expr:class='"loading" + data:blog.mobileClass'>

Wikipedia

সার্চ ফলাফল

মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪

অত্যাচারিকে কোন ভাবেই সহায়তা জায়েজ নাই, এটা সম্পূর্ণ নিষেধ

 " অত্যাচারিকে কোন ভাবেই সহায়তা জায়েজ নাই, এটা সম্পূর্ণ নিষেধ"

অত্যাচারী

ইসলামের একটি গুরুত্ব পূর্ন নীতি হলো কোন অন্যায় দেখলে সরাসরি প্রতিবাদ করা, না পারলে মৌখিক প্রতিবাদ করা আর এটা সম্ভব না হলেও অন্তত মন হতে হলেও অন্যায়কে ঘৃনা করা।  আর এটা না করতে পারলে আপনাকে বুঝতে হবে আপনার ইমানে ঝামেলা আছে।
ঈমানে ঝামেলা থাক আর নাই থাক, কিন্তু কোন অন্যায়কে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহযোগীতার ইসলামে কোন স্থান নাই। 

আসুন অন্যায়ের সহযোগী হলে ইসলামের বিধান কি জেনে নেই। হাদীসে বর্নিত হয়েছে:

(١٢٦) وَعَنْ أَوْسِ بْنِ شُرَحْبِيلَ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ يَقُولُ مَنْ مَشَى مَعَ ظَالِمِ لِيُقَوِيَّهُ وَهُوَ يَعْلَمُ إِنَّهُ ظَالِمٌ فَقَدْ خَرَجَ مِنَ الْإِسْلَامِ - (بيهقى)

"হযরত আওস ইবনে সুরাহবীল (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি নবী করীম (সা:)-কে বলতে শুনেছেন, "যে ব্যক্তি যালিমকে যালিম বলে জানা সত্ত্বেও তাকে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে অগ্রসর হবে, সে ইসলাম হতে বের হয়ে যাবে।" (বায়হাকী-১২৬)

অর্থাদ যালিমকে বাধা দান এবং মজলুমকে সাহায্য করা হলো মুসলমানদের পবিত্র দায়িত্ব। উক্ত দায়িত্ব পালন না করে বরং যে এর বিপরীত করে, অর্থাৎ মযলুমের কোন সাহায্য না করে যালেমেরই সাহায্য করে, সে ইসলামের নিয়ামত হতে বঞ্চিত হবে।

জালিমকে এ সহযোগীতা হতে পারে সরাসরি, তার পক্ষে যুদ্ধ করে, জালিমের সহায়ক হয়ে, টাকার লোভে জালিমের পক্ষাবলম্বন করে, তার পক্ষে কথা বলে, তাগুতের পক্ষে কলম ধরে, তাগুতী শক্তিকে ভোট দানের মাধ্যমে ক্ষতায় আরোহনের সহায়ক হিসাবে। যে ভাবেই হোক বাতিলের পক্ষ নেওয়া এমন কি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাতিলের সহায়তা করা। সব ভাবেই বতিলের সহযোগি হওয়া জারাম।


এবার দেখা যাক এ বিষয়ে আল্লাহ কি বলেন:

اَلَّذِیْنَ اٰمَنُوْا یُقَاتِلُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ١ۚ وَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا یُقَاتِلُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ الطَّاغُوْتِ فَقَاتِلُوْۤا اَوْلِیَآءَ الشَّیْطٰنِ١ۚ اِنَّ كَیْدَ الشَّیْطٰنِ كَانَ ضَعِیْفًا۠

যারা ঈমানের পথ অবলম্বন করেছে তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে। আর যারা কুফরীর পথ অবলম্বন করেছে তারা লড়াই করে তাগুতের পথে। কাজেই শয়তানের সহযোগীদের সাথে লড়ো এবং নিশ্চিত জেনে রাখো, শয়তানের কৌশল আসলে নিতান্তই দুর্বল।(সূরা নিসা,আয়াত-৭৬)

এই আয়াতের প্রথম অংশে বুঝানু হয়েছে যে এটি আল্লাহর একটি দ্ব্যর্থহীন ফায়সালা। আল্লাহর পৃথিবীতে একমাত্র আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে লড়াই করা হচ্ছে ঈমানদারদের কাজ। যথার্থ ও সত্যিকার মু’মিন এই কাজ থেকে কখনো বিরত থাকবে না। আর আল্লাহর পৃথিবীতে আল্লাহ বিরোধী ও আল্লাহদ্রোহীদের রাজত্ব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য তাগুতের পথে লড়াই করা হচ্ছে কাফেরদের কাজ। কোন ঈমানদার ব্যক্তি এ কাজ করতে পারে না।


দ্বিতীয় অর্ধে বুঝনো হয়েছে অর্থাৎ আপাত দৃষ্টিতে শয়তান ও তার সাথীরা বিরাট প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে আসে এবং জবরদস্ত কৌশল অবলম্বন করে কিন্তু তাদের প্রস্তুতি ও কৌশল দেখে ঈমানদারদের ভীত হওয়া উচিত নয়, অবশ্যি তাদের সকল প্রস্তুতি ও কৌশল ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।


বিশদ ভাবে বলতে গেলে সব মোমেনরা আল্লাহর পথে আর কাফেররা তাগুতের পথে পরস্পর পরস্পরের সহযোগী হয়। এরপর উৎসাহ উদ্দীপনা বৃদ্ধি, চলার পথ আলোকিত করা ও প্রত্যেক পক্ষের অনুসৃত মূল্যবোধ ও উদ্দেশ্য লক্ষ্য চিহ্নিত করার জন্যে আরেকটি মনস্তাত্ত্বিক পরশ বুলানো হয়েছে পরবর্তী ৭৬ নং আয়াতে । 'যারা মোমেন, তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে। আর কাফেররা তাগুতের পথে যুদ্ধ ও কৌশল করে। অতএব তোমরা শয়তানের বন্ধুদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাও । নিশ্চয় শয়তানের চক্রান্ত দুর্বল ।' এখানে দুটো দল, দুটো পথ, দুটো উদ্দেশ্য ও দুটো পতাকা আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হছে, “যারা মোমেন তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে ।” যারা কাফের তারা তাগুতের পথে লড়াই করে ।' যারা মোমেন তারা আল্লাহর পথে লড়াই  ও সহযোগীতা করে। তারা আল্লাহর বিধান ও তার আইনকে বাস্তবায়িত করার জন্যে এবং মানব জাতির মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্যে লড়াই করে, আর এটা শুধু আল্লাহর নামেই হতে হবে, অন্য কোনো নামে নয়। এ দ্বারা স্বীকৃতি দেয়া হবে যে, আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র ইলাহ এবং সার্বভৌম শাসক। আর যারা কাফের তারা তাগুতের পথে লড়াই করে। অর্থাৎ আল্লাহর বিধান ছাড়া অনান্য বিধান বাস্তবায়নের জন্যে লড়াই করে, যে সব বিধান আল্লাহ কখনো অনুমোদন করেননি । মোমেনরা আল্লাহর তদারকী, তত্ত্বাবধান ও অভিভাবকত্বের ওপর নির্ভর করে । আর কাফেররা শয়তানের অভিভাবকত্বের ওপর নির্ভর করে তাদের রকমারি জীবন ব্যবস্থা, আইন বিধান ও নিয়মরীতির মাধ্যমে । তারা সবাই শয়তানের বন্ধু ও মিত্র। আর আল্লাহ তায়ালা মোমেনদেরকে নির্দেশ দেন যেন শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং শয়তানের চক্রান্তের যেন ভয় না করে; এরশাদ হচ্ছে, 'সুতরাং শয়তানের চেলাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো। জেনে রেখো শয়তানের চক্রান্ত দুর্বল ।' এভাবে মুসলমানরা এক দৃঢ় ভিত্তির ওপর অবস্থান করে। তাদের বিবেক এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকে যে, তারা আল্লাহর পথেই লড়াই করছে। এ লড়াইতে তাদের নিজেদের বা তাদের জাতির বা তাদের আত্মীয়-স্বজনের কোনো স্বার্থ নেই। এ লড়াই শুধু আল্লাহর জন্যে এবং আল্লাহর আইন ও বিধানের জন্যে । 

এ লড়াইতে তারা একটা বাতিলপন্থী মানব গোষ্ঠীর মোকাবেলা করছে, যারা সত্যের ওপর বাতিলকে বিজয়ী করতে চায়, যারা মানব রচিত জাহেলী মতবাদ ও মতাদর্শকে আল্লাহর মত ও মতাদর্শের ওপর বিজয়ী করতে চায়, মানব রচিত আইনকে আল্লাহর আইনের ওপর বিজয়ী কর্তৃত্বশীল করতে চায়। মানুষের যুলুম ও অবিচারকে আল্লাহর ন্যায় বিচারের ওপর বিজয়ী করতে চায় অথচ মুসলমানদেরকে মানুষের মধ্যে আল্লাহর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 

যেহেতু মানবরচিত সকল জীবন ব্যবস্থা ও সকল আইন বিধান সম্পূর্ণ জাহেলিয়াত, তাই এ জাহেলিয়াতকে পরাজিত ও উৎখাত করার জন্যে মুসলমানদেরকে লড়াই করতে বলা হয়েছে। তাই জাহেলিয়াতের বিরুদ্ধে এ লড়াই পরিচালনায় তারা তাদের বিবেকের কাছে পরিষ্কার ৷ মুসলমানরা এ ব্যাপারেও নিশ্চিত হয়ে লড়াই করে যে, এ লড়াইতে তাদের পৃষ্ঠপোষক ও অভিভাবক আল্লাহ তায়ালা । আর তারা যে জাতির বিরুদ্ধে লড়বে, তাদের অভিভাবক শয়তান, তাই তারা দুর্বল । কেননা শয়তানের চক্রান্ত দুর্বল । এখান থেকেই মোমেনের চেতনায় লড়াইয়ের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়ে যায়। লড়াই শুরু করার আগেই লড়াইয়ের শেষ কোথায়, তা তাদের জানা হয়ে যায়। এরপর সে লড়াইতে শহীদ হোক বা বেঁচে থাক, তাতে কিছু এসে যায় না। শহীদ হলে তো ফলাফল সম্পর্কে সে নিশ্চিতই হয়ে গেলো। আর যদি বেঁচে থাকে এবং স্বচক্ষে বিজয় দেখতে পায়, তা হলেও সে মহান পুরস্কার সম্পর্কে নিশ্চিত থাকে । আল্লাহ্‌র পথে জেহাদের এই উভয় দিক সম্পর্কে এই নির্ভুল ধারণা লাভের কারণেই সেই সব অলৌকিক ঘটনার সৃষ্টি হয়েছিলো, যা প্রথম মুসলিম সংগঠনের জেহাদের ইতিহাসে সংরক্ষিত রয়েছে। সে সব ঘটনা সমগ্র ইতিহাসের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে রয়েছে। এখানে সেগুলোর উদাহরণ দেয়া সম্ভব নয়। সে সব ঘটনা সংখ্যায় প্রচুর । উল্লেখিত নির্ভুল ধারণার কারণেই অতো অল্প সময়ের মধ্যে ইসলামের এমন বিপুল জোয়ার সৃষ্টি হতে পেরেছিলো ৷ আল্লাহর বিধান মুসলিম জাতির জীবনে কি অকল্পনীয় উন্নতি এনে দিয়েছিলো: এবং ইসলাম বিরোধী শিবিরগুলোর ওপর তাকে কতো শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলো, সে কথা আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি। কোরআন মোমেনদের সত্ত্বার অভ্যন্তরে যে সর্বাত্মক লড়াই পরিচালনা করেছিলো এবং তাদেরকে সাথে নিয়ে ধনে জনে ও সাজ সরঞ্জামে অধিকতর শক্তিধর তাদের দুশমনদের সাথে যে লড়াই চালিয়েছিলো, উল্লেখিত ধারণাটা সৃষ্টি করাও ছিলো সেই লড়াইয়ের একটা অংশ ৷ কিন্তু এ ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে থাকে, তাই শেষ পর্যন্ত তারা পরাজিত হয়। আল্লাহর বিধান উক্ত ধারণাকে গড়ে তোলার ও বদ্ধমূল করার ব্যাপারে কিরূপ চেষ্টা-সাধনা করেছে, সেটা যখন আমরা দেখি তখন মনে হয় যে, কাজটা সহজ ছিলো না এবং শুধু মুখের কথায় তা করা যায়নি । ক্রমাগত চেষ্টা সাধনা দ্বারা প্রবৃত্তির সংকীর্ণতা, যে কোনো মূল্যে তার দীর্ঘ জীবন কামনা এবং লাভ ও ক্ষতি সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণার চিকিৎসার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। বাদবাকী আয়াতগুলোতে এই চিকিৎসা ও এই চেষ্টা সাধনার উল্লেখ রয়েছে।


লেখক:চিকিৎসক, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী। 



মাদখালি সম্প্রদায় নিয়ে একটি দলিল ভিত্তিক আলোচনা

 "মাদখালি সম্প্রদায় নিয়ে একটি দলিল ভিত্তিক আলোচনা"

মাূখসলী রহস্য

আগেই বলে নিচ্ছি আজকের আলোচনার বিষয়টি সম্পূর্ণ দালিলিক, তাই এই লেখাটি আলেম সমাজকে উদ্দেশ্য করেই লেখা। তবে সাধারন পাঠক ভাইদের বোধগম্য করে লেখার যথা সাধ্য চেষ্টা করেছি। না বুঝলে কমেন্টে প্রশ্ন করলে উত্তর পাবেন অথবা নিকটতস্ত আলেমকে আমার লেখা দেখিয়ে বুঝে নিবেন কষ্ট করে।

যেহেতু দলিল ভিত্তিক আলোচনা সেহেতু একটু দীর্ঘ হবে, এর জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

যে সকল মৌলিক পরিভাষা না বুঝার কারনে কথিত আহলে হাদিসের শায়েখরা একই বিষয়ে একেক শায়েখ একই বিষয়ে একেক রকম ফতোয়া দেয় এবং বাংলা শিক্ষিত মুসলমানরা সহজেই এদের ধোঁকায় পড়ে আজ তা নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

১৮৮২ সালে দিল্লির হাইকোর্ট হতে ব্রিটিশ সরকারের দালালির পুরস্কার সরূপ লা-মাঝহাবি, গাইরে মুকাল্লিদ, ওহাবীরা নিজেদের কথিত আহলে হাদিস নাম ধারন করার পর হতেই ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের গুরু ব্রিটিশদের প্রেসক্রিপশন মত ইসলামের ১৪০০ ধরে চলে আসা প্রতিষ্ঠিত কিছু বিষয় নিয়ে খমোখা বিতর্ক সৃষ্টি করে নিজেদের সহীহ আকিদার দাবীদার দাবী করে আসছে এবং দুনিয়ার বাকী সকল মুসলমানদের মুশরিক, বেদা'তি ও ইহুদি বলে নিয়মিত গালি দিয়ে আসছে। এই বিষয় গুলো না জানার কারনে এরা সুকৌশলে বাংলা শিক্ষিত প্র্যাক্টিসিং মুসলমানদের বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে তাদের ইমান নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে নিজেদের দলে ভেড়াচ্ছে এবং মুসলমানদের মধ্যে বিভিন্ন দল-উপদল সৃষ্টি করছে।যেসকল  মৌলিক বিষয় না জানার  কারনে মুসলমানরা এই ব্রিটিশ ফেরকার খপ্পরে সহজেই পড়ছে সেগুলো নিয়ে আজকের দীর্ঘ আলোচনা।

এই মৌলিক বিষয় গুলো না জানার কারণে কথিত আহলে হাদিসের শায়েখরাই একই বিষয়ের উপর  নিজেদের মাঝে পরস্পরের বিপরীতে ফতোয়া দিয়ে বসে। উদাহরন সরূপ বলা যায় বর্তমানে আহলে হাদিসের আলোচিত বক্তা শায়েখ আ:রাজ্জাক বিন ইউসুফ ও তাঁর ছেলের ফতোয়া সর্বদাই পরস্পর পরস্পরের বিপরীত। ছেলের ফতোয়ায় বাবা কাফের আবার বাবার ফতোয়ায় ছেলে কাফের হয়ে যায়।

আলোচনা সংক্ষিপ্ত করার উদ্দেশ্যে শুধু মাত্র পুরুষ মহিলার নামাজের বিষয়টিই এখানে বর্ননা করা হলো।

মহিলাদের নামাজ যেভাবে পেলামঃ
উম্মাহর নারীরা আজীবন যেভাবে নামাজ পড়ে এসেছে তা শতভাগ পুরুষের মত নয়।  এভাবেই আবহমানকাল থেকে চলে আসছে।  সেই সাহাবী থেকে তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ী ক্রমধারায় কোটি কোটি মুসলিমাহ, পুণ্যবতী নারী নামাজ পড়ে আসছেন। তারপর?

কয়েক বছর আগে, আনুমানিক ২০/৩০ বছর আগে নতুন গবেষণা বের হলো। যার বক্তব্য হচ্ছে “নারী পুরুষের নামাজের কোন পার্থক্য নেই”! গবেষণার কেন প্রয়োজন হলো? কারণ, নতুন গবেষকরা হাদিসের শুদ্ধতা ও বিশুদ্ধতা যাচাইয়ের উপর নামাজকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেন। তারপর যখন দেখলেন, নারীদের নামাজে যে পার্থক্যগুলো মেনে নামাজ পড়া হয়, সে হাদিসগুলোর সনদ মজবুত নয়। সুতরাং তারা বললেন নামাজে কোন পার্থক্য নেই।

এখানে গোঁড়ায় কিছু প্রশ্ন আসে।  আপনারা যদি ‘তাদবীনে হাদিস’ (হাদিস সংকলনের ইতিহাস) নিয়ে পড়ে থাকেন, এই প্রশ্ন এতক্ষণে আপনার মাথায় চলে আসার কথা। আচ্ছা, হাদিসের প্রচলিত কিতাবগুলো লেখা হলো হিজরী ১৫০-২০০ বছর পর। এই হাদিস গ্রন্থগুলোর ভিত্তি করে নামাজকে পুনর্বিন্যাস যদি করা হয়, তাহলে এই গ্রন্থগুলো লেখার আগের যুগে যে সকল সাহাবী/তাবেয়ী/তাবে তাবেয়ী ছিলেন, তারা কীভাবে নামাজ পড়লেন? তখন তো এই কিতাবগুলো লেখা হয় নি। তাহলে নামাজটা শিখলেন কীভাবে? নিশ্চয় কেতাব পড়ে শিখেন নি? সাহাবীরা শিখেছেন, রাসূল সা. থেকে, তারপর তাবেয়ীরা শিখেছেন সাহাবীদের থেকে। নামাজ তো ইতিমধ্যেই পূর্ণ রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে হাদিসের গ্রন্থগুলো লেখার আগেই। সাহাবা থেকে নিয়ে পরবর্তী ৩ প্রজন্ম নামাজ শিখেছে “তা’আমুল ও তাওয়ারুছ” এর মাধ্যমে।

যদি মনে করা হয়, ইমাম বুখারীর বুখারী লেখার আগে কেও সহীহভাবে নামাজ পড়তে পারেন নি। মনগড়া নামাজ পড়েছেন, সুতরাং বোখারী লেখার পর সে নামাজকে বদলানো জরুরী। তাহলে ৪ মাজহাব ও লা মাজহাব এর সবারই একমত হওয়া উচিত, প্রচলিত হাদিসগ্রন্থগুলোর উপর ভিত্তি করে নামাজকে পুনর্বিন্যাস বা শুদ্ধিকরণ জরুরী।

কিন্তু যদি এর বিপরীত হয়, অর্থাৎ সাহাবারা নামাজ শিখেছেন রাসূল সা. থেকে। তারপর তারা বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছেন। সেখানে তারা নামাজ শিখিয়েছেন। তাদের থেকে তাদের ছাত্ররা.. এভাবে যুগ পরম্পরা। সুতরাং তাদের নামাজ ভুল হয় নি। কারণ তাদের নামাজ ছিল রাসূল সা. এরই নামাজ। উত্তর যদি এটা হয়, তাহলে প্রশ্ন হবে, এই নামাজ তো সাহাবাদের নামাজই ছিল। প্রচলিত কিতাবের আলোকে নামাজকে পুনর্বিন্যাস বা পুনরায় তাহকীক এর কি প্রয়োজন আছে?

প্রসঙ্গত না বললেই নয়, পূর্বসূরিদের বহু কিতাব এমন আছে যে এখনো ছাপার হরফে আসে নাই। অনেক পাণ্ডুলিপি আছে যা উদঘাটন করা সম্ভব হয় নাই। আমি যতদূর জানি, শায়খ আব্দুল মালিক হাফিজাহুল্লাহ ‘তাহকীকু তুরাছ’ বিষয়ে কাজ করছেন। হানাফী মাজহাবের প্রাণকেন্দ্র ছিল বাগদাদ নগরী। সেই বাগদাদ যখন তাতারিদের দ্বারা আক্রান্ত হলো, তখন পুরো নগরীর কিতাবগুলো পানিতে ডুবিয়ে দিল। ঐতিহাসিকদের মতে, কিতাবের পানিতে নদীর পানি স্ফীত হয়ে উঠেছিল। ‘রিসালাতুল মুস্তাতরাফা’ গ্রন্থটির নাম হয়ত অনেক আলেম শুনেছেন। এটি অনেকটা গ্রন্থপরিচিতি বা গ্রন্থসূচী জাতীয় কিতাব। সেখানে এমন হাজারো কিতাবের নাম পাবেন যা আজকের যুগে অনুপস্থিত। ইমাম আবু ইউসুফ রহ. ২০০ খণ্ডের একটি গ্রন্থ লিখেছেন। অথচ সেই গ্রন্থ আজকে নেই। এই কথা বলছি এই কারণে, অনেক আমল যা রাসূল সা. এর যুগ থেকে ক্রমধারায় প্রচলিত। যেমন মাথায় টুপি পরা। কিন্তু প্রচলিত হাদিস গ্রন্থে সহীহ সূত্রে তা বর্ণিত নয়। তাই দেখা যায়, হাল আমলের প্রচলিত কিতাবসর্বস্ব কিছু গবেষক টুপি পরার সুন্নাহ হওয়াকে অস্বীকার করেছেন। অবশ্য পরবর্তীতে শায়খ আব্দুল মালেক হাফিজাহুল্লাহ একাধিক সহীহ সনদ দিয়ে টুপির সুন্নাহকে প্রমাণ করেছেন। কোন আমল যখন রাসূল সা. এর যুগ থেকে ধারাবাহিক চলে আসে, যেটাকে “আমালে মুতাওয়ারাসাহ বা সুন্নাতে মুতাওয়ারাসাহ” বলা হয়। সেটাকে প্রচলিত কিতাব নির্ভর গবেষণায় উড়িয়ে দেয়ার প্রবণতা অযৌক্তিক বলে মনে হয়।

 

আমলে মুতাওয়াতির/মুতাওয়ারাসাহ কীঃ

ইসলামের ব্যবহারিক অধিকাংশ আমল সরাসরি  রাসূল স. থেকে সাহাবীগণ শিখেছেন। সাহাবীদের থেকে তাবেয়ীগণ, তাবেয়ীদের থেকে তাবে তাবয়ীগণ এবং তাদের থেকে পরবর্তীগণ শিখেছেন।  একে পরিভাষায় আমলে মুতাওয়ারিসা বলে।

খবরে ওয়াহিদ অর্থাৎ কোন হাদিস যদি এমন হয়, যা কেবল একজনের সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।  আর উক্ত সনদের সবাই নির্দিষ্ট মানদণ্ডে উত্তীর্ণ। তাহলে সেটাকে গ্রহণ করা হয়। যদিও বর্ণনাকারী মাত্র একজন। তাহলে হাজার হাজার লোক দ্বারা প্রত্যহ পালিত আমলের ধারা কি একক রাবী বর্ণিত হাদীসের তুলনায় শক্তিশালী নয়? সালাফে সালেহীন থেকে প্রমাণিত, তারা আমলে মুতাওয়ারিসকে খাবরে ওয়াহেদ সূত্রে বর্ণিত হাদীসের উপর প্রাধান্য দিতেন। অনেক ইমাম নিজে সহীহ সনদে হাদীস বর্ণনা করার পরও এর উপর আমল করতেন না। হাদীসটি রাসূল স. থেকে প্রচলিত আমলের বিপরীত হওয়ার কারণে।

ইমাম মালিক রহ. তার মুয়াত্তায় সহীহ সনদে অনেক হাদীস এনেছেন। কিন্তু মদীনাবাসীর আমল বিপরীত হওয়ার কারণে তিনি হাদীসগুলো পরিত্যাগ করে রাসূল স. থেকে প্রচলিত আমলকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এমনকি মালেকী মাজহাবে অন্যতম একটি দলিল হলো আমলে মুতাওয়ারিস বা মদীনাবাসীর আমল।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা হাফিজাহুল্লাহ রচিত “” আসারুল হাদীসিশ্ শরীফ ফী ইখতিলাফি আইম্মাতিল ফুক্বহা”” দেখুন। এছাড়াও আল্লামা হায়দার হাসান খান টুংকী রহ. এর লিখিত অনবদ্য দুটি রেসালাহ, ‘আত তায়ামুল’ ও “উসুলুত তাওয়ারুছ”, শায়খ আব্দুর রশীদ নোমানী রহ. এর কিতাব ‘আল ইমামু ইবনু মাজাহ ও কিতাবুহুস সুনান’ অধ্যয়ন করা যেতে পারে।

বর্তমানে অধিকাংশ অস্থিরতার মূল হল, সালাফের নীতি থেকে সরে যাওয়া। আমলে মুতাওয়ারিসের বিপরীতে খবরে ওয়াহিদকে প্রাধান্য দেয়া। একদিন ড. মানজুরে এলাহী দা.বা. এর সাথে কথা হচ্ছিল। তিনি বললেন, ‘বর্তমান যামানার ইলমী অঙ্গনে সবচেয়ে বড় ফেতনা হচ্ছে সালাফে সালেহীন এর অনুসৃত পথ থেকে সরে গিয়ে নতুন নতুন ব্যাখ্যা হাজির করা।’

জয়ীফ বা দুর্বল হাদিস কি আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়ঃ
আমাদের মধ্যে যারা উলুমুল হাদিস পড়েন নি, কেবল আলেমদের বয়ান বা শায়েখদের লেকচার শুনেছেন তাদের মধ্যে একটা বড় মিসকনসেপশন হচ্ছে, তারা ধারণা করেন হাদিস সহীহ মানে হচ্ছে এটা আমলযোগ্য হওয়া।  আর জয়ীফ মানে হচ্ছে এটা পরিত্যাজ্য হওয়া।

কিন্তু বাস্তবতা তা না। সহীহ /জয়ীফ/ হাসান/ মুরসাল/ মুতাবে/ শাওয়াহেদ ইত্যাদি শাস্ত্রীয় পরিভাষা। কখনো একটা হাদিসের সূত্র শাস্ত্রীয় নীতিমালায় উত্তীর্ণ হলে সে হাদিস (কথা/কাজ/সম্মতির বিবরণ) সনদগত দিকে দিয়ে সহীহ হতে পারে, কিন্তু তার উপর আমল করা যাবে না।  কেন? কারণ হাদিসের বিধান রহিত হয়ে গিয়েছে। এমনিভাবে একটা হাদিস এর সূত্র দুর্বল, কিন্তু সেটার উপর উম্মাহর ধারাবাহিক আমল চলে আসছে সাহাবীদের যুগ থেকেই। সে সূত্র যখন গ্রন্থিত হয়, তখন শাস্ত্রীয়ভাবে দুর্বল হলেও সেটা গ্রহণযোগ্য। এই প্রকারের জয়ীফের ক্ষেত্রে সূত্রগত দুর্বলতা কোন প্রভাব ফেলে না। এইটুকু পড়ে নিশ্চয় আপনাদের অবাক লাগছে। কারণ আপনারা যা ভেবে আসছেন, তার সাথে মিলছে না। তাহলে আসুন হাদিসবেত্তাদের কিছু শাস্ত্রীয় পর্যালোচনা জেনে নেই।

জয়ীফ হাদিস গ্রহণের ক্ষেত্রে শাস্ত্রজ্ঞদের মতামতঃ
বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসগণ জয়ীফকে দুভাগে ভাগ করেছেন।

এক. 
এমন জয়ীফ হাদীস, যার সমর্থনে কোন শরয়ী দলিল নেই, বরং এর বক্তব্য শরীয়তের দৃষ্টিতে আপত্তিজনক। এ ধরণের জয়ীফ হাদীস আমলযোগ্য নয়।বরং এ ধরনের জয়ীফ হাদিস বাতিল।

দুই. 
সনদের বিবেচনায় হাদীসটি জয়ীফ বটে, তবে এর সমর্থনে শরয়ী দলিল প্রমাণ আছে, সাহাবী ও তাবেয়ীগণের যুগ থেকে এ হাদীস অনুসারে আমল চলে আসছে। এমন জয়ীফ হাদীস শুধু আমলযোগ্যই নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রে তা মুতাওয়াতির বা অসংখ্য সূত্রে বর্ণিত হাদীসের মানোত্তীর্ণ। এটাকে বলা হয় ‘জয়ীফ মুতালাক্কা বিল কাবুল’!

১- এ বিষয়ে ইমাম যারকাশী রহঃ তাঁর হাদীস শাস্ত্রের মূলনীতি বিষয়ক গ্রন্থ ‘আননুকাত’ এ বলেছেন,
ﺇﻥ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺍﻟﻀﻌﻴﻒ ﺇﺫﺍ ﺗﻠﻘﺘﻪ ﺍﻷﻣﺔ ﺑﺎﻟﻘﺒﻮﻝ ﻋﻤﻞ ﺑﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﺣﺘﻰ ﻳﻨﺰﻝ ﻣﻨﺰﻟﺔ ﺍﻟﻤﺘﻮﺍﺗﺮ
অর্থ, জয়ীফ হাদীসকে যখন উম্মাহ ব্যাপকভাবে গ্রহণ করে নেয়, তখন সঠিক মতানুসারে সেই হাদীসটি আমলযোগ্য হয়, এমনকি তা মুতাওয়াতির হাদীসের মানে পৌছে যায়।
(আননুকাতঃ ১/৩৯০)

২- একই বিষয়ে হাফেজ শামসুদ্দীন আসসাখাবী রহঃও তাঁর ‘ফাতহুল মুগীছ’ গ্রন্থে লিখেছেন,
ﻭﻛﺬﺍ ﺇﺫﺍ ﺗﻠﻘﺖ ﺍﻷﻣﻪ ﺍﻟﻀﻌﻴﻒ ﺑﺎﻟﻘﺒﻮﻝ ﻳﻌﻤﻞ ﺑﻪ ﻋﻠﻰﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﺣﺘﻰ ﺃﻧﻪ ﻳﻨﺰﻝ ﻣﻨﺰﻟﺔ ﺍﻟﻤﺘﻮﺍﺗﺮ ﻓﻲ ﺃﻧﻪ ﻳﻨﺴﺦﺍﻟﻤﻘﻄﻮﻉ ﺑﻪ ﻭﻟﻬﺬﺍ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻲ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﺣﺪﻳﺚﻻ ﻭﺻﻴﺔ ﻟﻮﺍﺭﺙ ﺇﻧﻪ ﻻ ﻳﺜﺒﺘﻪ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻭﻟﻜﻦ ﺍﻟﻌﺎﻣﺔ ﺗﻠﻘﺘﻪ ﺑﺎﻟﻘﺒﻮﻝ ﻭﻋﻤﻠﻮﺍ ﺑﻪ ﺣﺘﻰ ﺟﻌﻠﻮﻩ ﻧﺎﺳﺨﺎ ﻵﻳﺔ ﺍﻟﻮﺻﻴﺔ
অর্থ, উম্মাহ যখন জয়ীফ হাদীসকে ব্যাপকহারে গ্রহণ করে নেয়, তখন সহীহ মত অনুসারে সেটি আমলযোগ্য হয়, এমনকি তার দ্বারা অকাট্য বিধান রহিত হওয়ার ক্ষেত্রে সেটি মুতাওয়াতির দলীলের মানোত্তীর্ণ হয়। এ কারণেই ইমাম শাফেয়ী র.‘উত্তরাধিকারীর জন্যে কোন ওসিয়ত নেই’ হাদীসটি সম্পর্কে বলেছেন, হাদীস বিশারদগণ এটিকে সহীহ মনে না করলেও ব্যাপকহারে আলেমগণ এটি গ্রহণ করে নিয়েছেন, এ অনুযায়ী আমল করেছেন, এমনকি তারা এটিকে ওসিয়ত সম্পর্কিত আয়াতটির বিধান রহিতকারী আখ্যা দিয়েছেন।
(ফাতহুল মুগীছঃ ১/ ৩৩৩)

৩- হাফেজ ইবনে হাজার রহঃ লিখেন, যে হাদিস অনুযায়ী আমল করা উম্মতের কাছে গৃহীত হয়েছে এবং যে বিষয় অনুযায়ী আমল করার প্রতি উম্মতের ইজমা চলে আসছে,নিঃসন্দেহে তা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক কারণ ও বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হাদিস অপেক্ষাও শক্তিশালী।
(আন-নুকাত আলা কিতাবি ইবনে ছালাহ/আসকালানী ১/৪৯৪)

৪- হাফেজ ইবনু কায়্যিমিল জাওযিয়াহ রহঃ একটি জয়ীফ হাদীস সম্পর্কে বলেছেন,
ﻓﻬﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻭﺇﻥ ﻟﻢ ﻳﺜﺒﺖ ﻓﺎﺗﺼﺎﻝ ﺍﻟﻌﻤﻞ ﺑﻪ ﻓﻲ ﺳﺎﺋﺮﺍﻷﻣﺼﺎﺭ ﻭﺍﻷﻋﺼﺎﺭ ﻣﻦ ﻏﻴﺮ ﺇﻧﻜﺎﺭ ﻛﺎﻑ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﻤﻞ ﺑﻪ
অর্থাৎ এ হাদীসটি প্রমাণিত না হলে ও বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন শহরে কোন রূপ আপত্তি ছাড়া এ অনুযায়ী আমল চালু থাকাই হাদীসটি আমলযোগ্য হওয়ার জন্যে যথেষ্ট।
(আর-রূহ লিল ইবনে কাইযুমঃ ১৬)
(জয়ীফ হাদীস সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন আব্দুল হাই লখনবী রহঃ এর লিখিত কিতাব আল-আমলু বিল হাদীসিস যয়ীফাহ ও শায়েখ সাইদ মামদুহ এর ‘আততারীফু বি আউহামিন’। )

৫- ইমাম মালেক বলেন, ‘কোন হাদিস মদীনাবাসীর নিকট মাশহুর হয়ে গেলে তখন সেটা সনদগত হুকুমের ঊর্ধ্বে চলে যায়।
আল আজভিবাতুল ফাদিলাহ- শায়খ আবু গুদ্দাহর তালীক ২২৭-২৩৮ , আল হাদিসুস সহীহ ওয়া মানহাজুল উলামায়িল মুসলিমিন ফিত তাসহীহ- শায়খ আব্দুল কারীম ইসমাইল সাব্বাহ- ২১৫

৬- খতীবে বাগদাদী রাহ. লিখেন, “যখন উম্মাহ ধারাবাহিকভাবে কোন আমলকে গ্রহণ করে নেয়, তখন সেটার শুদ্ধতার জন্যে সনদ খোজার প্রয়োজন হয় না। অর্থাৎ সনদের মানগত শুদ্ধতার ঊর্ধ্বে চলে যায়।
আল ফাকীহ ওয়াল মুতাফাক্কীহ- ১/১৯০
আল কিফায়াহ- ৫১।

৭- ইমাম আহমদ বিন হামবলকে একটা হাদিস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো “আপনি এই হাদিস গ্রহণ করলেন, অথচ এই হাদিসটিকে আপনি জয়ীফ বলে থাকেন।” ইমাম আহমদ উত্তরে বললেন, “হ্যাঁ! হাদিসটি জয়ীফ। কিন্তু এর উপর আমল করা হয়”!!
(আল উ’দ্দাতু ফি উসুলিল ফিকহ লি আবি ইয়া’লা আল ফাররা ৩/৯৩৮-৯৩৯)

৮- পূর্বসূরিদের কিতাব যাদের মোতালায়ার সুযোগ হয়েছে তারা এই বাক্যগুলোর সাথে পরিচিত হয়ে থাকবেন নিশ্চয়,
تلقّته الأمّة بالقبول/ والعمل عليه عند أهل العلم”
ঘাটতে গিয়ে সালাফি শায়েখ, রাবী আল মাদখালী হাফি. এর একটা রেসালাহ পেয়ে গেলাম। তিনি সেখানে মুতালাক্কা বিল কবুল সম্পর্কে লিখেছেন।
والحديث الضعيف إذا تلقته الأمة بالقبول ينجبر ويجب العمل به؛لأن الأمة لا تجتمع على ضلالة .
مثل يعني الماء الذي تقع فيه النجاسة هل ينجس أو لا ؟ إذا تغير طعمه أو لونه أو ريحه كثيرا كان أو قليلا فهو نجس بإجماع الأمّة.
অর্থাৎ, জয়ীফ হাদিসকে যখন উম্মাহ আমল করে তখন সেটার উপর আমল করা ওয়াজিব হয়ে যায়। ‘কারণ উম্মাহ কোন ভুলের উপর একমত হতে পারে না।’ ( এটি হাদিসের অংশ)

তিনি এর উদাহরণ স্বরূপ আবু উমামার হাদিসটি উল্লেখ করেন, “যখন পানিতে নাপাক পতিত হয় আর পানির স্বাদ, রঙ, ঘ্রাণ বদলে যায়, সে পানি বেশি হোক বা অল্প, উম্মাহর এজমা অনুযায়ী তা নাপাক বলে গণ্য হবে। যদিও হাদিসটি জয়ীফ!

জয়ীফ হাদিস যখন উম্মাহর আলেমদের নিকট সর্বতোভাবে গৃহীত হয়ে যায়, তখন সেটার সনদগত দুর্বলতা বিবেচ্য হয় না। এই বিষয়ে সম্পূর্ণ একটা গ্রন্থ লেখা সম্ভব।  বিস্তারিত দেখুন, আন নুকাত লি ইবনে হাজার- ১/৪৯৪, আত তায়াক্কুবাত আলাল মাউযুয়াত লিস সুয়ুতী ১২; তাদরিবুর রাবী ৬৭, ফাতহুল মুগীছ ১২০-১২১, ফাতহুল কাদীর ৩/১৪৩, আল বুরহান ফি উছূলিল ফিক্বহ,আবুল মা’আলী আল জুয়াইনী ,ফাছলুন ফি তাক্বাসীমুল খাবর ১/৩৭৯; আল বায়েসুল হাসীস ফী ইখতেসারে উলূমুল হাদিস,ইমাম ইবনু কাসীর-সংকলক শায়খ আহমাদ শাকের পৃঃ১২৭-১২৮; তাওজীহুন নাজার ইলা উছূলিল আছার ১/২১৩ ইত্যাদি।

এই আলোচনার করার উদ্দেশ্য হলো, নারীদের নামাজের পার্থক্য সংবলিত কিছু হাদিসকে জয়ীফ বলে উম্মাহর হাজার বৎসর যাবত চলে আসা আমালে মুতাওয়ারাসাহকে অস্বীকার করা হয়েছে।  অথচ এই নামাজের পার্থক্য রাসূল সা. এর যামানা থেকেই ক্রমধারায় চলে আসছে। ১৫০ হিজরীর মধ্যে লেখা অনেক কিতাবে “নারীদের নামাজের পার্থক্য” শিরোনামে হাদিসও বর্ণিত হয়েছে।

উপরের আলোচনায় আশা করি আহলে হাদিসদের একেক শায়খের একই বিষয়ে পরস্পর পরস্পরের বিপরীত ফতোয়া এবং বাংলা শিক্ষিত প্র্যাকটিসিং মুসলিমদের ধোকা খওয়ার কারন সম্পর্কে আপনারা অবগত হয়েছেন। আমার লেখা যদি আপনাদের নিকট ভুল মনে হয় আপনাদের নিকটস্থ হাদিস বিশারদদের নিকট আমার লেখা নিয়ে দেখাবেন, আশা করি আরো বোধগম্য হবে।

লেখক:চিকিৎসক, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী।

দ্বীন প্রচারের নামে ওয়ায়েজিনদের ভিক্ষা বৃত্তির টাকায় ধর্ম ব্যবসা নিকৃষ্ট হারাম

 "দ্বীন প্রচারের নামে ওয়ায়েজিনদের ভিক্ষা বৃত্তির টাকায় ধর্ম ব্যবসা নিকৃষ্ট হারাম"

ওয়াজ ব্যবসা নিকৃষ্টতর হারাম

দ্বীন প্রচা‌রের না‌মে ওয়াজ মাহ‌ফি‌লের আড়া‌লে ধর্ম ব‌্যবসা করা ধর্ম ব‌্যবসায়ী‌দের গা‌য়ে জ্বালা ধরা‌নো কিছু অ‌প্রিয় সত‌্য কথা প্রকাশ করার মাধ‌্যমে দ্বীন বে‌চে দু‌নিয়া হা‌সিল করা ধর্ম ব‌্যবসায়ী‌দের স্বরুপ উ‌ন্মোচন কর‌া দরকার। আবার কেউ কেউ ভাববেন না যে আমি ওয়াজ মাহফিলের বিরোধী । না‌মের বেলায় নবীর ওয়া‌রিশ আর কা‌মের বেলায় যারা ক‌রে ওয়াজের নামে ভিক্ষা বৃত্তির টাকায় ধর্ম ব‌্যবসা করে তা‌দের উ‌দ্দে‌শ্যে বল‌ছি আপনি ও আপনাদের টাকার বিনিময়ে এহেন ওয়াজ মাহ‌ফি‌ল, তাফ‌সিরুল কুরআন মাহ‌ফি‌লকে মানুষ দ্বী‌নের প্রচার নয় বরং ধর্ম ব্যবসা হিসেবেই দেখে থাকি ।

ধর্ম ব্যাবসায়ী‌রা ওয়াজ মাহ‌ফি‌লের না‌মে, তাফ‌সিরুল কুরআন মাহ‌ফি‌লের না‌মে ধান্দার ব্যবসা খুইলা বস‌ছে । নি‌ম্নে ২০,০০০ (বিশ হাজার) টাকা থে‌কে শুরু ক‌রে ৩,০০,০০০ (তিন লক্ষ) টাকা পর্যন্ত তারা এ‌কেকজন বক্তা নি‌য়ে থা‌কে মানুষ‌কে দ্বী‌নের কথা বলার নাম ক‌রে । এটা কি দ্বী‌নের প্রচার না‌কি ধর্ম ব্যবসা ? 

আবার এসকল টাকা আসে অবুঝ শিশুদের রাস্তায় দাড়িয়ে ভিক্ষার মাধ্যমে আর এই টাকায় ওয়ায়েজিনরা করে ফুটানি। একে অন্যকে গালিগালাজ থেকে শুরু করে হেন কোন অশ্রাব্য ভাষা নাই যা বলেন না। 

তা‌দের ম‌তো এইসব তথাকথিত নবীর ওয়ারিশদের একটা ওয়াজ মাহ‌ফিলে একজন বক্তার দ্বীনের কথা বলার রেট যদি এই প‌রিমাণ টাকা হয় তাহলে হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে আমাদের প্রিয় নবী শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রাসূল-পয়গম্বরগণের দ্বীনের কথা বলার রেট ঘন্টা প্রতি কত ছিল ??? ! ! ! 



পবিত্র কুরআনেই আছেঃ

اتَّبِعُوا مَنْ لاَ يَسْأَلُكُمْ أَجْراً وَهُمْ مُهْتَدُونَ

যার উচ্চারনঃ ইত্তাবি‘ঊ মাল্লা-ইয়াস্য়ালুকুম্ আজরঁও অহুম্ মুহ্তাদূন্

যার অর্থঃ অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত

সূরা ইয়াসিন, সূরা নম্বর ৩৬, আয়াত নম্বর ২১, মক্কী সূরা

টাকা দিলে দ্বীনের কথা বলব আর টাকা না দিলে দ্বীনের কথা বলবনা এটা কি নবীওয়ালা ছিফত ??? সকল নবী-রসূলগণ ছিলেন কর্মজীবি । কিন্তু বর্তমানে সেই নবীদের কথিত ওয়ারিশ দাবীদাররা কেন হলেন ধর্মজীবি ?

পবিত্র কুরআনের সূরা আল বাকারার ১৭৪ (একশ চুয়াত্তর) নম্বর আয়াতে আছে

اِنَّ الَّذِیۡنَ یَکۡتُمُوۡنَ مَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ مِنَ الۡکِتٰبِ وَ یَشۡتَرُوۡنَ بِہٖ ثَمَنًا قَلِیۡلًا ۙ اُولٰٓئِکَ مَا یَاۡکُلُوۡنَ فِیۡ بُطُوۡنِہِمۡ اِلَّا النَّارَ وَ لَا یُکَلِّمُہُمُ اللّٰہُ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ وَ لَا یُزَکِّیۡہِمۡ ۚۖ وَ لَہُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ

যার অর্থঃ কিতাব হতে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, যারা এটা গোপন করে এবং এর বিনিময়ে স্বল্প মূল্য গ্রহণ করে, এরা নিজেদের পেটে একমাত্র আগুন ভক্ষণ করে, ওদের সাথে আল্লাহ ক্বিয়ামাতের দিন কথা বলবেন না এবং ওদেরকে পবিত্রও করবেন না; এবং ওদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ।

ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসার আলেম ওলামাদের বয়ান থেকে যা শুনে এসেছি তাতে দেখা যায় নবী রাসূলগন মানুষের ময়দানে যেমন মহান আল্লাহপাকের দ্বীনের দাওয়াতের মেহনত করে মানুষকে আল্লাহর হুকুম আহকামের দিকে ডেকেছেন তেমনি পাশাপাশি ব্যাক্তিগত জীবনে উনারা কোন না কোন হালাল পেশা অবলম্বন করতেন যেমন পশুপালন (মেষ ভেড়া দুম্বা ইত্যাদি), কৃ‌ষিকাজ ইত্যা‌দি যেটা ওলামায়েকেরাম আরও ভাল বলতে পারবেন । এমনকি হযরত ইউসুফ (আঃ) তো আজিজে মিশর হিসেবে মিশরের বাদশার উজিরের দায়িত্বও পালন করেছেন ! এতদসত্তেও কেউ কি এই কথা বলতে পারবে যে মিশরের বাদশার উজিরের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আল্লাহর নবী হিসেবে নবুয়্যতের দায়িত্ব পালনে উনার কোন ধরনের ঘাটতি হয়েছে ? নবী রাসূলগন যদি কর্ম করে জীবন অতিবাহিত করতে পারেন আবার পাশাপা‌শি নবুয়‌তের দা‌য়িত্বও যথাযথভা‌বে পালন কর‌তে পা‌রেন তবে আমাদের বর্তমান যামানার এইসব তথাকথিত নবীর ওয়ারিশগণেরা কেন তা পারবেননা ? নবী-রাসূলগণকি উম্মতের মাঝে দাওয়াত ইলাল্লাহর কাজ করে বিনিময়ে উম্মতের কাছ থেকে পারিশ্রমিক নিতেন ? দ্বীনের মেহনতের মোড়কে বৎসরের পর বৎসর, যুগের পর যুগ ধরে ধর্মব্যাবসায়ীরা ওয়াজ মাহফিল করার নামে কত কোটি কোটি টাকা যে মানুষের পকেট থেকে হাতিয়ে নিছে তার হিসাব এক আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউ জানেনা !


এখন আসেন নবী-রাসূলগণের ওয়ারিশের দাবিদার তথাকথিত এইসব ধর্ম ব্যাবসায়ীদের কর্মকান্ডের বিপরীতে নবী রাসূল ও পয়গম্বরগণ উনাদের জীবিকা নির্বাহে কি পন্থা অবলম্বন করতেন তা দেখে নেইঃ

ইসলাম ধর্মে রাসুল হলেন আল্লাহর প্রেরিত বার্তাবাহী ব্যক্তিত্ব । রাসূল বলতে তাদেরকেই বোঝানো হয় যারা আল্লাহ্‌র কাছ থেকে কিতাব বা পুস্তক প্রাপ্ত হয়েছেন । হাদিসসহ অন্যান্য ইসলামী বইয়ে এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবীর কথা বলা হয়েছে । উনাদের মাঝে সকলে কিতাব প্রাপ্ত হননি । যারা কিতাব প্রাপ্ত হয়েছেন তারাই শুধু রাসূলের খেতাব পেয়েছেন । অর্থাৎ সকল রাসূলই নবী কিন্তু সকল নবী রাসূল নন । কোরআন অনুযায়ী, আল্লাহ্‌ মানবজাতির নিকট বহু নবী রাসুল প্রেরণ করেছেন । আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘প্রতিটি জাতির জন্য পথ-প্রদর্শনকারী রয়েছে।’ (সুরা : আর রাদ, আয়াত : ১৩) অন্যত্র ইরশাদ করেছেন, ‘আমি রাসুল প্রেরণ না করে কাউকে শাস্তি দিই না।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ১৬৫) । সকল নবী-রাসুলের কোনো না কোনো পেশা ছিল, তাঁরা অন্যের ওপর নির্ভরশীল হতেন না । বরং স্বীয় হস্তে অর্জিত জিনিস ভক্ষণ করাকে পছন্দ করতেন । মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)- কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কোন ধরনের উপার্জন উত্তম ও শ্রেষ্ঠ ? তিনি প্রত্যুত্তরে বলেন, ব্যক্তির নিজ হাতে কাজ করা এবং সৎ ব্যবসা। (সুয়ুতি আদদুররুল মানসুর, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ২২০) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হালাল রুজি অর্জন করা ফরজের পর একটি ফরজ ।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম) । হযরত ঈসা (আঃ) এক ব্যক্তিকে অসময়ে ইবাদাতখানায় দেখে প্রশ্ন করলেন, তুমি এখানে বসে ইবাদত করছ, তোমার রিজিকের ব্যবস্থা কে করে? লোকটি বলল, আমার ভাই আমার রিজিকের ব্যবস্থা করে। ঈসা (আঃ) তাকে বলেন, সে তোমার চেয়ে অনেক উত্তম। (হেদায়াতুল মুরশিদিন)। কবির ভাষায়, ‘নবীর শিক্ষা কোরো না ভিক্ষা, মেহনত করো সবে।’ নবী-রাসুলরা হলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব । উনারা স্বহস্তে অর্জিত সম্পদে জীবিকা নির্বাহ করতেন । নিম্নে সংক্ষিপ্ত আকারে এর বিবরণ দেয়া হলোঃ

১) হযরত আদম (আঃ) ছিলেন একজন কৃষক । তিনি চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন । তাঁর ছেলেদের পেশাও ছিল চাষাবাদ। তা ছাড়া তিনি তাঁতের কাজও করতেন। কারো কারো মতে, তাঁর পুত্র হাবিল পশু পালন করতেন। কৃষিকাজের যন্ত্রপাতির নাম আল্লাহ তাআলা তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন । যেমন—আল্লাহর বাণী, ‘আর আল্লাহ আদমকে সব নামের জ্ঞান দান করেছেন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৩১)

২) হযরত শিস (আঃ)ও কৃষক ছিলেন । তাঁর পৌত্র মাহলাইল সর্বপ্রথম গাছ কেটে জ্বালানি কাজে ব্যবহার করেন। তিনি শহর, নগর ও বড় বড় কিল্লা তৈরি করেছেন । তিনি বাবেল শহর প্রতিষ্ঠা করেছেন । (ইবনে কাসির)

৩) হযরত ইদরিস (আঃ)-এর পেশা ছিল কাপড় সেলাই করা। কাপড় সেলাই করে যে অর্থ উপার্জন করতেন, তা দিয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন । ইদরিস শব্দটি দিরাসা শব্দ থেকে নির্গত । তিনি বেশি পরিমাণে সহিফা পাঠ করতেন বলে তাঁকে ইদরিস বলা হয় । পড়াশোনার প্রথা তাঁর সময় থেকে চালু হয় । একদল পণ্ডিত মনে করেন, হিকমত ও জ্যোতির্বিদ্যার জন্ম ইদরিস (আ.)-এর সময়ই হয়েছিল ।

৪) হযরত নুহ (আঃ) ছিলেন কাঠমিস্ত্রি । আল্লাহ তাআলা তাঁকে নৌকা তৈরির কলাকৌশল শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং আল্লাহর নির্দেশে তিনি নৌকা তৈরি করেছিলেন । আল্লাহর বাণী—‘আর তুমি আমার তত্ত্বাবধানে ও আমার ওহি অনুযায়ী নৌকা নির্মাণ করো।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৩৭) তিনি ৩০০ হাত দীর্ঘ, ৫০ হাত প্রস্থ, ৩০ হাত উচ্চতাসম্পন্ন একটি বিশাল নৌকা তৈরি করেন ।

৫) হযরত হুদ (আঃ)-এর জীবনী পাঠান্তে জানা যায় যে তাঁর পেশা ছিল ব্যবসা ও পশু পালন। ব্যবসা ও পশু পালন করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন।

৬) হযরত সালেহ (আঃ)-এর পেশাও ছিল ব্যবসা ও পশু পালন ।

৭) হযরত লুত (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের লোকেরা চাষাবাদের সঙ্গে জড়িত ছিল। এতে প্রতীয়মান হয় যে তিনিও জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করতেন চাষাবাদের মাধ্যমে।

৮) হযরত ইবরাহিম (আঃ)-এর জীবনী পাঠান্তে জানা যায় যে তিনি জীবিকা নির্বাহের জন্য কখনো ব্যবসা, আবার কখনো পশু পালন করতেন ।

৯) হযরত ইসমাইল (আঃ) পশু শিকার করতেন। তিনি ও তাঁর পিতা উভয়ই ছিলেন রাজমিস্ত্রি। পিতা-পুত্র মিলে আল্লাহর ঘর তৈরি করেছিলেন ।

১০) ইয়াকুব (আঃ)-এর পেশা ছিল ব্যবসা, কৃষিকাজ করা ও পশু পালন ।


১১) হযরত ইউসুফ (আঃ) রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেন । তিনি বেতন হিসেবে রাষ্ট্রীয় অর্থ গ্রহণ করতেন । ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার রব! আপনি আমাকে রাষ্ট্রক্ষমতা দান করেছেন।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ১০১)

১২) হযরত শোয়াইব (আঃ)-এর পেশা ছিল পশু পালন ও দুধ বিক্রি । পশু পালন ও দুধ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন । তাঁর কন্যারা চারণভূমিতে পশু চরাতেন ।

১৩) হযরত দাউদ (আঃ) ছিলেন রাজা ও নবী। সহিহ বুখারির ব্যবসা অধ্যায়ে রয়েছে যে দাউদ (আঃ) নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন। তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন, হে আল্লাহ! এমন একটি উপায় আমার জন্য বের করে দিন, যেন আমি নিজ হাতে উপার্জন করতে পারি। অতঃপর তাঁর দোয়া কবুল হয় এবং আল্লাহ তাআলা তাঁকে লোহা দ্বারা বর্ম ও অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করার কৌশল শিক্ষা দেন। শক্ত ও কঠিন লোহা স্পর্শ করলে তা নরম হয়ে যেত। যুদ্ধাস্ত্র, লৌহ বর্ম ও দেহবস্ত্র প্রস্তুত করা ছিল তাঁর পেশা। এগুলো বিক্রি করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন।

১৪) হযরত সোলায়মান (আঃ) ছিলেন সমগ্র পৃথিবীর শাসক ও নবী। তিনি তাঁর পিতা থেকে অঢেল ধন-সম্পদের মালিক হয়েছিলেন। তিনি নিজেও অঢেল সম্পদের মালিক ছিলেন। ভিন্ন পেশা গ্রহণ করার চেয়ে নিজ সম্পদ রক্ষা ও তদারকি করাই ছিল তাঁর প্রদান দায়িত্ব। মানব-দানব, পশু-পাখি, বাতাস ইত্যাদির ওপর তাঁর কর্তৃত্ব ছিল। তাঁর সাথি ঈসা ইবনে বরখিয়া চোখের পলক ফেলার আগে বিলকিসের সিংহাসন সোলায়মান (আ.)-এর সামনে এনে হাজির করেন।

১৫) হযরত মুসা (আঃ) ছিলেন একজন রাখাল। তিনি শ্বশুরালয়ে মাদায়েনে পশু চরাতেন। সিনাই পর্বতের পাদদেশে বিরাট চারণভূমি মাদায়েনের অন্তর্ভুক্ত ছিল । লোকজন সেখানে পশু চরাত। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন মুসা (আঃ)। আট বছর তিনি স্বীয় শ্বশুর শোয়াইব (আঃ)-এর পশু চরিয়েছেন ।

১৬) হযরত হারুন (আঃ)-এর পেশাও ছিল পশু পালন । পশু পালন করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন ।

১৭) হযরত ইলিয়াস (আঃ)-এর পেশাও ছিল ব্যবসা ও পশু পালন ।

১৮) হযরত আইউব (আঃ)-এর পেশা ছিল গবাদি পশু পালন । তাঁর প্রথম পরীক্ষাটি ছিল গবাদি পশুর ওপর । ডাকাতরা তাঁর পশুগুলো লুট করে নিয়ে গিয়েছিল । (আনওয়ারে আম্বিয়া, ই. ফা. বাংলাদেশ)

১৯) হযরত ইউনুস (আঃ)-এর গোত্রের পেশা ছিল চাষাবাদ। সুতরাং কারো কারো মতে, তাঁর পেশাও ছিল চাষাবাদ ।

২০) হযরত জাকারিয়া (আঃ) ছিলেন কাঠমিস্ত্রি । আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে মহানবী হযরত মুহাম্দ (সাঃ) বলেছেন, হযরত জাকারিয়া (আঃ) কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন । তাই তাঁর শত্রুরা তাঁর করাত দিয়েই তাঁকে দ্বিখণ্ডিত করে । (সহিহ বুখারি)

২১) হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে যে তিনি জীবনের একটি সময় জঙ্গলে ও জনহীন স্থানে কাটিয়েছিলেন । আহার হিসেবে তিনি বৃক্ষের লতাপাতা ভক্ষণ করতেন। (আনওয়ারে আম্বিয়া)

২২) হযরত জুলকিফল (আঃ)-এর পেশা ছিল পশু পালন ।

২৩) হযরত ইয়াসা (আঃ)-এর পেশা ছিল ব্যবসা ও পশু পালন ।

২৪) হযরত ঈসা (আঃ) ও মরিয়ম (আঃ)-এর আবাসস্থল প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি তাদের উভয়কে এক উচ্চ ভূমি প্রদান করেছিলাম, যা সুজলা ও বাসযোগ্য ছিল।’ (সুরা : আল মুমিনুন, আয়াত : ৫০) এই উচ্চ ভূমি হলো ফিলিস্তিন । তিনি ফিলিস্তিনে উৎপন্ন ফলমূল খেয়ে বড় হয়েছেন। তিনি ঘুরে ঘুরে অলিতে-গলিতে দ্বিনের দাওয়াতি কাজ করতেন । যেখানে রাত হতো, সেখানে খেয়ে না খেয়ে নিদ্রা যেতেন। তাঁর নির্দিষ্ট কোনো পেশা ছিলনা ।


২৫) মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন একজন সফল ও সৎ ব্যবসায়ী। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ীদের হাশর হবে নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সঙ্গে।’ (আদ্দুররুল মানসুর, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২২০) তিনি গৃহের কাজ নিজ হাতে করতেন। বকরির দুধ দোহন করতেন। নিজের জুতা ও কাপড় সেলাই ও ধোলাই করতেন, গৃহ ঝাড়ু দিতেন। মসজিদে নববী নির্মাণকালে শ্রমিকের মতো কাজ করেছেন। খন্দকের যুদ্ধে মাটি কেটেছেন। বাজার থেকে প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় করতেন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘বর্শার ছায়ার নিচে আমার রিজিক নির্ধারণ করা হয়েছে—তথা গণিমতের মাল হলো আমার রিজিক।’ (কুরতুবি, ১৩তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১২)

নবী-রাসুলদের চিরন্তন বৈশিষ্ট্য এই যে, বৈষয়িক ধন-সম্পদের প্রতি তাঁদের কোনো আকর্ষণ ছিলনা । তাঁরা কখনো ধন-সম্পদ সঞ্চয় করতেন না এবং সঞ্চয় করা পছন্দও করতেননা । তথাপি যেহেতু তাঁরা মানুষ ছিলেন, সেহেতু বৈষয়িক প্রয়োজনে যতটুকু জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রয়োজন, ততটুকু সম্পদ অর্জনে বিভিন্ন পেশা গ্রহণ করেছেন । সদা-সর্বদা নিজেদের কষ্টার্জিত সম্পদ থেকে ভক্ষণ করা পছন্দ করতেন । মানুষদের থেকে কখনো তাঁরা নজর-নেওয়াজ, এমনকি বেতনও গ্রহণ করতেননা । বরং যথাসম্ভব নিজেদের উপার্জন থেকে গরিব ও দুস্থদের সাহায্য করতেন । সব নবী-রাসুল ছাগল চরাতেন । রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘এমন কোনো নবী নেই, যিনি ছাগল চরাননি।’ জনৈক সাহাবি প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহর রাসুল ! আপনিও কি ছাগল চরিয়েছেন ? প্রত্যুত্তরে রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘হ্যাঁ, আমিও মক্কায় অর্থের বিনিময়ে ছাগল চরিয়েছি।’ বলা বাহুল্য যে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাহাবিরা অনেকেই ব্যবসা করতেন । বিশেষ করে মুহাজিররা ছিলেন ব্যবসায়ী আর আনসাররা ছিলেন কৃষক ।

উপরের আলোচনা থেকে পরিশেষে এই কথাই বলবো ধর্ম ব্যাবসায়ী আর নবীর ওয়ারিশ এক জিনিস নয় । তাই দাবি করার সময় যখন নবীর ওয়ারিশ দাবি করা হয় তেমনি জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রেও নবী রাসূল পয়গম্বরগণের পথ অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয় । নইলে কথা আর কাজের মিল রইল কোথায় ?


ডা:বশির আহাম্মদ, লেখক, চিকিৎসক, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী। 


কথিত আহলে হাদিস ও ইহুদিদের অন্তমিল

 "ইহুদি আর কথিত আহলে হাদস একই সুরে কথা বলে, এদেরকে মুসলমান মনে করা বোকামী"




আমি কথিত আহলে হাদিস শব্দটা যতবার বলি বা লিখি মডিফাইড খ্রিস্টান শব্দটা যুক্ত করি কিন্তু কেন এটা করি তা অনেকেই জানেন না।
আসলে আমি এটা বলার কারন এই কথিত আহলে হাদিসরা বৃটিশ গোয়েন্দা হামফেরীর তৈরী এবং তা তৈরী করেছে ই*হু*দি-খ্রিস্টানদের স্বার্থেই।

এই মডিফাইড  খ্রিস্টান আহলে হাদিসের পালক সৌদি প্রিন্স নিজেই স্বীকার করেছে যে পশ্চিমাদের চাপেই প্রতিবছর মডিফাইড খ্রিস্টান আহলে হাদিসের পালনের জন্য কোটি কোটি ডলার খরচ করে।এরা যদি মুসলমানই হয় তাইলে পশ্চিমা ইসলাম বিরোধীরা কেন এদের জন্য টাকা খরচ করবে? একবারও কেউ ভেবে দেখেছেন?

এই আব্দুল ওহাব নযদি নামক সফিয়া নামের এক কমনওয়েলথ গোয়েন্দার সাথে হিল্লা বিয়ের নামে জ্বেনাখোরের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এই কথিত জাল সালাফি ও আহলে হাদিসরা ইংরেজ গোয়েন্দা ড. হামফেরীর মাধ্যমে সৃষ্ট। 

এজন্যই স*ন্ত্রা*সী ইসরায়েল আর কথিত আহলে হাদিস নামক মডিফাইড খ্রিস্টানদের কথার সুর একই হয়।

হামাস যে রকেট ই*সরা*য়েলকে লক্ষ করে মারলো সব রকেট কিন্তু ইসরায়েল এ পড়ে নাই
কিছু কিছু রকেট আমাদের দেশের আহলে হাদিস শায়েখ দের বুকে পড়েছে 
তালে/বান যখন আফগা/নিস্হান কে দখল মুক্ত করলো তখন তারা তালে/বানের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। 

আর এখন যখন হা*মা*স মুসলমানদের প্রানের ক্বেবলা বাইতুল মাকদাস_ফিলিস্তিনকে জালিম ইয়া/হুদিদের হাত থেকে দখলমুক্ত করার জন্য শাহাদাতের তামন্না নিয়ে ময়দানে নেমেছে এখনো তারা তার বিরুদ্ধেই কথা বলছে।
তারা সালাহউদ্দিন আইয়্যুবির আকিদা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে,
অথচ সালাহউদ্দিন আইয়্যুবি কে এটা মুসলমান সকলেরি জানা।
আবার হামাস নাকি ইসরায়েল এর বিরুদ্ধে কেন যুদ্ব করতেছে তা নাকি ইসলামের দৃষ্টিতে ঠিক নয়,হামাসের নাকি আল্লাহ এর কাছে এর জন্য জবাব দিতে হবে যে কথা ই*স*রা*য়ে*লের সেনা প্রধানও বলেছে।

একই কথা
এই তথাকথিত আহলে হাদিস নামক মডিফাইড খ্রিস্টান এর শায়েখ দের কথা। 
তুমি অমুক শায়েখের অনুসারী, বাংলাদেশে বসে ফতোয়া দাও। তুমি তো বুঝো না অবরোধের মধ্যে তারা কত কষ্টে আছে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে প্রতিরোধ করতে হয় কিনা তুমি উপলব্ধি করতে পারো না।

তুমি বলো, ঈমানী শক্তি দিয়ে আকসা জয় করতে হবে, যুদ্ধ করে ন‌য়। তোমার মতো গোল আলুদের  কত ঈমানের জোর দেখা আছে আমাদের।

তাইতো বলি এসকল নামধারী আহলে হাদিস মডিফাইড খ্রিস্টানরা মুসলমান নয়, এদের মুসলমান মনে করা বোকামী ছাড়া আর কিছু না।

লেখক: চিকিৎসক, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী। 



ওহে মুসলমান গন, দয়া করে কথিত আহলে হাদিস নামক মডিফাইড খ্রিস্টান ধর্মের খপ্পর হতে আপনাদের সন্ত্বানদের বাঁচান

 "ওহে মুসলমান গন, দয়া করে কথিত আহলে হাদিস নামক মডিফাইড খ্রিস্টান ধর্মের খপ্পর হতে আপনাদের সন্ত্বানদের বাঁচান"

ওহাবী কথিত আহলে হাদিস হতে সাবধান!


আজকে একজন জানালো বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় মডিফাইড খ্রিস্টান সালাফি ধর্ম ফ্যাসিস্ট আব্দুল্লাহ বিন আবদুর রাজ্জাকের মাাধ্যমে বাললাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বাচ্চাদের জন্য মক্তব খোলার উদ্যোগ নিছে। যদিও এটা ২০১৩ সাল হতেই এসকল নাম ধারী আহলে হাদিসরা শুরু করেছে। 

তা ছড়াও ঘোমটা পড়া আহামাদুল্লাহ সারা দেশে আস সুন্নাহ ফউন্ডেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন মাদরাসা তৈরী করে মুসলমানদের ছোট ছোট বাচ্চাদের ধেঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে সহীহ আকিদার নাম করে কথিত আহলে হাদিসের নাম করে মডিফাইড খ্রিস্টান বানাচ্ছে। গত ২০১৮ সালের পর হতে সালাফি বাটপাররা দশ হাজার মাদরাসা তৈরী করেছে সমস্ত বাংলাদেশে যার মাধ্যমে মুসলমানদের সন্তানদের ছোট বেলা হতেই মাথায় সহীহ আকিদার নাম ঢুকিয়ে মডিফাইড খ্রিস্টান বানাবে।


 এর মানে হলো সুন্নী মুসলমানদের সন্তানদের বাচ্চা বয়স থেকে সালাফী ধর্মে কনভার্ট করা হবে। এই কাজে জামায়াতে সক্রিয় সালাফি ফ্যাসিস্টরা সরাসরি যে জড়িত তা গার্ডিয়ান নূর মোহাম্মদদের স্বীকারোক্তিতে প্রমাণিত। জামায়াতের উচিত তাদের নেতাকর্মী ও দলদাসদের অভ্যন্তরীণ ধর্মান্তর থেকে বিরত থাকা। সুন্নী মুসলমানদের সরলতার সুযোগে তাদেরকে সালাফী হিসাবে ধর্মান্তর করা রাজনৈতিকভাবে অনেক গুরুতর অপরাধ, জামায়াত এ ব্যাপারে সচেতন নাহলে অনেক মূল্য দিতে হবে।


লেখক: চিকিৎসক, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী। 

ইসলামি দৃষ্টিকোণে ফ্রিম্যাসন ও তার অঙ্গ সংগঠনের সদস্য হওয়া জায়েজ নয়

 "ইসলামি দৃষ্টিকোণে ফ্রিম্যাসন ও তার অঙ্গ সংগঠনের সদস্য হওয়া জায়েজ নয়"



আল-মাজমাউল ফিকহিল ইসলামির ফতোয়াঃ
আল-মাজমাউল ফিকহির গবেষকবৃন্দ ফ্রিম্যাসন নিয়ে প্রচুর গবেষণা করেন। এরপর তাদের সম্পর্কিত লেখাজোখা, প্রাপ্ত নতুন-পুরাতন বইপত্র, প্রকাশিত নথিপত্র, ফাঁস হওয়া চিঠিপত্রসমূহ বিস্তর ঘাঁটাঘাঁটি করে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। তাদের সেই দীর্ঘ আলোচনা-পর্যালোচনায় সামগ্রিক যেই চিত্রটি ফুটে উঠেছে, তার সারসংক্ষেপ এমন—

এক.
 ফ্রিম্যাসন হলো আগাগোড়া গুপ্ত একটি গোষ্ঠী। অঞ্চল ও পরিস্থিতিভেদে কখনো তারা নিজেদের সাংগঠনিক পরিচয়কে লুকিয়ে রাখে। কখনো বা প্রকাশ করে; তবে তাদের মৌলিকতা গোপনয়ীতা রক্ষা করেই চলা। এমনকি কখনো খোদ ম্যাসনরাই আপন সংঘের হালহাকিকত সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে।

দুই.
 ম্যাসনদের আত্মপরিচয় হলো, তারা ভ্রাতৃত্ববাদী। ভ্রাতৃত্ববোধ এমন এক চেতনা, যা সমস্ত মত-পন্থা, ধর্ম-বর্ণ, দেশ-অঞ্চলকে ফিকে করে দেয়।

তিন.
 ম্যাসনরা ব্যক্তিগত স্বার্থের লোভ দেখিয়ে জনগণকে লজমুখী করে থাকে। তাদের বলা হয়, যে যেখানেই থাকুক না কেন, এক ম্যাসন আরেক ম্যাসনের পাশে দাঁড়াবে। তার প্রয়োজন উদ্ধার করবে। তার অভিপ্রায় পূরণ করবে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নিরসন, বা যেকোনো সংকট মোকাবিলায় কাঁধে কাঁধ রেখে একে অপরকে সাহায্য করে যাবে। কে জালেম আর কে মাজলুম—এটা দেখা হবে না। মুখ্য ওই সহযোগিতাই ।

চার.
 লজের ছাড়পত্র পেতে একজন সদস্যকে ভুতুরে কায়দায় উদ্ভট সব কৃত্য পালন করে প্রথমে মুরুব্বিদের আস্থা অর্জন করতে হয়। শুরুতে ওসব কাণ্ড-কারখানা করে তাকে সতর্ক করে দেওয়া হয় যে, আইন আমনা করলে তার আর রক্ষা হবে না ।

পাঁচ.
 নিম্ন ডিগ্রির সাধারণ সদস্যদের প্রথমে আপন ধর্মীয় রুসুম-রেওয়াজ পালন করতে সুযোগ দেওয়া হয় ঠিকই; তবে তা হুমকিমুক্ত পরিসরে। পাশাপাশি তখন লজের নানা দিক-নির্দেশনা ও শিক্ষাও চলতে থাকে; তবে উচ্চ ডিগ্রি অর্জনকারীরা খোল্লামখোলা নাস্তিক হয়ে থাকে। এই নাস্তিকতার পর্যায়ে যেতে হয় ধীরে ধীরে, লজের আচার-আচরণ ও মতবাদগুলো আত্মস্থ করার পর। 

ছয়.
 সোজা কথা, ফ্রিম্যাসন হলো একটি রাজনৈতিক সংগঠন। বিশ্ব জুড়ে গঠিত নানা রাজনৈতিক ও সামরিক অভ্যুত্থানে তাদের দৃশ্য ও অদৃশ্য হাত ছিল । 

সাত.
 মৌলিকতা ও গঠনতন্ত্রে ফ্রিম্যাসন হলো ইহুদিবাদী। চিন্তাচেতনায় জায়োনবাদী। বৈশ্বিক অদৃশ্য সুপার গভর্নমেন্টের অংশ মাত্র ফ্রিম্যাসন।

আট.
 ফ্রিম্যাসনের মূলমন্ত্র হলো সকল ধর্মীয় শক্তিকে অপসরাণ করতে হবে। বিশেষভাবে ইসলামি শক্তি । নয়. পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ, ধানাঢ্য শিল্পপতি, জাঁদরেল জ্ঞানীগুণী

নয় 
মানুষ সর্বদাই ম্যাসনদের শিকারের বস্তু। সমাজের মিসকিন শিবিরের দিকে তারা ফিরেও তাকায় না। বহু রাষ্ট্রনায়ক, সরকারি আমলা-মন্ত্রী, রাষ্ট্রযন্ত্রের বিশিষ্টরা ফ্রিম্যাসনের গর্বিত সদস্য ছিল। 

দশ.
 সময়ে সময়ে ছদ্মবেশে তাদের কার্যক্রম চালাতেও দেখা গেছে। লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকতে তারা নানা নামে, নানা পরিচয় ধারণ করে থাকে। ম্যাসনবাদী অঙ্গ সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো রোটারি, লায়ন্স ইত্যাদি নাস্তিক্যবাদী সংগঠন।

এগারো.
 গোষ্ঠীটির সামগ্রিক রূপকে সামনে রেখে আমরা এ সিদ্ধান্ত দিতে পারি যে, বিশ্বব্যাপী জায়োনবাদী আন্দোলনের সঙ্গে ফ্রিম্যাসনের গভীর যোগসাজশ রয়েছে। জায়োনিস্টরা ফিলিস্তিন সংকটে ম্যাসনদের ব্যবহার করেই অধিকাংশ আরব-অনারব রাষ্ট্রে তৎপরতা চালিয়ে থাকে।

জায়োনবাদী চিন্তাচেতনা, ভয়াবহ মতবাদ, প্রতারণামূলক স্বভাব এবং অজানা দূরভিসন্ধির কারণে আল-মাজমাউল ফিকহিল ইসলামি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিচ্ছে যে,

√ক. ফ্রিম্যাসন হলো ইসলাম-বিধ্বংসী ইহুদিবাদী সংগঠন।

√খ. কোনো মুসলিম ফ্রিম্যাসনের বাস্তবতা এবং উদ্দেশ্য জানা সত্ত্বেও সদস্য পদ গ্রহণ করে থাকলে সে কাফের হয়ে যাবে (ফাতাওয়ি ইসলামিয়্যা বিন রাজ, বিন উসাইমিন, আবদুল্লাহ আল-জিবরিন: ১/১৫০-১৫২)

জামিআতুল আজহারের ফতোয়া:
শত্রুরা আজ চারিদিক থেকে বস্তু ও চিন্তাগত—সর্ব প্রকার অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ইসলাম ও মুসলিমদেরকে ঘিরে রেখেছে। তারা আসলে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে চায়; তবে চিন্তার কিছু নেই। আল্লাহ তাআলাই মুসলিমদের প্রকৃত সাহায্যকারী এবং ইজ্জতদাতা। যেমনটা তিনি কুরআনে বলেছেন—

الْأَشْهَادُ إِنَّا لَتَنصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِينَ آمَنُوا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيا ويوم يقوم

নিশ্চয় আমি আমার রাসুলদেরকে ও মুমিনদের সাহায্য করব পার্থিব জীবনে এবং যেদিন সাক্ষীগণ দণ্ডায়মান হবে। (সূরা মুমিন, আয়াতঃ ৫১)।

ইসলামের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ এমন একটি শক্তপোক্ত হাতিয়ার হলো ভ্রাতৃত্ববাদী ও মানবতাবাদী ম্যাসনিক সংগঠনগুলো। এই সমস্ত সংগঠনের রয়েছে গোপন উদ্দেশ্য ও অভিলাষ।


ম্যাসনবাদী বহু অঙ্গ সংগঠন আজ দেশে দেশে খুব তৎপর। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো লায়ন্স ক্লাব, রোটারি ক্লাব ইত্যাদি। গোষ্ঠীগুলোর ওপর পূর্ণ কর্তৃত্ব রয়েছে ইহুদি জায়োনিস্টদের। তাদের উদ্দেশ্য হলো, ধর্মীয় শক্তিকে নির্মূলকরণ, চারিত্রিক পদস্খলন সৃষ্টি এবং মানবতার নামে জনগণকে জোটবদ্ধ গুপ্তচর বানিয়ে বৈশ্বিক ক্ষমতার আসনে অধিশ্বর করে তাদেরকে হওয়া।

মুসলিমরা কখনোই এ গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত মুসলমানের পক্ষে নৈতিকভাবে কারও চাটুকরিতা করা না; বরং এ ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিক- অনুসরণের অধিক প্রাধান্যযোগ্য। 
তিনি বলেন—
ঠিক এ কারণে না। একজন নির্দেশনাই কেউ যেন চাটুকার না হয়, যে বলবে আমরা মানুষের সঙ্গেই আছি। মানুষ ভালো করলে আমরাও ভালো করব। মানুষ মন্দ করলে আমরাও মন্দ করব; বরং তোমরা হও। মানুষ ভালো করলে তো ভালো করবে তবে মন্দ করলে কখনো মন্দ করতে যেয়ো না আবার মুসলমানের ধর্মীয় দায়িত্ব হলো, সজাগ দৃষ্টি রেখে তোমাদের স্বেচ্ছাচারী আছে; তাই একজন ঠিক+জামি তিরমিজি ২০০৭)পথ চলতে থাকা। যেন কোনো ধোঁকাবাজ তাকে ধোঁকায় ফেলতে না পারে। মুসলিম সংগঠনের কি অভাব পড়েছে? আমাদের সংগঠনগুলো যেমন প্রকাশ্য। ওগুলোর উদ্দেশ্যও তেমন স্পষ্ট। কেনই-বা আমাদের লুকোচুরি খেলতে হবে? ইসলামে এমন কিছু নেই, যার ব্যাপারে আমরা ভয় করি এবং তা লুকিয়ে বেড়াই।

শাইখ মুহাম্মাদ রশিদ রেজার ফতোয়াঃ
রাজনৈতিক সংগঠন। ইউরোপের আঞ্চলিক দাবি ও তা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ইউরোপের মাটিতেই ঠিক এই কারণেই তার গোপনীয়তার আশ্রয় নিতে হয়েছে। দেখা গেছে, ম্যাসনবাদী মহানায়কদের সর্বদাই কর্তৃত্ববাদীদের হুমকি-ধমকি শুনতে হতো।

 ম্যাসনরা চাইত—স্বৈরশাসনের মাথা চূর্ণ করে দিয়ে এমন এক গণতান্ত্রিক ফ্রিম্যাসন একটি
অপরাসণের স্বৈরশাসনের যার সৃষ্টি(আল-মাসুনিয়্যা সারাতানুল উমাম ১২৫-১২৬, আল-মাউসুআতুল মুয়াসসারা: ৫১৭-৫১৮)হতে পারে শোভা পায় তো।

শাসন ব্যবস্থা চালু করা, যেখানে যে কেউ চাইলেই শাসককে বিচারের কাঠগোড়ায় দাঁড় করাতে পারবে। ঠিক এ কারণেই ইউরোপে সংঘটিত ফ্রেঞ্চ বিপ্লব, আধুনিকবাদী তুর্কি বিপ্লব, পর্তুগিজ বিপ্লব ——ইত্যাদি রাজনৈতিক বিপ্লবে ফ্রিম্যাসনের গভীর প্রভাব লক্ষ করা গেছে। প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালকবৃন্দ ইহুদি-খ্রিষ্টান মিলিয়েই ফ্রিম্যাসনের আছে; তবে সর্বোচ্চ কর্তৃত্ববাদী হলো ইহুদিরা। ইহুদিরা তো হবেই। কারণ, ইউরোপে খ্রিষ্টানদের চাইতে ইহুদিরাই বেশি জুলুমের শিকার হয়েছিল। এ কারণে ম্যাসনবাদী রাজনৈতিক অভ্যুত্থান থেকে সবচেয়ে বেশি উপকার হয়েছে ওই ইহুদিদেরই। ম্যাসনদের হাতে উসমানি সাম্রাজ্যের অঞ্চলগুলোর কর্তৃত্ব স্থায়ী হতে পারলে এবং সাম্রাজ্যজনিত সংকট আরও ঘনীভূত হতে থাকলে ওই ইহুদিরাই তুর্কি বিপ্লব থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে।

বলশেভিক বিপ্লবে প্রভাব সৃষ্টি করতেও ইহুদিরা কম চেষ্টা করেনি আগে থেকেই ইহুদিদের গ্যারাকলে বন্দি ছিল। তাই সহজেই রাজনৈতিক হুলুস্থুল সৃষ্টি করতে পেরেছে প্রাচ্যের মিসর, সিরিয়া প্রভৃতি দেশগুলোতে ম্যাসনদের নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। কেউ বলেছে, তারা ধর্ম ও রাজনীতির সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নয়। প্রাচ্যে শুধু সামাজিক কর্মকাণ্ড চালায় ম্যাসনরা। কেউ আবার বলেছে,তবে রাশিয়ান যুগ যুগ ধরে ম্যাসনরা।

সরকার সেখানে খুব ম্যাসনদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা প্রমাণিত একটা বিষয়। আমি বলি, এ দুটো মতের মাঝে আসলে কোনো বৈপরিত্ব নেই। ব্যাখ্যাটা বলছি, ধর্মীয় অনুশাসনের মূলোৎপাটন করতেই ফ্রিম্যাসনের সৃষ্টি একথা তো আগেই উল্লেখ করেছি। এতদাঞ্চলে ম্যাসনরা সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না হলে পরোক্ষভাবে নিশ্চিত জড়িত। যেমন: প্রভাবশালীদের ঐক্যবদ্ধকরণ, তাদের সংখ্যা বৃদ্ধিকরণ, তাদেরকে ধীরে ধীরে অধার্মিক বানিয়ে তোলার ফন্দি-ফিকির ইত্যাদি কাজগুলো ম্যাসনরা ঠিকই করে থাকে। ঠিক এ পথ ধরেই ম্যাসনরা প্রাচ্য দেশের নেতৃত্বের অবকাঠামো একদম বদল দিতে চায়। মোটকথা তাদের পরোক্ষ মনোভাব হলো, ধর্মীয় অনুশাসনের গোড়া কেটে ফেলা। যদিও তা যুদ্ধবিগ্রহ অথবা বিপ্লব সৃষ্টির মাধ্যম হোক না কেন।

তাহলে বলা যাচ্ছে, ফ্রিম্যাসন মৌলিকভাবে একটি রাজনৈতিক সংগঠন। প্রাচ্যে আজ রাজতন্ত্র বা ধর্মীয় সেসব শাসনযন্ত্র প্রতিষ্ঠিত আছে, সেগুলোকে ধর্মের রং থেকে মুক্ত করাই হলো ম্যাসনদের রাজনৈতিক এজেন্ডা।


লেখক: চিকিৎক,জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী। 

মুসলমানদের পরাজয়ের কারণ ও প্রতিকার

 "মুসলমানদের পরাজয়ের কারণ ও প্রতিকার"




প্রথমে কারণ সমূহ বলছিঃ
★ মুসলমানরা ধার্মিক হলেও জীবনে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে ইনসাফ না থাকা।

★ মুসলমানদের মধ্য ধর্মীয় অনুভুতি না থাকা বা  কমে যাওয়া।

★ ধর্মীয় নেতাদের মনের সংকীর্নতা ও স্বার্থপরতা।

★ আলেমদের মাঝে অহংকার ও অতিরিক্ত গোঁরামী।

★মুসলমানদের মাঝে সততার অভাব।

★মাযহাব-তরীকার ভিন্নতাকে প্রাধান্য দিয়ে মুসলিম উম্মাহর মধ্যকার অনৈক্য সৃষ্টি। 

★একজন নির্দিষ্ট ইসলামী নেতা কে,শায়েখকে বা নিজের পীরকে সঠিক মনে করে বাকীদের বাতিল মনে করা।

★ জায়োনিষ্টদের পাল্লায় পড়ে পশ্চিমা নগ্ন সাংস্কৃতির লোভে পরাশক্তির দালালী করা।

★আরবের ধনী দেশগুলোর বিলাসবহুল জীবন যাপন ও অনর্থক অপচয়।

★জ্ঞান-বিজ্ঞানে পিছিয়ে থাকা, মাদরসা গুলোকে বিজ্ঞান শিক্ষা থেকে দূরে রাখা।

★প্রযুক্তিকে অধিক গুরুত্ব না দেওয়া, শক্তিশালী প্রচার মাধ্যম না থাকা এবং মুসলমানরা মিডিয়া জগত থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখা।

★নারীর প্রতি চরম আসক্তি ও নারীদের প্রতি যে ইসলাম অধিকার দিয়েছে তা থেকে ময়ের জাতিকে বঞ্চিত  করা।

★জঙ্গিদের তান্ডব বুঝতে না পারা এবং ক্ষমতার লোভে মুসলিমদের সামরিক ও অর্থনৈতিক দিকে পিছিয়ে পড়া। 

★ই*হু*দি*বাদের চক্রান্ত বুঝতে না পারা।

★ ক্ষমতা ও অর্থের লোভে সর্বোপরি অনৈক্য।

★ইসলামী চিন্তাবিদদের পরস্পরের হিংসা ও প্রকাশ্য হানাহানি।

★ শিয়া, বেরলভি'র, ব্রিটিশদের দালাল আহলে হাদিস,আহলে কোরআন,ঈসায়ী জামায়াত ও কাদিয়ানীদের বর্নচোরা ফেতনা ও ষড়যন্ত্র বুঝতে ও মোকাবেলা করতে সম্পূর্ন ব্যর্থ হওয়া।

★ সর্বোপরি মানব সৃষ্টির লক্ষ ও উদ্দেশ্য অনুধাবন করতে ব্যর্থ হওয়া।

এই দূরাবস্থার প্রতিকার হতে পারে-

১। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সৎ থাকা।

২।প্রতিটি ক্ষেত্রে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা।

৩। সঠিক ইসলামী জ্ঞানার্জন ও সততাকে আঁকড়ে ধরা।

৪। জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে ও প্রতিটি স্তরে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা।

৫। মাযহাব-তরীকার ভিন্নতাজনিত কারণে বিরাজমান অনৈক্যের মাত্রা কমিয়ে আনা।

৬।'মুসলিম/ ইসলামী জাতিসংঘ' নামে মুসলিম উম্মাহর সার্বিক কল্যাণের জন্য ওআইসির চেয়ে অধিক শক্তিশালী ও কার্যকরী আন্তর্জাতিক সংগঠন গড়ে তোলা।

৭। ৫৬-৫৮ টা মুসলিম দেশ থেকে বেছে বেছে সামরিক বাহিনীর সদস্য নিয়ে ন্যাটোর মতো একটা মুসলিম সামরিক জোট গঠন করা। 

৮।মুসলিম দেশগুলোতে সামাজিক পর্যায়ে যাকাতের প্রচলন এবং  পরিমাণ বৃদ্ধি করা।

৯। আরব ধনী দেশগুলো কর্তৃক দরিদ্র মুসলিম দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা অধিক হারে প্রদান করা।

১০। নিজ দেশে জ্ঞান-বিজ্ঞান,প্রযুক্তি এবং মানব-সম্পদ উন্নয়ন এই বিষয়গুলোতে মুসলিম দেশগুলোর সরকারকে অধিক গুরুত্ব দেয়া।

১১। পরাশক্তির প্রতি নির্ভরতা ও দাসত্বের মনোভাব কমিয়ে আনা।

১২। সামরিক উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রগুলো কর্তৃক যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া।

১৩। মুসলিম দেশগুলোতে সুদমুক্ত ব্যবসা ও লেনদেন চালুকরা। 

১৪। বিশ্ব ব্যাংক এবং ডব্লিউটিও এর মতো শক্তিশালী বিশ্ব ইসলামী ব্যাংক ও মুসলিম ট্রেড অর্গানাইজেশন তৈরি করা। 

১৫। জঙ্গিবাদ কে কঠোর হস্তে দমন করা। 

১৬। প্রতিবছর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মুসলিম দেশগুলো কর্তৃক বিজ্ঞান-প্রযুক্তি মেলার আয়োজন করতে হবে।

১৭। নিজস্ব শক্তিশালী প্রচার মিডিয়া করতে
 হবে।

১৮। মোসাদের মত শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা থাকতে হবে।

১৯।।সবাই মিলে একজন নেতা নির্বাচিত করতে হবে যাকে সর্বোচ্চ পরামর্শদাতা ও সমন্বয়ক মনে করা হবে।

২০। সর্বোপরি বিশ্ব মুসলিম ভাতৃত্ব বৃদ্ধি করা।

সারা পৃথিবীতে ভুখন্ড বা সীমান্ত বিহীন মুসলমানদের একটি রাষ্ট্র কায়েম করতে হবে।

লেখক: চিকিৎসক,চিকিৎসক, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী। 

বাংলাদেশের হিন্দুরা জন্ম ভুমি ছেড়ে ভারতে যাওয়া কোন সমাধান নয়, বুদ্ধি হীনতার পরিচয়" ভারতে গমন

 "বাংলাদেশের হিন্দুরা  জন্ম ভুমি ছেড়ে ভারতে যাওয়া কোন সমাধান নয়, বুদ্ধি হীনতার পরিচয়"

ভারতে গমন

আমি বলি বাংলাদেশের হিন্দুরা ভারতে পালানো নয়, বরং প্রতিরোধ করতে শিখুন, সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলমান ন্যায় ও ইনসাফের সাথে আছে। ভারত গেলেই ভাল থাকবেন তার কোন নিশ্চয়তা কেউ দেয় নি,বরং এনআরসির মারপ্যাঁচে পড়ে লেজে গোবরে হয়ে যাবেন। মাতৃ ভুমিতে থেকে নিজের অধিকারটা আদায় করুন। করতে শিখুন।

আমি আরো কিছু কথা বলছি, একটু ভেবে দেখুন,
★এদেশে বসত করা হিন্দুদের চৌদ্দ পুরুষের ভিটা মাটি বাংলাদেশ, ওদের আলাদা কোন মাতৃ ভুমি নাই।

★এ দেশের হিন্দুরা এদেশেই জন্ম, আর এ দেশের মাটি ও জলে বেড়ে উঠেছে, ওরা অন্য দেশে যাবে কেনো?

★এদেশের গুটি কয়েক সুবিধাবাদী মুসলমান হিন্দুূের জমি দখল, বাড়ি দখল করে, এ লোক গুলো সুযোগ পেলে নিজের বাপের বাড়িও দখল করে, এরা হিন্দু-মুসলিম ইস্যু নয়।

★এদেশের কত জন কিংবা কত পারসেন্ট  মুসলমান আপনাদের সাথে ধর্মীয় ঝামেলা করে, একজনও দেখাতে পারবেন না, আগেই বলছি যে কয়েকজন করে এটা তাদের স্বভাব, ওরা সুযোগ পেলে নিজের আপন জনের সাথেও করে।

★আরেকটা কথা মনে রাখবেন, হিন্দু বাড়ির হাড়ির খবরটা কোন মুসলমান লোক দূর হতে জানতে পারে না যদি না ঐ হিন্দুর হাড়িতে ভাত খাওয়া লোক কোন মুসলমানকে খবরটা না দেয়।

★ এদেশের প্রায় সকল মুসলমানই হিন্দুদের সাথে মিলে মিশে চলে, এরা কখনোই আপনাদের ভারত যেতে বলে না। তাইলে ভাইয়ে ভাইয়ে মনোমালিন্য হলে দেশ ছেড়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হয় কেমনে? সংখ্যায় কম হলে একটু-আধটু সমস্যা হতেই পারে।


বাংলাদেশ সরকারের যে পরিসংখ্যান (বিবিএস) তাতেও হিন্দুদের দেশ ত্যাগের প্রমাণ রয়েছে৷ ২০০১ সালের ও ২০১১ সালের শুমারির ১৫টি জেলার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছিল, ১০ বছরে প্রায় ৯ লাখ হিন্দু কমে গেছে৷  জেলাগুলো ছিল বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, পাবনা৷ এসব জেলা থেকে হিন্দু জনসংখ্যা কমে যাওয়ার নানাবিধ ব্যাখ্যা অনেকে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন৷ কেউ বলেছেন হিন্দুদের মৃত্যুহারের চেয়ে জন্মহার কম৷ কেউ বলেছেন এক জেলা থেকে হয়ত অন্য জেলায় চলে গেছেন৷ এসব কোনো বক্তব্যের পক্ষে গ্রহণযোগ্য বা বিশ্বাসযোগ্য তথ্য নেই৷ কমে যাওয়ার গ্রহণযোগ্য তথ্য আছে৷ বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলায় ১০ বছরে হিন্দু জনসংখ্যা কমেছে ৫৩ হাজার ৫৭২ জন৷ অনুসন্ধানে জানা যায়, এই সংখ্যার অধিকাংশই চলে গেছে ভারতে৷ 

বাংলাদেশ থেকে যে হিন্দুরা ভারতে চলে যায়, তা দৃশ্যমান বাস্তবতা৷ তবে সেই সংখ্যা কোনো অর্থেই ৩ কোটি ৭০ লাখ নয়৷ প্রিয়া সাহার এই তথ্য অসত্য এবং উদ্ভট৷ হিন্দুদের দেশত্যাগের কারণ বহুবিধ৷ প্রিয়া সাহার নালিশের মত সরল নয়৷ যে সব কারণে হিন্দুরা দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান, মোটাদাগে তার কয়েকটি কারণ:

১.

বাংলাদেশের পাশে ভারতের মত একটি হিন্দু প্রধান বিশাল দেশ আছে৷১৯৪৭ সালে সীমান্ত নির্ধারিত হলেও, সব হিন্দু তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে ভারতে চলে যাননি৷কোনো পরিবারের হয়ত এক ভাই গেছেন, দুই ভাই রয়ে গেছেন৷ অর্থাৎ ভারতে তাদের আত্মীয় পরিজন আছেন৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ভারত থেকে ফিরে আসা হিন্দুদের অনেকে বাড়ি-জায়গার দখল হারিয়েছেন৷ বাধ্য হয়ে তাদের একটি অংশ আবার ভারতে চলে গেছেন৷

২.

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের হিন্দুদের বাড়ি-জমি দখল করে নেওয়ার একটি প্রবণতা দেখা দেয়৷ সেই সময় হিন্দুরা বিশেষ করে যাদের জায়গা-জমি বেশি ছিল, তারা কম মূল্যে হলেও বিক্রি করে দিয়ে চলে যান৷

৩.

রাজনৈতিক পরিস্থিতি কখনো হিন্দুদের সুরক্ষা দেয়নি৷ হিন্দুরা বাংলাদেশে সব সময় নিরাপত্তাহীনতায় ভূগেছে৷ এখনো ভূগছে৷ স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ,জাসদের রাজনীতির করুণ শিকার হতে হয়েছে হিন্দুদের৷

৪.

নিষিদ্ধ ঘোষিত সর্বহারা নাম নিয়ে যারা রাজনীতি করেছে,তাদের চাঁদাবাজির শিকার হতে হয়েছে হিন্দুদের৷ 

৫.

জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ার সময়কালেও নির্যাতিত হয়েছে হিন্দুরা৷বিশেষ করে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে  ভয়ানক নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে হিন্দুদের৷এখানে ধর্ম ভিত্তিক দল জামায়াত হিন্দুূের কোন ক্ষতি করা নয় বরং সহনশীল থাকার পরও জোটের কারনে এর দায় এড়াতে পারে না জামায়াত।

৬.

আওয়ামী লীগের সময়ে হিন্দুরা ভালো থাকবেন,নিরাপদে থাকবেন,সাধারণভাবে এটা মনে করা হয়৷ বাস্তবতা হলো,১৯৯৬ ও ২০০৯ থেকে এখন পর্যন্ত সময়কাল পর্যালোচনা করলে প্রমাণ মেলে না যে হিন্দুরা নিরাপদে আছেন৷ একথা সত্যি যে,২০০৯ সালের পর থেকে হিন্দুরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল হয়েছেন৷সেই সংখ্যা তুলনামূলক বিচারে অনেক৷ এই চিত্র প্রমাণ করে হিন্দুরা ভালো আছেন৷কিন্তু সারা দেশের সামগ্রিক চিত্র সন্তোষজনক নয়৷ভালো আছেন অল্প কিছু সংখ্যক, খারাপ আছেন এমন সংখ্যা বেশি৷

৭.

গত ১০ বছরে হিন্দুদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে৷ কোনো ঘটনারই প্রকৃত তদন্ত-বিচার হয়নি৷ ফরিদপুর শহরের একটি হিন্দু পরিবার বাড়ি-জমি বিক্রি করে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন৷ গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও, পরিবারটিকে চলে যেতে হয়েছে৷

৮.

বাংলাদেশ থেকে মূলত অবস্থাসম্পন্ন হিন্দুরা চলে গেছেন৷ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কমবেশি সব দেশেই নিরাপত্তাহীনতা ও নিপীড়নের শিকার হন৷ ভারতে মুসলমানরাও নিপীড়ন বা নির্যাতনের শিকার হন৷ তারপরও মুসলমানরা ভারতেই থাকেন, পাকিস্তান বা বাংলাদেশে চলে আসার চষ্টা করেন না৷ কেন করেন না? কারণ পাকিস্তান বা বাংলাদেশে যাওয়ার সুযোগ নেই৷ তারা ভারতেই থাকেন৷ নির্যাতিত হলে প্রতিরোধ করেন, ক্ষেত্র বিশেষে আক্রমণও করেন৷ 


কিন্তু উল্টো চিত্র বাংলাদেশের ক্ষেত্রে৷ এখানে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়ে, নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে হিন্দুরা ভারতে চলে যান৷ কারণ ভারতে তাদের স্বজন আছেন, যাওয়ার সুযোগও আছে৷ না গিয়ে শুরু থেকে যদি প্রতিরোধ গড়ে তোলা যেত, তবে হয়ত হিন্দুদের এভাবে দেশত্যাগ করতে হতো না৷

৯. পরিশেষে বলে রাখি, বাংলাদেশের মূলধারার রাজনীতি হিন্দুদের দেশত্যাগের কারণ৷ হিন্দুদের নিপীড়ন-নির্যাতন, দখল, জ্বালাও-পোড়াও ইসলামি মৌলবাদী বা জঙ্গিরা করেনি৷ করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, কোথাও কোথাও বিএনপি৷ প্রিয়া সাহা যে বাড়ি পোড়ানোর অভিযোগ ইসলামি মৌলবাদী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে এনে বাংলাদেশকে মৌলবাদী রাষ্ট্রের পরিচিতি দিতে চেয়েছেন, তার কোনো ভিত্তি নেই৷ কোনো গবেষণা বা পরিসংখ্যানে এমন তথ্য নেই৷

নাসিরনগর থেকে সাথিয়া সবক'টি ঘটনায় সম্পৃক্ততা ছিল ক্ষমতাসীনদের৷ অর্থাৎ দায় মূলত মূলধারার রাজনীতির৷

আমি বলি ভারতে পালানো নয়, বরং প্রতিরোধ করতে শিখুন, সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলমান ন্যায় ও ইনসাফের সাথে আছে। ভারত গেলেই ভাল থাকবেন তার কোন নিশ্চয়তা কেউ দেয় নি,বরং এনআরসির মারপ্যাচে পড়ে লেজে গোবরে হয়ে যাবেন।

বাংলাদেশে হিন্দুদের সব শেষে একটা কথাই বলব, যে দেশে চৌদ্দ পুরুষের জন্ম, যে দেশ নারীর বন্ধন,  সে দেশটাই আপনার দেশ, আপনার বাবার দেশ, ভারত আপনাদের বাবার দেশ নয়।

যে দেশে জন্মেছ সে দেশেই মরো, ভারতে গিয়ে ঘর জামাই মার্কা নাগরিক হওয়ার চেয়ে নিজ দেশে না খেয়ে থাকা ভালো।

ভুল হলে সবাই ক্ষমা করবেন।

ডা.বশির আহাম্মদ, চিকিৎসক, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী। 


মানবাধিকারের কিছু পরিভাষা

 মানবাধিকারের কিছু পরিভাষা

মানবাধিকারের কিছু পরিভাষা

ভুমিকাঃ
মানুষ হিসেবে একজন ব্যক্তি যে অধিকার, সম্মান ও নিরাপত্তা লাভ করে তাই মানবাধিকার। মৌলিক অধিকারই মানবাধিকারের ভিত্তি। যেকোনো ধরনের জুলুম, নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে মানবাধিকারের ধারণা বিকাশ লাভ করেছে। মানবাধিকার বর্তমানে বিশ্বমানবতা ও সভ্য সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত অধিকার। অবাধ ও মুক্ত চিন্তা, মত প্রকাশ ও প্রতিবাদের অধিকার মানবাধিকারের মূলকথা। মানবাধিকার মৌলিক অধিকার থেকে লাভ করলেও এর বিস্তৃতি বিশ্বব্যাপী। মৌলিক অধিকার রাষ্ট্রীয় সংবিধানে সন্নিবেশিত এবং রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলেই এর তাৎপর্য সীমাবদ্ধ। কিন্তু মানবাধিকার বিশ্বব্যাপী পরিব্যাপ্ত এবং যেকোনো রাষ্ট্রীয় জুলুমের বিরুদ্ধেও মানবাধিকার সংস্থা সোচ্চার হতে পারে। তবে মৌলিক অধিকারের মত মানবাধিকার বলবৎ করা সম্ভব হয় না। অবশ্য ১৯৪৮ সালের ১০ই ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মৌলিক মানবিক অধিকারসমূহ ঘোষিত ও গৃহীত হওয়ায় এগুলো তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই মানবাধিকারগুলের মধ্যে ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অধিকারকে পরিপূর্ণরূপে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।



মানবাধিকারের সংজ্ঞাঃ
মানুষই সবকিছুর পরিমাপক এই ধারণা থেকেই মানবাধিকারের জন্ম। বিশ্ব মানবতার সদস্য হিসেবে জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ তার ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও আত্মোপলব্ধির জন্য যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা দাবী করতে পারে তাকে মানবাধিকার বলে। মানুষ হিসেবে একজন ব্যক্তি যে সম্মান, শ্রদ্ধা, অধিকার ও নিরাপত্তা লাভ করে তাই মানবাধিকার। মানবাধিকারের বলে একজন মানুষ তার নিজ রাষ্ট্রের স্বৈরাচারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানবতা কর্তৃক নিরাপত্তা লাভ করতে পারবে। ১৯৪৮ সালের ১০ই ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মৌলিক মানবাধিকারসমূহ ঘোষিত ও গৃহীত হয়।

মানবাধিকারের ব্যাখ্যা ও স্বরূপ বিশ্বসংস্থা কর্তৃক ঘোষিত ও স্বীকৃত অধিকারসমূহ মানবাধিকার হিসেবে চিহ্নিত। কাজেই নাগরিক অধিকার এবং মানবাধিকারের বৈশিষ্ট্য ও স্বরূপ পৃথক। নাগরিক অধিকার ব্যক্তির সেই অধিকার যা রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে সীমিত। অপরপক্ষে মানবাধিকার সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃত। মানবাধিকারবলে কোন ব্যক্তি তার নিজ রাষ্ট্রে নিরাপদ মনে না করলে অন্য রাষ্ট্রে আশ্রয় নিতে পারে। একজন কবি, সাহিত্যিক বা দার্শনিক তার মতাদর্শ প্রকাশের কারণে নিজ রাষ্ট্রে নিগৃহীত হলে অন্য রাষ্ট্রে আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারেন এবং মানবাধিকারের কারণে আশ্রয় পেতেও পারেন। একজন মহিলা স্বামী কর্তৃক নিগৃহীত হলে বা কোন শ্রমিক বা বাড়ির কাজের ছেলে বা মেয়ে গৃহস্বামী কর্তৃক অত্যাচারিত হলে মানবাধিকার সংস্থা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তাকে নিরাপদ করার জন্য এগিয়ে আসতে পারে। মানবাধিকার বলে একজন শ্রমিককে নির্ধারিত সময়ের বেশি কাজ করতে বাধ্য করা যাবে না। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা কর্তৃক প্রণীত বিধিসমূহ সাপেক্ষে একজন শ্রমিক মজুরী, মর্যাদা ও নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকারী হবে।

মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের সম্পর্কঃ মৌলিক অধিকার বলতে সেই অধিকার বুঝায় যা সার্বভৌম রাষ্ট্রের সংবিধানে সন্নিবেশিত ও বলবৎযোগ্য। রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যেই মৌলিক অধিকার উপভোগযোগ্য। অপরপক্ষে মানবাধিকার আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক ঘোষিত ও গৃহীত এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উপভোগযোগ্য। সংবিধান কর্তৃক গৃহীত হওয়ার ফলে মৌলিক অধিকার সুস্পষ্ট এবং অধিকতর দৃঢ়তার সাথে বলবৎযোগ্য । কিন্তু মানবাধিকার সুস্পষ্ট হলেও দৃঢ়তার সাথে বলবৎযোগ্য নয়। কোন রাষ্ট্র তার কোন নাগরিককে নিগৃহীত করলে সেই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করা গেলেও তাকে বিরত করা সব সময় সম্ভব হয় না। এসব এগিয়ে আসতে পারে। মানবাধিকার বলে একজন শ্রমিককে নির্ধারিত সময়ের বেশি কাজ করতে বাধ্য করা যাবে না। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা কর্তৃক প্রণীত বিধিসমূহ সাপেক্ষে একজন শ্রমিক মজুরী, মর্যাদা ও নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকারী হবে।

মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের সম্পর্কঃ মৌলিক অধিকার বলতে সেই অধিকার বুঝায় যা সার্বভৌম রাষ্ট্রের সংবিধানে সন্নিবেশিত ও বলবৎযোগ্য। রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যেই মৌলিক অধিকার উপভোগযোগ্য। 

অপরপক্ষে মানবাধিকার আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক ঘোষিত ও গৃহীত এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উপভোগযোগ্য। সংবিধান কর্তৃক গৃহীত হওয়ার ফলে মৌলিক অধিকার সুস্পষ্ট এবং অধিকতর দৃঢ়তার সাথে বলবৎযোগ্য। কিন্তু মানবাধিকার সুস্পষ্ট হলেও দৃঢ়তার সাথে বলবৎযোগ্য নয়। কোন রাষ্ট্র তার কোন নাগরিককে নিগৃহীত করলে সেই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করা গেলেও তাকে বিরত করা সব সময় সম্ভব হয় না। এসব পার্থক্য থাকলেও এরা একে অপরকে প্রভাবিত করে। মৌলিক অধিকারের ধারণা থেকেই মানবাধিকারের সৃষ্টি। অপরপক্ষে মৌলিক মানবাধিকারসমূহ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে মৌলিক অধিকারের কামনাকে বেগবান করে। তাই এরা একে অপরের পরিপূরক। 

মানবাধিকার ও আর্থ-সামাজিক সাম্যঃ
মানবাধিকার আর্থ-সামাজিক সাম্যের ভিত্তি রচনা করে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার মত মৌলিক অধিকারগুলো মানবাধিকারের আওতাভুক্ত হওয়ায় বিশ্বের সকল নাগরিকের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের আকুতি অগ্রাধিকার লাভ করেছে। এগুলো প্রতিষ্ঠা করতে পারলে অর্থনেতিক ও সামাজিক বৈষম্য দূর হবে। যেকোনো পেশা গ্রহণ, উপযুক্ত পারিশ্রমিক লাভ, কর্মের অনুকূল শর্তাদি লাভের অধিকার এবং অসুস্থতা, অসামর্থ ও দৈব দুর্বিপাকে সামাজিক নিরাপত্তা লাভের অধিকারের ব্যবস্থা করে মানবাধিকার আর্থ-সামাজিক সাম্যের ভিত্তি রচনা করেছে।

জাতিসংঘ স্বীকৃত মৌলিক মানবাধিকার ও মানবাধিকার সংক্রান্ত সাধারণ নীতিঃ

১৯৪৮ সালের ১০ই ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মৌলিক মানবাধিকারসমূহ ঘোষিত ও গৃহীত হয়। জাতিসংঘের সনদে উল্লেখ করা হয়েছে যে জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও ভাষা নির্বিশেষে সকল মানুষের স্বাধীনতাকে সমুন্নত করতে হবে। মৌলিক মানবাধিকারের ঘোষণা জাতিসংঘের লক্ষ্যকে বাস্ত বায়িত করার এক মহান ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। জাতিসংঘের সকল সদস্যরাষ্ট্র একক ও যৌথ প্রচেষ্টায় এই অধিকারগুলোকে বাস্তবায়িত করতে বদ্ধপরিকর।

জাতিসংঘের ঘোষণায় বর্ণিত মৌলিক মানবাধিকারের নীতিসমূহ নিরূপ :

(১) সকল মানুষই জন্মগতভাবে স্বাধীন, সম অধিকার ও সমমর্যাদা সম্পন্ন। সকলেই বিবেক বিবেচনার অধিকারী। সুতরাং তারা পরস্পর ভ্রাতৃত্বমূলক আচরণ করবে। 

(২) এ ঘোষণায় উল্লিখিত সকল অধিকার ও স্বাধীনতা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী, পুরুষ, ধনী, নির্ধন, রাজনৈতিক মতাদর্শ, পদমর্যাদা নির্বিশেষে সকলের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। 

(৩) পৃথিবীর সব স্বাধীন, অর্ধস্বাধীন বা অ-স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্রের নাগরিকবৃন্দকে তাদের দেশের রাজনৈতিক বা আন্তর্জাতিক মর্যাদা নির্বিশেষে সমদৃষ্টিতে দেখা হবে।

জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত মৌলিক অধিকার নিম্নে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত মৌলিক অধিকারসমূহ উল্লেখ করা হলঃ

(ক) ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারসমূহ-

(১) প্রত্যেক ব্যক্তিরই নিজের জীবন, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অধিকার থাকবে। (৩নং ধারা) 

(২) কাউকেও দাসত্বে আবদ্ধ রাখা যাবে না। (৪নং ধারা)

(৩) কারও প্রতি অমানুষিক নির্যাতন ও মর্যাদা হানিকর আচরণ করা যাবে না। (৫নং ধারা) 

(৪) আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান। (৭নং ধারা)

(৫) মৌলিক অধিকার খর্ব করা হলে আদালতে যথার্থ প্রতিকারের ব্যবস্থা করা যাবে। (৮নং ধারা)

(৬) কাউকে বিনা কারণে আটক, গ্রেফতার ও নির্বাসিত করা যাবে না। (৯নং ধারা)

(৭) প্রত্যেকেই নিরপেক্ষ সুবিচার পাওয়ার অধিকারী। (১০নং ধারা)

(৮) অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেকে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবী করতে পারবে এবং অপরাধ সংঘটিত হওয়ার প্রাক্কালে কাউকেও অভিযুক্ত করা না হলে বা তার কাজকে অপরাধ বলে গণ্য করা না হলে তাকে শাস্তি দেওয়া যাবে না। (১১নং ধারা)

(৯) সকলের গৃহের নিরাপত্তা ও যোগযোগের গোপনীয়তার অধিকার থাকবে। (১২নং ধারা)

(১০) দেশের সর্বত্র চলাফেরা, নিজ দেশত্যাগ ও প্রত্যাবর্তন করার অধিকার সকলের থাকবে। (১৩নং ধারা)

(১১) প্রত্যেক ব্যক্তিই নির্যাতন থেকে আত্মার জন্য অন্য দেশে আশ্রয় নিতে পারবে। (১৪ নং ধারা) 

(১২) জাতীয় অধিকার থেকে কাউকেও বঞ্চিত করা যাবে না। (১৫ নং ধারা)

(১৩) সকলের বিবাহের অধিকার থাকবে এবং বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমঅধিকার থাকবে। (১৬ নং ধারা)

(১৪) সকলের সম্পত্তির অধিকার থাকবে এবং জোরপূর্বক কাউকেই সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। (১৭নং ধারা)

(১৫) প্রত্যেকের চিন্তা, বিবেক ও ধর্মের স্বাধীনতা থাকবে। ( ১৮ নং ধারা) 

(১৬) সকলের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার থাকবে। (১৯ নং ধারা)

(১৭) সম্মিলিত হওয়ার ও সংঘ গঠনের অধিকার সকলের থাকবে। (২০নং ধারা)


(খ) অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহঃ- 
(১) প্রত্যেকের সামাজিক নিরাপত্তা লাভের অধিকার থাকবে। (২২নং ধারা)

(২) কর্মের অধিকার, যেকোনো পেশা গ্রহণ, পারিশ্রমিক লাভ এবং কর্মের উপযুক্ত শর্তাদি লাভের অধিকার সকলের থাকবে। (২৩নং ধারা)

(৩) প্রত্যেকের কর্মজীবনে বিশ্রাম, অবকাশ ও কাজের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা লাভের অধিকারসহ বেতন ও ছুটি ভোগ করার অধিকার থাকবে। (২৪ নং ধারা)

(৪) প্রত্যেকেই তার নিজের ও পরিবারের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার উপযোগী খাদ্য, বাসস্থান ও চিকিৎসা লাভের অধিকার পাবে। এছাড়া বেকারত্ব, অসুস্থতা, অসামর্থ্য, বৈধব্য ও বৃদ্ধ বয়সে কিংবা দৈব দুর্বিপাকে পূর্ণ সামাজিক নিরাপত্তা লাভের অধিকার পাবে। মা ও শিশু বিশেষ যত্নলাভের অধিকার পাবে। (২৬নং ধারা)

(৫) প্রত্যেকের শিক্ষালাভের অধিকার থাকবে। ব্যক্তিত্বের বিকাশ ও যেকোনো কাজের যোগ্যতা অর্জনের জন্য কারিগরী ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাসহ উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের অধিকার থাকবে। (২৬নং ধারা) 

(৬) প্রত্যেকেরই তার সমাজের সকল সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের এবং শিল্প ও বিজ্ঞানের বিকাশে সুবিধা লাভের পূর্ণ অধিকার থাকবে। (২৭নং ধারা)

(গ) শেষ ধারাসমূহঃ-
জাতিসংঘের অধিকার সনদের ২৮ নম্বর থেকে ৩০ নং ধারা পর্যন্ত নাগরিক জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য সুস্থ ও সুশৃঙ্খলাপূর্ণ সামাজিক জীবনের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে নিচের ৩টি অধিকারের বর্ণনা করা হয়েছে— 
(১) সন্ত্রাসের রাজত্বে বা কোলাহলপূর্ণ বিশ্বে জাতিসংঘ ঘোষিত অধিকারগুলো উপভোগ করা সম্ভব নয়, তাই সকলের জন্য সামাজিক ও আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার অধিকার থাকবে। (২৮নং ধারা) 

(২) জাতিসংঘের আদর্শ ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী কোন অধিকার ও স্বাধীনতা কেউ ভোগ করতে পারবে না। (২৯নং ধারা) 

(৩) অধিকার সনদে সাবধান করে দেওয়া হয়েছে যে, জাতিসংঘের ঘোষিত অধিকার ও স্বাধীনতা ধ্বংসকারী কোন রাষ্ট্র, দল বা ব্যক্তির প্রতি অধিকারের ঘোষণা আরোপ করা যাবে না। ( ৩০ নং ধারা)।

বাংলাদেশে মৌলিক অধিকারঃ
বাংলাদেশের সংবিধানে সন্নিবেশিত মৌলিক অধিকারসমূহ মানবাধিকারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বাংলাদেশ সংবিধানের ২৮ থেকে ৩০ অনুচ্ছেদে সাম্যের অধিকার অর্থাৎ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের রাষ্ট্রীয় কাজে অংশ গ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। এই ধারাটি 'কেউ ছোট বা কেউ বড় নয়'— মানবাধিকারের এই নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সংবিধানের ৩১ থেকে ৩৫ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত ধারাগুলি মানবাধিকারের ব্যক্তির জীবন ও স্বাধীনতার ধারাগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সংবিধানের ৩৬ থেকে ৪১ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত চলাফেরার অধিকার, সমাবেশের অধিকার সংগঠনের অধিকার, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা, পেশা ও বৃত্তির স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্পত্তির অধিকার, ব্যক্তিগত অধিকার প্রভৃতি মৌলিক অধিকারগুলো মৌলিক মানবাধিকারের সাথে পুরোপুরি সাম্যপূর্ণ।

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, বাংলাদেশ জাতিসংঘের মানবাধিকারকে পুরাপুরি সম্মান ও শ্রদ্ধা করে। বাংলাদেশ তাই সর্বপ্রকারের জুলুম, নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার। বাংলাদেশ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যথাযোগ্য ভূমিকা পালনে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

লেখকঃচিকিৎসক,জার্নালিস্ট,আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী। 

দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে!

  দলিল প্রমাণসহ রবীন্দ্রনাথের কুকর্ম তুলে ধরা হলো, কষ্ট করে পড়ুন—কত জঘন্য ব্যক্তি ছিল সে! এক.   শুনতে খারাপ শোনালেও এটা সত্য, রবীন্দ্রনাথের...