কেমেরায় কিংবা মোবাইলে ছবি তোলায় ক্ষতি কি? এটা কি হারাম?
শরীয়তের একটি সর্বজন স্বীকৃত মাস আলা বা সিদ্ধান্ত হল,কোনো জিনিষের মূল হুকুম হারাম থাকলে,সেই জিনিষ সর্বদাই হারাম হবে।চায় সেই জিনিসের মাধ্যম পরিবর্তন হোক বা না হোক।যেমন ফটো তাসবীরের অন্তর্ভুক্ত হয়ে হারাম।প্রথমে হাতে অঙ্কিত হত,তখনও হারাম ছিলো।এখন ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় ছবিকে তুলা হচ্ছে,এখনও হারাম হবে।
হযরত ইবনে আব্বাস রাযি থেকে বর্ণিত
ﺃﺧﺮﺝ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﺑﺴﻨﺪ ﺍﻟﻤﺘﺼﻞ ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻗﺎﻝ : ﺳﻤﻌﺖ ﻣﺤﻤﺪﺍ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ : « ﻣﻦ ﺻﻮﺭ ﺻﻮﺭﺓ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻛﻠﻒ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﺃﻥ ﻳﻨﻔﺦ ﻓﻴﻬﺎ ﺍﻟﺮﻭﺡ، ﻭﻟﻴﺲ ﺑﻨﺎﻓﺦ »
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোনো ফটো অঙ্কন করবে,কিয়ামতের দিন তাকে ঐ ফটোতে রূহ ফুকে দিয়ে জীবিত করার দায়িত্ব দেয়া হবে।অথচ সে ঐ ফটোকে জীবিত করতে পারবে না।(সহীহ বোখারী-৫৯৬৩)
শরীয়তে তাসবীর হারাম।কুরআন হাদীসে তাসবীর শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে।তাসবীর যে হারাম,এতে কারো দ্বিমত নাই।
এখন প্রশ্ন জাগতে পারে,তাহলে তাসবীর কি? কোন কোন জিনিষ তাসবীরের অন্তর্ভুক্ত?ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে তুলা ফটো কি তাসবীরের অন্তর্ভুক্ত?
এই প্রশ্নের জবাবে বলা যায় যে,
সরাসরি বাস্তবে নির্মিত মুর্তি,এবং হাত দ্বারা অঙ্কিত মুর্তির ফটো,এগুলো তাসবীরের অন্তর্ভুক্ত। এতে কারো দ্বিমত নাই।
ডিজিটাল ফটো কি তাসবীরের অন্তর্ভুক্ত?
এ সম্পর্কে উলামায়ে কেরামদের মতবিরোধ রয়েছে।কেউ কেউ ডিজিটাল ফটোকে নাজায়েযের হুকুম থেকে বের করে বৈধতার ফাতাওয়া দিয়েছেন।
জাস্টিস আল্লামা তাকী উসমানী (দাঃবাঃ)লিখেন,
ﻛﺜﻴﺮ ﻣﻦ ﻋﻠﻤﺎﺀ ﺍﻟﺒﻼﺩ ﺍﻟﻌﺮﺑﻴﺔ، ﻭ ﺟﻠﻬﻢ ﺃﻭﻛﻠﻬﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﺒﻼﺩ ﺍﻟﻬﻨﺪﻳﺔ، ﻗﺪ ﺃﻓﺘﻮﺍ ﺑﺄﻧﻪ ﻻﻓﺮﻕ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺼﻮﺭﺓ ﺍﻟﻤﺮﺳﻮﻣﺔ ﻭ ﺍﻟﺼﻮﺭﺓ ﺍﻟﺸﻤﺴﻴﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﺤﻜﻢ ..… ﻭﺍﻟﻮﺍﻗﻊ ﺃﻥ التفريق ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺼﻮﺭﺓ ﺍﻟﺸﻤﺴﻴﺔ ﻻ ﻳﻨﺒﻐﻲ ﻋﻠﻰ ﺃﺻﻞ ﻗﻮﻯ، ﻭﻣﻦ ﺍﻟﻤﻘﺮﺭ ﺷﺮﻋﺎ ﺃﻥ ﻣﺎﻛﺎﻥ ﺣﺮﺍﻣﺎ ﺃﻭ ﻏﻴﺮﻣﺸﺮﻭﻉ ﻓﻲ ﺃﺻﻠﻪ ﻻﻳﺘﻐﻴﺮ ﺣﻜﻤﻪ ﺑﺘﻐﻴﺮ ﺍﻵﻟﺔ
আরব দেশের অনেক উলামায়ে কেরাম,এবং হিন্দুস্তানের অধিকাংশ বা সকল উলামায়ে কেরাম সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন যে,হাতে অঙ্কিত ছবি এবং ডিজিটাল ছবির মধ্যে কোনো পার্থক্য নাই। বাস্তবতা হচ্ছে, হাতে অঙ্কিত ছবি এবং ডিজিটাল ছবির মধ্যে পার্থক্য করার ভিত্তি মজবুত নয়।শরয়ী সিদ্ধান্তকৃত মাসআ'লা হল,যে জিনিসের মূল হারাম,সেই জিনিষের হুকুমে মাধ্যম বা উসিলা পরিবর্তনের কারণে কোনো প্রকার পরিবর্তন আসবে না।(তাকমিলাতু ফাতাহিল মুলহিম-৪/৯৭)
অর্থাৎ হাতে আকাঁ ছবির মতই ক্যামেরায় তোলা ছবিও হারাম হবে। তবে এক্ষেত্রে উলামায়ে কেরামের মতামত হচ্ছে ক্যামেরায় তোলা ছবি যতক্ষণ পর্যন্ত ছাপানো না হয় ততক্ষণ তা হারাম হিসেবে গণ্য হবেনা। তবে জরুরি প্রয়োজনে যেমন পাসপোর্ট, আইডি কার্ড, রেজিষ্ট্রেশন সহ বিভিন্ন বাধ্যতামূলক প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়েজ বলে মত দিয়েছেন উলামায়ে কেরাম।
এখন আসেন একটা বৈজ্ঞানিক আলচনা করি। ছবি মানে অবয়ব, অর্থাদ যে বস্তু বাস্তবে দেখা যায় তার হুবহু অবয়ব তৈরী করার নামই হলো ছবি এটা যে প্রকারেই হোক, মূর্তির মাধ্যমে হোক, কলমের মাধ্যমে হোক আর আলোর ঝলকের মাধ্যমেই হোক।
সহজ উদহরন দেই, কোথাও কোনো নগ্ন বা বেপর্দা মানুষু মুসলমানদের জন্য দেখা শরীয়তে হারাম করেছেন। এখন যদি কেউ কোনো বেপর্দা পুরুষ কিংবা নারী সরাসরি না দেখে ছবি, মূর্তি কিংবা ভিডিওর মাধ্যমে দেখে তাইলে কি জায়েজ হয়ে যাবে? একটা নগ্ন মানুষকে সরাসরি দেখলে যে অনুভুতি হওয়ার কথা ঠিক একই ব্যক্তির মূর্তি, ছবি কিংবা কেমেরার ছবি ও ভিডিও দেখলে তো একই অনুভূতি তৈরী হবে, তাইলে আলোর ঝলকের মাধ্যমে দেখা ছবি জায়েজ হবে কেমনে? জায়েজ হওয়ার কারন নাই।
অতএব বিনা কারনে পেসবুক সহ বিভিন্ন সামাজিক ও ইলেকট্রনিকস যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি তোলা কিংবা টিকটক করা সম্পূর্ণ হারাম।
তবে হ্যাঁ, যদি কোনো ছবি, ভিডিও,শিক্ষনীয় লেকচার, মাহফিলের আলচনা হয় যেখানে বেপর্দা মানুষ থাকবেনা এমন সব ভিডিও কিংবা ছবির বিষয়ে ইসলামি চিন্তাবিদগন শৈথিল্য দেখিয়েছে।
প্রামাণ্য গ্রন্থাবলীঃ
(১)বুখারী শরীফ : ২/৮৮০; হাঃ ৫৭২৯
(২)মুসলিম শরীফ- ২/২০০, হাঃ ৫৪৭১
(৩)ফাতাওয়ায়ে শামী- ২/৪১৬-১৭
(৪)তাকমিলায়ে ফাতহুল মুলহিম- ৪৯৭,৯৮
(৫)শরহে নববী আলা সহীহ মুসলিম : (২)১৯৯;
(৬)কিফায়াতুল মুফতী : ৯/২৪৩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ