"মওদূদীবাদ বনাম দেওবন্দীদের আকীদা"
বিংশ শতাব্দর ইসলামী আন্দোলনের অগ্রনায়ক সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী (রহঃ)-এর আকীদাগত ভুল তালাশ করতে গিয়ে এদেশের কিছু আলেম সমাজ রাতকে দিন আর দিনকে রাত বানিয়ে একাকার করে ফেলছেন।
★আকাবিরদের তালাশের ওপর যাচাই বাছাই করা চরম বেয়াদবী। এইজন্য আলেমরাও অন্ধভাবে তাদের কথাগুলো মেনে নিয়ে গোমরাহ মওদূদী থেকে দূরে থাকছে। কিন্তু কিছু দুষ্ট লোক মিস্টার মওদুদীর গুমরাহী আকিদা ও দেওবন্দি আলেমদের ইসলামী আকিদা স্বচক্ষে দেখতে বদ্ধপরিকর। তাই আসুন তাদের উছিলায় আমরাও মাওলানা মওদূদীর আকীদা ও দেওবন্দী আকিদার মধ্যে কেবল একটা বিষয়ে পার্থক্যটা আজকে একটু দেখে নেই। আস্তে আস্তে অন্যান্য বিষয়গুলোও সামনে আনা হবে ইনশাআল্লাহ
★মওদূদী(রঃ)_আকীদাঃ
#মরহুম মাওলানা মওদুদী(রঃ) বলেন, "মানুষ আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে নিজের পৃষ্ঠপোষক, কার্যসম্পাদনকারী, প্রয়োজন পূরণকারী, বিপদ দূরকারী, ফরিয়াদ শ্রবণকারী ও গ্রহণকারী এবং সাহায্যদাতা ও রক্ষা কর্তা মনে করবে না। কেননা তিনি ব্যতীত আর কারো নিকট কোনো ক্ষমতা নেই।" তিনি আরো বলেন, "আল্লাহ ব্যতীত আর কারো নিকট প্রার্থনা করবে না, কারো নিকট আশ্রয় খুঁজবে না, কাউকে সাহায্যের জন্যও ডাকবে না। (গঠনতন্ত্র, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, পৃষ্ঠা, ৮-৯)
★দেওবন্দী_আকীদাঃ
ওলামায়ে দেওবন্দের প্রাণপুরুষ হযরত হাজী এমদাদুল্লাহ মাক্কী (১২৩১-১৩১৫ হি.) রাসূলে কারীম (ﷺ)-এর কাছে প্রার্থনা করে বলেন, “উম্মতের জাহাজটি আল্লাহ তা’য়ালা আপনার হাতে সোপর্দ করে দিয়েছেন। অতএব, হে আল্লাহর রাসূল! এখন আপনি চাইলে ডুবিয়ে মারতে পারেন অথবা উদ্ধার করতে পারেন।” (রাহে জান্নাত- ২১-৩০)
★শাইখুল ইসলাম মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী (১৮৭৯-১৯৫৭ খ্রি.) বলেন, “আমাদের নেতা মাওলানা কাসেম নানতুবী (১২৪৮-১২৯৭ হি.) কসীদা ‘বুরদা’ এর মতোই বলেছেন, হে দানশীল আহমদ, আমাকে সাহায্য করুন। কেননা, আপনি ছাড়া অসহায় কাসেমের কোনো রক্ষাকারী নেই।” (শিহাবে ছাকিব-71) মাওলানা মাদানী (রহ.) নিজের ব্যাপারে বলেন, “হে সৃষ্টির সেরা নবী, মহা বিপদের সময় আপনি ছাড়া আমার এমন কেউ নেই, যার কাছে আমি আশ্রয় নিব।” (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৭০)
★দেওবন্দ মাদ্রাসার সাবেক মুহতামিম হযরত মাওলানা হাবিবুর রাহমান দেওবন্দী (রহ.) বলেন,ماله من ملجا او موئل- غير باب السيد المولى الاجل “তার (লেখকের) জন্য মহান মর্যাদাশীল নবীর দরজা ব্যতীত আর কোনো নিরাপদ ঠিকানা ও আশ্রয়স্থল নেই। তিনি আরও বলেন, “তুমি নবী মোস্তাফা (ﷺ)-এর দরজায় আশ্রয় গ্রহণ করো। তিনি সৃষ্টির সেরা, মুশকিল আহসান ও বিপদগ্রস্তের আশ্রয়স্থল।” (লামিয়াতুল মুজিযাত)
★এখানে আমরা দেওবন্দী আকিদা ও মওদূদী আকিদা দেখলাম। দেওবন্দী ওলামাদের আকীদা থেকে আমরা জানতে পারি যে, তাদের মতে আল্লাহ তা'আলা তাঁর রাসূলের হাতেই উম্মতকে সোপর্দ করে দিয়েছেন। এখন তিনি চাইলে গোটা উম্মতকে ধ্বংস করতে পারেন আবার চাইলে বাঁচাতেও পারেন। তাঁরা আল্লাহ তা'আলাকে বাদ দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে সাহায্যকারী এবং বিপদ থেকে রক্ষাকারী মনে করেছেন এবং রাসূলুল্লাহর কাছে আশ্রয় খুঁজেছেন।
পক্ষান্তরে মরহুম মওদুদীর বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, উদ্ধার করা, রক্ষা করা, বিপদে সাহায্য করা আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট।
অর্থাৎ মাওলানা মওদুদী একমাত্র আল্লাহর জন্য যা নির্দিষ্ট করেছেন দেওবন্দী ওলামাগণ তা রাসুলের জন্য নির্দিষ্ট করেছেন। অথচ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজেই ঘুমানোর সময় পড়তেন,
لا ملجا ولا منجا منك إلا إليك
"হে আল্লাহ আপনি ছাড়া কোনো আশ্রয়স্থল নেই এবং মুক্তি চাওয়ারও কোনো জায়গা নেই।" (সহীহ বুখারী, হাঃ ২৪৭)।
আল্লাহ তাআলা তাঁর হাবিবকে বলেন,
ولن تجد من دونه ملتحدا
"আল্লাহ তাআলা ছাড়া তুমি আর কোনো আশ্রয়স্থল খুঁজে পাবেনা।" (সূরা কাহাফ, ২৭) তাই রাসুল সাঃ ও বলেছেন,
من عاذ بالله فقد عاذ بمعاذ
"যে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইলো সে প্রকৃত আশ্রয়স্থলেই আশ্রয় চাইল।"
(মুসনদে আহমদ, হাঃ ৪৭৪)।
এছাড়াও শাইখ বিন বায ও শাইখ উসাইমিন সহ আরব বিশ্বের সব আলিমগণ তাদের এই আকিদাকে শিরকি আকিদা বলে আখ্যায়িত করেছেন। (দেখুন, মাজমুউ ফাতওয়া ইবনে বায, ৬/৩৭০, মাজমুউ ফাতওয়া ও রাসায়েলে উসাইমিন ৯/২০৯, শরহে ফাতহুল মাজীদ, ১৫/৮, আদ্দারুল আখিরাহ, ৭/৪)।
বিশ্ব বিখ্যাত আলেম আল্লামা ইবনে হাজার আবু তামি (রহঃ) এই আকীদা পোষণ কারীদের কঠোর সমালোচনা করে বলেন,
فإن هذا الكلام الشرك والضلال ولكن الله أعلم بقائله هل مات على هذا أو تاب
"এই কথা সুস্পষ্ট শিরক ও গোমরাহী। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন বক্তা এই আকীদার ওপর মৃত্যুবরণ করল নাকি তওবা করল।" (তাতহিরুল জীনান, ৪৫)।
★আপনারা যারা মওদুদীবাদী বলে আকীদার সবক দেন, তাদের উচিত নিজের আকিদার দিকে আগে খেয়াল রাখা। তাহলে দেখবেন নিজের আক্বীদা বিশুদ্ধ করতে করতে জীবন চলে যাবে, অন্যকে নিয়ে ভাবনারও সময় মিলবে না।
লেখক:চিকিৎসক, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ