expr:class='"loading" + data:blog.mobileClass'>

Wikipedia

সার্চ ফলাফল

বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

শয়তান কার প্ররোচনায় বিদ্রোহ করলো?


শয়তানকে কে স্রষ্টার নির্দেশ অমান্য করার প্ররোচনা দিয়েছিল?



জবাবঃ
 নাস্তিকদের অত্যন্ত জনপ্রিয় অভিযোগ হচ্ছে ইবলিস মানুষকে ধোঁকা দেয় কিন্তু ইবলিস যখন ফেরেস্তাদের সর্দার ছিল তখন তাকে ধোঁকা দিল কে?!

এখন শয়তান মানুষের শত্রু,মানুষকে আল্লাহর হুকুম অমান্য করতে প্ররোচনা দেয়। কিন্তু শয়তান আদম(আ:)কে সেজদা করতে অস্বীকৃতি জানানোর পূর্বে তো আর বিদ্রোহী ছিলো না, শয়তানকেও তো প্ররোচনা দেওয়ার মত কোনো নিয়ামক বা প্রভাবক ছিলো না।তাইলে শয়তান কার প্ররোচনায় আল্লাহর সাথে বিদ্রোহ করে বসলো?

সত্য সম্পর্কে অবগত না থাকাই তাদের এই প্রশ্নের অবতারণার কারন।
প্রশ্ন হচ্ছে ধোঁকা কি শুধু শয়তান দেয়?
না, এটি একটি ভুল ধারণা।
জ্বীন ও ইনসানের দুটি বড় শত্রু আছে। এগুলো হল-
১/ নাফস,
২/ শয়তান।
এই নফস ও শয়তান দুটোই প্রতি মুহূর্তে আমাদেরকে নানান গুনাহের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। নফস ভিতর থেকে উদ্বুদ্ধ করে আর শয়তান সেটিকে আমাদের সামনে আকর্ষণীয় করে তুলে তাতে লিপ্ত করায়। নফস ও শয়তান দুটোই আমাদের শত্রু। তবে নফস শয়তানের চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর শত্রু।
কেন ভয়ঙ্কর ?
কারণ, এই নফসই শয়তানকে শয়তান বানিয়েছে। শয়তানের আগে তো আর কোন শয়তান ছিল না। এই নফসই শয়তানকে আল্লাহর হুকুম অমান্য করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। পরিণামে সে চিরকালের জন্য অভিশপ্ত শয়তানে পরিণত হয়েছে।
 নফসের একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সে সব সময় খারাপ বা নিষিদ্ধ কাজের প্রতি উৎসাহিত করবে, এটাই সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য,  আর এজন্যই এই নফস এর বিষয়ে বার বার সতর্ক করা হয়েছে। এই নফস কিন্তু ভালো কাজের দিকে আহবান করবে না। এই পুরা সৃষ্টিটাই আল্লাহ এমন বৈচিত্র্যময় করে তৈরী করেছেন আর এজন্যই বিচার হবে।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,
 (হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম বললেন)
 وَمَا أُبَرِّئُ نَفْسِي إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّي إِنَّ رَبِّي غَفُورٌ رَّحِيمٌ.
আমি নিজের নফসকে পবিত্র মনে করি না। নিশ্চয়ই নফস (সবাইকেই) মন্দ কাজের নির্দেশ দিয়ে থাকে, একমাত্র ওই ব্যক্তি ছাড়া যার প্রতি আমার প্রতিপালক অনুগ্রহ করেন। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক ক্ষমাশীল, দয়ালু। (সূরা ইউসুফ: ৫৩)।

অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা যার প্রতি দয়া করেন, কেবল সে-ই নফসের কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকতে পারে। তবে কেউ চাইলেই নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে আল্লাহর দয়ায়।
সৃষ্টির প্রতিটি জ্ঞানসম্পন্ন জীবেরই রয়েছে এই নফস যা তাকে মন্দের দিকে ধাবিত করে।
এবার আমাদের ভালো করে বোঝা দরকার সেদিন কী ঘটেছিল!

হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তায়ালা  তাঁকে সেজদা করার নির্দেশ প্রদান করেন সকল ফেরেশতাদেরকে। তাদের মধ্যে একজন জ্বিনও ছিল। যে আল্লাহর এ আদেশকে মানতে পারেনি। যে কাজটি তাকে আদেশ পালনে বিরত রেখেছে, তাহলো আত্ম-অহংকার। সে তার নফসের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে নিজেকে আদমের চেয়ে বড় ভাবে এবং সিজদা করতে অস্বীকার করে।
কুরআনুল কারিমের সুরা বাক্বারার ৩৪নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
 وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلاَئِكَةِ اسْجُدُواْ لآدَمَ فَسَجَدُواْ إِلاَّ إِبْلِيسَ أَبَى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ
 অর্থাৎ এবং যখন আমি আদমকে সেজদা করার জন্য ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, তখনই ইবলিস ব্যতিত সবাই সিজদা করলো। সে (নির্দেশ) পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করল। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল।
অত্র আয়াতে অহংকার বলতে وَاسْتَكْبَرَ শব্দটিকে বুঝিয়েছেন। ইবলিস আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার ভিত্তি কোনো ভুল ধারণা কিংবা দ্বিধা-সংশয় নয়; বরং আত্ম-অহংকারই ছিল এর ভিত্তি। শ্রেষ্ঠত্ববোধ থেকেই ইবলিসের এ অস্বীকৃতি এসেছিল। মানে নিজেকে নিজে শ্রেষ্ঠ মনেকরার অহমিকাই শয়তানকে বিদৃরোহী করেছিলো।

ধরুন, আপনি আপনার চাকরি জীবনের প্রথম থেকে একটা কোম্পানিতে নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছেন। গত ত্রিশ বছর কঠোর পরিশ্রম করে আপনি একজন মামুলি কেরানি থেকে আজকে কোম্পানির প্রেসিডেন্ট হয়েছেন।ল, যেমনটা শেখ হাসিনার পিয়ন এবং কাজের বুয়া হয়েছিলো। আপনার সাথে কোম্পানির চেয়ারম্যানের অনেক ভালো সম্পর্ক, আপনি তার অনেক কাছের একজন মানুষ। কিন্তু হঠাৎ একদিন চেয়ারম্যান সাহেব আপনাকে বলল যে, সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়  থেকে গ্রাজুয়েট একজন তরুন ছেলে কালকে থেকে কোম্পানির প্রেসিডেন্ট হবে এবং আপনাকে তার অধীনে ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করতে হবে। আপনার অবস্থা তখন কী হবে? একজন সদ্য গ্রাজুয়েট হবে প্রেসিডেন্ট, আর আপনি যেখানে ত্রিশ বছর ধরে কোম্পানিতে কাজ করছেন, আপনি হবেন তার অধীনে একজন কর্মচারী! আপনার সাথে এতো বড় অন্যায়!

 বিষয়টা তেমনই ছিল ইবলিসের জন্য। এই ভাবনা থেকেই তার নফস, তার অহমিকা তাকে প্ররোচিত করল আর সে রবের হুকুম পালনে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করল।
 কো’রআনে পরে কয়েকটি সূরায় আল্লাহ  ইবলিসের সাথে সেদিন তাঁর যে কথোপকথন হয়েছিল, তা আমাদেরকে জানিয়েছেন,
আল্লাহ বললেন, “ইবলিস, যাকে আমি নিজের হাতে সৃষ্টি করেছি, তার প্রতি তুমি অনুগত হতে পারলে না কেন? তুমি কি তখন অহংকার করছিলে, নাকি তুমি নিজেকে মহিমান্বিতদের একজন মনে করো?” – [সাদ ৩৮:৭৫]

স্রষ্টার কাছ থেকে এত কঠিন একটা প্রশ্ন সরাসরি শোনার পরে স্বাভাবিকভাবেই ইবলিসের উচিৎ ছিল সাথে সাথে ক্ষমা চাওয়া এবং স্বীকার করা যে, সে বড় ভুল করে ফেলেছে, তাকে মাফ করে দেওয়া হোক। কিন্তু সে তা না করে উল্টো আল্লাহকে  বোঝানোর চেষ্টা করল।
সে বলল, “আমি ওর থেকে বড়। আপনি আমাকে আগুন থেকে বানিয়েছেন, আর ওকে বানিয়েছেন মাটি থেকে।” [সাদ ৩৮:৭৬]
“মহান আল্লাহ সকল প্রশ্নের ঊর্ধ্বে, সর্বশক্তিমান, একমাত্র প্রভু এবং আমি আল্লাহর  এক মামুলি দাস”—এটা ইবলিস তার অহংকারের জন্য ভুলে গিয়েছিল।
সে আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা মানে ঠিকই। কিন্তু তিনি যে সব প্রশ্নের ঊর্ধ্বে একজন প্রভু—এটা মানে না।
ইবলিস শুধু আল্লাহর সাথে যুক্তিতর্ক করেই শেষ করেনি, তার মধ্যে কখনোই কোনো ধরনের অনুশোচনাও ছিল না। একে তো সে আল্লাহর আদেশ অমান্য করল, তার উপর উল্টো সে তার স্রষ্টাকেই যুক্তি দিয়ে বোঝানোর মতো ঔদ্ধত্য দেখাল।
তার অহংকার এতই বেশি ছিল যে, সে চিরকালের জন্য জাহান্নামে যেতেও রাজি ছিল, কিন্তু তারপরেও সে কারও কাছে মাথা নত করবে না।এমনকি তার স্রষ্টার কাছেও না!

হাদিসে কুদসিতে এসেছে-
 আল্লাহ তাআলা বলেছেন-‘বড়ত্ব আমার চাদর এবং মহানত্ব আমার ইযার (লুঙ্গি)। কেউ যদি এ দুইটির কোনো একটির ব্যাপারে আমার সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হয় তবে আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।’ (মুসলিম, মিশকাত)

কেউ কেউ প্রশ্ন করেন, “এভাবে ইবলিসকে কি একটা ফাঁদে ফেলা হলো না? আদম (আ) এর প্রতি সমর্পণ করতে না বললেই তো সে আর কোনোদিন শয়তান হয়ে যেত না, আর আমাদের এত বড় একজন শত্রু তৈরি হতো না।”
ইবলিসের মতো ভয়ংকর প্রবৃত্তি একদিনে তৈরি হয় না। এর জন্য অনেক সময় লাগে এবং আগে থেকেই ভিতরে অনেক সমস্যা থাকতে হয়।
আল্লাহ বলেন-
… সে কাফিরদের [অবিশ্বাসীদের, অস্বীকারকারীদের] একজন ছিল। [বাকারাহ ৩৪]
অর্থাৎ ইবলিসের আগেই আরও জিন ছিল, যারা আগে থেকেই কাফির (অবিশ্বাসী, অকৃতজ্ঞ) ছিল। ইবলিস সেই জ্বীনদেরই বংশধর ছিল। সেই অবিশ্বাসী পূর্বপুরুষ জ্বীনদের তাছির বা প্রভাব তার উপর রয়েই গিয়েছিল যা একদিন না একদিন প্রকাশ পেত।এটা পদরৃথ বিজ্ঞানের ভাষায় অনেকটা আবেশের মত।

 মহান আল্লাহ খুব ভালো করেই জানতেন যে, ইবলিস মানুষের ক্ষতি করার চেষ্টা করবেই, কারণ সে মানুষের মতো উন্নততর একটা সৃষ্টিকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি, যা ফেরেশতারা নিঃসঙ্কোচে মেনে নিয়েছে। মানুষের প্রতি তার হিংসা, তার ভিতরের ভয়ংকর অহংকার, ক্রোধ, মহান আল্লাহর প্রতি অবাধ্যতা—এগুলো যদি আল্লাহ একদম শুরুতেই প্রকাশ করে না দিতেন, তাহলে ইবলিস মানুষের এক গোপন শত্রু হয়ে যেত। আল্লাহ  ইবলিসের আসল রূপকে একদম শুরুতেই প্রকাশ করে দিয়ে এবং নবী, রাসুল ও ঐশী গ্রন্থগুলোর মাধ্যমে আমাদেরকে ইবলিসের ব্যাপারে সাবধান করে দিয়ে আমাদের এক বিরাট উপকার করেছেন। আমরা এখন জানি যে, ইবলিস আমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
আল্লাহ আমাদের সকলকে ইবলিসের ধোঁকা আর  নফসের প্ররোচনা থেকে হেফাজত করুন,আমিন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে!

  দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে! এক.   শুনতে খারাপ শোনালেও এটা সত্য, রবীন্দ্রনাথের...