"বাংলাদেশের স্বাধীনতায় ভারতের সহায়তার নামে পুকুর চুরি"
![]() |
ভারতীয় বাহিনীর সম্পদ চুরি |
ভারত বাংলাদেশের জঘন্যতম প্রতিবেশী চির শত্রু দেশ। এই ভারত যে শুধু বাংলাদেশেরই চির শত্রু দেশ তাই নয়, এই চানক্যের নীতিতে পররাষ্ট্র নীতিতে।চালিত দেশটি কোনো রতিবেশী দেশের জন্যই বন্ধু নয়। তারা শুধু বন্ধুত্ব করে নেওয়ার জন্য, দেওয়ার জন্য না। রতাক্ত জুলাই ২০২৪ বিপ্লবের পর বাংলাদেশে ভারতের নিয়োগকৃত কৃত দাস শেখহাসিনাকে ছার জনতা ক্ষমতাচ্যুত করার পর হতেই ভারতীয় মিডিয়া ও ভারতের নেতারা এই বলে খুঁটা দিচ্ছ যে ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, অথচ ভারতের কৃতদাস হাসিনাকে ক্ে তবুও ছাত্রজনতা পালাতে বাধ্য করেছে।কিন্তু এই স্বাধীনতায় ভারতের সহযোগীতার মূল কারন যে ছিলো পাকিস্তান ভেঙ্গে দিয়ে বাংলাদেশকে গোলাম বানানো এবং বাংলাদেশের সম্পদ চুরি করা এটা দেরীতে হলেও বাংলাদেচের মানুষ বুঝতে সক্ষম হয়েছে। চলুন আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরবর্তীতে ভারতীয় বাহিনীর সম্পদ চুরি নিয়ে লিখি। ভারত ১৯৭১ এর যুদ্ধের পর ২.২ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ সম্পদ লুট করেছিলো।
বাংলাদেশের ইতিহাস ঘেটে এই ব্যাপারে অনেক কিছুই বের করা সম্ভব। যেহেতু ভারতকে নিয়ে বাংলাদেশে লেখালিখির জন্য বাংলাদেশে বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার কে অকালে মরতে হয়েছিল। তাই এ নিয়ে গবেষণা ও তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা খুবই ঝুকিপূর্ণ কাজ।কারণ এতে ভারতীয় মহানুভবতার যে ইতিহাস দাড় করানো হয়েছে সেটা খর্ব হয় ফলে একটি মহল বিষয়টি ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করেছে ও এখনও করে।
কোথা থেকে শুরু করবো আর কিভাবে শুরু করবো বুজতে পারচ্ছি না তবে চেষ্টা করছি নিম্নে কিছু রেফেরেন্সে (reference) দেবারঃ( কিছু ছবি PDF থেকে দেয়া হয়েছে)
(1) প্রথমেই শুরু করছি ব্যারিস্টার মুইনুল হোসেনের আত্মজীবনী থেকেঃ
মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর পর ইত্তেফাকের নিখোঁজ সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেনকে মিরপুরে বিহারী বসতিতে খুঁজে না পেয়ে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বঙ্গভবনে দেখা করেন ভারপ্রাপ্য রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গে।
বঙ্গভবনে চুরির হিসাবঃ
দেখলাম বঙ্গভবনে কার্পেট , ঝাড়বাতি কিছুই নেই । সম্পূর্ণ খালি করে ভারতীয় সৈন্যরা নিয়ে গেছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে এসব কাজ কী করে শেষ করলো তাই ভাবছিলাম।অন্যান্য জায়গা থেকেও কার্পেট ইত্যাদি যা কিছু মূল্যবান পেয়েছে তাই তারা নিয়ে গেছে। বিডিআর ক্যাম্পে গিয়ে দেখি সেখানে সব ফাঁকা। যুদ্ধ শেষ। অতএব বিজয়ী শক্তি হিসেবে সব তাদের প্রাপ্য।বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সোনার বারসমূহ নেয়া হয়েছে।
পাকিস্তানি সৈন্যরা নয় মাসে আমাদের কাছ থেকে যে সব সম্পদ লুটপাট করে ক্যান্টনমেন্টে রেখেছিল তাও পাকিস্তানিদের ভোগে আসেনি।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কারা বিজয়ী শক্তি? আমাদের জনগণের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী শক্তি তো আমরা। তাহলে মূল্যবান জিনিসপত্র ভারতীয় সৈন্যরা নিল কি করে ?
তথ্যসূত্রঃ
[ বই :- 'আমার জীবন আমাদের স্বাধীনতা'
লেখক:- ব্যারিস্টার মুইনুল হোসেন
প্রকাশক:- বিনিময় প্রিন্টাস লি.
পৃষ্টা:- ১০৭ ]
(বইটি রকয়ারিতে পাওয়া যাচ্ছে না।)
(2) ১৯৭১ যুদ্ধের পরবর্তী সময় খুলনার ডিসি ছিলেন জনাব ড. কামাল সিদ্দীকি(জীবিত) ।
যুদ্ধ শেষ হবার পর নিজের চোখে দেখা ভারতীয় সেনাবাহিনী কিভাবে খুলনা জেলাকে লুট করেছে সেটা তিনি তার বইয়ে(নিম্নে তথ্যসূত্র দেখুন) বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন। তিনি ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষের জন্য ভারতীয় সেনার হরিলুটকে তার গবেষণাপত্রে দায়ী করেন।
তার তথ্য মতেঃ ১.পাট; ২.খাদ্যশস্য; ৩.কারখানার যন্ত্রপাতি; ৪.তুলা ; ৫.গাড়ি; ৬.জাহাজ ; ৭. ইন্ডাস্ট্রিয়াল পেইন্ট নিয়ে গিয়েছিল।
তার মতে এই লুটপাটের পরিমাণ কেবল খুলনা জেলাতেই ছিল ৫০০ মিলিয়ন। সারা দেশে তিনি আনুমানিক ২.২ বিলিয়ন অর্থ লুটের কথা দাবি করেন ভারতীয় সেনা দ্বারা।
তথ্যসূত্রঃ
[ বই:- The political economy of rural poverty in bangladesh (1st edition)
লেখক :- Kamal Siddiqui,National institutions of local government,1982
পৃষ্টা নম্বর :- 427 ]
(3) যুদ্ধ শেষে ৯৩০০০ পাকিস্তানি সেনারা যেসব অর্থ ও সামগ্রী বাংলাদেশীদের কাছে থেকে নিয়েছিল সেই অর্থ ভারতীয় সেনারা তাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে ভারতে নিজ পরিবারের কাছে পাচার করে দেয় যুদ্ধের পর।
পূর্ব পাকিস্থানে অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরির (বর্তমানে বাংলাদেশের সমরাস্ত্র কারখানা) হতে চীন হতে পাকিস্থান আমলে আমদানিকৃত বিভিন্ন অস্ত্র বানানোর উন্নত মেশিন ভারতে স্থানান্তরিত করা হয়।
তথ্যসূত্রঃ
[বই :- 'জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ১৯৭৫ '
লেখক :- অলি আহাদ
প্রকাশনী :- বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লি.
প্রথম প্রকাশ:- ১৯৮২ ইং
পৃষ্টা নম্বর :- ৪৩২ -৪৩৫ ]
(4) বর্ডার বাণিজ্যের নামে ভারতের বস্তপঁচা মালের বাজার। বাংলাদেশের শিল্প কারখানা থেকে যন্ত্রাংশ চুরি করে আগরতলায় পাঁচটি নতুন পাটকল স্থাপন!
তথ্যসূত্রঃ
[বই:- দু:শাসনের ১৩৩৮ রজনী
লেখক:- মুক্তিযোদ্ধা ও মেজর অব: রফিকুল ইসলাম (বীরউত্তম)
পৃ: নম্বরঃ ১১৯-১২৬]
(5) যুদ্ধ শেষে বাংলাদেশ টাকার মান ছিল ভারতের টাকার মানের চেয়ে বেশী। এসময় তখন তাজউদ্দীন আহমেদ ১লা জানুয়ারি ১৯৭২ সালে একটি আদেশ বলে বাংলাদেশের মুদ্রার মান শতকরা ৬৬% কমিয়ে দেন এবং ভারত ও বাংলাদেশের মুদ্রার মান এক হয়ে যায়।
বাংলাদেশে অকারণে ভারতীয় মুদ্রা দুই মাসের জন্য ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হয় এবং সেই টাকা ব্যবহার করে দেশের পাট কলের যন্ত্রাংশ ভারতে পাচার করা হয়।
তথ্যসূত্রঃ
[ বই :- জাতীয় রাজনীতিতে ১৯৪৫ থেকে ১৯৭৫
লেখক:- অলি আহাদ
প্রকাশনী :- বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লি.
প্রথম প্রকাশ:- ১৯৮২ ইং
পৃষ্টা নম্বরঃ ৪৩১-৪৩২ ]
(6) “যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবার পর ভারতীয় সৈন্যরা পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিক সময় অবস্থান করতে থাকায় ভারত সমালোচিত হতে থাকে। অভিযোগ করা হয় যে, ভারতীয় সেনাবাহিনী ট্রাক বহরে করে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও সাজসরঞ্জাম সরিয়ে নিয়ে যায়। ফলে ভারত বাংলাদেশকে আত্মমর্যাদাশালী রাষ্ট্রের পরিবর্তে একটি তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় এমন একটি আশঙ্কা থেকে বাংলাদেশের প্রতি ভারতীয় নীতির বিরুদ্ধে উত্তেজনা ও সংশয় সৃষ্টি হয়।”
তথ্যসূত্রঃ
[ বই :- Bangladesh past and present
লেখক :- সালাহউদ্দিন আহমেদ ]
আর কত দিব? সর্বশেষ একটি পত্রিকার থেকে দাড় করানো হিসাবঃ
<১> ধান-চাল-গম (৭০-৮০ লাখ টন, গড়ে ১০০ টাকা ধরে): ২১৬০ কোটি টাকা।
<২> পাট (৫০ লাখ বেলের উপরে): ৪০০ কোটি টাকা।
<৩> ত্রাণ-সামগ্রী পাচার: ১৫০০ কোটি টাকা।
<৪> যুদ্ধাস্ত্র, ঔষধ, মাছ, গরু, বনজ সম্পদ: ১০০০ কোটি টাকা।সর্বমোট: ৫০০০ কোটি টাকা (প্রায়)।
তথ্যসূত্র:
[ জনতার মুখপত্র পত্রিকা
খবর প্রকাশের তারিখঃ ১ নভেম্বর ১৯৭৫ ]
ইতিহাস তো ইতিহাসই। ইতিহাসকে বদলানোর যায় না, ধামাচাপা দেওয়া যায় না। নিজের মত করে ইতিহাস লেখার চেষ্টা করলে সেটি একসময় সত্যের কাছে বিতর্কিত হয়।
স্বাধীনতা অর্জনে কেউ কাউকে সাহায্য করে না স্বার্থ ছাড়া। নিজের স্বাধীনতা নিজেকেই আদায় করে নিতে হয়।অথচ প্রতিদানের নামে দিতে হয় চরম সুদ।
এখন এত কিছুর পর কি ভারত বাংলাদেশ হতে চুরি করা সম্পদেী হিসাব দিবে নাকি বাংলাদেশকে খুঁটা দিবে? কে বুঝাবে সেই ভারতীয় বর্বর জাতিকে?
Please share more
উত্তরমুছুন