"হরিন মেরে বাঘ বাঁচাচ্ছেন না বাঘ মেরে হরিন?
গত ৫ আগষ্ট ২০২৪ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ১ দফা দাবীতে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতন ঘটিয়েছ । তার পর তারা বার বার বলছে তাদের আন্দোলন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এবং দেশে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। এই আন্দোলনের সাথে সাথে কিছু ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে, অনেকে তার বিরোধীতা করেছে।
ঘটনা গুলোর মধ্যে হলো,
১। গন ভবনে উত্তেজিত জনতার লুণ্ঠন।
২। শেখ হাসিনার জামা কাপড় নিয়ে নোংরামী।
৩। বিভিন্ন মন্ত্রী ও এমপিদের বাড়িতে হামলা।
৪। পুলিশ ফাঁড়ি গুলোতে আক্রমন।
৫। সংখ্যা লঘুর বাড়িতে হামলা।
৬। বঙ্গ বন্ধুর মোরাল ধ্বংশ।
৬। আদালতে বিগত সরকারের মন্ত্রী ও এমপিদের বাড়িতে হামলা ইত্যাদি।
সুশীল সমাজ বলেঃ
★আমরা কি এ জন্যই দেশ স্বাধীন করেছিলাম?
★ যা করার আদালত করবে, মানুষ কেনো আইন হাতে নিবে?
★ হাসিনা একজন নারী, তার কাপড়-চোপড় নিয়েও নোংরামী করতে হয়?
★আওয়ামিলীগের সবাই খারাপ?
★পুলিশের উপর আক্রমন কেনো?
★অন্তত বঙ্গ বন্ধুর মোরালটা ভাঙ্গা উচিত হয় নি।
উপরের কথা গুলো আমার না, সুশীল সমাজের মানুষের।
উপরের আফসোস গুলো যদিও সুশীল সমাজের এবং শোনতে অত্যন্ত মানবিক লাগে তথাপিও আমি এ গুলোর সাথে একমত না। কেননা আমি কোন সুশীল মানুষ না। আমি ন্যায় ও ইনসাফের পুজারী, কোনো সুশীল-কুশীলের পুজারী নই।
আসুন আমি কি বলি আপনারা শোনেন, ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন। সুশীল ও বুদ্ধিজীবীরা সুশীল কথা বললেও নীচের কথা গুলো কখনোই তাদেরকে বলতে শোনছি না, আর যে গুলো সুশীলের মুখে শোনছিনা সেগুলো নিয়েই এখানে কথা বলবো।
শুরুতেই একটা কথা বলে রাখি এই বুদ্ধিজীবীরা ১৯৭১ সালেও জানতো না দেশ স্বাধীন হবে বা স্বাধীনতার দিকে এগুচ্ছে, আর বর্তমান ২০২৪ জুলাই স্বাধীনতার কথা তো তারা কল্পনাও করতে পারে নি। এখানেই এই সুশীল সমাজের সাথে আমার ও আমাদের তফাত। আমরা কিছু করার পর ওরা জানবে।
আসুন সুশীলদের নিকট কিছু প্রশ্ন রাখি আমার মতো ন্যায় ও ইনসাফ বাদীদের পক্ষ হতে:
১। আপনারা সুশীলরা গন ভবনে হামলা ও লুটের কথা বলছেন ভালো কথা, কিন্তু গন ভবনে থাকা হাসিনা নামক নর*খাদ*ক যে জুলাই ও আগষ্টে আমাদের নিরপরাধ ছোট ভাইদের উপর গুলি চালিয়ে ৬৪ টি জেলার মাটি রক্তাক্ত করলো সে কথা কি ভুলে গেছেন? কথা বলার সময় তা মনে থাকে না? হাসিনার চেয়ে গন ভবনে ছাত্রদের অপরাধ কি বেশী ছিলো?
২।গন ভবনে রক্তাক্ত জনতা উত্তেজিত হয়ে সাময়িক ধ্বংশ যজ্ঞ চালিয়ে ছিলো, এই ধ্বংশ যজ্ঞ কি হাসিনার অপরাধের চেয়েও বেশী ছিলো? তাইলে আমরা জনতা গন ভবনের সকল ক্ষয় ক্ষতির টাকা সুশীলদের দেবো, আর সুশীলরা দয়া করে হাসিনা যে ১৪০০ ছাত্র জনতা হত্যা করেছে সে গুলোর প্রান ফিরিয়ে দিক, পারবে?এজনেরও প্রান ফিরিয়ে দিতে পারবেন?
৩।রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতির দোহাই দিয়ে সুশীলরা অনেক কান্না করেন, আমি বলি আমরা রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করেছি, আমরা তার জরিমানা দেবো, কিন্তু শর্ত থাকলো বাংলাদেশ হতে যে লক্ষ কোটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিদেশে পাচার করেছেন তা আপনারা ফেরত আনার ব্যবস্থা করেন। পারবেন?
৪।লীগের বিভিন্ন মন্ত্রী -এমপির বাসা বাড়িতে আক্রমন নিয়ে কথা বলেন, অথচ বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপির নেতৃত্বে ছাত্র আন্দোলন দমানোর জন্য ২০১৮ ও ২০২৪ সালে বিভিন্ন হেলমেট লীগ, হকিস্টিক লীগ ও টোকাই লীগের মাধ্যমে গনহত্যা চালিয়েছে সেটা কি আপনাদের চোখে পড়ে নি? এটা তো একদিন ৫ আগষ্টে ত্তেজিত মানুষ করেছে, পরে তো করে নি। কিন্তু একবার ভাবেন তো যদি আওয়ামীলীগের জায়গায় অন্য কোন দল ক্ষমতায় থাকতো আর আওয়ামীলীগ আজকের জনগনের জায়গায় থাকতো তাইলে কত মা-বোনের ইজ্জত হারাতো?
৫।পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমন ও পুলিশ হত্যা নিয়ে অনেক সুশীল কান্না করে। বলে পুলিশ অন্যায় করলে আদালত বিচার করবে, ভাল কথা। কিন্তু পুলিশ আইনের লোক হয়ে যে হাজার হাজার ছাত্র বিনা উসকানীতে হত্যা করলো, প্রতিযোগীতা দিয়ে হত্যা করলো তখন আইন ও আদালত কোথায় ছিলো? এই পুলিশ যে আওয়ামীলীগের দলীয় কর্মী হিসাবে কাজ করে ছিলো তার জন্য কান্না আসে না? এই হাসিনা সরকারের আগের পুলিশ কি এমন করতো?
আওয়ামিলীগের ক্যাডারদের পাহারা দিয়ে বিরোধী দলের উপর নির্যাতন করাতো এটা চোখে পড়ে না?
৬।সংখ্যা লঘুর উপর হামলার কথা বলে যা তা চিৎকার করে সুশীলরা, অথচ ৫ আগষ্ট গনভবন দখলের পর পরই আলেম সমাজ সহ ছাত্র সমাজ বিজয় মিছিল না করে, নিজের বাড়িতে বিশ্রামে না গিয়ে সংখ্যা লঘুদের জান,মাল ও ইজ্জতের পাহারায় নিজেকে প্রত্যক্ষ ভাবে নিয়োজিত করলো সেটা সুশীলরা দেখে নি?
সুশীলরা কি এটা বুঝে নি যে, সংখ্যা লঘু নয় বরং সংখ্যা গরিষ্ঠ স্বৈরাচারের দালাল আওয়ামীলীগের অপরাধীদের বাড়ি-ঘরে উত্তেজিত মানুষ হামলা করেছে যে অপরাধের তালিকায় ঐ সংখ্যালঘু ছিলো তাদের বাড়িতে হামলা হয়েছে, এটা ধর্মীয় ইস্যুতে নয়।
৭।বঙ্গ বন্ধুর মোরাল ভাঙ্গা নিয়ে খুব কান্না, তাই না? অথচ মোরাল ধ্বংশ, জাতীয় নেতাদের কবর সরানো, বড় বড় প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন এটা কাদের সাংস্কৃতি? জিয়াউর রহমানের কবর সরানোর নিয়মটা আগে কে চালু করেছে? সুশীলরা বলবেন?
৮। এবার আসেন আদালতে আসামীর উপর ডিম মারা নিয়ে। সুশীলরা এই ঘটনাটাকে নিন্দা করছে, আমিও করছি। কিন্তু এই আদালতে ডিম ছোঁড়া,পিজি হাসপাতালে বিএনপি নেতাদের চিকিৎসক কর্তৃক চর-থাপ্পর ইত্যাদির সাংস্কৃতি চালু কারা করেছে সেটা বলেন না কেনো সুশীলরা?
৯।অনেকে বলেন ক্ষমার কথা। আসলে ক্ষমাই উত্তম, কিন্তু ক্ষমাকে যখন প্রতিপক্ষ দূর্বলতা ও নির্যাতনে হাতিয়ার মনে করে তখনও কি ক্ষমা ক্ষমা করা উচিত নাকি তখন ক্ষমা করা অপরাধ সেটা সুশীল ভাইয়েরা বলবেন?
১০। ১৯৭২-১৯৭৫ এর শেখ মুজিবের দু:শাসন চলা কালীন পত্রিকার পাতা ও ২০০৮ হতে ২০২৪ সরকারের দু:শাসনের পত্রিকার পাতা মিলিয়ে দেখেন যে আওয়ামিলীগ ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য কি না? ১৯৭৫ এর পর ১৯৯৬ সালে মানুষ তাদেরকে ক্ষমা করে ক্ষমতা দিয়ে ছিলো, আওয়ামিলীগ ক্ষমার কি প্রতিদান দিয়ে ছিলো? ২০০৮ সালে মানুষ পুনরায় ক্ষমা করে আওয়ামিলীগ কে আবার ক্ষমতায় দিয়েছিলো, কিন্তু সে ক্ষমার প্রতিদানে যে পরিমান রক্ত জাতিকে উপহার দিয়েছে আওয়ামিলীগ তার পরও কি বলবেন আবারও ক্ষমা ও মানবিকতার যোগ্য এই আওয়ামিলীগ?
আমি বলি এই আওয়ামিলীগ ক্ষমা ও ইনসাফের যোগ্য নয়, বরং তারা মানুষের ক্ষমাটাকে পুঁজি করে জুলুম করেই যায়।
অতএব এসকল সুশীল নামক মানুষ গুলো যে আওয়ামিলীগের প্রতি মানবতা ও ক্ষমার কথা বলছে আসলে তা ইনসাফ নয়, বরং বাঘের জীবন সুরক্ষার অধিকারের দোহাই দিয়ে নিরীহ হরিনের জীবন বিপন্ন করারই কৌশল।
তাই তো বলি হরিন মেরে বাঘের জীবন বাঁচাচ্ছেন নাকি বাঘ মেরে হরিন বাঁচাচ্ছেন? একবার ভাবছেন সুশীলরা?
এজন্যই আমি সুশীল নয়, বরং আমি ন্যায্য বিচার ও ইনসাফের পুজারী।
লেখক:চিকিৎসক, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ