"বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজনৈতিক দল গঠনের প্রেক্ষাপট ও কেমন হওয়া উচিত আদর্শ"
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা একটা নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি যা অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জন হয়েছে। আর এই অর্জনের পুরোটা কৃতজ্ঞতাই ছাত্র-জনতার। ছাত্ররা দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে একটি বিভত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হয়, কিভাবে পরাধীনতার শিকল ভাঙ্গতে হয়। কিভাবে একটি দেশ স্বাধীন করতে হয়। তবে এই বিপ্লবের মূল কারিগর শুধু ছাত্ররাই ছিলো বিষয়টা এমন না,জনতাও ছিলো সর্বসৃতরের, এই বিষয়ে পরে লিখবো।
এখন আসেন ছাত্রদের রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। ছাত্রদের নিস্পাপ চিন্তা ভাবনা, দেশ প্রেম, নি:স্বার্থ আত্মত্যাগ প্রমান করে এদেশে তাদের রাজনীতি করার শুধু অধিকারই নয়, বরং তারা রাজনীতি করার প্রয়োজনীয়তা ১০০% জরুরী।
কিন্তু তারা কি ধরনের রাজনীতি করবে? কোন আদর্শে রাজনীতিটা করবে? বাংলাদেশে কোন কিছুই তো নিরপেক্ষ থাকে না, তাইলে এই বস্তা পঁচা রাজনীতি করে আবারও কি লেজুর বৃত্তি শুরু করবে এক সময়? না, এটা হতে দেওয়া যাবে না।
তাইলে কিভাবে কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করবে? যে দলের রাজনীতি করুক না কেনো লেজুর বৃত্তি করতেই হবে। এখন যে বিপ্লবীরা রাজনৈতিক দল করতে চায় তারাই এক দিন হয়তো সংসদ সদস্য হবে, দেশ শাসন করবে, আবার ছাত্রদের ব্যবহার করতে চাইবে।
নতুন দল গঠন করলে কি কি নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে আসবে?
১। একটি নতুন রাজনৈতিক দলে সকল ছাত্ররা কখনোই সর্ব সম্মত ভাবে যোগদান করবে না।
২। নেতৃত্বের কোন্দল হতেই পারে।
৩। নতুন যে দলটি গঠন হবে সে দলের আদর্শের সাথে সকল ছাত্র সমাজ ঐক্যবদ্ধ নাও হতে পারে।
৪। ক্যাম্পাস গুলোতে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের সাথে মতানৈক্য হবে, মতানৈক্য হলে আবারও ক্যাম্পাস গুলো উত্তপ্ত হবে।
৫। নতুন স্বাধীনতার বিপ্লবীরা বলছে ক্যাম্পাসে কোন রাজনীতি চলবে না, বিপ্লবীরা যখন নতুন দল করে সংসদ নির্বাচন করবে, তখন তাদের ছাত্র সংগঠন গুলো ক্যাম্পাসে থাকবে, এমতাবস্থায় বাকি রাজনৈতিক দল গুলো বসে থাকবে কি? তারাও ছাত্র সংগঠন খুলবে, লাগবে ভেজাল।
ফাইনালি সকল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মাঠে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে।
তাইলে করনীয় কিঃ
ছাত্ররা প্রমান করেছে যে ছাত্রদের হস্তক্ষেপ ছাড়া বাংলাদেশের কোন জাতীয় সমস্যা সহজে সমাধান যোগ্য নয়,হোক এটা ২০২৪ আর হোক ৪৭ কিংবা ৭১। অতএব তাদেরও রাজনীতি করা উচিত, তারা রাজনীতি না করলে দেশের বিপদের সময় উদ্ধার কর্তা হিসাবে কেউ থাকবে না।
এমতাবস্থায় করনীয় নিম্নরূপঃ
১। সকল স্কুল ও কলেজের ছাত্রদের সমন্বয়ে তৈরী হবে এই সংগঠন এবং এই সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হবে বাংলাদেশের সংবিধানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যর সাথে মিল রেখে, প্রয়োজনে সংবিধান নতুন ভাবে প্রনয়ন করতে হবে।
২। যারা স্কুলে ভার্তি হবে তারাই এই দলের সদস্য হিসাবে গন্য হবে, ছাত্রত্ব যেদিন শেষ হবে সেদিন হতে অটোমেটিক ভাবে সদস্য পদ শেষ হয়ে যাবে।
৩। এদলের কোন সদস্য সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারনবে না, আবার ছাত্ররাও কোন নির্দ্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ড ক্যাম্পাসে প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠিত করার কাজে নিজেরা নিয়োজিত হতে পারবে না।
৪। সকল ছাত্ররা ছাত্রত্ব শেষ করার পর যে কোন রাজনৈতিক দলে স্বাধীন ভাবে যোগ দিতে পারবে।
৫। ছাত্রদের কাজই হবে দেশ,জাতি ও দেশের মানুষের স্বার্থে সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখা, যখনই দেশের কোন স্বার্থে আঘাত আসবে তখনই এই ছাত্ররা প্রতিহত করার জন্য সম্মিলিত ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়বে, এতে করে কোন ক্ষমতাসীন দেশ বিরোধী কাজ করা হতে নিজেকে বিরত রাখবে ছাত্রদের ভয়ে।
৬।এভাবে চলতে থাকলে দেশে যোগ্য রাজনৈতিক নেতা তৈরী হবে এবং পরবর্তীতে কোন রাজনৈতিক দলে যখন কাজ করবে তখন দেশ প্রেম ও দক্ষতা দিয়ে দেশ পরিচালনায় নিয়োজিত থাকবে, এতে করে কখনোই আর এদেশে ফ্যাসিস্ট জন্ম নেবে না।
৭। দলের সবগুলো কমিটির নেতৃত্বে থাকবে স্ব স্ব ক্যাম্পাসের মেধাবী ছাত্ররা।
বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক দলের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট কি হতে পারেঃ
১। জুলাই বিপ্লবের প্রেরনাই হবে মূল প্রেরনা।
২। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনই হবে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট।
৩। ভারতীয় সম্রাজ্যবাদের বিরোধীতাই হবে মূল মন্ত্র।
৪। যেকোনো বৈদেশিক হস্তক্ষেপ বরদাশত না করাই হবে আদর্শিক শক্তির মূল।
তাহলেই আশা করি নতুন দলটি বাংলাদেশের আশির্বাদ হয়ে উঠবে।
ডা.বশির আহাম্মদ, লেখক, চিকিৎসক, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ