বিপ্লব ২০২৪ এর সুফল কি আগের স্বাধীনতা গুলোর মতই অন্য কেউ ভোগ করবে
বাংলাদেশ নামক ভুখন্ডটির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সাথে হাজার বছরের বহু চড়াই-উৎরাইয়ের ঘটনা জড়িত। কিন্তু এই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যেসকল বিপ্লব সংগঠিত হয়েছিলো তার প্রত্যেকটিরই সুফল বাঙ্গালীরা পুরোপুরি কখনোই ভো করতে পারে নি, কেনো যেনো বার বার তৃতীয় শক্তি তা কুক্ষিগত করে নিচ্ছে। আমি আজ ১৯৪৭,১৯৭১ এবং ১৯৭৭ এর সিপাহী জনতার বিপ্লন্বের কথা জানাবো।
১৯৪৭ এর স্বাধীনতার সুফল কে পেলোঃ
বাংলাদেশ ব্রিটিশ পরাধীনতা হতে অনেক রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছিলো। কিন্তু দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ হয়ে স্বাধীন হলেও বাধীনতার পর দেখা গেলো আমাদের বাংলাদেশ নামক ভুখন্ডটির মানুষের ভাগ্যের নিয়ন্ত্রন কবচ অন্যের হাতে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসাবে পাকিস্তান স্বাধীন হয়েছিলো, একটি ইসলামিক স্টেট গঠনের স্বার্থে তখনকার মুসলীম লীগ নেতাদের বহু ত্যাগ তিতিক্ষার ফলে স্বাধীন হওয়া ভুখন্ডটির নিয়ন্ত্রণ চলে গেলো সেকুলার শিয়া নেতা কায়েদে আলী মুহাম্মদ আলর জিন্নাহর কাছে। পূর্ব পাকিস্তানে জনসংখ্যা বেশি হওয়ার পরও জমিদার বনে গেল পশ্চিম পাকিস্তানিরা আর বাঙ্গালীকে বানালো গোলামের জাতিতে।
আমার প্রশ্ন হলো পূর্ব পাকিস্তানে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা ভাষানীর মত নেতা থাকার পরও এ দেশের জনগনের ভাগ্য পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিলো কে? কিভাবে এটা হলো?
স্বাধীনতা ১৯৭১ঃ
১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে,দেশের আপাৃর জনতার অংশ গ্রহনে, মেজর জিয়াউর রহমানের আহ্বানে সবাই মিলে দেশ স্বাধীন করলো। শেখ মুজিবুর রহমান প্রচুর জনপ্রিয় লোক ছিলো। দেশ স্বাধীনের মূল ইস্যু ছিল স্বাধিকার। আমরা যেহেতু ১৯৪৭ সালে মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ হিসাবে স্বাধীন হয়ে ছিলো সেহেতু ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিলো স্বাধিকার। এই স্বাধীনতা কোন আদর্শের ভিত্তিতে হয় নি, অধিকার আদায়ের জন্য হয়ে ছিলো। কিন্তু অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় দেশ স্বাধীনের পর দেশের সংবিধানে ধর্মকেই অস্বীকার করে ধম নিরপেক্ষতা প্রবতন হলো, অথচ এদেশের ৯৯% ধর্ম প্রান হিন্দু-মুসলিম ধর্ম মিরপেক্ষতার কথা জানতোই না।
*মুক্তির দূত শেখ মুজিবর রহমান হয়ে গেলো এক নায়ক, গনতন্ত্রের পরিবর্তে চালু হলো বাকশাল, বাক স্বাধীনতার পরিবর্তে শেখ মুজিব পরিকা বন্ধ করে দিলো, গনতন্ত্র চর্চার অপরাধে শিরাজ শিখদার নামক এক এমেিক হত্যা করলো শেখ মুজিবুর রহমান, নারী নির্যাতনের সাথে জড়িত হানাদারনপাক বাহিনীকে সরানোর পর জাতির ঘাড়ে ঝেঁকে বসলো ভারতের অমুগগ দেশীয় রক্ষী বাহিনী নামক আরেক হানাদার বাহিনী। দেশ চলে গেলো ভারতের নিয়ন্ত্রিত দালালদের হাতে। শুরু হয় শোষন, অত্যাচার, অবিচার। অবশেষে ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান নিহতের মধঢ় দিয়ে জাতি মুক্তিমপায়, কিন্তু জাতির ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের কবচ রয়ে গেল আধিপত্যবাদি ভারতের হাতে।
১৯৭৭ সালের সিপাহী-জনতার বিপ্লব:
শেখ সাহেবের মৃত্যুর পর জাতির ভাগ্যের সুখ বেশিদিন সহ্য হয় নি, আবার শুরু হয় জাতির ভাগ্য নিয়ে লীলা খেলা। অবশেষে মেজর জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে বহু দলীয় গনতন্ত্র চালু করেন। পরে এই বহুদলী গনতন্ত্র চালুর পর হঠাৎ করে ভারতীয় বংশদ্ভূত হু.মু এরশাদকে দিয়ে ভারত জিয়াউর রহমান করে সরিয়ে পুতুল সরকার হিসাবে ক্ষমতা দখল করায়। এবারেও বহুদলীয় গনতন্ত্রের সুফল চলে যায় ভারতীয় দালালদের পকেটে, জাতির ভাগ্যের কন পরিবর্তন হয় নি।
বিপ্লব ২০২৪:
রক্তাক্ত জুলাই বিপ্লব ২০২৪ এর পর সাড়ে পনের বছরের দানবীয় জালিম শাসক, চরম প্রতিশোধ পরায়ন শেখ হাসিনার স্বৈর শাসন হতে মুক্তিৃপায় দেশের মানুষ, যা হয়েছে বহু রক্তের বিনিময়ে। এবারের স্বাধীনতার বিপ্লবের মূল উদ্দেশ্য বৈষম্যহীনতা অর্থাদ সকল স্তরে সাম্য ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। এ লক্ষে অন্তর্বরতী কালীন সরকার প্রধান করা হলো বিশ্ব নন্দিত ড.ইউনুস কে। সাথে যারা এডভাইজার হিসাবে আছেন তাদের অনেকেই আছে হাসিনা সরকারের আমলে সরাসরি নির্যাতনের স্বীকার। আবার অনেকেই আছেন ২০০৬-০৭ এর কুচীলব যারা কিনা দানবীয় শাসক শেখ হাসিনাকে ক্ষমমতায় আনতে জীবন দিতেও প্রস্তুত ছিলো, কেউ কেউ আছেন সরাসরি নাতিক্য বাদের দালাল।
যার কারনে এখনও দেশে কাঙ্খিত পরিবর্তন আসে নি। মানুষ এখনও আতংকে আছে।কেননা দেশের ক্ষমতার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হাসিনার পা চাটা গোলাম আর নাস্তিক্যবাদিদের দখলেই রয়ে গেছে। হাসিনার সাজানো প্রশসনের অধীনেই সরকার কাজ করতে হচ্ছে।
আন্দোলনকারী ছাত্ররা বলছে এটা আমাদের নতুন স্বাধীনতা। এই নতুন স্বাধীনতার যুদ্ধের বীর নায়কদের নিকট কিছু প্রশ্নঃ
১। এই স্বাধীনতা কি শুধু মাত্র হাসিনাকে সরানোর বিপ্লবই ছিলো?
২। এই স্বাধীনতা কি শুধু হতাহতদের বিচারের জন্যই।
৩। নতুন স্বাধীনতা কি শুধু দপয়াল লিখনের জন্যই ছিলো?
৪। এ নতুন বাংলাদেশ কি আগের সংবিধানের আলোকে চলার জন্যই অর্জন করেছেন? যদি তাই হয় তা হলে যে সংবিধান দিয়ে হাসিনা দেশকে ভারতে অঙ্গ রাজ্য ও জাতিকে গোলামের জাতিতে পরিনত করে ছিলো সে সংবিধান দিয়ে কি বৈষম্যহীন ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন সম্ভব?
৫। উপরের ৪ নং প্রশ্নের উত্তর যদি না হয়, তাইলে আরেক প্রশ্ন হলো যে সংবিধানের বিরোদ্ধে গিয়ে বিপ্লব করলেন সে সংবিধান বহাল রেখে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা সম্ভব?
৬। বৈষম্য হীন ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য মধ্যবর্তী সরকারে ১/১১ এর কুশীলবরা কেনো? এটার উদ্দেশ্য বিঝার ক্ষমতা কি কারো নাই?
এজন্যই মনে বার বার প্রশ্ন আসে আমাদের রক্তে কেনা বিপ্লব ২০২৪ কি আগের তিনটি বিপ্লবের ভাগ্য বরন করতে হবে?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ