"ইসলামি বিপ্লব ও ইসলামি সমাজ বিনির্মান চেষ্টার পার্থক্য"
ইসলামি সমাজ বিনির্মান ও ইসলামি বিপ্লব
সন্মানিত পাঠক গন, শিরোনাম দেখেই বুঝতে পারছেন এই আলোচনা বিপ্লব আর সমাজ বিনির্মানের পার্থক্য নিয়ে আলোচনা।
বিপ্লব কি এটা চলুন আগে জানি। বিপ্লব হল কোন একটি সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে, পুরাতন সকল নীতি ও আইন বাতিল করে সম্পূর্ণ রুপে নতুন ও কাঙ্খিত কোন ব্যবস্থা প্রতিস্থাপনের নামই হলো বিপ্লব। এই বিপ্লব সাধনের জন্য একটি সমাজে অনেক নিয়ামক পরিবর্তন করে পুরাতন ব্যবস্থাকে অসার প্রমান পূর্বক নতুন আদর্শের সুফলের বিষয়ে জনমনে আকাঙ্খা সৃষ্টি করে তার পর চুড়ান্ত পরিবর্তনের মাধ্যমে করতে হয়।
আর একটি সমাজ বিনির্মান চেষ্টা এর মানে হলো কোন সমাজকে আস্তে ধীরে, দাওয়াত ও আপষকামী উপায়ে পরিবর্তনের চেষ্টা করা। এই সমাজ বিনির্মানের চেষ্টা আপনি নানান উপায়ে করতে পারেন, এটা হোক আপষকামী উপায়ে অথবা অন্য কৌশলে, এটার সফলতা ও বিফলতা কোনটার উপরই কর্মীদের কোন দায়বদ্ধতা থাকে না। এটা এমন যে, কোন একটি গাছের গুড়ি এক স্থান হতে অন্য স্থানে কয়েকজন মিলে সরানোর চেষ্টা করা, সরাতে পারলে সফল, আর না সরাতে পারলে পরিশ্রমকারীদের কোন আফসোস নাই।
আর বিপ্লব হলো প্রচেষ্টাকারীরা যে গুড়িটি সরানোর জন্য প্রচেষ্টা করেছে কিন্তু প্রচেষ্টাকারীরা নিজেকে সেই কাজের সফলতার জন্য নিজেকে দায় বদ্ধ মনে করেনা, কিন্তু বিপ্লবীরা হলো সেই একই প্রচেষ্টাকারীরা এই গুঁড়িটি সরাতে নিজেকে দায়বদ্ধ মনে করে। আর এই দাবদ্ধতার জন্য সৃষ্টি কর্তার উপর সম্পূর্ণ ভরসা রেখে সফলতার জন্য ইনসাফ ভিত্তিক উপায়ে সর্বাত্মক চেষটা করে। আর সর্বাত্মক চেষ্টা করে যখন সফল হয় তখনই বিপ্লব হয়।
অর্থাদ বিনির্মানের কর্মীরা সফল হলে কৃতজ্ঞতার ভাগ নিলেও ব্যর্থতার জন্য নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করতে রাজী থাকে না। আর বিপ্লবীরা সফলতার সর্বাত্মক চেষ্টা চালায় এবং চুড়ান্ত বিজয় পর্যন্ত লড়ে যায়, ব্যর্থ হলে নিজেদের দোষ ত্রুটি গুলো খোঁজে বের করার চেষ্টা করে।
এখন আসুন ইসলাম কোনটা ডিমান্ড করে, সমাজ বিনির্মান চেষ্টা না বিপ্লব? আর এটা বুঝার জন্য ইসলামের ইতিহাসের দিকে তাকাতে হবে। মক্কায় প্রথমে হযরত মুহাম্মদম (সা:) দাওয়াতি কাজ চালিয়েছেন একটি ইসলামি সমাজ বিনির্মানের লক্ষ্যে যার উদ্দেশ্যে ছিলো কুফুরী সমাজ ব্যবস্থাকে বিপ্লবের মাধ্যমে ইসলামি সমাজে প্রতিস্থাপন। তার পর এই ইসলামি সমাজ বিনির্মানে তাগুতি শক্তির বাঁধার কারনে আল্লাহর হুকুমে হিজরত করতে হয় মদিনায়। মদিনায় হিজরতের আগ পর্যন্ত দাওয়াতের কাজটা ছিলো ইসলামি সমাজ বিনির্মান চেষ্টা যার উদ্দেশ্য ছিলো বিপ্লব।
হিজরতের পরও ইসলামকে চুড়ান্ত ভাবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দাওয়াতের কাজ ও কৌশল চলতে থাকে। মদিনায়ও চলতে থাকে ইসলামি সমাজ বিনির্মান প্রচেষ্টা কারন চুড়াত লক্ষ্য বিপ্লব। তার পর একটা সময়ে আল্লাহর হুকুমে তাগুত শক্তিকে সমূলে বিনাশের জন্য জিহাদের মাধ্যমে বাতিলকে উৎখাত করে ইসলামকে ফাইনালি প্রতিষ্ঠা করা হয় বিপ্লবের মাধ্যমে।
এতে বুঝা গেলো ইসলামি সমাজ বিনির্মানের প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি বিপ্লবী পরিবেশ সৃষ্টি সম্ভব হলেও এতুটুকু কাজে ইসলামের চুড়ান্ত বিজয় সম্ভব নয়।চুড়ান্ত বিজয় আসবে বিপ্লবের মাধ্যমে।
আমি এত বড় একটি প্রবন্ধ লেখার মূল কারন হলো ইসলামি ছাত্র শিবিরের সংবিধানে চতুর্থ ধারায় পঞ্চম কর্মসূচী নিয়ে।এটা একটা চড়ান্ত কর্মসূচি যা একটা সর্বোচ্চ আকাঙ্খা থাকে। আগে তাদের পাঁচ নম্বর কর্মসূচী বা চুড়ান্ত কর্মসূচী ছিলো ইসলামি বিপ্লব, কিন্তু ২০০৭ সালের দিকে এটা কোন এক জাদুর বলে বিপ্লব হতে হয়ে গেলো ইসলামি সমাজ বিনির্মান প্রচেষ্টা।
আমি এই বিষয়ে ছাত্র সংগঠন নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না,কারন ইসলামি ছাত্র শিবির ক্যাম্পাসের সবচেয়ে ট্যালেন্ট ছাত্ররাই করে, তাই এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তার ভার ছাত্র শিবিরের ভাইদের বিবেকের উপরই রাখলাম।
তবে এতটুই বলব এই বিপ্লব পরিবর্তন করে বিনির্মান হয়েছে তৎকালে জামায়াত ও শিবিরের ঘাপটিমারা মাদখালি সালাফি ভেজা বেড়ালদের দ্বারা সৌদি সরকারের ইন্ধনে। কেননা মাদখলিরা কখনোই ক্ষমতাসীন জালিম সরকারের অপকর্মের বিরোধিতা করা জায়েজ মনে করে না। মাদখালিরা এক গোলামের জাতি, ওরা বাকী মুসলমানদেরও গোলামের জাতিতে পরিনত করতে চায়।
ছাত্র শিবির সিদ্ধান্ত নিবে ওদের চুড়ান্ত লক্ষ্য কি হবে, এটাতে কেউ হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা রাখে না।
লেখক: চিকিৎসক, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ