★দারুল উলুম দেওবন্দের টানা ৫২ বছরের মুহতামিম + মাওলানা কাসেম নানুতুবী রহঃ এর নাতি + খলীফায়ে থানভী + চরমোনাই দরবারের গৃহপালিত মুফতি রেজাউল করিম আবরার সাহেবের বাবার বিয়ে পড়িয়েছেন যিনি তিনি হলে মাওলানা ক্বারী ত্যায়িব সাহেব রহঃ এর অভিমত :
(১নং)
হযরত হাকীমুল ইসলাম ক্বারী তায়্যিব রাহঃ-এর স্বরচিত প্রসিদ্ধ কিতাব "ফিতরী হুকুমাত" কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, এই বিশৃঙ্খলা সংমিশ্রণ ও সংশয় প্রবণতার যুগে মাওলানা আবুল আ'লা মওদূদী সাহেব নির্ভিকতার সাথে ইসলামী সমাজ জীবনের নিয়ম-নীতি ও বিধানাবলী পরিষ্কার ভাষায় উল্লেখ করেছেন। ইহার অবদান ও কৃতিত্ব তারই। সমগ্র জাতিকে তার গুণমুগ্ধ হওয়া উচিত।
তত্ত্বসুত্র: (মাওলানা মওদূদী আওর ফিকরি ইনকিলাব ১০৫, রাদ্দে ফেতনা ১৮০ ডক্টর সাইদ আনোয়ার আলী, প্রকাশনা ইদারায়ে শাহাদাতে হক্ক ৮০১ জামে মসজিদ দিল্লি ১১০০)
(২ নং)
হাকীমুল ইসলাম ক্বারী তায়্যিব রাহঃ বলেন, মুহতারাম মাওলানা আবুল আ'লা মওদূদী সাহেব এই পৃথক শিরোনামে আন্দোলন শুরু করেন। এই মূলনীতির ওপর ভিত্তি করেই 'জামায়াতে ইসলামী' নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠন ও আন্দোলন ইসলামী সমাজ জীবনের পরিসীমা পর্যন্ত জাতিকে যথেষ্ট উপকার সাধন করে আসছে। তার যথাযথ বক্তব্য, স্বচ্ছ বর্ণনারীতি ও দলিল প্রমাণ প্রদর্শন মহাদেশের শিক্ষিত সমাজকে বিশেষভাবে
প্রভাবান্বিত করেছে। বিশেষ করে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত সমাজ, যানের চিন্তাধারার সামনে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা কোন যৌক্তিক চিত্র উপস্থিত ছিলনা। তারা এখন ইসলামী সমাজ-জীবন ও একনিষ্ট দ্বীনি রাষ্ট্রব্যবস্থার নিকটবর্তী হয়ে গিয়েছে যে কারণে সমগ্র জাতিকে মাওলানা মওদূদীর ঋণ পরিশোধে। অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়া উচিত।
(তথ্য সূত্র: (ক) মাওলানা মওদুদী হী মুজরিম কিউ? পৃ. ২২, লেখক, সাজ্জাদ খান, প্রকাশনা অলিস্তান ৪০ উর্দু বাজার লাহোর, পাকিস্তান।
(খ) মাওলানা মওদূদী আওর জামায়াতে ইসলামী আসসী স্বাগীলুল কদর উলামা কী নাজার মে, পৃ. ৫৭, সংকলক আরেফ দেহলভী, প্রকাশনা, মাকভাবায়ে নিশানে রাহ, নয়া দিল্লী, (ইন্ডিয়া)
( ৩নং)
১৯৫৩ সালে মাওলানা সায়্যিদ আবুল আ'লা মওদূদী রাহঃ এর ফাঁসির রায় হলে হাকীমুল ইসলাম কারী মুহাম্মাদ তায়্যিব রাহঃ এক শোকবার্তায় উল্লেখ করেন:-
মাওলানা মওদূদী রাহঃ ইসলামী সমাজ জীবন ও বিধিবিধান সম্পর্কে অতান্ত উপকারী, কল্যাণকর ও গ্রহণযোগা বিষয়গুলো সংকলন করেছেন ইসলামী চিন্তা ধারায় বিভ্রান্তিকর বিষয়গুলোর সংমিশ্রণ সন্দেহ প্রবণতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার বিরুদ্ধে মাওলানা রাহঃ সাহসিকতার সাথে ইসলামী সমাজ জীবনের নিয়ম নীতি ও বিধানাবলী পরিশোধন ও সংস্কার করে সামাজিক বিধি বিধান পরিস্কারভাবে উল্লোখ করেছেন, ইহা তারই অবদান। আমি তাকে ইসলামিক সমাজ বিপ্লবের শ্রেষ্ঠ ইসলামী নেতা মেনে নিয়ে তার বক্তব্য সমূহ কে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখি। (তত্ত্বসুত্র জাসারাত মাওলানা মওদূদী সংখ্যা করাচি পৃ. ৭৩)
( ৪ নং)
মুহতারাম মাওলানা ক্বারী তায়্যিব রাহঃ অন্য একটি বক্তব্যে বলেন- মাওলানা মওদূদী ইসলামী চিন্তা ধারা সম্পর্কে অত্যন্ত উপাদেয় ও সন্দেহপূর্ণ সংমিশ্রণের যুগে নির্ভীকতার সাথে ইসলামী চিন্তাধারা পরিশোধন ও সংস্কার করে সামাজিক বিধি-বিধান পুরিস্কারভাবে উল্লেখ করেছেন। ইহা তারই অবদান। আমি তাকে ইসলামী সমাজ জীবনের একজন রাজনৈতিক চিন্তাশীল মনে করি এবং ইসলামী সমাজ জীবনের চিন্তাধারার পরিসীমা পর্যন্ত তাকে এক শ্রেষ্ঠ ইসলামী নেতা মেনে নিয়ে সম্মানের উচ্চ দৃষ্টিতে দেখি। (তত্ত্বসুত্র (ক) "মাওলানা মওদূদী সে মিলিয়ে" পৃষ্ঠা ৪৮ মাওলানা আসাদ গিলানি। (খ) " মাওলানা মওদূদী আসসি জলিলুল কদর উলামা কি নাজার মে" পৃষ্ঠা নং
৫৬।
[ মুফতি ফয়জুল করীম সাহেব কে প্রশ্ন করতে চাই ক্বারী ত্যায়িব সাহেব রহঃ কি হক্কানি আলিম নন? ]
দারুল উলুম দেওবন্দের সুপরিচিত ও প্রসিদ্ধ লেখক, 'সাওয়ানেহে কাসেমী'-এর সংকলক, অসংখ্য বৃহৎ ও উপকারী কিতাবের মুসান্নিফ, ইসলামী ইতিহাসবিদ, আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি রহঃ এর খাস ছাত্র মাওলানা মানাজির আহসান গিলানী রাহঃ-এর অভিমত :
সায়্যিদ আবুল আ'লা মওদূদী রাহঃ এর শান্ত স্বভাব, স্থির মস্তিষ্ক এবং গভীর দৃষ্টিভঙ্গির উপর আমার সব সময় বিশ্বাস আছে। তিনি আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিভায় দীপ্তিময়। মাস'আলা মাসায়েল বর্ণনার ক্ষেত্রে তার দৃষ্টিভঙ্গি গভীর ও সর্বব্যাপী প্রমাণিত হয়েছে। কোন জটিল বিষয়েও এমন কোন দিক বাকি নেই যেখানে তার কলম চলেনি।
বর্ণনার ইতি হৃদয়স্পর্শী, ব্যাখ্যা নীতি অন্ত দর্পণ, এছাড়া তার উচ্চ স্বভাবের সাক্ষ্য তো বহুবার বর্ণনা করেছি। স্বয়ং আমি নিজে মাওলানা আব্দুল বারী খলিফায় আশরাফ আলী থানভী সহ জামিয়া উসমানিয়া অধ্যাপনার কাজে একবার নয়, দুইবার নয়, বার বার মাওলানা আবুল আ'লা মওদূদীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। অথচ ওই সময় মাওলানার আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক ছিল। অবশেষে মাওলানা আমাদের পরামর্শকে অত্যন্ত হাসিমুখে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
মনোবলের উচ্চাসনে তিনি সমাসীন। প্রতিভা, বুদ্ধিমত্তা, লিখনি ও রচনাশৈলীতে আল্লাহ প্রদত্ত এক অপার ক্ষমতার অধিকারী। অতিরিক্ত কিছু বলার সাহস করতে পারি না, কিন্তু আমি এতটুকু বলে দিতে চাই যে আল্লাহ তা'আলা মাওলানা মওদূদীর সাথে অসাধারণ দয়াপ্রদর্শন করেছেন। ঈমানের সুদৃঢ় দীপ্তিময় আলো আমি তার পক্ষে চমকাতে দেখতে পাই।
محمد رسول الله মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর গভীর ও অটল বিশ্বাসের কারণে তার সৌভাগ্য লাভ হয়েছে। এছাড়াও তার পাশে একত্রিত হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন শ্রেণীর অসংখ্য যুবক। ঈমানী শক্তি, জ্ঞান প্রতিভা শক্তিকে পুঁজি করে
الدعوة إلى سبيل الله تعالى
তা'আলার পথে আহ্বানকে সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য বানিয়ে তিনি যদি দাঁড়িয়ে যান এবং উর্দু, ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় প্রচারকার্য চালিয়ে যান তাহলে এটা সম্ভব যে লোকজন যদি তার দাওয়াত জলদি কবুল নাও করে তবুও ইসলাম সম্পর্কে যে সকল প্রশ্নের জবাব প্রদান করেছে অন্ততপক্ষে অন্তরের মধ্যে সে প্রশ্নগুলোর দীপ্ততা প্রজ্জ্বলিত হবেই ইনশাআল্লাহ।
(তত্ত্বসুত্র (ক) মাওলানা মওদূদী সে মিলিয়ে ৯৮ পৃষ্ঠা মাওলানা আসাদ গিলানি (খ) আসসি উলামা কি নাজার মে ৬৩ পৃষ্ঠা)
মাওলানা মওদূদী রাহঃ সম্পর্কে মাওলানা ইদরীস কান্ধলভী রাহঃ সহ মোট বারোজনের সম্মিলিত অভিব্যক্তি
মাওলানা মওদূদী রাহঃ সম্পর্কে, উস্তাদুল উলামা শাইখুত তাফসীর ওয়াল হাদিস, হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ইদরীস কান্ধলভী রাহঃ বলেন-
"আমি নিজে কোন দল বা সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত নই। এমন কি কোন সংগঠনের সাথে আমার কোন ধরনের সম্পৃক্ততাও নেই। জামায়াতে ইসলামী এখন এই ভূখণ্ডে ইসলামী হুকুমত কায়েম করার জন্য প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসলামী শরীয়তে দৃষ্টিতে এর হুকুম মুসলিম লীগের অনুরূপ। যেমনি ভাবে হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রাহঃ ও মাওলানা সাব্বির আহমাদ উসমানী রাহঃ দু'জনই কংগ্রেসের মোকাবেলায় মুসলিম লীগে যোগদানের পক্ষে ফতোয়া প্রদান করেছিলেন তদ্রুপ আজ পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর একই হুকুম। যারা ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণপণ প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন এতে এই সীমারেখা পর্যন্ত তাদেরকে সাথে সহযোগিতা করা জরুরি বলে মনে করি। এবং যে সকল ব্যক্তি বা যে সকল দল শুধুমাত্র জাতীয়তাবাদ বা দেশাত্মবোধ বা ইসলামের লক্ষ্য ব্যতীত শুধু গণতন্ত্রের নামে কাজ করে যাচ্ছেন তারা সকলেই কংগ্রেসের হুকুম রাখেন, তাদের থেকে এড়িয়ে চলা আবশ্যক। ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছাড়া আর কোন কোন আকিদা রয়েছে তা আমি অবগত নই। শুধু শোনা কথার উপর ভিত্তি করে কোন হুকুম বা ফতোয়া প্রদান করা জায়েজ নেই।
لِمَ تَقُوْلُوْنَ بِأَفْوَاهِكُمْ مَّا لَيْسَ لَكُمْ بِهِ عِلْمٌ وَتَحْسَبُونَهُ هَيِّنًا وَهُوَ عِنْدَ اللهِ عَظِيمٌ
অর্থ: তোমরা মুখে এমন কথা বোলো না যে সম্পর্কে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই আর তোমরা একে সহজ মনে করছ অথচ আল্লাহর নিকট ইহা বিরাট।
এজন্য আবেদন হল যতটুকু উদ্দেশ্য পরিষ্কার ও নৃসংশভাবে শরীয়ত মোতাবেক হবে সে ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামের সহযোগিতা করে যাবেন। আর অন্যান্য মাস'আলার ক্ষেত্রে ফুকাহায়ে কেরামের অনুসরণ ও অনুকরণ করাকে আবশ্যক সৌভাগ্যের নিদর্শন ও পরকালের সম্পদ মনে করবেন। আমার বক্তব্য হল, সঠিক উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে যা শরীয়ত মোতাবেক হয় তাতে সহযোগিতা করুন। বাকি দ্বীনি কাজকর্মে ফিকহে হানাফীর ফতোয়া অনুযায়ী আমল অব্যাহত রাখুন।
মোহাম্মদ ইদ্রিস
আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন
৫ই রজব ১৩৮২ হিজরী
নিম্নলিখিত উলামায়ে কেরাম শাইখুত তাফসির ও হাদিস মাওলানা মোহাম্মদ ইদরীস সাহেব কান্ধলভীর এ বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করিয়া লাহোর থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক শিহাব পত্রিকায় নিজেদের সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছেন পরবর্তীতে তা মুলটান থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
(১) মুফতি সায়্যিদ সাইয়াহুদ্দিন কাকাখিল, ফাযেলে দেওবন্দ লায়েলপুর।
(২) হযরত মাওলানা সাব্বির আহমাদ উসমানী, ফাযেলে দেওবন্দ লায়েলপুর।
(৩) হযরত মাওলানা আব্দুল গনী সাহেব, কোহিনুর মিল মসজিদ, লায়েলপুর।
(৪) হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আহমাদ সাহেব, ফাযেলে কাসেমুল উলুম মুলতান, লায়েলপুর।
(৫) হযরত মাওলানা আব্দুস সালাম সাহেব, ফাযেলে জামিয়া আশরাফিয়া, লাহোর।
(৬) হযরত মাওলানা আব্দুর রশীদ আরশাদ, ফাযেলে জামিয়া আরাবিয়া নিউটাউন, করাচি।
(৭) হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ মুসলেম কাসেমী, ফাযেলে কাসিমুল উলুম মুলতান, লায়েলপুর।
(৮) হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আনওয়ার কালীম, ফাযেলে বেফাকুল মাদারিস (খাইরুল মাদারিস) মুলতান।
(৯) হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল কাইয়ুম, ফাযেলে জামিয়া ইসলামিয়অ নিউটাউন, লায়েলপুর।
(১০) হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আমীন, শিক্ষক ইসলামিয়াত, ইসলামিয়া হাইস্কুল, গুঠি, লায়েলপুর।
(১১) হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ সারওয়ার, ফাযেলে কাসেমুল উলুম, মুলতান।
তত্ত্বসুত্র- মাওলানা মওদূদী আওর জামায়াতে ইসলামী আসসী উলামা কি নাজার মে পৃষ্ঠা নং ৫৯
বিশ্বের সর্ববৃহৎ ইসলামী সাম্রাজ্যের প্রথম শায়খুল ইসলাম হযরত আল্লামা মাওলানা শিব্বীর আহমাদ উসমানী রহ. (ফাতহুল মুলহিম শারহু মুসলিম-এর লেখক এবং সাবেক শায়খুল-হাদিস ও শায়খুত তাফসীর দারুল উলুম দেওবন্দ) অগাধ ভালোবাসা ও স্বীকৃতি:
তিনি বলেন: মাওলানা সায়্যিদ আবুল আলী মওদূদী সাহেব ইসলামের তলোয়ার (সাইফুল-ইসলাম)।
মুহাদ্দিসে আকবার, বাহরুল উলুম, হযরতুল আল্লামা মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রাহঃ প্রধান অধ্যাপক ও শাইখুল হাদীস দারুল উলূম দেওবন্দ-এর সুযোগ্য শিষ্য, শাইখুল হাদিস, উজ্জাযুল উলামা, জনপ্রিয় ও বিখ্যাত গ্রন্থ 'আল-আরফুশ শাযী' আলা জামিয়িত তিরমিযী'-এর লেখক হযরত মাওলানা মুহাম্মদ চেরাগ সাহেব রহঃ (গুজরানওয়ালা)-এর অভিমত:
আমার মতে মাওলানা মুহতারামের বিরোধিতা করার কোন ধর্মীয় ভিত্তি নেই। মাওলানা হানাফী ফিকহের অনুসারী ছিলেন। কিন্তু হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ সাহেবের মতো তিনিও ফিকহী বিধিনিষেধের ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি মাঝে মাঝে স্বাধীন মতামত প্রকাশ করতেন। এবং এর পক্ষে তার কাছে শক্ত যুক্তি ছিল। তিনি কখনোই জেদ বা হঠকারিতা অবলম্বন করেননি। আমি নিজেও অনেক বিষয়ে তার সাথে দ্বিমত পোষণ করেছি এবং যখন প্রমাণ দিয়েছি, তখন তিনি কেবল তাতে একমতই হননি, বরং তিনি সেই মত প্রত্যাহারও করে নিয়েছেন। কিন্তু এটা খুবই দুঃখজনক যে কিছু আলেম ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক কারণে তাঁর বিরুদ্ধে অন্ধ বিরোধিতা ও অপবাদের ঝড় তুলেছেন, এবং তাতে ধর্মীয় রঙ লেপন করে দিয়েছেন। আমি নিজে এই ধরনের আলেমদের ভ্রান্ত বর্ণনার চল্লিশটি নমুনা খুঁজে পেয়েছি, যাতে তারা মাওলানা রাহঃ-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আরোপ করতে গিয়ে স্পষ্ট মিথ্যা ও অসত্যের পথ বেছে নিয়েছেন। আমি জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক হইনি এবং তাতে যোগদানও করিনি। আসলে আমি আমার মাদরাসার কাজকর্ম নিয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে, আমি যদি জামায়াতে যোগ দিতাম তাহলে আমাকে অবশ্যই অন্যান্য দায়িত্ব পালন করতে হতো, এতে মাদরাসার কাজ বন্ধ হয়ে যেত। এর একটি সুফল এই যে, যেখানে প্রয়োজন সেখানে আমি স্বাধীনভাবে মাওলানা সাহেবের সাথে দ্বিমত পোষণ করতে পেরেছি এবং তাকে প্রকাশ্যে ডিফেন্ড করার সৌভাগ্যও লাভ করেছি, যা দলীয় শৃঙ্খলায় আবদ্ধ থাকলে সম্ভব হত না।
মাওলানা আমাকে অনেক সম্মান করতেন। এটি যেমন তাঁর বিনয় ছিল তেমনি আলেমদের প্রতি ভালোবাসা ও সম্প্রীতির অনুভূতির উদাহরণও ছিল। তাঁর মেয়ের বিয়ে স্বয়ং তাঁর আমন্ত্রণে আমাকে পড়াতে হয়েছিল। তার সাথে ঘন ঘন সাক্ষাৎ হত। তবে আমি বেশিক্ষণ বসে থেকে মাওলানার সময় নষ্ট করতাম না। আসর ও মাগরিবের মধ্যকার জমায়েত সম্পর্কে আমার কিছুই মনে নেই, কারণ আমার শ্রবণশক্তি অনেক দিন ধরে দুর্বল এবং আমি মানুষের কথা শুনতে অপারগ থাকতাম। (তত্ত্বসুত্র- একজন মানুষ একটি কাফেলা)
★ ওদের অন্তরে এতটাই হিংসায় জর্জরিত যে আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি রহঃ এর অনেক কিতাবের নাম নামধারী কওমিদের মুখে শুনবেন কিন্তু আরফুশ শাযীর কথা বলে না কারণ এই কিতাবের সংকলক মাওলানা মওদুদী কে সমর্থন করতেন তাই দেওবন্দী পরিচয়ধারীরা এই কিতাবকে প্রোমোট করে না অথচ মুফতি তকী উসমানীর দরসে তিরমিজির চেয়ে ও আরফুশ শাযী অনেক উন্নতমানের কিতাব। আহলে হাদীসদের খন্ডনে মাওলানা আব্দুল মতিন সাহেব
" দলিলসহ নামাযের মাসায়েল "
নামে একটি কিতাব লিখেছেন তিনিও আরফুশ শাযী গ্রন্থ কে ইনিয়ে বিনিয়ে গ্রহণযোগ্য নয় বলার চেষ্টা করেছেন। এইগুলো যদি হিংসা না হয় হিংসা কাকে বলে? ★
(৯) তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ইলিয়াস সাহেব কান্দলভী রাহঃ-এর পক্ষ থেকে হযরত মুফাক্কিরে ইসলাম মাওলানা সায়্যিদ মওদূদী সম্পর্কে অভিমত :
আমার দিকে মাওলানা সাহেব (অর্থাৎ হযরত মাওলানা ইলিয়াস সাহেব কান্ধলভীর) মনোনিবেশ দেখে, আমি তাকে মাওলানা সায়্যিদ মওদূদীর দাওয়াত সম্পর্কে সেই প্রশ্নটি করে ফেললাম যা নদওয়া ত্যাগ করার পর থেকে আমার মনে জেগেছিল। আমার প্রশ্ন শুনে মাওলানা ইলিয়াস সাহেব উঠে বসলেন। আর তার চোখ থেকে ঘন অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগল, মাওলানার এই অবস্থা দেখে আমি চুপসে গেলাম। মনে হল যে আমার প্রশ্নের শব্দে বা তার ধরণে হয়তো এমন কিছু হয়েছে যা শুনে মাওলানা সাহেব কষ্ট পেয়েছেন। কিন্তু সে সময় তার অবস্থা এমন ছিল না, আফসোস ছাড়া আর মুখ খোলার মতো অবকাশ ছিল না, তাই নীরব রইলাম। মাওলানা সাহেব কিছুটা স্বস্তি অনুভব করে নিজেই বলতে শুরু করলেন। "ভাই! আসল কাজ তো সেটাই যার প্রতি মাওলানা মওদূদী আহ্বান করছেন। এটি তো (অর্থাৎ আমাদের কাজ) প্রাথমিক কাজ। ইনশাআল্লাহ, একদিন এই সময়ও আমাদের কাছে আসবে। অতঃপর অনেক দিন যাবত মাওলানা সাহেবের শরীর টিপে দেওয়ার সময় মাওলানার মুখ থেকে যে আসল কাজের বিবরণ জানলাম, তা ছিল 'দ্বীন প্রতিষ্ঠা' লক্ষ্যের বিবরণ ও ব্যাখ্যা তাঁর নিজস্ব ভাষায় ও নির্দিষ্ট বাকশৈলীতে। পরবর্তীতে মাওলানা আলী মিয়াঁ সাহেব আমাকে পুনরায় কিছু প্রশংসার কথা বলার পর অবশেষে কয়েকবার বললেন যে, ইকবাল! মাওলানা তোমার সম্পর্কে এই কথা বলতেন, অথচ মাওলানা আলী মিয়াঁ সাহেব নিজেই এই প্রশংসার দাবিদার ছিলেন, যিনি একইভাবে আঙুল ধরে আমাদের মতো মানুষদের সত্যের দিকে অগ্রসর হতে শিখিয়েছিলেন। শিশুকে যেমন আঙুল ধরে হাঁটতে শেখানো হয়। তাই আল্লাহ তাকে আমাদের পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান দিন।
(তত্ত্বসুত্র- বাদালতে নাসবুল আইন 'পরিবর্তনশীল লক্ষ্যবস্তু' পৃ-৪১-৪৩। প্রকাশিত: হেরা পাবলিকেশন্স, উর্দু বাজার, লাহোর। লেখক হযরত মাওলানা হাকীম খাজা ইকবাল আহমাদ নদভী সাহেব)
হযরত শাইখুল-হিন্দের উত্তরসূরি, মুফতি আজম, হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতি কিফায়াতুল্লাহ সাহেব রাহঃ দেহলভী, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ ভারত'-এর সভাপতি
এবং সাহবানুল হিন্দ আল্লামা মাওলানা আহমাদ সাঈদ সাহেব রাহঃ জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সচিব, এ দুইজনের সাক্ষ্য :
মাওলানা সায়্যিদ মওদূদী রাহঃ ১৯১৮ ঈ. সালে যখন পনের বছরের যুবক ছিলেন, তখন সেই বয়সে তিনি 'আখবারে মাদীনা বিজনোর' পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। এর পরবর্তীকালে ১৯২১ ঈ. সালে, জমিয়ত উলামা হিন্দের সভাপতি হযরত মাওলানা মুফতি কিফায়াতুল্লাহ সাহেব এবং জমিয়ত উলামা হিন্দের নাজিম সাহবানুল হিন্দ মাওলানা আহমাদ সাঈদ সাহেব (যাঁরা তৎকালিন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের চালিকাশক্তি ছিলেন) তাঁরা 'মুসলিম আখবার' (এ পত্রিকাটি সেই বছরই জমিয়তে উলামা চালু করেছিল) নামক পত্রিকাটির সম্পাদনার দায়িত্ব তাঁরই উপর অর্পণ করেন। তারপর ১৯২৪ বা ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে মাওলানা মুহাম্মদ আলী জহুর এবং জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সচিব সাহবানুল হিন্দ মাওলানা আহমাদ সাঈদ সাহেব, উভয়ই একই সাথে 'হামদর্দ' ও 'আল-জমিয়ত'-এর সম্পাদনার প্রস্তাব দেন। মাওলানা সায়্যিদ মওদূদী জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের মুখপাত্র 'আল-জমিয়ত'-এর সম্পাদনাকে প্রাধান্য দেন। কোন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ? সেই জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ, যার নেতা ছিলেন হযরত মুফতি আজম মাওলানা কিফায়াতুল্লাহ সাহেব রাহঃ, হযরত মাওলানা আনোয়ার শাহ সাহেব কাশ্মীরী রাহঃ, শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা শাব্বির আহমাদ উসমানী সাহেব রাহঃ, মুজাহিদে কবির হযরত মাওলানা সায়্যিদ হুসাইন আহমাদ মাদানী রাহঃ রাহঃ, সাহবানুল হিন্দ মাওলানা আহমাদ সাঈদ সাহেব রাহঃ এঁদের মতো যুগশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ। তখন মাওলানা সায়্যিদ মওদূদীর বয়স ছিল মাত্র বিশ-একুশ বছর। এই বিশিষ্ট আলেম-ওলামারা এবং অভিজ্ঞ আলেমে দ্বীনেরা যদি 'আল-জমিয়তের' সম্পাদনার জন্য যেই ব্যক্তিকে খুঁজে পেয়েছেন, সে ছিল একজন তরুণ বালক আবুল আ'লা মওদূদী- ই। এরই মধ্যে তিনি ভারতের নেতা মাওলানা মুহাম্মদ আলী জহুরের অনুরোধে 'ইসলাম ধর্মে জিহাদ'-এর মতো একটি মহান ও অনন্য গ্রন্থ রচনা করে ইসলামের শত্রুরা ইসলামের বিরুদ্ধে সাড়ে তেরশো বছর যাবৎ যে সব আপত্তি তুলে আসছিল তার সবগুলোর দাঁতভাঙা জবাব দেন। কিন্তু অপরিণামদর্শী কিছু লোকের পক্ষ থেকে মাওলানা সায়্যিদ মওদূদীর কিছুটা প্রাথমিক ও সাধারণ বাহ্যিক কাজের মধ্যে অমনোযোগিতা ও ত্রুটির পরিপ্রেক্ষিতে এই আপত্তি তোলা হয়েছিল যে, জমিয়তে উলামার এই মহান পত্রিকার সম্পাদক পদে এমন ব্যক্তিকে কীভাবে নিয়োগ দেওয়া যায়। এই আপত্তির জবাবে মুফতি আজম হযরতুল আল্লাম মাওলানা মুফতি কিফায়াতুল্লাহ সাহেব এবং সাহবানুল হিন্দ মাওলানা আহমাদ সাঈদ সাহেব একত্রে এবং একযোগে বললেন:
آپ لوگ اس شخص کی صورت کو نہ دیکھیں، اس کے دل کو دیکھیں، مسلمانوں کے مسائل کی حفاظت یہ شخص بہت سے مولویوں سے زیادہ اچھی طرح کر سکتا ہے اور اس کے ذہن و دماغ میں اسلام صحیح صورت میں موجود ہے .
"তোমরা এই ব্যক্তির চেহারার দিকে তাকাবেন না, এর অন্তরের দিকে তাকান। এই ব্যক্তি মুসলমানদের অবস্থা অনেক আলেমদের চেয়ে ভালোভাবে নিরাপদে রাখতে সক্ষম এবং তার মন ও মননে ইসলাম তার প্রকৃত রূপে বিরাজমান রয়েছে।"
(আল্লাহু আকবার, কত মহান স্বীকৃতি এবং কত গম্ভীর ও মহৎ সাক্ষ্য)
ذَلِكَ فَضْلُ اللهِ يُؤْتِيْهِ مَنْ يَشَاءُ
এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যা তিনি যাকে ইচ্ছে দান করে থাকেন।
তত্ত্বসুত্র: (ক) ফিকরী ইনকিলাব, লেখক-তারিক মাতিন বাগপাতি, পৃ-২৮ ও ২৯, মুদ্রিত- সেন্ট্রাল ইসলামিক লাইব্রেরি, দিল্লি। (খ) এ'তেরাফে আযমাত, পৃ-৭-৩২, প্রকাশনী-স্কুল অফ চেঞ্জ ইন হিউম্যানিটি, লাহোর।
(গ) মাওলানা মওদূদী হী মুজরিম কির্ড, পৃ-১১ ও ১২।
(ঙ) জাসারাত, মাওলানা মওদূদী সংখ্যা করাচি, পৃ-৩৯।
মুফতি ফয়জুল করীম সাহেবের কাছে প্রশ্ন এদের মধ্যে কোন আলিম হক্কানি নয় একটু বলে যান দয়া করে?
উপরে বর্ণিত সকল কিতাবের হার্ডকপি আমার সংগ্রহে রয়েছে যারা দেখতে ইচ্ছুক আমার বাসায় তাদের দাওয়াত রইলো। এটা তো স্যাম্পল পেশ করলাম।।।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ