expr:class='"loading" + data:blog.mobileClass'>

Wikipedia

সার্চ ফলাফল

শনিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২৫

নৃগোষ্ঠীকে বাদ দিয়েই কি নতুন বাংলাদেশ

 "নৃগোষ্ঠীরা বাংলাদেশী, এদের দাবী দাওয়া কি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগনের সরকার শোনতে চায় না? নৃগোষ্ঠী বাদ দিয়েই কি নতুন বাংলাদেশ!!

নির্যাতনের চিত্র:বিবিসি


আজ অত্যন্ত ভরাক্রান্ত হৃদয়ে লিখতে বসলাম, আমার হৃদয়ে এই মুহূর্তে রক্ত ঝড়ছে। কেননা গত কয়েকদিন আগে দেখলাম জাতীয় পাঠ্যপুস্তক ও মুদ্রন সেন্টারের সামনে একদল নৃ-গোষ্ঠীর ছাত্র জনতা তাদের আদিবাসী গ্রাফিতি মুছে ফেলার দাবীতে আন্দোলন করছে আর অপর দিকে আরেকদল এসে তাদের উপর অতর্কীত ভাবে হামলা করেছে নিষ্ঠুরতার সাথে। এ যেন বাকশালী প্রেতাত্মা স্বৈরাচার হাসিনার গুন্ডা বাহিনীকেও হার মানায়।

১৫ জানুয়ারি সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার’ ব্যানারে একটি মিছিল মতিঝিলের এনসিটিবি ভবনের দিকে অগ্রসর হয়। কিন্তু মতিঝিল মেট্রো স্টেশনের নিচে পৌঁছালে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ ব্যানারে একটি দল তাদের ওপর হামলা করে।


এতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের অন্তত ১৫ জন গুরুতর আহত হন। আহতদের মধ্যে অনন্ত বিকাশ ধামাই, ডন জেত্রা, রেং ইয়ং গ্রো, জুয়েল থিওটনিয়াস, রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা, টনি চিত্রান ও ফুটন্ত চাকমার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এজাহারে বলা হয়েছে, রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা, ডন জেত্রা এবং জুয়েল থিওটনিয়াস বর্তমানে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন।

মূল ঘটনা হল বাংলাদেশে পাঠ্যবইয়ের প্রচ্ছদ থেকে 'আদিবাসী' শব্দ সংবলিত গ্রাফিতি প্রত্যাহার, নৃগোষ্ঠীভুক্ত শিক্ষার্থী ও 'স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি' নামের এক সংগঠনের বিক্ষোভ চলাকালে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। এটা ২০২৪ বিপ্লবের পরবর্তীতে অত্যন্ত লজ্জাজনক ও নিন্দনীয়।


নির্যাতনের চিত্র:বিবিসি


এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার আরেক দল শিক্ষার্থী বুধবারের হামলার প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের ওপরও লাঠিচার্জ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।এটা কেমন শাসন ব্যবস্থা? মানুষ তাদের দাবী দাওয়া পেশ করতে পারবে না, মিটিং মিছিল করতে পারবে না? এ কেমন দেশ!!!

এই আন্দোলনের সাথে জড়িত কয়েকজন জানান, বৃহস্পতিবার অন্তত তিন থেকে চার জন আহত হওয়ার খবর পেয়েছেন তারা।

এদিকে, বুধবারের হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত একজন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য জানিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হামলায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনায় বিচার নিশ্চিত করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

নবম ও দশম শ্রেণির 'বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি' বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে 'আদিবাসী' শব্দ থাকা একটি গ্রাফিতি যুক্ত করা হয়েছিল।

কিন্তু 'স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি' নামে একটি একটি সংগঠন এর প্রতিবাদ জানিয়ে বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। পরে সরকার সেটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।

এরপর পাঠ্যবইয়ের পিডিএফ সংস্করণ থেকে সেটি সরিয়ে নতুন একটি গ্রাফিতি সংযুক্ত করা হয়। এই পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানায় 'সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা' নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।

বিবিসি বাংলা জানায়,পাঠ্যবই থেকে গ্রাফিতি প্রত্যাহারের প্রতিবাদে 'সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা' এই ব্যানারে শিক্ষার্থীরা পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী দুপুরে এনসিটিবির সামনে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপস্থিত হন।

তবে তারা সেখানে পৌঁছানোর আগেই 'স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি' নামে আরেকটি গ্রুপ সেখানে অবস্থান করছিল বলে জানান কয়েকজন শিক্ষার্থী।

আন্দোলনে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী ববি বিশ্বাস বলেন, "ওইখানে আমাদের আগেই তারা অবস্থান করছিল স্ট্যাম্প, লাঠি এসব নিয়ে। স্ট্যাম্পের মাথায় বাংলাদেশের পতাকা বেঁধে নিয়ে গিয়েছিল। আমরা গিয়ে পৌঁছানোর পর তারা আক্রমণাত্মক স্লোগান দেয়া শুরু করে। আমাদের দিকে তেড়ে আসতে শুরু করে।"

ববি বিশ্বাসের দাবি, প্রথমে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও কয়েক মিনিটের মাথায় তারা একজনের দিকে হাতে থাকা স্ট্যাম্প ছুড়ে মারে। এরপরও শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে চান তারা।

"তখনও আমরা কোনো ধরনের উত্তেজনা দেখাইনি। কিছুক্ষণ পরে আমরা সিদ্ধান্ত নিই ওইখানে বসে পড়বো। আমরা বসার পরে পুলিশদের সরিয়ে ওরা এসে আমাদের আক্রমণ শুরু করলো, যাকে যেভাবে পেরেছে হামলা করে মেরেছে," বলেন এই শিক্ষার্থী।

কিন্তু আমার কথা হলো পাহাড়ি নৃ-গোষ্ঠীর সাথে এমনিতেই বাংলাদেশ সরকারের সাথো কিছু অমিমাংশীত বিষয় রয়েছে, তার পরও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নৃগোষ্ঠীর লোকেরা তাদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া কৌটা পদ্ধতিকেও বিসর্জন দিয়ে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নৃগোষ্ঠীর ছাত্র জনতা রক্তাক্ত জুলাই ২৪ বিপ্লবকে সমর্থন করে আন্দোলনের পক্ষ নিয়েছিলো। এখন যদি তারা আবার বৈষম্যহীন বাংলাদেশে আবারও মার খেতে হয় তাদের দাবী দাওয়া উপস্থাপনের কারনে তাইলে আর বাংলাদেশের নাগরিকের সাম্যতা বলে আর কি রইলো?

বাংলাদেশে প্রায় ৫১ টির মত নৃগোষ্ঠীর জনগন রয়েছে।পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে বাংলাদেশে উপজাতিদের সংখ্যা ৫১। এগুলো হচ্ছে:


• চাকমা (৪ লক্ষ ৮৩ হাজার ৩৬৫ জন)

• মারমা (২ লক্ষ ২৪ হাজার ২৯৯ জন)

• বড়ুয়া বা মারমাগ্রী (১০ লক্ষ ২৯ হাজার ৫৬জন)

• সাঁওতাল ১ লক্ষ ২০ হাজার ৪৫ জন

• ত্রিপুরা (১ লক্ষ ৫৬হাজার ৬২০ জন)

• গারো/আ-চিক (৭৬ হাজার ৮৫৪ জন)

• ওঁরাও (৮৫ হাজার ৮৫৮জন)

• তঞ্চ্যঙ্গা (৪৫ হাজার ৯৭৪জন)

• ম্রো (৩৯ হাজার ৪ জন)

• বম (১২ হাজার ৪২৪ জন)

• পাংখো (দুই হাজার ২৭৪ জন)

• চাক (দুই হাজার ৮৩৫ জন)

• খেয়াং (তিন হাজার ৮৯৯ জন)

• খুমি (তিন হাজার ৩৬৯ জন)

• লুসাই (৯৫৯ জন)

• কোচ (১৬ হাজার ৯০৩ জন)

• ডালু (৮০৬ জন)

• কুকি (৩৪৭ জন)

• মণিপুরী (২৪ হাজার ৬৯৫ জন)

• হাজং (৯ হাজার ১৬২ জন)

• খাসিয়া বা খাসি (১১ হাজার ৬৯৭ জন)

• মং (২৬৩ জন)

• বর্মন (৫৩ হাজার ৭৯২ জন)

• পাহাড়ি (পাঁচ হাজার ৯০৮ জন)

• মালপাহাড়ি (দুই হাজার ৮৪০ জন)

• মুন্ডা (৩৮ হাজার ২১২ জন)

• ভূমিজ

• কোল (২ হাজার ৮৪৩ জন)

• কন্দ

• পাঙন

• লাওরা

• মুরং (২০,০০০-২৫,০০০ জন)

• রাজবংশী

• পাত্র (৩০০০ জন)

• গণ্ড

• বাগদী

• ভিল (৯৫ জন)

• মণিপুরী (২৪ হাজার ৬৯৫ জন)

• হাজং (৯ হাজার ১৬২ জন)

• খাসিয়া বা খাসি (১১ হাজার ৬৯৭ জন)

• মং (২৬৩ জন)

• বর্মন (৫৩ হাজার ৭৯২ জন)

• পাহাড়ি (পাঁচ হাজার ৯০৮ জন)

• মালপাহাড়ি (দুই হাজার ৮৪০ জন)

• মুন্ডা (৩৮ হাজার ২১২ জন)

• ভূমিজ

• কোল (২ হাজার ৮৪৩ জন)

• কন্দ

• পাঙন

• লাওরা

• মুরং (২০,০০০-২৫,০০০ জন)

• রাজবংশী

• পাত্র (৩০০০ জন)

• গণ্ড

• বাগদী


এখন আমার কথা হলো এই নৃগোষ্ঠীরা এদেশেরই মানুষ, এদেশেই তাদের জন্ম, এমাটিই তাদের মাতৃ ভূমি, এমাটিতেই তাদের আদি পুরুষদের বসত, এদেশই তাদের স্বপ্ন।

বাংলাদেশের সকল নৃগোষ্ঠী বাংলাদেশী, তারা এদেশের নাগরিক, তাদের অধিকার বাংলাদেশের অন্যান্য সকলের মতই,হয়ত তারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, কিন্তু তারা বাংলাদেশের মাটিকে ভালবাসে, তবে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কথা আলাদা, সন্ত্রাসীদের কোনো দল নাই, ধর্ম নাই। নৃগোষ্ঠীরা আমাদের ভাই, ওরা আলাদা কেউ নয়, ওরা সবাই বাংলাদেশী। নৃগোষ্ঠীরা আমাদের অংশ, এটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নাই, সকল নৃগোষ্ঠী বাঙ্গালী জাতি গোষ্ঠীর সমান অধিকার রাখে। আমরা বৈষম্যে বিশ্বাসী নই। কোনো নৃগোষ্ঠীর উপর সংখ্যায় কম হওয়ার কারনে যদি ব্যক্তিগত হোক আর রাষ্ট্রীয় হোক যে কোনো পর্যায় নির্যাতন হয় সে নির্যাতনের প্রতিবাদ করা সকল নাগরিকের দায়িত্ব। ভাল থাকুক আমার নৃগোষ্ঠী ভাই-বোনেরা, আমরা তাদের পাশে সবসময় থাকতে চাই স্বদেশী ভাই হয়ে।

আমার এ লেখা পড়ার পর অনেকে হয়ত মনে করবেন হয়ত আমি ভিনদেশী কোনো চক্রান্তে পড়ে পার্বত্য চটগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে সুর মিলাচ্ছি, না ভাই আমি এমনটি করছি না, করার কথা কল্পনাও করি না। আমি কেনো এত কথা বলছি তা বুঝবেন ১৯৭১ সালে মহান মুক্তি যোদ্ধে নৃ-গোষ্ঠীর অবদানের ইতিহাস জানলে, আসুন মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের অবদানের ইতিহাস দেখি।

মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের জাতীয় বীর,হোক এটা রক্তাক্ত জুলাই ২০২৪ বিপ্লব আর হোক ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ।  তাদের চরম আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা একাত্তরে স্বাধীনতা অর্জন করেছি এবং ২০২৪ এ ভারতের নির্যাতন হতে মুক্ত হয়েছি। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মানুষগুলো, স্বাধীনতাকামী জনগণ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। যুদ্ধের ভয়াবহতা বহন করে চলেছে আজও অগণিত মানুষ। দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রায় নিশ্চিহ্ন জাতিকে রক্ষার্থে স্থির থাকতে পারেনি আমাদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী যুবক ভাইয়েরা।  দিনেই বাংলার সর্বস্তরের জনগণের সাথে তারাও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়েছিলো। প্রস্তুত হয়েছিল দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী । রাজশাহী গোদাগাড়ী থানাতেই ৬২ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মুক্তিযোদ্ধার তালিকা পাওয়া যায়। দিনাজপুর জেলার ওরাঁও ও সাঁওতালদের ১০০০ জনের সমন্বয়ে বিশাল মুক্তি বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল। ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, শেরপুর, নেত্রকোনা এলাকার গাঁরো, হাজং, কোচ জনগোষ্ঠীগুলো থেকে প্রায় পনেরো শ উপজাতি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। ১১৫ জন ছিল ময়মনসিংহের হালুয়া ঘাট এলাকা থেকেই। বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের মধ্যেই কমপক্ষে ৫০ জনের অধিক সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। অনেকে জীবন দিয়েছেন দেশের জন্য। তাদের মধ্যে গিরিশ সিংহ ও ভুবন সিংহ উল্লেখযোগ্য। সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ জেলার কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার সদর, কুলউড়া, বড়লেখা, চুনারুঘাট, মাধবপুর, বৈকণ্ঠপুর, গোয়াইনঘাট, সিলেট সদর, ও ফেঞ্চুগঞ্জ থানার ৮৩টি বাগান এলাকার উপজাতি ও চা' জনগোষ্ঠীর কমপক্ষে ৬০২ জন শহীদ, আহত ৪৩, নির্যাতিত ৮৩ এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অনেকেই। দেশমাতৃকার টানেই উপজাতি মুক্তিযোদ্ধারা কর্মক্ষম হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল। কোন অংশেই তাদের অংশগ্রহণকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। শত্রুর হাতে জীবন উৎসর্গ করেছেন লড়াই করেই, শারীরিক পঙ্গুত্ব নিয়ে অনেকে জীবিত রয়েছেন। হারিয়েছেন সহায়-সম্পদসহ সবকিছুই। ধর্ষিতা হয়েছে অগণিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারী। আমরা রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাওয়ের কথা কমবেশি সকলেই জানি। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৮ মার্চ তারিখে রংপুরের উপজাতি ও বীরজনতা মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর। এ দিন সকাল ১০টার দিকে ক্যান্টনমেন্টের কাছে নিসবেত গঞ্জ এলাকায় সমাবেশ আহ্বান করা হয়। ভোর থেকে মিঠাপুকুর, বলদিপুকুর, বদরগঞ্জ, রানীপুকুর, বুড়িহাট, হারাগাছ, শ্যামপুর, লালবাগ, গঙ্গাচড়া, পাগলাপীর, তারাগঞ্জ প্রভৃতি এলাকা থেকে হাজার হাজার উপজাতিসহ মুক্তি জনতা লাঠি, খুন্তি, বল্লমসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সেখানে সমবেত হতে থাকে। ওই সমাবেশে বিপুলসংখ্যক সাঁওতাল উপজাতি সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ তীর-ধনুক, বল্লম নিয়ে সেখানে সমবেত হয়। এ পুরুষ তীর-ধনুক, বল্লম নিয়ে সেখানে সমবেত হয়। এ সময় পাক হানাদার বাহিনী বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এতে শত শত মানুষ নিহত হয়। পাক সেনা ২০০ সাঁওতাল কে হত্যা করে। অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সেই স্থানেই ২০০০ সালে সেনাবাহিনীর সহায়তায় নির্মাণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সৌধ 'রক্তগৌরব'। শহীদ পরিমল দ্রং হালুয়াঘাট বিড়ই ডাকুলি হাইস্কুলের ছাত্র ছিল। তিনি ১৯৭১ জুন মাসের দিকে নকলা সেতু ধ্বংসের অপারেশনে যান, সেতু ধ্বংস করা হয়। পালানোর সময় রাজাকারদের হাতে ধরা পড়েন রামনগরে। রাজাকাররা তাঁকে সোপর্দ করে পাক খান সেনাদের হাতে। প্রচুর নির্যাতনের পর ফুলপুরের কংস নদীর পাড়ে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘোড়াঘাটের ফিলিন্সের সাঁওতালদের নেতৃত্বে মাইন বিস্ফোরণে পাক সেনাদের একটি রেডফোর্স মোটরকার ধ্বংস করা হয়। মিছিলকারীরা নাটোরের প্রতিটি সরকারী অফিস থেকে পাকিস্তানী পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করে। এদিন নাটোরের কৃষক, মজুর, জেলে, সাঁওতালসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ লাঠি, বর্শা, তীর ধনুক প্রভৃতি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বাধীনতার পক্ষে এক জঙ্গী মিছিল বের করে। সাঁওতাল, গারো, হাজং, চাকমা, মগ ও অন্যান্য উপজাতিরা বিষ মাখা তীর-ধনুক নিয়ে তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

সুরেন্দ্রনাথ সরকার, নির্মল কুমার সরকার, ধরিষা মাহাতো প্রমুখ জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁদেরও জন্মস্থান থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল একাত্তরে। মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিল তাঁদের চৌদ্দপুরুষের ঘরবাড়ি। বাংলাদেশে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের অবদান ছিল গৌরবের। বৃহত্তর সিলেটের নারী পুরুষ নির্বিশেষে সিলেট অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কয়েকজন মুক্তি যোদ্ধারা হলেন- মুক্তিযোদ্ধা উপেন্দ্র ভৌমিক, মুক্তিযোদ্ধা অজয় বাঁউড়ি, শহীদ নিবারণ উরাং, শহীদ রেবতী মাহালী, শহীদ শুভ্রতাতী, নারী মুক্তিযোদ্ধা লালগী খাড়িয়া, মুক্তিযোদ্ধা কুলচন্দ্র তাঁতি, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পবন কুমার তাঁতি, মুক্তিযোদ্ধা অনীল ছত্রী, মুক্তিযোদ্ধা উপন্দ্রে বাড়াইক, শহীদ কুনকুনিয়া রুদ্রপাল, নারী মুক্তিযোদ্ধা কাঁকন বিবি প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য। '৭১ এ স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধে পার্বত্য উপজাতিরাও পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে দেশকে রক্ষার তাগিদে প্রতিরোধ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। উত্তর বঙ্গের মুক্তিযুদ্ধে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা হলেন মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক সাগারাম মাঝি, দিনাজপুরের শহিদ ফাদার মারান্ডি, নওগাঁর মুক্তিযোদ্ধা সুরেন্দ্র চন্দ্র পাহান, মুক্তিযোদ্ধা বিশ্বনাথ মাঝি, রংপুরের মিঠাপুকুরের বুদুলাকড়া, দিনাজপুর জেলার বিরামপুর থানার ওঁরাও মুক্তিযোদ্ধা মনাইচন্দ্র খালকো, দিনজপুরের কশবা মিশনের দশম শ্রেণীর ছাত্রী নারী মুক্তিযোদ্ধা জসপিন টপ্প প্রমুখ। আমাদের দেশও বাঙাল প্রমুখ।

জুলাই বিপ্লব ২০২৪ এ নৃগোষ্ঠীদের অবদান তো আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। নৃগোষ্ঠীরা তাদের যা আছে তা দিয়েই দেশের জন্য যখন যতটুকু ত্যাগ করা দরকার তা করেছেন। তাইলে তারা কেনো তাদের দাবী আাদায় করার জন্য মার খেতে হবে? তাদেরকে কেনো রাষ্ট্র ও সমাজ আলাদা করে দেখবে? নৃগোষ্ঠীরা কেনো নিজেদেরকে সংখ্যা লঘু মনে করতে হবে্?  তবে কি আমরা সংখ্যাগরিষ্ট বাঙ্গালীরা নৃগোষ্ঠীকে আজও আপন করতে পারি নি? আমরা কি এই জাতি গোষ্ঠীকে দূরে ঠেলে দিতে চাই? ওদেরকে কি আমরা আজও আমাদের রাষ্ট্রের নাগরিক ভাবতে পারি নি? তবে কেনো আমরা তাদের উপর বল প্রয়োগ করতে হবে? বল প্রয়োগের ফলাফল কি আমরা ফিলিস্তিন, ১৯৭১ পূর্ববর্তী বাংলাদেশ, ২০২৪ পূর্ববর্তী বাংলাদেশ, ভারতের মনিপুর রাজ্য হতে দেখে শিখতে পারি নি? তবে কি নৃগোষ্ঠীকে বাদ দিয়েই নতুন বাংলাদেশ? 

এদেশের সকল নৃগোষ্ঠীর সকল নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করুক এটাই হোক সবার চাওয়া।

তথ্য সূত্র:
  • বিবিসি বাংলা, 
  • মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাস, 
  • বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, 
  • দৈনিক জনকন্ঠ।

নির্যাতনের চিত্র:বিবিসি 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে!

  দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে! এক.   শুনতে খারাপ শোনালেও এটা সত্য, রবীন্দ্রনাথের...