expr:class='"loading" + data:blog.mobileClass'>

Wikipedia

সার্চ ফলাফল

বুধবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২৫

গনতন্ত্র ও ইসলামের সংঘর্ষ

 "গনতন্ত্র ও ইসলামের সংঘর্ষ "

ইসলাম ও গনতন্ত্রের পার্থক্য

গণতন্ত্র বলতে কোনো জাতিরাষ্ট্রের (অথবা কোনোও সংগঠনের) এমন একটি শাসনব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে নীতিনির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক বা সদস্যের সমান ভোটাধিকার থাকে। ইংরেজি 'Democracy' শব্দটি গ্রিক শব্দ Demo Kratia থেকে উদ্ভূত হয়েছে যা গ্রিক শব্দ 'Demos' এবং 'Kratia' শব্দ দুটির সমন্বয়ে সৃষ্ট। 'Demos'শব্দের অর্থ হল 'জনগণ' এবং 'Kratia'শব্দের অর্থ হল 'শাসন'। গণতন্ত্রে আইন প্রস্তাবনা, প্রণয়ন ও তৈরীর ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের অংশগ্রহণের সমান সু্যোগ রয়েছে, যা সরাসরি বা নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে হয়ে থাকে। "গণতন্ত্র" পরিভাষাটি সাধারণভাবে একটি রাজনৈতিক রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হলেও অন্যান্য সংস্থা বা সংগঠনের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য হতে পারে, যেমন বিশ্ববিদ্যালয়, শ্রমিক ইউনিয়ন, রাষ্ট্র-মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি।


গনতন্ত্রের উৎপত্তি:

বাংলা "গণতন্ত্র" পরিভাষাটি ইংরেজি ডেমোক্রেসি (Democracy) থেকে এসেছে। এই ইংরেজি শব্দটি আবার এসেছে গ্রিক শব্দ δημοκρατία (দেমোক্রাতিয়া) থেকে, যার অর্থ "জনগণের শাসন" শব্দটির দুইটি মূল হচ্ছে δῆμος (দেমোস) "জনগণ" ও κράτος (ক্রাতোস) "ক্ষমতা" থেকে। খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম শতকে অ্যাথেন্স ও অন্যান্য গ্রিক নগররাষ্ট্রে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে বোঝাতে শব্দটির প্রথম ব্যবহার হয়। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ক্লিসথেনিসের নতুন ধরনের সরকার চালু হয় এবং সেই সঙ্গে বিশ্বের প্রথম গণতন্ত্র সৃষ্টি হয় গ্রিসের ছোট একটি শহর-রাষ্ট্র এথেন্সে। এই শহর-রাষ্ট্রটি ছিলো এথেন্স শহর এবং তার আশপাশের গ্রামাঞ্চল নিয়ে গঠিত। রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিচালনার জন্য বিভিন্ন উপজাতির মধ্য থেকে নেতাদের বেছে নেয়ার যে সনাতনী রীতি চালু ছিলো, ক্লিসথেনিস তার অবসান ঘটান। তার বদলে তিনি মানুষের নতুন জোট তৈরি করেন এবং প্রতিটি জোটকে ডিময় (Demoi) অথবা প্যারিশ (Parish)- এ বিভক্ত করেন। প্রতিটি মুক্ত নাগরিককে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়ে শহর-রাষ্ট্রের সরকার পরিচালনায় সরাসরি অংশগ্রহণের অধিকার দেয়া হয়। সাধারণভাবে এই ঘটনাকেই গণতন্ত্রের প্রথম উন্মেষরূপে গণ্য করা হয় যার পরে নাম হয় ডেমক্রেশিয়া (Democratia) যার অর্থ হচ্ছে জনগণের (demos) শক্তি (Kratos)।


গণতন্ত্র  ইসলাম : সংঘর্ষের দিকসমূহ

গণতন্ত্র একটি মানব রচিত মতবাদ। গণ মানুষের ইচ্ছা বা আইন অনুসারে পরিচালিত হয় বলেই এর রাষ্ট্র বা শাসন ব্যবস্থাকে গণতন্ত্র বলা হয়। অন্যদিকে ইসলাম আল্লাহর মনোনীত জীবন ব্যবস্থা। আল্লাহর খলীফা হিসাবে এবং তাঁর ইচ্ছানুসারে পরিচালিত হয় বলে ইসলামের শাসন ব্যবস্থাকে খিলাফত বলা হয়। প্রফেসর ডঃ আসাদুল্লাহ আল-গালিব বলেন, ‘রাজতন্ত্র  গণতন্ত্র দু’টিই মানব রচিত মতবাদ। পক্ষান্তরে ‘খেলাফত’ আল্লাহর অনুমোদিত শাসন ব্যবস্থার নাম’। নিম্নে ইসলাম  গণতন্ত্রের পারস্পরিক সংঘর্ষের দিকগুলো উল্লেখ করা হ’ল।

(১) গণতন্ত্রে জনগণের সার্বভৌমত্ব মানা হয়, যা স্পষ্ট শির্ক। পক্ষান্তরে ইসলামের খিলাফতি রাষ্ট্রে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মানা হয়, যা তাহীদের অন্তর্ভুক্ত।

(২) গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাষ্ট্র পরিচালনার অর্থ হ’ল মানুষের প্রতিনিধি হিসাবে রাষ্ট্র পরিচালনা। পক্ষান্তরে খিলাফতের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা অর্থ হ’ল আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে রাষ্ট্র পরিচালনা।

(৩) গণতন্ত্রের মূল দর্শন হ’ল মানুষকে সন্তুষ্ট করা যেভাবেই হোক। পক্ষান্তরে ইসলামী খিলাফতের মূল উদ্দেশ্য হ’ল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আল্লাহর নির্ধারিত বিধান অনুসারে মানুষের সেবা করা।

(৪) গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ধর্ম নিছক একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার। ব্যক্তিগতভাবে এতে ধর্মীয় বিশ্বাস  আচার অনুষ্ঠান পালনের স্বাধীনতা স্বীকৃত। কিন্তু সমাজ, রাষ্ট্র  অর্থনীতিতে ধর্মের কোন প্রবেশাধিকার স্বীকার করা হয় না। এর রাজনীতি ধর্ম-বিবর্জিত। পক্ষান্তরে ইসলামী খিলাফতে ধর্ম শুধু ব্যক্তিগত জীবনে নয় মানুষের সার্বিক জীবনে ধর্মের বিধি-বিধান বাস্তবায়ন করে। রাষ্ট্রের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ধর্মের নীতিমালা অনুসরণ করে চলে।

(৫) গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণ যেহেতু সকল ক্ষমতার মালিক, তাই ভাল-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ, এমনকি বৈধ-অবৈধ ইত্যাদি যাবতীয় বিষয় সাব্যস্ত করার অধিকার জনগণের। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে যেকোন ব্যক্তি যেমন রাষ্ট্র প্রধান হ’তে পারে, তেমনি ইচ্ছামত যেকোন আইন রচনা করতে পারে। এজন্য 'Majority must be granted' হ’ল গণতন্ত্রের চূড়ান্ত কথা। পক্ষান্তরে ইসলামী রাষ্ট্রে আল্লাহকেই যেহেতু সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মানা হয় সেহেতু ভাল-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ, বৈধ-অবৈধ ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ে আল্লাহর নির্দেশনা অনুসারে আইন প্রনয়ণ  বাস্তবায়ন করা হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতানুসরণ করার নীতিকে ইসলাম এড়িয়ে চলে। কেননা আল্লাহ অধিকাংশের মতানুসরণকে নিরুৎসাহিত করেছেন’ (আন‘আম ১১৬)

(৬) গণতন্ত্রে রাজনীতি চলে বহুদলীয় পদ্ধতিতে। একদল সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র বা সরকার পরিচালনা করে। ভোটে পরাজিত দল বা দল সমূহ বিরোধী দলে থেকে সরকারের সমালোচনা করে। পক্ষান্তরে ইসলামী রাষ্ট্রে বহু দল, মত  ধর্মের উপস্থিতি থাকলে রাষ্ট্র বা সরকার ব্যবস্থায় বহুদলীয় ব্যবস্থাপনা স্বীকৃত নয়। কেননা তাতে পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবনা থাকে। ইসলামী রাষ্ট্রের খলীফা উম্মাহর দায়িত্বশীল বা খাদেম হিসাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। তিনি বিশেষ কোন দলের লোক হন না।

(৭) গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্র প্রধান বা শাসক  একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকেন। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সার্বিক যোগ্যতা  সক্ষমতা থাকা সত্ত্বে তাঁকে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হয়। পক্ষান্তরে ইসলামী খিলাফতে রাষ্ট্রপ্রধান যতদিন যোগ্যতা  সক্ষমতার সাথে শাসনকার্য পরিচালনা করতে পারবেন ততদিন ঐ দায়িত্বে বহাল থাকবেন। যোগ্যতা হারালে বা অক্ষম প্রমাণিত হ’লে ঐ মুহূর্তেই বিদায় নিবেন বা বিদায় করা হবে। তাঁকে শাসন ক্ষমতায় বসানো বা প্রয়োজনে বিদায় করা শরী‘আতে আবশ্যক।

(৮) গণতন্ত্রে নেতাকে পদপ্রার্থী হ’তে হয়। নিজের যোগ্যতা  গুণাবলীর ঘোষণা দিয়ে তাকে পদের উপযুক্ত প্রমাণ দিতে হয়। অপরপক্ষে ইসলামে কেউ নেতৃত্ব বা পদ চাইলেই তিনি নেতৃত্ব দানের অযোগ্য বিবেচিত হন, তাকে দায়িত্ব দেয়া হয় না।

(৯) গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের শূরা বা পরামর্শ পদ্ধতি এবং ইসলামী রাষ্ট্রের শূরা বা পরামর্শ পদ্ধতি এক রকম নয়। অথচ এই শূরা ব্যবস্থাকেই গণতন্ত্রের সাথে ইসলামের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার সাদৃশ্য প্রমাণের জন্য সবচেয়ে বেশী যুক্তি উপস্থাপন করা হয়।

গণতান্ত্রিক পার্লামেন্টের শূরা সদস্যদের যোগ্যতা  মান এবং তাদের কার্যপ্রণালী আর ইসলামী রাষ্ট্রের শূরা সদস্যদের যোগ্যতা  মান এবং কার্যপ্রণালীর প্রতি লক্ষ্য করলেই উভয় ব্যবস্থার মধ্যে আসমান-যমীন ব্যবধান পরিলক্ষিত হবে।

গণতন্ত্রে জ্ঞানী-মূর্খ, বোকা-বুদ্ধিমান, সৎ-অসৎ সব ধরনের মানুষের শূরা সদস্য হয়ার সুযোগ রয়েছে এবং সব ধরনের মানুষের মতকে গ্রহণ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এক্ষেত্রে মুর্খ বা বোকার দল বেশী হয়ার কারণে সিদ্ধান্তটি ভুল হোক বা সঠিক হোক।

পক্ষান্তরে উম্মতের বাছাইকৃত সেরা জ্ঞানী-গুণী  বিচক্ষণ ব্যক্তিদের নিয়ে ইসলামী রাষ্ট্রের মজলিসে শূরা গঠিত হয় এবং তাঁদের পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্ত হয়। এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ই চূড়ান্ত নয়। কখনো সংখ্যাগরিষ্ঠের রায় বা মত গ্রহণ করা হ’তে পারে, কখনো সংখ্যা লঘিষ্ঠের মত গ্রহণ করা হ’তে পারে, যদি সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের চাইতে সংখ্যা লঘিষ্ঠের মতামত বেশী কল্যাণকর মনে হয়। এমনকি ১০০ জন শূরা সদস্যদের মধ্যে ১ জন সদস্যের পরামর্শ বা মত যদি দলীল-প্রমাণ  বিবেক-বিবেচনার অনুকূলে হয়, তাহ’লে সেটাই গ্রহণ করা হয়।

আবার আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক পার্লামেন্টের সদস্যগণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে যেকোন আইন তৈরী করতে পারে। তারা হালালকে হারাম, হারামকে হালাল, ভালোকে মন্দ, মন্দকে ভালো বলে বিল পাশ করতে পারে। এক্ষেত্রে তারা স্বাধীন। পক্ষান্তরে ইসলামী রাষ্ট্রের মজলিসে শূরায় এরকম সিদ্ধান্ত নেয়ার কোন সুযোগ নেই। কুরআন  হাদীছে বর্ণিত বিধানের বিষয়ে পুণর্বিবেচনা বা মতামত প্রদানের কোন সুযোগ নেই। পরামর্শ করা হয় নতুন উদ্ভূত কোন সমস্যা বা বিষয় নিয়ে, যে বিষয়ে কুরআন-হাদীছের বক্তব্য স্পষ্ট নয়।


প্রচলিত গনতন্ত্র কেন জাহেলিয়াতঃ

গণতান্ত্রিক পার্লামেন্টের সদস্য হয়ার জন্য ন্যায়-নিষ্ঠতা, জ্ঞান-গরীমা, সততা, আল্লাহভীরুতার কোনই শর্ত নেই। যেকোন নাস্তিক, কাফির, ফাসিক-ফাজির, নির্বোধ-জাহেল ব্যক্তি পার্লামেন্ট সদস্য হ’তে পারে টাকার জোরে বা দলীয় আনুগত্য বিবেচনায়। ফলে এসব সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে জাহেলী আইন-কানুন প্রণয়ন করে।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোটার হয়ার জন্য সততা, ন্যায়পরায়ণতা, জ্ঞানী-গুণী হয়ার শর্তারোপ করা হয় না। ফলে সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ জাহেল লোকদের ভোটে শরী‘আত সম্পর্কে অজ্ঞরাই সাধারণত নেতা নির্বাচিত হয়। এজন্য গণতন্ত্রকে অনেক মনিষী মূর্খদের শাসন বলেছেন।

১. রাষ্ট্রবিজ্ঞানী  দার্শনিক প্লেটো গণতন্ত্র সম্পর্কে বলেছেন, ‘বুদ্ধিমানের চেয়ে মূর্খ  অবিবেচকের সংখ্যা অধিক। সুতরাং সংখ্যাধিক্যের শাসন বলে এটা প্রকারান্তরে মূর্খের শাসন।

২. জন লেকি বলেন, ‘গণতন্ত্র দারিদ্র্য পীড়িত, অজ্ঞতম  সর্বাপেক্ষা অক্ষমদের শাসন ব্যবস্থা; কারণ তারাই রাষ্ট্রে সংখ্যায় সর্বাপেক্ষা অধিক।

৩. মিশরীয় ইসলামিক স্কলার মুহাম্মাদ কুতুব বলেন, আল্লাহর দাঁড়িপাল্লায় বিধান হ’ল দু’টি। একটি হ’ল আল্লাহর বিধান অপরটি জাহেলিয়াতের বিধান (মায়েদাহ ৫০)। গণতন্ত্র আল্লাহর বিধান নয়। সুতরাং তা আল্লাহর মাপকাঠিতে জাহেলিয়াতের বিধান।

৪.শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন, ‘ইসলাম  গণতন্ত্র দু’টি বিপরীতমূখী ব্যবস্থা। যা কখনো এক হবার নয়। একটি আল্লাহর উপর ঈমান  আল্লাহ নির্দেশিত পন্থায় জীবন পরিচালনা, অপরটি তাগূতের (আল্লাহ বিরোধী অনুশাসন) প্রতি ঈমান  তদনুযায়ী জীবন পরিচালনার উপর নির্ভরশীল’।

৫. আবু কাতাদা মর বিন মাহমূদ বলেন, ‘যেসব লোক ইসলামকে গণতন্ত্রের সাথে এক করে দেখতে চায়, তাদের প্রচেষ্টা যিন্দীকদের (যারা মুখে ইসলাম প্রকাশ করে অন্তরে কুফুরী গোপন করে) মত, যারা আল্লাহর দ্বীনকে মানুষের প্রবৃত্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য পরিবর্তন করে ফেলে। ... ইসলাম জনগণকে বিধানগত ক্ষেত্রে পসন্দ-অপসন্দের স্বাধীনতা দেয়নি; যেহেতু জনগণের জন্য ইসলামী বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হয়া এবং শাসককে মুসলিম হয়া আবশ্যকীয়। অপরদিকে গণতন্ত্র জনগণকে তাদের উপর প্রযোজ্য বিধি-বিধান প্রণয়নে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। এটাই গণতন্ত্রের মৌলিক তত্ত্ব, যা সম্পূর্ণ ইসলাম বিনষ্টকারী’।

৬. ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব বলেন, ‘বর্তমান গণতান্ত্রিক বিশ্বের সর্বত্র সামাজিক অশান্তির অন্যতম প্রধান কারণ হ’ল প্রচলিত এই নেতৃত্ব নির্বাচন ব্যবস্থা। কেন্দ্রে  স্থানীয় সংস্থা সমূহের সর্বত্র এই নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু হয়ায় সর্বত্র নেতৃত্বের লড়াই, পারস্পরিক হিংসা-হানাহানি এবং সামাজিক অশান্তি  অস্থিতিশীলতা তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপ্তি লাভ করেছে’।

৭. মালানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) বলেন, ‘মোটকথা ইসলামের মধ্যে গণতান্ত্রিক শাসন নামে কোন কিছু নেই। এই নব আবিষ্কৃত তথাকথিত গণতন্ত্র শুধু একটি বানানো প্রতারণার বস্ত্ত। বিশেষ করে এমন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যা মুসলিম এবং কাফের শাসকদের সমন্বয়ে গঠিত, অনৈসলামিক রাষ্ট্র ছাড়া আর কী হবে?


গনতন্ত্র আমদের জন্য কেন অভিশাপঃ

১। গনতন্ত্র আমাদেরকে ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে দিয়েছে উৎশৃংখল আর উম্নমাদনার স্বাধীনতা।

২।সুস্থ ও সুপরিকল্পিত ধর্মীয় জীবন কেড়ে নিয়েঋে আর দিয়েছে যেমন খুশি তেমন সাজ এর মত পাগলামীর স্বাধীনতা।

৩। ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা করার মাধ্যমে সমাজের প্রত্যেকটি স্তরে অনৈতিকতা, বেহায়াপনা, জেনা ও বেপর্দাকে অবাদে প্রবেশের পথ উন্মূক্ত করেছে।

৪।গনতন্ত্র নারী-পুরুষের অবাদ মেলামেশার স্বাধীনতার নামে জেনা ও ব্যবিচারের পথ সুগম করেছে।

৫।এই জঘন্য গনতন্ত্র পরিবার ব্যবস্থাকে ধ্বংশ করে লিভ টুগেদার নামক জেনাকে বৈধতা দিয়েছে।

৬। গনতন্ত্র বহু দেশে যৌন স্বাধীনতার নামে সমকামীতা, বেশ্যাবৃত্তি ও বহুগামীতাকে বৈধতা দিয়েছে।

৭। গনতন্ত্র বহু দেশে যৌন ব্যবসা নামক জেনাকে বৈধতা  দিয়ে জাতীয় আয়ের উৎস বানিয়েছে।

৮। গনতন্ত্রের ব্যক্তিগত ও যৌন স্বাধীনতার সুযোগে সিঙ্গেল মাদার নামক কিশোরী মাতা ও পিতৃ পরিচয়হীন শিশুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

৯।অবাধ স্বাধীনতার নামে আমাদের ধর্মহী, পাপীষ্ট ও নৈতিকতা বিবর্জিত  জাতিতে পরিনত করেছে এই গনতন্ত্র।

১০। গনতন্ত্রের দোহাই দিয়ে বহু দেশে আলেম থাকে জেলের তালায় আর বেশ্যা থাকে রাজ প্রহরায়।

১১) গণতন্ত্রে জনগণের সার্বভৌমত্ব মানা হয়, যা স্পষ্ট শির্ক। পক্ষান্তরে ইসলামের খিলাফতি রাষ্ট্রে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মানা হয়, যা তাহীদের অন্তর্ভুক্ত।

(১২) গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাষ্ট্র পরিচালনার অর্থ হ’ল মানুষের প্রতিনিধি হিসাবে রাষ্ট্র পরিচালনা। পক্ষান্তরে খিলাফতের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা অর্থ হ’ল আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে রাষ্ট্র পরিচালনা।

(১৩) গণতন্ত্রের মূল দর্শন হ’ল মানুষকে সন্তুষ্ট করা যেভাবেই হোক। পক্ষান্তরে ইসলামী খিলাফতের মূল উদ্দেশ্য হ’ল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ।

(১৪) গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ধর্ম নিছক একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার। ব্যক্তিগতভাবে এতে ধর্মীয় বিশ্বাস  আচার অনুষ্ঠান পালনের স্বাধীনতা স্বীকৃত। কিন্তু সমাজ, রাষ্ট্র  অর্থনীতিতে ধর্মের কোন প্রবেশাধিকার স্বীকার করা হয় না। পক্ষান্তরে ইসলামী খিলাফতে ধর্ম শুধু ব্যক্তিগত জীবনে নয় মানুষের সার্বিক জীবনে ধর্মের বিধি-বিধান বাস্তবায়ন করে।

(১৫) গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণ যেহেতু সকল ক্ষমতার মালিক, তাই ভাল-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ, এমনকি বৈধ-অবৈধ ইত্যাদি যাবতীয় বিষয় সাব্যস্ত করার অধিকার জনগণের। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে যেকোন ব্যক্তি যেমন রাষ্ট্র প্রধান হ’তে পারে, তেমনি ইচ্ছামত যেকোন আইন রচনা করতে পারে। এজন্য 'Majority must be granted' হ’ল গণতন্ত্রের চূড়ান্ত কথা। পক্ষান্তরে ইসলামী রাষ্ট্রে আল্লাহকেই যেহেতু সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মানা হয় সেহেতু ভাল-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ, বৈধ-অবৈধ ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ে আল্লাহর নির্দেশনা অনুসারে আইন প্রনয়ণ  বাস্তবায়ন করা হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতানুসরণ করার নীতিকে ইসলাম এড়িয়ে চলে। 

(১৬) গণতন্ত্রে রাজনীতি চলে বহুদলীয় পদ্ধতিতে। একদল সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র বা সরকার পরিচালনা করে। ভোটে পরাজিত দল বা দল সমূহ বিরোধী দলে থেকে সরকারের সমালোচনা করে। পক্ষান্তরে ইসলামী রাষ্ট্রে বহু দল, মত  ধর্মের উপস্থিতি থাকলে রাষ্ট্র বা সরকার ব্যবস্থায় বহুদলীয় ব্যবস্থাপনা স্বীকৃত নয়। কেননা তাতে পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবনা থাকে। ইসলামী রাষ্ট্রের খলীফা উম্মাহর দায়িত্বশীল বা খাদেম হিসাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। 


১৭।এসব গণতন্ত্রে স্বাধীনতার দাবীদারদের নিকটে স্বাধীনতা কতগুলো নিয়ম-কানুন দ্বারা শৃঙ্খলিত; যেমন-
১- আইন: 
কোন মানুষের এ অধিকার নেই যে, সে রাস্তাতে সাধারণ চলাচলের বিপরীত দিকে চলবে বা গাড়ী চালাবে। অথবা লাইসেন্স ছাড়া কোন দোকান-পাট খুলবে। যদি সে বলে আমি স্বাধীন; কেউ তার দিকে ভ্রুক্ষেপ করবে না।

২- সামাজিক প্রথা: উদাহরণতঃ
 কোন নারী সাগর যাপনের পোশাক পরে কোন মৃতব্যক্তির শোকাহত বাড়ীতে যেতে পারে না! যদি বলে আমি স্বাধীন, মানুষ তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে, তাড়িয়ে দিবে। কারণ এটি প্রথার বিপরীত।

৩- সাধারণ রুচিবোধ: উদাহরণতঃ কোন ব্যক্তি মানুষের সামনে বায়ু ত্যাগ করতে পারে না! এমনকি ঢেকুর তুলতে পারে না। যদি সে বলে, আমি স্বাধীন, তাহলে মানুষ তাকে হেয় প্রতিপন্ন করে।

১৮।কিছু উদাহরন:
উদাহরন-১,
ধরেন একটা গ্রামে ১০০ জন বাসিন্দা। ৬০ জন খারাপ, ৪০ জন ভালো। গ্রামপ্রধান নির্বাচনে একজন ভালো ব্যক্তি  একজন খারাপ ব্যক্তি নির্বাচনে নামলেন। কে জিতবে? খারাপ ব্যক্তিই জিতে যাবে। আর ভালরা হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অপশাসনের শিকার!
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ন্যায় বনাম অন্যায়, সুশাসন বনাম দুঃশাসন, সুনীতি বনাম দুর্নীতির কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না, প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় জনসমর্থন বনাম জনসমর্থনের। একারণেই গণতন্ত্র একটা দেশের জন্য সুফল বয়ে আনেনা যতদিন না একটা দেশের জনগণের মনমানসিকতা, চিন্তাভাবনা একটা ন্যুনতম স্ট্যান্ডার্ড অতিক্রম করে।
সবশেষে একটা সত্য উদাহরণ দিচ্ছি, আমার চেনাজানা একটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনে একজন সৎ লোক(তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা) প্রতিবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, কিন্তু সবথেকে কম ভোট পায়! কারণ মানুষ মনে করে যেহেতু তিনি সৎ, তাই চেয়ারম্যান হয়ার যোগ্য নন! তিনি নাকি ইউনিয়ন চালাতে পারবেন না!

উদাহরণ-২:
সাহিত্যক হুমায়ুন আহমেদ স্যর একবার লিখেছেন "আমি ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমার একটা নাগরিকত্ব সনদ দরকার। যিনি দেবেন তিনি একজন য়ার্ড কাউন্সিলর, অনেক মামলার আসামি। অথচ তিনি গনতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত কাউন্সিলর। এই হলো গনতন্ত্রের বড় দোষ। এমনি বিজ্ঞজনেরা বলেন "গনতন্ত্র হল মূর্খের শাসন" [ — এরিস্টটল ] । কারন সমাজে মূর্খের সংখ্যা বেশি । গনতান্ত্রিক ব্যবস্তায়-ই হারুন মোল্লার কাছে আয়ামি লীগ নেতা ডঃ কামাল হেরে যান।


১৯।গণতন্ত্র কেন শিরক, কুফরী?

গণতন্ত্রের মূলনীতিসমূহ সুস্পষ্টভাবে শিরক এবং কুফরী হিসাবে প্রতীয়মান হয়। চলুন দেখি আল কোরআন কি বলেঃ

(১) সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে : 
গণতন্ত্রের মূল কথা জনগণের সার্বভৌমত্ব। অর্থাৎ সকল ক্ষমতার মালিক সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ। একথা নিঃসন্দেহে শিরক।
 কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَلَمْ يَكُنْ لَهُ شَرِيْكٌ فِي الْمُلْكِ ‘রাজত্বে তাঁর কোন শরীক নেই’ (বনী ইসরাঈল ১৭/১১১)।
 
তিনি আরো বলেন, قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَنْ تَشَاءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَاءُ ‘তুমি বল, হে আল্লাহ, রাজত্বের মালিক, আপনি যাকে চান রাজত্ব দান করেন, আর যার থেকে চান রাজত্ব কেড়ে নেন’ (আলে ইমরান ৩/২৬)। 

অন্যত্র তিনি বলেন, تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ‘বরকতময় তিনি যার হাতে সর্বময় কর্তৃত্ব। আর তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান’ (মূলক ৬৭/১)।

মহান আল্লাহ আরো বলেন,الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا وَلَمْ يَكُنْ ‘যার হাতে রয়েছে নভোমন্ডল  ভূমন্ডলের রাজত্ব। যিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেন না এবং তাঁর রাজত্বে কোন শরীক নেই’ (ফুরক্বান ২৫/২)।

আল্লাহর বাণী থেকে বুঝা গেল আল্লাহই সকল ক্ষমতার মালিক। মানুষকে ক্ষমতার মালিক বা উৎস বানানো তাঁর সাথে শরীক স্থাপনের শামিল, যা স্পষ্ট শিরক।

(২) আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে : 
গণতন্ত্রে আইন-বিধান রচনার চূড়ান্ত ক্ষমতা অর্পণ করা হয় পার্লামেন্ট সদস্যদের উপর। সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য যেটা বলবে, যে বিষয়ে সম্মত হবে সেটাই হবে দেশের সর্বোচ্চ আইন, যার বিরোধিতা করা আইনত অপরাধ। গণতন্ত্রে সংসদ সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে কুরআন-সুন্নাহর উপরে স্থান দেয়া হয়। 

সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তারা কুরআন-সুন্নাহর বিরোধী আইন তৈরী করতে পারে, এমনকি আল্লাহর আইনকে বাতিল করতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়- পতিতাবৃত্তির লাইসেন্স দেয়া, মদের লাইসেন্স দেয়া, সূদের বৈধতা দেয়া, ১৮ বছরের পূর্বে বিয়ে নিষিদ্ধ করা, ১৬ বছর বয়স পারস্পরিক সম্মতিতে যেনা করলে তার বৈধতা দেয়া, স্বামীর অনুমতিতে স্ত্রী অন্য পুরুষের সাথে ব্যভিচার করলে তার বৈধতা দেয়া, যাত্রা, সিনেমাহলে প্রকাশ্যে বেহায়াপনা  অশ্লীলতার চর্চাকে অনুমোদন দেয়া ইত্যাদি। এ ধরনের নীতিমালা নিঃসন্দেহে আল্লাহর বরুবিয়্যাতের (ক্ষমতা  কর্তৃত্বের) ক্ষেত্রে শিরক এবং স্পষ্ট কুফরী। 

কেননা আল্লাহ বলেন, اَلَا لَهُُ الْخَلْقُ وَالْاَمْرُ ‘শুনে রাখ! সৃষ্টি যার হুকুম চলবে তার’ (আ‘রাফ ৭/৫৪)।
তিনি আরো বলেন,إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ- ‘আল্লাহ ব্যতীত কারু বিধান দেবার ক্ষমতা নেই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তাঁকে ব্যতীত তোমরা অন্য কারু ইবাদত করো না। এটাই সরল পথ। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না’ (ইউসুফ ১২/৪০)।v
তিনি আরো বলেন, وَاللهُ يَحْكُمُ لَا مُعَقِّبَ لِحُكْمِهِ وَهُوَ سَرِيعُ الْحِسَابِ ‘আল্লাহ নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশকে পিছনে নিক্ষেপ করার কেউ নেই। তিনি দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী’ (রা‘দ ১৩/৪১)।

(৩) বিরোধ মিমাংসার ক্ষেত্রে : 
গণতন্ত্রে যেকোন মতবিরোধ বা বিতর্কের চূড়ান্ত মিমাংসাকারী বানানো হয় সংবিধান  এর ধারা সমূহ এবং পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে। এটা একটা স্পষ্ট কুফরী। 
মহান আল্লাহ বলেন,فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا- ‘অতঃপর যদি কোন বিষয়ে তোমরা বিতন্ডা কর, তাহ’লে বিষয়টি আল্লাহ  রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দা। যদি তোমরা আল্লাহ  আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। এটাই কল্যাণকর  পরিণতির দিক দিয়ে সর্বোত্তম’ (নিসা ৪/৫৯)।

তিনি আরো বলেন,وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُبِينًا- ‘আল্লাহ  তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে ফায়ছালা দিলে কোন মুমিন পুরুষ বা নারীর সে বিষয়ে নিজস্ব কোন ফায়ছালা দেয়ার এখতিয়ার নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহ  তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে, সে ব্যক্তি স্পষ্ট ভ্রান্তিতে পতিত হবে’ (আহযাব ৩৩/৩৬)।


২০।গণতন্ত্র কেন জাহেলিয়াত?

গণতান্ত্রিক পার্লামেন্টের সদস্য হয়ার জন্য ন্যায়-নিষ্ঠতা, জ্ঞান-গরীমা, সততা, আল্লাহভীরুতার কোনই শর্ত নেই। যেকোন নাস্তিক, কাফির, ফাসিক-ফাজির, নির্বোধ-জাহেল ব্যক্তি পার্লামেন্ট সদস্য হ’তে পারে টাকার জোরে বা দলীয় আনুগত্য বিবেচনায়। ফলে এসব সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে জাহেলী আইন-কানূন প্রণয়ন করে।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোটার হয়ার জন্য সততা, ন্যায়পরায়ণতা, জ্ঞানী-গুণী হয়ার শর্তারোপ করা হয় না। ফলে সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ জাহেল লোকদের ভোটে শরী‘আত সম্পর্কে অজ্ঞরাই সাধারণত নেতা নির্বাচিত হয়। এজন্য গণতন্ত্রকে অনেক মনীষী মূর্খদের শাসন বলেছেন।

১. রাষ্ট্রবিজ্ঞানী  দার্শনিক প্লেটো গণতন্ত্র সম্পর্কে বলেছেন, ‘বুদ্ধিমানের চেয়ে মূর্খ  অবিবেচকের সংখ্যা অধিক। সুতরাং সংখ্যাধিক্যের শাসন বলে এটা প্রকারান্তরে মূর্খের শাসন।

২. জন লেকি বলেন, ‘গণতন্ত্র দারিদ্র্য পীড়িত, অজ্ঞতম  সর্বাপেক্ষা অক্ষমদের শাসন ব্যবস্থা; কারণ তারাই রাষ্ট্রে সংখ্যায় সর্বাপেক্ষা অধিক।

৩. মিশরীয় ইসলামিক স্কলার মুহাম্মাদ কুতুব বলেন, আল্লাহর দাঁড়িপাল্লায় বিধান হ’ল দু’টি। একটি হ’ল আল্লাহর বিধান অপরটি জাহেলিয়াতের বিধান (মায়েদাহ আয়াতঃ ৫০)।

 গণতন্ত্র আল্লাহর বিধান নয়। সুতরাং তা আল্লাহর মাপকাঠিতে জাহেলিয়াতের বিধান।দেখুন ইসলামী দার্শনিকরা কি বলে শুনিঃ

(১) শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন, 
ইসলাম  গণতন্ত্র দু’টি বিপরীতমূখী ব্যবস্থা। যা কখনো এক হবার নয়। একটি আল্লাহর উপর ঈমান  আল্লাহ নির্দেশিত পন্থায় জীবন পরিচালনা, অপরটি তাগূতের (আল্লাহ বিরোধী অনুশাসন) প্রতি ঈমান  তদনুযায়ী জীবন পরিচালনার উপর নির্ভরশীল’।

(২) আবু কাতাদা মর বিন মাহমূদ বলেন,
 ‘যেসব লোক ইসলামকে গণতন্ত্রের সাথে এক করে দেখতে চায়, তাদের প্রচেষ্টা যিন্দীকদের (যারা মুখে ইসলাম প্রকাশ করে অন্তরে কুফুরী গোপন করে) মত, যারা আল্লাহর দ্বীনকে মানুষের প্রবৃত্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য পরিবর্তন করে ফেলে। ইসলাম জনগণকে বিধানগত ক্ষেত্রে পসন্দ-অপসন্দের স্বাধীনতা দেয়নি; যেহেতু জনগণের জন্য ইসলামী বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হয়া এবং শাসককে মুসলিম হয়া আবশ্যকীয়। অপরদিকে গণতন্ত্র জনগণকে তাদের উপর প্রযোজ্য বিধি-বিধান প্রণয়নে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। এটাই গণতন্ত্রের মৌলিক তত্ত্ব, যা সম্পূর্ণ ইসলাম বিনষ্টকারী’।

(৩) ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব বলেন,
 ‘বর্তমান গণতান্ত্রিক বিশ্বের সর্বত্র সামাজিক অশান্তির অন্যতম প্রধান কারণ হ’ল প্রচলিত এই নেতৃত্ব নির্বাচন ব্যবস্থা। কেন্দ্রে  স্থানীয় সংস্থা সমূহের সর্বত্র এই নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু হয়ায় সর্বত্র নেতৃত্বের লড়াই, পারস্পরিক হিংসা-হানাহানি এবং সামাজিক অশান্তি  অস্থিতিশীলতা তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপ্তি লাভ করেছে’।

(৪) মালানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) এর মত মানুষ বলেন,
 ‘মোটকথা ইসলামের মধ্যে গণতান্ত্রিক শাসন নামে কোন কিছু নেই। এই নব আবিষ্কৃত তথাকথিত গণতন্ত্র শুধু একটি বানানো প্রতারণার বস্তুত। বিশেষ করে এমন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যা মুসলিম এবং কাফের শাসকদের সমন্বয়ে গঠিত, অনৈসলামিক রাষ্ট্র ছাড়া আর কী বা হবে? 



একটা মুভির কাহিনী একটু বলি এ নিয়ে আলোচনা করার আগে৷ একজন বাবা যে তার সন্তানকে চোখের মণি করে রাখত! হঠাৎ সেই ছেলেটা তার স্কুলে বিল্ডিং ধ্বসে মারা যায়৷ তারপর? হ্যা অপর দশটা মুভির মতোই! তারপর সে বাবা হতাশ হলে সরাসরি প্রাইম মিনিস্টার এর ছেলেকে কিডনাপ করে৷ তারপর শুরু হয় খেলা৷ সেখান থেকে কিডনাপের জামিননামায় কোনো অর্থ টাকাকড়ি না চেয়ে সবাইকে দেখা করতে বলে, সাথে ই মন্ত্রীর সাথে তার সহনেতা, সেই স্কুলের ইঞ্জিনিয়ার, সেই স্কুলের ঠিকাদার৷ এবং ছেলের মাথায় গুলি দেখিয়ে তাদেরকে একান্তে নিয়ে কথা বলে  সেটা লাইভ সম্প্রচার করা হয় টিভিতে! সেখান থেকে ই স্কুলের সব বেরিয়ে আসে৷ ইন্জিনিয়ার বলে আমি নকশায় তো কোনো ভুল করি নি, তারপর ঠিকাদার, সে স্বীকার করে ন্যায় তৈরীতে সে প্রয়োজন এর চেয়ে কম জিনিসপত্র দিয়েছিল৷ কারণ হচ্ছে তাকে এধরণের কাজ পেতে উপরয়ালাদের কিছু দিতে হয়৷ তাই কিছু সে যদি না মারে তাহলে তার পুষাবে না৷ হ্যা তার কথা সঠিক৷ তারপর আসে সেই নেতার কাছে, যাকে টাকা দিয়ে এইসব কাজ পেতে হয়েছে৷ নেতা স্বীকার করে নেয় পার্টির জন্য তাকে কিছু মারতে হয়েছে৷ অবশেষে প্রাইম মিনিস্টার যিনি নিষ্পাপ শিশুর ন্যায় তাকে ধরা হয়৷ কারণ তার পার্টি টাকা খেয়েছে মানে সেই টাকা খেয়েছে৷ অবশেষে প্রাইম মিনিস্টার এর ভাষ্যমতে দাঁড়ায় পার্টি চালানোর জন্য কোটি কোটি টাকা দরকার৷ তাই তা করতেই হয়৷ [মুভিতে সরাসরি এটা ঘটেনি মাঝে অনেককিছু ছিল]

এবার আসি আমার কথায়। গনতন্ত্র একটি পুঁজিবাদী ব্যবস্থা৷ কেন জানেন? কারণ সেখানে কেউ চাইলেই একটা দল গঠন করে ফেলতে পারবে না৷ কারণ একটা দল মেইনটেইন করতে লোকজন দরকার৷ আর মানুষ কেন একটা দলকে অনুসরণ করবে? অবশ্যই তাদের তার পিছনে একটা স্বার্থ দরকার৷ তাই তাদেরকে প্রচুর টাকা দিতে হয়৷ আর এভাবেই লোকজন দেখে মানুষ নির্বাচন করে আবার অনেকসময় নির্বাচিত ছাড়াই ক্ষমতার দাপটে, টাকার দাপটে ক্ষমতায় থাকে৷

তো এত টাকা আসে কোত্থেকে?
দ্বিতীয় যেই সমস্যা সেটা হচ্ছে, ক্ষমতা বহাল রাখা! যেই দল একবার ক্ষমতা পায় সে অবশ্যই পাঁচবছর পরের ক্ষমতা পেতে চায়৷ তাই যেদিন থেকে ক্ষমতায় বসবে সেদিন থেকে তার চিন্তা থাকবে পরবর্তী ক্ষমতা তার দরকার৷ তাই সে বসেই অপর দলের উপর নানভাবে নির্যাতন করবেই তাদের দূর্বল করে দিতে৷ সাথে পাঁচবছর পরে তার ক্ষমতায় আসার জন্য টাকা দরকার! এগুলো কোথা থেকে আসবে৷ এগুলো তাকে সংগ্রহ করতে হবে৷ তাই দূর্নীতি ছাড়া গনতন্ত্র ব্যবস্থাই অচল!

গনতন্ত্র যেহেতু দলের তাই দল ভিত্তিক নির্বাচনে হয়তবা সেই দলের কেউ না কেউ অযোগ্য হয়া সত্বে নির্বাচিত হয়ে যায়৷ বিশেষ করে মন্ত্রী পরিষদের মন্ত্রী। যেহেতু মন্ত্রী নির্বাচন ক্ষমতাসীন দলের অধীনে তাই স্বাভাবিকভাবেই তাদের দলের পুরাতন  ক্ষমাতবান লোককে মন্ত্রীর দায়িত্বে বসাবে। আর এভাবেই অযোগ্যরা ক্ষমতায় আসে৷

আর একটা কথা বলি, একবার বাংলাদেশে ফিরে এসে দেখতে পাবেন, বাংলাদেশে রাজনীতি একটা পেশা৷ বাংলাদেশে আমি হাতে কলমে দেখাতে পারব , বাপ দাদার কিছু নাম নাই, সে কোনো চাকরী বা ব্যবসা করে না৷ শুধু রাজনীতি করে বাড়ি গাড়ি করতেসে। আমি শতভাগ নিশ্চায়তা দিতে পারি বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় একজন হলে এমন মানুষ আছে যে শুধু রাজনীতি করে জীবিকা নির্বাহ করে। যদি সংখ্যাটা একজন নয়! তবে আমি কোনো দলকে দোষারোপ করব না৷ কারণ এই মানুষগুলো আজকে হয়ত এক দলকে সাপোর্ট করে টাকা উপার্জন করছে কাল ক্ষমতা পরিবর্তন হলে তারা তাদের দল পরিবর্তন করে ফেলে৷
হ্যা এটাই গনতন্ত্রের সমস্য৷৷ আর দলকে ক্ষমতায় থাকতে এগুলো করতেই হবে৷ আর এই টাকা সাপ্লাই করার জন্য তাদের দূর্নীতি করা আবশ্যক৷

গনতন্ত্র দূর্নীতি ছাড়া অচল একটা ব্যবস্থা৷
গনতন্ত্রে নির্বাচিত সরকার দেশের জন্য যতটা না ভাবে তার চেয়ে শতগুণ বেশি ভাবে তার ক্ষমতা ঠিকিয়ে রাখার জন্য৷ এটা থাকে করতেই হবে৷
এরচেয়ে আমার মনে হয় যারা রাজা ছিল তারা তাদের দেশ  মানুষ নিয়ে ভাবত বেশি।

তাহলে আপনি বলতে পারেন গনতন্ত্র ছাড়া কীভাবে সরকার হবে তাহলে? এর বিকল্প কি হতে পারে?

না না আমি রাজার কথা বলব না৷ তবে কিছুটা তার মতোই৷ দেশের একজন প্রধান নির্বাচন হবেন তার যোগ্যতা বলে, সে কিছুটা রাজার মতোই থাকবে৷ তার ক্ষমতা শেষ হবে না এরকম একটা বিষয় থাকবে সে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী থাকবে৷ তারপর সে তার দেশের জন্য এমপি দেরকে নিজে নির্বাচিত করবে তাদের ক্ষমতা বলে৷ আর সে যে কাউকে যেকোনো সময় তাদের অপরাধের কারণে শাস্তি দিতে পারবে৷ আর তার ক্ষমতা যেহেতু বহাল তাই তার কাউকে শাস্তি দেয়া বা সরিয়ে ফেলাতে নিজের ক্ষমতা বহাল রাখার জন্য চিন্তা করতে হবে না৷ আর সে ছাড়া একটা গভর্নিং বডি থাকবে দেশটির৷ যারা তার সাথে দেশ পরিচালনা বিষয়ে সর্বোচ্চ মতামত দিতে পারবে৷  বিভিন্ন জিনিস নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে৷ তারা স্থায়ী থাকবে৷ আর যিনি প্রধান তাকে জনগণের সামবে জবাবদিহিতা করার জন্য একটা ব্যবস্থা থাকবে৷ যা নিয়ন্ত্রণ করবে ই গভর্নিং বডি৷ বিশেষভাবে সেই শাসক যদি কোনো কারণে ক্ষমতার অযোগ্য হয় তখন তাকে অপসরণে জনগণের মতামত  গভর্নিং বডির মতামতই কার্যকর হবে৷ আর গভর্নিং বডিতে থাকবে দেশরির সেনা সদস্যের প্রধান৷ যারা থাকবে নিজেরাই স্বায়িত্বশাসিত৷ তারা সবক্ষেত্রেই সরকারের আদেশ মানতে বাধ্য৷ তবে জনগনের কোনো ক্ষতি হয় সেরকম আদেশ প্রত্যাখ্যাননকরার ক্ষমতা  সাহস রাখতে পারে এমন সেনাবাহিনীর প্রধান৷ আর যেহেতু এক্ষেত্রে ক্ষমতার লোভ নেই তাই দূর্নীতি অনেকটাই কম হবে আগের চেয়ে৷ আর দূর্নীতি করলে জনগণের সামনে জবাবদিহির ব্যবস্থা তো থাকছেই৷ আর ভবিষ্যতে সরকার প্রধান ঠিক এভাবেই নির্বাচিত হবে৷ কোনো উত্তরাধিকারীী নয়৷ আর এরকম একটা ব্যবস্থায় স্বাধীন ক্ষমতার অনেকজন থাকায় একজন দূর্নীতি করার জন্য সবাইকে হাত করতে পারবে না৷ কারণ একটাই, কারোরেই ক্ষমতা হাড়ানোর ভয় নেই৷ কারণ এত সহজেঔ ক্ষমতাচ্যুত হয়া সম্ভব না৷

হ্যা এটাই খেলফতের আদলে গঠিত হয়া সরকার ব্যবস্থা৷ এক্ষেত্রে আমি উমর(রাঃ) শাসনামলের কিছু নিদর্শন দিয়ে উপরেরটি বর্ণনা করলাম৷ যার শাসনামলে স্বয়ং বাদশাহর ছেলেকে মদ্যপানের জন্য বাদশা কর্তৃক নির্বাচিত গভর্নর তার অনুমতি ছাড়াই, রাজ্যের শাসন ব্যবস্থার আইনানুযায়ী ৮০ বার বেত্রাঘাত করার সাহস পেয়েছে৷ উপরের শাসনব্যবস্থা হয়তবা সেরকম হয়নি৷ তবে আমাদের প্রতিটি দেশে দেশেই চাই সেরকম শাসনব্যবস্থা৷ পুঁজিবাদী গনতন্ত্রের অবসাননহোক৷ আজকে চীন রাশিয়া সেই পথে হাটছে! হাটছে তুরস্ক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে!

  দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে! এক.   শুনতে খারাপ শোনালেও এটা সত্য, রবীন্দ্রনাথের...