"ইসলাম ও তরবারির সম্পর্ক"
আজকাল ইসলাম বিরোধিতা করার জন্য ইসলাম বিদ্বেষীরা ইসলাম তরবারির জোরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মানব সমাজে প্রোপাগান্ডা চালায়। আবার মুসলমানরা ইসলাম বিদ্বেষীদের প্রপাগান্ডাকে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মত অস্বীকার করতে গিয়ে ইসলাম ও তরবারির সম্পর্কের মর্মার্থ না বুঝে ইসলামের সাথে তরবারির সম্পর্ক নাই বলে প্রচার করে। আসুন ইসলামের সাথে তরবারির কি সম্পর্ক তা আজ জানা যাক।
আমার এই প্রবন্ধ বুঝার আগে ইমান ও কালেমার অর্থটা একটু আগে মনে করিয়ে দিতে চাই, তা না হলে ভুল বুঝাবুঝির সমূহ সম্ভাবনা আছে।
আমরা জানি ঈমান আনায়নের মাধ্যমে ইসলামে দাখিল হয় মানুষ। আর ঈমান আনায়ন করে কালেমার মাধ্যমে।
আমাদের কালেমা হলো ' লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ। এখানে দেখুন কালেমায় লা+ইলাহা+ ইল্লাল্লাহু +মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ।
১। লা মানে নাই। অর্থাদ দুনিয়ার সব কিছু অস্বীকার করা।
২। ইলাহ, এটা পরে আলোচনা করব।
৩। ইল্লাল্লাহু, মানে আল্লাহ ছাড়া। মানে হলো একমাত্র আল্লাহ ছাড়া বাকী সব ইলাহকে(পরের আলোচনায় ইলাহ বুঝানো হবে) বাতিল ঘোষনা করা।
৪। এখানে বলা হয়েছে শুধু মাত্র হযরত মুুহাম্মদ সা: এর বর্নিত, পালনকৃত, আদেশ কৃত মত ও পথ অনুসারেই। বাকী পথে এই ইলাহকে মেনে নেওয়ার নামও ইমান নয়।
আসুন "ইলাহ" মানে কি জানা যাক। ইলাহ এক অর্থে আল্লাহকে বুঝানো। এই অর্থ বিস্তৃত করলে বুঝা যায় ইলাহ মানে শুধু সৃষ্টি কর্তা আল্লাহ কে মেনে নেওয়ার নামই নয়। এখানে মহা বিশ্বের স্রষ্টা আল্লাহ তা'লার জারি কৃত সকল নিয়ম কানুন মেনে নেওয়ার কথাই বুঝানো হয়েছে।
আমার বলতে বা মানুষের তৈরী সকল কিছুই অস্বীকার করে একমাত্র আল্লাহর দেওয়া বিধিবিধানকে নি:সংকোচে মেনে নেওয়াই বুঝানো হয় আর সেই সাথে বাকী সকল বিধানকে অস্বীকারের কথাই বুঝায়। এ অর্থে আত্মসমর্পণ বুঝায়।
আবার মানুষের তৈরী বিধান অস্বীকারের মানে হলো মানুষের তৈরী আইন, মানুষের তৈরী জীবন ব্যবস্থা, মানুষের তৈরী অর্থ ব্যবস্থা, মানুষের তৈরী রাষ্ট্র ব্যবস্থা অস্বীকারের নামই হলো ঈমান এবং এসকল ব্যবস্থাকে অস্বীকার করে আল্লাহর তৈরী বিধান মেনে চলার নামই ইসলাম।
ইসলাম এর অর্থ বলতে কেউ বলে শান্তি আবার কেউ বলে আত্মসমর্পণ। শান্তি অথবা আত্মসমর্পন এই দুটি আলাদা আলাদা অর্থ যদি ধরা হয় তাইলে এখানে তরবারির কোন সম্পর্ক কি থাকে? থাকে না, আর তাই এই অর্থ আলাদা আলাদা ধরে অনেকে বলে ইসলামের সাথে তরবারির কোন সম্পর্ক নাই।
কিন্তু ইসলামের আসল অর্থ হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ, এই বাক্যকে মেনে নিয়ে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পনের মাধ্যমে মানুষের তৈরী সকল বিধিবিধানকে সমূলে উৎপাটনের মাধ্যমে আল্লাহর দেওয়া বিধান মতে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও এই শান্তি বজায় রাখার নাম ইসলাম।
আর আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ পূর্বক ইসলামের শান্তি শুধু মুসলমানের জন্যই প্রতিষ্ঠিত করা নয়, বরং আল্লাহর সৃষ্টি সকল প্রানী, সকল মানুষ, সকল জীবের বেলায় প্রজোয্য। আর এটার নাম ইসলামের ইনসাফ। ইসলাম ও ইনসাফ একই বৃক্ষের অংশ, একটা মূল হলে অন্যটা কান্ড। এই ইনসাফ মানুষের স্বাভাবিক দৃষ্টির বাইরের জীবানু হতে বৃহৎ নীল তিমির বেলায়ও প্রয়োজনে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা।
এবার আসুন ইসলাম ও তরবারির সম্পর্ক কি বুঝাই।
আপনি কালেমা পড়ে সারা দুনিয়ায় ইসনসাফের মাধ্যমে শন্তি প্রতিষ্ঠা করবেন আর বাতিল শক্তি ঘুমিয়ে যাবে এমন নয়। বাতিল শক্তি তিলে তিলে আপনাকে পীষে মারার জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে। বাতিলরা জল, স্থল ও আকাশ পথে আপনাকে আক্রমন করে আপনার প্রতিষ্ঠা করা শান্তিকে ব্যহত করে বাতিলকে টিকিয়ে রাখতে চাইবে। আর তখনই আপনি তাদের বাঁধাকে প্রতিহত করে আপনার প্রতিষ্ঠা করা ইসলামের শান্তি বজায় রাখতে তরবারির ব্যবহার করতে হবে।
এই তরবারি হবে আত্মরক্ষার তরবারি, এটা হবে প্রতিরক্ষামূলক তরবারি, এই তরবারি ইসলামকে বিজয়ী রাখার তরবারি, এই তরবারি ইনসাফ প্রতিষ্ঠার তরবারি। আর এটাই জিহাদ।
মনে রাখবেন, এই জীহাদের তরবারি নাই যেখানে, ইসলাম কখনোই প্রতিষ্ঠিত হবেনা সেখানে। ইসলামের প্রচার হবে দাওয়াতের মাধ্যমে, আর ইসলামের বাঁধা ডিঙ্গাতে হবে তারবারির মাধ্যমে।
তাই বলি ইসলাম ও তরবারি (জী*হা*দ) একে অন্যের সাথে জড়িত। তরবারি ছাড়া যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠা,ইসলামের বিজয় ও ইসলাম টিকিয়ে রাখার কথা বলে তারা হয় নিত্যান্ত মূর্খ আর না হয় মুনাফেক।
লেখক:চিকিৎসক, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী।
সত্য
উত্তরমুছুন