"পাহাড়ি ও বাঙ্গালীর ভুল বুঝবুঝি দূর হোক, পাহাড়ে আসুক শান্তি"
![]() |
পাহাড়ে শান্তি আসুক |
শুরুর ইতিহাস
পাকিস্তান শাসনামলে তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তানে এ সংঘাতের সূচনালগ্ন হিসেবে ধরে নেয়া হয়। ১৯৬২ সালে কাপ্তাই বাঁধ অবকাঠামো নির্মাণের ফলে লক্ষাধিক লোক স্থানচ্যুত হন। তাদের স্থানচ্যুতিতে তৎকালীন সরকার কোন গুরুত্ব দেয়নি ও হাজারো পরিবার ভারতে চলে যায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী চাকমা রাজনীতিবিদ মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা স্বায়ত্তশাসন ও ঐ অঞ্চলের জনগণের অধিকারকে স্বীকৃতি দেবার জন্য দাবী উত্থাপন করেন।
লারমা ও অন্যান্য পার্বত্য আদিবাসীর প্রতিনিধিগণ বাংলাদেশের সংবিধানের খসড়ার বিপক্ষে অবস্থান নেন। তাদের মতে ঐ সংবিধানে নৃজাতিগোষ্ঠীকে স্বীকৃতিসহ অ-মুসলিম ও অ-বাঙ্গালীদের সংস্কৃতিকে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। সরকারের নীতি কেবলমাত্র বাঙ্গালী সংস্কৃতি ও বাংলা ভাষাকে ঘিরে। এছাড়াও বাংলাদেশের সকল নাগরিককে বাঙ্গালী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা’র আলোচনান্তে জানানো হয় যে, পার্বত্য নৃজাতিগোষ্ঠী বাঙ্গালী হিসেবে পরিচিতি লাভে একমত পোষণ করেছেন।এছাড়াও শেখ মুজিব জানিয়েছেন যে, পার্বত্য এলাকায় মুসলিম বাঙ্গালীদের জোরপূর্বক আবাসনের ফলে স্থানীয় বৌদ্ধ ও সংখ্যালঘু হিন্দু জনগোষ্ঠী মেনে নিতে পারছে না।
![]() |
পার্বত্য চট্টগ্রাম |
শান্তি বাহিনী গঠনঃ
১৯৭৩ সালে লারমা ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) প্রতিষ্ঠা করেন। এ সমিতিতে স্থানীয় আদিবাসী ও উপজাতীয় লোকগণ সংশ্লিষ্ট ছিলেন। পিসিজেএসএসের সশস্ত্র সংগঠন শান্তি বাহিনী সরকারি নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়।শেখ মুজিবের জরুরী শাসনামলে এ সঙ্কটের সূচনা ঘটে। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যানবাহনে প্রথমবারের মতো আক্রমণ করে শান্তি বাহিনী। ভারত সরকার সীমান্তে ঘাঁটি গড়তে শান্তি বাহিনীকে সহায়তা করে।
শান্তি বাহিনী তাদের আক্রমণ পরিচালনার সুবিধার্থে এ অঞ্চলকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে। স্থানীয় অধিবাসীদের জোরপূর্বক সংগঠনে যোগ দিতে বাধ্য করে ও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করে। বাঙ্গালী পুলিশ ও সৈনিক, সরকারি কার্যালয়, সরকারি কর্মকর্তা ও এতদাঞ্চলের বাঙ্গালী মুসলিম অধিবাসীদেরকে লক্ষ্য করে আক্রমণ পরিচালনা করতে থাকে। এছাড়াও এ বাহিনীর বিপক্ষে অবস্থানরত যে-কোন আদিবাসী ও সরকারকে সমর্থনদানকারীকেও আক্রমণ করতে দ্বিধাবোধ করেনি।
সরকারি তথ্য মোতাবেক জানা যায় যে, ১৯৮০ থেকে ১৯৯১ সালের মধ্যে ১,১৮০ ব্যক্তি শান্তি বাহিনীর হাতে প্রাণ হারায়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ পুলিশ, বাঙ্গালী মুসলিম বসবাসকারী, শান্তি বাহিনী ও এর সমর্থকেরা নৃজাতিগোষ্ঠী উচ্ছেদসহ মানবাধিকার হরণে সম্পৃক্ত হয়।
![]() |
পাহাড়র জনগোষ্ঠী |
পাহাড়ের গনহত্যাঃ
২০২৪ সালের সংঘর্ষ:
১৮ সেপ্টেম্বর, খাগড়াছড়ি সদরে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় গণপিটুনিতে এক বাঙ্গালী যুবক প্রাণ হারান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ সেপ্টেম্বর একদল প্রতিবাদ মিছিল বেড় করে।মিছিলে উপজাতি গোষ্ঠী হামলাকরে। দীঘিনালায় বাড়িঘর ও দোকান অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরসহ দাঙ্গা শুরু হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য সেনাবাহিনী যওয়ার পরে। সংগঠিত হয়ে একদল পাহাড়ি সন্ত্রাসী সেনসদস্যদের উপর আক্রমণ করে আত্মরক্ষার জন্য সেনাবাহিনী গুলি করে।এতে তিনজন পাহাড়ি ব্যক্তি গুলিতে নিহত হন এবং শতাধিক আহত হন।
২০ সেপ্টেম্বর, পাহাড়িরা দুপুরে রাঙ্গামাটির স্টেডিয়াম এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এতে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেয়। মিছিলটি বনরুপা বাজারে গেলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ। বাজারে মিছিল নিয়ে জড়ো হওয়া পাহাড়িরা মসজিদে হামলা করে।খবর ছড়িয়ে পড়লে বাঙ্গালীরা তাদেরকে আক্রমণ করে। ঘটনায় দু’পক্ষের ৫০ জনেরও বেশি সংখ্যক মানুষ আহত ও একজন চাকমা নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য রাঙামাটি পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।হত্যার বিচার, অগ্নিসংযোগ করে দোকানপাট পুড়িয়ে দেওয়া ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে ‘বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতার’ ব্যানারে ৭২ ঘণ্টা অবরোধের ডাক দেওয়া হয়। সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টও (ইউপিডিএফ) কর্মসূচিতে সমর্থন জানায়।
২১ সেপ্টেম্বর, জেলাগুলোতে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। সংঘাতপ্রবণ এলাকাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়। তিন জেলায় দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলছে না। রাঙামাটিতে অবরোধের পাশাপাশি ১৪৪ ধারা বলবৎ ও পরিবহন ধর্মঘট থাকে।
একটি বাংলাদেশের এসকল অশান্তি দূর হোক, বয়ে যাক শন্তির বাতাস পাহাড়ে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ