"চরমোনাই সহ সকল উচ্চ স্বরে কিংবা চিৎকার করে জিকিরের মাহফিল গুলো শরীয়ত বিরোধী"
আমি চরমোনাই সহ সকল উচ্চ শব্দের জিকির কারী ও ওয়াজের নামে অনর্থক উচ্চ আওয়াজের ওয়াজ মাহফিল গুলোর কথা বলছি। তবে মাহফিলে উপস্থিত লোকজনদের শোনানোর জন্য সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার কিংবা উপস্থিত লোকদেরকে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানোর জন্য যত টুকু শব্দে আওয়াজ করা দরকার তা করতে ইসলাম নিষেধ করে নি। কিন্তু এই ইল্লাল্লাহু বা আল্লাহ ছাড়া বা আল্লাহ নাই এইরকম জিকির দূরে থাক সম্মিলিত ভাবে আওয়াজ করে ইবাদতেরই অনুমতি দেয় না ইসলাম।
আমার লেখা যদি কোন চরমোনাই মূরীদ পড়ে থাকেন কিংবা কোন আলেমের চোখে পড়ে তাদের নিকট আমার অনুরোধ দয়া করে আপনাদের পীরের নিকট এই দলিল গুলো দেখিয়ে কোরআন ও হাদিস হতে আপনার পীরের নিকট এই দলিলের বিপরীতে দলিল দাবী করুন, যদি তারা এই দলিল গুলো অস্বীকার করার পাল্টা দলিল দিতে না পারে, উত্তর দিতে না পারলে বুঝবেন উনি ভন্ড।
আল্লাহ আল কোরআনে ঘোষনা করেন:
وَ اذْكُرْ رَّبَّكَ فِیْ نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَّ خِیْفَةً وَّ دُوْنَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَ الْاٰصَالِ وَ لَا تَكُنْ مِّنَ الْغٰفِلِیْنَ
হে নবী!তোমার রবকে স্মারণ করো সকাল-সাঁঝে মনে মনে কান্নাজড়িত স্বরে ও ভীতি বিহ্বল চিত্তে এবং অনুচ্চ কণ্ঠে। তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না যারা গাফিলতির মধ্যে ডুবে আছে। (সূরা:আল-আ'রাফ,আয়াত-২০৫)
এখানে বুঝানো হয়েছে । স্মরণ করা অর্থ নামাযও এবং অন্যান্য ধরনের স্মরণ করাও। চাই মুখে মুখে বা মনে মনে যে কোনভাবেই তা হোক না কেন। সকাল-সাঁঝ বলতে নির্দিষ্টভাবে এ দু’টি সময়ও বুঝানো হয়ে থাকতে পারে। আর এ দুসময়ে আল্লাহর স্মরণ বলতে বুঝানো হয়েছে নামাযকে। পক্ষান্তরে সকাল-সাঁঝ কথাটা “সর্বক্ষণ” অর্থেও ব্যবহৃত হয় এবং তখন এর অর্থ হয় সবসময় আল্লাহর স্মরণে মশগুল থাকা। এ ভাষণটির উপসংহারে সর্বশেষ উপদেশ হিসেবে এটা বলা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, তোমাদের অবস্থা যেন গাফেলদের মত না হয়ে যায়। দুনিয়ায় যা কিছু গোমরাহী ছড়িয়েছে এবং মানুষের নৈতিক চরিত্রে ও কর্মকাণ্ডে যে বিপর্যয়ই সৃষ্টি হয়েছে তার একমাত্র কারণ হচ্ছে, মানুষ ভুলে যায় আল্লাহ তার রব, সে আল্লাহর বান্দা, দুনিয়ায় তাকে পরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হয়েছে এবং দুনিয়ার জীবন শেষ হবার পর তাকে তার রবের কাছে হিসেব দিতে হবে। কাজেই যে ব্যক্তি নিজেও সঠিক পথে চলতে চায় এবং দুনিয়ার অন্যান্য মানুষকেও তদনুসারে চালাতে চায়, সে নিজে যেন কখনো এ ধরনের ভুল না করে, এ ব্যাপারে তাকে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এ জন্যই নামায ও আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমে সব সময় স্থায়ীভাবে আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট থাকার ও তাঁর সাথে সম্পর্ক রাখার জন্য বার বার তাকীদ করা হয়েছে।
আসুন দেখি হাদীস কি বলে?
চীৎকার করে জিকির নিয়ে রাসূল(সঃ) কি বলেছিলেন;একদিন আল্লাহর রাসূল(সঃ) একটি টিলার উপর ওঠেছিলেন। একজন সাহাবা ঐ টিলায় উঠে উচ্চস্বরে বলেন লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, তখন নবীজি বললেন, তোমরা তো কোন বধির এবং অনুপস্হিত সত্তাকে ডাকছনা। তিনি আরো বললেন, হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের প্রতি সদয় হয়ে খুব জোরে চীৎকার থেকে বিরত হও।। জেনে রেখ,তোমরা এমন একজন শ্রবনকারী,দর্শনকারী এবং নিকটনর্তীকে ডাকছ যিনি তোমাদের সাথে আছেন। (সহি বুখারী,হাদিস নং- ৫৯৬১)
সূরা বনী ইসরাইল ১১০ আয়াতে আল্লাহ আরো বলেন,
قُلِ ادْعُوا اللّٰهَ اَوِ ادْعُوا الرَّحْمٰنَ١ؕ اَیًّا مَّا تَدْعُوْا فَلَهُ الْاَسْمَآءُ الْحُسْنٰى١ۚ وَ لَا تَجْهَرْ بِصَلَاتِكَ وَ لَا تُخَافِتْ بِهَا وَ ابْتَغِ بَیْنَ ذٰلِكَ سَبِیْلًا
হে নবী! এদেরকে বলে দাও, আল্লাহ বা রহমান যে নামেই ডাকো না কেন, তাঁর জন্য সবই ভাল নাম। আর নিজের নামায খুব বেশী উচ্চ কণ্ঠেও পড়বে না, বেশী ক্ষীণ কণ্ঠেও না, বরং এ দু’য়ের মাঝামাঝি মধ্যম পর্যায়ের কণ্ঠস্বর অবলম্বন করবে।
আয়াতের প্রথম অংশেমুশরিকদের একটি আপত্তির জবাব। তারা এ মর্মে আপত্তি জানিয়েছিল যে, স্রষ্টার নাম “আল্লাহ” এটা আমরা শুনেছিলাম কিন্তু এ “রহমান” নাম কোথায় থেকে আনলে? তাদের মধ্যে যেহেতু আল্লাহর এ নামের প্রচলন ছিল না তাই তারা তাঁর রহমান নাম শুনে নাক সিটকাতো।
২য় অংশে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মক্কায় যখন নবী ﷺ অথবা সাহাবীগণ নামায পড়ার সময় উচ্চকণ্ঠে কুরআন পড়তেন তখন কাফেররা শোরগোল করতো এবং অনেক সময় এক নাগাড়ে গালিগালাজ করতো এটা নিয়ে বুঝানো হয়েছে। এজন্য হুকুম দেয়া হলো, এমন উচ্চস্বরে পড়ো না যাতে কাফেররা শুনে হৈ-হুল্লোড় করতে পারে আবার এমন নিচ স্বরেও পড়ো না যা তোমাদের নিজেদের সাথীরাও শুনতে না পায়।
সুতরাং এখানে বুঝ গেলো প্রচলিত এই অনর্থক উচ্চ শব্দের ওয়াজ ও জিকির মাফিল গুলোর শরিয়ত অনুমোদিত নয়।
আরো প্রমান পেতে নিচের দলিলগুলো দেখুন,
সহি মুসলিম হাদিস নং- ২৭০৪
সহি বুখারী হাদিস নং- ৫৯৬১/ ৫৯৩৬/৫৯৬৭/২৯৯২ (ইফা), বাঃ২৭৮১
মুসনাদে আহমাদ,হািস নং- ১৯৬১৯।
সর্ব শেষে আমি গরিবের আবু হানিফা দাবী করা মূফতি রেজাউল করিম আবরার মহোদয়ের "ইল্লাল্লাহু জিকিরের দলিল" বইটি চ্যালেঞ্জ রাখলাম। বইটির সকল দলিল ভ্রান্ত।
লেখক: চিকিৎসক, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ