"আমি তাবলীগ জামায়াত অপছন্দের কারন"
তাবলীগ জামায়াত বাংলাদেশের অল্প শিক্ষিত, অশিক্ষিত ও দ্বীন সম্পর্কে সম্পূর্ণ গাফেল লোকদের মধ্যে ইসলামের প্রাথমিক কিছু শিক্ষা দিয়ে থাকে, যে গুলো আসলেই প্রয়োজনীয়। যেমন ওযুর নিয়ম, নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া, গোছলের ফরজ ও সুন্নাত ইত্যাদি।
এগুলো ইসলাম না জানা বা যাদের প্রাথমিক জ্ঞান টুকুও নাই, বয়স বেড়ে গেছে, মক্তবে গিয়ে পড়াশোনার সুযোগ নাই নি:সন্দেহে তাদের জন্য তাবলীগের দাওয়াত একটি অতীব প্রয়োজনীয় কাজ। কিন্তু তাবলীগের এই কাজটাই কি পূর্ণাঙ্গ ইসলাম? তাবলীগের কাজ কি উম্মাহর জন্য কোন উপকারে আসে? আসুন আলোচনা করি।
১।এই তাবলীগের কোন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নাইঃ
আমি ব্যক্তিগত ভাবে তাবলীগের অপছন্দের মূল কারন হলো এদের মুসলীম উম্মাহর ভবিষ্যত নিয়ে কোন নির্দ্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নাই, মুলিম জাতির জন্য তাদের কোন পরিকল্পনা নাই। এরা কি চায় এবং কিভাবে চায় নিজেরাই কিছু জানেও না আর বুঝেও না, বুঝতেও চায় না।
২। এরা ইসলামের বাল্য শিক্ষায় সীমাবদ্ধঃ
এই তাবলীগের লোকেরা ইসলামের আগা ও গোড়া কিছুই বুঝে না, আজীবন ওযুর ফরজ আর গোসলের ফরজ নিয়ে আলোচনা করে এবং ভাবে এটাই ইসলাম। ইসলামে অর্থনীতি,রাজনীতি, সমর নীতি বলে কিছু আছে তা তাদের মাথায় নাই।আন্তর্জাতিক বিশ্ব নিয়ে তো তাদের কোনো চিন্তাও নাই।
৩। অল্প পুঁজিতে বেশী লাভঃ
তাবলীগরা ব্যক্তি পর্যায়ে যেমন ই হোক ইবাদতের বেলায় ব্যাপক সুবিধাবাদি ও ভন্ড। ওরা ইসলামের প্রতিষ্ঠা চায় না, ওরা সব সময় অল্প জিকির করে বেশী লাভ চায়, তাই তাদের সকল আলোচনায় দেখা যায় একবার সুবহানাল্লাহ পড়লে কতটি উট কুরবানীর সাওয়াব পাওয়া যায় এজাতীয় আলোচনা। বিশ্ব রাজনীতি, মুসলিম জাতির মুক্তির উপায়, ফিলিস্তিনের মানুষের দূর্দশা ইত্যাদি নিয়ে তাদের ধারনাই নাই, আলোচনা দূরে থাক।
৪। মূর্খদের বাড়াবাড়িঃ
তাবলীগে অনেক উচ্চ শিক্ষিত লোক আলোচনা করলেও তারা কখনোই আজগুবী ফাজায়েলে আমল বইয়ের আলোচনার বাইরে যেতে পারে না। তার পরও যাদের নূরানী শিক্ষাটুকু নাই এমন লোকও তাদের মজলিশে আলোচনা করে। তাদের আলোচনা সভা গুলোতে কোন প্রশ্ন উত্তর পর্ব থাকে না। এতে করে শিক্ষিত মানুষ গুলাও মূর্খের মত আচরন করে।
৫।প্রদর্শনেচ্ছা:
তাবলীগের আরেকটা সমস্যা হলো প্রদর্শনেচ্ছা।ওরা যতটুকু না ইসলামের খেদমত করে তার চেয়ে কোটি গুন বেশী প্রদর্শন করে। ওরা যে কোন আলোচনায় দেখবেন তার ইবাদতের কথা টেনে আনবে যেমন আজ নফল রোজা আছি, আজ রাতে তাহাজ্জুদ এত রাকাত পড়েছি ইত্যাদি।যেন দুনিয়ার আর কেউ এই ইবাদত গুলো করে না।
৬। প্রত্যেক তাবলীগ স্বার্থপর ও মোনাফেক টাইপের:
আমি ছাত্র জীবন হতে আদ্যবদি কর্ম জীবনে যা দেখলাম তারা কোন মানুষের উপকারে আসে না। নিজের লাভের জন্য যতটুকু দরকার ততটুকুই মানুষের জন্য করে এর বেশী কিছুই করে না।
ছাত্র জীবনে দেখতাম ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবির যখন দাওয়াত দিয়ে নতুন ছাত্রদের সমর্থক বানাত তখন এই তাবলীগীরা টার্গেটকৃত ছাত্রদেরকে ভুলবাল বুঝিয়ে হয় নিজেদের দলে ভেড়াত আর না পারলে ছাত্র দল কিংবা ছাত্রলীগের হাতে তুলে দিত। এমনও দেখেছি এই তাবলীগীরা নতুন ছাত্রদের পেছনে সুন্দরী মেয়েদের লেলিয়ে দিত শুধু মাত্র ছাত্র শিবির হতে দূরে রাখার জন্য।
৭। অন্যায়ের বাঁধা না দেওয়া:
এই তাবলীগ গুলো এতটাই লেজকাটা শিয়ালের জাত, এরা কখনোই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে দেখি নাই, হোক এটা রাষ্ট্রীয় পর্যায় হোক, সামাজিক পর্যায়ে হোক আর ব্যক্তি পর্যায়ে হোক।ওরা বলে আমরা কোনো ভেজালে নাই, আমরা কারো সাথে ঝগড়ায় নাই।
৮। নিজের ঘর ঠিক না করে চিল্লায় যাওয়া:
এরা এমন এক প্রজাতি যারা নিজের বউকে পর্দায় রাখতে পারেনা অথচ চিল্লায় চলে যায়।চিল্লায় গিয়ে নিজে বলে বেড়া ১চিল্লা,২চিল্লা কিংবা ৩চিল্লার সাথী, মনে করে হজ্ব করার চেয়েও চিল্লা দেওয়া বড় ইবাদত।
৯। চিল্লা নামক বিদা'ত:
এই চিল্লা নামক বিদা'ত হলো এই তাবলীগের বড় ফেতনা। কোরআন ও হাদিসের কোথাও এই চিল্লার কথা পাওয়া না গেলেও ওরা এই বিদা'ত পালন একটা বড় সাওয়াব মনে করে। এমন কি তিন চিল্লা দিলে নাকি একটি হজ্বের সাওয়াব পাওয়া যায়।
তাবলীগ জামাতের অবস্থা হল, ঘরের ফাউন্ডেশন মজবুত ভাবে তৈরি না করে ডেকোরেশন নিয়ে ব্যস্ত থাকার মত বা ভেঙ্গে পড়া ঘরকে মজবুত ভিত্তির উপরে নির্মাণ করার পরিবর্তে কোনমতে ঠেকা দিয়ে রাখার মত কিংবা যে গাছের শেকড়ে ঘুণ ধরেছে তার মূল সমস্যা বাদ দিয়ে গাছের আগায় পানি ঢালার মত। কেননা মানুষের আকিদা সংশোধন, শিরক, বিদআত, ইসলামবিরোধী নানা মতবাদ, ভ্রান্ত আকিদা-বিশ্বাস ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত করা, বিশ্ব মুসলিমদের সমস্যার সমাধান, রাষ্ট্রীয় পর্যায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার থেকে এদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, লম্বা দাড়ি রাখা, মাথায় পাগড়ি পড়া, লম্বা জুব্বা পড়া, বোরকা পড়া, মিসওয়াক করা, চিল্লায় বের হওয়া ইত্যাদি।
১০।দুনিয়ার কোন বাতিলের বাঁধা দিবে না:
ওরা কোন বাতিলকে বাঁধা দিবে না। চতুর্দিকে শিরকের জমজমাট আসর, মানুষ কবর পূজায় লিপ্ত ও বিভিন্ন বাতিল দল ও ফিরকায় দিশেহারা।দেশের প্রত্যেক স্তরে শয়তানের শাসন প্রতিষ্ঠিত কিন্তু এসব ব্যাপারে তাদের কোন বক্তব্য নেই। কেননা এসব বিষয়ে কথা বললে নাকি সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে!
মানুষ বিদা'ত, কুসংস্কার ও অপসংস্কৃতির অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছে। কিন্তু সেদিকে তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। কারণ এসব বিষয়ে কথা বললে নাকি ‘হাজার বছরের ঐক্য’ নষ্ট হবে এবং মানুষের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ ও ঝগড়া সৃষ্টি হবে।
১১। মূর্খদের দিয়ে ফাজায়েলে আমলের আবৃত্তি:
এরা মূর্খদের ইসলামের লেবাস পড়িয়ে দাওয়াত দেওয়ায়, ফলশ্রুতিতে মূর্খরা মাথায় পাগড়ি বেঁধে ফাজায়েলের কিতাব নিয়ে জনগণের সামনে ওয়াজ করতে দাঁড়িয়ে যায়।তারপর স্বভাবতই ইসলাম সম্পর্কে উল্টাপাল্টা ও ভুলভাল ব্যাখ্যা দিতে শুরু করে।
অনুরূপভাবে দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ মহিলারাও পাড়ায়-মহল্লায় দ্বীন সম্পর্কে সাধারণ মহিলাদের মাঝে ইসলাম সম্পর্কে নানা ভ্রান্ত ও বিদা'তি কথাবার্তা প্রচারে নিয়োজিত রয়েছে। অথচ ইসলাম সম্পর্কে কথা বলা এবং আমল করার পূর্বে ইলম (জ্ঞান) অর্জন করা ফরজ।
১২।দ্বীনি ইলম অর্জনে অনীহা ও গুরুত্ব হীনতা:
এই মানুষ গুলা সারা জীবনই দ্বীনি শিক্ষা হতে দূরে থাকে যার কারণে আপনি দেখবেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাবলীগের একজন মুরুব্বি যে, ১০-১৫ বা ২০ বছর ধরে তাবলিগের মেহনতের সাথে জড়িত, কিন্তু তাকে যদি ইসলামের প্রাথমিক এবং মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয় তাহলে তার উত্তর দিতে ব্যর্থ হবে। যেমন:
- ইসলাম ও ঈমান কাকে বলে?
- ইসলাম এবং ঈমানের রোকন কয়টি ও কী কী?
- দীনের স্তর কয়টি ও কী কী?
- ইবাদত কাকে বলে?
- ইবাদতের রোকন কয়টি ও কী কী?
- ইবাদত কবুলের শর্তাবলী কয়টি ও কী কী?
- ঈমান ভঙ্গের কারণগুলো কী কী?
- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর সঠিক অর্থ এবং এর শর্তাবলী কয়টি ও কী কী?
- এছাড়াও শিরক, কুফর, নিফাক, উসিলা, শাফাআত ইত্যাদি। বিষয়টি আপনারা নিজেরাই পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
১৩। উদ্ভট কিচ্ছা-কাহিনী এবং জাল-জইফ হাদিস বর্ণনা:
এই মূর্খদের ওয়াজ বা বয়ানের মূল ভিত্তি হলো, বুজুর্গদের বুজুর্গির বর্ণনা, উদ্ভট স্বপ্ন, কিচ্ছা-কাহিনী, জাল-জইফ হাদিসের বয়ান এবং ভিত্তিহীন ফজিলতের ফুলঝুরি। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে মিথ্যা হাদিস বর্ণনার পরিণতি জাহান্নাম।
১৪। দলাদলি, কোন্দল ও রক্তপাত:
এই জামাতটি বর্তমানে দুই ভাগে (জুবায়ের পন্থী ও সাদ পন্থী) বিভক্ত হয়ে একে অপরের সাথে চরম কোন্দলে লিপ্ত হয়েছে। মসজিদ ভাগাভাগি, মসজিদে মারামারি, এক মসজিদে দু'গ্রুপের আলাদা আলাদা জামায়াত, একই ময়দানে আলাদা আলাদা ইজতিমা। এমনকি একদল আরেক দলকে কাফের বা ইহুদি-খ্রিষ্টানের দালাল বলেও আখ্যায়িত করছে। সর্বোপরি টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে দুই গ্রুপের লোমহর্ষক রক্তাক্ত মারামারি জাতিকে স্তম্ভিত করেছে।
১৫। কুরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা:
তাবলিগ জামাত জিহাদের আয়াতগুলোকে তাদের কথিত চিল্লা ও গাশতের পক্ষে ব্যবহার করে, ‘চিল্লা’র জন্য নির্ধারিত ৩ দিন, ৪০ দিন (এক চিল্লা), ১২০ দিন (তিন চিল্লা) বা ১ সাল ইত্যাদির পক্ষে কুরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা করে এগুলোকে বৈধ প্রমাণের চেষ্টা করে, টঙ্গীর মাঠে এক ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত ৪৯ কোটি গুণ সওয়াবে বর্ণনা, তিন বার টঙ্গীর ইজতিমায় শরিক হলে এক হজের সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়া বা এটিকে ‘গরিবের হজ’ বলা (সাধারণ কিছু মূর্খ এমন কথা বললেও তাবলিগ জামাতের কেন্দ্র থেকে এর প্রতিবাদ বা সংশোধনী মূলক বক্তব্য করা হয়েছে বলে জানা যায় না)
টঙ্গী ইজতেমার বিশেষ আকর্ষণ হল, আখেরি মুনাজাত। মানুষ এখন ফরজ সালাত আদায়ের চাইতে আখেরি মুনাজাতে যোগদান করাকেই অধিক গুরুত্ব দেয়। আখেরি মুনাজাতে শরিক হওয়ার জন্য নামাজি, বেনামাজি, ঘুষখোর, সন্ত্রাসী, বিদ'আতি, দুষ্কৃতিকারী ইত্যাদি মানুষ দলে দলে টঙ্গীর ময়দানের দিকে ছুটতে থাকে। কেউ ট্রেনের ছাদে, কেউ বাসের হ্যান্ডেল ধরে, নৌকায় বসে, পিকআপ প্রভৃতির মাধ্যমে ইজতিমায় যোগদান করে। স্বয়ং রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে, প্রধানমন্ত্রী গণভবনে, বিরোধীদলীয় নেত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীগণও সেখানে গিয়ে আঁচল পেতে প্রার্থনা করেন। টিভিতে সরাসরি এই মুনাজাত সম্প্রচারিত হয়। রেডিও শুনে রাস্তার ট্রাফিকগণও হাত তুলে আমিন আমিন বলতে থাকে। সে দিন ঢাকা শহরে অফিস-আদালতে অঘোষিত ছুটি পালিত হয়। কারণ তাদের বিশ্বাস, এই আখেরি মুনাজাতে অংশ গ্রহণ করতে পারলে জীবনের সব গুনাহ মোচন হয়ে যায়। অথচ এই দোয়ায় কখনোই শোনবেন না নির্যাতিত মুসলমানের জন্য দেয়া করতে, ফিলিস্তিন, উইঘুর ও কাশ্মিরের মুসলমানদের নাম মুখেও আনবে না।
পরিশেষে বলব এই তাবলীগ কোনো ইক্বামতে দীনের কাজে লাগে না, এরা বাতিলের জন্য কোন হুমকী নয়, এরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে না। ওরা সহজ পথে নিজের মুক্তি চায় কিন্তু দুনিয়ায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা তাদের মাথায় নাই। তাইতো বলি এই তাবলীগ একটি অসাড় সংগঠন।
লেখক: চিকিৎসক, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ