expr:class='"loading" + data:blog.mobileClass'>

Wikipedia

সার্চ ফলাফল

সোমবার, ২০ জানুয়ারী, ২০২৫

সালাফি পরিচয়ের বিবর্তন এবং বিকাশে রশিদ রিদা'

সালাফি আন্দোলনের আদ্যোপান্ত

রশিদ রিদা'



 প্রাক-আধুনিক যুগে 'সালাফি' শব্দটি কেবল হাম্বলী বা আসারী আকিদা বুঝাতে ব্যবহার করা হতো। হাম্বলীরা নিজেদেরকে তাদের ভাষায় মাযহাব আল খালাফ বা আহলুল বিদা থেকে আলাদা করতে আহলুল আসার, আহলুস সুন্নাহ, মাযহাব আস সালাফ, আত তরিকা আস সালাফিয়া এসব শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করতো। তবে ১৯ শতকের শেষার্ধ্বে সালাফি শব্দের সঙ্গে নতুনত্ব এসে জুড়তে শুরু করে।

১. পটভূমি: রশিদ রিদার আহলে হাদিস এবং ওয়াহাবি সমন্বয়ঃ

আহলে হাদিস আন্দোলনের দুই পুরোধা ব্যক্তিত্ব ভারতের সিদ্দিক হাসান এবং সৈয়দ নজির হুসাইন (১৮০৫-১৯০২) ছিলেন ইয়েমেনী যাহিরি প্রভাবিত ইমাম মুহাম্মাদ আল শাওকানীর (১৭৫৯-১৮৩৪) ভারতীয় ছাত্রদের দ্বারা প্রভাবিত। শাওকানী যাইদি শিয়া মতবাদ থেকে ফিরে লা-মাজহাবি আদর্শের অবতারণা করেন এবং ইজতিহাদের এক মুজাদ্দিদ হিসেবে আবির্ভূত হন। তিনি মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাবের বিদআত বিরোধী কাজের প্রশংসা করলেও তার তাকফিরের সমালোচনা করেন। ভারতে শাওকানির শিক্ষা প্রচারে প্রথম ও অন্যতম ছিলেন আব্দুল হক বেনারসি (মৃ. ১৮৭০), যিনি সায়্যিদ আহমদ বেরেলভীরও ছাত্র ছিলেন; যদিও উস্তাদের বিরুদ্ধাচরণের কারণে সায়্যিদ আহমাদ আব্দুল হককে দরস থেকে বহিষ্কার করেন। তিনি মাযহাবের তাকলিদ ও ইজমাকে বর্জনের ঘোষণা দেন এবং শাওকানি থেকে এক ধাপ এগিয়ে কিয়াসকে অস্বীকার করেন। শাওকানির ভারতীয় ছাত্রদের মধ্যে আরো ছিলেন নাসিরুদ্দিন হাজিমি, আব্দুল কাইয়ুম বুধানাউয়ী, হুসাইন বিন মুহসিন আল ইয়ামানী সহ ভোপালের কিছু উলামা।

তখনকার সমসাময়িক ঘটনপ্রবাহে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে ইরাকের ইলমী বংশ আল আলুসিরা। বাগদাদের বিখ্যাত আসারী-হানাফি আলিম আবুল সানা শিহাবুদ্দীন আল আলুসির (১৮০২-১৮৫৪) পাঁচ ছেলের একজন নুমান আলুসি (১৮৩৬-১৮৯৯)। নুমান আলুসি ভারতের আহলে হাদিস আন্দোলনের পুরোধা নওয়াব সিদ্দিক হাসান খানের (১৮৩২-১৮৯০) লেখায় ভীষণ প্রভাবিত হন, তাঁর থেকে ইযাযাহ নেন, এবং তাঁর ছেলে আলাউদ্দিন আলুসিকে তাঁর কাছে পড়তে পাঠান। নুমান আলুসি সর্বপ্রথম ইরাকে আহলে হাদিসের মাজহাব ও ইজমা, কিয়াস বিরোধী ধারার অবতারণা করেন।

১৯৮২ সালে নুমান আলুসি দামেস্ক সফর করলে সেখানকার হাম্বলী ইমাম আব্দুর রাজ্জাক আল বিতার (১৮৩৭-১৯১৭) তাঁর আহলে হাদিস প্রভাবিত ফিকহী চিন্তাভাবনার দ্বারা প্রভাবিত হন এবং ১৮৮৫ সালে পুরোদস্তর নুমান আলুসীর আহলে হাদিস প্রভাবিত পন্থা গ্রহণ করেন। ভারতের আহলে হাদিস আন্দোলন এমনি করে সিরিয়া, মিশরসহ আরবের নানা জায়গায় প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের মুখে অটোমান খিলাফতের ক্রমান্বিত পতন রোধ করে ইসলামকে পূর্বের মতন সমুন্নীত করার জন্য সংস্কারের উদ্দেশ্য নিয়ে একত্র হয় হওয়া কিছু লোকের অবস্থানও ছিল আকিদায় সালাফী এবং ফিকহে আহলে হাদিস অর্থাৎ মাযহাব ছেড়ে শুধু কুরআন হাদিসের মাধ্যমে ইজতিহাদের পথবলম্বন করা। তারা মনে করতেন বিদআত ও বিকৃতি ঢুকে পড়ার ফলে অটোমানদের এই দুরবস্থা, তাই তারা ইসলামের প্রথম যুগে ফিরে যাবার বাহন হিসেবে সালাফি আকিদা এবং পরবর্তীতে আহলে হাদিস ফিকহের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করেন। এই প্রচেষ্টায় আব্দুর রাজ্জাক আল বিতারের সঙ্গে ছিলেন দামেস্কের জামালুদ্দিন কাসিমী (১৮৬৬-১৯১৪), তাহির আল জাযাইরি (১৮৫২-১৯৩৮) এবং মিশরের রশিদ রিদা (১৮৬৫-১৯৩৫)। এরা প্রত্যেকেই মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাবের প্রশংসা করেছেন এবং তাঁর আন্দোলনের পক্ষাবলম্বন করেছেন, যদিও তাকফিরের ক্ষেত্রে তারা মূল ওয়াহাবীদের (ইবনে সিহমান; মৃ. ১৯৩০) চেয়ে নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন, পরে যেটা তৃতীয় সৌদি রাষ্ট্রের বাদশা আব্দুল আজিজ আল সৌদ (১৯০২-৫৩) গ্রহণ করেন। ওয়াহাবী ঘেঁষা হবার কারণে সিরিয়ার অন্যান্য উলামার সঙ্গে তাঁদের বিরোধ হয়, যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শাইখ বদরুদ্দিন আল হাসানী (১৮৫০-১৯৩৫)। ১৯০৯ সালে ইয়াঙ্গ তুর্কদের উত্থানের পর রাজনৈতিকভাবে তাদের এই সংস্কার আন্দোলনের অবস্থান আরো নাজুক হয়ে পড়ে; ওয়াহাবীপন্থী, আরব খিলাফাত সৃষ্টির প্রচেষ্টা ইত্যাদি অভিযোগে তাদের উপর মামলা দায়ের করা হয়। এর সঙ্গে সঙ্গে এই আন্দোলন অনেকটাই স্তিমিত হতে থাকে।

মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাবের অনুসারীরাও নিজেদের আকিদায় সালাফি দাবী করতো। ওয়াহাবী ইমাম ইবনে বিশর তার উনওয়ান আল মাজদ ফি তারিখ নজদ কিতাবে নিজেকে “মাজহাবে হাম্বলী এবং আকিদায় সালাফী” হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যদিও অনেক হাম্বলী আকিদার উলামা মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাবের তাকফিরের সমালোচনা করেছেন, যেমনটি করেছেন আবুল সানা শিহাবুদ্দীন আলুসি (১৮০২-১৮৫৪) তাঁর গারাইব আল ইগতিরাবে, যিনি নিজে আকিদায় আসারী হলে ফিকহে হানাফি মাজহাব অনুসরণ করেছেন।


২. রশিদ রিদা, আল-মানার পত্রিকা, সালাফি আন্দোলনের সূচনাঃ

১৯ শতকের শুরুতে যখন আরবে ছাপা-প্রকাশনার পরিমাণ দ্রুতগতিতে বাড়ছে, তখন এর সুযোগ নেন জামালুদ্দিন কাসিমী ও রশিদ রিদারা। যদিও তাদের ম্যাগাজিন ও প্রকাশনাতে সালাফি শব্দটি আকিদা অর্থেই ব্যবহার করা হতো, তবে ক্রমাণ্বয়ে রশিদ রিদাদের আন্দোলন বা ব্যাপক কার্যক্রমের ধরণের কারণে সালাফি শব্দটি আর পূর্বের সংকুচিত অর্থে বহাল থাকেনি। এ থেকে প্রাচ্যবিদরা মোটাদাগে ঔপনিবেশিক শক্তির প্রতিক্রিয়ায় গড়ে ওঠা মুসলিমদের মধ্যে সংস্কারপন্থী প্রায় সকল আন্দোলনকেই সালাফি হিসেবে সম্বোধন করা শুরু করে। এর নেপথ্যে ছিল ফরাসি প্রাচ্যবিদ লুই ম্যাসিনন। এমনকি তারা আরবের আফগানী এবং আব্দুহদের ছাড়াও ঔপনিবেশিক ভারতের সৈয়দ আহমদ খান এবং আমীর আলীদের সংস্কারপন্থী বলে সালাফি হিসেবে অবহিত করে। অথচ, বাস্তবতা হলো তারা কেউই নিজেদের সালাফি দাবী করেননি এবং আকিদায়ও সালাফি বা আসারী ছিলেন না; বরংচ, তারা সালাফী বা আসারী আকিদার বিপরীতে অবস্থান করেছেন। ১৯৩০ এর দশকে আল্লাল আল ফাসি (১৯১০-১৯৭৪) সর্বপ্রথম ম্যাসিনন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মরক্কোতে নিজের সংস্কারবাদি চিন্তাধারা ও আন্দোলনকে সালাফি হিসেবে আখ্যায়িত করে, অথচ আকিদাতে তিনি সালাফি ছিলেন না। এর দরুন সংস্কারপন্থী অর্থে সালাফি শব্দের এই বিকৃত ব্যবহারটা আজ পর্যন্ত অজনপ্রিয় হলেও প্রচলিত।

রশিদ রিদাদের আন্দোলনে নুমান আলুসি এবং ভারতের আহলে হাদিস আন্দোলনের প্রভাব স্পষ্ট। রশিদ রিদা ১৯২০ এর দশক থেকে ফিকহী ক্ষেত্রে আল মানার ম্যাগাজিনে আহলে হাদিসদের চিন্তাভাবনা প্রবেশ করাতে শুরু করেন; এবং তাদের চিন্তাধারাকেই তিনি সালাফী হিসেবে প্রচার করেন। তাকলিদ, ইজমা ও ইজতিহাদের ক্ষেত্রে তিনি ও তাঁর সহচরেরা ভারতীয় আহলে হাদিসদের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হন। এই প্রভাব বলয়ে অন্তর্ভুক্ত হয় তাদের ছাত্ররা। যাদের মধ্যে সালাফি পরিচয় নির্মাণে উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠবেন হাসান আল বান্না (১৯০৬-১৯৪৯), মুহাম্মাদ বাহজাত আল বিতার (১৮৯৪-১৯৭৬) এবং নাসিরউদ্দিন আলবানী (১৯১৪-১৯৯৯)।


৩. নমনীয় ওয়াহাবিজমের উত্থানঃ

বাহজাত আল বিতার ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক আল বিতারের দৌহিত্র এবং তাঁর ও তাঁর সহচর রশিদ রিদা ও জামালুদ্দিন কাসিমীর ছাত্র। তিনি সহ তাকিউদ্দিন হেলালী (১৮৯৪-১৯৮৭), আলী আল তানতাওয়ী (১৯০৯-১৯৯৯) প্রমুখেরা হয়ে উঠেন সালাফী আন্দোলনের দ্বিতীয় প্রজন্মের ঝান্ডাধারী। বাহজাত ওয়াহাবি মতবাদের তাকফিরি হওয়ার অভিযোগকে ব্যাপকভাবে প্রতিহত করেন। এ সময়ে রশিদ রিদা সৌদদের মুসলিম বিশ্বের অটোমান পরবর্তী উত্তরাধিকারী হিসেবে দেখেন এবং সে কারণে বাহজাত বিতারকে ওয়াহাবীদের সম্পর্কে সুধারণা প্রতিষ্ঠা করতে ১৯২৬ সালে সৌদিতে পাঠান। সেখানে তিনি সৌদি রাজা আব্দুল আজিজের পৃষ্ঠপোষকতায় শিক্ষকতা এবং ওয়াহাবি মতবাদের প্রচার প্রসার করেন। যদিও মূলধারার ওয়াহাবী আলিম ইবনে সিহমান রশিদ রিদাদের তাকফিরের ক্ষেত্রে নমনীয়তার সমালোচনা করে লেখালেখি করেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ক্ল্যাসিকাল ওয়াহাবিজমের পতন শুরু হয় তখন থেকেই। ১৯৩১ সালে তিনি যখন দামেস্কে ফিরে যান, সেসময় সালাফি আন্দোলনের প্রথম প্রজন্মের আরেক ব্যক্তিত্ব তাহির আল জাযাইরির প্রতিষ্ঠিত দামেস্কের যাহিরিয়া লাইব্রেরিতে স্বশিক্ষায় বেড়ে উঠছেন পরবর্তী সালাফি আন্দোলনের সবচে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব আলবেনিয়ার নাসিরউদ্দিন। বাহজাত দামেস্কে ফিরে যেতেই আলবানী নিয়মিত তাঁর দারসে অংশ নেয়া শুরু করেন (Lacroix's Article in the book Global Salafism, 2009)। ১৯৩৮ সালে বাহজাত যাহিদ আল কাওসারির (১৮৭৯-১৯৫২) খণ্ডন করে ১৯২২ সালে তার পূর্বের লেখা সমালোচনা আরো পরিশোধিত করে 'al-Kawthari wa-ta’liqatuhu' শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশ করে। ১৯৫১ সালে আবুল হাসান আলী নদভী তার সঙ্গে দামেস্কে সাক্ষাৎ করেন। নদভী তাদের আন্দোলনের দুর্বলতা তুলে ধরেন তাঁর Mudhakkirat sa'ih fi al-sharq al-'arabi গ্রন্থে; সেখানে তিনি উল্লেখ করেন বাহজাত ও তার তামাদ্দুন ইসলামীর সঙ্গে সাধারণ মানুষের সম্পর্ক ছিল না, তাঁরা কেবল ইলমী আলোচনা-গবেষণায় ব্যস্ত ছিলেন। ১৯৬০ এর দশকে মদীনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময়ে তাঁকে উপদেষ্টা কমিটির সদস্য করা হয় এবং ওয়ার্ল্ড মুসলিম লীগের পরিষদে যুক্ত করা হয়। জীবনের শেষের দিকে তার মাধ্যমে চলে আসা সালাফি ধারা রাজনীতিতে দুর্বল হয়ে পড়ে। এর কারণ ছিল সিরিয়ার সেক্যুলার ও সমাজতন্ত্র ঘেঁষা রাজনীতি এবং তাঁর আন্দোলনের জনবিচ্ছিন্নতা।


৪. রশিদ রিদা এবং হাকিমিয়া

অন্যদিকে ১৯২০ এর দশকে মিশরে রশিদ রিদার দারসে নিয়মিত শিক্ষার্থী ছিলেন হাসান আল বান্না। রশিদ রিদার পশ্চিমের রাজনৈতিক আধিপত্যবিরোধী ও গণতন্ত্রবিরোধী আলোচনা তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। হাসান আল বান্না রিদা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯২৮ সালে ভবিষ্যৎ মুসলিম বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন জামাআতুল ইখওয়ানুল মুসলিমিন প্রতিষ্ঠা করেন, রশিদ রিদা যার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। প্রথমে সামাজিক ও শিক্ষামূলক কাজে সম্পৃক্ত থাকলেও মুসলিম ব্রাদারহুডের মূল লক্ষ্য ছিল মিশর থেকে ব্রিটিশদের তাড়ানো এবং সেখানে ইসলামী শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা। রশিদ রিদার বই আল খিলাফাহ আও আল ইমামা আল 'উজমা (১৯২৩) অটোমান খিলাফত পতন পরবর্তী অনেক ইসলামী রাজনৈতিক আন্দোলন ও তাদের তাত্ত্বিকদের (হাসান আল বান্না, আবুল আলা মওদুদী (১৯০৩-১৯৭৯), সায়্যিদ কুতুব (১৯০৬-১৯৬৬), আব্দুল্লাহ আজ্জাম (১৯৪১-১৯৮৯) ভিত্তিপ্রস্তর।

মিশর ব্রিটিশ অনুগত রাজতন্ত্র থেকে বেরিয়ে সোভিয়েত ও সমাজতন্ত্র ঘেঁষা সামরিক শাসনের আয়তাধীন হবার পর মুসলিম ব্রাদারহুড শাসনতন্ত্রের বিরোধিতা অব্যাহত রাখে। ফলে, ১৯৫০ ও ৬০ এর দশকে নাসের যখন ব্রাদারহুডের নেতা ও কর্মীদের উপর লেলিয়ে পড়ে এবং ১৯৬৬ সালে সায়্যিদ কুতুবকে শহিদ করে দেয়, তখন সৌদি আরবের রাজা ফয়সাল হয়ে উঠেন তাদের ত্রানকর্তা। সায়্যিদ কুতুবের ভাই মুহাম্মাদ কুতুবসহ মুসলিম ব্রাদারহুডের অনেকেই তখন পাড়ি জমান সৌদি আরবে। সেখানে তিনি সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় সায়্যিদ কুতুবের বিপ্লবী মা’আলিম ফিত তারিখ সহ অন্যান্য বই ব্যাপকহারে ছাপাতে শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি সেখানে কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত হন। এই সময়ে বিন লাদেন তাঁর উন্মুক্ত হালাকায় বসতেন। মুহাম্মাদ কুতুব তার ভাই সায়্যিদ কুতুবের মুসলিম সরকারের প্রতি রুঢ় সমালোচনাকে প্রাসঙ্গিকতা দেন এবং বুঝাতে চান যে এই সমালোচনা তত্ত্ব হিসেবে ঠিক হলেও বাস্তব প্রয়োগের ব্যাপারটা ভিন্ন। রশিদ রিদা মনে করতেন ইসলামী বিশ্বে বিপ্লব সম্ভব এবং সালাফী আন্দোলনের সঙ্গে সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষকতার দ্বারাই এটা সম্ভব; মুহাম্মদ কুতুবের সময়ে এসে মুসলিম বিশ্ব আগেরচে আরো করুণ অবস্থায় অবনমিত হলেও তিনি মনে করতেন বিভিন্ন দেশে সালাফী আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক বিপ্লবের মাধ্যমে ইসলামকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ কারণে তিনি শাফেয়ী মাজহাব অনুসারী হলেও আকিদা ও ফিকহে ওয়াহাবী-সালাফী ঘেঁষা হয়ে পড়েন। তাঁর ছাত্র সফর আল হাওয়ালি ১৯৮৬ সালে তাঁর কাছে ডক্টরেট থিসিস জমা দেয়ার পর মুহাম্মাদ কুতুব সফর আল হাওয়ালির প্রশংসা করে বলেন যে তিনি তার শিক্ষককে ছাড়িয়ে গেছেন। ১৯৯০ সালে সাদ্দাম হোসেনের সম্ভাব্য আক্রমণের ভয়ে সৌদি সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের আমন্ত্রন জানায়। আলেমদের কাউন্সিল হায়া’ত কিবার আল-উলামা একটি বৈঠকের আয়োজন করে ফতোয়ার মাধ্যমে অমুসলিম সশস্ত্র বাহিনীকে নিযুক্ত করার রাস্ট্রীয় সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানানো হয়। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় গাঠনিকভাবে গড়ে উঠে পূর্বের অনেকটা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক উলামাদের আন্দোলন। সফর আল হাওয়ালি এবং সালমান আল আওদার হাত ধরেই সালাফি আন্দোলনের মৃতপ্রায় রাজনৈতিক ধারা প্রাণ পায়, আর তাঁদের পেছনে অনুপ্রেরণা আর সমর্থন দেন মুহাম্মদ কুতুব এবং মুহাম্মদ সুরুর। তাঁরা ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রের সৈনিকদের দুই পবিত্র মসজিদের ভূমিতে প্রবেশের অনুমতি প্রদানের নিন্দা করেন এবং উক্ত ফতোয়াকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানান। সফর আল-হাওয়ালি উম্মাহর উলামাদের বিভ্রান্তি থেকে মুক্তকরণ নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি সৌদি আলেমদের ফিকহ আল-ওয়া’ক্বি সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা না থাকার সমালোচনা করেন। ওনার এই আন্দোলন পরিচিতি পায় আস সাহওয়া আল ইসলামিয়াহ নামে। যদিও মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল বান্না নিজে আকিদায় আসারি এবং মাযহাবে হাম্বলী ছিলেন, তাঁর গণসংগঠন এক্ষেত্রে কোনো মাজহাবকে নিজেদের সাথে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত করেনি। তাই আধুনিক গবেষকরা সালাফি আন্দোলনের রাজনৈতিক ধারা হিসেবে সাহওয়া আন্দোলনকে বিবেচনা করেন। সাহওয়া আন্দোলনের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সমর্থকদের মধ্যে আছেন- সালিহ আল মুনাজ্জিদ, জাকির নায়েক, ইয়াসির ক্বাদি, বিলাল ফিলিপস প্রমুখ। ১৯৯৪ সালে এই আন্দোলনদের নেতা ও অনেক সমর্থকদের গ্রেফতার করা হয় এবং সেই থেকে স্তিমিত হতে থাকে এদের কার্যক্রম। ১৯৯৯ সালে তাদের ছেড়ে দেয়া হলেও ২০১৭ সালে মুহাম্মাদ বিন সালমান ক্ষমতায় আসার পর তাদের উপর পুনরায় ক্র্যাকডাউন হয়। সাহওয়া আন্দোলনের প্রতি বিন লাদেনের সমর্থন ছিল। তবে এদের মধ্যে কুতুবিদের মতন নিয়তকে উপেক্ষা করে তাকফির করবার ব্যাধি নেই। (https://islamqa.info/en/answers/13659/ruling-on-one-who-rules-by-something-other-than-that-which-allaah-has-revealed)


৫. তুরাসি জিহাদ vs সালাফি হত্যাকাণ্ড

১৯৫০ এর দশকে আব্দুল্লাহ আজ্জাম ফিলিস্তিনে মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে যুক্ত হন এবং এরপর থেকেই তিনি হাসান আল বান্নার লেখালেখির প্রভাবিত হন। ৬০-এর দশকে দামেস্কে শরীয়াহ বিষয়ে পড়াশুনা করে ফিলিস্তিনে ফিরে গেলেও ৬৭-এর যুদ্ধের পর তিনি জর্ডানে এবং পরে মিশরে চলে যান। মিশরে তিনি আল আজহার থেকে ডক্টরেট অর্জন করেন এবং সৌদি আরবের কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন, যেখানে ইতোমধ্যে অধ্যাপনা করছিলেন মুহাম্মদ কুতুব এবং শিক্ষার্থী হিসেবে যোগ দিয়েছেন বিন লাদেন। সেখানে থাকাকালীন ১৯৭৯ সালে সোভিয়েতের আফগান আক্রমণের সময়ে তিনি সোভিয়েতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ফরজ হবার ফতোয়া দেন এবং নিজে সেখানে অংশ নিতে পাকিস্তানে পাড়ি জমান। তার সঙ্গে যুক্ত হন বিন লাদেন। বিন লাদেনের অর্থায়নে এবং আজ্জামের পরিচালনায় গড়ে উঠে অ-আফগান মুজাহিদ সংগঠন মাকতাব আল খিদমাত। ৮০-এর দশকে তিনি বিশ্বের নানা দেশের নানা শহরে গিয়ে মুসলিম তরুণদের জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন এবং বই বিতরণসহ নানা প্রচারণা করেন। জিহাদের মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বকে শরীয়তের ঝান্ডাতলে আনার ধারণাকে তিনি শক্তিশালী করেন। ১৯৮৮ সালে বৈঠকের মধ্য দিয়ে আফগান পরবর্তী কাফিরদের বিরুদ্ধে অন্যান্য ময়দানে জিহাদ জারি রাখার জন্যে আল কায়েদার জন্ম হয়, তবে আজ্জামের মৃত্যুর পর জাওয়াহিরি মুসলিম শাসক বিরোধী জিহাদের দিকে বিন লাদেনের দৃষ্টি পরিবর্তন করেন। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত উইথড্রয়ালের পর ১৯৯০ সালে বিন লাদেন গালফ ওয়ারে সৌদি সরকারকে আল কায়েদার সাহায্য নেবার আহবান জানান, কিন্তু সৌদি সরকার তার সাহায্য প্রত্যাখ্যান করে মার্কিন বাহিনীর সাহায্য নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বিন লাদেনের পর আইমান আল জাওয়াহিরি এর নেতৃত্বে আছেন। ওয়াহাবি মতবাদে যেমন নিয়তকে উপেক্ষা করে তাকফির করবার ব্যাধি বিদ্যমান, আইএস-এর মধ্যে একই বৈশিষ্ট্যের দরুন গণহারে তাকফিরের নজির থাকলেও, আল কায়েদার মধ্যে তা নেই। তবে গণহারে তাকফিরের প্রবণতা না থাকলেও তাদের মধ্যে মুসলিম শাসকদের তাকফিরের প্রবণতা আছে, আছে গণহারে কুফর সাব্যস্ত করার প্রবণতা (ওজর বিল জাহালতের কারণে তাকফির থেকে বিরত থাকে), আছে কাফিরদের নির্বিচারে হত্যা করার মতন কিছু উগ্রতা।


৬. মুলধারার ওয়াহাবিজমে আহলে হাদিস প্রভাব

আব্দুল হক বেনারসির তাকলিদ-ইজমা-কিয়াস বিরোধী শিক্ষা ১৯ শতকের শেষার্ধ্বে সৈয়দ নজির হুসাইন এবং নওয়াব সিদ্দিক হাসান খানের হাত ধরে আহলে হাদিস আন্দোলন নামে আত্মপ্রকাশ করে। নজদের ওয়াহাবী ইমাম হামাদ ইবনে আতিকের (১৮২৪-১৮৮৪) সঙ্গে এ সময়ে নওয়াব সিদ্দিক হাসান খানের যোগাযোগ হয় এবং তিনি আহলে হাদিসদের চিন্তাধারায় প্রভাবিত হন। পরবর্তীতে তিনি তাঁর ছেলে সাদ ইবনে আতিককে (১৮৫০-১৯৩০) ভারতে সিদ্দিক হাসান এবং নজির হুসাইনের কাছে পড়তে পাঠান। সাদ ইবনে আতিক ভারতে নয় বছর ইলম শেখেন এবং ফিরে গিয়ে রিয়াদের কাদ্বী এবং ইবনে সৌদের আয়তাধীন তৃতীয় সৌদি রাষ্ট্রের গ্র্যান্ড ইমাম নিযুক্ত হন। তিনি ছাড়াও আরো অনেকেই ভারতে আহলে হাদিস শাইখদের দরসে যোগ দেন, এর মধ্যে আল আশ-শাইখের কেউ কেউ ছিলেন। তখন থেকেই ওয়াহাবীদের মূলধারা যারা হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী, তাদের সঙ্গে আহলে হাদিস ফিকহ অনুসারীদের বিভেদ সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে সাদ ইবনে আতিকের আহলে হাদিস ধারার চিন্তাধারায় প্রভাবিত হন তাঁর বিখ্যাত ছাত্র সৌদের একমাত্র আল আশ-শাইখ বহির্ভূত গ্র্যান্ড ইমাম আব্দুল আজিজ বিন বাজ (১৯১২-১৯৯৯)। বিন বাজ একই চিন্তাধারা লালনকারী দামেস্কের নাসিরউদ্দিন আলবানীকে সদ্য প্রতিষ্ঠিত মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাদীসের অধ্যাপক হিসেবে সুপারিশ করেন। আলবানী অনেকটা স্বশিক্ষিত ছিলেন। এর দরুন হাদিসশাস্ত্রের ভুল বুঝের কারণে তিনি বুখারি ও মুসলিমের হাদিসকে দুর্বল গণ্য করেন এবং দ্বইফ হাদিসকে জাল হাদিসের একটা প্রকার মনে করে বাতিল ভাবার সম্পূর্ণ নতুন চিন্তাধারার উদ্ভব ঘটান। ভারতের আহলে হাদিসের অনুসারী হওয়ায় হাম্বলী মাযহাবের আলিমদের সঙ্গে বিশেষ করে মুহাম্মাদ ইবনে ইব্রাহীম আল আশ-শাইখ এর সঙ্গে তাঁর ও বিন বাজদের গুরুতর বিভেদ সৃষ্টি হয়; উদাহরণস্বরূপ আলবানীর আহলে হাদিস ফিকহ অনুযায়ী গৃহীত হুকুমে নামাযে বুকে হাত বাঁধা এবং নারীদের মুখ পর্দার অন্তর্ভুক্ত না হওয়া নিয়ে ওয়াহাবীদের (হাম্বলীদের) সঙ্গে বিরোধের উল্লেখ করা যায়। এমন আরো কিছু ব্যাপারে তারা চার মাযহাবের বাইরে সম্পূর্ণ নতুন সিদ্ধান্তের উদ্ভব ঘটায়। তবে আকিদার ক্ষেত্রে ইবনে তাইমিয়্যাহর ইজতিহাদি ধারনাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করায় ফিকহী মাযহাবের ব্যাপারে ওয়াহাবিরা দোটানায় পড়ে। আলবানী অবশ্য ওয়াহাবিদের আকিদায় সালাফি হিসেবে অবহিত করলেও মাযহাবের ক্ষেত্রে মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব এবং তার হাদিসের অজ্ঞতা ও তার ফলবশত হাম্বলী মাজহাব অনুসরণের সমালোচনা করেন। তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের, তাঁর প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল বান্না, সায়্যিদ কুতুবদের সমালোচনা করে এই বলে যে তাঁদের আকিদাগত বিভ্রান্তি আছে, কারণ তারা আকিদা ও ইলমে দ্বীনের চেয়ে রাজনীতিকে প্রাধান্য দেয়। তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে থাকলেও মনে করতেন যে আকিদার দাওয়াত ও শিক্ষার মাধ্যমেই কেবল তা সম্ভব, কিন্তু শেষমেশ গিয়ে মাজহাব বিরোধীতাকেই তাঁর দাওয়াতের মূল কার্যক্রম বানিয়ে ফেলেন। ক্রমেই তাঁর ছাত্র এবং অনুসারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

৭. শাসক এবং সালাফি আন্দোলন

আলবানী রাজনৈতিকভাবে শাসক অনুগত (লয়েলিস্ট) বা বিদ্রোহী (রিজেকশনিস্ট) কোনোটাই ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন নীরবতাপন্থী (কোয়ায়টিস্ট)। কিন্তু তার অনেক অনুসারীরা লয়েলিস্ট এবং রিজেকশনিস্ট দুদলে বিভক্ত হয়। মুসলিম ব্রাদারহুড ও সাহওয়া বিরোধী আলবানীর ছাত্রদের প্রতিষ্ঠিত আল জামা আস সালাফিয়া আল মুহতাসিবা নামের দলটি মূলত ভালো কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধের ব্যাপারে কাজ করতো। এই দলটির বৈশিষ্ট্য ছিল অনন্য। কারণ তারা শাসক বিদ্রোহী বা তাকফিরি ছিল না, বরং তারা আলবানীর ফতোয়া অনুযায়ী কুরাইশ ব্যতীত অন্য কাউকে শাসক হিসেবে বৈধ মনে করতো না। এর একটা অংশ পরবর্তীতে বিদ্রোহী হয়ে উঠে এবং জুহাইমান আল উতাইবির নেতৃত্বে এই দলটি ১৯৭৯ সালে মসজিদ আল হারাম অবরোধ করে সৌদ সরকারকে ক্ষমতা ছেড়ে কুরাইশ বংশে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চায়। ফলবশত, সৌদি সরকার আলবানীকে দেশ থেকে বহিষ্কার করে, যদিও পরবর্তীতে বিন বাজের হস্তক্ষেপে তিনি আবার সৌদিতে ফিরে যান। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় আলবানীর অনুসারী অন্য অংশটি লয়েলিস্ট বা শাসকের একান্ত অনুগত হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এই দলের হোতা ছিলেন মুহাম্মাদ আমান আল জামি (১৯৩০-১৯৯৬), যিনি মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় নিয়োজিত ছিলেন। এ সময়ে আলবানীর ছাত্র রাবি আল মাদখালী (১৯৩১-বর্তমান) ও মুকবিল বিন হাদি (১৯৩৩-২০০১) প্রমুখেরা শাসক অনুগত এই দল গড়তে থাকেন। রাবি আল মাদখালী এই আন্দোলনের মূল তাত্ত্বিক হয়ে উঠায় এর নাম হয়ে দাঁড়ায় মাদখালী। আশির দশকের প্রথমদিকে তারা প্রান্তিক থাকলেও শেষদিকে এসে গালফ ওয়ার এবং সাহওয়া আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তারা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। এই প্রেক্ষাপটে ১৯৮৮ সালে প্রথমবারের মতন হাম্বলী ইমাম আল বারবাহারির (৮৬৭-৯৪১) দিকে নিসবতকৃত বিকৃত কথাবার্তা ও আকিদাসম্পন্ন শরহুস সুন্নাহ বইটি সৌদি থেকে প্রকাশিত হয়। যদিও বইটি ইমাম আল বারবাহারির থেকে প্রমাণিত নয়, তবুও বইয়ের শাসক আনুগত্যের আকিদা মাদখালীদের আকিদার ন্যায্যতাদানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। স্বাভাবিক কারণেই ১৯৯০ এর দশকে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ক্ষমতা জামি এবং মাদখালীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময়ে মদীনার পাঠ্যক্রমে শরহুস সুন্নাহকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তখন থেকে সালাফি ভিন্ন অন্য ধারা তো দূরে থাক, মাদখালী ব্যতীত অন্যান্য সালাফিদেরও মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। এখানকার স্নাতকরা নিজেদের দেশে ফিরে গিয়ে সালাফিজমের এই নতুন ধারার প্রচার প্রসার করতে থাকে। সালাফিদের কোয়ায়টিস্ট (নীরবতাপন্থী) ধারা পরবর্তীতে মধ্যমপন্থার ধারক হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করে।

বর্তমান সময় পর্যন্ত সালাফি পরিচয়ের বিবর্তন এবং বিকাশ এ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে!

  দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে! এক.   শুনতে খারাপ শোনালেও এটা সত্য, রবীন্দ্রনাথের...