেরিয়ে গেলেও এখনো জব হয়না কেন, আপনার ব্যাচমেট কেউ বিদেশে গিয়ে লাখ লাখ টাকা কামায় আপনি এখনো পড়াশুনা করেন কেন এসব আজগুবি বিষয় নিয়ে তাদের অনেক টেনশন।মাঝে মাঝে দেখবেন আপনার নিজের ফ্যামিলিও যেসব বিষয় নিয়ে চিন্তিত নয় অন্যান্য মানুষ এর থেকে বেশি চিন্তিত।

গ্রামের টক্সিক বিষয়গুলোর আরেকটি বড় পার্ট হচ্ছে ঝগড়া, আপনি এমন কোনো বাড়ি খুজে পাবেন না যেখানে জায়গা-জমি নিয়ে কোনো বিরোধ নেই।প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই ফ্যামিলি সেই ফ্যামিলির সাথে কোনো একভাবে ঝগড়া লেগেই থাকে। ১ ইঞ্চি জায়গা নিয়ে মাথা ফাটাফাটি,অশ্লিল ভাষায় গালাগালি,মামলা মোকদ্দমা চলতেই থাকে।

এইজন ওইজনের নামে গোপনে প্যাঁচ লাগিয়ে ঝগড়া বাদিয়ে দেওয়া,কাউকে পছন্দ নাহলে তার নামে জায়গায় অজায়গায় বদনাম রটিয়ে দেওয়া,এমনকি বিয়ে আসলেও গোপনে প্যাঁচ লাগিয়ে দেওয়া গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের যেনো একটি নিত্যদিনের কাজ।

গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ ই এতটা অজ্ঞ যে তারা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বুঝেনা, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বুঝেনা, এমবিবিএস ডাক্তার এর মানে বুঝেনা। তাদের কাছে সরকারি চাকুরী মানে পুলিশ(হউক কনস্টেবল), সেনাবাহিনী (হউক সৈনিক), প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক এসব ই। আর একজন নার্সিং এ পড়া স্টুডেন্টকে যেমনভাবে ডাক্তার ভাবে তেমনি সরকারি মেডিকেলে এমবিবিএস পড়ুয়া কাউকেও সেরকম ই ভাবে। এলাকার একটা কলেজে থেকে ডিগ্রি পাশ করা মেয়ে, আর ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করা একই জিনিস ভাবে। তাদের কাছে আপনি সরকারের কত গ্রেডের চাকুরী করেন তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ আপনি প্রাইভেট জব করেন নাকি সরকারি। আপনি যদি প্রাইমারি স্কুলের পিওন ও হোন তাও মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি,কিন্তু বেসরকারি যতো ভালো চাকুরী ই করেন,আমতা আমতা করবেই। তাদের কাছে আপনার উচ্চশিক্ষা গ্রহনের থেকে আপনার সে বন্ধুর দাম বেশি যে এসএসসির পর সৈনিক/কনস্টেবল/ বিদেশে বা কোনো কাজে চলে গেছে।

আর টক্সিসিটির সবচেয়ে বিরক্তিকর পার্ট হচ্ছে গ্রামের চায়ের দোকানগুলো। গ্রামের প্রতিটি চায়ের দোকানে চায়ে চুমুক উঠেই গীবত দিয়ে। যেখানে কার বৌয়ের বাচ্চা হচ্ছেনা, কার বৌ প্র‍্যাগন্যান্ট থেকে শুরু করে রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা কোনোটার ই গবেষণা বাকি থাকেনা। যার অধিকাংশই আবার গুজব।

জন্ম থেকেই গ্রামের পলিমাটি গায়ে মেখেও,একজন খাঁটি গ্রাম্য মানুষ হয়েও এ কথাগুলো লিখার একমাত্র কারন তিক্ততা,কাউকে কষ্ট দেওয়ার জন্য লিখিনি, লিখেছি জীবনের বাস্তব উপলব্ধি গুলো শেয়ার করতে।

এখন গ্রামে নতুন একটা ট্রেন্ড চালু হয়েছে, গ্রামের যুব সমাজ ভদ্রলোজ গুলো বাড়ি গেলে তার সমস্যা খোঁজে বের করে তাকে সন্মানিত করার নামে গ্রামে থাকা দালাল গুলোর সাথে কৌশলে জড়িয়ে দেয়, তারা ভাবে এই ভদ্রলোকটা বছরে একদিন আসে, আর গ্রাম্য দালাল গুলা সারা বছর তাদের পাশে থাকে, তাই দালালদের দালালী করে এই যুবক গুলা ভদ্রতার মুখোশ পড়ে আসল ভদ্রলোককে অপমান করে।

ভার্সিটি পড়ুয়া / বেকার যে কেউ আশা করি কথাগুলো রিয়েলাইজ করতে পারবে। কারন ঈদের ছুটিটা সবার জন্য সুখকর নয়!

তাইতো বলি গ্রাম আর আগের সুজলা, সুফলা, সশ্য শ্যামলা, সারল্যতায় ভরা সেই স্বর্গ আর নাই, কেবল মাত্র গ্রাম গুলো আজ মাকাল ফল। 

মাওলানা মওদূদীকে সমালোচনার কারন

"আল্লামা মওদূদী রহঃ এর বিরুদ্ধে সমালোচনার প্রকৃত কারণ"




আমরা দেওবন্দ বা কওমী মাদ্রাসা থেকে ফারেগ হওয়া সকল বন্ধদের কে বিনীত ভাবে বলতে চাই যে, দেওবন্দের কিছু কংগ্রেস পন্থী ওলামারা যদি রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত হিংসার বশে মওদূদীর বিরুদ্ধে ফতোয়া দেওয়ার প্রয়োজন মনে করে,
তাহলে তুমি কিসের প্রয়োজনে সে ফতোয়াকে যাচাই বাছাই ছাড়াই প্রচার করছ। দেওবন্দ বা কওমী মাদ্রাসা থেকে দ্বীন শিখার পরিবর্তে যদি মুরব্বি পূজাই শিখে এলে, তবে সেটা কি কোন কল্যাণকর
হতে পারে। যদি মাওলানা মওদুদী আলেমই না হবেন তাহলে তাকে দেওবন্দের মুখপাত্র, মাসিক ইসলামী পত্রিকার সম্পাদক বানানো হলো কেন। মাওলানা মওদুদী ছিলেন সহজ সরল একজন আলেম সাংবাদিক। তার লেখার স্টাইল এবং যুক্তি প্রমান ও জ্ঞানের গভীরতা সকল আলেম সমাজের লোকের কাছে পৌছে গিয়েছিল। এ কারনে দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত, দেওবন্দ ওলামাদের সংগঠন জমিয়তে আল ইসলামের মাসিক মুখপাত্র ‘ আল-জমিয়াত’ প্রত্রিকার সম্পাদক হিসেবে মাওলানাকে নিয়োগ দেয়া হলো। যারা বর্তমানে মওদূদীকে আলেম মানতে নারাজ তাদের কাছে আমার প্রশ্ন হলো, বর্তমান হাটহাজারী থেকে প্রকাশিত মাসিক মুইনুল ইসলামের সম্পাদক কি একজন জাহেল বা আধুনীক শিক্ষিত কে বানানেরা কল্পনাও কেউ করতে পারেন। অথবা বর্তমান আল কাওসার পত্রিকার সম্পাদক কি একজন জাহেল হতে পারেন। তখনকার দেওবন্দ থেকে প্রকাশিত কোন দ্বীনি প্রত্রিকার সম্পাদক কোন আলেম ছিলেন না এমন দাবি যারা করেন তারা মুলত তাদের আকাবারদের কে মুর্খ এবং জাহেল হিসেবে ঘোষনা করছেন। কেননা তারা তো এত মুর্খ ছিলেন যে, শত শত ওলামাদের মুখপাত্র এবং তাদের পক্ষ থেকে প্রকাশিত প্রত্রিকার সম্পাদক এমন একজন কে বানানো হয়েছিল যিনি আলেম ছিলেন না, সাধারন শিক্ষিত ছিলেন। দেওবন্দ ওলামাদের একমাাত্র সংগঠন জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের মুখপাত্র আল জমিয়ত পত্রিকার সম্পাদনার ভার পড়ল মাওলান মওদূদীর ওপর। আল জমিয়ত পত্রিকাটি মুলত দেওবন্দ আলেমদের সংগঠন জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের কর্ম সুচি প্রচার প্রশার করার জন্য ছাপানো হতো। তৎকালিন দেওবন্দের বেশির ভাগ নেতৃত্বস্থানীয় আলেমরা কংগ্রেসের কট্টর সমর্থক ছিলেন এবং জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দ ছিল কংগ্রেসের সহযোগী সংগঠন। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে কংগ্রেসের লেজুর বৃত্তি করাই ছিল এই ওলামা সংগঠনটির একমাত্র কাজ। আজকের বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের যেই রাজনৈতিক এবং নৈতিক পজিশান, তৎকালিন জমিয়াতে ওলামায়ে হিন্দেরও সেই একই পজিশান ছিল। কংগ্রেসের লেজুর বৃত্তি করাটা যেন জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের দায়িত্ব হয়ে গিয়েছিল। এখনো এই দলটির ইশারায়আবাংলাদেশের কিছু ইসলামী দল আলেম ওলামাদের মধ্যে বিভেদ তৈরিতে ভুমিকা রাখছেন। উল্লেখ্য না করলে ভূল হবে যে, তৎকালে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ছিলেন মুসলমানদের চরম দুশমন হিসেবে চিহিত মহাত্মা গান্ধী। গান্ধির অহিংস আন্দোলন ছিল মুসলমানদের জিহাদের বিপরিতে প্রপাগান্ডা মুলক এক চরম বিদ্ধেষ ভাবাপন্ন সাম্প্রদায়িক আন্দোলন, যদিও তা অহিংস শব্দের আড়ালে ডেকে রাখা হয়েছিল।বএই আন্দোলন চলাকালে এক মুসলমান কতৃক তাদের এক নেতাকে -যার নাম ছিল শ্রদ্ধানন্দ -হত্যার অপরাধে সারা ভারত জুরে যে দাঙ্গা হয়েছিল তার ভিতর ঘী ঢেলেছিল গান্ধির,সেই নিকৃষ্ট উক্তি-” মুসলমানদের ইতিহাস থেকেবতলোয়ার আর রক্তের গন্ধ ভেসে আসে।” অবাক করা বিষয় হচ্ছে তখন কিন্তু জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের দায়িত্বে ছিলেন এমন সব ওলামারা যাদের তাকওয়া আর বুজুর্গীর ডংকা সারা ভারতীয় উপমহাদেশে বাজত। তাদের মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য ছিলেন, মাওলানা আশরাফ আলি থানবি, মুফতি মোহাম্মদ শাফী, মাওলান আহমেদ হুসাইন মাদানী, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মাওলানা মুফতি ফয়জুল্লাহ রহ সহ দেওবন্দের বিশিষ্ট আলেম গন। জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের তৎকালিন সভাপতি ছিলেন মাওলানা হুসাইন আহমেদ মাদানী এবং সেক্রেটারি হিসেবে ছিলেন মাওলানা আবুল কালাম
আজাদ। কিন্তু আশ্চর্য্যরে বিষয় হচ্ছে মহাত্মা গান্দির এই নিকৃষ্ট উক্তির পরে যখন ব্যাপক হারে মুসলমান হত্যা করা শুরু হলো এবং ইসলামী জিহাদের অপব্যাখ্যা করে জিহাদকে সন্ত্রাস আখ্যা দেওয়া হতে লাগল, তখন এই বুজুর্গদের কারো অন্তরে আল্লাহর দ্বীনের জন্য কোন মায়া লাগেনি এবং তারা কংগ্রেস ত্যাগ করার দরকারও মনে করেননি। কংগ্রেসের সাথে সংযুক্ত থাকা যাদের কাছে বৈধ ছিল, আজকের যুগে তাদের খলিফাদের কাছে নারী নেতৃত্ব্য আরো খারাপ হয়ে গেছে আবার শাপলা চত্বরে গাদের কর্মীদের হত্যার পর লাশ গুম করেও নারী নেতৃরা এখন কওমী জননী। যদিও হিন্দু নেতার নেতৃত্বে আন্দোলন করতে কোন
সমস্যা হয়নি। মহাত্মা গান্ধির কংগ্রেসের পরিচালিত অহিংস আন্দোলন ছিল মুসলমানদের বিরুদ্ধে একটি প্রকাশ্য যুদ্ধ কিন্তু দেওবন্দ কংগ্রেস পন্থী আলেমদের কাছে তা ছিল একেবারে সহনীয় কারন তাদের কাছে দেওবন্দ মাদ্রাসার হেফাজত এবং নিরাপত্তাই মুখ্য ছিল। মুসলমানদের অধিকার বা ইজ্জত তখন প্রধান্য পায়নি। আমাদেরববর্তমান মুরব্বিদের কাছে আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে একজন হিন্দুর নেতৃত্বে দলন করা বা তার দলের অংগ সহযোগী হয়ে আন্দোলন করার সময় কি এসব ফতোয়া মনে ছিল যা তারা আজকে বলছেণ নারী নেতৃত্বের সাথে জোট বদ্ধ হয়ে স্বৈরাচার হটানোর আন্দোলন নাজায়েজ। জিহাদের বিরুদ্ধে সারা ভারত জুরে যখন এক ধরনে প্রপাগান্ডা চলতে লাগল ঠিক তখনি দিল্লী জামে মসজিদের খতিব তার জুমার খোতবায় আক্ষেপের সুরে বলছিলেন যে, মুসলমানদের মধ্যে এমন কোন নওজোয়ান আল্লাহর সৈনিক কি নেই যে মুশরিকদে এই প্রপাগান্ডার দাঁত ভাংগা জবাব দিতে পারে। মাওলানা মওদূদী বলেন, আমি সেই মসজিদে তখন অবস্থান করছিলাম এবং আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম যে, কেউ করুক আর না করুক আমি এই দায়িত্ব পালন করবো। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাওলানা লিখে ফেললেন তার প্রথম বই- জিহাদ ফিল ইসলাম। মহাত্মাগান্ধির প্রচারিত অহিংস আন্দোলন যে ইসলামের শিক্ষার বিপরীত তার দাঁত ভাঙ্গা জবাব ছিল জিহাদ ফিল ইলসলাম। গ্রন্থটি প্রকাশ হওয়াতে দুটো কাজ হলো। প্রথম হচ্ছে মুশরিকদের প্রচারনারনপ্রকৃত জবাব দেয়া হলো এবং জিহাদ সম্পর্কে সঠিক মাসয়ালা বের হয়ে এলো। পুরো গ্রন্থটি পত্রিকার মাধ্যমে ধারাবাহিক ভাবে প্রচার করা হয়েছিল। অন্যদিকে এই বই রচনা করতে গিয়ে যে মাওলানা মওদূদীকে শত শত কিতাব পড়তে হয়েছিল। এনহিসেবে তার কাছে গোটা ইসলামের চিত্র ফুটে উঠলো। ইসলামকে তিনি নতুন ভাবে জানার সুযোগ পেলেন। তার জ্ঞান রাজ্যের সিমানায় নতুন এক রাজত্ব্য ঠাই করে নিল। তিনি মুগ্ধ হয়ে গেলেন। তিনি তার কলমের ব্যবহার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন। নিজের বড় ভাইর সাথে পরামর্শ করে বললেন যে, মুসলমানদের সামনে যে মস্তবড় বিপদ আসছে সেই বিপদ থেকে তাদের সাবধান
 করা জরুরী। যে মহা প্লাবনের সংকেত আমি পাচ্ছি তা থেকে একজন মুসলমানকে যদি হেফাজত করতে পারি তাহলেও আমারআপ্রচেষ্টা র্স্বাথ্যক হবে। উল্লেখ্য যে, পাকিস্তান আন্দোলন এবং তার পরবির্ত দিনের মুসলমানদের ভবিষ্যত নিয়ে তিনি যে, আগাম ঘোষনা করেছিলেনবতা অক্ষরে অক্ষরে সত্যে পরিণত হয়েছে। আন্দোলনের মুখে পাকিস্তান কায়েমআহয়েছে ঠিকই কিন্তু যে ইসলামের নাম নিয়ে তাকে প্রতিষ্টা করা হয়েছিল, সেই ইসলামী রাষ্ট আর ইসলামী বিধান কে খোদ মুসলমানরাই অস্বীকার করে এবং প্রাশ্চাত্যের অনুকরনে একটি সংবিধান কায়েম করা হয়। পাকিস্তানের মধ্যে যে অস্থিরতা আজ বিরাজমান, তা সেদিনের সেই পাপের ফল। এ কারনে মাওলানা মওদূদী সেদিনবঘোষনা করে দেন যে,বআজকে থেকে আমার কলম যদি কোন একটি অক্ষরও লেখে তাও আল্লাহর কালাম এবং তার দ্বীনের প্রতিনিধিত্ব করবে আর তা কেবল আল্লাহর জন্যই হবে। কংগ্রেসের সমস্ত সমর্থকদের কাছে এমন কি কংগ্রেস পন্থী আলেমদের কাছেও মাওলানা মওদূদী অত্যান্ত বিপদ জনক ছিলেন। কারণ তারা দেখেছেন যে, মওদূদীর লেখার ধরন প্রমান করছে যে, তিনি তার কলমের কাচি থেকে ইসলামের নামে প্রচলিত জাহেলীয়াতের একটি অংশকেও ছাড় দেবেন না। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, ইসলামী জিহাদের ওপর এমন প্রামন্য কিতাব মুসলিম জাহানে দ্বিতীয়টি লেখা হয়নি। সেই থেকে শুরু মাওলানা লেখার কাজ। মাওলানা নিজে স্বীকার করেছেন যে, উক্ত কিতাবটি লেখার পরে আমি ভিতর থেকে অনুভববকরতে লাগলাম যে আল্লাহ হয়তোআআমার ভিতর কিছু প্রতিভা দিয়েছেন এবং আমাকে এ কাজ অবশ্যই চালিয়ে যেতে হবে। উক্তবকিতাবটি লেখার পরে মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের দেয়া অপবাদ সাময়িক সময়েরবজন্য বন্ধ হয়ে গেল ঠিক কিন্তু তারা অপেক্ষা করছিল মোক্ষম সুযোগের যাতে এর বদল তারা নিতে পারে।এরি মাঝে শুরু হয়ে গেল পাকিস্তান কায়েমের আন্দোলন।হিন্দুদের অত্যাচার নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে মুসলমানরা নিজেদের আলাদা আবাস ভুমির দাবি করে বসল এবং পাকিস্তান কায়েমেরবআন্দোলন একটা অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হলো। মুসলমানরাবএক যোগে এই আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করতে লাগল। মাওলানা মওদূদী যদিও জানতেন যে, যারা ইসলামের নামে পাকিস্তান কায়েমের আন্দোলন করছে তারা কখনোই পাকিস্তানে ইসলাম কায়েম করবে না তবুও তিনি এই নৈতিক ভাবে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। আন্দোলনে যোগ দেয়ার আরো একটি কারন হিসেবে মাওলানা নিজেই বলছেন যে, কোন এক জায়গা থেকে ট্রেনে আসার পথে তিনি দেখলেন যে, হিন্দু জমিদার দের কে মুসলমানরা মাথা নিচু করে প্রনাম করে যা একেবারে সিজদার মতো। তিনি তখনই সিদ্ধান্তবনিলেন যে, যে করেই হোক মুসলমানদের জন্য আলাদা আবাস ভুমি অবশ্যই থাকতে হবে এবং জিন্নাহর মুসলীম লীগের কার্যক্রমে তিনি সরাসারি যুক্ত না হলেও কথা আর লেখার মাধ্যমে তার সমর্থন করে যেতে লাগলেন। পাকিস্তান কায়েমের আন্দোলনে মুসলমানদের কে বিভ্রান্ত করতে হিন্দু কংগ্রেস নেতারা ব্যবহার
করলেন মুসলমানদের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ দেওবন্দ মাদ্রাসা মোহতামিম কে। একদিন দিল্লীর জামে মসজিদে নামাজ পড়াতে গিয়ে দেওবন্দের মোহতামিম, জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা আহমেদ হুসাইন মাদানী জুমার খুতবায় অত্যান্ত স্পষ্ট করে বললেন যে, মুসলমানদের আলাদা আবাস ভমির
দাবি করা একটি মারাত্মক ভুল এবং তিনি এও বললেন যে, হিন্দু মুসলমান এক জাতী হয়ে এই উপমহাদেশে বাস করতে পারে। এ বিষয়ে তিনি একটি বড় ভাষন প্রদান করেন। মাওলানার সেই ভাষন প্রথমে লিফলেট পড়ে বই আকাড়ে প্রকাশ করা হয়। মাদানীর এই বক্তব্য লিফলেট আকারে হিন্দুরাও প্রচার করতে লাগল। মহাত্মা গান্দির কংগ্রেসের এই চালে জিন্নাহর মুসলীম লীগ কোনাঠাসা হয়ে পড়ল। যেহেতু আহমেদ হুসাইন মাদানী মাওলানা শফীর মত  উপমহাদেশের একজন বিখ্যাত আলেম তাই তার কথায় মুসলমানরা পেরেশান হয়ে পরল কিন্তু কেউ এর প্রতিবাদ করার সাহস করলনা। কারন দেওবন্দের মোহতামিমের বিরুদ্ধে কথা বলার স্পষ্ট অর্থ হচ্ছে নিজেকে ফতোয়ার বানে জর্জরিত করা। ইতিহাসের পাতায় এ ঘটনাকে ওয়ান নেশন এন্ড টু নেশন থিউরি নামে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। যারা ইতিহাসের প্রতি আগ্রহ রাখেন তারা এ বিষয়ে ভালো করেই জানেন। মাওলানা মওদূদীকে জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের পক্ষ থেকে বলা হলো, আল- জমিয়াত পত্রিকা মারফত এই হিন্দু মুসলমান এক জাতি তত্ত্বের ওপর লেখা লেখনীর মাধ্যমে প্রচারনা চালানোর জন্য। মাওলানা মুওদূদী সাফ জবাব দিয়ে দিলেন যে, আল্লাহ তাকে যদি সামান্য পরিমান মেধা শক্তি দিয়ে থাকেন তাহলে তা কেবলমাত্র মুসলমানদের উপকারের জন্য দিয়েছেন এবং জীবন বাকি থাকতে তিনি মুসলমানদের স্বার্থ্যরে বিরুদ্ধে এক কলম লিখার জন্য প্রস্তুত নন। জমিয়তের এই ঘোষনা শুনার পর তাদের পত্রিকায় আর এক মুহুর্ত্য কাজ করা সমীচিন মনে করেননি। তিনি আল জমিয়তের কাজ ছেড়ে দিয়ে তরজমানুল কোরআন পত্রিকার দায়িত্ব্য নেন এবং শর্ত দিয়ে দেন যে, ইসলাম প্রচারে তাকে কোন প্রকার বাধা দেয়া যাবেনা। পরবর্তিতে এই একটি পত্রিকা ভারত উপমহাদেশেরবইতিহাসে ইসলাম আর মুসলমানদের মুখপাত্র হিসেবে স্বিকৃতি পেয়ে যায়। মাওলানা আহমেদ হোসাইন মাদানির বক্তব্য যখন পাকিস্তান কায়েমের আন্দোলনে বিরাট বাঁধা হয়ে দাড়াল, এ পর্যায়ে মাওলানা মওদূদীও তার স্বভাব সুলভ কারনে চুপ থাকতে পারলেন না। এ বিষয়ে আল্লাহর সুন্নাত হচ্ছে যখন দায়িত্ব্যশীলরা কোন কাজ আঞ্জাম দিতে ব্যর্থ হন, তখন আল্লাহ সেই জনপদে অন্যকোন ব্যক্তি বা জাতীকে উত্থীত করেন যে, মানুষকে ভয় না পেয়ে আল্লাহর ইচ্ছা পুরন করবেন এবং নিজ দায়িত্ব্য পালন করবেন। এটাই হচ্ছে আল্লহর ফিতরাত। ভারত উপমহাদেশের ইতিহাসে আমরা সেই সত্যের মঞ্চায়ন হতে দেখেছি। যে কাজ করার কথা ছিল বড় বড় বুঝুর্গ দাবি ওয়ালাদের অথচ তারা সবাই মহাত্মা গান্ধির নৌকায় চড়ে হাওয়া খাচ্ছিলেন আর সে কাজ আঞ্জাম দেয়ার জন্য আল্লাহ পছন্দ করে নিলেন আরেক জনকে। 
যাহোক, যে চিন্তা সেই কাজ, মাওলানা হুসাইন আহমেদ মাদানীর লিফলেটের জবাবে মাওলানা মওদূদী লিখে ফেললেন তার অমর এক গ্রন্থ মাসালায়ে কওমীয়াত বা জাতীয়তা বাদ সমস্যা। এই বইতে মাওলানা মওদুদী নাম ধরে হোসাইন আহমেদ মাদানীর যুক্তির সমালোচনা করে কোরআন হাদিসের অসংখ্য দলিল দিয়ে প্রমান করে দেন যে, হিন্দু মুসলমান এক জাতী নয়, বরং তারা দুটি পরস্পর বিরোধী আলাদ দুটি জাতি। তাদের সভ্যতা এবং সংস্কৃতি সম্পর্ন আলাদা। তাদরে মাঝে মুসলমানরা কেবল সংখ্যা লগু হয়ে নির্যাতন সইতে হবে নতুবা নিজেদের আমলের পরিবর্তন করতে হবে। হিন্দু জমিদার দের হাত থেকে রেহাই পেতে মুসলমানদের জন্য নিজস্ব সংস্কৃতি গড়ে তোল ছাড়া কোন উপায় নাই। তাছারা তিনিও এও প্রমান করলেন যে, হিন্দু মুসলমানকে এক জাতি বলা একটি সুস্পষ্ট কুফরি কেননা ভাষার ভিত্তিতে জাতীয়তা হয়না। আমরা মাওলানা হোসাইন আহমেদ মাদানীর কিছু বক্তব্য তার বই থেকে কোড করছি। এক জাতিতত্বের পক্ষে তিনি কিভাবে আদা জল খেয়ে নেমেছিলেন তার কিছু নমুনা পাঠকরা উপলদ্ধি করতে পারবেন। মাদানী রহ লিখেন-“ মাওলানা মাদানী লিখেন- এক জাতিতত্বের বিরুদ্ধে এবং এটাকে ন্যায় নীতির বিপরিত প্রমান করার,জন্য যা কিছু লেখা হয়েছে এবং হচ্ছে তার ভূল ত্রুটি দেখিয়ে দেওয়া জরুরী মনে করছি।......।
আরেকটু এগিয়ে গিয়ে তিনি বলেন- একজাতীয়তা যদি এতই অভিশপ্ত এবং নিকৃষ্ট হয়, তবুও ইউরোপীয়রা যেমন এই অস্ত্র ব্যবহার করে মুসলমানদের বাদশাহী ও ওসমানীয়া খেলাফতের মুলচ্ছেদ করেছে, তাই এই হাতিয়ারকেই বৃটিশদের মুলচ্ছেদের কাজে ব্যবহার। করা মুসলমানদের কর্তব্য। মাওলানা মওদূদী মাদানীর এই বক্তব্যের জবাবে যে,,বিপ্লবী গ্রন্থ লেখেন, তার প্রারম্ভে তিনি লেখেন- দারুল উলুম দেওবন্দের প্রিন্সিপাল জনাব মাওলানা হুসাইন আহমেদ মাদানীর “একজাতিতত্ত্ব ও,ইসলাম” নামে একটি পুস্তক,রচনা করেছেন। একজন সুপ্রসিদ্ধ আলেম এবং পাক-ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের লিখিত এই বইটি জটিল জাতি সত্ত্বার সরল বিশ্লেষন এবং প্রকৃত ইসলামী দৃষ্টি ভংগির পূর্ন অভিব্যাক্তি হবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু এই বইটি পাঠ করে আমাদের কে নির্মমভাবে হতাশ হতে হয়েছে এবং বইটি লেখকের পদমর্যাদার পক্ষে হানিকর বলে মনে হচ্ছে। বর্তমান যুগে অসংখ্য ইসলাম বিরোধী মতবাদ ইসলামের মুলতত্ত্বের ওপর প্রবল আক্রমন চালাতে উদ্যত, ইসলাম আজ তার নিজের ঘরেই অসহায়।

স্বয়ং মুসলমানগন দুনিয়ার ঘটনাবলী এবং সমস্যাবলী খালেস ইসলামী দৃষ্ঠিতে যাচাই করে না। বলাবাহুল্য নিছক অজ্ঞতার কারনে তারা এমনটি করছে। উপরুন্ত জাতীয়তার বিষয়টি এতই জটিল যে, তাকে সুস্পষ্ট রুপে হৃদয়ঙ্গম করার উপরেই একটি জাতির জীবন মরন নির্ভর করে। কোন জাতি যদি নিজ জতীয়তার ভিত্তিসমূহের সাথে সম্পূর্ণ ভিন্ন মুলনীতির সংমিশ্রণ করে, তবে সে জাতি হিসাবে দুনিয়ার বুকে বাচঁতে পারবে না। এই জটিল বিষয়ে লেখনী ধারন করতে গিয়ে মাওলানা হোসাইন আহমেদ মাদানীর মতো ব্যক্তিত্ত্বের নিজের দায়িত্ব্য সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন থাকা বাঞ্চনীয় ছিল। কারণ তার কাছে নবীর আমানত গচ্ছিত আছে।”
এই বইয়ে আরেক জায়গায় মাওলানা মওদূদী লিখেন- আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ওলামায়ে হিন্দের কাছে কাউন্সিল ও এসেম্বলীতে যোগ দেয়া একদিন হারাম এবং অন্যদিন হালাল বলে ঘোষনা করা একেবারে পুতুল খেলার শামিল হয়ে গেছে। গান্ধীজির একটি শব্দই তাদের ফতোয়াদানের ক্ষমতা সক্রিয় হয়ে উঠে। 
কিন্তু আমি ইসলামের শাশ্বত ও অপরিবর্তনীয় নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে বলছি- আল্লাহ ও রাসুল ফয়সালা করেছেন এমন কোন বিষয়ে নতুন করে ফয়সালা করার নিরংকুশ অধিকার মানুষকে দেয় যেসব সামগ্রিক প্রতিষ্ঠান- মুসলমানদের পক্ষে তা সমর্থন করা এক চিরন্তন অপরাধ সন্দেহ নাই।.......।
মাওলানা মওদুদী জাতিয়তার ভিত্তি বর্ননা করে বলেন-“ যেসব গন্ডীবদ্ধ, জড় ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও কুসংস্কারপূর্ণ ভিত্তির ওপর দুনিয়ার জাতীয়তার প্রসাদ গড়ে উঠেছে আল্লাহ ও তার রাসুল (স) তা চূর্ন বিচূর্ণ
করে দেন।”
জাতীয়তা ভাষা বা দেশের ভিত্তিতে হয়না, হয় আদর্শের ভিত্তিতে। আমরা মুসলীম জাতি। ইসলাম আদর্শ। পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের একজন মুসলমান আমার ভাই। যদি আমার ঘরের আপন ভাইও ইসলামী আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়, তাহলে সেও আমার ভাই নয়। সে আমার জাতির অন্তর্ভূক্ত নয়। যারা এ বিষয়ে বিস্তারিত পড়তে চান তারা জাতীয়তা সমস্যা নামক বইটি পড়ে দেখতে পারেন। আলোচনার সুবিধার্থে আমরা কয়েক লাইন কোড করলাম যাতে পাঠকরা নিরেপক্ষ মন নিয়ে বিচার করতে পারেন শুরু থেকেই কারা হক্বের পক্ষ নিয়েছিল। মাওলানা মওদূদীর প্রতি মাওলানা মাদানীর আক্রোশের এটাই কারণ।।
আক্রোশকে ভিত্তি করেই মাওলানা মাদানী পরবর্তিকালে মাওলানা মওদূদীর ওপর আমরন ফতোয়াবাজীরবমেশিন গান থেকে অমুলক, ভিত্তিহীন ও বিদ্ধেষমুলক অভিযোগ টেনে রোষানল প্রজ্জলিত ফতোয়ার গোলা বর্ষন করেছেণ। এর চেয়েও অধিক পরিতাপের বিষয় হলো মাওলানা মাদানীর অনেক শিষ্য; সাগরেদ, যারা ‘ওলামায়ে দ্বীন’ বলে পরিচিত, ওস্তাদের অনুকরনে তারাও মাওলানা মওদূদীর অন্ধ বিরোধীতায় মেতে উঠেন। এ কারনে আমরা যদি লক্ষ করি তাহলে দেখবো যে, কেবল মাত্র কংগ্রেস সমর্থক
বা মহাত্মা গান্ধীর অনুসারী মাওলানা হোসাইন আহমেদ মাদানীর শিষ্য, সাগরেদ বা তার খলীফারা ছাড়া অন্য কেউই মাওলানা মওদূদীর বিরুদ্ধে ফতোয়া দেয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। যতগুলো বই মাওলানা মওদূদীর বিরুদ্ধে এ যাবত লেখা হয়েছে, তার সবগুলোই এই হোসাইন আহমেদ মাদানীর খলীফা বা কোন কোন পর্যায়ের ভক্ত অনুশারীর দ্বারা লিখিত। কওমী আলেমদের মাঝে মুরব্বিদের আনুগত্যের একটি সংজ্ঞা চালু আছে।
সংজ্ঞাটি হলো মুরব্বির ভুল ধরাও ভূল। অথচ মওদূদীর মতো একজন সাধারন আলেম এত বড় মুরব্বির সমালোচনা করলেন এবং তার কথাকে স্পষ্ট ভাষায় অনৈসলামীক এবং ভ্রান্ত বলে রায় দিলেন, এতো বড় অপরাধ কি সহজে ক্ষমা পাওয়ার মতো। এসব কারনে দেওবন্দের,একাংশের কাছে মাওলানা মওদূদীর লেখা বিষতুল্য মনে হলো।
মাদানী সাহেব বললেন-
 ইয়্যে লেড়কা বেয়াদব হ্যাঁয়। শুধু কি তাই। তারা ঘোষনা করলো মওদূদীর বই পড়লে সাধারন ছাত্রও মুরব্বিদের
সাথে বেয়াদবী করা শিখবে।”
এভাবেই মাওলানা মওদূদীর লিখিত বই জাতীয়তা সমস্যা বা মাসালায়ে কওমীয়াত লেখার কারনেই মওদূদীকে হোসাইন আহমেদ মাদানীর ফতোয়ার বানে জর্জরিত হতে হয়েছে। কি সব অবাস্তব মিথ্যাচার তারা করেছেণ তার নমুনা একটু পরেই আমরা দেখাতে পারবো।

এই বইটি যখন তরজমানুল কোরআনে প্রকাশ হতে লাগল, মুসলিম লীগের সমর্থক সহ সকল মুসলামনরা যেন চাঁদ হাতে পেল। তারাও হিন্দুদের প্রচারিত মাওলানা হুসাইন আহমেদ মাদানীর বক্তৃতার লিফলেটের জবাবে মাওলানা মুওদূদীল লিখিত তরজামানুলের কপি বিলি করতে লাগলেন। এদিকে আল্লামা ইকবাল শুরু থেকেই মাওলানার চরম ভক্তদের মধ্যে একজন ছিলেন। তিনিও সব পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছিলেন। মাওলানা হোসাইন আহমেদ মাদানী যখন এক জাতী তত্ত্ব ঘোষনা করে বক্তৃতা করলে, তখন সাথে সাথে আল্লামা ইকবাল তার সমালোচনা করে একটি কবিতা লিখে ফেললেন।

কবিতাটির অনুবাদ দেয়া হলো।
“ আজমিয়া আল্লাহর দ্বীনের
হাকিকত বুঝিতে পারেনি,
তাই
যদি না হতো তাহলে দেওবন্দের
মাওলানা হুসাইন আহমেদ
মাদানী মিম্বরে দাড়িয়ে এমন
ধরনের কথা কিছুতেই
বলতে পারতেন না যে, দেশের
ভিত্তিতে জাতী হয়
( কলেমার ভিত্তিতে নয়)
আফসোস,
এরা আরবি মোহাম্মদের (স)
মতাদর্শ
আদৌ বুঝতে পারেনি।”

আল্লামা ইকবাল এই ধরনের একজন প্রসিদ্ধ আলেমের এক জাতী তত্ত্বের পক্ষে ওকালতি দেখে এতই মর্মাহত হয়েছিলেন যে, তিনি তার কবিতার মাধ্যমে মনের ব্যথা প্রকাশ করেছিলেন।
ইতিপুর্বে যে মওদূদীর জ্ঞান গরিমার কারনে তারা তাকে তাদের নিজস্ব পত্রিকার সম্পাদনার ভার দিয়েছিলেন এবং যার প্রশংসায় তারা ছিলেন পঞ্চমুখ, তারাই এবার তার বিরুদ্ধে আদা জলআখেয়ে মাঠে নামলেন।
মাওলানার সকল লেখাকে আতশি কাঁচ দিয়ে পরীক্ষা করতে লাগলেন।
যদি কোন সামান্য বানানে ভূল ধরা পরে সাথে সাথে তা পত্রিকা মারফত জানানো হতে লাগল। এভাবেই শুরু হয়ে গেল মাওলানা মওদূদীর সাথে আহমেদ হোসাইন মাদানীর প্রকাশ্য শত্রুতা। এবং এই শত্রুতার জের ধরে তিনি বলেছিলেন যে,ইয়ে লেরকা বেয়াদব হ্যায়- এই
ছেলেটি বেয়াদব।
কওমী ঘরনার কোন ব্যক্তি একথা কল্পনাওবকরতে পারেন না যে, তিনি তার উস্তাদের ভুল ধরিয়ে দিবেন। বরং চোখ বন্ধ করে মেনে নেয়াটাই ভদ্রতার আর শিষ্টাাচার হিসেবে গন্য হয়।
আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবানী এই যে, এই ঘটনার পর দেওবন্দের আরেক বিখ্যাত বুজুর্গ মাওলানা সাব্বির আহমেদ ওসমানী কংগ্রেস আলেমদের ভুল ত্রুটি সঠিক সময়ে উপলদ্ধি করে অসংখ্য আলেমদের সাথে নিয়ে কংগ্রেস আলেমদের সঙ্গ ত্যাগ করে তার দল বল নিয়ে মুসলিম লীগে যোগদান করেন।
পরবর্তিতে তার ভ্রাতুস্পুত্র ও জামাতা মাওলানা আমের ওসমানী দেওবন্দ হতে প্রকাশিত তাজাল্লী পত্রিকার মারফত মুওদূদীর বিরুদ্ধে আনিত মিথ্যা অভিযোগের বিরুদ্ধে জবাব দিতে থাকেন। তার নেতৃত্বে দেওবন্দ জামায়াত অত্যান্ত শক্তী শালী অবস্থানে ছিল। বর্তমানে তিনি জিবিত নাই দেওবন্দ জামায়াতের অবস্থান অনেক ভালো। ইর্ষাপরায়ন কিছু আলেম ব্যক্তিগত
স্বার্থে মাওলানা মুওদূদীর বিরুদ্ধে যে সকল ভিত্তিহীন অভিযোগ দায়ের করেছেন তার অধিকাংশের জবাব বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জন দিয়েছেন এবং এই বিষয়ে বিশাল কিতাবের ভান্ডার রয়েছে। ইচ্ছা করলে যে কেহ তা সংগ্রহ করে পরে দেখতে পারেন।
কিন্তু যারা মুরব্বি পুজায় লিপ্ত, মুরব্বিদের কথাকে কোরআনের চাইতেও বেশি মুল্যায়ন করেন, তারা মওদূদীর পক্ষে লিখিত এ সকল বই পড়ে কোন ফায়দা পাবেন না। এবং এটা বই পড়ার বিজ্ঞান সম্মত কোন পদ্ধতি নয়।
যারা খোলা মন নিয়ে শুধু মাত্র সত্যকে জানার জন্য অধ্যায়ন করেছেন তারাই কেবল মাত্র কোরআন থেকে হেদায়েত পেয়েছেন। কেননা কোন ব্যক্তির জন্য এটা হেদায়েতের কিতাব নয় যে ব্যাক্তির মনে আল্লাহর কোন ভয় নাই। অতএব যারা আল্লাহকে ভয় করে পথ চলেন তারা যেন পরিচ্ছন্ন মন নিয়ে কোরআন অধ্যায়ন করে তারাই কেবল মাত্র কোরআন থেকে হেদায়েত পেতে পারে।

মাওলানা মওদূদীর প্রতি আলেমদের অভিমত


হক্কানি উলামায়ে কেরামের দৃষ্টিতে মাওলানা মওদুদী রহঃ 

★দারুল উলুম দেওবন্দের টানা ৫২ বছরের মুহতামিম + মাওলানা কাসেম নানুতুবী রহঃ এর নাতি + খলীফায়ে থানভী + চরমোনাই দরবারের গৃহপালিত মুফতি রেজাউল করিম আবরার সাহেবের বাবার বিয়ে পড়িয়েছেন যিনি তিনি হলে  মাওলানা ক্বারী ত্যায়িব সাহেব রহঃ এর অভিমত :

(১নং) 

হযরত হাকীমুল ইসলাম ক্বারী তায়্যিব রাহঃ-এর স্বরচিত প্রসিদ্ধ কিতাব "ফিতরী হুকুমাত" কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, এই বিশৃঙ্খলা সংমিশ্রণ ও সংশয় প্রবণতার যুগে মাওলানা আবুল আ'লা মওদূদী সাহেব নির্ভিকতার সাথে ইসলামী সমাজ জীবনের নিয়ম-নীতি ও বিধানাবলী পরিষ্কার ভাষায় উল্লেখ করেছেন। ইহার অবদান ও কৃতিত্ব তারই। সমগ্র জাতিকে তার গুণমুগ্ধ হওয়া উচিত।

তত্ত্বসুত্র: (মাওলানা মওদূদী আওর ফিকরি ইনকিলাব ১০৫, রাদ্দে ফেতনা ১৮০ ডক্টর সাইদ আনোয়ার আলী, প্রকাশনা ইদারায়ে শাহাদাতে হক্ক ৮০১ জামে মসজিদ দিল্লি ১১০০)

(২ নং) 

হাকীমুল ইসলাম ক্বারী তায়্যিব রাহঃ বলেন, মুহতারাম মাওলানা আবুল আ'লা মওদূদী সাহেব এই পৃথক শিরোনামে আন্দোলন শুরু করেন। এই মূলনীতির ওপর ভিত্তি করেই 'জামায়াতে ইসলামী' নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠন ও আন্দোলন ইসলামী সমাজ জীবনের পরিসীমা পর্যন্ত জাতিকে যথেষ্ট উপকার সাধন করে আসছে। তার যথাযথ বক্তব্য, স্বচ্ছ বর্ণনারীতি ও দলিল প্রমাণ প্রদর্শন মহাদেশের শিক্ষিত সমাজকে বিশেষভাবে
প্রভাবান্বিত করেছে। বিশেষ করে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত সমাজ, যানের চিন্তাধারার সামনে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা কোন যৌক্তিক চিত্র উপস্থিত ছিলনা। তারা এখন ইসলামী সমাজ-জীবন ও একনিষ্ট দ্বীনি রাষ্ট্রব্যবস্থার নিকটবর্তী হয়ে গিয়েছে যে কারণে সমগ্র জাতিকে মাওলানা মওদূদীর ঋণ পরিশোধে। অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়া উচিত।

(তথ্য সূত্র: (ক) মাওলানা মওদুদী হী মুজরিম কিউ? পৃ. ২২, লেখক, সাজ্জাদ খান, প্রকাশনা অলিস্তান ৪০ উর্দু বাজার লাহোর, পাকিস্তান।

(খ) মাওলানা মওদূদী আওর জামায়াতে ইসলামী আসসী স্বাগীলুল কদর উলামা কী নাজার মে, পৃ. ৫৭, সংকলক আরেফ দেহলভী, প্রকাশনা, মাকভাবায়ে নিশানে রাহ, নয়া দিল্লী,  (ইন্ডিয়া)

( ৩নং) 

১৯৫৩ সালে মাওলানা সায়্যিদ আবুল আ'লা মওদূদী রাহঃ এর ফাঁসির রায় হলে হাকীমুল ইসলাম কারী মুহাম্মাদ তায়্যিব রাহঃ এক শোকবার্তায় উল্লেখ করেন:-

মাওলানা মওদূদী রাহঃ ইসলামী সমাজ জীবন ও বিধিবিধান সম্পর্কে অতান্ত উপকারী, কল্যাণকর ও গ্রহণযোগা বিষয়গুলো সংকলন করেছেন ইসলামী চিন্তা ধারায় বিভ্রান্তিকর বিষয়গুলোর সংমিশ্রণ সন্দেহ প্রবণতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার বিরুদ্ধে মাওলানা রাহঃ সাহসিকতার সাথে ইসলামী সমাজ জীবনের নিয়ম নীতি ও বিধানাবলী পরিশোধন ও সংস্কার করে সামাজিক বিধি বিধান পরিস্কারভাবে উল্লোখ করেছেন, ইহা তারই অবদান। আমি তাকে ইসলামিক সমাজ বিপ্লবের শ্রেষ্ঠ ইসলামী নেতা মেনে নিয়ে তার বক্তব্য সমূহ কে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখি। (তত্ত্বসুত্র জাসারাত মাওলানা মওদূদী সংখ্যা করাচি পৃ. ৭৩)

( ৪ নং) 

মুহতারাম মাওলানা ক্বারী তায়্যিব রাহঃ অন্য একটি বক্তব্যে বলেন- মাওলানা মওদূদী ইসলামী চিন্তা ধারা সম্পর্কে অত্যন্ত উপাদেয় ও সন্দেহপূর্ণ সংমিশ্রণের যুগে নির্ভীকতার সাথে ইসলামী চিন্তাধারা পরিশোধন ও সংস্কার করে সামাজিক বিধি-বিধান পুরিস্কারভাবে উল্লেখ করেছেন। ইহা তারই অবদান। আমি তাকে ইসলামী সমাজ জীবনের একজন রাজনৈতিক চিন্তাশীল মনে করি এবং ইসলামী সমাজ জীবনের চিন্তাধারার পরিসীমা পর্যন্ত তাকে এক শ্রেষ্ঠ ইসলামী নেতা মেনে নিয়ে সম্মানের উচ্চ দৃষ্টিতে দেখি। (তত্ত্বসুত্র (ক) "মাওলানা মওদূদী সে মিলিয়ে" পৃষ্ঠা ৪৮ মাওলানা আসাদ গিলানি। (খ) " মাওলানা মওদূদী আসসি জলিলুল কদর উলামা কি নাজার মে" পৃষ্ঠা নং
৫৬। 
[ মুফতি ফয়জুল করীম সাহেব কে প্রশ্ন করতে চাই ক্বারী ত্যায়িব সাহেব রহঃ কি হক্কানি আলিম নন? ]

দারুল উলুম দেওবন্দের সুপরিচিত ও প্রসিদ্ধ লেখক, 'সাওয়ানেহে কাসেমী'-এর সংকলক, অসংখ্য বৃহৎ ও উপকারী কিতাবের মুসান্নিফ, ইসলামী ইতিহাসবিদ, আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি রহঃ এর খাস ছাত্র   মাওলানা মানাজির আহসান গিলানী রাহঃ-এর অভিমত :

সায়্যিদ আবুল আ'লা মওদূদী রাহঃ এর শান্ত স্বভাব, স্থির মস্তিষ্ক এবং গভীর দৃষ্টিভঙ্গির উপর আমার সব সময় বিশ্বাস আছে। তিনি আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিভায় দীপ্তিময়। মাস'আলা মাসায়েল বর্ণনার ক্ষেত্রে তার দৃষ্টিভঙ্গি গভীর ও সর্বব্যাপী প্রমাণিত হয়েছে। কোন জটিল বিষয়েও এমন কোন দিক বাকি নেই যেখানে তার কলম চলেনি।

বর্ণনার ইতি হৃদয়স্পর্শী, ব্যাখ্যা নীতি অন্ত দর্পণ, এছাড়া তার উচ্চ স্বভাবের সাক্ষ্য তো বহুবার বর্ণনা করেছি। স্বয়ং আমি নিজে মাওলানা আব্দুল বারী খলিফায় আশরাফ আলী থানভী সহ জামিয়া উসমানিয়া অধ্যাপনার কাজে একবার নয়, দুইবার নয়, বার বার মাওলানা আবুল আ'লা মওদূদীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। অথচ ওই সময় মাওলানার আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক ছিল। অবশেষে মাওলানা আমাদের পরামর্শকে অত্যন্ত হাসিমুখে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
মনোবলের উচ্চাসনে তিনি সমাসীন। প্রতিভা, বুদ্ধিমত্তা, লিখনি ও রচনাশৈলীতে আল্লাহ প্রদত্ত এক অপার ক্ষমতার অধিকারী। অতিরিক্ত কিছু বলার সাহস করতে পারি না, কিন্তু আমি এতটুকু বলে দিতে চাই যে আল্লাহ তা'আলা মাওলানা মওদূদীর সাথে অসাধারণ দয়াপ্রদর্শন করেছেন। ঈমানের সুদৃঢ় দীপ্তিময় আলো আমি তার পক্ষে চমকাতে দেখতে পাই।

محمد رسول الله মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর গভীর ও অটল বিশ্বাসের কারণে তার সৌভাগ্য লাভ হয়েছে। এছাড়াও তার পাশে একত্রিত হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন শ্রেণীর অসংখ্য যুবক।  ঈমানী শক্তি, জ্ঞান প্রতিভা শক্তিকে পুঁজি করে
 الدعوة إلى سبيل الله تعالى 
 তা'আলার পথে আহ্বানকে সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য বানিয়ে তিনি যদি দাঁড়িয়ে যান এবং উর্দু, ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় প্রচারকার্য চালিয়ে যান তাহলে এটা সম্ভব যে লোকজন যদি তার দাওয়াত জলদি কবুল নাও করে তবুও ইসলাম সম্পর্কে যে সকল প্রশ্নের জবাব প্রদান করেছে অন্ততপক্ষে অন্তরের মধ্যে সে প্রশ্নগুলোর দীপ্ততা প্রজ্জ্বলিত হবেই ইনশাআল্লাহ।
(তত্ত্বসুত্র (ক) মাওলানা মওদূদী সে মিলিয়ে ৯৮ পৃষ্ঠা মাওলানা আসাদ গিলানি (খ)  আসসি উলামা কি নাজার মে ৬৩ পৃষ্ঠা)

মাওলানা মওদূদী রাহঃ সম্পর্কে মাওলানা ইদরীস কান্ধলভী রাহঃ সহ মোট বারোজনের সম্মিলিত অভিব্যক্তি

মাওলানা মওদূদী রাহঃ সম্পর্কে, উস্তাদুল উলামা শাইখুত তাফসীর ওয়াল হাদিস, হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ইদরীস কান্ধলভী রাহঃ বলেন-

"আমি নিজে কোন দল বা সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত নই। এমন কি কোন সংগঠনের সাথে আমার কোন ধরনের সম্পৃক্ততাও নেই। জামায়াতে ইসলামী এখন এই ভূখণ্ডে ইসলামী হুকুমত কায়েম করার জন্য প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসলামী শরীয়তে দৃষ্টিতে এর হুকুম মুসলিম লীগের অনুরূপ। যেমনি ভাবে হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রাহঃ ও মাওলানা সাব্বির আহমাদ উসমানী রাহঃ দু'জনই কংগ্রেসের মোকাবেলায় মুসলিম লীগে যোগদানের পক্ষে ফতোয়া প্রদান করেছিলেন তদ্রুপ আজ পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর একই হুকুম। যারা ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণপণ প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন এতে এই সীমারেখা পর্যন্ত তাদেরকে সাথে সহযোগিতা করা জরুরি বলে মনে করি। এবং যে সকল ব্যক্তি বা যে সকল দল শুধুমাত্র জাতীয়তাবাদ বা দেশাত্মবোধ বা ইসলামের লক্ষ্য ব্যতীত শুধু গণতন্ত্রের নামে কাজ করে যাচ্ছেন তারা সকলেই কংগ্রেসের হুকুম রাখেন, তাদের থেকে এড়িয়ে চলা আবশ্যক। ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছাড়া আর কোন কোন আকিদা রয়েছে তা আমি অবগত নই। শুধু শোনা কথার উপর ভিত্তি করে কোন হুকুম বা ফতোয়া প্রদান করা জায়েজ নেই।

لِمَ تَقُوْلُوْنَ بِأَفْوَاهِكُمْ مَّا لَيْسَ لَكُمْ بِهِ عِلْمٌ وَتَحْسَبُونَهُ هَيِّنًا وَهُوَ عِنْدَ اللهِ عَظِيمٌ

অর্থ: তোমরা মুখে এমন কথা বোলো না যে সম্পর্কে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই আর তোমরা একে সহজ মনে করছ অথচ আল্লাহর নিকট ইহা বিরাট।

এজন্য আবেদন হল যতটুকু উদ্দেশ্য পরিষ্কার ও নৃসংশভাবে শরীয়ত মোতাবেক হবে সে ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামের সহযোগিতা করে যাবেন। আর অন্যান্য মাস'আলার ক্ষেত্রে ফুকাহায়ে কেরামের অনুসরণ ও অনুকরণ করাকে আবশ্যক সৌভাগ্যের নিদর্শন ও পরকালের সম্পদ মনে করবেন। আমার বক্তব্য হল, সঠিক উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে যা শরীয়ত মোতাবেক হয় তাতে সহযোগিতা করুন। বাকি দ্বীনি কাজকর্মে ফিকহে হানাফীর ফতোয়া অনুযায়ী আমল অব্যাহত রাখুন।

মোহাম্মদ ইদ্রিস
আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন
৫ই রজব ১৩৮২ হিজরী

নিম্নলিখিত উলামায়ে কেরাম শাইখুত তাফসির ও হাদিস মাওলানা মোহাম্মদ ইদরীস সাহেব কান্ধলভীর এ বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করিয়া লাহোর থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক শিহাব পত্রিকায় নিজেদের সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছেন পরবর্তীতে তা মুলটান থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

(১) মুফতি সায়্যিদ সাইয়াহুদ্দিন কাকাখিল, ফাযেলে দেওবন্দ লায়েলপুর।

(২) হযরত মাওলানা সাব্বির আহমাদ উসমানী, ফাযেলে দেওবন্দ লায়েলপুর।

(৩) হযরত মাওলানা আব্দুল গনী সাহেব, কোহিনুর মিল মসজিদ, লায়েলপুর।

(৪) হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আহমাদ সাহেব, ফাযেলে কাসেমুল উলুম মুলতান, লায়েলপুর।

(৫) হযরত মাওলানা আব্দুস সালাম সাহেব, ফাযেলে জামিয়া আশরাফিয়া, লাহোর।

(৬) হযরত মাওলানা আব্দুর রশীদ আরশাদ, ফাযেলে জামিয়া আরাবিয়া নিউটাউন, করাচি।

(৭) হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ মুসলেম কাসেমী, ফাযেলে কাসিমুল উলুম মুলতান, লায়েলপুর।

(৮) হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আনওয়ার কালীম, ফাযেলে বেফাকুল মাদারিস (খাইরুল মাদারিস) মুলতান।

(৯) হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল কাইয়ুম, ফাযেলে জামিয়া ইসলামিয়অ নিউটাউন, লায়েলপুর।

(১০) হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আমীন, শিক্ষক ইসলামিয়াত, ইসলামিয়া হাইস্কুল, গুঠি, লায়েলপুর।

(১১) হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ সারওয়ার, ফাযেলে কাসেমুল উলুম, মুলতান।
 তত্ত্বসুত্র- মাওলানা মওদূদী আওর জামায়াতে ইসলামী আসসী উলামা কি নাজার মে পৃষ্ঠা নং ৫৯

বিশ্বের সর্ববৃহৎ ইসলামী সাম্রাজ্যের প্রথম শায়খুল ইসলাম হযরত আল্লামা মাওলানা শিব্বীর আহমাদ উসমানী রহ. (ফাতহুল মুলহিম শারহু মুসলিম-এর লেখক এবং সাবেক শায়খুল-হাদিস ও শায়খুত তাফসীর দারুল উলুম দেওবন্দ) অগাধ ভালোবাসা ও স্বীকৃতি:

তিনি বলেন: মাওলানা সায়্যিদ আবুল আলী মওদূদী সাহেব ইসলামের তলোয়ার (সাইফুল-ইসলাম)।

 মুহাদ্দিসে আকবার, বাহরুল উলুম, হযরতুল আল্লামা মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রাহঃ প্রধান অধ্যাপক ও শাইখুল হাদীস দারুল উলূম দেওবন্দ-এর সুযোগ্য শিষ্য, শাইখুল হাদিস, উজ্জাযুল উলামা, জনপ্রিয় ও বিখ্যাত গ্রন্থ 'আল-আরফুশ শাযী' আলা জামিয়িত তিরমিযী'-এর লেখক হযরত মাওলানা মুহাম্মদ চেরাগ সাহেব রহঃ  (গুজরানওয়ালা)-এর অভিমত:

আমার মতে মাওলানা মুহতারামের বিরোধিতা করার কোন ধর্মীয় ভিত্তি নেই। মাওলানা হানাফী ফিকহের অনুসারী ছিলেন। কিন্তু হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ সাহেবের মতো তিনিও ফিকহী বিধিনিষেধের ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি মাঝে মাঝে স্বাধীন মতামত প্রকাশ করতেন। এবং এর পক্ষে তার কাছে শক্ত যুক্তি ছিল। তিনি কখনোই জেদ বা হঠকারিতা অবলম্বন করেননি। আমি নিজেও অনেক বিষয়ে তার সাথে দ্বিমত পোষণ করেছি এবং যখন প্রমাণ দিয়েছি, তখন তিনি কেবল তাতে একমতই হননি, বরং তিনি সেই মত প্রত্যাহারও করে নিয়েছেন। কিন্তু এটা খুবই দুঃখজনক যে কিছু আলেম ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক কারণে তাঁর বিরুদ্ধে অন্ধ বিরোধিতা ও অপবাদের ঝড় তুলেছেন, এবং তাতে ধর্মীয় রঙ লেপন করে দিয়েছেন। আমি নিজে এই ধরনের আলেমদের ভ্রান্ত বর্ণনার চল্লিশটি নমুনা খুঁজে পেয়েছি, যাতে তারা মাওলানা রাহঃ-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আরোপ করতে গিয়ে স্পষ্ট মিথ্যা ও অসত্যের পথ বেছে নিয়েছেন। আমি জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক হইনি এবং তাতে যোগদানও করিনি। আসলে আমি আমার মাদরাসার কাজকর্ম নিয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে, আমি যদি জামায়াতে যোগ দিতাম তাহলে আমাকে অবশ্যই অন্যান্য দায়িত্ব পালন করতে হতো, এতে মাদরাসার কাজ বন্ধ হয়ে যেত। এর একটি সুফল এই যে, যেখানে প্রয়োজন সেখানে আমি স্বাধীনভাবে মাওলানা সাহেবের সাথে দ্বিমত পোষণ করতে পেরেছি এবং তাকে প্রকাশ্যে ডিফেন্ড করার সৌভাগ্যও লাভ করেছি, যা দলীয় শৃঙ্খলায় আবদ্ধ থাকলে সম্ভব হত না।

মাওলানা আমাকে অনেক সম্মান করতেন। এটি যেমন তাঁর বিনয় ছিল তেমনি আলেমদের প্রতি ভালোবাসা ও সম্প্রীতির অনুভূতির উদাহরণও ছিল। তাঁর মেয়ের বিয়ে স্বয়ং তাঁর আমন্ত্রণে আমাকে পড়াতে হয়েছিল। তার সাথে ঘন ঘন সাক্ষাৎ হত। তবে আমি বেশিক্ষণ বসে থেকে মাওলানার সময় নষ্ট করতাম না। আসর ও মাগরিবের মধ্যকার জমায়েত সম্পর্কে আমার কিছুই মনে নেই, কারণ আমার শ্রবণশক্তি অনেক দিন ধরে দুর্বল এবং আমি মানুষের কথা শুনতে অপারগ থাকতাম। (তত্ত্বসুত্র- একজন মানুষ একটি কাফেলা)

★ ওদের অন্তরে এতটাই হিংসায় জর্জরিত যে আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি রহঃ এর অনেক কিতাবের নাম নামধারী কওমিদের মুখে শুনবেন কিন্তু আরফুশ শাযীর কথা বলে না কারণ এই কিতাবের সংকলক মাওলানা মওদুদী কে সমর্থন করতেন তাই দেওবন্দী পরিচয়ধারীরা এই কিতাবকে প্রোমোট করে না অথচ মুফতি তকী উসমানীর দরসে তিরমিজির চেয়ে ও আরফুশ শাযী অনেক উন্নতমানের কিতাব। আহলে হাদীসদের খন্ডনে মাওলানা আব্দুল মতিন সাহেব 
" দলিলসহ নামাযের মাসায়েল "
নামে একটি কিতাব লিখেছেন তিনিও আরফুশ শাযী গ্রন্থ কে ইনিয়ে বিনিয়ে গ্রহণযোগ্য নয় বলার চেষ্টা করেছেন। এইগুলো যদি হিংসা না হয় হিংসা কাকে বলে?  ★

(৯) তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ইলিয়াস সাহেব কান্দলভী রাহঃ-এর পক্ষ থেকে হযরত মুফাক্কিরে ইসলাম মাওলানা সায়্যিদ মওদূদী সম্পর্কে অভিমত :
আমার দিকে মাওলানা সাহেব (অর্থাৎ হযরত মাওলানা ইলিয়াস সাহেব কান্ধলভীর) মনোনিবেশ দেখে, আমি তাকে মাওলানা সায়্যিদ মওদূদীর দাওয়াত সম্পর্কে সেই প্রশ্নটি করে ফেললাম যা নদওয়া ত্যাগ করার পর থেকে আমার মনে জেগেছিল। আমার প্রশ্ন শুনে মাওলানা ইলিয়াস সাহেব উঠে বসলেন। আর তার চোখ থেকে ঘন অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগল, মাওলানার এই অবস্থা দেখে আমি চুপসে গেলাম। মনে হল যে আমার প্রশ্নের শব্দে বা তার ধরণে হয়তো এমন কিছু হয়েছে যা শুনে মাওলানা সাহেব কষ্ট পেয়েছেন। কিন্তু সে সময় তার অবস্থা এমন ছিল না, আফসোস ছাড়া আর মুখ খোলার মতো অবকাশ ছিল না, তাই নীরব রইলাম। মাওলানা সাহেব কিছুটা স্বস্তি অনুভব করে নিজেই বলতে শুরু করলেন। "ভাই! আসল কাজ তো সেটাই যার প্রতি মাওলানা মওদূদী আহ্বান করছেন। এটি তো (অর্থাৎ আমাদের কাজ) প্রাথমিক কাজ। ইনশাআল্লাহ, একদিন এই সময়ও আমাদের কাছে আসবে। অতঃপর অনেক দিন যাবত মাওলানা সাহেবের শরীর টিপে দেওয়ার সময় মাওলানার মুখ থেকে যে আসল কাজের বিবরণ জানলাম, তা ছিল 'দ্বীন প্রতিষ্ঠা' লক্ষ্যের বিবরণ ও ব্যাখ্যা তাঁর নিজস্ব ভাষায় ও নির্দিষ্ট বাকশৈলীতে। পরবর্তীতে মাওলানা আলী মিয়াঁ সাহেব আমাকে পুনরায় কিছু প্রশংসার কথা বলার পর অবশেষে কয়েকবার বললেন যে, ইকবাল! মাওলানা তোমার সম্পর্কে এই কথা বলতেন, অথচ মাওলানা আলী মিয়াঁ সাহেব নিজেই এই প্রশংসার দাবিদার ছিলেন, যিনি একইভাবে আঙুল ধরে আমাদের মতো মানুষদের সত্যের দিকে অগ্রসর হতে শিখিয়েছিলেন। শিশুকে যেমন আঙুল ধরে হাঁটতে শেখানো হয়। তাই আল্লাহ তাকে আমাদের পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান দিন।

(তত্ত্বসুত্র- বাদালতে নাসবুল আইন 'পরিবর্তনশীল লক্ষ্যবস্তু' পৃ-৪১-৪৩। প্রকাশিত: হেরা পাবলিকেশন্স, উর্দু বাজার, লাহোর। লেখক হযরত মাওলানা হাকীম খাজা ইকবাল আহমাদ নদভী সাহেব)

 হযরত শাইখুল-হিন্দের উত্তরসূরি, মুফতি আজম, হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতি কিফায়াতুল্লাহ সাহেব রাহঃ দেহলভী, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ ভারত'-এর সভাপতি
এবং সাহবানুল হিন্দ আল্লামা মাওলানা আহমাদ সাঈদ সাহেব রাহঃ জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সচিব, এ দুইজনের সাক্ষ্য :

মাওলানা সায়্যিদ মওদূদী রাহঃ ১৯১৮ ঈ. সালে যখন পনের বছরের যুবক ছিলেন, তখন সেই বয়সে তিনি 'আখবারে মাদীনা বিজনোর' পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। এর পরবর্তীকালে ১৯২১ ঈ. সালে, জমিয়ত উলামা হিন্দের সভাপতি হযরত মাওলানা মুফতি কিফায়াতুল্লাহ সাহেব এবং জমিয়ত উলামা হিন্দের নাজিম সাহবানুল হিন্দ মাওলানা আহমাদ সাঈদ সাহেব (যাঁরা তৎকালিন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের চালিকাশক্তি ছিলেন) তাঁরা 'মুসলিম আখবার' (এ পত্রিকাটি সেই বছরই জমিয়তে উলামা চালু করেছিল) নামক পত্রিকাটির সম্পাদনার দায়িত্ব তাঁরই উপর অর্পণ করেন। তারপর ১৯২৪ বা ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে মাওলানা মুহাম্মদ আলী জহুর এবং জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সচিব সাহবানুল হিন্দ মাওলানা আহমাদ সাঈদ সাহেব, উভয়ই একই সাথে 'হামদর্দ' ও 'আল-জমিয়ত'-এর সম্পাদনার প্রস্তাব দেন। মাওলানা সায়্যিদ মওদূদী জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের মুখপাত্র 'আল-জমিয়ত'-এর সম্পাদনাকে প্রাধান্য দেন। কোন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ? সেই জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ, যার নেতা ছিলেন হযরত মুফতি আজম মাওলানা কিফায়াতুল্লাহ সাহেব রাহঃ, হযরত মাওলানা আনোয়ার শাহ সাহেব কাশ্মীরী রাহঃ, শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা শাব্বির আহমাদ উসমানী সাহেব রাহঃ, মুজাহিদে কবির হযরত মাওলানা সায়্যিদ হুসাইন আহমাদ মাদানী রাহঃ রাহঃ, সাহবানুল হিন্দ মাওলানা আহমাদ সাঈদ সাহেব রাহঃ এঁদের মতো যুগশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ। তখন মাওলানা সায়্যিদ মওদূদীর বয়স ছিল মাত্র বিশ-একুশ বছর। এই বিশিষ্ট আলেম-ওলামারা এবং অভিজ্ঞ আলেমে দ্বীনেরা যদি 'আল-জমিয়তের' সম্পাদনার জন্য যেই ব্যক্তিকে খুঁজে পেয়েছেন, সে ছিল একজন তরুণ বালক আবুল আ'লা মওদূদী- ই। এরই মধ্যে তিনি ভারতের নেতা মাওলানা মুহাম্মদ আলী জহুরের অনুরোধে 'ইসলাম ধর্মে জিহাদ'-এর মতো একটি মহান ও অনন্য গ্রন্থ রচনা করে ইসলামের শত্রুরা ইসলামের বিরুদ্ধে সাড়ে তেরশো বছর যাবৎ যে সব আপত্তি তুলে আসছিল তার সবগুলোর দাঁতভাঙা জবাব দেন। কিন্তু অপরিণামদর্শী কিছু লোকের পক্ষ থেকে মাওলানা সায়্যিদ মওদূদীর কিছুটা প্রাথমিক ও সাধারণ বাহ্যিক কাজের মধ্যে অমনোযোগিতা ও ত্রুটির পরিপ্রেক্ষিতে এই আপত্তি তোলা হয়েছিল যে, জমিয়তে উলামার এই মহান পত্রিকার সম্পাদক পদে এমন ব্যক্তিকে কীভাবে নিয়োগ দেওয়া যায়। এই আপত্তির জবাবে মুফতি আজম হযরতুল আল্লাম মাওলানা মুফতি কিফায়াতুল্লাহ সাহেব এবং সাহবানুল হিন্দ মাওলানা আহমাদ সাঈদ সাহেব একত্রে এবং একযোগে বললেন:

آپ لوگ اس شخص کی صورت کو نہ دیکھیں، اس کے دل کو دیکھیں، مسلمانوں کے مسائل کی حفاظت یہ شخص بہت سے مولویوں سے زیادہ اچھی طرح کر سکتا ہے اور اس کے ذہن و دماغ میں اسلام صحیح صورت میں موجود ہے .

"তোমরা এই ব্যক্তির চেহারার দিকে তাকাবেন না, এর অন্তরের দিকে তাকান। এই ব্যক্তি মুসলমানদের অবস্থা অনেক আলেমদের চেয়ে ভালোভাবে নিরাপদে রাখতে সক্ষম এবং তার মন ও মননে ইসলাম তার প্রকৃত রূপে বিরাজমান রয়েছে।"

(আল্লাহু আকবার, কত মহান স্বীকৃতি এবং কত গম্ভীর ও মহৎ সাক্ষ্য)

ذَلِكَ فَضْلُ اللهِ يُؤْتِيْهِ مَنْ يَشَاءُ

এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যা তিনি যাকে ইচ্ছে দান করে থাকেন।

তত্ত্বসুত্র: (ক) ফিকরী ইনকিলাব, লেখক-তারিক মাতিন বাগপাতি, পৃ-২৮ ও ২৯, মুদ্রিত- সেন্ট্রাল ইসলামিক লাইব্রেরি, দিল্লি। (খ) এ'তেরাফে আযমাত, পৃ-৭-৩২, প্রকাশনী-স্কুল অফ চেঞ্জ ইন হিউম্যানিটি, লাহোর।

(গ) মাওলানা মওদূদী হী মুজরিম কির্ড, পৃ-১১ ও ১২।

(ঘ) সাজ্জাদজান, ফ্রেন্ডস্ পাবলিকেশান্স, হুইনআগাহী মুলতান।


(ঙ) জাসারাত, মাওলানা মওদূদী সংখ্যা করাচি, পৃ-৩৯।

মুফতি ফয়জুল করীম সাহেবের কাছে প্রশ্ন এদের মধ্যে কোন আলিম হক্কানি নয় একটু বলে যান দয়া করে? 
উপরে বর্ণিত সকল কিতাবের হার্ডকপি আমার সংগ্রহে রয়েছে যারা দেখতে ইচ্ছুক আমার বাসায় তাদের দাওয়াত রইলো। এটা তো স্যাম্পল পেশ করলাম।।।

মীর জাফরের নতুন ভার্শন

হাসিনার স্বৈরশাসন ও একজন খলনায়কের গুপ্ত কথা



আজ বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ দলের কিছু গোপন বিষয় এবং হাসিনার আমলে কিছু ব্যর্থতা সম্পর্কে লিখবো। শুরুটা ২০১১ সালের মার্চ থেকে যখন বিএনপির মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর  বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি তখন বিপর্যস্ত অবস্থা, চারদিকে ষড়যন্ত্র,দলের ভাইস চেয়ারম্যান দেশের বাহিরে, খালেদা জিয়া দেশে থাকলেও দেশী বিদেশি বহু ষড়যন্ত্রে দল জর্জরিত। মির্জা ফখরুল মহাসচিব হওয়ার পরেই ভারতীয় গোয়েন্দারা তার সাথে সখ্যতা বাড়াতে থাকে।যার পরিপ্রেক্ষিতে হেফাজত, জামায়াত সহ সব দল ২০১৩/১৪ সালে মাঠে থাকলেও মির্জা ফখরুলের সায় ছিলোনা বলে বিএনপি অন্যদের সাথে মাঠে নামেনি, বরং ধর্মীয় আন্দোলন বলে তারা ঘরে বসে ছিলো। এরপরে দলের হাইকমান্ড বিশেষ করে তারেক রহমান ফখরুলের এসব দেখে তাকে সরিয়ে বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদকে দলের মহাসচিব করতে চান, এ ব্যাপার আঁচ করতে পেরে হাসিনার বাহিনী ভারতের পরামর্শক্রমে ২০১৫ সালে ১০ই মার্চ দেশপ্রেমিক সালাহউদ্দিন আহমেদকে ঢাকার উত্তরার একটি বাড়ি থেকে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায় এবং দীর্ঘ ৬২ দিন বাংলাদেশে আয়নাঘরে তাকে বন্দী করে রাখা হয়। দেশে থাকলে বা জীবিত থাকলে অসুবিধা আছে এ কথা ভেবে তার জন্য সিদ্ধান্ত হয় তাকে ভারতে কোথাও ফেলে রেখে আসবে,যেহেতু মির্জা ফখরুল সহ অনেকেই এটার সাথে জড়িত তাই তাকে ইলিয়াস আলীর মতো মেরে ফেলা হইনি,  এবং সিদ্ধান্ত হয় ভারত   থেকে তাকে আসতে দেওয়া হবেনা। এমনকি ভারত বিরোধিতা করার কারণে দেশপ্রেমিক ইলিয়াস আলীকেও গুম হতে হয়। 
তারপর একই বছরের ১১ মে সালেহ উদ্দিন আহমেদকে  ভারতের শিলংয়ে একটা গলফ মাঠে পাওয়া যায় মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থায়।তারপর সেখানে দীর্ঘদিন জেল খাটার পর মুক্তি পেলেও মির্জা ফখরুলদের অপতৎপরতা আর ষড়যন্ত্রের কারণে তাকে দেশে আসতে দেওয়া হইনি। 
তারপর যখন বেগম খালেদা জিয়া গ্রেফতার হন, তখন কার্যত দলের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হন মির্জা ফখরুল এবং দলের সবকিছু তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন। আন্দোলন, নীতিনির্ধারণী  সব সিদ্ধান্ত  তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং ২০১৮ সালে বিএনপির হাই কমান্ড ভারতে যায় নির্বাচনের ব্যাপারে, ভারতের আশ্বাসে, ভারতের যোগসাযশে আওয়ামী ল্যাসপেন্সার ড. কামালকে কার্ড হিসেবে ব্যবহার করে মির্জা ফখরুলের সিদ্ধান্তে  রাতের ভোটের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপি এবং প্রতারিত হয়  বিএনপির কোটি সমর্থক। 
তারপর থেকে মির্জা ফখরুল গান্ধীর শান্তিবাদী আন্দোলনের নামে দেশবাসীকে প্রতারিত করে আসছেন। দেশের বহু জায়গায় বড়ো বড়ো মহা সমাবেশ চলতে থাকে এবং মহাসমাবেশ গুলোতে লক্ষাধিক লোকের উপস্থিতি থাকলেও আন্দোলনের সময় সফলতা আসতোনা। মানুষ সাড়া দিয়ে আসলেও ফখরুলদের অপতৎপরতার কারণে আন্দোলন চলা অবস্থায় পুলিশ সহজেই আন্দোলন নস্যাৎ করে দিতো।তখন আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সবাইকে সহজেই গ্রেফতার করে ফেলতো এবং তারা জেলে চলে যেতেন, সেখানে ভালো ই থাকতেন,নিজের বাসার মতো থাকতেন। আর বাহিরের মানুষ ভাবতো তিনি তো জেল খাটছেন,অনেক ত্যাগী নেতা। কিন্তু তার এই জেল খাটাও ছিলো ঐ কূটকৌশলের অংশ।প্রতিটা আন্দোলনে এমন হইছে, মানুষ গণতন্ত্রের জন্য মাঠে নামছে কিন্তু ফখরুলসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নাটক করে পুলিশের কাছে ধরা দিয়ে আন্দোলন সেখানেই শেষ করে দিতেন।

 একদিকে তিনি বড়ো বড়ো সমাবেশ করে বড়ো নেতা সাজতেন অন্যদিকে আন্দোলনের পিক টাইমে হাসিনার সাথে আঁতাত করে সব শেষ করে দিতেন, যার কারণে একটা আন্দোলন ও সফলতার মুখ দেখেনি এবং একারণেই এতো বছর হাসিনা টিকে ছিলো। 
তিনি জেল খাটা বেছে নিয়েছেন যাতে নিরাপদ থাকেন, মানুষ ও সন্দেহ করতে না পারে।নেতাকর্মীরা ত্যাগের সর্বোচ্চ মানসিকতা নিয়ে আসলেও পুলিশের কয়েকটা সাউন্ড গ্রেনেডে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিতো এবং রাতে পরিকল্পিত ভাবে তারা পুলিশের কাছে ধরা দিতেন এবং জেলে যেতেন।একই কাহিনী ঘটেছে ২৮ অক্টোবরেও। লক্ষ লক্ষ লোক এনেও মির্জা ফখরুলদের কারণে কিছুই হয়নি,বরং সেখানেই সব আন্দোলন শেষ হয়ে যায় এবং ড্যামি নির্বাচনে হাসিনা আবার ক্ষমতায় আসলো।এবার ছাত্ররা যেভাবে সম্মুখ ভাবে লড়ে হাসিনাকে হটাইছে তিনি কখনো এমন সিদ্ধান্ত নেন নাই এবং প্রতি বার তিনি একই ভাবে আন্দোলনকে শেষ করে দিয়েছেন।যদি আসলেই বিএনপি সামনাসামনি লড়তো তাহলে বহু আগেই হাসিনা হটে যেতো।

এমনকি এবারের আন্দোলনেও বিএনপি একই পন্থা বেছে নেয়, বহু নেতাকর্মী গ্রেফতারও হয় কিন্তু নেতৃত্ব ছাত্রদের হাতে থাকায় তার কূটচাল কাজে লাগেনি। 

আবার ফিরে আসি সালাহউদ্দিন আহমেদের কাছে, তিনি ৮ বছর আগে মুক্তি পেলেও দেশে ফিরতে পারেন নাই। তাকে জিজ্ঞেস করলেই বলতেন, এগুলা অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, পলিটিক্সের অংশ। ডিটেইলস বলতে পারবোনা, সমস্যা আছে। বারবার তিনি এড়িয়ে গেছেন।একমাত্র ভারতপ্রেমী গাদ্দার মির্জা ফখরুলদের কারণে দেশপ্রেমিক সালাহউদ্দিন আহমেদ দেশে আসতে পারেন নাই, বহু ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন।এখনো যে দলের চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে আসতে পারছেন না এটাও তার ষড়যন্ত্রের অংশ। কারণ তারেক রহমান আসলে তার খবর আছে। তারেক রহমানের মামলা গুলি,জামিন নিয়ে গড়িমসি, তাকে ফিরাতে কোনে তৎপরতা নাই মির্জা ফখরুলদের!বরং তারেক রহমান যেনো ফিরতে না পারে এজন্য গভীর ষড়যন্ত্র চলছে! 

আর তা না হলে আজ দু মাসের বেশি হলেও তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না কেনো?
এরপরে তারা আরেকটা ষড়যন্ত্র করেছেঃ সালাউদ্দিন আহমেদকে বিতর্কিত করার জন্য এস আলম গ্রুপের গাড়িতে তাকে পরিকল্পিত ভাবে  উঠাইছে এবং সংবাদপত্র গুলোতে নিউজ করিয়ে তাকে বিতর্কিত করাইছে,যাতে সে উপরে উঠতে না পারে, ইমেজ সংকট হয়,যাতে বিএনপি কর্মীদের কাছে সে বিতর্কিত হয়! 

এ জাতি বড়ো দূর্ভাগা। মির্জা ফখরুলের মতো গাদ্দারদের কাছে দেশপ্রেমিক সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইলিয়াস আলী, তারেক রহমানেরা হেরে যান। না হলে বহু আগেই এ জাতির মুক্তি সম্ভব ছিলো। এ যেন মীর জাফর, মীর কাশেম, লেন্দুপ দর্জীর নতুন ভার্শন।




বৈষম্য বিরোধী ছাত্র নেতাদের নিকট রাজনৈতিক প্রত্যাশা

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের  নেতাদের নিকট রাজনৈতিক
 প্রত্যাশা




বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা একটা নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি যা অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জন হয়েছে। আর এই অর্জনের পুরোটা কৃতজ্ঞতাই ছাত্রদের। ছাত্ররা দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে ঐক্য করতে হয়, কিভাবে পরাধীনতার শিকল ভাঙ্গতে হয়। কিভাবে একটি দেশ স্বাধীন করতে হয়। তবে এই বিপ্লবের মূল কারিগর শুধু ছাত্ররাই ছিলো বিষয়টা এমন না,এ আন্দোলনে শিশু, শ্রমিক,রিকৃসা ওয়ালা, লুলী মজুর, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সবারই অবদান ছিলো।

এখন আসেন ছাত্রদের রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। ছাত্রদের নিষ্পাপ চিন্তা ভাবনা, দেশ প্রেম, নি:স্বার্থ আত্মত্যাগ প্রমান করে এদেশে তাদের রাজনীতি করার অধিকারই নয়, বরং তারা রাজনীতি করার প্রয়োজনীয়তা ১০০% জরুরী।

কিন্তু তারা কি ধরনের রাজনীতি করবে? কোন  আদর্শে রাজনীতিটা করবে? বাংলাদেশে কোন কিছুই তো নিরপেক্ষ থাকে না, তাইলে এই বস্তা পঁচা রাজনীতি করে আবারও কি লেজুর বৃত্তি শুরু করবে এক সময়? না, এটা হতে দেওয়া যাবে না। 

তাইলে কিভাবে কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করবে? যে দলের রাজনীতি করুক না কোনো লেজুর বৃত্তি তো করতেই হবে। এখন যে বিপ্লবীরা রাজনৈতিক দল করতে চায় তারাই এক দিন হয়তো সংসদ সদস্য হবে, দেশ শাসন করবে, আবার ছাত্রদের ব্যবহার করতে চাইবে। 

নতুন দল গঠন করলে কি কি নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে আসবে?

১। একটি নতুন রাজনৈতিক দলে সকল ছাত্ররা কখনোই সর্ব সম্মত ভাবে যোগদান করবে না।
২। নেতৃত্বের কোন্দল হতেই পারে।
৩। নতুন যে দলটি গঠন হবে সে দলের আদর্শের সাথে সকল ছাত্র সমাজ ঐক্যবদ্ধ নাও হতে পারে।
৪। ক্যাম্পাস গুলোতে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের সাথে মতানৈক্য হবে, মতানৈক্য হলে আবারও ক্যাম্পাস গুলো উত্তপ্ত হবে।
৫। নতুন স্বাধীনতার বিপ্লবীরা বলছে ক্যাম্পাসে কোন রাজনীতি চলবে না, বিপ্লবীরা যখন নতুন দল করে সংসদ নির্বাচন করবে, তখন তাদের ছাত্র সংগঠন গুলো ক্যাম্পাসে থাকবে, এমতাবস্থায় বাকি রাজনৈতিক দল গুলো বসে থাকবে কি? তারাও ছাত্র সংগঠন খুলবে,  লাগবে ভেজাল।

ফাইনালে সকল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মাঠে মারা যাবে।

তাইলে করনীয় কিঃ
ছাত্ররা প্রমান করেছে যে ছাত্রদের হস্তক্ষেপ ছাড়া বাংলাদেশের কোন জাতীয় সমস্যা সহজে সমাধান যোগ্য নয়। অতএব তাদেরও রাজনীতি করা উচিত, তারা রাজনীতি না করলে দেশের বিপদের সময় উদ্ধার কর্তা হিসাবে কেউ থাকবে না। এমতাবস্থায় করনীয় নিম্নরূপঃ
১। সকল স্কুল ও কলেজের  ছাত্রদের সমন্বয়ে তৈরী হবে এই সংগঠন এবং এই সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হবে বাংলাদেশের সংবিধানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যর সাথে মিল রেখে, প্রয়োজনে সংবিধান নতুন ভাবে প্রনয়ন করতে হবে।

২। যারা স্কুলে ভার্তি হবে তারাই এই দলের সদস্য হিসাবে গন্য হবে, ছাত্রত্ব যেদিন শেষ হবে সেদিন হতে অটোমেটিক ভাবে সদস্য পদ শেষ হয়ে যাবে।

৩। এদলের কোন সদস্য ছাত্র থাকা অবস্থায় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারনবে না, আবার ছাত্ররাও কোন রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ডের লেজুর বৃত্তি ক্যাম্পাসে প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠিত করার কাজে নিয়োজিত হতে পারবে না।

৪। সকল ছাত্ররা ছাত্রত্ব শেষ করার পর যে কোন রাজনৈতিক দলে স্বাধীন ভাবে যোগ দিতে পারবে। 

৫। ছাত্রদের কাজই হবে দেশ,জাতি ও দেশের মানুষের স্বার্থে সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত থাকা, যখনই দেশের কোন স্বার্থে আঘাত আসবে এই ছাত্ররা প্রতিহত করার জন্য সম্মিলিত ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়বে, এতে করে কোন ক্ষমতাসীন দেশ বিরোধী কাজ করা হতে নিজেকে বিরত রাখবে ছাত্রদের ভয়ে।


৬।এভাবে চলতে থাকলে দেশে যোগ্য রাজনৈতিক নেতা তৈরী হবে এবং পরবর্তীতে কোন রাজনৈতিক দলে যখন কাজ করবে তখন দেশ প্রেম ও দক্ষতা দিয়ে দেশ পরিচালনায় নিয়োজিত থাকবে।

৭। দলের সবগুলো কমিটির নেতৃত্বে থাকবে স্ব স্ব ক্যাম্পাসের মেধাবী ছাত্ররা।

শেষ কথা হলো দেশে ছাত্রদের কথাই হবে শেষ কথা, গরিবের কথাই হবে আইন, ছাত্রদের টপকে কেউ কোনো কিছু চিন্তাও করতে পারবে না।

এরকম হলে যত বড় ক্ষমতাসীন দলই সংসদে থাকবে ছাত্রদের ভয়ে টথস্ত থাকবে, দেশ বিরোধী বা জনগন বিরোধী কাজ করার কথা মাথায় আনার দু:সাহসও করবে না।



বাংলাদেশের মুক্তির পথ কি?


বাংলাদেশের মুক্তির পথ কি?


(ধৈর্য ধরে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো) 
আমি একটি পোস্টে আমার ব্লগে লিখেছিলাম যে জুলাই বিপ্লব ২৪ এর সুফল কি আমরা পাব? কারন ৪৮ এবং ৭১ এর স্বাধীনতা কুক্ষিগত হয়েছিল যার কারনে আমরা আবারও স্বাধীন হতে হয়েছে। এখনও বাংলাদেশে বিপ্লবী সরকারে মধ্যকার মুনাফেকদের কারনে আজ আমরা জুলাই বিপ্লবের সুফলও হারাতে বসেছি।


 বিপ্লবীরা কোনো ভুয়া কালচারাল লড়াই করলে হবে না। ভারতের সঙ্গে বিরোধ ও বন্ধুত্ব প্রশ্নে আর কোনো ফাউল করা যাবে না। ভারতের সঙ্গে বিরোধ হবে জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে, অন্যায্য চুক্তি, পানি আগ্রাসন,স্বার্বভৌম বিরোধী গোয়েন্দা তৎপরতা ও চোরাচালান প্রশ্নে। আর বন্ধুত্ব হতে হবে ভারতের অগ্রসর নাগরিক সমাজ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ ও উদ্যোক্তাদের প্রশ্নে। বিরোধ ও বন্ধুত্ব একই সঙ্গে চলবে। আমরা শুধু ভারতের গোলামির বিরোধী।

গোয়েন্দা সংস্থার সরবরাহকৃত তথ্য নিয়ে প্রচারণার উদ্দেশ্য নিয়ে সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। ইলিয়াসের ভিডিওর বিষয়ে সবাই নতুন করে ভাবতে হবে। ভিডিওটি দেখে মনে হয়েছে তার ৯৯ ভাগই সত্য, ১% হয়ত বাড়াবাড়ি, আর এটা অনিচ্ছাকৃত মনে হয়েছে। ইলিয়াসের কথা আর  আমার কথা একই কথা।

শুধু একটি বিষয়ে বলি, শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়া করা হয়েছে নাকি তিনি পালিয়েছেন এ ব্যাপারে প্রকৃত তথ্য ছাড়া বড় সিদ্ধান্ত টানার আপাতত কোনো দরকার নাই,এখন প্রয়োজন হাসিনা ও তার গোলামদের মোকাবেলা, এক্ষনই মোকাবেলা না করতে পারলে দেশ ভারতের অধীনস্ত হবে।

হাসিনার পালানোর বিষয়ে মানবজমিনের মতিউর রহমান চৌধুরীর তথ্যই সঠিক। হাসিনাকে সেনাবাহিনী জোর করে ভারতে পাঠায়নি, বরং হাসিনা নিজেই স্বেচ্ছায় ভারতে পালিয়েছিল। সেক্ষেত্রে ভারত কখন হেলিকপ্টার পাঠাবে, কিভাবে ভারত যাবেন এ নিয়ে তিনি ব্যাকুল ছিলো।

আর সেনাবাহিনী আসিফ নজরুলকে সরকার প্রধান বানাতে চেয়েছে তাও সঠিক না বেঠিক তা জানার চেয়ে সেনা বাহিনীর অফিসারদের ৩৬০° পরিবর্তন করে হাসিনা বিরোধী নাটকই বড় ভয়ের বিষয়। এক্ষেত্রে বরং ড. সালেহ উদ্দিনই ছিলেন ভারত ও ডিজিএফআইয়ের পছন্দের লোক এটা স্পষ্ট । এমনকি সলিমুল্লাহ খানের কথাও বলা হয়েছিল।কিন্তু আসিফ নজরুলকে প্রধান করার কথা নতুন আবিষ্কার করলো ইলিয়াস।

মূলতঃ সেনাবাহিনী ও বিএনপি মিলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা বাছাই হয়, ছাত্ররা তাদের সম্পৃক্ততা ছাড়া নতুন সরকার মানবে না ঘোষণা দিলে ড. ইউনূস ও দুই ছাত্র উপদেষ্টা মনোনীত হয়, এ নিয়ে বঙ্গভবনে ছাত্রদের সঙ্গে মির্জা ফখরুলসহ বিএনপি নেতারা দুর্ব্যবহারও করেছিল। এই মীর্জা ফখরুলের উদ্ভট আচরনে বরং বিএনপির একাংশের গোপনে ভারতের দালালীর সন্দেহই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মাহফুজ আলমের সরকারে জায়গা করে নেওয়ার ব্যাপারটিও হুট করে হয়নি। মাহফুজ প্রথমে রাজনৈতিক সমন্বয় কমিটির প্রধান হয়, পরে নিরাপত্তাজনিত কারণে বিশেষ সহকারী হয়, কিন্তু এটি সচিব পদমর্যাদার বলে তার তৎপরতা সীমিত হয়ে যায়, ফলে পরে তাকে দপ্তরবিহীন উপদেষ্টা করা হয়। মাহফুজকে ড. ইউনূসের পাশ থেকে সরানোর তথ্য সঠিকই মনে হচ্ছে।

সর্বশেষ কথা হলো, ইলিয়াসের ভিডিওতে সেনাপ্রধানকেই টার্গেট করা হয়েছে। এটি ভয়ংকর বিষয়। সেনাপ্রধান হাসিনার পছন্দের লোক এবং ষোল বছরের সেট আপে আর্মিতে কয়েক স্তরে আওয়ামীপন্থীরা থাকাটা স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে হয় সেনাপ্রধানকে আস্থায় নিতে হবে আর না হলে পুরো সেট আপ বদলাতে হবে। কিন্তু সেনাপ্রধান দায়িত্বে থাকলে তার পক্ষে ব্যালান্স না করার উপায় নাই। চিহ্নিত ও ভেজালকারীদের হয়তো সেনাপ্রধান সরাতে পারেন, সাইড করতে পারেন। কিন্তু একেবারে আওয়ামীপন্থী ধরে সবাইকে সরানো তার পক্ষে রাতারাতি কঠিন হবে? সেক্ষেত্রে সবাই একজোট হলে বিদ্রোহ হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

যতদূর বুঝি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সেনা প্রধানের মধ্যে কিছুটা গ্যাপ শুরু থেকেই আছে। একে ঘিরে সেনাবাহিনীর একাংশ সামরিক শাসন জারিরও সুযোগ নিতে চায়। কিন্তু আমি সব সময় সরকারকে বলেছি সেনাপ্রধানের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলুন এবং তাকে পরিবর্তনের সঙ্গী করুন। সেনাবাহিনীকে রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পৃক্ত করতে ৭ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আমার ফর্মুলাও উপস্থাপন করেছে৷ খোমেনি এহসানের নেতৃত্বের বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ।তবে সেনা বাহিনীকে সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার আগে পাকিস্তান ও মায়ানমারের দিকে তাকালে আর রুচি থাকার কথা না। এই এহসান খোমেনি সম্পর্কে একটা কথা বলে রাখি এই লোকটা বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয়প যে কথাই ভবিষ্যৎ বানী করে কেনো জানি অলৌকিক ভাবে ফলে যায়। এটা তার প্রজ্ঞার প্রমান করে, দেশ পরিচালনায় ইলিয়াস হোসেন, পিনাকীর মত তার পরামর্শ গুলোও সামনে আনা দরকার।

সেনা প্রধান ও ড.ইউনুসের দূরত্ব দ্রূত কমাতে হবে,আশা করি দূরত্ব কাটলে তখন হয়তো এটি বোধগম্য হবে যে প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টা নিজে তার সামরিক সচিব বাছাই করলেও ড. ইউনূসের বেলায় কেন সেনা সদর থেকে সামরিক সচিব নিয়োগ দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। এক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝি দূর হওয়া ব্যাপার না।

এখানে একটা বিষয় খোমেনি সব সময় বলে, বাংলাদেশ কি রাষ্ট্র হিসাবে নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের চেয়ে দুর্বল? ওই তিন দেশে যদি ভারত টিকতে না পারে তাহলে বাংলাদেশে পারবে কিভাবে?

আনসার ও পুলিশ দিয়ে গেরিলা আক্রমণের পরিকল্পনা সত্যও হতে পারে, মিথ্যাও হতে পারে,অথবা আওয়ামিলীগ এর কোনো পাগল ছাগলের সিদ্ধান্তও হতে পারে তবে সত্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। তিতা হলেও সত্য যে হাসিনা ও আওয়ামিলীগের ষড়যন্ত্রকারীরা কেউ বেঁচে ফিরতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। আর হিন্দুদের দাঙ্গা লাগানোর বিষয়েও উড়িয়ে দেওয়া যায় না, তবে বাংলাদেশের মুসলমান কেউ আপাতত এই ফাঁদে সহজে পড়বে না। বরং দাঙ্গার ভয় দেখিয়ে মুসলমান মেরে আতঙ্ক দেখানোই ওদের কৌশল। এপিপি আলিফকে হত্যা করা হলো, যদি এমন ঘটনায় খুনীদের সবাইকে তৎক্ষনাত প্রতিরোধ করা হতো তাহলে সবাই শান্ত হয়ে যেত। কিন্তু বাংলাদেশে একটা ভয়ঙ্কর ব্যাপার ঘটছে যে একটা কচু কাটতে পারবে না এমন নিরীহ আওয়ামিলীগ এর লোকেরা মনে করছে যে তারা যদি মানুষ মারে তাহলেও তাদের কিছু হবে না, বরং ভারত তাদের রক্ষা করবে। এই ভুল ভেঙে না দিলে সহিংসতার কুড়কুড়ানি মন থেকে যাবে না। 

আর হ্যাঁ, জেড আই খান পান্নাদের বিষয়েও একই আলাপ। আমরা মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে এখনো এতটা নাজুক থাকি যে পান্নারা মনে করে তাদের কেউ কিছু বলবে না। অথচ পান্নাকে দুই তিন মাস আগে আদব কায়দা শিখিয়ে দেওয়া উচিত ছিলো। ছাত্ররা ঘিরে ধরে একটু সাবধান করে দিলেই হতো৷এরা এসব বিবেকহীন শয়তান ভীরু কাপুরুষ। যদি তার এত মুরোদ থাকতো ৫ আগস্ট হাসিনাকে রক্ষা করতো। মূলতঃ এজেন্সির লোকেরা চিকনে খেলে। এদেরকে গ্রেফতার করাই হলো বড় সমাধান।

যাই হোক, ইলিয়াসের ভিডিওর আলোকে এবং বাংলাদেশের চলমান আওয়ামী ষড়যন্ত্রের বাস্তবতায় দেশ শান্ত করার বিষয়ে নীচের লোক গুলোর কর্ম তৎপরতা বিশ্লেষন করে এদের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে:

(১) আসিফ নজরুল (উপদেষ্টা)
(২) জেড আই খান পান্না।
(৩)মেজর জেনারেল মাহবুবুর রশীদ
(৪)কর্নেল আসাদ (ডিজিএফআই)খুলনা
(৫)খালেদ আল মামুন(জিওসি,বগুরা)
(৬)মেজর জেনারেল ফেরদৌস হাসান সেলিম(মিলিটারি সেক্রেটারি অফ ডক্টর ইউনুস)
(৭)লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুজিব 
(৮)লেফটেন্যান্ট জেনারেল হামিদুল হক
(৯)প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম
(১০)মেজর জেনারেল খালেদ আল মামুন
(১১)জাহাঙ্গীর আলম (জিওসি,কুমিল্লা)
(১২) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরান হামিদ
(১৩)লেফটেন্যান্ট জেনারেল  মুজিব
(১৪)কর্নেল রেদওয়ান (বিজিবি)
(১৫)মেজর জেনারেল আসরাফ (মহাপরিচালক বিজিবি)

আর ভারতের দাদাগিরি চিরকালের জন্য বন্ধের নিমিত্তে যে বিষয় গুলো দ্রুত করতে হবে সেটা হলো:
১। পাকিস্তনের সাথে অতীতের সকল তিক্ত অভিজ্ঞতা আপাতত ভুলে গিয়ে তাদের সাথে বানিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করা।

২। পাকিস্তনকে বাংলাদেশে তাদের ৭১ সালের অপরাধের জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার জন্য চাপ বৃদ্ধি ও পাশাপাশি পারস্পরিক কমন শত্রুর বিষয়ে সামরিক সহযোগীতার জন্য দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তি।

৩। আনুষ্ঠানিক ক্ষমা যদি পাকিস্তান চায় সে ক্ষেত্রে তাদেরকে টাকার পরিবর্তে বাংলাদেশকে অস্ত্র সহায়তার সুযোগ করে দেওয়া, কেননা এই মুহূর্তে পাকিস্তান নিজে খাওয়ার টাকাই নাই, তাই ইচ্ছা থাকলেও পাকিস্তান টাকা দেওয়ার ভয়ে ক্ষমা চাইবে না, তাই সহজ করে দিলে বাংলাদেশের উভয় দিকেই লাভ।

৪। বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরে ভারতের উ:পূর্বাঞ্চলকে সীমিত সুযোগ দেওয়ার বিনিময়ে নেপাল ও ভুটানকে ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সাথে বানিজ্য বৃদ্ধির সুযোগ করে দেওয়া। নেপাল ও ভুটানকে বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়া।

৫। চীন, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা,  মালদ্বীপ ও পাকিস্তানের সাথে নতুন করে ভারতকে এড়িয়ে দীর্ঘ মেয়াদি একটি শক্তিশালী বানিজ্যিক বেল্ট তৈরী করা, পাশাপাশি ভারতের সাথেও বানিজ্যিক সুসম্পর্ক নিজের স্বার্থে বজায় রাখা।

৬। বাংলাদেশে ভারতীয় ল্যাসপেন্সার যারা বিভিন্ন উচ্চ পদে কর্মরত তাদেরকে সতর্ক নিয়ন্ত্রণে রাখা।

আশা করি এসকল কাজ যদি সরকার করে তবে অবশ্যই বাংলাদেশ স্বাধীনতার পূর্নাঙ্গ স্বাধ পাবে বলে আশা করি।  পরের লেখায় আরো  নতুন বিষয়ে পরামর্শ থাকবে ইনশাআল্লাহ। 


শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪

বিএনপির নির্বুদ্ধিতা ও আত্মতুষ্টি

আত্মতুষ্টি ও নির্বুদ্ধিতা ধ্বংশ করতে পারে বিএনপিকে



রক্তাক্ত জুলাই ২৪ আন্দোলন পরবর্তীতে সাবেক স্বৈরাচারী পলাতক শেখ হাসিনা পালানোর পর এ পর্যন্ত যে কোনো ভোটের জরিপে বিএনপি বর্তমানে প্রথম স্থানে আছে, কিন্তু এই জরিপের পরিসংখ্যান দেখে যদি দলটি অতিরিক্ত আত্মতুষ্টি ও নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দেয় তাইলে ধ্বংশ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

ভোটের জরীপে বিগত ১৫ বছরে বিএনপি সবার আগে এগিয়ে আছে।কিন্তু ভোটের মাঠ সব সময় এক থাকে না, এটা পরিবর্তন হতে ২৪ ঘন্টাই যথেষ্ট।  এখন যেহেতু স্বৈরাচার পালিয়েছে সেহেতু বিএনপি আর জামায়াতই মূখ্য দল। এই দুই দলের মধ্যে ভোটের ব্যধান বিশাল। কিন্তু সাংগঠনিক মজবুতির দিকে তাকালে বাংলাদেশ জামায়াত বিএনপি হতে অনেক এগিয়ে। বিএনপি যে ভোটের পাওয়ার দেখাচ্ছে সেটা পরিবর্তনশীল কিন্তু জামায়াত ভোটে এগিয়ে না থাকলেও সাংগঠনিক মজবুতিতে হাজার গুন এগিয়ে। জামায়াত শুধু নিজেদের সাংগঠনিক মজবুতির উপর ভরসা করেই বসে নেই,সেই সাথে তারা তাদের বেশ কয়েকটি শক্তিশালী প্রক্সি দলও ইতিমধ্যে মাঠে নামিয়েছে। এই প্রক্স গুলো জামায়াতের ভোট ব্যাংক হিসাবে কাজ করবে এবং দিন দিন জামায়াতের ভোট বাড়ানোর জন্য তারা কাজ করেই যাচ্ছে।

কিন্তু এই মুহূর্তে নিশ্চিত ক্ষমতায় যাওয়ার উজ্জল আলোতে বিএনপি এখন বিভোর। আর এই বিভোরতায় বিএনপি বর্তমানে বেশ কয়েকটি মারাত্মক ভুল করে যাচ্ছে।এগুলো হলো,
১। পরাজিত আওয়ামিলীগ এর নিষিদ্ধের বিষয়ে সরাসরি বিরোধিতা করা।
২। ইসকনের বিষয়ে মাখামাখি।
৩। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধকরণের বিরোধী বক্তব্য।
৪। মির্জা ফখরুলের ভারত প্রীতি মনোভাব প্রকাশ্যে আনা।
৫।চট্রগ্রামে ইসক কর্তৃক আইন জীবি হত্যার পর ইসকনের পক্ষে পরোক্ষ ওকলাতি।
৬।বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি বন্ধ না করতে পারা, দখল বানিজ্য শুরু করা ইত্যাদি।
৭। চুপ্পুকে অপসারনের বিরোধিতা করা।
৮। আহত ছাত্রলীগের বাসায় উচ্চ পর্যায়ের নেতা পাঠানো।

বিএনপি বর্তমানে যে বিষয়টি অনুধাবন করতে ব্যর্থ:
১।বিএনপির সব চেয়ে বড় ব্যর্থতা বিগত ১৬ বছরে তাদের সাংগঠনিক দূর্বলতা। এরা এটা একবারও ভাবে না যে এ পর্যন্ত একটি সফল আন্দোলন করতে পারে নি তারা বিএনপি শুধু মাত্র তাদের নিজেদের দলে থাকা আওয়ামিলীগ ও ভারতের দালালদের জন্য।

২। রক্তাক্ত জুলাই আন্দোলন যদিও সকল দলের অংশ গ্রহনের ফল, তথাপিও এখানে বিএনেির অংশ গ্রহন এমন কোনো পর্যায়ের না যে তারা এই আন্দোলনের কৃতিত্ব ও আন্দোলন পরবর্তী জনশক্তি তারা তাদের নিজেদের জন্য কাজে লাগাতে পারবে। বরং এই রক্তাক্ত জুলাই ২০২৪ এর মূল সংগঠক জামায়াত ও তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবির।

৩। জুলাই আন্দোলনের মূল মোটিভ হলো আওয়ামিলীগ তথা স্বৈরাচার হটানো। এটা বিএনপির একটি ব্যর্থ এজেন্ডাকে জামায়াত কৌশলে ছাত্র জনতাকে দিয়ে করিয়েছে। এখনও বাংলাদেশে রাজনৈতিক শক্তির মূল প্রবাহ আবর্তন হচ্ছে চরম আওয়ামিলীগ ও ভারত বিরোধিতার মধ্য দিয়েই। এমতাবস্থায় আওয়ামিলীগ ও ভারতের দালালী করলে জনগন বিএনপির প্রতি নাখোশ হবে এটাই স্বাভাবিক। 

৪। বাংলাদেশে চলছে ইসকন নিষিদ্ধের দাবী, আওয়ামিলীগ ব্যতীত ১০০% মুসলমানের দাবী ইসকন নিষিদ্ধকরণ।  কিন্তু বিএনপি এ সময়ও ইসকনের মত সন্ত্রাসী সংগঠনের পক্ষে কথা বলে নিজেদের দালাল হিসাবে জনগনের নিকট উপস্থাপন করছে যা ভোটের মাঠে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে।

৫।যে আওয়ামীলীগ বিরোধিতা ছাত্র জনতাকে হাসিনা হঠানোর জন্য শক্তি যুগিয়েছে সেই আওয়ামিলীগ প্রীতি, হাসিনা প্রীতি ও ভারত এবং হিন্দুত্ববাদ প্রীতি ছাত্র জনতার ঐক্যকে বিএনপির বিরোদ্ধে দাঁড় করাতে ১ সেকেন্ডও সময় লাগাবে না এটা বুঝতে পারছে না ফখরুলরা।

৬। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে রাজনীতির মাঠে আলেম সমাজ ও ইসলামি শক্তি একটি বিরাট নিয়ামক, কিন্তু এই ইসলামি শক্তির গুরুত্ব বুঝতে বিএনপি ব্যর্থ, আর এই ব্যর্থতা বিএনপির জন্য একদিন কাল হয়ে দাঁড়াবে।

উপরে আলোচিত সকল নির্বুদ্ধিতা ও আত্মতুষ্টি বিএনপিকে ধ্বংশের দিকে নিয়ে যাবে।


অমুসলিমদের সাথে মুসলমানদের বিয়ে

অমুসলিমদের সাথে মুসলমানের বিয়ের বৈধতা কতটুকু "



 

মুসলিম ছেলেদের জন্য আহলে কিতাব মেয়েদেরকে বিবাহ করার বিষয়ে ইসলামী শরীয়তের হুকুম কয়েক ভাগে বিভক্ত এবং বিভিন্ন শর্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যার দাবীদার। তাই বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে একটি ভূমিকাসহ কিছুটা বিস্তারিতভাবে এর জবাব পেশ করা হল।


অনেক মানুষকে বলতে শোনা যায় ‘মুসলমান ছেলেদের জন্য আহলে কিতাব মহিলাদের বিবাহ করা বৈধ।’ এটি একটি ব্যাখ্যাবিহীন অসম্পূর্ণ কথা। কেউ কেউ একথা শুনে মনে করেন যে, যে কোনো ইহুদী-খৃস্টান মহিলাকে বিবাহ করা বৈধ। অথচ এ ধারণা নিতান্তই ভুল।

প্রকাশ থাকে যে, এ উত্তরপত্রে তিনটি শব্দ ব্যবহৃত হবে। (১) বিবাহ ‘সংগঠিত’ হওয়া (২) বিবাহ ‘না জায়েয’ হওয়া (৩) বিবাহ ‘অনুত্তম’ হওয়া। এ তিনটি শব্দের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা নিম্নরূপ :

বিবাহ ‘সংগঠিত’ হওয়ার অর্থ হচ্ছে, এ কাজ সম্পাদনের পর ওই দম্পতির স্বামী-স্ত্রী সুলভ সম্পর্ক ব্যভিচার বলে গণ্য হবে না এবং তাদের সন্তান বৈধ বলে গণ্য হবে।

আর বিবাহ ‘না জায়েয’ হওয়ার অর্থ হচ্ছে, কাজটি করা শরীয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ ও গোনাহের কাজ এবং তা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।

আর বিবাহ ‘অনুত্তম’ বলে বুঝানো হয়েছে কাজটি সম্পূর্ণ অবৈধ না হলেও তা পরিত্যাজ্য ও গর্হিত এবং তা থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।

জেনে রাখা আবশ্যক যে, কোনো ইহুদী-খৃস্টান মহিলার সাথে বিবাহ শরীয়তের দৃষ্টিতে বিবাহ বলে গণ্য হওয়ার জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত রয়েছে। এদুটি শর্তের কোনো একটি না পাওয়া গেলে সেটি বিবাহ বলেই গণ্য হবে না; বরং যিনা ও ব্যভিচার সাব্যস্ত হবে। তবে উভয় শর্ত পাওয়া গেলেই যে তাদেরকে বিবাহ করা বিনা দ্বিধায় নিঃশর্ত জায়েয ও বৈধ হয়ে যাবে বিষয়টি এমনও নয়; বরং বিবাহের পদক্ষেপ নেওয়ার পূর্বেই আরও কয়েকটি শর্তের উপস্থিতির ব্যাপারে আশ্বস্ত হওয়া আবশ্যক। যদি ওই শর্তগুলো না পাওয়া যায় তবে সে ক্ষেত্রেও বিবাহ জায়েয হবে না। এর পরের কথা হল, এই শর্তগুলোও যথাযথ বিদ্যমান থাকলে বিবাহ তো জায়েয হয়ে যাবে, কিন্তু এ কাজ যে অবশ্যই মাকরূহ হবে তা তো বলাই বাহুল্য। ইসলামী শরীয়তে যেখানে মুসলিম নারীকে বিবাহ করার ক্ষেত্রেও নামাযী ও শরীয়তের অনুসারী নারীকে পছন্দ ও অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে সেখানে যে মহিলা ইসলামের কালিমাকেই মানে না (যদিও সে আহলে কিতাব হয়ে থাকুক এবং বিবাহ সহীহ হওয়ার নির্ধারিত শর্তসমূহও বিদ্যমান থাকুক) তাকে বিবাহ করা কি আদৌ পছন্দনীয় হতে পারে? এখানে ভুল বোঝাবুঝির মূল কারণ এই যে, প্রধান দুই শর্ত সাপেক্ষে আহলে কিতাব মহিলার সঙ্গে বিবাহ শুদ্ধ হওয়াকেই জায়েয হওয়া বলে মনে করা হয়। অথচ বিবাহ শুদ্ধ হলেই জায়েয হয় না; বরং জায়েয হওয়ার জন্য ভিন্ন শর্ত রয়েছে। সেদিকে লক্ষ করা হয় না। এরপর বিবাহ জায়েয হওয়ার শর্তাবলি বিদ্যমান থাকা অবস্থায় যে বিবাহ সম্পন্ন হয়, তাকে মাকরূহ বিহীন বিবাহ ধারণা করা হয়ে থাকে; অথচ এ ধারণা সহীহ নয়। এজন্য নিম্নে আহলে কিতাব মহিলাদের বিবাহ করা সম্পর্কিত ইসলামের নির্দেশনাসমূহ তিনটি স্তরে কিছুটা বিশ্লেষণের সাথে তুলে ধরা হল। বিষয়টি যথাযথভাবে বুঝে নেওয়া আবশ্যক।


এক: বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার শর্তঃ

প্রথমেই জানা দরকার যেএ যুগের অধিকাংশ ইহুদী ও খৃস্টান আহলে কিতাব নামধারীরা আদমশুমারীতে ওই দুই ধর্মের লোক বলে সরকারিভাবে রেজিষ্ট্রিকৃত হলেও মূলত তারা কোনো আসমানী কিতাব বা ধর্মে বিশ্বাসী নয়বরং ঘোষিত বা অঘোষিতভাবে জড়বাদী ও বস্তুবাদী নাস্তিকই বটে। তাই কোনো নারীর শুধু সরকারী খাতায় ধর্মাবলম্বী বলে নিবন্ধিত হওয়া কিংবা ইহুদী বা খৃস্টান নামধারী হওয়াই তার সাথে মুসলমান পুরুষের বিবাহ সহীহ শুদ্ধ হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়বরং বিবাহ শুদ্ধ হওয়ার জন্য নিুোক্ত শর্তসমূহ পূর্বে যাচাই করে নিতে হবে।

(১) মেয়েটি বস্তুবাদী নাস্তিক না হতে হবেবরং প্রকৃত অর্থে ইহুদী বা নাসারা তথা আহলে কিতাব হতে হবে। এ জন্য তার মধ্যে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর উপস্থিতি জরুরি।

(ক) আল্লাহ তাআলার সত্তা ও অস্তিত্ব স্বীকার করা।

(খ) আল্লাহ প্রেরিত যেকোনো নবী-রাসূল ও তার উপর নাযিলকৃত আসমানী কিতাবের উপর ঈমান থাকা।

(২) মেয়েটি পূর্ব থেকেই ইহুদী বা খৃস্টান ধর্মে বিশ্বাসী হতে হবে। মুরতাদঅর্থাৎ ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে ইহুদী বা খৃস্টান হয়েছে এমন না হতে হবে। এমনিভাবে কোনো মুরতাদের ইহুদী-খৃস্টান মেয়ের সাথেও মুসলমান পূরুষের বিবাহ সংগঠিত হওয়ার সুযোগ নেই।

এসব শর্ত কোনো ইহুদী বা খৃস্টান মেয়ের মধ্যে পাওয়া গেলে শরীয়তের নিয়ম অনুযায়ী তাকে বিয়ে করলে বিবাহ শুদ্ধ বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ এ সকল শর্ত সাপেক্ষে বিবাহের আকদ করলে তাদের একত্রে থাকা ব্যভিচার হবে নাবরং তাদের মেলামেশা বৈধ ধরা হবে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যেকেবল এ শর্তগুলো পাওয়া গেলেই তাদেরকে বিবাহ করা জায়েয তথা নিস্পাপ কাজ বলে গণ্য হবেবরং সে জন্য দরকার আরও কয়েকটি শর্তের উপস্থিতি। যা পরবর্তী ধাপে বর্ণনা করা হচ্ছে। -আহকামুল কুরআনজাস্সাস ২/৩২৩-৩২৬তাফসীরে রূহুল মাআনী ৪/৬৪ফাতহুল কাদীর ৩/১৩৫আদ্দুররুল মুখতার ৩/৪৫৪/২৫৫-২৫৬বাদায়েউস্ সানায়ে ৬/১২৫-১২৬বুহুস ১/৪১৫তাফসীরে মাজহারী ৩/৪২


দুই: বিয়ে জায়েজ হওয়ার শর্তাবলিঃ

(১) ইহুদী-খৃস্টান মেয়েকে বিবাহের আগে এই বিষয়ে প্রবল আস্থা থাকতে হবে যেএই বিবাহে স্বামীর দ্বীন-ধর্মের কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেইবরং এই বিবাহের পরও সে ঈমান ও দ্বীনের উপর অটল থাকতে পারবে ইনশাআল্লাহ।

(২) এই ব্যাপারেও নিশ্চিত ধারণা ও আস্থা থাকতে হবে যেএই দম্পিতির যে সন্তানাদি জন্মগ্রহণ করবে (মা আহলে কিতাব হওয়ার কারণে) তাদের দ্বীন-ঈমান রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো বাধা শিক্ষা-দীক্ষা অনুযায়ী জীবন কাটাতে পারবে। পুরুষ অথবা তার ভবিষ্যত সন্তানদের ক্ষেত্রে উক্ত বিষয়ে কোনো আশঙ্কা থাকলে বিবাহ জায়েয হবে না।

(৩) বিবাহের আগে ভালোভাবে জেনে নিতে হবেযে রাষ্ট্রের মহিলাকে বিবাহ করার ইচ্ছা করছে সে রাষ্ট্রে সন্তানদেরকে মায়ের ধর্মের অনুসারী গণ্য করার আইন রয়েছে কি না। অর্থাৎ মা অমুসলিম হলে সন্তানও অমুসলিম ধর্তব্য হবে এরকম আইন থাকলে সেখানে থেকে ওই মহিলাকে বিবাহ করা জায়েয হবে না।

(৪) তালাক বা স্বামীর ইন্তেকালের কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেলে সন্তানরা ধর্মের দিক থেকে মায়ের অনুসারী গণ্য হবে এবং স্বামী বা স্বামীর ওয়ারিশরা তাদের নিতে পারবে না-এই ধরনের কোনো আইন যে দেশে রয়েছে সে দেশে অবস্থিত কোনো আহলে কিতাব মহিলাকেও বিবাহ করা জায়েয হবে না।

(৫) যদি আলামত-প্রমাণের মাধ্যমে স্পষ্টত বোঝা যায় যেএই বিবাহের কারণে ইসলামী রাষ্ট্র বা মুসলমানদের কোনো ক্ষতি হবে তাহলে এ বিবাহ থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। বিধর্মী রাষ্ট্রের ইহুদী-খৃস্টানদের মধ্যে যেহেতু সাধারণত উপরোক্ত শর্তগুলো পাওয়া যায় না তাই ফুকাহায়ে কেরাম ঐক্যবদ্ধভাবে এই ফতোয়া দিয়েছেন যেবিধর্মী রাষ্ট্রের কোনো আহলে কিতাব মহিলাকে বিবাহ করা মাকরূহে তাহরীমীতথা না জায়েয ও গোনাহের কাজ। কোনো আহলে কিতাব মহিলা যদি ইসলামী রাষ্ট্রের অধিবাসী হয়ে থাকে এবং উপরোক্ত শর্তগুলো পরিপূর্ণভাবে পাওয়া যায় তাহলে বিবাহ যদিও সংঘটিত হয়ে যাবে কিন্তু তা হবে খুবই অনুত্তম কাজ। যার আলোচনা তৃতীয় ধাপে আসছে। উপরোক্ত আলোচনার স্বপক্ষে কিছু নির্ভরযোগ্য দলীল প্রামাণ নিম্নে পেশ করা হল,

جاء في روح المعاني /৬৬ : قال ابن عباس رضي الله عنه : لَا يَحِلُّ نِكَاحُ نِسَاءِ أَهْلِ الْكِتَابِ، إِذَا كَانُوا حَرْبًا.

প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেনআহলে কিতাব মহিলাগণ হারবী তথা কাফের রাষ্ট্রের অধিবাসিনী  হলে তাদের সাথে বিবাহ বন্ধন বৈধ নয়। -তাফসীরে রুহুল মাআনী ৪/৬৬

সুপ্রসিদ্ধ ফক্বীহ আল্লামা ইবনে হুমাম রহ. (মৃত : ৮৬১ হি.) বলেন,

وتكره كتابية الحربية إجماعا، لانفتاح باب الفتنة من إمكان التعلق المستدعي للمقام معها في دار الحرب وتعريض الولد على التخلق بأخلاق أهل الكفر.

কাফের রাষ্ট্রের আহলে কিতাব মহিলাকে বিয়ে করা ফিকাহবিদদের সর্বসম্মতিক্রমে মাকরূহে তাহরীমী (না জায়েয)। কারণ স্বামীকে কাফের রাষ্ট্রে তার সাথে বসবাস করতে হবে। ফলে সকল প্রকার ফিতনার দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যাবে এবং এতে সন্তানদেরকে কাফেরদের  সমাজে তাদের মতো করে বেড়ে উঠতে বাধ্য করা হবে। -ফাতহুল কাদীর ৩/১৩৫

সুপ্রসিদ্ধ ফকীহ আল্লামা দারদীর রহ. বলেন,

ويتأكد الكره أن تزوجها بدار الحرب، لأن لها قوة بها لم تكن بدار الإسلام فربما ربت ولده على دينها ولم تبال باطلاع أبيه على ذلك.

কাফের রাষ্ট্রের আহলে কিতাব মেয়েকে বিয়ে করা আরও কঠিনভাবে নিন্দনীয়। কারণ মুসলিম রাষ্ট্রের আহলে কিতাব মহিলার চেয়ে এদের ক্ষমতা অনেক বেশি থাকে। ফলে মহিলাটি সন্তানদেরকে স্বীয় ধর্মের উপর লালিত পালিত করতে থাকবে এবং সন্তানের পিতাকে এ ব্যাপারে সে কোনো পরওয়াই করবে না। -আশশারহুস সাগীর ১/৪০৬

বিখ্যাত ফকীহ আল্লামা শারবীনী রহ. বলেন,

لكن تكره حربية ليست بدار الإسلام وكذا تكره ذمية على الصحيح لما مر من خوف الفتنة لكن الحربية أشد كراهة منها.

কিন্তু যে সকল আহলে কিতাব মহিলা কাফের রাষ্ট্রে থাকে তাদেরকে বিবাহ করা মাকরূহ। তদ্রƒপ বিশুদ্ধ মতানুযায়ী মুসলমান দেশে বসবাসকারিনী আহলে কিতাব মহিলাকে বিয়ে করা দোষনীয়ফিতনার আশঙ্কার কারণে। কিন্তু মুসলিম রাষ্ট্রের চেয়ে কাফের রাষ্ট্রের অধিবাসিনীকে বিয়ে করা অধিক গর্হিত কাজ। -মুগনীল মুহতাজ ৩/১৮৭

জামেয়া আজহারের প্রখ্যাত শায়খ আব্দুল্লাহ আল গুমারী রহ. বলেন,

ومنها ما هو أشد قبحا أن الأولاد يتنصرون حتما تبعا لأمهم النصرانية، لأن الزوج إذا مات ضمتهم الأم إليها وربتهم على دينها وإذا طلقها فلا يسمح له القانون أن يأخذ أولاده بل يبقون مع والدتهم النصرانية.

কাফের রাষ্ট্রের আহলে কিতাব মহিলাদেরকে বিয়ে করার বড় একটি খারাবী হলসন্তানাদি মার মতোই খৃস্টান হয়ে যায়। কারণ পিতার মৃত্যু ঘটলে মা নিজের ধর্মের অনুসারী করে সন্তানদেরকে লালন করতে থাকে। আর যদি স্বামী তালাক দিয়ে দেয় তাহলে রাষ্ট্রীয় আইনে স্বামী সন্তান নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পায় না। ফলে সন্তানরা মার সাথে থেকে তার ধর্মেই দিক্ষিত হয়। -দফউশশক ১৯

এরপর তিনি (শায়খ আব্দুল্লাহ) বেশ কিছু বাস্তব ঘটনার উদাহরণ নিয়ে এসেছেনযেগুলোতে দেখা গেছে যেসন্তানরাও তাদের মায়ের ধর্মাবলম্বী হয়েই বড় হয়ে উঠেছে ও আহলে কিতাব হয়ে গেছে।

আরও দ্রষ্টব্য : 

আহকামুল কুরআনজাস্সাস ২/৩২৬আহকামুল কুরআনথানভী ১/৪০৪তাফসীরে মাজহারী ৩/৪১তাতার খানিয়া ৩/৭


দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে!

  দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে! এক.   শুনতে খারাপ শোনালেও এটা সত্য, রবীন্দ্রনাথের...