"যে দলিল গুলো আলেমরা বলে না"
নিঃসন্দেহে জিহাদের মাধ্যমে জীবন ও সম্পদ কুরবানী দেওয়া অত্যন্ত বড় ত্যাগ এবং মানবীয় প্রকৃতির জন্য খুবই কষ্টকর। এজন্য এ ইবাদতের সাওয়াব ও পুরস্কারও অভাবনীয়। কুরআন ও হাদীসে জিহাদের অফুরন্ত সাওয়াব ও পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে এবং জিহাদের ইবাদত পালনের জন্য বিশেষ উৎসাহ ও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ সকল আয়াত ও হাদীসের অর্থ জিহাদ যখন বৈধ বা শরীয়ত সম্মত হবে তখন যে ব্যক্তি মানবীয় দুর্বলতার ঊর্ধ্বে উঠে জিহাদের দায়িত্ব পালন করবে তখন সে এ অভাবনীয় পুরস্কার লাভ করবে। এছাড়া জিহাদের আবেগ ও আগ্রহ মুমিনের হৃদয়ে থাকবে। জিহাদের মাধ্যমে জীবন ও সম্পদের কুরবানীর প্রতি অনীহা ঈমানের দুর্বলতা প্রমাণ করে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
مَن مات ولم يَغزُ ، ولم يحدِّث به نفسَه ، مات علَى شُعبةٍ من نفاقٍ
‘‘যদি কেউ এমতাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে যে, সে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে নি এবং যুদ্ধাভিযানে অংশগ্রহণের কোনো কথাও নিজের মনকে কখনো বলে নি, তবে সে ব্যক্তি মুনাফিকীর একটি শাখার উপর মৃত্যুবরণ করল।
(মুসলিম, আস-সহীহ ৩/১৫১৭।)
সাধারণভাবে জিহাদ ফরয কিফায়া এবং রাষ্ট্র শত্রু কর্তৃক আক্রান্ত হলে ফরয আইন। ফরয কিফায়া অবস্থায় যদি সকল মুসলিম তা পরিত্যাগ করে এবং ফরয আইন অবস্থায় যদি মুসলিমগণ তা পরিত্যাগ করে তবে তা তাদের জাগতিক লাঞ্ছনা বয়ে আনবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
إذا تبًايعتم بًالعينة وأخذتم أذناب البقر ، ورضيتم بًالزرع ، وتركتم الجهاد سلط الله عليكم ذلا لا ينزعه حتى ترجعوا إلى دينكم
‘‘যখন তোমরা অবৈধ ব্যবসাবাণিজ্যে লিপ্ত হবে, গবাদিপশুরু লেজ ধারণ করবে, চাষাবাদেই তুষ্ট থাকবে এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ পরিত্যাগ করবে তখন আল্লাহ তোমাদের উপর লাঞ্ছনা চাপিয়ে দিবেন, দীনে প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত যা তিনি অপসারণ করবেন না।’’
(আবু দাউদ, আস-সুনান ৩/২৭৪; আলবানী, সহীহাহ ১/১৫। হাদিসটি সহীহ।)
এ সকল আয়াত ও হাদীস থেকে অনেক সময় আবেগী মুমিন ভুল বুঝেন যে, জিহাদের বিষয়ে যেহেতু বেশি বেশি নির্দেশ ও উৎসাহ দেওয়া হয়েছে, গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং বেশি বেশি পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সেহেতু জিহাদ সালাত-সিয়ামের মতই ইবাদত অথবা সালাত সিয়ামের চেয়েও বড় ইবাদত। কারণ মহান আল্লাহ সালাত ও সিয়াম ফরয করেছেন এবং তিনিই জিহাদ ফরয করেছেন। আল্লাহ বলেছেন (كتب عليكم الصيام) তোমাদের উপর সিয়াম বিধিবদ্ধ করা হয়েছে’’
(সূরা (২) বাকারা: ১৮৩ আয়াত।)
তিনিই বলেছেন (كتب عليكم القتال) তোমাদের উপর কিতাল বা যুদ্ধ বিধিবদ্ধ করা হয়েছে’’।
(সূরা (২) বাকারা: ২১৬ আয়াত।)
কাজেই সালাত, সিয়াম ও জিহাদ-কিতালের মধ্যে পার্থক্য করলে বা সালাত পালন করে জিহাদ-কিতাল পালন না করলে ইসলাম পালন করা হবে না।
আল্লাহ সুস্পষ্টতই জানিয়েছেন যে, কোনোরূপ ওজর ও অসুবিধা না থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ জিহাদ পরিত্যাগ করে তবে সে পাপী হবে না, শুধু অতিরিক্ত সাওয়াব ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হবে। এ অর্থে এক হাদীসে আবূ সাঈদ খুদরী (রা) বলেন,
أنَّ رجلًا أتى النبيَّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ فقال : أيُّ الناسِ أفضلُ ؟ فقال رجلٌ يجاهد في سبيلِ اللهِ بمالِه ونفسِه قال : ثم من ؟ قال مؤمنٌ في شِعبٍ من الشِّعابِ ، يعبدُ اللهَ ربَّه (وفي رواية: يقيم الصلاة ويؤتي الزكاة ويعبد ربه حتى يأتيه اليقين) ويدعُ الناسَ من شرِّه
‘‘একব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (ﷺ)এর নিকট আগমন করে বলে, হে আল্লাহর রাসূল, সর্বোত্তম মানুষ কে? তিনি বলেন: যে মুমিন নিজের জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে। লোকটি বলে, এরপর সর্বোত্তম কে? তিনি বলেন: যে মুমিন মানুষদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একাকী বিজন উপত্যাকায় থেকে তার প্রতিপালকের ইবাদত করে (দ্বিতীয় বর্ণনায়: এভাবে নির্জনে একাকী সে সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয়, মৃত্যু আগমন পর্যন্ত তার প্রতিপালকের ইবাদত করে) এবং মানুষের কোনো ক্ষতি করে না।’’
(মুসলিম, আস-সহীহ ৩/১৫০৩।)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ