expr:class='"loading" + data:blog.mobileClass'>

Wikipedia

সার্চ ফলাফল

বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী, ২০২৫

ইসলাম নিশ্চিহ্নের ষড়যন্ত্র, ওহাবী আন্দোলন হতে আহলে হাদীস, নজদ হতে ভারতবর্ষ

 "ইসলাম নিশ্চিহ্নের ষড়যন্ত্র, ওহাবী আন্দোলন হতে আহলে হাদীস, নজদ হতে ভারতবর্ষ"



ওয়াহাবী আন্দোলন (আরবীঃ وهابية ওয়াহাবিয়াহ) হচ্ছে ধর্মীয় আন্দোলন বা ইসলামের একটি শাখাগোষ্ঠী যা অর্থোডক্স, ধর্মের দিক থেকে অতিচরমপন্থী,বিশুদ্ধবাদী,একেশ্বরবাদীর উপাসনার জন্য ইসলামী পূনর্জাগরণ, চরমপন্থী আন্দোলন ইত্যাদি নামে পরিচিত। ইবনে তাইমিয়া এবং আহমাদ ইবনে হানবাল এর শিক্ষায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে এই মতবাদে বিশ্বাসীরা ইসলামের মূলধারা থেকে বিচ্যুতদেরকে কোরআন ও হাদিসের বর্ণিত পথে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়

বিশ্বের ওয়াহাবী মতবাদে বিশ্বাসীদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবে বাস করে। সৌদি আরবের ২২.৯%, কাতারের ৪৬.৮৭%, আমিরাতের ৪৪.৮%, বাহরাইনের ৫.৭%, কুয়েতের ২.১৭% জনগণ ওয়াহাবী পন্থী। সৌদি আরবের ওয়াহাবী পন্থী লোকের বেশীর ভাগ নজদ (রিয়াদ) অঞ্চলে বাস করে। সৌদি আরব, কাতার, শারজাহ এবং রাস আল খাইমাহ তে ইসলামের অফিশিয়াল সংস্করণ হচ্ছে ওয়াহাবী মতবাদ।

নামকরণ:

Muhammad ibn ʿAbd al-Wahhab (আরবি: محمد بن عبد الوهاب‎‎;বাংলায়: মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব) (জন্ম ১৭০৩ খ্রিস্টাব্দে, মৃত্যু ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে) একজন ইসলামিক সালাফি পণ্ডিত এবং ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা।তাঁর জন্ম নজদ প্রদেশে (বর্তমান রিয়াদ)।মূলত তাঁর নামানুসারে এই আন্দোলনের নাম হয়েছে।

ওয়াহাবি’ শব্দটি আরবের সংস্কারক মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহাবের নাম থেকে এসেছে। ওয়াহাবি শব্দটির অর্থ হল নবজাগরণ (Renaissance)। ওয়াহাবি আন্দোলনের আসল নাম ছিল তারিখ-ই-মুহাম্মদিয়া (বা মুহাম্মদ নির্দেশিত পথ)। 

অষ্টাদশ শতকে, মহম্মদ-বিন-আবদুল ওয়াহাব নামক এক ব্যক্তি আরবে ইসলাম ধর্মের কুসংস্কারগুলোর বিরুদ্ধে প্রথম এক আন্দোলন গড়ে তােলেন।


আহলে হাদীস ও ওহাবী আন্দোলন এবং সৌদী রাজ পরিবারের যোগ সূত্র ও মুসলিম খিলাফত ধ্বংশে এদের কি ভুমিকা ছিল তা কেন জানতে হবে তা এ পর্বে কিছুটা বলব ইনশাআল্লাহ। পরের পর্ব গুলোতে ধারাবাহিক ভাবে কিভাবে এরা মুসলমানের, মক্কার ও ইসলামের বারটা বাজিয়েছে বর্ননা করব।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সহায়তায় সৌদি রাজ পরিবাবার নিজেদের স্বার্থে উসমানিয়া খিলাফতবিরোধী নীতির প্রকাশ্য সমর্থক হিসেবে, পদে পদে ব্রিটিশদের মদদ নিয়ে, দালাল আল-সৌদ পরিবার ১৯৩২ সাল থেকে Kingdom of Saudi Arabia নামে মুসলিমদের পবিত্র ভূমি দখলে রেখে শাসন করে যাচ্ছে।

১. মিশরের মুরসি সরকারের পতনের পর সৌদি সরকারের ভূমিকায় মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এই দালাল রাজপরিবারের ইতিহাস তাই মুসলিম উম্মাহর জেনে রাখা প্রয়োজন।

২. সৌদ পরিবার মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক উসমানিয়া খিলাফত ভাঙতে ওয়াহাবী মতবাদকে ব্যবহার করেছিল। আর সৌদ পরিবার জেনে-বুঝে দালালি করেছে তৎকালীন বিশ্বমোড়ল ও খিলাফতের শত্রু ব্রিটেনের।

৩. মাজারকেন্দ্রিক শিরকের চর্চা আর কবর জিয়ারত এক কথা নয়। মাজারকেন্দ্রিক শিরক পরিত্যাজ্য, কিন্তু কবর জিয়ারত একটি প্রতিষ্ঠিত সুন্নাহ।এই শির্ক সরানোর নামে খেলাফত বিরোধী ও রাজতন্ত্র সমর্থক এক দল মুসলমান তৈরী করেছে এই সৌদ পরিবার ও ওহাবীরা।

৪. তথ্যগুলো এতই ব্যাপকভাবে স্বীকৃত যে, কম-বেশি সব তথ্যই Wikipedia-য় আছে। এমন কি, সৌদি দূতাবাসের ওয়েব সাইটেও আছে [অবশ্যই ব্রিটিশদের দালালির বিষয়টি বাদ দিয়ে]

৫। এই সৌদ পরিবার মুখে মুসলমান দাবী করলেও আদতে এরা শয়তানের পূজারী, এর প্রমান ২০২২ সালে হ্যালোইন নামক শয়তানের পূজা প্রকাশ্যে নজদে পালন।

৬। সৌদি প্রিন্স ২০২১ সালে প্রকাশ্যে বলেছে যে ব্রিটিশদের ও মার্কিনীদের প্রেসক্রিপশন মত প্রতি বছর তারা হাজার হাজার ডলার আহলে হাদিস আন্দেলনের জন্য বিভিন্ন দেশে খরচ করে, এতেই প্রমান হয় ওহাবী আন্দোলন ও আহলে হাদীস আন্দোলনের গোড়ায় আছে বিধর্মীরা, এতে মুসলমানের সমান্যই লাভ হচ্ছে।

 ৭। ইসলামের শত্রু ইসরায়েলীদের সাথে চুক্তি করে সৌদ পরিবার নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তুলে দিয়েছে।

৮। আরব-ইসরায়েল প্রথম যোদ্ধে সৌদী আরব নানা উছিলায় অংশ গ্রহন করে নি।

৯। ইউ এস এ ব্যতীত একমাত্র পেট্রো ডলারের মালিক সৌদী আরব, এটাও মুসলমানদের ধ্বংশের বিনিময়েই সৌদিকে দিয়েছে ইহুদীরা।

১০। ১৯৯১ সালের ইরাক যুদ্ধে মার্কিন সেনাদের সেবার জন্য মুসলিম সুন্দরী নারীদের দাসী হিসাবে উপহার দিয়েছিল এই কাজ্জাব সৌদ পরিবার।



১।ওহাবী আন্দোলন

মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নেজদী নামক এক ব্যক্তি হানাফি, মালেকী, শাফেয়ী, হাম্বলী প্রভৃতি ফেরকার বিরুদ্ধে এক আন্দোলন পরিচালনা করেন। সাধারণতঃ লোকে এই আন্দোলনকেই ওহাবী আন্দোলন বলে। তৎকালীন সৌদি শাসক শরীফ হোসেন এদেরকে মক্কায় প্রবেশ করতে দিত না। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এদেরকে প্রকৃত মুসলিম জ্ঞান করেনা। 

২। ওহাবীদের ফতোয়া হলো, “চার ইমামের অনুসারী, চারি তরিকার অনুসরী, হানাফী,শাফেয়ী,মালিকী,হাম্বলী এবং চিশতিয়া, কাদেরিয়া, নকশবন্দিয়া, মোজাদ্দেদিয়া, প্রভৃতি লোক মুশরেক ও কাফের। (মজমুয়া ফতোয়া ৫৪,৫৫পৃষ্ঠা) ওহাবী ছাড়া সব কাফের। এদের ক্বতল করা জায়েয।(তারিখে নজদ ও হেজাজ ৪১,৪৩পৃষ্ঠা) 

৩।আরবের আব্দুল ওহাব নেজদীর হাতে বহু মুসলমান শহীদ হয়েছেন। সে ছিল অত্যাচারী, বিদ্রোহী, রক্তপিপাসু, ফাসেক (শিহাব সাকেব)।  “আব্দুল ওহাব নজদী একজন কম এলেমধারী লোক, এইজন্যই সে কুফরী হুকুম দিত বেপরোয়াভাবে। 

৫।বর্তমানে সৌদি আরবের শাসকগোষ্ঠী এই ওহাবী মতাবলম্বী”। এই ওহাবীপন্থীরা মক্কা মদিনায় খলিফা, সাহাবী এবং বহু প্রসিদ্ধ লোকের কবরের চিহ্ন মিটিয়ে দিয়েছে। বেদাত মিটাবার নামে ইসলামের সোনালী যুগের বহু স্মৃতিচিহ্ন মিটিয়ে দিয়েছে। ১৮০৩ সালে মক্কায় ও ১৮০৫ সালে মদিনায় মাজার ভাঙ্গে।(তারিখে নজদ, ১৮৪,১৮৬ পৃষ্ঠা) আল্লাহ মক্কা ও মদিনায় ইসলামী খেলাফত কায়েম করুন। আমিন! 

৬।হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত একটি হাদিস যা সহী বোখারীতে স্থান পেয়েছে। হাদিসটি মেশকাত শরীফেও রয়েছে। ঐ হাদিস পাঠে জানা যায় যে, এক ব্যক্তি নজদের জন্য নবী করিম সাঃ এর কাছে দোয়া চাইলে তিনি সাঃ দোয়া না করে বললেন, “ওখানে বিদ্রোহ ও যুদ্ধ হবে এবং শয়তানের শিং সেখানে বের হবে।” আহলে সুন্নত জামাতের আলেমরা বলেন যে, এই ভবিষদ্বাণীটি আব্দুল ওহাব নজদীর উপর প্রযোজ্য, যার শিষ্য ও বংশধর বর্তমান সৌদি আরবের বাদশাহ ও তার ভক্তবৃন্দ।

(দেখুন তারিখে নজদ ও হেজাজ)

৭।ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর শিষ্য সৌদ ইবনে আব্দুল আযীয যুদ্ধ করে শরীফ হোসেনকে পরাজিত করে মক্কা মদিনাসহ হেজাজ ও নজদ দখল করে নেন ১৯২৬ সালে। ইবনে সৌদ মক্কা মদিনার মসজিদের ইমামতি থেকে মোকাল্লেদ ইমামদের সরিয়ে ওহাবী ইমামদের নিয়োগ করেন। সেই থেকে ওহাবী ইমামরা সমগ্র হেজাজ ও নজদে সকল মসজিদে ইমামতি করে আসছেন। এইসব ইমামদের সাথে হানাফি, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলীসহ সকল ফিরকার আলেমগণের মতপার্থক্য রয়েছে। অনেকে ওহাবী আলেমদের পিছনে নামাজ পড়েন না। 

৮।সৌদি আরব নামকরণ করা হয়েছে ১৯৩২ সালে। এর অর্থ-এই আরব রসুলের আরব নয়। এই আরব সৌদ বংশের আরব। এরা মহানবী সাঃ এর পতাকা যার রঙ ছিলো সাদা ও কালো তা পরিবর্তন করে সবুজ রঙের কাপড়ে কলেমা ও নগ্ন তরবারি খচিত করে নতুন পতাকা তৈরি করে নেয়। পবিত্র কলেমার সাথে নগ্ন তরবারি কেন যুক্ত করা হলো? তার কারন সৌদ বংশ তরবারির জোরেই ক্ষমতা দখল করে। আর তাই তরবারির এত কদর!



১।ইনকিলাব পত্রিকায় ২৫ এপ্রিল,১৯৯০ সালের সংখ্যায় লিখেছে, ১৯৮৮ সালে বাদশা ফাহাদের (ইবনে সৌদের পুত্র) সম্পদ ছিলো এক হাজার আটশ কোটি ডলার মাত্র। ইবনে সৌদের বাইশ স্ত্রীর তেতাল্লিশজন পুত্র ও তাদের ঔরসজাত তিনহাজার যুবরাজ দেশটিতে রয়েছে। দেশের প্রায় সমগ্র সম্পদ এদের করায়ত্ত। 

২।কোহিস্থান পত্রিকার মতে, ১৫০ জন স্ত্রী ও ৪৫০ জন সন্তান, সৌদের তালাকপ্রাপ্তা ডজন ডজন স্ত্রী, ৪০ পুত্র(২৫ জানুয়ারি, ১৯৫৬)।

৩। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, বাদশা ফাহাদ যখন যুবরাজ ছিলেন তখন জুয়া খেলে একরাত্রে ষাটলাখ ডলার হেরেছিলেন।(সাপ্তাহিক টাইম, ৩১/১০/১৯৭৪)। 

৪।বাদশা ফাহাদ খুবই ভোগবিলাসী মানুষ ছিলেন। বিদেশে অবাধে পান করতেন স্কচ, হুইস্কি। বৈরুতের নাইট ক্লাবগুলোতে ঘন ঘন যাতায়াত করতেন। প্রধান প্রধান উদরনাবৃত বাঈজীদের সবাইকে নামে চিনতেন। অসংখ্য রমণীর সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিলো। 

৫।জনৈক ব্যবসায়ীর স্ত্রীকে যথেচ্ছ উপভোগের জন্য বছরে একলাখ ডলার করে দিতেন। একসপ্তাহে জুয়া খেলে তিনি দশ লাখ ডলার হেরেছিলেন। তিনি ছিলেন এক লম্পট রাজপুত্র। তার জীবন ছিল প্লেবয়ের জীবন। ১৯৯০-এ তার সম্পদের পরিমাণ ছিলো ১৮শ কোটি ডলার। 

৬।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তার এক ডজন প্রাসাদ রয়েছে। তার একটি কটেজ হোয়াইট হাউজের চেয়েও চারগুণ বড়। তার বিমান ও প্রমোদতরীর বাথরুমগুলো স্বর্ণাচ্ছাদিত। তার একটি প্রমোদ তরীর মূল্য মাত্র ছয় কোটি মার্কিন ডলার।

৭। তিনি জাদুমন্ত্র বিশ্বাস করেন ও জৈতিষীদের পরামর্শ মেনে চলেন। বুড়ো বয়সেও (৬৯বছর-১৯৯০সাল) তার নারীলালসা অস্তমিত হয়নি। মার্গারেট থেচারকে দেখে অভিভুত হয়ে তিনি একজন কবিকে দিয়ে একটি কবিতা লেখান- “কোনো সযত্নে লালিত নারীদেহ কিংবা লোভনীয় উপপত্নীর দেহের চেয়েও তার দেহখানি অধিক আকর্ষণীয়।”(দি টাইম ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯০)।

 ৮।রক্ষিতাদের জন্য পৃথক মহল আছে।(নওয়ায়ে ওয়াখত, ২মে ১৯৫৮)। বাদশাহর তালাকপ্রাপ্তাদেরকে বিশেষ বিশেষ লোকদের সঙ্গে তোহফা হিসাবে বিয়ে দেওয়া হয় (তারিখে নজদ ৪৮৭পৃষ্ঠা) আফসোস! 

৯।নবী সাঃ বলেছেন-লায়ানা লাহু আব্দার দিনারে ওয়া আব্দাল দিরহাম অর্থাৎ দিনার ও দিরহামের গোলামদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত। শুধু বাদশা ফাহাদ নন সৌদ বংশের প্রায় সকল সদস্যের মধ্যেই কমবেশি এহেন চরিত্র রয়েছে। সংবাদে প্রকাশ, সৌদি আরবের জনৈকা রাজকুমারীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বিবরনে প্রকাশ, বিমানে ভ্রমনকালে অতিরিক্ত মদ্যপান করতে না দেওয়ায় ঐ রাজকুমারী এয়ার হোস্টেসের গলা চেপে ধরে। পরিণতিতে এই অপরাধের জন্য পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। (জঙ্গ,লন্ডন,২৪জানুয়ারি, ১৯৯৬)

১০। সাবেক সৌদি প্রিন্স ফয়সালের উপদেষ্টা শেখ আইগানী মাত্র চার রাতে জুয়া খেলে এক কোটি চব্বিশ লাখ ডলার হেরেছেন(ইনকিলাব, ২ভাদ্র ১৩৯৭ বঙ্গাব্দ)। জনৈক যুবরাজের কাধে জনৈকা ইয়াহুদিনীর ছবি ছাপা হয়েছিল(পূর্বদেশ, ৩১ চৈত্র ১৩৮১ বঙ্গাব্দ)। এখানে সৌদি রাজ পরিবারের যে চিত্র আমরা দেখতে পেলাম তা যে কোনোমতেই কোনো মুসলমানের কাছে পছন্দনীয় বিষয় নয় তা সকলেই আশা করি স্বীকার করবেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, এহেন লোক আজ মক্কা মদিনার হর্তাকর্তা। এরা রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে এহেন কোনো অপকর্ম নাই যা তারা করছে না। এই রাজতন্ত্রকে রক্ষার জন্য মার্কিন সৈন্যরা মক্কা মদিনার চারিদিক ঘিরে রেখেছে। আর এইসব মার্কিন সেনার মধ্যে ইসরাঈলী সৈন্য ও বৈমানিকরাও রয়েছে(ইনকিলাব, ২৮শে শ্রাবণ ১৩৯৭)।


১১।সৌদি আরবে অবস্থিত এসব মার্কিন সৈন্যদের সেবার জন্য পাঁচহাজার মিশরীয় সুন্দরী তরুণী তখন প্রেরণ করা হয়। এরা সৌদি আরবে মার্কিন সৈন্যদের প্রবৃত্তির লালসা চরিতার্থ সাধন করে। পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে এসব তরুণীর সংখ্যা এক লাখে উন্নীত হবে।পাকিস্তান ও তুরস্ক থেকেও এদের আমদানী করা হবে। (সংবাদ, ৯ভাদ্র ১৩৯৭)। 

১২।বিমানে ভর্তি করে শুকরের মাংস আমদানী করা হয়েছিল তখন খৃষ্টান সৈন্যদের জন্য(আগামী, ৮মার্চ ১৯৯১)। একটি আরবী পত্রিকা লিখেছে, রসুলের দেশে হাশিম, আফিং, ড্রাগস, এইডস আমদানী করা হচ্ছে(আল ইত্তেহাদ, ৩য় পৃষ্টা)। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কাবাকে আবরাহার আক্রমণ হতে রক্ষা করেছিলেন। কোনো সৈন্যবাহিনী কাবাকে রক্ষা করেনি। কিন্তু সৌদী রাজার গদি রক্ষার জন্য তিনি ডেকে আনলেন ইহুদী-খৃষ্টান সৈন্যদেরকে। আগামী পত্রিকা লিখেছে- “প্রায় চৌদ্দশত বছর পর বর্তমান সৌদি বাদশা মুসলমানদের পবিত্র ভূমিতে ইহুদীদের জায়গা দিয়েছে।…… সৌদ শাসকরা কি করে ভাবলেন যে, মুসলমানকে রক্ষা করবে ইসরাঈলের দোসর সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র?” 

১৩।(১৭ আগষ্ট, ১৯৯০) খৃষ্টান সৈন্যদের জন্য তৈরি হয়েছিল গির্জা (ইনকিলাব ১৮ ভাদ্র ১৩৯৭)। ইসলামের আবির্ভাবের পর সৌদী বাদশাহর দ্বারা এই প্রথম নির্মিত হল খৃষ্টানদের প্রার্থনা গৃহ। সমগ্র মুসলিম জগত থেকে এর প্রতিবাদ করা হয়েছে। সিয়াসত পত্রিকা বলেছে, ইবনে সৌদ ব্রিটিশের ভাতাপ্রাপ্ত ক্রুশের পক্ষের যোদ্ধা(১৯ সেপ্টেম্বর, ১৯২৫)। 

১৪।আজকাল এই সৌদি রাজ্যের বিরুদ্ধে দেশের ভিতরে ও বাইরে আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। সরকার অত্যন্ত কঠোর হস্তে ঐ আন্দোলন প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। একবার হেরেম শরীফের মধ্যে সৌদি সৈন্যরা বহু বিদ্রোহীকে গুলি করে হত্যা করে ২১/১১/৭৯ তারিখে। রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেওয়ায় প্রায় ছয়শত ইরানী হাজীকে বাদশাহের সৈন্যরা মক্কায় গুলি করে মারে। এসব কথা এখনও কেউ ভুলে যায়নি। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সৌদি সরকার এইভাবে মুসলমানকে হত্যা করে চলেছে। 

১৫।সৌদি আরবে রাজনীতি নিষিদ্ধ। সেখানে রাজনৈতিক বইপুস্তক নিয়ে যাওয়া নিষেধ। হজযাত্রীদের প্রতি সৌদি সরকার সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে যে, তারা যেন কোনো রকম রাজনৈতিক উপাদাননির্ভর বইপুস্তক, প্রচার-পুস্তিকা বা ছবি বহন না করেন(আজকের কাগজ ৭/২/৯৭)।

১৬।ইসলামে ছবি বানানো ছবি নিষিদ্ধ। কোনো বরেণ্য নেতার ছবি টাঙ্গানো হারাম অথচ সৌদি আরবে ছবির ছড়াছড়ি। তাদের নোট- এর মধ্যে তাদের বাদশাহের ছবি। এই ছবি নিয়ে তারা কাবায় গিয়ে নামাজ পড়ে। মুখে বলে ছবি থাকলে ফেরেশতা আসেন না অথচ এগুলো নিয়েই তারা নামাজে যান। এদের কথা ও কাজে কোনো মিল নাই। হজ্বে যেতে হলেও ছবি লাগে। আমাদের দেশের মৌলানারা এর প্রতিবাদ করেন না। বাদশাহকে বলতে সাহস পান না যে, বাদশাহ নামদার, আমাদেরকে ছবি উঠানো থেকে রেহাই দিন কারন এটা শরিয়তে হারাম।

 ১৭। মধ্য প্রাচ্যের যুদ্ধ মুসলমান-মুসলমানে, ইহুদী-খৃষ্টান সৈন্যদের আনা হয় মুসলমানের বুকে গুলি করার জন্য। পতাকায় তরবারি থাকলেও এই তরবারি কোন কাজে লাগেনা। খৃষ্টানদের কাছ থেকে খরিদ করে আনতে হয় আধুনিক সব মারনাস্ত্র। সৌদি পতাকা দেখে বিধর্মীরা হাসে। আর এই হাসির কারন তরবারি দিয়ে বিশ্বজয়ের অলীক স্বপ্নের কথা ভেবে। 

১৮।তবে তরবারি দিয়ে তারা কিছু করতে পারুক না পারুক, ফতোয়ার তরবারি দিয়ে ওরা মুসলমানকে কেটে ছেটে ফেলতে দারুণ ওস্তাদ। অমুসলমানকে মুসলমান বানাতে পারুক আর না পারুক, মুসলমানকে ফতোয়ার তরবারি দিয়ে অমুসলমান বানাতে এরা খুবই পটু। 

১৯। বাদশাহ ফয়সালকে একবার মাওলানা মৌদুদি(রাহীঃ) এককালে বলতে বাধ্য হয়েছিলেন যে, মসজিদে হারাম কারোর ব্যক্তিগত সম্পদ নয় (তাফহীমুল কুরঅান, ৯/১৬৩)। তিনি বলেছিলেন, কাবার সেবায়েতগণ বেনারস হরিদ্বারের পুরোহিতদের মত(বুনিয়াদী শিক্ষা, পৃষ্ঠা ৪৩)। 

২০।সৌদি আরবের রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে অসন্তোষ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদ্রোহীরা লন্ডনে থেকে অভিযান পরিচালনা করছে। কিছুদিন আগে সৌদি আরবের এক মসজিদে জুম্মার নামাজের সময় বোমা হামলায় ৬ জন নিহত ও একজন আহত হয়(সংগ্রাম, ৭/১০/৯৫)। 


১১।১৯১৪ সালে স্বাক্ষরিত আল-আকির চুক্তি অনুযায়ী ইবনে সৌদ তুরস্কের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকারকে সম্ভাব্য সব ধরনের সাহায্য দেয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হন। আর বাহরাইন ব্রিটিশ সরকারের কর্তৃত্বে থাকবে বলেও সৌদ কথা দেয় এবং উপসাগরীয় এলাকায় ব্রিটিশ নাগরিক ও ইংরেজদের ব্যবসা বাণিজ্যের রক্ষণাবেক্ষণ করবে বলেও ওই চুক্তিতে অঙ্গীকার করে। বিনিময়ে ব্রিটিশ সরকার ইবনে সৌদকে সমর্থন দেয়ার ও যে কোনো পক্ষ থেকে তার ওপর আক্রমণ করা হলে তা প্রতিহত করবে বলে ওয়াদা দেয়।

১২।এভাবে সে যুগে মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের প্রতীক ও শেষ ভরসাস্থল হিসেবে বিবেচিত তুর্কি খেলাফতের ধ্বংস সাধনে সৌদি রাজা আবদুল আজিজ ও ব্রিটেনের যৌথ ষড়যন্ত্রটি বাস্তবায়িত হয়েছিল। সৌদের অনুগত ওয়াহাবি সেনারা তুর্কি মুসলমানদের গুলি করে হত্যা করেছিল এবং রক্ষা করেছিল ব্রিটিশ নাগরিকদের ও তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যকে। তাই এটা স্পষ্ট যে সৌদি আরব নামক রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সৃষ্টিতে ব্রিটেনের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ। অথচ ইসলাম রাজতন্ত্র সমর্থন করে না বলে ইসলাম বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন।

১৩। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তুর্কি খেলাফতের বিরুদ্ধে ব্রিটেন সৌদিদেরকে তথা সৌদি বংশের লোকদের ব্যবহার করে। ফলে তুর্কি সরকার ওয়াহাবিদের রাজধানী ‘দারইয়া’ শহরটি দখল করে নেয়। আর সৌদি সর্দার আমির আবদুল্লাহকে গ্রেফতার করে প্রথমে কায়রোতে ও পরে তুরস্কে পাঠিয়ে দেন মিশরের শাসক মুহাম্মাদ আলী পাশা। তুর্কি খেলাফতের সরকার আমির আবদুল্লাহকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে। কিন্তু বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের অবস্থা দুর্বল হয়ে গেলে ব্রিটিশরা আবারও সৌদ গোত্রের লোকদের নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করে। ব্রিটেন ইবনে সৌদের সঙ্গে কুখ্যাত ‘দারান’ চুক্তি স্বাক্ষর করে ১৯১৫ সালে। কুয়েতের শেখ জাবির আল সাবাহ ছিল সে সময় ব্রিটিশদের আরেক দালাল। ব্রিটিশরা এই দালালের মাধ্যমে ইবনে সৌদের সঙ্গে চুক্তি করেছিল। চুক্তি অনুযায়ী ব্রিটিশ সরকার সৌদ-পরিবারকে প্রতি বছর ষাট হাজার পাউন্ড ভাতা দিতে থাকে। পরে এ ভাতা বাড়িয়ে এক লাখ পাউন্ড করা হয়। এ ছাড়া তুরস্কের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য সৌদ গোষ্ঠীকে তিন হাজার রাইফেল ও তিনটি মেশিনগান উপহার দেয় ব্রিটেন।

১৪।ব্রিটিশ সরকার আবদুল আজিজ ইবনে সৌদের ক্ষমতা গ্রহণের উৎসবে পাঠিয়েছিল স্যার কুকাসকে প্রতিনিধি হিসেবে। রাজা উপাধিতে বিভূষিত করে কুকাস তাকে বলেছিল,

হে আবদুল আজিজ, আপনি শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

উত্তরে রাজা বলেছিল, আপনারাই আমার এ ব্যক্তিত্ব সৃষ্টি করেছেন ও এ সম্মান দান করেছেন। যদি মহান ব্রিটিশ সাম্রাজ্য না থাকত তাহলে এখানে আবদুল আজিজ আল-সৌদ নামে কেউ আছে বলেই জানত না। আমি তো আপনাদের (ব্রিটিশদের) মাধ্যমেই ‘আমির আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ’ শীর্ষক খেতাবটি অর্জন করতে পেরেছি। আমি আপনাদের এই মহানুভবতা আজীবন ভুলব না। আর আমার বিগত আচরণ ছিল আপনাদের সেবক ও ফরমানবরদার (গোলাম) হিসেবে আপনাদের ইচ্ছাগুলো বাস্তবায়ন করা।

১৫।ওই উৎসবে কুকাস ব্রিটিশ সরকারের দেয়া শাহী তামগা বা মেডেল রাজা আজিজের গলায় পরিয়ে দেয়। কুকাস বলে যায়: অচিরেই আমরা আপনাকে হিজাজ ও তার আশপাশের অঞ্চলগুলোর বাদশাহ বলেও ঘোষণা করব এবং তখন হিজাজকে ‘সৌদি সাম্রাজ্য’ বলে ঘোষণা করা হবে।

এ কথা শুনে রাজা আজিজ স্যার কুকাসের কপালে চুমু খায় ও বলে: "আল্লাহ যেন আমাদেরকে (সৌদিদেরকে) আপনাদের খেদমত (দাসত্ব) করার ও ব্রিটিশ সরকারের সেবা (গোলামি) করার তৌফিক দেন।

— মুহাম্মাদ আলী সাইদ লিখিত ‘ব্রিটিশ ও ইবনে সৌদ’, পৃ-২৬

[তথ্যসূত্র
 

·  ‘সরওয়াতুস সৌদিয়া’, পৃ-৩৯ এবং ‘ব্রিটিশ ও ইবনে সৌদ’, পৃ-২০

·  নজদ ও হিজাজের ইতিহাস, পৃ-২১০]


১৮। দুর্নীতির মামলার দায়ে সম্প্রতি আটক হওয়া সৌদি যুবরাজ আল ওয়ালিদ বিন তালালের স্ত্রী আমিরা বিনতে আইডেন বিন নায়েফ রাজ পরিবারের অন্ধকার দিকের কথা তুলে ধরেছেন। আমিরা অবশ্য তালালের সাবেক স্ত্রী, যুবরাজের কর্মকাণ্ডের কারণে আগেই সম্পর্ক ত্যাগ করেছেন।
১৯।বর্তমানে সৌদির অবস্থা যে অন্ধকারের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে এ বিষয়ে যুবরাজের সাবেক স্ত্রী আমিরা বলেন, সৌদি পরিবারকে বাইরে থেকে যতোটা ভদ্র ও ধর্মভীরু বলে মনে হয়, বাস্তবতা সম্পূর্ণ উল্টো! তিনি জানান, তার সাবেক স্বামীসহ রাজপরিবারের অনেকেই অর্থ পাচারসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। এক কথায় বলতে গেলে এহেন কোনো অপকর্ম নেই যা তারা করেন না।

২০।তিনি আরও বলেন, জেদ্দা শহরকে এরা দাস বাজারে পরিণত করেছেন। সেখানে অল্প বয়সী নারী বিক্রি থেকে শুরু করে মদ, সেক্স পার্টির মতো সব রকম ব্যভিচারই হয়ে থাকে। পুলিশ এসবের ব্যাপারে অবহিত থাকলেও শুধুমাত্র চাকরি হারানোর ভয়ে কোনো উদ্যোগ নেয় না। কেননা, শহরের সব অপরাধের পেছনে সৌদি রাজ পরিবারের সদস্যরা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। আর সে কারণেই সৌদি পরিবারের পুরুষেরা ব্যভিচারের চূড়ান্ত পর্যায় করে আসছে।

২১।আমিরা সম্প্রতি হেলোউইন পার্টির উদাহরণ তুলে ধরেন। বলেন, সেই পার্টিতে সর্বসাকুল্যে দেড়শ’ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। যাদের ভেতরে কূটনৈতিক কর্মকর্তারাও ছিলেন। সেখানে সেদিন যা হয়েছে তা বাইরের দেশের কোনো নাইট ক্লাবের থেকে আলাদা ছিল না।

২২।সৌদি আরবে মদ নিষিদ্ধ হলেও সেই পার্টিতে তরল পদার্থটির বন্যা বয়ে গিয়েছিল। সেই ডিজে পার্টিতে ওয়াইন, জুটিদের নাচ, নানান ধরনের পোশাক পরা সবই হয়েছিল।

২৩। সৌদি আরবে মদ নিষিদ্ধ হওয়ায় কালো বাজারে এটির প্রচুর দাম। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, সেখানে এক বোতল স্মিরনফ ভদকা কিনতে গেলে প্রায় দেড় হাজার রিয়াল গুনতে হয়। টাকার হিসেবে যা প্রায় ৩৩ হাজার। কখনও কখনও সেসব পার্টিতে আয়োজকেরা আসল মদের বোতলে স্থানীয় মদ ঢুকিয়ে সার্ভ করে থাকে। স্থানীয় সেই সব ওয়াইনকে তারা সিদ্দিকী নামে চেনে।

২৪।তিনি আরও বলেন, সৌদি আরবে দাসপ্রথা এখনও রয়েছে। তবে সেটি গোপনে এবং অন্যভাবে হয়ে থাকে। রাজপরিবারের কিছু সুবিধাভোগী ব্যক্তি সেখানে দাস বিক্রি করে থাকেন। আর এসব দাস বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আনা হয় শ্রীলংকা, বাংলাদেশ, ফিলিপাইন, সোমালিয়া, নাইজেরিয়া, রোমানিয়া এবং বুলগেরিয়া থেকে।

২৫।যেসব শিশুকে এখানে বিক্রি করা হয় তারা কখনই মালিকের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোথাও যেতে পারে না। এমনকি এশিয়ার দাসীরা প্রায় ক্ষেত্রেই নিজেদের বন্দি বলেই মনে করেন। সেখানে অল্প বয়সী মেয়েদের আলাদা করে রাখা হয় এবং তাদের উপর যৌন নিপীড়ন চালানো হয়।



২৬। এই এজিদের আদর্শের লালন কারী ওহাবী আন্দোলনের রক্ষক সৌদির বিষয়ে প্রথমত মনে রাখতে হবে, সৌদি আরব কোনো ইসলামি রাষ্ট্র নয়। মুহাম্মদ বিন সৌদ নামের এক ব্যক্তির নামে প্রতিষ্ঠিত একটি রাষ্ট্র মাত্র। যারা জবরদস্তিমূলক নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মভূমিকে দখল করে রেখেছে। হাদিসে যে রাষ্ট্রকে ‘জাজিরাতুল আরব’ বলা হতো, সেই রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে নিজেদের পৈত্রিক সম্পদে পরিণত করেছে এই সৌদ রাজবংশ।

২৭।এরা নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য ইসলামের ইতিহাসের সর্বশেষ খেলাফত ব্যবস্থা ‘উসমানি খেলাফত’-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। ক্ষমতার লোভে উসমানি খেলাফতের বিরুদ্ধে বৃটিশদের সহযোগী শক্তিতে পরিণত হয়। অবশেষ বৃটিশ অস্ত্রশস্ত্র ও সৈন্য সহায়তায় খেলাফতে উসমানিয়ার বিরুদ্ধে তথাকথিত বিজয় অর্জন করে ‘সৌদ’ রাজ পরিবার শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে।

২৮।অত্যন্ত পরিষ্কার, এ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে মুসলমানদের রক্তের ওপর। প্রতিষ্ঠা হয়েছে ইসলামি খেলাফতের বিরুদ্ধে। সুতরাং এ পরিবারের শাসন থেকে ইসলামের কোনো মৌলিক উপকার, সেবা আশা করাটা যথার্থ হবে বলে মনে করি না।

২৯।কোরআন ও হাদিসে স্পষ্ট নিষেধ থাকা সত্ত্বেও আরবের পবিত্র মাটিতে খ্রিস্টানদের ঘাঁটি করার সুযোগ করে দিয়েছে এ সৌদ সরকার। যেহেতু ক্ষমতায় টিকে থাকাই তাদের মূল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যকে ঠিক রেখে হারামাইনের সৌন্দর্য বর্ধনকে তাদের বিশাল খেদমত হিসেবে পেশ করলেও এটা আসলে তাদের বাৎসরিক একটি ইনকামের সোর্স ছাড়া আর কিছু নয়।

৩০।মুসলিম উম্মাহের উপকারে তাদের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে কোনো প্রকার কার্যকরী পদক্ষেপ এ পরিবার থেকে পরিলক্ষিত হয়নি। বরং ইঙ্গ-মার্কিন স্বার্থ সুরক্ষা করতে মুসলমানদের মাঝে বিবাদ উসকে দেওয়া এবং সেই সুযোগের নিজেদের প্রভাব সৃষ্টি করাই তাদের মূল কূটনীতি।

এরা না নিরীহ ইরাকের পাশে দাঁড়িয়েছে। না শক্তভা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বরং এখন ইসরায়েলের মতো অত্যাচারীদের সঙ্গে গোপন আঁতাত এখন প্রকাশ্যে আঁতাতে রূপ দিতে চেষ্টা করছে।

তবে একথা ঠিক, সৌদ পরিবারের মাঝে দু’একজন ভালো শাসক এসেছে। তাদের মাঝে কিছুটা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পরিলক্ষিত হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগই ইহুদি-খ্রিস্টানদের ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করে গেছে এবং যাচ্ছে। বর্তমান ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান এর ধারাবাহিকতায় ষোলোকলা পূর্ণ করার পথে।

৩১। যেহেতু সৌদ পরিবার ইসলাম ও মুসলমানদের কোনো প্রতিনিধি নয়। তাদের কথায় না মুসলমান চলে, না ইসলাম চলে। তাই তাদের কথা ও ঘোষণার মাধ্যমে মুসলমানদের কোনো কিছু যায় আসে বলে আমরা বিশ্বাস করি না।

৩২।. ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে সৌদি আরবে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের কোনো সুযোগ কারও নেই। কোনো বিষয়ে মত প্রকাশ করলেই গুম কিংবা জেল-জুলুমের শিকার হতে হয়। এ কারণে সৌদি আরবের মসজিদগুলোর খতিবরা মূলত সৌদ পরিবারের বেতনভূক্ত সেবক ছাড়া আর কিছু নয়। কোরআন-হাদিস থেকে সঠিক কথা বলার মতো সৎ সাহস তাদের নেই বললেই চলে।

৩৩। যে দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে সিনেমা হল উদ্বোধন হয়। অশ্লীলতায় ভরপুর হলিউড সিনেমা থেকে নায়ক, নায়িকা, গায়ক আমদানি করে সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা আসে। গানের কনসার্ট হয়। বেগানা নারীদের শরীর প্রদর্শনমূলক ফ্যাশন শো হয় রাষ্ট্রীয়ভাবে। সেই দেশে তাবলিগ জামাতের মতো খালিস দ্বীনী দাওয়াতি প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করতে চেষ্টা হবে- এটাইতো স্বাভাবিক।

মানুষ দাওয়াতের মাধ্যমে দ্বীনের পথে আসলে, ইসলামের পথে আসলে ক্ষমতাসীনদের ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ মানুষে মেনে নেবে না। তাদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হবে। সৌদ পরিবারের রাজতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে। এ কারণে এ দাওয়াতি কার্যক্রম তাদের জন্য হুমকি।

৩৪। আগেই বলেছি, ব্যতিক্রম দুই একজন থাকলেও সৌদি আরবের উলামা ও খতিবগণ রাষ্ট্রের সেবাদাস ছাড়া কিছু নয়। এরা ইসলামের প্রকৃত সেবক হওয়ার চেয়ে রাষ্ট্রের সেবাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। এ কারণে সৌদ রাজ পরিবারের ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপের কোনো প্রতিবাদ করার মতো শক্তি-সাহস তাদের নেই।



আব্দুল ওহাব নজদীর (ওহাবী) আক্বীদা

ওহাবী সম্প্রদায়ের প্রবক্তা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদী (সক্ষেপে শেখ নজদী) ১৭০৩ সালে আরবের নজদে তামিম গোত্রে জন্ম গ্রহন করে। তার ভাই, বাবা, চাচা, দাদা, সকলেই হক্কানী আলেম ছিলেন। কিন্তুু শেখ নজদী শৈশবকাল থেকেই নবী বিদ্বেষী এবং ভ্রান্ত আক্বিদায় বিশ্বাসী ছিল। যার কারনে তার পিতা ও ভাইয়ের সাথে তার বিরোধ সৃষ্টি হয়। তার আক্বিদাকে প্রাতিষ্ঠানিকরূপ দেয়ার জন্য সে একজন শক্তিশালী পৃষ্ঠপোষকের প্রয়োজন অনুভব করে। এই উদ্দেশ্যে শেখ নজদী সুকৌশলে ১১৪৭ হিজরীতে (১৭৩৯ সালে) দেরঈয়ার গভর্নর মুহাম্মদ ইবনে সউদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন করে, তথায় নিজ কন্যাকে বাদশা ইবনে সউদের নিকট বিবাহ দিয়ে তাকে নিজ আক্বীদার সমর্থনে সহযোগিতামূলক চুক্তিতে আবদ্ধ করে এবং তৎকালীন ইসলাম বিরোধী ব্রিটিশদেট সাথে সৌদ পরিবারকে বিভিন্ন ইসলাম বিধ্বংশী চুক্তিমকরতে কু-পরামর্শ দেয়। তা’ছাড়া বৃটিশ সরকারের অর্থে ও গোয়েন্দা বাহিনীর স্বক্রিয় সহযোগিতায় কালক্রমে তারা (ওহাব ও সৌদ পরিবার) সম্পূর্ন নজদ এবং ১৮০১ সালে পবিত্র মক্কা এবং ১৮০৩ সালে পবিত্র মদিনা দখল করে নেয়। ফলে তুর্কী শাসন বিলুপ্ত হয়। কিন্তু মিশরের শাসনকর্তা মুহাম্মদ আলী পাশা ও তুর্কী সুলতান একত্র হয়ে তাদের যৌথ বাহিনী মিশরীয় সেনাপতি স্কটিশ-টমাস কীর্থ এর নেতৃত্বে ১৮১২ সালে মদিনা, ১৮১৩ সালে মক্কা এবং ১৮১৮ সালে দেরঈয়া দখল করে নেয়। ফলে ওহাবীদের পরাজয় ঘটে এবং তাদের শক্তি প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে আসে। কিন্তুু ক্রমান্বয়ে আল-সাউদ পরিবার শক্তি সঞ্চয় করে তুর্কী বিন আবদুল্লাহর নেতৃত্বে হারানো এলাকা তুর্কী অটোম্যানদের থেকে পুনরুদ্ধার করে দেরঈয়া হতে তাদের রাজধানী ২০ মাইল দূরে রিয়াদে প্রতিষ্ঠা করে। তুর্কী বিন আবদুল্লাহ্, তার ছেলে ফয়সাল ও নাতী আব্দুর রহমান ১৮২৮ সাল হতে ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করে। ১৮৬৫ সালে তুর্কী অটোম্যান বাহিনী পুনরায় আরব ভূখন্ড আক্রমন করে এবং এই সংগ্রাম সাউদ পরিবারের শাসন অবসানের মাধ্যমে ১৮৯১ সালে সমাপ্ত হয় এবং সাউদী শাসক আবদুল্লাহ্ কুয়েতে আশ্রয় নেয় এবং ১৯০২ সাল পর্যন্ত তথায় অবস্থান করে। ১৯০২ সালে আব্দুর রহমানের পুত্র আবদুল আজিজ ৪০ জন অনুসারী নিয়ে রিয়াদ শহরের মূল দূর্গটি দখল করে নেয় যার ফলশ্রুতিতে এবং বৃটিশ সহায়তায় কালক্রমে সমস্ত আরব ভূখন্ড (১৯২৪ ও ১৯২৫ সালে যথাক্রমে মক্কা ও মদিনা সহকারে) সাউদ পরিবারের দখলে চলে আসে এবং ১৯৩২ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর সাউদী রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। যদিও শেখ নজদী ৮৯ বৎসর বয়সে (১৭৯২ সালে) মৃত্যুবরন করে, কিন্তুু তার সাথে ১৭৩৯ সালে মুহাম্মদ ইবনে সাউদের সাথে সম্পাদিত চুক্তি মোতাবেক নজদীর মতবাদ (ওহাবী আক্বীদা) অদ্যাবধি সৌদী আরবে প্রচলিত আছে এবং সৌদী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এই মতবাদ তামাম বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। 
উল্লেখ্য, আল্লাহর রাসুল (ﷺ)-এর ভবিষ্যৎবানীতে নজদ হইতে যেই দু’টি অভিশপ্ত শয়তানের শিং এর আবির্ভাবের কথা উল্লেখ রয়েছে, তন্মধ্যে একটি হলো মুসায়লামা কাযযাব (যাকে ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) এর আমলে নবুয়তের দাবী করলে কতল করা হয়) এবং অপরটি হলো আব্দুল ওহাব নজদী। উল্লেখ্য, মুহাম্মদ বিন আবদুল ওহাব নজদী ও তার জামাতা শেখ ইবনে সৌদ, উভয়ে ছিল বৃটিশদের গুপ্তচর এবং পোষা গোলাম। ইংরেজরা ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্রমূলক মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ‘দাবার গুটি’ হিসাবে এদেরে সফল ভাবে কাজে লাগিয়েছে।

নজদীর মৌলিক আক্বীদা ০৪টি, যা নিম্নরূপঃ-

১।        আল্লাহ্ তা’লাকে সৃষ্টির মত মনে করা। অর্থাৎ পবিত্র কুরআনে আল্লাহর হাত, চেহারা ইত্যাদির শাব্দিক অর্থ গ্রহন করা।

২।        রবুবিয়াত ও উলুহিয়াতের একত্ববাদকে একইরূপ বলিয়া বিশ্বাস করা।

৩।        নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মান না করা।

৪।        মুসলমানকে কাফের আখ্যায়িত করা। অর্থাৎ যারা ওহাবী আক্বীদা পোষন করবে না, তাদের প্রতি কুফরী ফতোয়া দেয়া।

তার অন্যান্য আক্বীদাসমূহ নিম্নে লিপিবদ্ধ করা হলোঃ-

১।        নবী করীম (ﷺ)-কে সম্মান না করা। ওহাবীদের অধিকাংশ ফেৎনা ও আপত্তিই হলো রাসুল (ﷺ)-এর সম্মান সংক্রান্ত অর্থাৎ হুজুর (ﷺ)-এর শান-মানকে খর্ব করার প্রচেষ্টার অন্তর্ভূক্ত। অথচ আল্লাহ্ তাঁর হাবীব (ﷺ)-কে সর্বাধিক সম্মান করার জন্য কুরআনে নির্দেশ দিয়াছেন। তাই ঈমানদারদের জন্য হুজুর (ﷺ)কে সম্মান করা ফরজ এবং জানের চাইতে বেশী ভালবাসা ঈমানের পরিচায়ক।

২।        নজদীর মতে যে ব্যক্তি নবীর (ﷺ) উসিলা গ্রহন করবে, নিশ্চয়ই সে কাফের হয়ে যাবে। অথচ কুরআন ও হাদীসে উসিলা গ্রহনের অসংখ্য দলিল ও প্রমান বিদ্যমান।

৩।        শেখ নজদী হুজুর (ﷺ)-এর উপর দরূদ শরীফ পাঠকে নিরুৎসাহিত করেছে। অথচ আল্লাহ্ নিজে ফেরেস্তাগনকে নিয়ে হুজুর (ﷺ)-এর উপর দরূদ পাঠান এবং মু’মিনদিগকে যথাযথভাবে দরূদ ও সালাম পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তাই দরূদ পাঠ করা কখনো ফরজ, কখনো ওয়াজিব এবং কখনও মুস্তাহাব।

৪।        শেখ নজদী কুরআনের মনগড়া তাফসীর করতো। অথচ মনগড়া ও ভিত্তিহীন তাফসীর করা হারাম ও নিষিদ্ধ। ‘‘যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের মনগড়া তাফসীর করলো, সে তার স্থান জাহান্নামে করে নিল।”

৫।        হুজুর পুরনুর (ﷺ)-এর রওজা শরীফ ও নবী-অলীদের মাজার শরীফের যিয়ারত শিরক এবং এতদুদ্দেশ্যে সফর করা বেদআত। অথচ আহলে সুন্নাতওয়াল জামাতের মতে রওজা শরীফ যিয়ারত উত্তম ইবাদত ও সর্বোত্তম মুস্তাহাব আমল এবং আওলিয়া কেরামের মাজার যিয়ারত সুন্নত এবং সওয়াবের কাজ।

৬।        উসীলা গ্রহনের বেলায় হুজুর (ﷺ)-কে এবং অলীগনকে আহ্বান করা (যেমনঃ-ইয়া-রাসুলাল্লাহ (ﷺ), হে দয়াল পীর ইত্যাদি) র্শিক। অথচ ইহা সম্পুর্ন জায়েয এবং হুজুর (ﷺ) নিজেই এক অন্ধ সাহাবীকে এই পদ্ধতিতে আহ্বান করতে বলেছিলেন। এমনকি কবরবাসীগনকেও আমরা ‘‘ইয়া আহলাল কুবুর” বলে সালাম জানাই।

৭।        হুজুর (ﷺ) এবং অলীগনের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা (ইস্তেগাছা) ও শাফায়াত কামনা করা র্শিক। অথচ মুসিবতের সময় আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের সাহায্য প্রার্থনা করা জায়েজ।

৮।        নবী করীম (ﷺ)-কে সে সংবাদদাতা ডাক পিয়ন বলেছে। (নাউযুবিল্লাহ)

৯।        তার মতে হোদাইবিয়ার সন্ধি মিথ্যা ও বানোয়াট।

১০।        তার মতে নবী করীম (ﷺ) ইহকালে ও পরকালে কোন উপকারে আসবেন না। (নাউযুবিল্লাহ)

১১।        তার মতে চার মাযহাবের চার ইমাম ভ্রান্ত ও মিথ্যা।

১২।        আযানে “আশহাদু আন্না মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” উচ্চারনকারী একজনকে সে হত্যা করেছে।

১৩।        সে দরূদ, ফেকাহ, তাফসীর ও হাদীসের গ্রন্থসমূহ জ্বালিয়ে দিয়েছে।

১৪।        কাফের, মুশরিক ও মোনাফেককে খাঁটি ঈমানদার বলে আক্বীদা পোষন করত।

১৫।        ওলামায়ে আহলে সুন্নাতকে হত্যা করা জায়েজ মনে করত।

১৬।        ঈমানদার মুসলমানদের মালামাল লুন্ঠন করে যাকাতের নিয়মে ওহাবীদের মধ্যে তা বন্টন করত।

১৭।        সে লা-মাযহাবী ছিল। কিন্তুু মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য নিজকে হাম্বলী বলে দাবী করত।

১৮।        নামাযের পর দোয়া করা হারাম আক্বীদা পোষন করত।

১৯।        তার উপর বিশ্বাস স্থাপনকারীই শুধু মুসলমান আর যারা তার বিরোধীতা করে তারা কাফের ও মোনাফিক। তাই ওলামায়ে আহল সুন্নাতকে হত্যা করা জায়েয আক্বীদা পোষন করত।
সূত্রঃ
১।উইকিপিডিয়া,
২। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে।


৩৫।সৌদি আরব সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে আবেগের জায়গা। ইসলামের দুটি পবিত্র শহর মক্কা ও মদিনা, এই সৌদি আরবেই অবস্থিত। আর ইসরায়েল তাদের জন্য একপ্রকার অপ্রিয় স্থান। যেহেতু অভিযোগমতে, ইসরায়েল রাষ্ট্রটি আরব ভূমি দখল করে গড়ে উঠেছে। সেই অনুভূতি থেকেই বিশ্বের বেশির ভাগ মুসলিম দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। যদিও তুরস্কসহ কয়েকটি দেশ এ ট্যাবু ভেঙে দিয়েছে। আরও কয়েকটি দেশ এই পথে হাঁটতে চাইছি, কিন্তু অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির স্পর্শকাতরতার কথা ভেবে ঘটা করে আনুষ্ঠানিকতার দিকে যেতে পারছে না। ঠিক এই জায়গাতেই সৌদি আরব বেশ খানিকটা এগিয়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

৩৬।আর আমরা যদি ইসরায়েলের দিক থেকে বিশ্লেষণ করি, তবে বলতে হবে যে মধ্যপ্রাচ্যে বিচ্ছিন্ন থাকা দেশটি সৌদি আরবসহ বড় আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়। ইসরায়েল মনে করে, সৌদি আরবের মতো দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা গেলে মুসলিম দেশগুলোর দুয়ার তার জন্য খুলে যাবে। কেবল ইরানের সঙ্গেই কোনো সম্পর্কে যেতে চায় না তারা। বরং ইরান ও তার সহযোগীদের মোকাবিলার জন্যই সৌদির সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় উঠেপড়ে লেগেছে তেল আবিব। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা প্রত্যাশা করে দেশটি।

৩৭।১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকেই ইরানকে বড় হুমকি হিসেবে দেখছে সৌদি আরব ও তার মিত্ররা। এর পেছনে শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব আছে। আবার ইরানে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা বদল হয়, রাজপরিবারশাসিত আরব দেশগুলোতে তা হয় না। ইরান তাদের দেশে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উসকানি দেবে, এমন মনে করে তারা। ফলে এ অঞ্চলে ইরানের প্রভাব বাড়তে না দেওয়া সৌদি আরব ও তার মিত্রদের অন্যতম লক্ষ্য।

৩৮।আর ইরানের ইসরায়েলবিরোধী নীতি অত্যন্ত কড়া। বিশেষত তার পরমাণু কর্মসূচির কারণে তেহরানকে বড় হুমকি বলে বিবেচনা করে ইসরায়েলও। ফলে ইরান এখন সৌদি আরব ও ইসরায়েল—সবারই অভিন্ন প্রতিপক্ষে পরিণত হয়েছে। এই জায়গা থেকেই সৌদি আরব ও ইসরায়েল একে অপরের কাছাকাছি আসতে চাইছে, যতই বিরোধিতা বা আপত্তি থাকুক না কেন।

৩৯।ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের একধরনের গোপন সম্পর্কের (ক্ল্যানডেস্টাইন কো–অপারেশন) সূচনা গত শতকের ষাটের দশকের শুরুতে। তখন ইয়েমেনে সোভিয়েত ও মিসর সমর্থনপুষ্ট রিপাবলিকান সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও সৈন্য পাঠিয়েছিল সৌদি আরব ও ইসরায়েল। এক সামরিক অভ্যুত্থানে তখন (১৯৬২) ইয়েমেনের রয়্যালিস্ট সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়ে সৌদি আরবে আশ্রয় নিয়েছিল।

৪০।ওয়াশিংটনভিত্তিক সরকারি নীতি সংস্থা ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের এক প্রতিবেদন বলছে, আশির দশকে এক উপলক্ষে লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধানের সঙ্গে সৌদি গোয়েন্দা প্রধানের সাক্ষাৎ হয়েছিল। এরপর ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তি দুই দেশের মধ্যে একাধিক ‘বিহাইন্ড দ্য সিন’ যোগাযোগের উপলক্ষ তৈরি করে দেয়।

তথ্যসূত্র: ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন, বিবিসি, ডয়চে ভেলেসহ একাধিক সংস্থার সূত্র অবলম্বনে
কাজী আলিম-উজ-জামান, প্রথম আলোর উপবার্তা সম্পাদক।


৪১।ইসরায়েলি প্রভাবশালী সংবাদপত্র হারেৎজের প্রতিবেদনমতে, ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের গোপন সম্পর্কের অগ্রদূত হলেন সৌদি প্রিন্স বন্দর বিন সুলতান (জন্ম ১৯৪৯ সালে)। তিনি বহুবার ইসরায়েলি শীর্ষস্থানীয় নেতা, প্রধানমন্ত্রী ও মোসাদের প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বন্দর বিন সুলতান যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত, গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট বুশ ও বুশ জুনিয়রের এতটা ঘনিষ্ঠ ছিলেন যে তাঁকে ‘বন্দর বুশ’ উপাধি দেওয়া হয়েছিল।

৪২।গোপন সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একটি প্রাইভেট জেট বিমানে করে সৌদি আরবের নেওম শহরে গোপনে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও উপস্থিত ছিলেন। আশ্চর্যজনক হলো, সৌদি আরব বৈঠকের খবরটি অস্বীকার করলেও ইসরায়েল করেনি। খবরটি জানাজানি হোক, এটাই চেয়েছে ইসরায়েল।

৪৩।আরেকটি ‘গোপন’ বৈঠক হয় ২০২২ এর মার্চে। মিসরের শারম আল-শেখ শহরে ওই বৈঠকে অংশ নেন দুই দেশের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা। সেখানে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর চিফ অব স্টাফের সঙ্গে দেখা করেন সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, জর্ডান ও মিসরের প্রতিনিধিরা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেন দেশটির সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল ফ্রাঙ্ক ম্যাকেঞ্জি। ইরানের বিরুদ্ধে সমন্বিত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কীভাবে জোরদার করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করতেই ওই গোপন বৈঠক করা হয়।

৪৪।এরই মধ্যে ইসরায়েলি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে সৌদিরা বিনিয়োগ করছেন, এমন খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সাধারণ ইসরায়েলিরা তৃতীয় দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে সৌদি আরব ভ্রমণ করছেন।

৪৫।মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের দুই প্রধান মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন ২০২০ সালে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়। এরই মধ্যে তেল আবিব থেকে মানামা, আবুধাবি ও দুবাই সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালু হয়েছে, এখানে ব্যবহার করা হচ্ছে সৌদি আরবের আকাশসীমা।

৪৬।ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া বাহরাইন সৌদি আরবের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। দেশটিতে শিয়ারা মাঝেমধ্যে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে শামিল হয়, যাতে ইরানের মদদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে বাহরাইন সরকার খুবই বিরক্ত। একাধিকবার সৌদি সৈন্যরা বাহরাইনে ঢুকে সে দেশের সরকারের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন। আবার সৌদি আরবে যে ক্ষুদ্র শিয়া কমিউনিটি রয়েছে, তারা বসবাস করে ইস্টার্ন প্রভিন্সে, বাহরাইনের সীমান্ত লাগোয়া এলাকাটিতেই। বলা হয়ে থাকে, সৌদি আরবের ইশারাতেই বাহরাইন ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

৪৭।সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইনের পাশাপাশি তুরস্ক, মিসর, জর্ডান, মরক্কো ও সুদানের সঙ্গে ইসরায়েলের শান্তি চুক্তি হয়েছে, যা ইসরায়েলের দিক থেকে বড় অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। আর ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য তা দুঃখজনক। ইসরায়েলের সঙ্গে এতগুলো আরব দেশের শান্তি চুক্তি বঞ্চিত ফিলিস্তিনিদের কষ্টকে আরও দীর্ঘায়িত করবে।

৪৮।তবে মধ্যপ্রাচ্যের সবই যে ইসরায়েলের প্রতি সৌদি আরবের নমনীয় অবস্থানকে সমর্থন দিচ্ছে বা এই তালে গা ভাসাচ্ছে, এমন নয়। যেমন কাতার, কুয়েত। কুয়েতের সঙ্গে সৌদি আরবের যেমন সম্পর্ক, তেমনি ইরানেরও। আবার ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ইস্যুতে ২০১৭ সালে কাতারের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় সৌদি আরব। সঙ্গে ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিসর। শেষ পর্যন্ত কুয়েতের প্রচেষ্টায়, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ২০২১ সালে সীমান্ত খুলে দেয় সৌদি। তবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় শক্ত অবস্থানেই আছে কাতার। নতুন করে আর সম্পর্কে জড়াবে না দেশটির সঙ্গে। ১৯৯৬ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়েছিল কাতার। কিন্তু ২০০৯ সালে এসে বিচ্ছেদ ঘটায়।

৪৯।সৌদি আরবের পথে হাঁটতে চায় না সবচেয়ে বড় আরব দেশ আলজেরিয়াও। আর ইরাকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা ‘অপরাধের’ শামিল।

৫০।তবে ইসরায়েলের সঙ্গে যেকোনো ধরনের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা নিয়ে সৌদি আরবের ভেতরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এসব প্রতিক্রিয়া বৈশ্বিক গণমাধ্যমে ততটা না এলেও এটুকু বোঝা যায়, স্থানীয় মানুষজন ও ধর্মীয় নেতাদের বড় অংশটি ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল।

৫১।হামাসের সঙ্গে সৌদি আরবের খারাপ সম্পর্ক অম্লমধুর হলেও রিয়াদ সব সময় মধ্যপ্রাচ্যে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে। অর্থাৎ পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। এটা না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্কে যেতে পারবে না সৌদি আরব।

৫২।দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বিষয়টিতে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাঁর সাম্প্রতিক সফরেও বিষয়টি জোর পায়নি। তাই সৌদি বাদশাহ সালমান, ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান যতই ‘ট্যাবু’ ভেঙে ফেলার চেষ্টা করুন না কেন, প্রকাশ্যে ‘সফল’ হতে পারবেন না। তবে ‘গোপনে’ অনেক কিছুই করা সম্ভব, যা তাঁদের পূর্বসূরিরাও করেছেন, এখন তাঁরা করছেন এবং করে যাবেন। যদিও অনেক গোপন শেষ পর্যন্ত গোপন থাকে না।

তথ্যসূত্র: ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন, বিবিসি, ডয়চে ভেলেসহ একাধিক সংস্থার সূত্র অবলম্বনে
কাজী আলিম-উজ-জামান, প্রথম আলোর উপবার্তা সম্পাদক।


এ পর্বে আপনাদের জানাব নযদের ওহাবী আন্দোলন হতে কিভাবে ভারত বর্ষে  আহলে হাদিসের জন্ম হয়েছিল। এই ওহাবী কাজ্জাবের দলই আজ ভারতে আহলে হাদিস নাম ধারন করে অমুসলিমদের সাথে হাত মিলিয়ে ইসলাম ধ্বংশের কাজ করছে। আসুন জেনে নেই।

এই আহলে হাদীসের ভারত বর্ষে উৎপত্তির ছহীহ ইতিহাস"

ইংরেজদের ষড়যন্ত্রঃ ইতিহাস সাক্ষ্য ইংরেজরা আসার আগে এই উপমহাদেশে মাযহাবের বিরোধিতা ছিলনা। ধর্মীয় কোন্দল ছিলনা। টিপু সুলতান রহঃ, মোঘল সম্রাজ্যের সকল মোঘল বাদশা, শাহজাহান, ঘুরি, জাহাঙ্গীর, বাদশা যাফরসহ সকলেই হানাফী মাযহাবী ছিল। এ উপমহাদেশে যত মুসলিম হাকিম বংশীয়, যত গোলাম বংশীয় আর যত ঘুরি বংশীয়, আর যত খিলজী বংশীয়, সাদাত বংশীয়, তুঘলোক বংশীয়, আর সুরী অথবা মোগল বংশীয় বাদশা ছিল, সবাই ছিলেন সুন্নী হানাফী। ….. (তরজুমানে ওহাবিয়া-২৫)

যখন ইংরেজরা আসল। ওরা দেখল এদেশের মুসলমানরা তাদের ধর্মের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ। তাদের মাঝে কোন অভ্যান্তরীণ বিভেদ নাই। একতার এক স্বর্গীয় বাঁধনে তারা জড়িয়ে আছে। তাই ইংরেজরা তাদের বহুল প্রচলিত “ডিভাইট এন্ড রোলস” তথা “পরস্পরে বিভেদ সৃষ্টি করে তাদের উপর শাসন করা হবে” এই নীতি বাস্তবায়িত করতে উঠেপরে লেগে গেল। মুসলমানদের মাঝে ধর্মীয় বিভেদ-কোন্দল সৃষ্টির জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করে দিল। টাকা দিয়ে, অর্থ সম্পদ দিয়ে, বিত্ত-বৈভব দিয়ে কিছু দুনিয়া পূজারী আলেমদের নির্বাচিত করে।

একদিকে হুসাইন আহমাদ মাদানী ছাহেবের ফাতওয়া যে, “ইংরেজদের দলে ঢুকা হারাম”। আর আশরাফ আলী থানবী ছাহেবের ফাতওয়া, “ইংরেজদের পণ্য ব্যবহার হারাম”। অপরদিকে ইংরেজরা একদল ঈমান বিক্রেতাদের ক্রয় করে নিল। ইংরেজদের পক্ষে একজন কিতাব লিখল- “আল ইকতিসাদ ফি মাসায়িলিল জিহাদ”। যাতে সে লিখে যে, ইংরেজদের শাসন ইসলামী রাষ্ট্র। আর ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা হারাম। এই বই লিখার পর তাকে ‘শামসুল উলামা উপাধী’ দেয়া হয়, তাকে মেডেল দেয়া হয়। অনেক পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

ওহাবী সম্বোধনঃ 
যখন এদেশের মানুষ দেখল যে, ওরা ইংরেজদের দালালী করেছে। তখন তাদেরকে “ওহাবী” বলে গালিদেয়া শুরু হয়। ওহাবী সেই যুগে তাদের বলা হত- যারা দেশের গাদ্দার। দেশদ্রোহী। ওরা যেখানেই যেত সাধারণ মানুষ তাদের দেখে বলত- এইতো ওহাবী চলে এসেছে।

আহলে হাদীছ নামকরণঃ 
এভাবে যখন তাদেরকে সবাই ঘৃণার চোখে দেখতে লাগল, তখন নিজেদের সম্মানিত করার জন্যওরা রাণী ভিক্টোরিয়ার কাছে গিয়ে আবেদন করল যে,আমরাতো আপনাদের কথা অনুযায়ী কিতাব লিখে আপনাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা হারাম বলেছি, এখন আমাদের সবাই ধিক্কার দিচ্ছে। গালি দিচ্ছে “ওহাবী” বলে। আমাদের জন্য সম্মানজক কোন পদবীর ব্যবস্থা করুন। তখন তাদের নাম দেয় রাণী ভিক্টোরিয়া “মুহাম্মদী”এবং পরবর্তীতে “আহলে হাদীস”। (এশায়াতুস সুন্নাহঃ পৃ: ২৪-২৬, সংখ্যা: ২, খ: ১১)

পাঠকের সুবিধার্থে ওহাবী থেকে আহলে হাদীছ পদবী পাওয়ার একটি দরখাস্তের অনুবাদ নিম্নে তুলে ধরা হলঃ

“বখেদমতে জনাব গভার্মেন্ট সেক্রেটারী,

আমি আপনার খেদমতে লাইন কয়েক লেখার অনুমতি এবং এর জন্য ক্ষমাও প্রার্থনা করছি। আমার সম্পাদিত মাসিক “ এশায়াতুস সুন্নাহ” পত্রিকায় ১৮৮৬ ইংরেজিতে প্রকাশ করেছিলাম যে, ওহ্হাবী শব্দটি ইংরেজ সরকারের নিমক হারাম ও রাষ্ট্রদ্রোহীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। সুতরাং এ শব্দটি হিন্দুস্তানের মুসলমানদের ঐ অংশের জন্য ব্যবহার সমীচিন হবে না, যাদেরকে “আহলে হাদীস” বলা হয় এবং যারা সর্বদা ইংরেজ সরকারের নিমক হালালী, আনুগত্যতা ও কল্যাণই প্রত্যাশা করে, যা বার বার প্রমাণও হয়েছে এবং সরকারী চিঠি প্রত্রে এর স্বীকৃতিও রয়েছে।

অতএব, এ দলের প্রতি ওহ্হাবী শব্দ ব্যবহারের জোর প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে এবং সাথে সাথে গভার্মেন্টের বরাবর অত্যন্ত আদব ও বিনয়ের সাথে আবেদন করা যাচ্ছে যে, সরকারীভাবে এ ওহ্হাবী শব্দ রহিত করে আমাদের উপর এর ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক এবং এ শব্দের পরিবর্তে “আহলে হাদীস” সম্বোধন করা হোক।

আপনার একান্ত অনুগত খাদেম

আবু সাঈদ মুহাম্মদ হুসাইন

সম্পাদক, এশায়াতুস সুন্নাহ

দরখাস্ত মুতাবেক ইংরেজ সরকার তাদের জন্যে “ ওহ্হাবী ” শব্দের পরিবর্তে “আহলে হাদীস” নাম বরাদ্দ করেছে। এবং সরকারী কাগজ-চিঠিপত্র ও সকল পর্যায়ে তদের “আহলে হাদীস” সম্বোধনের নোটিশ জারি করে নিয়মতান্তিকভাবে দরখাস্তকারীকেও লিখিতভাবে মঞ্জুরী নোটিশে অবহিত করা হয়- ক) সবর্প্রথম পাঞ্জাব গভার্মেন্ট সেক্রেটারী মি: ডাব্লিউ, এম, এন (W.M.N) বাহাদুর চিঠি নং-১৭৫৮ এর মাধ্যমে ৩রা ডিসেম্বর ১৮৮৬ ইংরেজিতে অনুমোদনপত্র প্রেরণ করেন। খ) অতপর ১৪ই জুলাই ১৮৮৮ ইং সি,পি গভার্মেন্ট চিঠি নং-৪০৭ এর মাধ্যমে গ) এবং ২০শে জুলাই ১৮৮৮ ইং ইউ,পি গভার্মেন্ট চিঠি নং-৩৮৬ এর মাধমে ঘ) এবং ১৪ই আগষ্ট ১৮৮৮ ইং বোম্বাই গভার্মেন্ট চিঠি নং-৭৩২ এর মাধ্যমে ঙ) এবং ১৫ই আগষ্ট ১৮৮৮ মাদ্রাজ গভার্মেন্ট চিঠি নং-১২৭ এর মাধ্যমে চ) এবং ৪ঠা মার্চ ১৮৯০ ইং বাঙ্গাল গভার্মেন্ট চিঠি নং-১৫৫ এর মাধ্যমে দরখাস্তকারী মৌলভী আবু সাইদ মুহাম্মদ হুসাইন বাটালভীকে অবহিত করা হয়। ( এশায়াতুস সুন্নাহঃ পৃ: ৩২-৩৯, সংখ্যা: ২, খ: ১১)


এদের ভন্ডামী ও গোড়ামীর এখানে পর্যায়ক্রমে বিশদ বর্ননা করব প্রমান সহকারে, ধৈর্য ধরে পড়ার অনুরোধ রইলো।  তবে পারলে একটা করে শেয়ার দিয়ে মানুষকে জানার সুযোগ করে দেয়ার সবিনয় অনুরোধ রইলো।

১।এরা যা আমল করে সেগুলো সহীহ হাদীছ। যা করে না তা বেদয়াতী, কুফরী, শিরকী আমল। অথচ এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই।

২।যে সমস্ত হাদীছ তাদের দলের/মতের পক্ষে সেগুলোকে বলে ছহীহ হাদীছ। আর যে হাদীছগুলো তাদের মতের বিরুদ্ধে যায় সেগুলো ছহীহ হলেও তারা বলে এটা জাল হাদিস। (নাউযুবিল্লাহ)

৩। বুখারী শরীফ খুলে যা বুঝবে তাই আমল করবে। কাউকে অনুসরণ করবে না বা কোন বিশেষজ্ঞদের নিকট জ্ঞান অন্বেষণ করবেনা।

৪। মাযহাব মানা বেদয়াত ও নাজায়েয। অথচ মাযহাব অনুসরণ করেছিলেন বুখারী, মুসলিম, তিরিমীযী, আবু দাউদ, নাসাঈ সহ সমস্ত হাদীছ শরীফ এর লিখকগণ এবং হক্কানী রব্বানী আলিম ওলামাগণ সকলেই। এমনকি মদীনায় মালেকী মাযহাব এবং মক্কা শরীফে হাম্বলী মাযহাবের প্রচলন রয়েছে।অথচ তাদে মধ্যে ৩৩টি দল ও ফিরকা বিদ্যমান।

৫। বড়ই আশ্চর্যের বিষয় যে, রমযান এলে বেনামাযী নামাযী হয়ে যায়। ফরজ যারা পড়তেন তারা নফল পড়া শুরু করেন। সকল আমলকে বাড়িয়ে দেন। যে কুরআন পড়েনা, সেও কুরআন পড়তে শুরু করে। যে নফল দুই রাকাত পড়ত সেও ৪ রাকাত বা বেশি পড়তে থাকে। কিন্তু এই নাফরমান, ওহাবী, গায়রে মুকাল্লিদ, আহলে হাদীছ গ্রুপ ২০ রাকাত তারাবীহকে কমিয়ে ৮ রাকাত পড়ে। তারা যে বুখারী শরীফের দলীল যে তাতে তারাবীর নামাযের কথা নেই। মক্কা-মদীনা শরীফেও ২০ রাকাত তারাবীহ পড়া হয়। মুলতঃ তারাবীর নামায বিশ রাকায়াত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সাল্লাম-এর যুগ থেকেই শুরু হয়েছে। (মুসান্নেফ ইবনে আবী শায়বা ২/২৮৬, আবু দাউদ ১/২০২, বাইহাকী ২/৯৬)

৬।ফেতনাবাদ এই দলের অযৌক্তিক প্রশ্ন “তোমরা মুহাম্মদী না হানাফী”?

ওদের এই প্রশ্নটিই একটা ধোঁকাবাজি। এরকম প্রশ্ন মূর্খতা ছাড়া কিছু নয়, আজ শনিবার নাকি ৫ তারিখ? আজ নভেম্বর নাকি রবিবার? প্রশ্ন হবে সামঞ্জস্যতামূলক আজ শনিবার নাকি রবিবার? আজ নভেম্বর নাকি ডিসেম্বর? সুতরাং এক্ষেত্রেও প্রশ্ন হবে-“তুমি মুহাম্মদী না ঈসায়ী? তুমি হানাফী না শাফেয়ী?” কিন্তু একথা বলা ভুল- আজ নভেম্বর না শনিবার? তুমি হানাফী না মুহাম্মদী?”

৬৭।আসলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না। এরা মুহাম্মদি পরিচয় দিতে চায় কিন্তু আমরা উপরে ইতিহাস পড়েছি যে, এরা কথিত আহলে হাদীছ যারা ছিল ইংরেজদের দালাল তথা ওহাবী ।


আহলে হাদীসের সহীহ আকিদার নাম ধারীরা মাযহাব শুধু ত্যাগ করে নি বরং মাযহাব ইসলামকে বিভাজিত করেছে বলে দাবী করে মাযহাবকে গালিগালাজ করে। মাযহাবের দোহাই দিয়ে যে ইসলামকে বিভাজিত করা হয়েছে তাদের দাবী অনেকটাই সত্য, তাই তারা মাযহাবকে বাতিল বলে এবং যারা মাযহাব মানে তাদেরকে তারা মুসলিম মনে করে না। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘৃনা করে হানাফী মাযহাবকে, তারা হানাফিদেরকে হানাফি ইহুদী বলে গালি দেয়। ভাল কথা আপনারা সব ভাগ বাদ দিয়ে কোরআন ও হাদিসের অকাট্য ও প্রমান্য সহীহ আকিদা মানবেন, এটাই সাহাবাদের যুগের ইসলাম। আর এই দাবীতে সহীহ আকিদার নামে আপনারা অহংকার করেন।
তাইলে আপনারা ৪টি মাযহাবকে বাদ দিয়ে ৩৩টি মতবাদ যে আবিস্কার করলেন সে টা কোন সহীহ আকিদা? 
আর হ্যাঁ অনেকেই আমার একথা শোনে দাবী করে বসবেন যে আমি মিথ্যা বলছি, তাই আহলে হাদিসের ৩৩ দলের ১৯টির নাম নীচে দিলাম, পারলে অস্বীকার করেন, বাকী ১৪টি সময় মত প্রকাশ করা হবে ইনশাআল্লাহ।

আহলে হাদীসের দল গুলোর নামঃ
১।জমিয়তে আহলে হাদিস  
২।গুরাবায়ে আহলে হাদিস  
৩।আহলে হাদিস আন্দোলন(গালীব) 
৪।আহলে হাদিস আন্দোলন(প্র:রেজাউল করিম) 
৫।আস্ সালাফীয়াহ(আ:রাজ্জাক) 
৬। আহলে হাদিস আন্দোলন(আ:রউফ খুলনা)
 ৭।আহলে হাদিস তাবলীগে ইসলাম 
৮।মাদখালী আহলে হাদিস বা সালাফী (আক্রমুজ্জামান)
৯।অলইন্ডিয়া আহলে হাদিস 
১০।আন্জুমানে আহলে হাদিস  
১১।বঙ্গো ও আসাম জমিয়তে আহলে হাদিস 
১২।ট্রু সালাফী আহলে হাদিস 
১৩।কুতুবি সালাফী আহলে হাদিস 
১৪।সুরুলী সালাফী আহলে হাদিস 
১৫।বাংলাদেশ জামায়াতে আহলে হাদিস 
১৬।জামিয়াহ আহলে হাদিস 
১৭।কুবরা আহলে হাদিস 
১৮।আহলে হাদিস যুবসংঘ (মুজাফ্ফর) 
১৯।আহলে হাদিস যুবসংঘ (গালীব)। আরও আছে এই মুহুর্তে মনে পরছেনা।

বাকী গুলোর জন্য অপেক্ষায় থাকুন।
আপনারা আসলেই কোন মুসলমান নয়, আপনারা বাতিল ফেরকা, আল্লাহ আপনাদের সঠিক বুঝ দান করুক(আমীন)



এ পর্বে শুরু হবে সহীহ আকিদার নামে ওহাবী,নযদী,সালাফী ও আহলে হাদীসের সহীহ আকিদার আড়ালে ভ্রান্ত আকীদা সমূহ।

১।
সারা পৃথিবীর মানুষ কালিমার মধ্যে আল্লাহ ও মুহাম্মদকে এক করে আল্লাহ ও মুহাম্মদকে দুই ভাই বানিয়ে ফেলেছে। [তথ্যসূত্র-ইসলামের মূলমন্ত্র কালিমা তয়্যেবাহ লাইলাহা ইল্লাল্লাহ, পৃষ্ঠা-৯, লেখক-আব্দুল্লাহ ফারুক বিন আব্দুর রহমান]

২।
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ এটা কোন পবিত্র বাক্য নয়। [কালিমার মর্মকথা, পৃষ্ঠা-৩১৮, লেখক আকরামুজ্জান বিন আব্দুস সালাম]

৩।
হানাফী ইহুদীদের অভ্যাস হল তারা কুরআনের মাঝে কম-বেশি করে কুরআনের হুকুম অস্বীকার করে। {মাসায়েলে গাইরে মুকল্লিদীন, পৃষ্ঠা-৪৭, লেখক-মাওলানা আবুবকর গাজিপুরী]

৪।
কোন নবী বা অন্যকোন সৎ আমলকারীর কবর জিয়ারত করার উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েজ নেই। {দ্বীন ইসলামের জানা অজানা, পৃষ্ঠা-১১৯, লেখক-ড. ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ]

৫।
“সাহাবাগণের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কথা দলীল স্বরূপ পেশ করা যাবে না।” [আর রাওজাতুল নাদীয়া-পৃ.১/১৪১] এবং তাদের বুঝ নির্ভরযোগ্য নয়। আর রাওজাতুল নাদীয়া-পৃ.১/১৫৪, লেখক-নবাব সিদ্দীক হাসান খান]

৬।
“সাহাবীদের কথা প্রমাণযোগ্য নয়”। { ফাতাওয়ায়ে নজীরিয়া-পৃ.১/৩৪০, লেখক মিয়া নজীর হুসাইন দেহলবী]

৭।
“সাহাবাদের মধ্য হতে কিছু সংখ্যক ফাসেক্বও ছিল, যেমন-ওয়ালিদ, তেমনি ভাবে মুয়াবিয়া, উমর, মুগীরা ও সামুরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু প্রমুখ সম্বন্ধেও অনুরূপ বলা যেতে পারে ”।(!) [নুযুলুল আবরার, পৃ.২/৯৪, লেখক-নবাব ওহীদুজ্জামান খান]

৮।
“তাক্বলীদ হচ্ছে ঈমানদারদের জন্য শয়তানের সৃষ্ট বিভ্রান্তি।”[ কাটহুজ্জাতীর জওয়াব, পৃ.৮৩, লেখক- মাও. আবু তাহের বর্দ্ধমানী]

৯।
”মুক্বাল্লিদগণকে মুসলমান মনে করা উচিত নয়।”[ তাওহীদী এটম বোম, পৃ.১৫, লেখক- মাওলানা আব্দুল মান্নান সিরাজনগরী (বগুড়া)]

১০।
“মাযহাবীগণ ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত, তাদের মধ্যে ইসলামের কোন অংশ নেই। [তাম্বিহুল গাফেলীন, আব্দুল কাদির রচিত পৃ.৭]


১১।
চার ইমামের মুক্বাল্লেদ এবং চার তরিকার অনুসারীগণ মুশরিক ও কাফির।”[ ইতেছামুস সুন্নাহ পৃ.৭-৮, লেখক- মাও. আব্দুল্লাহ মুহাম্মদী]

১২।
পাঞ্জাবী, টুপি এগুলো সুন্নতী পোশাক নয় বরং ভিক্ষা বৃত্তির পোশাক। ইসলামে সুন্নতী পোশাক বলতে কোন পোশাক নেই। বরং প্রত্যেক দেশের প্রচলিত পোশাকই সুন্নতী পোশাক এবং যে পোশাক যার কাছে ভাল লাগে তাই সুন্নতী পোশাক তবে শর্ত হল উক্ত পোশাক দেখতে সুন্দর হতে হবে। টুপি পাগড়ী পড়লে সুন্দর লাগে এতটুকুই কিন্তু এগুলোকে সুন্নতী পোশাক বলা যাবে না। কেননা, পাগড়ি হল সুদান, আফগানিস্তান, ইরান আর ভারতের শিখদের পোশাক। এটা কোন সুন্নতী পোশাক নয়। {দ্বীন ইসলামের জানা অজানা, পৃ-২১২-২১৩, লেখক-ড.ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ]

১৩।
হানাফীরা রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তরীকা অনুযায়ী নামায আদায় করে না, কেননা তাদের ধর্ম ইসলাম নয় বরং হানাফী, তাদের প্রভু আল্লাহ নয় বরং আবূ হানীফা, তাদের নবী মুহাম্মদ নয় বরং উলামায়ে আহনাফ। {মাসায়েলে গাইরে মুকাল্লিদীন, পৃ-৪৯, লেখক-মাওলানা আবু বকর গাজিপুরী]

১৪।
হানাফীরা যদিও যাহেরীভাবে কালেমা “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” বলে কিন্তু তাদের আসল কালিমা হলো “লা ইলাহা ইল্লা আবু হানীফা ওয়া উলামাউল আহনাফ আরবাবুন মিন দুনিল্লাহ”। {মাসায়েলে গাইরে মুকাল্লিদীন, পৃ-৪৯, লেখক-মাওলানা আবু বকর গাজিপুরী]

১৫।
 আল্লাহ তা’আলা আরশের উপর বসে আছেন এবং আরশ হলো তাঁর বসতবাড়ী। (অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা সর্বত্র বিরামান নয়) (নাউজু বিল্লাহ) (হাদিয়াতুল মাহদী পৃষ্ঠা: ৯)

১৬।
 আল্লাহ তাআলার চেহরা, চোখ, হাত, হাতের তালু, আঙ্গুল, বাহু, সীনা, গোড়ালী, কোমর, পা ইত্যাদি প্রত্যেক অঙ্গই বিদ্যমান। (নাউজু বিল্লাহ) (হাদিয়াতুল মাহদী পৃষ্ঠা ৯)

১৭।
 আল্লাহ যে কোন রূপ (মানুষ, পশু, পাখী ইত্যাদি) ধারণ করে জনসমক্ষে আসতে পারেন। (হাদিয়াতুল মাহদী পৃষ্ঠা ৯)

১৮।
সাধারণ ইসমাত তথা সার্বিকভাবে গোনাহ মুক্ত হওয়া রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য স্বীকৃত নয়। না হয় সাহাবায়ে কেরাম তাঁর বিভিন্ন ভুলের উপর প্রশ্ন করতেন না। (নাউজু বিল্লাহ) (তাহকীকুল কালাম ফী মাসআলাতিল বায়আ ওয়াল হাম পৃষ্ঠা ৪৪-৪৫)


১৯। ইমামগণ এবং সাহাবীগণ এমনকি স্বয়ং নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও যদি নিজের কোন মত ব্যক্ত করেন তাও শরীয়তের দলীল হতে পারে না। (নাউজু বিল্লাহ) (তারীকে মুহাম্মদী পৃষ্ঠা ৫৭)

২০। রাম চন্দ্র, কৃষ্ণজী প্রমূখ যা হিন্দুদের মধ্যে আছে, যরতশত যা ফরাসীদের মধ্যে আছে, কানফিউশস, মহাত্মামা যো চিন, জাপান ইত্যাদিতে আছে, ‍সক্বরাত, ফীসাগুস যা ইউনানের মধ্যে এসকল নবী রাসূলদের উপর ঈমান আনা আমাদের জন্য ওয়াজিব। (নাউজু বিল্লাহ) (হাদিয়াতুল মাহদী পৃষ্ঠা ৮৫)

২১। শরীয় আহকাম ও বিধানে নবীদের (আ.) ভুল ভ্রান্তি হতে পারে। (নাউজু বিল্লাহ) (রাদ্দে তাকলীদ পৃষ্ঠা ১৩)

► খোলাফায়ে রাশেদীন সম্পর্কেঃ

২২। জুমআর খোতবার মধ্যে খোলাফায়ে রাশেদীনের কথা উল্লেখ করা বিদআত। (হাদিয়ায়ে মাহদী পৃষ্ঠা ১১০)

২৩। হযরত আবু বকর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে দ্বিতীয় খলীফা মনোনীত করা প্রকৃত ইসলামের বিপরীত হয়েছে। (তারীকে মুহাম্মদী পৃষ্ঠা ৮৩)

২৪। ফারুকে আজম (হযরত উমর) রদ্বিয়াল্লাহু আনহু স্পষ্ট ও বড় বড় মাসআলায়ও ভুল করেছেন। (তারীকে মুহাম্মদী পৃষ্ঠা ৫৪)

২৫। সমসাময়িক মাসআলাসমূহ হযরত উমরের কাছে জানা ছিল না। (তারীকে মুহাম্মদী পৃষ্ঠা ৫৫)

২৬। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর ফতওয়া নবীজীর হাদীসের বিপরীত ছিল। (তাইসীরুল বারী ৭/১৬৯)

২৭। আমরাতো উমরের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কালিমা পড়িনি যে, তার কথা মানতে হবে। (ফতাওয়ায়ে সানাইয়্যা ২/২৫২)

২৯। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর বহু মাসআলা হাদীসের বিপক্ষে ছিল। (ফতাওয়ায়ে সানাইয়্যা ২/২৫২)


৩০। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর কথা না দলীলের যোগ্য না আমল করা আবশ্যক। (ফতাওয়ায়ে সানাইয়্যা ২/২৫২)

৩১। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু যদি মুতআ (সাময়িক বিয়ে যা শিয়াদের মধ্যে প্রচলিত) নিষেধ না করতেন তবে দুনিয়ায় কোন যেনাকারী থাকত না। (লুগাতুল হাদীস ৪/১৮৬)

৩২। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ফতওয়া দলীল নয়। (ফতাওয়ায়ে সাত্তারিয়া ২/৬৫)

৩৩। উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর ইজতিহাদ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীসের বিপরীত ছিল। (তাইসীরুল বারী ৭/১৭০)

৩৪। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর আমল দলীল যোগ্য নয়। (ফতাওয়া সানাইয়্যা (২/২৩৩)

৩৫। উসমান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর আযান বিদআত ছিল, কোনভাবেই জায়েয নেই। (ফতাওয়া সাত্তারিয়া ৩/৮৫,৮৬,৮৭)

৩৬। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর স্বৈরাচারী খেলাফত এর চার পাঁচ বছর ছিল উম্মতের জন্য আল্লাহর আযাব। (নাউজু বিল্লাহ) (সাদীকায়ে কায়েনাত পৃষ্ঠা ২৩৭)

৩৭। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর ইন্তিকালের পরই উম্মত শান্তির নিস্বাস ফেলেছে। (সাদীকায়ে কায়েনাত পৃষ্ঠা ২৩৭)

৩৮। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সাবায়ী তথা শীয়াদের নির্বাচিত খলীফা ছিলেন। (নাউজ বিল্লাহ) (সাদীকায়ে কায়েনাত ২৩৭)

৩৯। নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনেও হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু খিলাফত তথা ক্ষমতা লাভের জন্য অন্তরে কারসাজীতে নিয়োজিত ছিল। (নাউজু বিল্লাহ) (সাদীকায়ে কায়েনাত পৃষ্ঠা ২৩৭)

৪০। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিন তালাক দেওয়াতে তিন তালাক নিপতিত হওয়ার কথা রাগান্বিত হয়ে সিদ্ধান্ত দিয়ে ছিলেন। (তানভীরুল আফাক ফী মাসআলাতিত তালাক পৃষ্ঠা ১০৩)


৪১। খোলাফায়ে রাশেদীনগণ কুরআন ও সুন্নাত পরিপন্থী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যেগুলো উম্মত প্রত্যাখ্যান করেছে। (তানবীরুল আফাক ফী মাসআলাতিত তালাক পৃষ্ঠ ১০৭)

৪২। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের সামনে কয়েকটি হাদীস পেশ করা হয়েছিল কিন্তু মুসলিহাতের কারণে তারা মনেননি। (তানভীরুল আফাক পৃষ্ঠা ১০৮)

৪৩। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বুঝ বা বুদ্ধি নির্ভরযোগ্য নয়। (শময়ে মুহাম্মদী পৃষ্ঠা ১৯)

► সাহাবায়ে কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাদের সম্পর্কেঃ

৪৪। হযরত মাআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু প্রশংসা করা জায়েয নেই। (লোগাতুল হাদীস ২/৩৬)

৪৫। মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু দুষ্টপ্রকৃতির ছিলেন। (নাউজু বিল্লাহ) (লোগাতুল হাদীস ২/৩৬)

৪৬। ইসলামের সমস্ত মাআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু নষ্ট করে দিয়েছেন। (নাউজু বিল্লাহ) (লোগাতুল হাদীস ৩/১০৪)

৪৭। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের কথা দলীল নয়। (তায়সীরুল বারী ৭/১৬৫)

৪৮। কিছু কিছু সাহাবী মুষ্টিযুদ্ধ করতেন। (আরফুল জাভী ২০৭)

৪৯। সাহাবায়ে কেরামের কথা দলীল নয়। (ফতাওয়ায়ে নযীরিয়া ১/৩৪০)

৫০। সাহাবায়েকেরামের মওকূফ (কাজ ও আমল) দলীল নয়। (রাসালায়ে আব্দুল মান্নান ১৪, ৫৯, ৮১, ৮৪, ৮৫)

৫১(৩৭)। সাহাবায়ে কেরামের দেরায়াত (বুঝ) নির্ভরযোগ্য নয়। (তুহফাতুল আহওয়াযী ২/৪৪, শময়ে মুহাম্মদী ১৯)।


৫২। সাহাবায়ে কেরামের দেরায়াত (বুঝ) নির্ভরযোগ্য নয়। (তুহফাতুল আহওয়াযী ২/৪৪, শময়ে মুহাম্মদী ১৯)

৫৩। কোনো কোনো সাহাবী ফাসেক ছিলেন। (নাউজু বিল্লাহ) (নাযলুল আবরার ৩/৯৪)

৫৪। মুতআখখেরীন তথা পরের উলামায়ে কেরাম সাহাবী থেকে উত্তম হতে পারেন। (নাউজু বিল্লাহ) (হাদিয়াতুল মাহদী ৯০)

৫৫। সাহাবায়ে কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং ফকীহদের কথা মানুষকে গোমরাহ করে। (ফতাওয়া সানাইয়্যাহ ২/২৪৭)

৫৬। সাহাবাগণের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কথা দলীল নয়। (আরফুল জাভী ৪৪, ৫৮, ৮০, ১০১, ২০৭)

৫৭। সাহাবায়ে কেরামের বুঝ নির্ভরযোগ্য নয়। (আররাওযুন নদিয়্যা ৯৮)

৫৮। হযরত মুগীরার রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর আমানত ও সততা চলে গিয়েছিল। (লোগাতুল হাদীস ৩/১৬০)

কুরআন হাদীস বিরোধী আহলে হাদীস মতাদর্শের কিছু নমুনা নিচে উপস্থাপন করা হল-

মতবাদ-১

গায়রে মুকল্লিদদের নিকট কাফেরদের জবাই করা পশু হালাল। আর তা খাওয়া জায়েজ। {গায়রে মুকাল্লিদ আলেম নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান সাহেব রচিত দলীলুত তালেব-৪১৩},

গায়রে মুকাল্লিদ আলেম নূরুল হাসান খান রচিত উরফুর জাদী-২৪৭,

নিজেদের আহলে হাদীস দাবী করে কুরআন হাদীসের রেফারেন্স না দিয়ে এখানে তারা আল্লামা শাওকানী রহঃ অন্ধ তাকলীদ করেছেন। এ কুরআন হাদীসের দলিল ছাড়া এ তাকলীদ কি [কথিত আহলে হাদীসদের বক্তব্য অনুসারে] শিরক নয়?

মতবাদ-২

একই সময়ে যতজন মহিলাকে ইচ্ছে বিয়ে করা জায়েজ। চার জনই হতে হবে এর কোন সীমা নেই। {গায়রে মুকাল্লিদ আলেম নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান রচিত যফরুল লাজী-১৪১, ১৪২, এবং উরফুল জাদী-১১৫}

মতবাদ-৩

স্থলভাগের ঐ সকল প্রাণী হালাল, যার শরীরে রক্ত নেই। {গায়রে মুকাল্লিদ আলেম নওয়াব সিদ্দীক হাসান রচিত বুদূরুল আহিল্লাহ-৩৪৮}।

মতবাদ-৪

মৃত প্রাণী পাক, নাপাক নয়। {দলীলুত তালেব-২২৪}

মতবাদ-৫
নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান সাহেব লিখেন-“শুকর নাপাক হওয়ার উপর আয়াত দিয়ে দলিল দেয়া গ্রহণযোগ্য নয়। বরং তা পাক হওয়াকেই বুঝায়। {বুদূরুল আহিল্লাহ-১৫, ১৬}

(চলবে..)

"ইসলাম ধ্বংশের ষড়যন্ত্র,ওহাবী আন্দোলন হতে আহলে হাদিস, নযদ হতে ভারত বর্ষ,পর্ব-২২"

আহলে হাদীসের ভ্রান্ত মতবাদ সমূহঃ

মতবাদ-৬
হায়েজ নেফাসের রক্ত ছাড়া মানুষ ও সকল প্রাণীর রক্ত পাক। {দলীলুত তালেব-২৩০, বুদুরুল আহিল্লাহ-১৮, উরফুল জাদী-১০}

মতবাদ-৭
ব্যবসায়িক সম্পদে কোন জাকাত নেই। {বুদুরুল আহিল্লাহ-১০২}

মতবাদ-৮
হাদীসে বর্ণিত ছয়টি বস্তু ছাড়া বাকি সকল বস্তুতে সুদ নেয়া জায়েজ। {দলীলুত তালেব, উরফুল জাদী, আল বুনয়ানুল মারসূস, বুদূরুল আহিল্লাহ ইত্যাদি গ্রন্থ।

মতবাদ-৯
গোসল ছাড়াই নাপাক ব্যক্তি কুরআন কারীম স্পর্শ করা, উঠানো, রাখা, হাত লাগানো জায়েজ। {দলীলুত তালেব-২৫২, উরফুল জাদী, আল বুনইয়ানুল মারসূস}

মতবাদ-১০
স্বর্ণ রোপার অলংকারে যাকাত আবশ্যক নয়। {বুদুরুল আহিল্লাহ-১০১}

মতবাদ-১১
মদ নাপাক ও অপবিত্র নয়, বরং তা পাক। {বুদূরুল আহিল্লাহ-১৫, দলীলুত তালেব-৪০৪, উরফুর জাদী-২৪৫}

মতবাদ-১২
স্বর্ণ রোপার অলংকারে কোন সূদ নেই। তাই যেভাবে ইচ্ছে কম-বেশি করে তা ক্রয়-বিক্রয় জায়েজ। {দলীলুত তালেব-৫৭৫}

মতবাদ-১৩
বীর্য পাক। {বুদূরুল আহিল্লাহ-১৫}

মতবাদ-১৪
সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়ার আগেই জুমআর নামায পড়া জায়েজ। {বুদূরুল আহিল্লাহ-৭১}

মতবাদ-১৫
জুমআর নামাযের জন্য জামাত হওয়া জরুরী নয়। যদি দুইজন ব্যক্তিও হয়, তাহলে একজন খুতবা পড়বে, তারপর উভয়ে মিলে জুমআর নামায পড়ে নিবে। {বুদূরুল আহিল্লাহ-৭২}


আহলে হাদীস বা লা-মাহযাবীদের আরো কিছু কুফরী আকিদা:

১- আহলে হাদিসদের রচিত ‘হাদয়িতুল মাহদি’ পুস্তকের ১১০ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে “জুমার খুতবায় খোলাফায়ে রাশেদার নাম নেয়া বিদয়াত।” (নাউযুবিল্লাহ) ।

২- আহলে হাদিসদের রচিত ‘তানবীরুল আফা-ক’ পুস্তকের ১০৭ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে “খোলাফায়ে রাশেদা অর্থাৎ হযরত আবু বকর, হযরত উমর, হযরত উসমান এবং হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) উনারা শরীয়তের খেলাফ হুকুম জারি করতেন। (নাউযুবিল্লাহ)।

৩-আহলে হাদিসদের রচিত ‘কাশফুল হিজাব’ পুস্তকের ২১ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে “হযরত আয়েশা (রা) আলীর সাথে যুদ্ধ করে মুরতাদ হয়ে গেছেন।” (নাউযুবিল্লাহ)।
৪- আহলে হাদিসদের রচিত ‘হাদয়িতুল মাহদি’ পুস্তকের ১০৩ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে “আয়িম্মায়ে ইছনা আশারা যারা শীয়াদের ইমাম, আমরা তাদের অনুসারী।”

 আহলে হাদিস নামধারি কথিত ছহি হাদিসের অনুসারীরা মূলত শীয়াদেরই একটি অঙ্গ সংগঠন। যাদের কাজই হল আহলুস সুন্নাহ’র অনুসারী মুসলিমের বিভ্রান্ত করে মাযহাবের বন্ধন থেকে সরিয়ে দেয়া ও ধীরেধীরে সাহাবী বিদ্বেষী করে তুলা। পর্যায়ক্রমে শীয়াদের পাল্লাই ভারি করা। যা দেরিতে হলেও আজ দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার।

৫- আহলে হাদিসদের রচিত ‘তানবীরুল আফা-ক’ পুস্তকের ৪৯৮-৪৯৯ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে “হযরত উমর কুরআনের হুকুম পরিবর্তন করে ফেলেছেন।” (নাউযুবিল্লাহ) ।

৬- আহলে হাদিসদের রচিত ‘দলীলুত ত্বলিব’ পুস্তকের ৫২ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে “অপবিত্র অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা জায়েজ।” (নাউযুবিল্লাহ) ।

৭- আহলে হাদিসদের রচিত ‘বদূরুল আহিল্লাহ’ পুস্তকের ১৪-১৫ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে “সমস্ত জানোয়ার তথা জন্তুর পেশাব পবিত্র।” (নাউযুবিল্লাহ)।

৮- আহলে হাদিসদের রচিত ‘দলীলুত ত্বালিব’ পুস্তকের ২৬৪ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে “নামাযের জন্য কাপড় পাক হওয়া জুরুরি নয়।” (নাউযুবিল্লাহ)।

৯-আহলে হাদিসদের রচিত ‘হাদয়িতুল মাহদি’ পুস্তকের ২৩ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে “মহিলাও মুয়াজ্জিন হতে পারবে।” (নাউযুবিল্লাহ)।

১০- আহলে হাদিসদের রচিত ‘বদূরুল আহিল্লাহ’ পুস্তকের ৩৯১ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে “এক বকরীতে ১০০ মানুষের পক্ষ থেকে কুরবানি হতে পারে।” (নাউযুবিল্লাহ)।

১১- আহলে হাদিসদের রচিত ‘যফরুল কাযী’ পুস্তকের ১৪১, ‘উরুফুল জাবী’ পুস্তকের ১১৫ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে “পুরুষ একই সময় যত ইচ্ছে বিয়ে করতে পারবে।

"ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্র, ওহাবী আন্দোলন হতে আহলে হাদিস, নযদ হতে ভারত বর্ষ, পর্ব-২৪"

এখানে আপনাদের আহলে হাদিসরা যে জঙ্গী তৎপরতায় জড়িত, আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় যা প্রকাশিত হয়েছে তার একটা ডকুমেন্টারি দেব।

সূত্রঃনিউজ নাইন টুয়েন্টি ফোর, ২৯ফেব্রুয়ারী,২০২০ইং।

 ১।ওহাবী-সালাফি মতবাদই জেএমবি, আনসারুল্লাহ, হিযবুত তাহরীরসহ সব জঙ্গি-সন্ত্রাসী তৈরীর উৎস। এদের নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন মতাদর্শ প্রচার, প্রকাশনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ইউটিউবসহ লিংক, ওয়েবসাইটসহ আর্থিক নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়া।

২।হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি, আনসারুল্লাহ, হিযবুত তাহরীর, আহলে হাদীস এসব সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোই ওহাবী-সালাফীবাদের প্রচার-প্রসারকারী এবং পৃষ্ঠপোষক। এদের মধ্যে হুজি সদস্যরা দেওবন্দ ধারার কওমি মাদ্রাসা থেকে লেখাপড়া করা। জেএমবির সদস্যরা আহলে হাদিস ধারার মাদ্রাসা থেকে। তবে যে ধারা থেকেই আসুক না কেন সবাই ওহাবী-সালাফীবাদের সমর্থক ও অনুসারী। এসব জঙ্গি সংগঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশে সালাফি মতাদর্শী উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর উত্থান ঘটেছে। আহলে হাদিস ধারাটি আগে ‘ওহাবি’ নামে বেশি পরিচিত ছিল। মধ্যপ্রাচ্যসহ বহির্বিশ্বে এরা সালাফি হিসেবে পরিচিত।

৩।সালাফিদের পুস্তিকায় বাংলাদেশে কেন কিতাল বা জিহাদ প্রয়োজন, তার কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। কারণগুলো হলো ১. বাংলাদেশে ইসলামি হুকুমত কায়েম নেই, ২. ভারতের আগ্রাসী মনোভাব, ৩. বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভারতের তৎপরতা, ৪. সারা দেশে বিভিন্ন পশ্চিমা মিশনারির ইসলামবিরোধী কর্মকা-।

৪।জেএমবি দেশকে মোট ছয়টি প্রশাসনিক বিভাগে বিভক্ত করে কার্যক্রম শুরু করে। মূলত আহলে হাদিস-অধ্যুষিত এলাকায় দাওয়াতি কাজ বা সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে কাজ শুরু হয়। উত্তরাঞ্চলের ১৫ জেলার বাইরে জামালপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ ও সাতক্ষীরার কিছু এলাকায় আহলে হাদিস মতাদর্শের লোকজনের বসবাস। তাই প্রথম কয়েক বছরে আবদুর রহমানসহ শুরা সদস্যরা এসব এলাকা চষে বেড়িয়েছেন। বিভিন্ন আহলে হাদিস মসজিদ ও মাদ্রাসায় বক্তৃতা করেছেন।

৫।শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মূলত ওই সব এলাকার আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের একটি অংশের ওপর ভর করেই জেএমবির বিস্তার লাভ করেছে। এর মধ্যে বগুড়া, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রংপুর থেকে সবচেয়ে বেশি সদস্য সংগ্রহ করেছে বর্তমানে নিষিদ্ধ এই সংগঠন। প্রশিক্ষণকেন্দ্রও গড়ে তোলে এসব এলাকার চরাঞ্চলে।

৬।তিন ধরনের প্রশিক্ষণ শেষে বাছাই করা সদস্যদের বোমা তৈরি ও অস্ত্র চালনার তালিম দেওয়া হতো। সদস্য সংগ্রহের পর প্রত্যেকের ছদ্মনাম বা সাংগঠনিক নাম দেওয়া হয়। এরপর ‘কাট আউট পদ্ধতিতে’ ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করে কার্যক্রম চালানো হয়। বার্তা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে নানা ‘কোড’ শব্দ ব্যবহার করে জেএমবি। আর এসব সাংগঠনিক গোপনীয়তা রক্ষার কৌশল লস্কর-ই-তাইয়েবা থেকেই শিখেছেন বলে শায়খ আবদুর রহমান জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন। কারও দায়িত্ব বা কর্ম এলাকা যতবার পাল্টায়, ততবার নতুন নতুন ছদ্মনাম ধারণ করতেন তাঁরা। শায়খ রহমানের নিজের ছদ্মনাম ছিল এহসান। শুরুর দিকে তাঁরা কয়েকজন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি পাহাড়ে রোহিঙ্গা জঙ্গিগোষ্ঠীর ক্যাম্পে গিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র চালনা শিখে এসেছিলেন। বিনিময়ে তাঁদের বোমা তৈরির (আইইডি) প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।

৭।অবশ্য জেএমবির প্রথম পর্বে আগ্নেয়াস্ত্রের খুব একটা ব্যবহার ছিল না। তারা মূলত বোমার ব্যবহার করেছে, যার বেশির ভাগ উপাদান দেশ থেকে নেওয়া। বিস্ফোরক জেলসহ কিছু কিছু উপাদান ভারত থেকে সংগ্রহ করা হতো। শায়খ রহমান বলেছেন, তাঁরা কিছু ওয়ান শুটারগান (হাতে তৈরি দেশীয় অস্ত্র) ভারত থেকে এনেছিলেন। এর বাইরে বাংলা ভাই একটি এসএমজি ব্যবহার করতেন, সেটা বাগমারায় চরমপন্থীদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া।

৮।জেএমবির প্রথম পর্বে, অর্থাৎ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ফাঁসির আগ পর্যন্ত কত সদস্য ছিলেন, তার কোনো প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায় না। জোট সরকারের আমলে বিভিন্ন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে কখনো ৫ হাজার, কখনো ২৫ হাজার সদস্য থাকার কথা বলা হয়েছিল। তবে এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করেন, এমন ব্যক্তিদের তখনকার ধারণা ছিল, এহসার (সার্বক্ষণিক কর্মী), গায়রে এহসার (সাধারণ সদস্য বা সমর্থক) ও তাঁদের স্ত্রীদের সদস্য হিসেবে ধরলে মোট সদস্য ৫ হাজার হতে পারে। এর মধ্যে ২০০৫ সালে দেশব্যাপী বোমা হামলার পর সাত শতাধিক গ্রেপ্তার হন।

৯।২০০২ সালে ভারতের মালদহে জেএমবির ৬৫তম কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সহায়তায় ভারত থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য সংগ্রহ করা হতো বলে পরে জঙ্গিনেতারা জবানবন্দিতে বলেছেন। ২০১৪ সালে ভারতের বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনার পর সে দেশে জেএমবির উপস্থিতির কথা আলোচনায় আসে।

১০।শায়খ আবদুর রহমান জবানবন্দিতে বলেছেন, তাঁদের সঙ্গে পাকিস্তানের লস্কর-ই-তাইয়েবার বাইরে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আল মুহাজেরুন নামের একটি জিহাদি সংগঠনের যোগাযোগ ছিল। এর প্রধান সিরীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক শায়খ ওমর বাক্রি। সংগঠনটি বাংলাদেশে তাদের সদস্যদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য জেএমবিকে অনুরোধ করেছিল। তারা এসে চরাঞ্চলে জেএমবির প্রশিক্ষণ সরেজমিনে দেখেও যায়। পরে ১৭ আগস্টের হামলার পর জেএমবি চাপে পড়লে টেলিফোনে আল মুহাজেরুনের নেতারা জেএমবিকে বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাসে হামলা, র‌্যাবের ওপর আক্রমণ এবং বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অপহরণ বা তাঁদের ওপর হামলা চালানোর পরামর্শ দিয়েছিল বলে জানায় শায়খ রহমান।

১১।কলম্বোভিত্তিক রিজিওনাল সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের মতে, ‘সারা বিশ্বে এখন যে সন্ত্রাসবাদ আমরা দেখছি, সেটার মূলে রয়েছে সালাফিবাদ। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়।’ বিগত শতকের সত্তরের দশক থেকে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু ধনী সালাফিবাদ প্রসারে বিনিয়োগ শুরু করে। এরপর গত সাড়ে তিন দশকে সালাফিবাদের পাশাপাশি উগ্র মতাদর্শ ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। এ থেকে ইউরোপ-আমেরিকাও বাদ যায়নি।

১২।২০০৬ সালের ২ মার্চ গ্রেপ্তার হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে শায়খ আবদুর রহমান বলেছে, সৌদি আরবে থাকাকালীন মিসরভিত্তিক সালাফী মুসলিম ব্রাদারহুডের (ইখওয়ানুল মুসলিমিন) সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতাম।

১৩।২০১৩ সাল থেকে মাঠে নামা দুই জঙ্গি সংগঠনের একটি হলো আল-কায়েদার অনুসারী আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (বর্তমান নাম আনসার আল ইসলাম) এবং অপরটি ‘নব্য জেএমবি’। লক্ষ্যবস্তু বা টার্গেট এখন পর্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন হলেও দুটি সংগঠনই সালাফি বা আহলে হাদিস মতাদর্শী। দুই গোষ্ঠীরই সদস্যদের বড় অংশ তরুণ এবং ইংরেজিমাধ্যম স্কুল ও সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করা সচ্ছল পরিবারের সদস্য।

১৪।জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় কার্যকর বা সমন্বিত পদক্ষেপ ও নিরবচ্ছিন্ন গোয়েন্দা নজরদারির অভাবে ১১ বছরের মাথায় এত ভয়ংকররূপে আবির্ভূত হয়েছে জেএমবি। বিপর্যস্ত জেএমবি আবার ঘুরে দাঁড়াবে, সেটা কেউ ধারণা করেনি। বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থা জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করলেও নিরবচ্ছিন্ন গোয়েন্দা নজরদারি ছিল না। তেমনি কারাগারে থাকা জঙ্গিরা কে কখন সাজা শেষে বা জামিনে বের হচ্ছেন, সেটারও ভালো নজরদারি হয়নি।

১৫।২০০৭ সাল থেকেই জঙ্গিবাদবিরোধী বিশেষায়িত বাহিনী বা বিভাগ করে একই কেন্দ্র থেকে মামলার তদন্ত, জিজ্ঞাসাবাদ, নিরবচ্ছিন্ন গোয়েন্দা নজরদারিসহ সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার ছিল।

১৬।অবশ্য পর্যবেক্ষকদের মতে, ২০০৭ সালে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ফাঁসি ও নিযুক্ত আমির সাইদুর রহমানসহ বেশ কিছু জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আত্মতুষ্টিতে ভুগছিল। তারা ভেবেছিল জঙ্গিবাদ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু কোনো মতাদর্শী উগ্র গোষ্ঠীকে এভাবে শেষ করা যায় না। যতক্ষণ না মতাদর্শ বিলুপ্ত হয়, ততক্ষণ এরা নতুন নতুনরূপে আবির্ভূত হবে। তার ওপর অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে অনুকূল পরিবেশ থাকলে এটা নতুন মাত্রা পায়। যার বড় নজির গুলশান হামলা।

১৭।প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আবদুর রহমানের পর জেএমবির দ্বিতীয় আমির মাওলানা সাইদুর রহমানসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এরপর সংগঠনটির কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে পড়ে। কিছু সদস্য তখন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দিকেও ঝুঁকেছিলেন। কিন্তু ২০১১ সাল থেকে বাইরে থাকা জেএমবির সদস্যরা আবার সংগঠিত হতে শুরু করেন। কারাগারে থেকে সাইদুরসহ অন্যান্য জঙ্গিনেতার নির্দেশনাও পাচ্ছিলেন বাইরের জঙ্গিরা, এমন খবর বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের বরাতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ২০১৩ সাল থেকে এই জঙ্গিরা খুলনা ও ঢাকায় কিছু হত্যাকা- ঘটান। কিন্তু বিষয়টি তখন ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

১৮।২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ভালুকায় প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যা করে জঙ্গি সালাহউদ্দিনসহ জেএমবির শীর্ষস্থানীয় তিন নেতাকে (অপর দুজন বোমা মিজান ও হাফেজ মাহমুদ) ছিনিয়ে নেওয়ার পর টনক নড়ে সরকারি বাহিনীগুলোর। এরপর জানাজানি হয় যে জেএমবি তিন ভাগে ভাগ হয়ে পৃথক নেতৃত্বে সংগঠিত হচ্ছে। এর একাংশের নেতৃত্বে থাকা কারাবন্দী সাইদুর রহমান তাঁর ছেলে আবু তালহা মোহাম্মদ ফাহিমের (২০১৫ সালের ২৭ জুলাই ঢাকায় গ্রেপ্তার) মাধ্যমে মাঠপর্যায়ের সদস্যদের সংগঠিত করছিলেন। আরেকটি অংশ সংগঠিত হচ্ছিল প্রিজন ভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেওয়া সালাহউদ্দিন ও জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজানের নেতৃত্বে ভারতে বসে।

১৯।নব্য জেএমবির সঙ্গে ১৯৯৮ সালে শায়খ আবদুর রহমানের প্রতিষ্ঠিত জেএমবির অনেক তফাত। আগের মতো দরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত নয়, উচ্চ ও মধ্যবিত্তের সন্তান ও আধুনিক শিক্ষিতরাও যুক্ত হয়েছেন নব্য জেএমবিতে। চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, নাবিকÍএমন নানা পেশাজীবীও আছেন। বিদেশে লেখাপড়া কিংবা বসবাস করেন, এমন ব্যক্তিরাও যুক্ত হয়েছেন। যাঁরা আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যমে এ দেশে এসে জঙ্গিদের সমন্বয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

২০।আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন এসব জঙ্গি মোকাবিলায় তথা সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। তবে গুলশান হামলার পর সরকার জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। গত ২৬ জুলাই ভোরে ঢাকার কল্যাণপুরে পুলিশের অভিযান এবং নয় জঙ্গি নিহত হওয়ার ঘটনায় গুলশান হামলার মতো আরেকটি ভয়ংকর হামলা থেকে দেশ রক্ষা পেয়েছে। দেশের সব মহলে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদবিরোধী একটা মতৈক্য তৈরি হয়েছে। তবে এখনো মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়ে গেছে। এই উদ্বেগ দূর করতে এবং সন্ত্রাসীদের সর্বক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন করতে প্রয়োজন ওহাবী-সালাফী, আহলে হাদীসদের মতাদর্শ প্রচার, প্রকাশনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ইউটিউবসহ লিংক, ওয়েবসাইটসহ আর্থিক নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়া।


সালাফি মতাদর্শী ব্যক্তিদের নিয়ে উত্থান জেএমবির

শায়খ আবদুর রহমান

জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা

জেএমবির জন্ম

এপ্রিল, ১৯৯৮

উদ্দেশ্য

শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠা

কর্মী–সদস্য

মাদ্রাসা বোর্ডের অধীন মাদ্রাসা থেকে বেশির ভাগ সদস্য সংগ্রহ
বিদেশি যোগাযোগ

পাকিস্তানের লস্কর–ই–তাইয়েবা ও যুক্তরাজ্যের আল মুহাজেরুনকেন্দ্রিক

সিদ্দিকুল ইসলাম (বাংলা ভাই)

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ৬৩ জেলায় একযোগে ৫০০ বোমা ফাটিয়ে জানান দেয় জেএমবি

নাশকতা

২০০১–০৫

মোট হামলা ২৬

মোট নিহত ৭৩

হরকাতুল জিহাদের (হুজি-বি) জন্মের এক দশক পর ১৯৯৮ সালে জন্ম নেয় জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ বা জেএমবি। দ্বিতীয় পর্যায়ের এই জঙ্গি সংগঠনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সালাফি মতাদর্শী উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর উত্থান ঘটে।

জেএমবি সাড়ে চার বছরে (সেপ্টেম্বর ২০০১ থেকে ডিসেম্বর ২০০৫) দেশে ২৬টি হামলা চালায়। এসব ঘটনায় ৭৩ জন নিহত এবং প্রায় ৮০০ জন আহত হন। একই সময়কালে হরকাতুল জিহাদও (হুজি-বি) বেশ কয়েকটি নাশকতামূলক হামলা চালায়। সব মিলিয়ে তখন দেশে এক ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।

পাকিস্তান-আফগানিস্তানকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন হুজি ও জেএমবির মধ্যে ধর্মীয় মাজহাবগত পার্থক্য রয়েছে। হুজি সদস্যরা ছিলেন হানাফি মাজহাবের এবং দেওবন্দ ধারার কওমি মাদ্রাসা থেকে লেখাপড়া করা। আর জেএমবির সদস্যরা বেশির ভাগ এসেছেন মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে থাকা মাদ্রাসা থেকে এবং আহলে হাদিস ধারার মাদ্রাসা থেকে। জেএমবির নেতা-কর্মীরা সবাই এসেছেন আহলে হাদিস বা ‘লা মাজহাবি’ (মাজহাববিরোধী) ধারা থেকে। প্রতিষ্ঠাকালীন শীর্ষ নেতাদের একজন মো. ফারুক হোসেন ওরফে খালেদ সাইফুল্লাহ ছিলেন হানাফি মাজহাবের এবং সাবেক হুজি সদস্য। তিনি জেএমবিতে আসার আগে আহলে হাদিস মতাদর্শ গ্রহণ করেন।

আহলে হাদিস ধারাটি আগে ‘ওহাবি’ নামে বেশি পরিচিত ছিল। মধ্যপ্রাচ্যসহ বহির্বিশ্বে এরা সালাফি হিসেবে পরিচিত। ধারাটি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হলেও মধ্যপ্রাচ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ। সৌদি আরবের মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে সালাফি ধারার ‘জিহাদি’ সংগঠন প্রতিষ্ঠার ধারণা পান বা আগ্রহী হন জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত শায়খ আবদুর রহমান।

জেএমবির লক্ষ্য রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা। তারা ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী একযোগে ৫০০ বোমা ফাটিয়ে প্রচারপত্রে বলেছিল, তারা এ দেশে ‘আল্লাহর আইন’ বা শরিয়া আইন বাস্তবায়ন করতে চায়।

জেএমবিকে ‘হোমগ্রোন’ বা দেশজ সংগঠন বলা হলেও শুরু থেকেই এর প্রতিষ্ঠাতা শায়খ রহমানের লক্ষ্য ছিল আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা এবং তাদের সহযোগিতা নিয়ে এ দেশে সশস্ত্র লড়াইয়ের ক্ষেত্র তৈরি করা। এর মধ্যে পাকিস্তান, ভারত ও যুক্তরাজ্যকেন্দ্রিক সালাফি মতাদর্শের একাধিক সংগঠনের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ স্থাপনও করেছিলেন। নিজে অস্ত্র ও বিস্ফোরকের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন পাকিস্তানে জঙ্গিদের একটি আস্তানায়। গ্রেপ্তার থাকা অবস্থায় তিনি এর বিস্তারিত বিবরণ দেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে।

প্রাক-তৎপরতা: শায়খ আবদুর রহমানের বাড়ি জামালপুরের চরশী এলাকায়। বাবা মরহুম মাওলানা আবদুল্লাহ ইবনে ফজল ছিলেন আহলে হাদিস মতাদর্শীদের কাছে একজন প্রখ্যাত আলেম ও জনপ্রিয় বক্তা।

শায়খ রহমান জামালপুরের কামাল খান হাট সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে ১৯৭৮ সালে ফাজিল (স্নাতক সমমান) পাস করেন। রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ ইসলামিয়া মাদ্রাসায় তিনি কামিল পড়েন। ১৯৮০ সালে বৃত্তি নিয়ে চলে যান মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে তিনি লিসান্স (ইসলামের মূলনীতি ও ধর্ম প্রচার বিষয়ে স্নাতকোত্তর) ডিগ্রি লাভ করেন। দেশে ফিরে আসেন ১৯৮৫ সালে।

২০০৬ সালের ২ মার্চ গ্রেপ্তার হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে শায়খ আবদুর রহমান বলেছেন, ‘সৌদি আরবে থাকাকালীন মিসরভিত্তিক মুসলিম ব্রাদারহুডের (ইখওয়ানুল মুসলিমিন) সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতাম। বিশ্বজুড়ে জিহাদি কর্মকাণ্ড পরিব্যাপ্ত হওয়ার কারণে বাংলাদেশেও ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠার মাধ্যম হিসেবে জিহাদকে বেছে নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করি। পড়াশোনা শেষে বাংলাদেশে ফিরে এসে জামায়াতে ইসলামীর কার্যপদ্ধতি তথা গণতান্ত্রিক রাজনীতির সঙ্গে আমার নীতিগত পার্থক্যের কারণে আমি তাদের সঙ্গে একাত্ম হতে না পেরে আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাংলাদেশে ইসলামিক আইন কায়েমের জন্য আলাদা জিহাদি সংগঠন তৈরির পরিকল্পনা করি।’

দেশে ফেরার পর শায়খ রহমান প্রথমে জামালপুরে তাঁর শ্বশুরের প্রতিষ্ঠিত মির্জা কাশেম সিনিয়র মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। সেখানে একটি সাবান কারখানাও প্রতিষ্ঠা করেন। পরের বছর ১৯৮৬ সালে সৌদি দূতাবাসে চাকরি নেন তিনি। সেখানে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত চাকরি করেন। এরপর কখনো সারের ব্যবসা, কখনো বিদেশ থেকে ছোলা ও মসুরের ডাল আমদানি, কখনো আরবি অনুবাদ প্রতিষ্ঠান—এমন নানা ব্যবসা করেন। ব্যবসার আড়ালে ‘জিহাদি’ সংগঠন করার প্রাক-প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন ছদ্মনামে ‘জিহাদি’ বই লেখা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে এসব বই জেএমবির সদস্যদের পাঠ্য ছিল।

জেএমবি প্রতিষ্ঠার আগে শায়খ আবদুর রহমান ১৯৯৫ সালে হরকাতুল জিহাদের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। জবানবন্দিতে তাঁর ভাষ্য ছিল এমন—‘প্রাথমিকভাবে আমার হরকাতুল জিহাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ধর্মীয় মতাদর্শগত, বিশেষত মাজহাবি পার্থক্যের কারণে আমি হরকাতুল জিহাদ সংগঠনের সঙ্গে কাজ করার প্রাথমিক চিন্তাধারা থেকে সরে এসে নিজস্ব দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিই।’

সংগঠন তৈরির প্রস্তুতিপর্বে শায়খ রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ হয় ভারতের জঙ্গিনেতা আবদুল করিম টুন্ডার সঙ্গে। শায়খ রহমানের ভাষ্য অনুযায়ী, তখন ঢাকার যাত্রাবাড়ী আহলে হাদিস মতাদর্শের বড় মাদ্রাসার পাশে একটি ছাত্র মেসকে অফিস হিসেবে ব্যবহার করতেন পাকিস্তানের ভয়ংকর জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার নেতা টুন্ডা। ১৯৯৭ সালের শেষের দিকে টুন্ডার ব্যবস্থাপনায় বিমানযোগে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে যান শায়খ রহমান। এরপর তাঁকে লাহোরে অবস্থিত মার্কাজ আদ-দাওয়া ওয়াল ইরশাদের (পাকিস্তানের একটি আহলে হাদিস সংগঠন এবং লস্কর-ই-তাইয়েবার মাতৃসংগঠন) প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে যান টুন্ডা। সেখান থেকে পরে মুজাফফরাবাদে গিয়ে লস্কর-ই-তাইয়েবার প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে ২০ দিন অস্ত্র, বিস্ফোরক, রণকৌশল ও গোপনীয়তা রক্ষার কৌশল বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে আসেন তিনি।

সংগঠন তৈরি: জবানবন্দিতে শায়খ রহমান বলেছেন, ১৯৯৮ সালের এপ্রিল মাসে জেএমবি প্রতিষ্ঠা করেন আবদুর রহমান। ২০০২ সালের প্রথম দিকে আবার পাকিস্তানে যান তিনি। সেখানে লস্কর-ই-তাইয়েবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আমির আবদুস সালাম ভাট্টিসহ অন্যান্য নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তখন তাঁদের জেএমবির গঠনতন্ত্র, লক্ষ্য ও কর্মসূচিসংবলিত আরবিতে লেখা চার পৃষ্ঠার একটি লিখিত পুস্তিকা দেন শায়খ রহমান। ওই পুস্তিকায় বাংলাদেশে কেন কিতাল বা জিহাদ প্রয়োজন, তার কারণ উল্লেখ করা হয়। কারণগুলো হলো ১. বাংলাদেশে ইসলামি হুকুমত কায়েম নেই, ২. ভারতের আগ্রাসী মনোভাব, ৩. বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভারতের তৎপরতা, ৪. সারা দেশে বিভিন্ন পশ্চিমা মিশনারির ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড।

জেএমবি প্রতিষ্ঠা করে

আমির হন শায়খ রহমান। ঢাকার খিলগাঁওয়ে একটি ভাড়া বাসায় বসে প্রথম শুরা কমিটি হয়। তাতে শায়খ আবদুর রহমান ছাড়া বাকি সদস্যরা ছিলেন খালেদ সাইফুল্লাহ, হাফেজ মাহমুদ, সালাউদ্দিন, নাসরুল্লাহ, শাহেদ বিন হাফিজ ও টাঙ্গাইলের রানা। অবশ্য পরে শাহেদ বিন হাফিজ ও রানা মতবিরোধের কারণে দল ছাড়েন। ২০০১ সালে শুরা কমিটিতে যুক্ত হন ফারুক হোসেন ওরফে খালেদ সাইফুল্লাহ, আসাদুজ্জামান হাজারী, আতাউর রহমান সানি (শায়খ রহমানের ভাই), আবদুল আউয়াল (জামাতা) ও            সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই। তাঁদের মধ্যে ২০০২ সালে নাসরুল্লাহ রাঙামাটিতে বোমা বিস্ফোরণে মারা যান। ২০০৩ সালে আসাদুজ্জামান হাজারী অসুস্থতার কারণে সংগঠন ছেড়ে দেন। অন্যদের মধ্যে এখন সালাহউদ্দিন ছাড়া আর কেউ বেঁচে নেই। সালাহউদ্দিনকে ২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজনভ্যানে হামলা করে ছিনিয়ে নেন জঙ্গিরা।

বিস্তার: জেএমবি দেশকে মোট ছয়টি প্রশাসনিক বিভাগে বিভক্ত করে কার্যক্রম শুরু করে। মূলত আহলে হাদিস-অধ্যুষিত এলাকায় দাওয়াতি কাজ বা সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে কাজ শুরু হয়। উত্তরাঞ্চলের ১৫ জেলার বাইরে জামালপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ ও সাতক্ষীরার কিছু এলাকায় আহলে হাদিস মতাদর্শের লোকজনের বসবাস। তাই প্রথম কয়েক বছরে আবদুর রহমানসহ শুরা সদস্যরা এসব এলাকা চষে বেড়িয়েছেন। বিভিন্ন আহলে হাদিস মসজিদ ও মাদ্রাসায় বক্তৃতা করেছেন। ২০০৪ সাল থেকে পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে এই প্রতিবেদক ওই সব এলাকা ঘুরে এমন তথ্য পান।

শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মূলত ওই সব এলাকার আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের একটি অংশের ওপর ভর করেই জেএমবির বিস্তার লাভ করেছে। এর মধ্যে বগুড়া, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রংপুর থেকে সবচেয়ে বেশি সদস্য সংগ্রহ করেছে বর্তমানে নিষিদ্ধ এই সংগঠন। প্রশিক্ষণকেন্দ্রও গড়ে তোলে এসব এলাকার চরাঞ্চলে।

তিন ধরনের প্রশিক্ষণ শেষে বাছাই করা সদস্যদের বোমা তৈরি ও অস্ত্র চালনার তালিম দেওয়া হতো। সদস্য সংগ্রহের পর প্রত্যেকের ছদ্মনাম বা সাংগঠনিক নাম দেওয়া হয়। এরপর ‘কাট আউট পদ্ধতিতে’ ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করে কার্যক্রম চালানো হয়। বার্তা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে নানা ‘কোড’ শব্দ ব্যবহার করে জেএমবি। আর এসব সাংগঠনিক গোপনীয়তা রক্ষার কৌশল লস্কর-ই-তাইয়েবা থেকেই শিখেছেন বলে শায়খ আবদুর রহমান জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন। কারও দায়িত্ব বা কর্ম এলাকা যতবার পাল্টায়, ততবার নতুন নতুন ছদ্মনাম ধারণ করতেন তাঁরা। শায়খ রহমানের নিজের ছদ্মনাম ছিল এহসান। শুরুর দিকে তাঁরা কয়েকজন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি পাহাড়ে রোহিঙ্গা জঙ্গিগোষ্ঠীর ক্যাম্পে গিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র চালনা শিখে এসেছিলেন। বিনিময়ে তাঁদের বোমা তৈরির (আইইডি) প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।

অবশ্য জেএমবির প্রথম পর্বে আগ্নেয়াস্ত্রের খুব একটা ব্যবহার ছিল না। তারা মূলত বোমার ব্যবহার করেছে, যার বেশির ভাগ উপাদান দেশ থেকে নেওয়া। বিস্ফোরক জেলসহ কিছু কিছু উপাদান ভারত থেকে সংগ্রহ করা হতো। শায়খ রহমান বলেছেন, তাঁরা কিছু ওয়ান শুটারগান (হাতে তৈরি দেশীয় অস্ত্র) ভারত থেকে এনেছিলেন। এর বাইরে বাংলা ভাই একটি এসএমজি ব্যবহার করতেন, সেটা বাগমারায় চরমপন্থীদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া।

জেএমবির প্রথম পর্বে, অর্থাৎ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ফাঁসির আগ পর্যন্ত কত সদস্য ছিলেন, তার কোনো প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায় না। জোট সরকারের আমলে বিভিন্ন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে কখনো ৫ হাজার, কখনো ২৫ হাজার সদস্য থাকার কথা বলা হয়েছিল। তবে এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করেন, এমন ব্যক্তিদের তখনকার ধারণা ছিল, এহসার (সার্বক্ষণিক কর্মী), গায়রে এহসার (সাধারণ সদস্য বা সমর্থক) ও তাঁদের স্ত্রীদের সদস্য হিসেবে ধরলে মোট সদস্য ৫ হাজার হতে পারে। এর মধ্যে ২০০৫ সালে দেশব্যাপী বোমা হামলার পর সাত শতাধিক গ্রেপ্তার হন।

২০০২ সালে ভারতের মালদহে জেএমবির ৬৫তম কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সহায়তায় ভারত থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য সংগ্রহ করা হতো বলে পরে জঙ্গিনেতারা জবানবন্দিতে বলেছেন। ২০১৪ সালে ভারতের বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনার পর সে দেশে জেএমবির উপস্থিতির কথা আলোচনায় আসে।

নাশকতার শুরু: ২০০৫ সালে একযোগে ৬৩ জেলায় বোমা ফাটিয়ে ও প্রচারপত্র ছড়িয়ে আনুষ্ঠানিক জানান দেওয়ার আগ পর্যন্ত জেএমবি খুব একটা পরিচিত ছিল না মানুষের কাছে। যদিও এর আগের বছর ২০০৪ সালের এপ্রিল-মে মাসে রাজশাহীর বাগমারা ও পাশের দুই জেলার দুই উপজেলা রানীনগর ও আত্রাইয়ে কথিত বাম চরমপন্থী দমনে বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে অভিযানের পর থেকে দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে এই উগ্র গোষ্ঠীর তৎপরতার কথা আসছিল। তখন তারা জেএমবি নামটি প্রচার করেনি। তখন তারা নাম বলেছিল জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ বা জেএমজেবি।

তবে পরবর্তী সময়ে প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাস্তবে জেএমবির

প্রথম নাশকতার শুরু ২০০১ সালে। ওই বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার রক্সি সিনেমা হল ও সার্কাস মাঠে বোমা হামলা চালায় তারা। এতে ৩ জন নিহত ও প্র

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে!

  দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে! এক.   শুনতে খারাপ শোনালেও এটা সত্য, রবীন্দ্রনাথের...