"দেহবাদিদের পথ ভ্রষ্টতার প্রমান ও মিথ্যার জবাব"
قَالَ يَاإِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ أَاسْتَكْبَرْتَ أَمْ كُنتَ مِنْ الْعَالِينَ
‘‘আল্লাহ বললেন, হে ইবলীস! যাকে আমি নিজের দুই হাত দ্বারা সৃষ্টি করেছি তার সম্মুখে সেজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? তুমি কি অহংকার করলে? না তুমি তার চেয়ে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন?’’ (সূরা ছফ: ৭৫)।
এই আয়াত দিয়ে তারা আল্লহর দেহে হাতের অস্তিত্ব দাবি করে তার প্রমান দেয়।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
وَمَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ وَالْأَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّماوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِينِهِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ
‘‘তারা আল্লাহর মর্যাদা ও ক্ষমতা মোতাবেক কদর করেনি। কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তার হাতের মুঠোয় এবং আসমানসমূহ ভাঁজ করা অবস্থায় থাকবে তার ডান হাতে। তিনি পবিত্র। আর এরা যাকে শরীক করে, তা থেকে তিনি অনেক উর্ধ্বে’’। (সূরা আয যুমার: ৬৭)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلَّاوَجْهَهُ
‘‘তার চেহারা ব্যতীত সবকিছুই ধ্বংস হবে’’। (সূরা কাসাস: ৮৮)
এই আয়াত দ্বারা মাদখালিরা আল্লাহর দেহের অস্তিত্ব দাবি করে ও প্রমান দেয়।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ وَيَبْقَى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ
‘‘ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংস হবে। একমাত্র তোমার সেই রবের চেহারাই অবশিষ্ট থাকবে, যিনি মহিয়ান ও দয়াবান। (সূরা আর্ রাহমান: ২৬-২৭)
আল্লাহ তা‘আলা সূরা মায়িদার ১১৬ নং আয়াতে আরো বলেন,
تَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِي وَلَا أَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِكَ إِنَّكَ أَنتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ
‘‘আমার অন্তরে যা আছে তা তুমি জানো। কিন্তু তোমার অন্তরে যা আছে আমি তা জানি না, তুমি তো গায়েবের সমস্ত জ্ঞান রাখো’’।
এই আয়াত দিয়ে আল্লাহর অন্তরের অস্তিত্ব দাবি করে।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
كَتَبَ رَبُّكُمْ عَلَىٰ نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ أَنَّهُ مَنْ عَمِلَ مِنكُمْ سُوءًا بِجَهَالَةٍ ثُمَّ تَابَ مِن بَعْدِهِ وَأَصْلَحَ فَأَنَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, وَيُحَذِّرُكُمُ اللَّهُ نَفْسَهُ ‘‘আল্লাহ তোমাদেরকে তার নফসের ভয় দেখাচ্ছেন’’। (সূরা আলে-ইমরান: ২৮)
শাফা‘আতের হাদীছে এসেছে, নাবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
«لَمَّا يَأْتِي النَّاسُ آدَمَ فَيَقُولُونَ لَهُ: خَلَقَكَ اللَّهُ بِيَدِهِ وَأَسْجَدَ لَكَ مَلَائِكَتَهُ وَعَلَّمَكَ أَسْمَاءَ كُلِّ شَيْءٍ»
‘‘কিয়ামতের দিন যখন মানুষ আদম আলাইহিস সালামের নিকট এসে বলবে, আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে স্বীয় হাত দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, তার ফেরেশতাকে দিয়ে আপনাকে সিজদা করিয়েছেন এবং আপনাকে সব জিনিসের নাম শিখিয়েছেন’’।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا خَلَقْنَا لَهُم مِّمَّا عَمِلَتْ أَيْدِينَا أَنْعَامًا فَهُمْ لَهَا مَالِكُونَ
‘‘এরা কি দেখে না, আমি নিজের হাতে তৈরী জিনিসের মধ্য থেকে এদের জন্য সৃষ্টি করেছি গবাদি পশু এবং এখন এরা তার মালিক’’। (সূরা ইয়াসীন: ৭১)
এখন এই মূর্খদের জবাব দেওয়ার পালা। এই নযদি- ওহাবী, মাদখালিরা এতই মূর্খ যে, তারা আরবি তো জানেই না, জানলেও ইচ্ছা করে ভুল ব্যাখ্যা করে। আর বাংলা ও আধুনিক সাহিত্যও জানে না, এমন জাত মূর্খ।
আসুন আপনাদের সাহিত্য ও ব্যাকরন দিয়ে তাদের মূর্খতার প্রমান দেই।
১। তারা যে আল্লাহর হাতের অস্তিত্ব দাবি করে এটা তাদের আরবি সাহিত্য ও ভাষাগত মূর্খতার বহিঃপ্রকাশ।
দেখুন হাত একটি বাংলা শব্দ, যদি বলি আমার দুই হাত, তাইলে বুঝবেন বাস্তবে আমার দুটি হাত বুঝিয়েছি। আবার যদি বলি আমার কথায় একজন বাম হাত ঢুকিয়েছে তাতে বুঝতে হবে কেউ একজন বিনা অনুমতিতে আমার কথার মাঝে লোকমা ধরেছে। আদতে কথার মাধ্যে হাত ঢুকানোর কোন সুযোগ নাই, কেননা কথা একটা ক্রিয়া, যার বাস্তবতা আলাদা, এখানে হাত ঢুকানো বলতেও হাত বুঝায় নি, অধিকার বুঝায়। অর্থাদ স্থান ভেদে একই জিনিসের বিভিন্ন গুন বাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
২।চেহারার কথা যে দেহবাদিরা দাবী করে এটাও তাদের মূর্খতা। কেননা আমি যখন বলি আমি আয়নার সামনে চেহারা দেখি, এতে বুঝায় আমি নিজের অস্তিত্বের অবয়বের প্রতিচ্ছবি দেখছি, এটা সরাসরি চেহারা দেখা না। কিন্তু যদি বলি আমি আপনার চেহারা দেখে দেখে হুব হু এঁকে দিব। এতে বুঝা যায় আমি উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে সরাসরি দেখে এঁকে দেব। এখানেও একই শব্দের অবস্তা ও সাহিত্যিক বর্ননার ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা কিছু বুঝায়।
৩। অন্তর: অন্তর শব্দটির ও বিভিন্ন অর্থে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহৃত হতে পারে সহিত্যে।
আর আপনারা জানেন আলকরআন শুধু ঐশী বানীই নয়, বরং একটা সর্ব কালের শ্রেষ্ঠ, ভাষায় অংকৃত ও সাহিত্য সম্মলিত আল্লাহ তা'লার নাজিল কৃত কিতাব। আর এই মূর্খরা এই সাহিত্যগত অলংকরনের অর্থ না বুঝতে পেরে নিজের মত অর্থ বানিয়ে আল্লাহর দেহের অস্তিস্ত প্রমান করতে গিয়ে নিজেরা পথ ভ্রষ্ট হচ্ছে এবং একদল দূর্বল ঈমানের মানুষকে নিয়ে যাচ্ছে মূর্তি পূজার দিকে।
এখানে দেহবাদিরা যে মিথ্যা দাবি গুলো কোরআনের আয়াত দিয়ে ব্যাখ্যা করছে সে গুলো আলকোরআনের অর্থের বিকৃতি ছাড়া আর কিছুই না। এরা নির্লজ্জ বেহায়া পথ ভ্রষ্ট সম্প্রদায়। এদের ধোঁকা হতে আল্লাহ মুসলমানদের রক্ষা করুক।(আমিন)
লেখক: চিকিৎসক, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ