ধর্ম গ্রন্থ ও আবিস্কার
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের প্রিয়া রায় নামের এক কমিউনিষ্ট ফেসবুকে লিখেছেন যে,
"এক হিন্দু গুরু শিস্যকে বলছিল, পৃথিবীতে বিজ্ঞানিরা যত আবিস্কার করেছে তার সবই বেদে আছে৷ বেদ হল মহাবিজ্ঞান৷ ...
আমি বললাম, দাদা এতোকাল শুনে আসলাম কোরানই মহাবিজ্ঞানময় গ্রন্থ, সবকিছু কোরান ঘেটেই আবিস্কার হয়েছে৷ আর আজ আপনি ভিন্ন বলছেন?
ওনি উল্টো প্রশ্ন করলেন, বেদ আগে না কোরআন আগে?
বললাম, বেদই আগে৷
ওনি হেসে বললেন, তাহলে? বেদ থেকে যদি অন্যরা নেয় তাহলে তার মালিক কি অন্যরা হবে?
আমি বলি, দাদা তাহলে হয় বেদ থেকে না হয় কোরান থেকেই গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা সব আবিস্কার করেছে মানলাম৷ কিন্তু আপনিতো বেদ গবেষণা করেন, আরো অনেকে করে আবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদ্রাসায়তো কোরাণ গবেষণা করে৷ তাহলে আপনারা বা আমরা কিছু আবিস্কার করতে পারছি না কেন?
ওনার হঠাৎই তাড়ার কথা মনে হল৷ হিন্দু ও মুসলিমদের বিপুল সংখ্যক মানুষই মনে করে ধর্মগ্রন্থ ঘেটেই বিজ্ঞানীরা সব আবিস্কার করে৷ ওরা আমাদের জন্য সেবা করে৷ ওরা আমাদের দাস! এই ভয়াবহ ভাবাদর্শ দুটি ধর্মের মানুষকেই কেবলই পিছিয়ে দিয়েছে৷
হিটলার মনে করেছিল ইহুদীরাই তাদের একমাত্র শত্রু৷ ইহুদি তাড়াতে পাড়লেই মুক্তি মিলবে৷ অথচ তা তাদের পরাজিত করতেই ভূমিকা রেখেছে৷ ভারত ভাগের সময় মনে হয়েছিল পাকিস্তান থেকে হিন্দু আর ভারত থেকে মুসলিম তাড়াতে পারলেই মুক্তি৷ পাকিস্তান প্রায় হিন্দু শূন্য হয়েছে৷ আজ তারা নামতে নামতে বহু দিকে বাংলাদেশেরও নিচে নেমে গেছে৷ ভারত থেকেও বহু মুসলিমকে তাড়ানো হয়েছিল এখনো পীড়ন করা হচ্ছে৷ কিন্তু তাতেও ভারতে উন্নত সভ্য দেশ হতে পারেনি৷ বাংলাদেশ থেকেও বহু হিন্দু তাড়ানো হয়েছে৷ তাতেও বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷ তারাই শ্রেষ্ঠ, তাদের ধর্মগ্রন্থই শ্রেষ্ঠ এমন মনোভাব তাদের কেবল ক্ষতিই করেছে৷
ভাগেরপর ভাগ হয়েছে, বিভাজন বেড়েছে, বৈষম্য বেড়েছে কিন্তু সাধারণ মানুষের মঙ্গল হয়নি৷ এতো বছরেও তারা উপলব্ধি করেনি, এই বিভাজনের ধারণা নিতান্তই ভুল৷ তারা কারো চেয়ে কেউ শ্রেষ্ঠ নয়৷ কোন ধর্মগ্রন্থ ঘেটেই কোন বিজ্ঞানি কিছু আবিস্কার করেনি৷ নিউটনের সূত্রগুলো যদি কোন ধর্মগ্রন্থেই থাকতো তবে সেগুলো নিউটনের সূত্র হতো না, হতো ওই ধর্মগ্রন্থের সূত্র৷ কোন বিজ্ঞানীও কখনোই বলেননি আমি ওই সূত্র বা জ্ঞান ওই ধর্মগ্রন্থে পেয়েছি৷ তারপরও এই দাবি সীমাহীন৷"
আমার কথা হল কোরআন বা বেদ পড়ে কেউ কোন কিছু আবিস্কার করেনি আর করছেও না, তবে আবিষ্কারের পর অবিকৃত ধর্ম গ্রন্থের স্বাশত ইঙ্গিত গুলো আবিষ্কারের সূত্রের সাথে যখন মিলে যায় তখনই মৌলভী কিংবা ধর্মজাযকেরা দাবী করে বসে আমাদের ধর্মগ্রন্থ থেকে এটা আবিস্কার করেছে বা ঐটা আবিষ্কার করেছে। অথচ এর আগে টু শব্দটিও করে না। আবিস্কারের পর ধর্ম গ্রন্থের দোহাই দিয়ে ব্যবসা করাই মূল উদ্দেশ্য।
এ পর্যন্ত কোন মাদরাসার হুজুর/মুফতি/মুহাদ্দেস কিংবা কোন যোগী/ সন্ন্যাসী/ব্রাহ্মন অথবা কোন ধর্ম যাজক কোন কিছু আবিস্কার করতে দেখেছেন? ঐ ধর্ম ব্যবসায়ীরা এটাও বুঝেনা যে দুনিয়ার বিজ্ঞান আর মহা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রন কর্তাকে চেনার জ্ঞান এক নয়। বরং না বুঝে ধর্মকে বিজ্ঞানের নিকট হাস্যকর হিসাবে উপস্থাপন করে।
কোরআন বা বেদে কোন কিছু আবিস্কার করার সরাসরি কোন কথা থাকবে কেন? যে জ্ঞানটা না থাকলে সৃষ্টি পদচ্যুত হয় সৃষ্টি কর্তা সেই জ্ঞানটাই ধর্মগ্রন্থে দিবে,বাকীটা মানুষ পরিশ্রম করে অর্জন করবে। ধর্ম গ্রন্থে যে জ্ঞান দেয়া থাকবে সে জ্ঞান মানব জাতি সারা জীবন গবেষনা করেও অর্জন করতে পারবেনা।আবার মানুষ যে জ্ঞানটা নিজেই অর্জন করতে পারবে সেটা ধর্ম গ্রন্থে লিখা থাকবে না। কেননা মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি সেরা জীব হিসাবে তৈরী করেছেন। কিন্তু এই সংশয়বাদী/অবিশ্বাসীরা মানুষ যে সৃষ্টি সেরা জীব এটাও নিজের অজান্তে অস্বীকার করে নিজেকে ইতর প্রানীর জায়গায় নামিয়ে আনে।
অন্য দিকে ধর্ম নিয়ে অহমিকা আর ধর্ম ব্যবসা অতীতেও ছিল, আজও আছে এবং হয়ত ভবিষ্যতেও থকবে। এ সকল ধর্ম ব্যবসায়ীরা না পারে ধর্মকে উপলব্ধি করতে আর না পারে বিজ্ঞানকে অর্জন করতে। এই ভন্ড প্রতারক ধর্ম ব্যবসায়ীরাই যুগে যুগে ধর্মের দোহাই দিয়ে বিজ্ঞান থেকে মানুষকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছে শুধু মাত্র নিজেদের গোঁরামী, অহমিকা ও হিংসাকে টিকিয়ে রাখতে। অথচ বিজ্ঞান যত উন্নতি লাভ করেছে ততই শ্বাশত ও ঐশী ধর্ম গ্রন্থের সত্যতা প্রমানিত হয়েছে।
মনে রাখতে হবে মানুষের জ্ঞান যেখানে শেষ সেখান থেকেই সৃষ্টি কর্তা জ্ঞান দেবেন।
লেখকঃ চিকিৎসক ও সাংবাদিক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ