"জুলাই বিপ্লবে বিএনপির অবদান সবেক শিবওর নেতা ও জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের মূখ্যপাত্রের মূখে"
আমি সাবেক শিবির নেতা ও নব গঠিত জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের মূখ্যপাত্র খোমেনী এহসানের একটি বক্তব্য হুবহু তুলে ধরলাম'
জুলাই বিপ্লবে বিএনপি-ছাত্রদলের ভূমিকা
জুলাই বিপ্লবে বিএনপির নিয়ামক ভূমিকা ছিল। কিন্তু এ ভূমিকাকে নিজেদের পছন্দের লোক আর পদপদবীর লোকদের কেন্দ্রিক কল্পনা করায় প্রকৃত সত্য খোদ বিএনপির লোকেরা বলে না।
আমি যতদূর জানি, গোটা আন্দোলনে তারেক রহমান সম্পৃক্ত ছিলেন। বিশেষ করে ১৫ জুলাইয়ের পর থেকে তিনি বিএনপি-ছাত্রদলকে দারুণভাবে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করেন।
কথা হলো তারেক রহমান কিভাবে কাজ করেছেন। তিনি গোটা আন্দোলনে মূল দায়িত্ব দিছিলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনকে। হ্যা, এটাই সত্য যে কোটা বিরোধী আন্দোলনে বিএনপিকে রাজপথে সক্রিয় করার কাজটি তিনি তদারকি করতেন।
তবে আমি মির্জা ফখরুলের কঠোর সমালোচনা করলেও সত্য কবুল করে বলব, জুলাই বিপ্লবকে একটা ম্যাচিউর জায়গায় নেওয়ার বিষয়ে সিএফ আকরাম হোসাইন শুরুতেই আমাকে জানিয়েছিল আন্দোলন জোরদার করার ব্যাপারে মির্জা ফখরুল পরামর্য় দিয়েছেন, বিএনপি আন্দোলনে আছে জেনেই আমরা সেই মধ্য জুলাইতেই হাসিনার পতন ঘটানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি৷
আমি যখন আগস্টের শুরুতে লেখছিলাম যে হাসিনাকে সরিয়ে ড. ইউনূসকে ক্ষমতায় আনা আমাদের পরিকল্পনা ছিল, তখন কিন্তু বিএনপি ও জামায়াতের সহায়তার কথা ভেবেই আমরা এগিয়েছিলাম।
আমি ও তামিমা যখন রাত বিরাত জেগে বাংলাদেশে আকরাম হোসাইন, সাংবাদিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আন্দোলনের স্তর পর্যালোচনা ও পরবর্তী করণীয় ঠিক করতাম তখন কিন্তু বিএনপি ও জামায়াতের কথা গুরুত্বের সঙ্গে আলাপ হতো।
এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা সবাইকে মনে করিয়ে দেই। হাসিনা যখন গুম ও আপসের খেলায় কোটা বিরোধী আন্দোলন খেয়ে দিতে পারল না, তখন তারা জামায়াত কার্ড সামনে নিয়ে আসতেছিল। এরমধ্যে খবর রটল জামায়াত ও শিবিরকে নিষিদ্ধ করে সব সমন্বয়ককে শিবির হিসেবে চূড়ান্ত দমন করা হবে। তখন বিএনপি জাতীয় ঐক্যের ঘোষণা দিল এবং সেখানে দেখবেন জামায়াতের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা ছিল। এর কারণ ছিল মূলতঃ সন্ত্রাসবাদী দল হিসেবে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করলেও তাদের পাশে বিএনপির থাকার সুস্পষ্ট বার্তা
এ কারণে জামায়াতকে নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারি করতে হাসিনা অন্ততঃ তিন দিন বিলম্ব করেছিল।
এই জাতীয় ঐক্যের একটা সিগনিফিক্যান্ট তথ্য আকরাম হোসেন আমাকে জানিয়েছিল। বিএনপি জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে চরমোনাইকে ফোন করে বলেছিল তাদেরকে জাতীয় ঐক্য অন্তর্ভুক্ত করা হবে না, তাই তারা যেন নিজেদের মতো করে সরকার বিরোধী আন্দোলন করে। এই ফোন কলটি মির্জা ফখরুল করেছিলেন বলে চরমোনাইয়ের এক শীর্ষ নেতার বরাতে আকরাম আমাকে বলেছিল।
এরমধ্যে কারফিউ জারি করার পর সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে গেলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে কিন্তু স্থবিরতা তৈরি হয়েছিল। হল বন্ধ করায় শিক্ষার্থীরা তেমন কেউ ছিল না, কিছু লোকজন ক্যাম্পাসের আশেপাশে অবস্থান নিয়ে ভেতরে ঢোকার কথা ভাবত, তারা আসলে সারা দেশের সঙ্গে আন্দোলনের সেন্ট্রাল কমান্ডের একটা যোগাযোগ তৈরি যাবে বলে আমরা ভাবতাম। কিন্তু কয়েকবার চেষ্টা করেও এটি পারা যায়নি। তখন মূলতঃ বিএনপি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে একটি মিছিল পাঠিয়েছিল। আজকে আমরা আন্দোলনের যত লেকচার শুনি তা সম্ভব হয়েছিল বিএনপির ওই মিছিলের কারণে।
এখানে আরেকটা বিষয় সামনপ আনি। কোটা বিরোধী আন্দোলনে আমেরিকা কেন্দ্রিক যে যোগাযোগ তার মূলে কিন্তু বিএনপির লোকজনই ছিলেন। সবাই এত গল্প দেয়, কিন্তু পারলে বলুক যে বিএনপির লোকদের ছাড়া আর কে বা কারা মার্কিন বলয়ে সক্রিয় ছিল?
আমি আগের একটি লেখায় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান আশিক ভাইয়ের কথা বলেছি। তার সম্পৃক্ততা ড. ইউনূস, আন্দোলনকারী, মার্কেন এম্বাসি ও পুলিশের সঙ্গেও ছিল। তার কাছে একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে যা আমরা আরও পরে প্রকাশ করব। এটি অনেক সেন্সিটিভ ও ড. ইউনূস কেন্দ্রিক।
যাই হোক, বিএনপির অবদানের কথা আসলে সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর কথা বলতে হয়। কিছু সাবেক মার্কিন কূটনীতিকের সঙ্গে মিলে তিনি তৎপর ছিলেন বলেই হাসিনাকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আমেরিকার সায় পাওয়া সহজ হয়েছে। ড. ইউনূসকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতেও তিনি ভূমিকা রেখেছেন।
এবার আসি ছাত্রদলের বিষয়ে, তাদের ভূমিকার বিষয়টি অত বেশি আসেনি, কারণ যাদের অনেক ভূমিকা ছিল তাদের কথা তুলে ধরার ব্যাপারে বিএনপির সাংগঠনিক সীমাবদ্ধতা আছে। উপরে আমি সালাহউদ্দিনের ভূমিকার কথা লিখেছি। তার কিন্তু দলের মহাসচিব হওয়ার কথা আছে।।এ কারণে তাকে এস আলমের গাড়ির মাধ্যমে বিতর্কিত করা হয়েছিল। বিএনপির এক বড় গ্রুপই তার বিরোধী, ফলে তার অবদান আলোচনায় আসবে না, এটাই স্বাভাবিক।
একইভাবে সাবেক ছাত্রদল সভাপতি রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের কথা বলতে হয়। নিজে ছাত্রদলে সাবেক হয়ে গেলেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে ও তৃণমূলে বেশির ভাগ নেতাকর্মীই তার গ্রুপের লোক ছিল। আর শ্রাবণের সঙ্গে সরাসরি তারেক রহমানের যোগাযোগ আছে৷ ফলে তারেক রহমানের নির্দেশে শ্রাবণের সম্পৃক্ততা ছিল অসামান্য।
এখন ছাত্রদল সভাপতি রাকিব ও নাসিরের ভূমিকার কথা ভালোমতই আসতো যদি তারা রিয়েল ফাইটারদের কথা বলতো। কিন্তু তারা সাবেক ছাত্রলীগ বাম সেক্যুলার ইসলাম বিদ্বেষীদের উস্কানিতে পড়ে একক ক্রেডিট নিতে গিয়ে নিজেদেরকেও বিতর্কিত করেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ