expr:class='"loading" + data:blog.mobileClass'>

Wikipedia

সার্চ ফলাফল

বুধবার, ১ জানুয়ারী, ২০২৫

মুসলমানদের ঐক্যের শক্তি ও মুনাফে, মুশিরক এবং ইহুদি-খ্রিস্টানদের দূর্বলতা

 "মুসলমানদের ঐক্যের শক্তি ও মুনাফে, মুশিরক এবং ইহুদি-খ্রিস্টানদের দূর্বলতা"

ইসলামি ঐক্য



আজ মুসলমানরা যে ইহুদী ও মুনাফেকদের ঐক্য ও গর্জন দেখে ভয়ের কিছু নাই, কারন তাদের ঐক্য খুবই দূর্বল। আল্লাহ বলেন,

لَا یُقَاتِلُوْنَكُمْ جَمِیْعًا اِلَّا فِیْ قُرًى مُّحَصَّنَةٍ اَوْ مِنْ وَّرَآءِ جُدُرٍ١ؕ بَاْسُهُمْ بَیْنَهُمْ شَدِیْدٌ١ؕ تَحْسَبُهُمْ جَمِیْعًا وَّ قُلُوْبُهُمْ شَتّٰى١ؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا یَعْقِلُوْنَۚ

এরা একত্রিত হয়ে (খোলা ময়দানে) কখনো তোমাদের মোকাবিলা করবে না। লড়াই করলেও দুর্গাভ্যন্তরে অবস্থিত জনপদে বা প্রাচীরের আড়ালে লুকিয়ে থেকে করবে। তাদের আভ্যন্তরীণ পারস্পরিক কোন্দল অত্যন্ত কঠিন। তুমি তাদের ঐক্যবদ্ধ মনে কর। কিন্তু তাদের মন পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন।তাদের এ অবস্থার কারণ হলো তারা জ্ঞান ও বুদ্ধিহীন।(সূরা হাশর :১৪)

 এখানে মুনাফিকদের দুর্বলতার কথা বলা হয়েছে। তাদের প্রথম দুর্বলতা হলো, তারা ছিল ভীরু-আল্লাহকে ভয় করার পরিবর্তে মানুষকে ভয় করতো। ঈমানদারদের মত তাদের সামনে এমন কোন উন্নত লক্ষ ও আদর্শ ছিল না যা অর্জনের জন্য তাদের মধ্যে প্রাণপণ সংগ্রামে ঝাপায়ে পড়ার অনুপ্রেরণা সৃষ্টি হতো। তাদের দ্বিতীয় দুর্বলতা হলো মুনাফিকীর আচরণ ছাড়া তাদের মধ্যে আর কোন বিষয়ে মিল ছিল না যা তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি মজবুত ও সুসংবদ্ধ দলে পরিণত করতে পারতো। যে বিষয়টি তাদের ঐক্যবদ্ধ করেছিল তাহল, নিজেদের শহরে বহিরাগত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নেতৃত্ব ও শাসন চলতে দেখে তাদের কলিজা দগ্ধ হচ্ছিলো আর স্বদেশবাসী আনসার কর্তৃক মুহাজিরদের সসম্মানে গ্রহণ করতে দেখে তাদের মন মুখ ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছিল। এই হিংসার কারণে তারা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এবং আশেপাশের ইসলাম বৈরীদের সাথে ষড়যন্ত্র ও যোগসাজশ করে এই বহিরাগত প্রভাব-প্রতিপত্তিকে খতম করে দিতে চাইতো। তাদেরকে পরস্পর ঐক্যবদ্ধ করার জন্য এই নেতিবাচক উদ্দেশ্য ছাড়া কোন গঠনমূলক জিনিস ছিল না। তাদের প্রত্যেক নেতার আলাদা আলাদা দল ও উপদল ছিল। প্রত্যেকেই নিজের মাতবরী ফলাতে চাইতো। তারা কেউ কারো অকৃত্রিম বন্ধু ছিল না। প্রত্যেকের মনে অন্যদের জন্য এতটা হিংসা-বিদ্বেষ ছিল যে, নিজেদের সাধারণ শত্রুর মোকাবিলায়ও তারা নিজেদের পারস্পরিক শত্রুতা ভুলতে কিংবা একে অপরের মূলোৎপাটন থেকে বিরত থাকতে পারতো না। 

আল্লাহ তা’আলা এভাবে বনী নাযীর যুদ্ধের পূর্বেই মুনাফিকদের আভ্যন্তরীণ অবস্থা পর্যালোচনা করে মুসলমানদের জানিয়ে দিলেন যে, তাদের দিক থেকে বাস্তব কোন বিপদের আশঙ্কা নেই যদি মুমিনরা ঐক্য বদ্ধ থাকে,পক্ষান্তরে মুমিনরা যদি তাদের মত স্বার্থপর হয় তবে মুমিনদেরও তাদের ভাগ্যই বরন করতে হবে। তাই বারবার এ খবর শুনে তোমাদের ঘাবড়ে যাওয়ার আদৌ কোন কারণ নেই যে, তোমরা বনী নাযীরকে অবরোধ করার জন্য যাত্রা করলেই এই মুনাফিক নেতা দুই হাজার লোকের একটি বাহিনী নিয়ে তোমাদের ওপর আক্রমণ করে বসবে এবং একই সঙ্গে বনী কুরাইযা ও বনী গাতফান গোত্র দু’টিকেও তোমাদের বিরুদ্ধে আক্রমণে উস্কে দেবে। এসবই লম্ফঝম্ফ মাত্র। চরম পরীক্ষা শুরু হতেই এর অন্তসারশূন্যতা প্রমাণিত হয়ে যাবে। আজকের হা*মা*স ও ইসরায়েল যুদ্ধ দেখে যেননতা স্পষ্ট চোখে ভাসছে।

মুনাফিক ও ইহুদিদে তথা ইসলাম বিদ্বেষীদের বিষয়ে আল্লাহ আরো বলেন,,


كَمَثَلِ الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ قَرِیْبًا ذَاقُوْا وَبَالَ اَمْرِهِمْ١ۚ وَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِیْمٌۚ

এরা তাদের কিছুকাল পূর্বের সেই সব লোকের মত যারা তাদের কৃতকর্মের পরিণাম ভোগ করেছে।২৬ তাদের জন্য আছে কঠিন শাস্তি।(শূরা হাশর-১৫)

 এখানে কুরাইশ গোত্রের কাফের এবং বনী কায়নুকার ইহুদীদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে যারা নিজেদের সংখ্যাধিক্য এবং সাজ-সরঞ্জামের প্রাচুর্য সত্ত্বেও এ সব দুর্বলতার কারনে মুসলমানদের সাজ-সরঞ্জামহীন মুষ্টিমেয় লোকের একটি দলের কাছে পরাজিত হয়েছিল।


'তুমি কি মােনাফেকদের দেখােনি, তারা তাদের কাফের আহলে কিতাব ভাইদের বলে, তােমাদের যদি বের করে দেয়া হয় তাহলে আমরা অবশ্যই তােমাদের সাথে বেরিয়ে যাবাে...'(হাশর:১১-১৭) এ হচ্ছে বনু নযীর গােত্রীয় ইহুদীদের সম্বােধন করে মােনাফেকরা যা বলেছে তার হুবহু উদ্ধৃতি।


মােনাফেকরা সেই প্রতিশ্রুতি পালন করেনি; বরং প্রতিশ্রুতি ভংগ করে তাদের বেকায়দায় ফেলে অপদস্থ করেছিলাে। শেষ পর্যন্ত তাদের কাছে অকল্পনীয়ভাবে আল্লাহর আযাব এসেছিলাে এবং আল্লাহ তাদের অন্তরে আতংক সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন। এখানে কোরআনের প্রতিটি বাক্যেই রয়েছে তাৎপর্যময় মর্মস্পর্শী তথ্য, যা হৃদয়রাজ্যে তােলপাড় সৃষ্টি করে এবং দ্বীনী জ্ঞান, প্রশিক্ষণ ও সুগভীর ঈমানের উপকরণ যােগান দেয়। 

মুনাফিকদের সাথে ইহুদী খ্রিষ্টানদের সম্পর্কের রূপ : 

এখানে আলােচিত হয়েছে মােনাফেকদের ইহুদিদের আত্মীয়তা ও ঘনিষ্ঠতার বন্ধন সম্পর্কে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'তুমি কি মােনাফেকদের দেখােনি যে, তারা তাদের ভাই কাফের আহলে কিতাবকে বলে...' অর্থাৎ বনু নযীর নামক এই আহলে কিতাব গােত্রটি কাফের এবং মােনাফেকরা ইসলামের বেশ ধারণ করলেও তারা এ কাফের আহলে কিতাব গােত্রটিরই ভাই। 

দ্বিতীয়ত মােনাফেকদের পক্ষ থেকে তাদের ভাইদের প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির ভাষায় তাকীদ বা দৃঢ়তার উল্লেখ, 'যদি তােমাদের বের করে দেয়া হয় তাহলে আমরা অবশ্যই তােমাদের সাথে বেরিয়ে যাবাে, তােমাদের ব্যাপারে আমরা আর কারাে হুকুম মানবাে না এবং তােমাদাদের ওপর যদি যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়, তাহলে অবশ্যই আমরা তােমাদের সাহায্য করবাে।' তাদের এই সব প্রতিশ্রুতির স্বরূপ আল্লাহ তায়ালাই ভালাে জানেন এবং তিনি প্রতিশ্রুতির মুখােশ খুলে দেন, ‘আল্লাহ তায়ালা যা সাক্ষ্য দিয়েছেন বাস্তবে সেটাই হয়েছিলাে।' 

মােনাফেকরা তাদের ভাইদের জ্ঐাতী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাে, তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এরপর মােনাফেকদের ও তাদের ভাই কাফের আহলে কিতাব গােষ্ঠীর একটা মনস্তাত্ত্বিক দুর্বলতার উল্লেখ করা হয়েছে, 'নিশ্চয়ই তােমরা তাদের কাছে আল্লাহর চেয়ে বেশী ভয়ের পাত্র।' এর কারণ এই যে, তারা একটা নির্বোধ গােষ্ঠী। অর্থাৎ তারা আল্লাহ তায়ালার চেয়েও মুসলমানদের বেশী ভয় করে। তারা যদি আল্লাহকে ভয় করতাে, তাহলে আল্লাহর বান্দাদেরকে তাদের ভয় করতে হতাে না। কেননা ভয় একটাই হতে পারে, একাধিক নয়। আল্লাহর ভয় ও বান্দার ভয়- এই দুই ধরনের ভয় কোনাে মােমেনের অন্তরে একই সাথে থাকতে পারে না। বিশ্ব জাহানের যা কিছু শক্তি ও পরাক্রম সবই আল্লাহর। বিশ্ব প্রকৃতির সমস্ত শক্তি একমাত্র আল্লাহর আদেশের অধীন। এমন কোনাে প্রাণী নেই, যার লাগাম আল্লাহর হাতে নেই। তাহলে যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, সে আর কাকে ভয় করবে? কিন্তু যারা এ সত্য বুঝে না, তারা আল্লাহর চেয়েও তার বান্দাদের বেশী ভয় করে থাকে। কেননা তারা একটা নির্বোধ গােষ্ঠী। 

এভাবে বনু নযীরের প্রকৃত অবস্থা ও চরিত্র স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। সেই সাথে এই মৌল তত্ত্বও ব্যক্ত করা হয়েছে, অর্থাৎ মােনাফেকদের ও কাফের আহলে কিতাব গােষ্ঠীর এই মানসিক অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে যে, তারা আল্লাহর চেয়েও মােমেনদের বেশী ভয় করে। তারা সম্মিলিতভাবেও তােমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারবে না। তবে পারবে কেবল সুরক্ষিত জনপদের মধ্যে অথবা প্রাচীরের আড়ালে অবস্থান করে। তাদের নিজেদের মধ্যেই রয়েছে তীব্র অন্তর্দ্বন্দ। '

তুমি তাদের ঐক্যবদ্ধ ভাব, অথচ তাদের মন পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন। কেননা তারা আসলেই একটা নির্বোধ সম্প্রদায়(হাশর: ১৪)

 পরবর্তীকালে যখনই কোথাও এ ধরনের মােনাফেক ও কাফের জনগােষ্ঠী একত্রে অথবা পাশাপাশি বসবাস করেছে, তখনই মুনাফিক ও কাফেরদের এই মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা, যা কোরআনের এই আয়াতে অত্যন্ত নির্ভুলভাবে উদঘাটিত হয়েছে- অলৌকিকভাবে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। এটা একটা চাক্ষুষ সত্য হিসাবেও প্রমাণিত হয়েছে। 

সম্প্রতি মুসলিম গেরিলাদের সাথে ইহুদীদের যে সংঘর্ষ বায়তুল মাকদাসে সংঘটিত হয়েছে, তা থেকে বিস্ময়করভাবে এ সত্যটি প্রমাণিত হয়েছে। ইহুদিরা ফিলিস্তীন ভূখন্ডে নির্মিত সুরক্ষিত কলােনীগুলােতে আশ্রয় নেয়া ছাড়া মুসলমানদের সাথে লড়াই করতে পারেনি। কখনাে প্রকাশ্য ময়দানে মুখােমুখি হলে তারা ইঁদুরের মতাে পালিয়েছে। তা দেখলে মনে হয় যেন এ আয়াত সর্বপ্রথম তাদের ব্যাপারেই বুঝি নাযিল হয়েছে। তাদের বাইরের দৃষ্টিতে মনে হয় অন্যান্য মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলাে যথারীতি আজো বহাল রয়েছে। অথচ তাদের মন পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন। এটা মােনাফেক ও কাফেরদের বৈশিষ্ট্য। অপরদিকে মুসলমানদের অবস্থা হচ্ছে এর বিপরীত। মুসলমানদের বিভিন্ন প্রজন্মের মাঝে স্থান, কাল, জাতি, বর্ণ, বংশ ও ভৌগােলিক এলাকার যতাে ব্যবধানই থাকুক, সব অতিক্রম করে ঈমানী ঐক্য তাদের অটুট বন্ধনে আবদ্ধ করে। 

কাফের ও মােনাফেকদের ভেতরে এমন ঐক্য কখনাে হয় না, কারণ তারা নির্বোধ। এদের উভয়ের বা বাহ্যিক হাবভাব কখনাে কখনাে আমাদের ধোকা দেয়। আহলে কিতাব গােষ্ঠীকে কখনাে কখনাে একাত্ম ও ঐক্যবদ্ধ দেখা যায়। অনুরূপভাবে মােনাফেকদেরকেও কখনাে কখনাে একই শিবিরে সমবেত হতে দেখা যায়, কিন্তু প্রকৃত খবর আমাদের কাছে আল্লাহ তায়ালা  আকাশ থেকে আগেই ওহীর মাধ্যমে বলে দিয়েছেন। সে খবর হলাে, তারা আসলে সে রকম নয়। তারা ঐক্যবদ্ধ নয়, বাহ্যত যদিও তা দেখা যায়, সেটা একটা প্রতারণাপূর্ণ দৃশ্য। সময়ে সময়ে এসব প্রতারণার মুখােশ আবার খসেও পড়ে, তখন বাস্তব ঘটনা স্পষ্ট হয়ে যায় এবং একই শিবিরের ভেতরে স্বার্থ, অভিরুচি ও মতামতের বিভিন্নতার কারণে যে বিবাদ-বিসম্বাদ ও অনৈক্য বিদ্যমান তাও ফাস হয়ে যায়।হামাস ইসরায়েল যুদ্ধে ৭ দিন যেতে না যেতেই ইসরায়েলের ভেতরেই যুদ্ধবাজ সরকারের বিভক্তি, সরকার বিরোধী ইহুদিদের বিক্ষোভ, দলে দলে ইসরায়েলি নাগরিক দেশ ছেড়ে বিদেশের পালায়ন এই বক্তব্যের প্রেক্ষাপটের জলন্ত প্রমান।

 মুসলমানরা যখনই আন্তরিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর রজ্জু ধারণ করেছে, তখনই তাদের সামনে তাদের প্রতিপক্ষের অনৈক্য, স্ববিরােধিতা, অন্তর্দ্বন্দ ও কপটতা ধরা পড়ে গেছে। মুসলমানরা যখনই ধৈর্য ধারণ করেছে ও সত্যের ওপর অবিচল অবস্থান গ্রহণ করেছে, তখনই বাতিল পন্থীদের লোক দেখানাে ঐক্য ভেংগে পড়েছে এবং তাদের ভেতরকার তীব্র বিরােধী বিদ্বেষ ও মনের অনৈক্য স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। মােনাফেক ও কাফের ইহুদী খৃষ্টানরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে সক্ষম হয় কেবল তখনই, যখন মুসলমানদের ভেতরে অনৈক্য ও বিরােধের সূচনা হয়। এই অনৈক্য ও বিরােধের কারণে তাদের সেই মৌলিক চরিত্র বহাল থাকে না। নচেত মােনাফেকরা সব সময়ই মুসলমানদের চেয়ে দুর্বল ও অক্ষম। 

মুনাফেকরা ও ইটহুদী-খৃষ্টানরা মানসিক, স্বার্থগত রুচিগত দিক দিয়ে পরস্পর থেকে অনেকটা বিভেদগ্রস্ত। তাদের ক্ষেত্রেই একথা বেশী প্রযােজ্য যে, তাদের ভেতরে তীব্র অন্তর্দ্বন্দ বিদ্যমান, তুমি তাদের ঐক্যবদ্ধ মনে করলেও তাদের হৃদয়গুলাে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন।

 আল্লাহ এ সত্য মুসলমানদের অন্তরে বদ্ধমূল করতে চায়। কেননা সে তাদের সামনে তাদের শত্রুর ভাবমূর্তি ক্ষীণ করতে এবং তাদের শত্রু-ভীতি থেকে মুক্ত করতে বদ্ধ পরিকর। আসলে সে মুসলমানদের শাশ্বত সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত করা ও তার ভিত্তিতে আধ্যাত্মিক সচেতনতা দান করতে চায়। 


মুসলমানরা যখনই কোরআনকে নিজেদের চেতনা ও প্রেরণার উৎস হিসেবে গ্রহণ করবে, তখনই তাদের শত্রুরা ও আল্লাহর শত্রুরা তাদের কাছে আর ভয়ের পাত্র থাকবে না। এটা করতে পারলে তারা এক কাতারে সমবেত হতে পারবে। তাদের সামনে দাঁড়ানাের মতাে কোনাে শক্তিই আর পৃথিবীতে থাকবে না। যারা আল্লাহর ওপর যথার্থই ঈমান রাখে, তাদের নিজেদের অবস্থা ও তাদের শত্রুদের অবস্থা উপলব্ধি করা উচিত। এটা উপলব্ধি করতে পারলেই লড়াইয়ে অর্ধেক জয় অর্জিত হয়ে যাবে। 

একটা ঘটনার বিবরণদান, সেই ঘটনার পর্যালােচনা করা এবং সেই ঘটনার চাক্ষুষ দর্শকরা যাতে তার থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সে জন্যে তাদের সামনে এই তথ্য প্রমাণগুলাে বিশ্লেষণ প্রসংগে কোরআন এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মুসলমানদের অবহিত করে। অনুরূপভাবে সে মুসলমানদের পরবর্তী প্রজন্মকেও এ ব্যাপারে অবহিত করাতে এবং এ নিয়ে চিন্তা গবেষণার সুযােগ দিতে চায়। 

 বনু কায়নুকা নামে ইহুদী গােত্রের সাথে মুসলমানদের যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, তা ছিলাে বদর যুদ্ধের পর ও ওহদ যুদ্ধের পূর্বের ঘটনা। এই বনু কায়নুকার সাথে রসূল(স.)-এর চুক্তি ছিলাে, কিন্তু বদর যুদ্ধে মােশরেকদের ওপর মুসলমানরা যখন বিজয়ী হলাে, তখন ইহুদীরা তাতে ক্ষুব্ধ হলাে। এতােবড়াে বিজয়লাভে মুসলমানদের ওপর তারা ঈর্ষান্বিত হলাে। তাদের আশংকা ছিলাে, মুসলমানদের এ বিজয় মদীনায় তাদের অবস্থা প্রভাবিত করবে। মুসলমানদের যে পরিমাণ শক্তি বৃদ্ধি ঘটবে, সেই পরিমাণ ইহুদীদের শক্তি ও প্রভাব প্রতিপত্তি কমবে। ইহুদীরা যে কানাঘুষা করে দুরভিসন্ধি ঘটাচ্ছিলাে, সে কথা রসূল(স.) জানতে পেরে তাদের সতর্ক করে দিলেন এবং তাদের সাথে তার যে শান্তি চুক্তি রয়েছে, তার কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। সেই সাথে এরূপ মনােভাবের পরিণতি সম্পর্কেও তাদের হুঁশিয়ার করে দিলেন, কিন্তু বনু কায়নুকা গােত্রটি রসূল(স.)-কে পাল্টা হুমকি দিয়ে ধৃষ্টতার চরম পরাকাষ্ঠা দেখালাে। তারা বললাে, 'হে মােহাম্মদ, যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী নয় এমন একটা গােত্রকে যুদ্ধে হারিয়ে দিয়ে তােমার অহংকার করা উচিত নয়। আমাদের সাথে যদি তােমার যুদ্ধ হয়, তাহলে বুঝবে আমরা সত্যিকার যােদ্ধা। এরপর তারা মুসলমানদের ক্রমাগত উস্কানি দিতে থাকলো। 

একটা বর্ণনা থেকে জানা যায়, জনৈক মুসলিম নারী বনু কায়নুকার বাজারে একদিন একটা পণ্য বিক্রি করে। সে একজন রং মিস্ত্রীর দোকানের সামনে বসে পণ্যটা বিক্রি করেছিলো। ইহুদীরা তার মুখ খােলার জন্যে তাকে উত্যক্ত করতে থাকে, কিন্তু সে কোনােক্রমেই মুখ খুলতে রাজি হয়নি। এদিকে রং মিস্ত্রী সুকৌশলে তার পরিধানের কাপড়ের এক প্রান্ত পিঠের সাথে বেঁধে দেয়। ফলে সে যখন ওঠে দাঁড়ালাে তখন তার লজ্জাস্থান বেরিয়ে পড়লাে। তা দেখে সবাই হেসে ওঠলাে। মহিলাটি তখন চিৎকার দিয়ে ওঠলাে। তার চিৎকারের সাথে সাথে জনৈক মুসলমান রংমিস্ত্রীর ওপর আক্রমণ চালিয়ে তাকে হত্যা করে ফেললাে। আবার ইহুদীরা মুসলমানদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে তাকে মেরে ফেললাে। এরপর মুসলমানের সাথীরা মুসলমানদের সাহায্য চেয়ে চিৎকার করলাে। তখন মুসলমানরা রেগে গেলাে, ফলে মুসলমানদের মধ্যে ও বনু কায়নুকার মধ্যে যুদ্ধ বেধে গেলাে। রসূল(স.) বনু কায়নুকাকে অবরােধ করলেন। তারা রসূল(স.)-এর ফায়সালা মানতে রাজী হলাে। এই সময় মােনাফেক সর্দার আবদুল্লাহ বিন উবাই বিন সলুল রসূল(স.)-এর সাথে তর্ক বিতর্ক শুরু করে দিলাে, সে জানালাে, খাযরাজ গােত্রের সাথে বনু কায়নুকার শান্তি চুক্তি রয়েছে কিন্তু আসলে এটা ছিল মােনাফেকদের ও আহলে কিতাব কাফেরদের মধ্যকার গাটছাড়া। অবশেষে রসূল(স.) বনু কায়নুকাকে তাদের অস্ত্রশস্ত্র ছাড়া অন্য সমস্ত অস্থাবর সম্পত্তি সহকারে মদীনা থেকে নির্বাসন দিয়ে যুদ্ধ না করতে সম্মত হলেন। তারা প্রাণ নিয়ে সিরিয়ায় পালালাে। এখানে কোরআনে এই ঘটনার দিকেই ইংগিত করা হয়েছে এবং তাদের সাথে বনু নযীর ও মােনাফেকদের অবস্থার তুলনা করা হয়েছে।


অতএব মুসলমানদের ঐক্য ও ঈমানী শক্তির কাছে কাফের, মুশরেক ও ইহুদি-খ্রিস্টানদের কোন ঐক্য ও শক্তি কিছুই না, কেননা তারা পরস্পর ভেতরে ভেতরে সর্বদাই বিচ্ছিন্ন।

লেখক:
ডাঃবশির আহাম্মদ, চিকিৎসক, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী। 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে!

  দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে! এক.   শুনতে খারাপ শোনালেও এটা সত্য, রবীন্দ্রনাথের...