চরমোনাই ও দেওয়ানবাগীর আকিদায় সংযুক্তি এবং ইসলাম হতে বিচ্যুতি
পীর দেওয়ানবাগী |
আজ সহীহ আকিদা এবং চরমোনাই ও দেওয়ানবাগীর আকিদায় সংযুক্তি ও ইসলাম হতে বিচ্যুতি নিয়ে আলোচনা করব। আর এ পর্বটি বুঝার জন্য একটি শব্দ চয়ন করব তা হল, "অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীন"। অপেক্ষাকৃত সহীহ এ কারণে বলছি যে আমার মতে বর্তমানে দুনিয়ায় কোথাও ১০০% ইসলাম যেখানে প্রতিষ্ঠিত নাই সেখানে শত ভাগ সহীহ ইসলামী দল নাও পেতে পারি, এটা একান্ত আমার ব্যক্তিগত মতামত। আমি ভুলও হতে পারি।
দেওয়ানবাগীর পীর মৃত্যুবরণ করার সাথে সাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে নিয়ে তোলপার শুরু হয়েছিল। ইতিমধ্যে চরমোনাই পীর আকিদার আদালতে অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীন গুলোকে ভ্রান্ত আখ্যা দিয়ে বলেছে পৃথিবীর সবাই ঐ দল গুলোর সাথে ঐক্য করলেও চরমোনাই ঐক্য করবে না, বরং প্রয়োজনে শয়তানের সাথে ঐক্য করবে। এর প্রধান কারণ হল- অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীন গুলো কখনোই চরমোনাইর আকিদা লালন করে না। আমরাও জানি বাতিলশক্তি সঠিক ইকামতে দ্বীন গুলোকে ঠেকাতে অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীনের বিপক্ষে যত দলকে মাঠে নামিয়েছে তার প্রধান দল চরমোনাই। তাই অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীন সাথে চরমোনাই ঐক্য অসম্ভব বলা যেতেই পারে।
যাইহোক, চরমোনাই যেহেতু আকিদার প্রশ্ন তুলেছে এবং আমাদের অনেক লোক ধারণা করে যে, এদেশে সবচেয়ে বড় ভণ্ডপীর দেওয়ানবাগী আর বড় হক্কানী পীর চরমোনাই; সেহেতু এ দুই পীরের কতিপয় আকিদা ও কারামতির সাথে অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীন আকিদা তুলে ধরা জরুরী মনে করছি।
১। দেওয়ানবাগী:
দেওয়ানবাগী পীর তার আকিদা পেশ করে বলেন, আপনারা যে মুরশিদ ধরেছেন, আরশ মোকামে গিয়ে দেখবেন সেই (দেওয়ানবাগী) মুরশিদই বসা। অর্থাৎ দেওয়ানবাগী পীরই আল্লাহ বা আল্লাহর সমকক্ষতা অর্জন করেছে। (নাউযূবিল্লাহ)
চরমোনাই:
চরমোনাই এই সমকক্ষতা অর্থাৎ "আনাল হক" আমি খোদা- হওয়ার ক্ষমতা বহু দিন আগেই অর্জন করেছেন। (আশেক মাশুক বা এস্কে এলাহী, পৃঃ ৪১-৪৩)
এছাড়াও চরমোনাই আল্লাহর নিকট থেকে জোরপূর্বক রূহ ছিনতাই করার ক্ষমতা অর্জন করেছেন। (ভেদের মারেফাত বা ইয়াদে খোদা পৃঃ ১৫) অর্থাৎ চরমোনাই আকিদা হল- শক্তির দিক দিয়ে চর্মনাই আল্লাহরও এক ধাপ উপরে। আল্লাহকে চর্মনাই পীরগং পরাজিত করতে সক্ষম (নাউযূবিল্লাহ)।
অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীনের আকিদা হল-
ﻭَﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟِﻴُﻌْﺠِﺰَﻩُ ﻣِﻦْ ﺷَﻲْﺀٍ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﻟَﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ۚ ﺇِﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠِﻴﻤًﺎ ﻗَﺪِﻳﺮًﺍ.
আল্লাহ তো এমন নন যে, আসমান ও জমিনের কোন কিছু তাকে অক্ষম বা পরাজিত করে দেবে। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। (সূরা ফাতিরঃ৩৫/৪৪)।
অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীনের আকিদাও তাই।
.
২। দেওয়ানবাগী:
দেওয়ানবাগী পীর সরাসরিভাবে আল্লাহর সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে কথাবার্তা বলার দাবী করে থাকে।
চরমোনাই:
চরমোনাই পীরেরা আল্লাহর সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করেই ক্ষান্ত হয় না বরং তারা আল্লাহর সাথে নাকি মিলন দেয় সেভাবে উত্তেজিত হয়ে, যেভাবে তারা স্ত্রী মিলনের সময় উত্তেজিত হয়। (নাউযূবিল্লাহ) (ভেদে মারেফাত বা ইয়াদে খোদা পৃঃ ৬৯)
অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীনের আকিদা হল-
مَا لَهُمْ بِهِ مِنْ عِلْمٍ وَلَا لِآبَائِهِمْ ۚ كَبُرَتْ كَلِمَةً تَخْرُجُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ ۚ إِنْ يَقُولُونَ إِلَّا كَذِبًا.
এ ব্যাপারে তাদের কোন জ্ঞান নেই এবং তাদের পিতৃপুরুষদেরও না। বড় মারাত্মক কথা, যা তাদের মুখ থেকে বের হয়। মিথ্যা ছাড়া তারা কিছুই বলে না! (সূরা কাহ্ফঃ১৮/৫)
অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীন আরো বিশ্বাস করে,
سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُونَ.
তারা যা ব্যক্ত করে তোমার রব তা থেকে পবিত্র মহান, সম্মানের মালিক। (সূরা সাফফাতঃ৩৭/১৮০)
অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীনের আকিদাও তাই।
৩।দেওয়ানবাগী:
দেওয়ানবাগী পীরের আকিদা তিনি তার মুরীদের জন্য সুপারিশকারী।
চরমোনাই:
চোরমনাই আকিদা হল- চরমোনাই পীর গং যাকে খুশী তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। এমন কি চোরকেও চোরমনাই পীরেরা জান্নাতে নিয়ে যেতে পারে। (ভেদের মারেফাত বা ইয়াদে খোদা পৃঃ ২৭-২৮)
অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীন আকিদা হল:
এ অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীন আকিদা বিশ্বাস সেটাই যেটি আল্লাহ তা'আলা বলেছেন,
وَاتَّقُوا يَوْمًا لَا تَجْزِي نَفْسٌ عَنْ نَفْسٍ شَيْئًا وَلَا يُقْبَلُ مِنْهَا شَفَاعَةٌ وَلَا يُؤْخَذُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلَا هُمْ يُنْصَرُونَ.
আর তোমরা সে দিনকে ভয় কর, যেদিন কেউ কারো কোন কাজে আসবে না। আর কারো পক্ষ থেকে কোন সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না এবং কারও কাছ থেকে কোন বিনিময় নেয়া হবে না। আর তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। (সূরা বাকারাঃ ২/৪৮)
তবে আল্লাহ তা'য়ালা যাকে অনুমতি দিবেন, তিনি সুপারিশ করতে পারবেন। (বাকারাঃ ২/২৫৫)
৪।দেওয়ানবাগী:
দেওয়ানবাগী তার মুরীদদের জান্নাতে নেওয়ার লোভ দেখালেও কিয়ামতের ময়দানে বড় বড় জাহাজে করে তার মুরীদদের জান্নাতে নেওয়ার আকিদা তার দরবারে প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।
চরমোনাই:
চোরমোনাই আকিদা হল- কিয়ামতের ময়দানে কঠিন মসিবতের সময় যখন নবী রাসূলগণ পর্যন্ত নাফসি নাফসি বলতে থাকবে তখন চর্মনাই পীরেরা বড় বড় জাহাজে করে মুরীদদের জান্নাতে নিয়ে যাবে।
অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীন আকিদা হল:
এ বিষয়ে অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীনের পরিষ্কার আকিদা বিশ্বাস সেটাই যা কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللَّهُ الَّذِينَ جَاهَدُوا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِينَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ ۖ مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّىٰ يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَىٰ نَصْرُ اللَّهِ ۗ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ.
তোমরা কি মনে করেছ যে, তোমরা এমনি এমনি (যেমন- পীর ধরে জাহাজে চড়ে) জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ এখনো তোমাদের নিকট তাদের মত কিছু আসেনি, যারা তোমাদের পূর্বে বিগত হয়েছে। তাদেরকে স্পর্শ করেছিল কষ্ট-নির্যাতন ও দুঃখ-দুর্দশা এবং তারা (জালিমের নির্যাতনে) কম্পিত হয়েছিল। এমনকি রাসূল ও তার সাথি মুমিনগণ বলছিল, ‘কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে’? জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী। (সূরা বাকারাঃ২/২১৪)
সংক্ষিপ্ত আলোচনায়, এ কথা পরিষ্কার হয়েছে দেওয়ানবাগী চোরমনাই পীরদের সাথে অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীনের আকিদার অনেক তফাৎ রয়েছে। অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীন এসব ভণ্ডপীরের শিরকি ও কুফুরী আকিদা বিশ্বাস করা তো দূরের কথা বরং তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে এবং কুরআন সুন্নাহর আলোকে প্রতিষ্ঠিত আকিদা লালন করে। আজব ব্যাপার হল- যাদের আকিদা শিরক কুফুরীতে ভরা তারা অগ্রগামী ও বর্তমান প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত সহীহ ইক্বামতে দ্বীন গুলোর আকিদার বিরুদ্ধে কথা বলে। বস্তুত তারা অর্থের লোভে বাতিলশক্তির এজেন্ট হয়ে আল্লাহর দ্বীন বিজয়ের পথে বাধা দান করে।
আল্লাহ তা'আলা তাদের ব্যাপারে মুমিনদের সতর্ক করে বলেন,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِنَّ كَثِیْرًا مِّنَ الْاَحْبَارِ وَ الرُّهْبَانِ لَیَاْكُلُوْنَ اَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ وَ یَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِیْلِ اللّٰهِ١ؕ وَ الَّذِیْنَ یَكْنِزُوْنَ الذَّهَبَ وَ الْفِضَّةَ وَ لَا یُنْفِقُوْنَهَا فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ١ۙ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِیْمٍۙ
হে ঈমানদারগণ! এ আহলে কিতাবদের অধিকাংশ আলেম ও দরবেশের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তারা মানুষের ধন-সম্পদ অন্যায় পদ্ধতিতে খায় এবং তাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে। যারা সোনা রূপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদেরকে যন্ত্রণাময় আযাবের সুখবর দাও।
(সূরাঃতাওবা, আয়াতঃ৩৪)
অর্থাৎ এ জালেমরা শুধু ফতোয়া বিক্রি করে, ঘুষ খেয়ে এবং নজরানা লুটে নিয়েই ক্ষান্ত হয় না। এ সঙ্গে তারা এমন সব ধর্মীয় নিয়ম-কানুন ও রসম-রেওয়াজ উদ্ভাবন ও প্রবর্তন করে যেগুলোর সাহায্যে লোকেরা তাদের কাছ থেকে নিজেদের পরকালীন মুক্তি কিনে নেয়। তাদের উদর পূর্তি না করলে লোকের জীবন-মরণ বিয়ে-শাদী এবং আনন্দও বিষাদ কোন অবস্থাই অতিবাহিত হতে পারে না। তারা এদেরকে নিজেদের ভাগ্য ভঙ্গা-গড়ার একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী মনে করে। উপরন্তু নিজেরদের এমনসব স্বার্থ উদ্ধারের মতলব তারা আল্লাহর বান্দাদেরকে গোমরাহীতে লিপ্ত করে রাখে। যখনই কোন সত্যের দাওয়াত সমাজের সংশোধনের উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসে তখনই সবার আগে এরাই নিজেদের জ্ঞানীসুলভ প্রতারণা ও ধান্দাবাজীর অস্ত্র ব্যবহার করে তার পথ রোধ করে দাঁড়ায়।
আল্লাহ মানুষকে পীর নামক ধোকাবাজদের হাত হতে রক্ষা করুক(আমীন)।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ