expr:class='"loading" + data:blog.mobileClass'>

Wikipedia

সার্চ ফলাফল

রবিবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০২৫

পাহাড়ি-বাঙ্গালীর ভুল বুঝাবুঝি দূর হোক, আসুক পাহাড়ে শান্তি

 "পাহাড়ি ও বাঙ্গালীর ভুল বুঝবুঝি দূর হোক, পাহাড়ে আসুক শান্তি"

পাহাড়ে শান্তি আসুক

শুরুর ইতিহাস 

পাকিস্তান শাসনামলে তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তানে এ সংঘাতের সূচনালগ্ন হিসেবে ধরে নেয়া হয়। ১৯৬২ সালে কাপ্তাই বাঁধ অবকাঠামো নির্মাণের ফলে লক্ষাধিক লোক স্থানচ্যুত হন। তাদের স্থানচ্যুতিতে তৎকালীন সরকার কোন গুরুত্ব দেয়নি ও হাজারো পরিবার ভারতে চলে যায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী চাকমা রাজনীতিবিদ মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা স্বায়ত্তশাসন ও ঐ অঞ্চলের জনগণের অধিকারকে স্বীকৃতি দেবার জন্য দাবী উত্থাপন করেন।

লারমা ও অন্যান্য পার্বত্য আদিবাসীর প্রতিনিধিগণ বাংলাদেশের সংবিধানের খসড়ার বিপক্ষে অবস্থান নেন। তাদের মতে ঐ সংবিধানে নৃজাতিগোষ্ঠীকে স্বীকৃতিসহ অ-মুসলিম ও অ-বাঙ্গালীদের সংস্কৃতিকে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। সরকারের নীতি কেবলমাত্র বাঙ্গালী সংস্কৃতি ও বাংলা ভাষাকে ঘিরে। এছাড়াও বাংলাদেশের সকল নাগরিককে বাঙ্গালী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা’র আলোচনান্তে জানানো হয় যে, পার্বত্য নৃজাতিগোষ্ঠী বাঙ্গালী হিসেবে পরিচিতি লাভে একমত পোষণ করেছেন।এছাড়াও শেখ মুজিব জানিয়েছেন যে, পার্বত্য এলাকায় মুসলিম বাঙ্গালীদের জোরপূর্বক আবাসনের ফলে স্থানীয় বৌদ্ধ ও সংখ্যালঘু হিন্দু জনগোষ্ঠী মেনে নিতে পারছে না।


পার্বত্য চট্টগ্রাম


শান্তি বাহিনী গঠনঃ

১৯৭৩ সালে লারমা ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) প্রতিষ্ঠা করেন। এ সমিতিতে স্থানীয় আদিবাসী ও উপজাতীয় লোকগণ সংশ্লিষ্ট ছিলেন। পিসিজেএসএসের সশস্ত্র সংগঠন শান্তি বাহিনী সরকারি নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়।শেখ মুজিবের জরুরী শাসনামলে এ সঙ্কটের সূচনা ঘটে। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যানবাহনে প্রথমবারের মতো আক্রমণ করে শান্তি বাহিনী। ভারত সরকার সীমান্তে ঘাঁটি গড়তে শান্তি বাহিনীকে সহায়তা করে।

শান্তি বাহিনী তাদের আক্রমণ পরিচালনার সুবিধার্থে এ অঞ্চলকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে। স্থানীয় অধিবাসীদের জোরপূর্বক সংগঠনে যোগ দিতে বাধ্য করে ও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করে। বাঙ্গালী পুলিশ ও সৈনিক, সরকারি কার্যালয়, সরকারি কর্মকর্তা ও এতদাঞ্চলের বাঙ্গালী মুসলিম অধিবাসীদেরকে লক্ষ্য করে আক্রমণ পরিচালনা করতে থাকে। এছাড়াও এ বাহিনীর বিপক্ষে অবস্থানরত যে-কোন আদিবাসী ও সরকারকে সমর্থনদানকারীকেও আক্রমণ করতে দ্বিধাবোধ করেনি।

সরকারি তথ্য মোতাবেক জানা যায় যে, ১৯৮০ থেকে ১৯৯১ সালের মধ্যে ১,১৮০ ব্যক্তি শান্তি বাহিনীর হাতে প্রাণ হারায়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ পুলিশ, বাঙ্গালী মুসলিম বসবাসকারী, শান্তি বাহিনী ও এর সমর্থকেরা নৃজাতিগোষ্ঠী উচ্ছেদসহ মানবাধিকার হরণে সম্পৃক্ত হয়।


পাহাড়র জনগোষ্ঠী 


পাহাড়ের গনহত্যাঃ

১৯৭১ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, মুক্তিবাহিনী, রক্ষিবাহিনী, বিজিবি, আনসার, ভিডিপি এবং সেটেলারদের আক্রমনে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার আগ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে মোট ২৮ টি গনহত্যা সংগঠিত হয়।  

১। পানছড়ি-দিঘীনালা গনহত্যা, খাগড়াছড়ি(৫ ডিসেম্বর ১৯৭১):
১৯৭১ সালের ৫ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের দুইটি গ্রুপ ভারতের ত্রিপুরা থেকে এক গ্রুপ পানছড়ি এবং আরেক গ্রুপ দিঘীনালা হয়ে প্রবেশ করে।  চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়ার ক্ষোভের কারনে সেই মুক্তিযোদ্ধারা একই দিনে পানছড়িতে ১৮ জন এবং দিঘীনালায় ১৬ জন নিরস্ত্র সাধারন পাহাড়িকে হত্যা করে। 

অথচ ঐদিন চাকমারা খগড়াছড়িতে মিত্রবাহিনীকে বরন করার জন্য খাসি,গরু,মুরগী এসব নিয়ে বরন করতে এসেছিলো, কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, যারাই বরন করতে গিয়েছিলো সবাইকে ভারতীয় বাহিনীর নৃতৃত্বে থাকা বাহিনী হত্যা করে।


২। কুকিছড়া গনহত্যা, খাগড়াছড়ি(১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১):
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধিনতা লাভের ঠিক আগ মূহুর্তে ভারতীয় কমান্ডিং অফিসারের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা বর্তমান খাগড়াছড়ি জেলার কুকিছড়া নামক স্থানে ২২ জন নিরস্ত্র সাধারন পাহাড়িকে হত্যা করে এবং ২০০ এর অধিক বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। 

৩। দিঘীনালা গনহত্যা, খাগড়াছড়ি(১৯৭২):
বাংলাদেশ স্বাধিনতা লাভের পরে শেখ মুজিবর রহমান  পাকিস্তানি দোসর "রাজাকার" এবং "আলবদর" -দের একটি প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ প্রদান করেন।  তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং রক্ষিবাহিনী দিঘীনালার মেরুং-হাজাচরা-বোয়ালখালীতে কয়েকশ পাহাড়িকে হত্যা করে, শত শত বাড়িতে লুটপাট এবং পুড়িয়ে দেওয়া হয়।  অনেক নারী ধর্ষিত হন, এবং কয়েক  হাজার পাহাড়ি  অযথাই গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের শিকার হন। 

৪। থানচি গনহত্যা, বান্দরবান(নভেম্বর ১৯৭৬-জানুয়ারী ১৯৭৭):
বাংলাদেশী সেনাবাহিনী ১৯৭৬ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বান্দরবান জেলার থানচিতে সাংগু নদীর উপরের অঞ্চলে সামরিক অভিযান চালিয়ে শতাধিক পাহাড়িকে হত্যা করে, বহু নারী ধর্ষিত হয় এবং ১৫ হাজারের অধিক পাহাড়ি মায়ানমারে দেশান্তরি হতে বাধ্য হয়। 

৫। মাটিরাঙ্গা-গুইমারা-মানিকছড়ি-লক্ষিছড়ি গনহত্যা, খাগড়াছড়ি(১৯৭৭):
১৯৭৭ সালের শুরুর দিকে সরকারি বাহিনী বর্তমান খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা, গুইমারা, মানিকছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি এলাকার পাহাড়িদের উপর গনহত্যা চালায়।  এতে ৫০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়, ২৩ জন নারীকে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়।  পরবর্তীতে ৫৪ জনের একটি গনকবর আবিষ্কৃত হয়।  গ্রামবাসীদের সম্পদ লুট করা হয় এবং শত শত ঘরবাড়ি এমনকি বৌদ্ধ মন্দিরগুলোও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ৫,০০০ পাহাড়ি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে শরনার্থি হিসেবে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। 

৬। দুমদুম্যে-মৈডং-পানছড়ি, খাগড়াছড়ি(ডিসেম্বর ১৯৭৮-জানুয়ারী ১৯৭৯):
১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৭৯ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী খাগড়াছড়ি জেলার দুমদুম্যে মৌজা (মৌজা#১৫০), মৈডং মৌজা (মৌজা#১৩৮) এবং পানছড়ি মৌজার (মৌজা#১৩৭) ১৭৫ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে গঠিত একটি বৃহৎ অঞ্চলে আক্রমণ চালায়। এতে ৫০টি গ্রামের ৭৫,০০০ পাহাড়ি ভুক্তভোগী হয়।  শতাধিক পাহাড়িকে হত্যা করা হয় এবং বহু নারী ধর্ষিত হয়।  প্রায় সমস্ত ঘরবাড়ি এবং বৌদ্ধ মন্দির পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এই আক্রমন পরবর্তীতে মানুষ সবচেয়ে বেশি মারা গিয়েছিল অনাহারে। 

৭। মুবাছড়ি গনহত্যা, খাগড়াছড়ি(১৫ অক্টোবর ১৯৭৯):
১৯৭৯ সালের ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার মুবাছড়ি ইউনিয়নের ১৬ বর্গমাইলের মধ্যে সব গ্রাম পুড়িয়ে দেয়, কয়েক হাজার পুরুষ, নারী এবং শিশুকে হত্যা করে।  বহু নারীকে ধর্ষণ করা হয়।  এই ঘটনার পরে পুরো এলাকাটি সন্ত্রাসী শান্তিবাহিনীরা অক্ষত রেখে "গনহত্যা জাদুঘর" বানিয়ে রেখেছিল যা সাংবাদিক সালিম সামাস তার ক্যামেরাতে প্রথম তুলে নিয়ে আসেন। সেই ছবি বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হলে সেনাবাহিনী সেই গনহত্যা জাদুঘর নিশ্চিহ্ন করে দেয়। 

৮। কাউখালি গনহত্যা, রাঙ্গামাটি(১৯৮০):
পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় তত্বাবধানে সেটেলার বাঙালি পূর্নবাসন শুরুর পরে সেনা+সেটেলার মিলিত প্রথম গনহত্যা এটি।  ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালির উপর চালানো গনহত্যার ঠিক মাত্র ৯ বছর পরে সেই বাঙালিরাই পাহাড়িদের উপর এক নারকীয় গনহত্যা চালায় ১৯৮০ সালের ২৫ মার্চ।  রাঙ্গামাটির খাউখালি উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের সব গ্রামের পাহাড়িদেরকে সেদিন বৌদ্ধ মন্দির সংষ্কার বিষয়ক একটি মিটিংএ ডাকে সেনাবাহিনী। মিটিং-এ উপস্থিত নিরস্ত্র পাহাড়িদেরকে সেনাবাহিনী অতর্কিত ব্রাশ ফায়ার করতে শুরু করে।  এতে ঘটনাস্থলেই কয়েকশত পাহাড়ি নিহত হয়। যারা সেনাবাহিনীর গুলিতে শুধুমাত্র আহত হয়েছিল তাদেরকে হত্যার দায়িত্ব দেওয়া হয় পূনর্বাসিত সেটেলারদের উপর। সেটেলার বাঙালিরা বাকি আহত পাহাড়িদেরকে দা দিয়ে কুপিয়ে, পিঠিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। শত শত পাহাড়িদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।  এই গনহত্যায় প্রায় ৪০০ জন পাহাড়ি নিহত হয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান জিয়াউর রহমান সরকারের অধীনে একটি সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ২২ ও ২৩ এপ্রিল ১৯৮০ শাজাহান সিরাজ এমপি, রাশেদ খান মেনন এমপি ও উপেন্দ্র লাল চাকমা এমপি, এই তিন সংসদ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল কাউখালী গণহত্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান এবং পরিদর্শন শেষে তারা ২৫ এপ্রিল ১৯৮০ ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে উক্ত ঘটনার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং পূনর্বাসিত সেটেলারদের দায়ী করে বিবৃতি প্রদান করেন। 

৯। হরিনা গনহত্যা, রাঙ্গামাটি(১৯৮০):
১৯৮০ সালের ১০, ১৯, ২১ এবং ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ রাইফেলস রাঙ্গামাটির জেলার দুর্গম হরিণা উপত্যকার শুকনাচরী, মহালছড়ি, নুওআদাম, চিবেরেগা, তোইমিডং, টাগলকছড়া, এবং রাঙ্গাপানিছড়ার ৭ টি গ্রামের উপর চড়াও হয়ে গ্রামবাসীর উপর গনহত্যা চালায় এবং সবগুলি গ্রাম পুড়িয়ে দেয়। সেই জায়গাগুলি আজ সেটেলার বাঙালিদের দখলে। 

১০। রামগড় গনহত্যা, খাগড়াছড়ি(২৬ জুন ১৯৮১):
রাষ্ট্রীয় তত্বাবধানে বসতি স্থাপন করা সেটেলার বাঙালিরা ১৯৮১ সালের ২৬ জুন বানরাইপাড়া, বেলতালি ও বেলছাড়ি এলাকার পাহাড়িদের উপর আক্রমণ করে শতাধিক পুরুষ, মহিলা ও শিশুকে হত্যা করে এবং তাদের গ্রাম ও কৃষি জমি দখল করে।  ৫,০০০ জন পাহাড়ি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে শরনার্থী হতে বাধ্য হয়। 

১১। মাটিরাঙ্গা গনহত্যা, খাগড়াছড়ি(১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৮১):
১৯৮১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার ফেনী উপত্যকার তেলাফাং, আশালং, গুরাঙ্গাপাড়া, তবলছড়ি, বরনালা ইত্যাদিসহ ৩৫টি পাহাড়ি গ্রামে হামলা চালায় সেটেলার বাঙালিরা। গ্রামগুলো লুটপাট এবং পুড়িয়ে দেয় এবং অসংখ্য পুরুষ, নারী ও শিশুকে হত্যা করে। 

১২। গোলকপতিমাছড়া-মাচ্ছ্যাছড়া-তারাবনছড়ি গনহত্যা, খাগড়াছড়ি(জুন-অগাস্ট ১৯৮৩):
২৬ জুন, ১১, ২৬, ২৭ জুলাই এবং ৯, ১০, ১১ আগস্ট ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও সেটেলার বাঙালিরা মিলে গোলাকপটিমাছড়া, মাচ্ছ্যাছড়া, তারাবনিয়া, লোগাং, তারাবন্যা, মরমচ্যাছড়া, জেডামাছড়া ইত্যাদি গ্রামের পাহাড়িদের উপর গনহত্যা চালায়। শত শত বাড়ি লুটপাট ও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং শতাধিক পাহাড়িকে হত্যা করা হয়।  নিহতদের বেশিরভাগই ছিলেন বৃদ্ধ, নারী ও শিশু।  পাহাড়িদেরকে এলাকাছাড়া করার পরে সেসব স্থানে সেটেলার বাঙালিরা বসতি স্থাপন করে। 

১৩।ভূষনছড়া গনহত্যা, রাঙ্গামাটি(৩১ মে ১৯৮৪):
১৯৮৪ সালের ৩১ মে সকালে সন্ত্রাসী শান্তি বাহিনীর গেরিলারা রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলার গোরস্তান, ভূষনছড়া এবং ছোটাহরিনা এলাকার সেটেলার বসতিতে হামলা চালায়।  এতে প্রায় ১০০০ জন সেটেলার বাঙালি নিহত হয় এবং তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং একই সময়ে ওই এলাকার তিনটি বিজিবি ক্যাম্পেও আক্রমন চালানো হয়। এই ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে পরবর্তীতে ৩১ মে এবং পরের দিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৬তম বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৩০৫ তম ব্রিগেডের সদস্যরা, ১৭ তম ব্যাটালিয়নের বাংলাদেশ রাইফেলসের সদস্যরা, সেটেলার বাঙালিদেরকে সঙ্গে নিয়ে সুগুরি পাড়া, গোরস্তান, তারেঙ্গ্যা ঘাট, ভূষনছড়া ইত্যাদি পাহাড়ি গ্রামের মোট ৪০০ জনকে হত্যা করা হয়। অনেক নারীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করার পরে গুলি করে হত্যা করা হয়। প্রায় ৭,০০০ পাহাড়ি ভারতের মিজোরামে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। 
একজন প্রত্যক্ষদর্শী পাহাড়ি ঘটনার বর্ননা দিয়েছিলেন......
"৩১ মে সেনাবাহিনী এবং সেটেলাররা মিলে আমাদের গ্রামটি ধ্বংস করে, নারীদের ধর্ষণ করে এবং শত শত মানুষ হত্যা করে।  আমি দুজন পাহাড়ি মহিলাকে ধর্ষণ হতে দেখেছি, ধর্ষনের পরে তাদেরকে বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে হত্যা করা হয়।  শিশুদেরকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় | আমাকেসহ আরও বহু জনকে গাছের ডালে উল্টো করে ঝুলিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল।  আমাকেও মৃত মনে করে ফেলে গিয়েছিল কিন্তু দৈবক্রমে আমি বেঁচে যায়। সেই দিনের স্মৃতি এখনও আমার জন্য এক আতঙ্কের মত। সৈন্যরা পাহাড়ি নারীদেরকে ধর্ষনের পর গোপনাঙ্গে বেয়নেট ঢুকিয়ে হত্যা করেছিল আর চিৎকার করে বলছিল, "বাংলাদেশে আর কোনো চাকমা জন্মাবে না'"। রাষ্ট্রপতি এরশাদ ৫ জুন ১৯৮৪ সালে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাটি পরিদর্শন করেন।  শান্তিবাহিনী কর্তৃক সেটেলারদের উপর সংগঠিত হামলাটি বাংলাদেশ সংবাদমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় কিন্তু সেনাবাহিনী কর্তৃক পাহাড়িদের উপর হামলা নিয়ে কোন তথ্য প্রচারিত হয়নি। 

২০২৪ সালের সংঘর্ষ:

১৮ সেপ্টেম্বর, খাগড়াছড়ি সদরে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় গণপিটুনিতে এক বাঙ্গালী যুবক প্রাণ হারান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ সেপ্টেম্বর একদল প্রতিবাদ মিছিল বেড় করে।মিছিলে উপজাতি গোষ্ঠী হামলাকরে। দীঘিনালায় বাড়িঘর ও দোকান অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরসহ দাঙ্গা শুরু হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য সেনাবাহিনী যওয়ার পরে। সংগঠিত হয়ে একদল পাহাড়ি সন্ত্রাসী সেনসদস্যদের উপর আক্রমণ করে আত্মরক্ষার জন্য সেনাবাহিনী গুলি করে।এতে তিনজন পাহাড়ি ব্যক্তি গুলিতে নিহত হন এবং শতাধিক আহত হন।

২০ সেপ্টেম্বর, পাহাড়িরা দুপুরে রাঙ্গামাটির স্টেডিয়াম এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এতে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেয়। মিছিলটি বনরুপা বাজারে গেলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ। বাজারে মিছিল নিয়ে জড়ো হওয়া পাহাড়িরা মসজিদে হামলা করে।খবর ছড়িয়ে পড়লে বাঙ্গালীরা তাদেরকে আক্রমণ করে। ঘটনায় দু’পক্ষের ৫০ জনেরও বেশি সংখ্যক মানুষ আহত ও একজন চাকমা নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য রাঙামাটি পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।হত্যার বিচার, অগ্নিসংযোগ করে দোকানপাট পুড়িয়ে দেওয়া ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে ‘বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতার’ ব্যানারে ৭২ ঘণ্টা অবরোধের ডাক দেওয়া হয়। সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) কর্মসূচিতে সমর্থন জানায়।

২১ সেপ্টেম্বর, জেলাগুলোতে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। সংঘাতপ্রবণ এলাকাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়। তিন জেলায় দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলছে না। রাঙামাটিতে অবরোধের পাশাপাশি ১৪৪ ধারা বলবৎ ও পরিবহন ধর্মঘট থাকে।

একটি বাংলাদেশের এসকল অশান্তি দূর হোক, বয়ে যাক শন্তির বাতাস পাহাড়ে।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে!

  দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে! এক.   শুনতে খারাপ শোনালেও এটা সত্য, রবীন্দ্রনাথের...