expr:class='"loading" + data:blog.mobileClass'>

Wikipedia

সার্চ ফলাফল

বুধবার, ১ জানুয়ারী, ২০২৫

আল্লাহ ব্যতিত অন্য কাউকে অভিভাবক মানার পরিমান ভাল নয়

 " আল্লাহ ব্যতিত অন্য কাউকে অভিভাবক মানার পরিমান ভাল নয়"




অভিভাবক (ইংরেজি: Parent) মানে কি তা আমাদের জানা দরকার। মানবজাতিকূলে জন্মগ্রহণকারী সন্তানের মা অথবা বাবা অথবা অন্য যে-কোন প্রজাতি কর্তৃক নিজ সন্তানের রক্ষণাবেক্ষনকারীকে বুঝায়। ল্যাটিন ভাষার প্যারেন্স থেকে প্যারেন্ট শব্দটি উদ্ভূত হয়েছে। একজন শিশুর এক বা একাধিক অভিভাবক থাকতে পারে।  মানব সমাজে ও জীববিদ্যা সম্বন্ধীয় মাতা এবং পিতা উভয়েই শৈশবকালীন সময়ে সন্তানের বৃদ্ধিতে যাবতীয় দায়ভার বহন করেন।


মায়ের ন্যায় বাবাকেও তাদের জৈবিক, সামাজিক অথবা বৈধভাবে ব্যক্তিগত সম্পর্কের মাধ্যমে শ্রেণীবিন্যাস করা যায়। ঐতিহাসিকভাবে জৈবিক সম্পর্কের মাধ্যমে পিতৃত্ব নির্ধারণ ও বংশ রক্ষা করা হয়। কিন্তু, সাম্প্রতিককালে পিতৃত্বের দাবী নির্ধারণে উত্তরোত্তর সমস্যা সৃষ্টিসহ সামাজিক নিয়ম-কানুনের প্রয়োজনে বাবা তথা সন্তানের মায়ের স্বামী হিসেবে উপযুক্ত স্বাক্ষ্য-প্রমাণের দরকার পড়ে।


কিন্তু এখানে অভিবাবক বলতে মানব জাতির তত্ত্বাবধায়ক বুঝানো হয়েছে যার অধিকার একমাত্র আল্লাহর। তিনিই এই মহাবিশ্বের মালিক, তিনিই আমাদের স্রষ্টা, আর তার তত্ত্বাবধান ব্যতিত কাউকে অভিবাবক মেনে নেওয়া নিষেধ করেছেন আল্লাহ। 

আদতে অন্যান্য কেউ যদি মানব জাতির অভিবাবক হয় তবে তা ত্রুটিপূর্ণ এবং দুনিয়া ও আখিরাতে এই অভিবাকত্বের কোন মূল্য নাই।


আবার এই অভিবাবক মেনে নেয়ারও প্রকার ভেদ আছে, যেমন ব্যক্তি আদর্শের অভিবাবক, জাতীয় আদর্শের অভিবাবক, অর্থনৈতিক অভিবাবক, রাজনৈতিক অভিবাবক ইত্যাদি


আল্লাহ বলেন,

وَ الَّذِیْنَ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِهٖۤ اَوْلِیَآءَ اللّٰهُ حَفِیْظٌ عَلَیْهِمْ١ۖ٘ وَ مَاۤ اَنْتَ عَلَیْهِمْ بِوَكِیْلٍ


যারা তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে নিজেদের অভিভাবক৬ বানিয়ে নিয়েছে আল্লাহই তাদের তত্বাবধায়ক। তুমি তাদের জিম্মাদার নও।(সূরা:আস-শুরা,আয়াত:৬)



এখানে اولياء শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে আরবী ভাষায় যার অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। বাতিল উপাস্যদের সম্পর্কে পথভ্রষ্ট মানুষদের বিভিন্ন আকীদা-বিশ্বাস এবং ভিন্ন ভিন্ন অনেক কর্মপদ্ধতি আছে। কুরআন মজীদে এগুলোকেই “আল্লাহ ছাড়া অন্যদের অভিভাবক বানানো” বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কুরআন মজীদে অনুসন্ধান করলে ولي শব্দটির নিম্নবর্ণিত অর্থসমূহ জানা যায়ঃ 

একঃ 

মানুষ যার কথামত কাজ করে, যার নির্দেশনা মেনে চলে এবং যার রচিত নিয়ম-পন্থা, রীতি-নীতি এবং আইন-কানুন অনুসরণ করে। 


لَّعَنَهُ اللَّهُ وَ قَالَ لَاتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ نَصِيبًا مَّفْرُوضًا " 


যাকে আল্লাহ অভিশপ্ত করেছেন। (তারা সেই শয়তানের আনুগত্য করছে) যে আল্লাহকে বলেছিল, "আমি তোমার বান্দাদের থেকে একটি  নির্দিষ্ট অংশ নিয়েই ছাড়বো।'(সূরা নিসা:১১৮)


اتَّبِعُوا مَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَّبِّكُمْ وَ لَا تَتَّبِعُوا مِنْ دُونِةٍ أَوْلِيَاءَ قَلِيلًا مَّا تَذَكَّرُونَ


হে মানব সমাজ! তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের ওপর যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তার অনুসরণ করো এবং নিজেদের রবকে বাদ দিয়ে অন্য অভিভাবকদের অনুসরণ করো না।৪ কিন্তু তোমরা খুব কমই উপদেশ মেনে থাকো।(সূরা আরাফ:৩)


একই সূরার ২৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন:

হে বনী আদম! শয়তান যেন তোমাদের আবার ঠিক তেমনিভাবে বিভ্রান্তির মধ্যে নিক্ষেপ না করে যেমনভাবে সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল এবং তাদের লজ্জাস্থান পরস্পরের কাছে উন্মুক্ত করে দেবার জন্য তাদেরকে বিবস্ত্র করেছিল। সে ও তার সাথীরা তোমাদেরকে এমন জায়গা থেকে দেখে যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না। এ শয়তানদেরকে আমি যারা ঈমান আনে না।

দুইঃ 

যার দিক নির্দেশনার (Guidance) ওপর মানুষ আস্থা স্থাপন করে এবং মনে করে সে তাকে সঠিক রাস্তা প্রদর্শনকারী এবং ভ্রান্তি থেকে রক্ষাকারী। 


তিনঃ 

যার সম্পর্কে মানুষ মনে করে, আমি পৃথিবীতে যাই করি না কেন সে আমাকে তার কুফল থেকে রক্ষা করবে। এমনকি যদি আল্লাহ‌ থাকেন এবং আখেরাত সংঘটিত হয় তাহলে তার আযাব থেকেও রক্ষা করবেন (আন নিসা- ১২৩ - ১৭৩ ; আল আন’আম -৫১ ; আর রা’দ -৩৭ ; আল আনকাবুত -২২ ; আল আহযাব -৬৫ ; আয-যুমার -৩ আয়াত)। 

চারঃ 

যার সম্পর্কে মানুষ মনে করে, পৃথিবীতে তিনি অতি প্রাকৃতিক উপায়ে তাকে সাহায্য করেন, বিপদাপদে তাকে রক্ষা করেন। রুজি-রোজগার দান করেন, সন্তান দান করেন, ইচ্ছা পূরণ করেন এবং অন্যান্য সব রকম প্রয়োজন পূরণ করেন ( হুদ-২০ , আর রা’দ-১৬ ও আল আনকাবুত-৪১ আয়াত)। 


অলী(ولي) শব্দটি কুরআন মজীদের কোন কোন জায়গায় ওপরে বর্ণিত অর্থসমূহের কোন একটি বুঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে এবং কোথাও কোথাও সবগুলো অর্থ একত্রেও বুঝানো হয়েছে। আলোচ্য আয়াতটি তারই একটি। এখানে আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে অলী বা অভিভাবক বানানোর অর্থ ওপরে বর্ণিত চারটি অর্থেই তাদেরকে পৃষ্টপোষক, সহযোগী ও সাহায্যকারী মনে করা।

আল্লাহই মানুষের একমাত্র তত্বাবধায়ক অর্থাৎ তিনি তাদের সমস্ত কাজকর্ম দেখছেন এবং তাদের আমলনামা প্রস্তুত করছেন। তাদের কাছে জবাবদিহি চাওয়া ও তাদেরকে পাকড়াও করা তাঁরই কাজ। “তুমি তাদের জিম্মাদার নও।” নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য করে একথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ তাদের ভাগ্য তোমার হাতে তুলে দেয়া হয়নি যে, যারা তোমার কথা মানবে না তাদেরকে তুমি জ্বালিয়ে ছাই করে দেবে, কিংবা ক্ষমতাচ্যুত করবে অথবা তছনছ করে ফেলবে। একথার অর্থ আবার এও নয় যে, নবী ﷺ নিজেকে সে রকম মনে করতেন। তাই তাঁর ভুল ধারণা বা আত্মবিভ্রম দূর করার জন্য একথা বলা হয়েছে। বরং কাফেরদের শুনানোই এর মূল উদ্দেশ্য। যদিও বাহ্যিকভাবে নবীকেই ﷺ সম্বোধন করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কাফেরদেরকে একথা বলাই উদ্দেশ্য যে, তোমাদের মধ্যে যারা খোদাপ্রাপ্তি এবং আধ্যাত্মিকতার প্রহসন করে সাধারণত যেভাবে ঘটা করে তা দাবী করে, আল্লাহর নবী তেমন কোন দাবী করেন না। জাহেলী সমাজে সাধারণভাবে এ ধারণা প্রচলিত আছে যে, ‘দরবেশ’ শ্রেণীর লোকেরা এমন প্রতিটি মানুষের ভাগ্য নষ্ট করে দেয় যারা তাদের সাথে বে-আদবী করে। এমনকি তাদের মৃত্যুর পরেও কেউ যদি তাদের কবরেরও অবমাননা করে এবং অন্য কিছু না করলেও যদি তাদের মনের মধ্যে কোন খারাপ ধারণার উদয় হয় তাহলেই তাকে ধ্বংস করে দেয়। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে এ ধারণা ঐ সব “দরবেশ মহামান্যরা” নিজেরাই প্রচার করেন এবং যেসব নেককার লোক নিজেরা এ কাজ করেন না কিছু ধূর্ত লোক তাদের হাড্ডিসমূহকে নিজেদের ব্যবসায়ের পুঁজি বানানোর জন্য তাদের সম্পর্কে এ ধারণা প্রচার করতে থাকে যাই হোক মানুষের ভাগ্য গড়া ও ভাংঙ্গার ক্ষমতা-ইখতিয়ার থাকাকেই সাধারণ মানুষ রূহানিয়াত ও খোদাপ্রাপ্তির অতি আবশ্যকীয় দিক বলে মনে করেছে। প্রতারণার যাদুর এই মুখোশ খুলে দেয়ার জন্য আল্লাহ‌ কাফেরদের শুনিয়ে তাঁর রসূলকে বলছেন, নিঃসন্দেহে তুমি আমার নবী এবং আমি তোমাকে আমার অহী দিয়ে সম্মানিত করেছি। শুধু মানুষকে সঠিক পথ দেখানোই তোমার কাজ। তাদের ভাগ্য তোমার হাতে তুলে দেয়া হয়নি। তা আমি নিজের হাতেই রেখেছি। বান্দার কাজকর্ম বিচার করা এবং তাদেরকে শাস্তি দেয়া বা না দেয়া আমার নিজের দায়িত্ব।

  এখানে অভিভাবক বলতে বুঝানো হয়েছে যে জীবন চালন, পরিবার চালনা, সমাজ পরিচালনা, দেশ পরিচালনা সকল ক্ষেত্রপই আল্লাহর অভিবাবকত্বই একমাত্র অভিভাবকত্ব হবে অন্যথায় আমরা সজা প্রাপ্ত হব। 

অন্যান্য দুনিয়াবি আদর্শকে অভিবাবক হিসাবে নিলে আমাদের কি ক্ষতি তাও জানা দরকার। দুনিয়ায় এখন মানুষের তৈরী জীবন নীতি, পরিবার নীতি, সমাজ নীতি ও রাষ্ট্র নীতি সবই ভুল নীতি ইহা মানুষকে মুক্তির নামে পথ ভ্রষ্ট করে পরাধীনতার শিকলেই বন্দি করছে।

অতএব আল্লাহর অভিবাবকত্বই মুক্তির একমাত্র সহজ পথ।


লেখক:চিকিৎসক, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী। 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে!

  দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে! এক.   শুনতে খারাপ শোনালেও এটা সত্য, রবীন্দ্রনাথের...