QRF কোরআন রিসার্চ ফাউন্ডেশন মূলত আহলে কোরআন!
প্রিয় পাঠক! বাংলাদেশে জন্ম নিয়ে বুঝ হওয়ার পর থেকে আজ অবধি অনেক ধরণের সংগঠণ দেখে আসছি।যাদের কিছু সংখ্যক সংগঠণ রয়েছে সত্যিকারের দ্বীনের উপর অবিচল অর্থাৎ আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের সত্যিকারের অনুসারী।
আর কিছু সংখ্যক রয়েছে ভ্রষ্ট তথা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত থেকে বিচ্যুত।আর কিছু সংখ্যক রয়েছে ইসলাম বিদ্বেষী।
শুরুতে মনে রাখতে হবে, আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মতবাত বিরোধী চেতনা যে বা যারাই পোষণ করবে, তারা নিঃসন্দেহে,অবশ্যই পথভ্রষ্ট তথা বিপদগামী। এ ব্যাপারে সমস্ত উম্মাহ একমত।
মনে রাখতে হবে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের প্রতিটি মতবাদ পবিত্র কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ’র আলোকে প্রতিষ্ঠিত। যেটা সমস্ত উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত। যারা এ মতবাদের বিপরিত কথা বলবে তারা নিশ্চিত সত্য থেকে বিচ্যুত।
আজ পাঠক সমিপে সদ্য প্রতিষ্ঠিত একটি মতবাদেরর বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো, যেটা বাংলাদেশে মাত্র কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। যার নাম দেয়া হয়েছে “কুরআন রিসার্চ ফাউন্ডেশন” তথা (QRF)। এদের প্রতিষ্ঠাতা একজন ডাক্তার। তার নাম হলো ডাঃ মতিয়ার রহমান (বিভাগীয় প্রধান,সার্জারী বিভাগঃ ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল,ঢাকা, বাংলাদেশ।)
এদের মূল ভিত্তিসহ অধিকাংশ মতবাদ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের সম্পূর্ণ পরিপন্থী তথা পথভ্রষ্ট একটি সংগঠণ।
যাদের মতবাদের মূল ভিত্তি হলো, ‘বিশিষ্ট তাবেয়ী হাসান বসরী রঃ এর যুগে বের হওয়া মু’তাজিলা সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ওয়াসিল ইবনে আতা এর মতবাদের উপর।
সুতরাং (QRF) সম্পর্কে বুঝতে হলে আগে আমাদেরকে মু’তাজিলা সম্প্রদায় সম্পর্কে জানতে হবে।
মু’তাজিলা নামকরণের ইতিহাস।
মু’তাজিলা নামটি মূলত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আলেমদের দেওয়া। ‘মুতাজিলা’ শব্দটি এসেছে আরবি ‘ইতিজাল’ শব্দ থেকে। এর অর্থ পৃথক হওয়া। তাদের ‘মুতাজিলা’ বলার কারণ হলো, তারা আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআত থেকে পৃথক বা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
দ্বিতীয় শতাব্দীর শুরু লগ্নে ইসলামী আকিদার ক্ষেত্রে যুক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞান অর্থাৎ বিবেক (commonsense) কে কেন্দ্র করে তাদের পথ চলা। এদের গুরু হলো ওয়াসিল ইবনে আতা।
যে ব্যাপারে অনেক কিতাবের ভেতর তাদের ইতিহাস লিপিবদ্ধ রয়েছে-
يقول الشهرستاني ودخل رجل على الحسن البصري فقال يا إمام الدين: لقد ظهرت في زماننا جماعة يكفرون أصحاب الكبائر والكبيرة عندهم كفر يخرج به عن الملة وهم وعيدية الخوارج وجماعة يرجئون أصحاب الكبائر، والكبيرة عندهم لا تضر مع الإيمان بل العمل على مذهبهم ليس ركنا من الإيمان فلا يضر مع مع الإيمان معصية كما لا ينفع مع الكفر طاعة وهم مرجئة الأمة فكيف تحكم لنا في ذلك اعتقادا ففكر الحسن في ذلك, وقبل أن يجيب قال واصل بن عطاء: أنا لا أقول أن صاحب الكبيرة مؤمن مطلق ولا كافر مطلقا بل هو في منزلة بين المنزلتين لا مؤمن ولا كافر ثم قام واعتزل إلى أسطوانة من أسطوانات المسجد يقرر ما أجاب به على جماعة من أصحاب الحسن فقال الحسن اعتزلنا واصل فسمي هو وأصحابه المعتزلة
অর্থাৎ আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ শাহরাস্তানি (রহ.) বলেন, এক ব্যক্তি হাসান বসরি (রহ.)-এর কাছে এসে বলেন, হে দ্বীনের ইমাম! আমাদের মধ্যে এমন এক দলের আবির্ভাব হয়েছে, যারা কবিরা গুনাহকে কুফরি মনে করে এবং কবিরা গুনাহকারী ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় বলে দাবি করে। আবার অন্য একটি দল কবিরা গুনাহকারীর ক্ষমার প্রত্যাশী। তারা মনে করে, ঈমানদার অবস্থায় গুনাহ করলে ঈমান চলে যায় না। যেমন নেককাজ ঈমান না থাকলে কোন উপকারে আসে না। তারা হলো মুরজিয়া। আমরা তাহলে কোন আকিদা পোষণ করব? হাসান (রহ.) এ বিষয়ে ভাবতে লাগলেন। তিনি জবাব দেওয়ার আগে ওয়াসিল ইবনে আতা বলেন, কবিরা গুনাহকারী ব্যক্তি মুমিনও নয়, কাফিরও নয়; বরং তার স্থান হলো ঈমান ও কুফরের মধ্যবর্তী।
এ কথা বলে তিনি হাসান বসরি (রহ.)-এর মজলিস থেকে উঠে যান এবং মসজিদের এক কর্ণারে নিজের এই মতবাদ প্রচার করতে শুরু করেন। এরপর হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘ইতাজাল আন্না ওয়াসিল’ (ওয়াসিল আমাদের থেকে পৃথক হয়ে গেছে)। তখন থেকে ওয়াসিল ও তার অনুসারীদের নাম ‘মুতাজিলা’ হিসেবে প্রসিদ্ধ হয়ে যায়।
সূত্রঃ আল মিলাল ওয়ান নিহাল, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা 25) আল ফারকু বায়নাল ফিরাক-পৃঃ২০-২১ আত-তারিফাত (জুরজানি)-পৃঃ২৩৮ দৈনিক কালেরকন্ঠ ২৬ অক্টোবর, ২০১৮ ঈসাব্দ।
মূলত এই মু’তাজিলাদের সর্দার ওয়াসিল ইবনে আতা তার মতবাদ প্রচার কাজে যে ৫ টি বিষয় খুব বেশি গুরুত্ব দিতেন, তার একটি হলো কবিরা গুনাহগার ব্যক্তি তওবা ছাড়া মারা গেলে চিরস্থায়ী জাহান্নামী। অর্থাৎ সে আর কখনো জান্নাতে যেতে পারবে না। তিনি বলতেন-
اذا خرج من الدنيا علي كبيرة من غير توبة فهو من اهل النار خالدا فيها
অর্থাৎ কবিরা গুনাহগার তওবা ব্যতিত দুনিয়া থেকে চলে গেলে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী।
সূত্রঃ আল মিলাল ওয়ান নিহাল-খঃ১ পৃষ্ঠা-25 তাসিরুল মু’তাজিলা পৃঃ১০৬ আত-তাবছিরু ফিদ্দিন পৃঃ৬৮
মুল কথা হলো মুসলিম উম্মাহ থেকে বিচ্ছিন্নবাদী সম্প্রদায় মুতাজিলাদের পথ চলার সুচনার মূলে ছিলো এ কথাটিই অর্থাৎ কবিরা গুনাহগার তওবা না করে ইন্তেকাল করলে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী।
যেটা কোরআন,হাদিস,চার মাযহাবসহ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এজন্য মুতাজিলা গ্রুপকে উম্মতে মুসলিমার থেকে বিচ্ছিন্নগ্রুপ হিসেবে গণনা করা হয়।
মু’তাজিলা সম্প্রদায়ের কোন্ কোন্ আকীদার সাথে (QRF) সম্পর্ক যুক্ত?
এক.
কবিরা গুনাহ করলে মুমিন কি চিরস্থায়ী ভাবে জাহান্নামে থাকবে।
মু’তাজিলা মতবাদের সবচে বড় মতবাদ ছিল-
المنزلة بين المنزلتبن
অর্থাৎ কবিরাহ গুনাহকারী ব্যক্তি মুমিনও নয় আবার কাফেরও নয়। তাদের কবিরা গুনাহ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে চিরকাল জাহান্নামে থাকতে হবে।
সে একই মতবাদ বর্তমানের QRF তারা প্রচার করেন।
সম্প্রতি সময়ে এ বিষয়ে তাদের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ মতিয়ার রহমান ৩৬টি ভিডিও আপলোড করেছেন।
যেখানে মিথ্যাচার আর কুরআন-হাদিসের অপব্যখ্যা ও অজ্ঞতায় ভরপুর।
তিনি তার মতবাদটি সত্য প্রমাণ করার জন্য সহীহ মুসলিমের হাদিসকেও নবিজির হাদিস না বলে বক্তব্য দিতে কুন্ঠাবোধ করেননি।
বক্তব্যটি দেখতে তাদের QRF.TV নামক ইউটিউব চ্যানেলের “কবিরা গুনাহ ও জাহান্নাম পর্ব-৩৬” এর শেষ দিকে দেখতে পারেন। এমনকি তাদের লিখিত বই (শাফায়াত দ্বারা কবীরা গুনাহ বা দোযখ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে কি? (গবেষণা সিরিজ-১৬) এর ৫২ থেকে ৬১ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়ে দেখবেন কিভাবে আবু দাউদসহ সহীহ মুসলিমের ৭টি সহীহ হাদিসকে অস্বীকার করা হয়েছে।যা কোন সাধারণ মানুষেরও মানতে কষ্ট হবে।
তাই চলুন দেখা যাক কবিরা গুনাহ কি অমার্জনীয় অপরাধ? নাকি আল্লাহ পাক চাইলে ক্ষমা করে দেবেন?
কি বলে ইসলাম?
শিরক-কুফরের ক্ষমা নেই।
এ ব্যাপারে পরিস্কার ভাবে কুরআন শরীফে বর্ণিত হয়েছে-
إِنَّ ٱللَّهَ لَا یَغۡفِرُ أَن یُشۡرَكَ بِهِ
অর্থাৎ নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা শিরক ক্ষমা করবেন না।
সুরা নিসা-৪৮
অর্থাৎ কেয়ামতের দিন কাফের মুশরিকদেরকে মহান রব কোন ভাবেই ক্ষমা করবেন না।এটা রবের ওয়াদা।
যেমন ইবরাহীম আঃ এর বাবার ব্যাপারে এসেছে-
عن أبي هريرة عن النبي صلي الله عليه وسلم قال يَلْقى إبْراهِيمُ أباهُ فيَقولُ يا رَبِّ إنَّكَ وعَدْتَنِي أنْ لا تُخْزِيَنِي يَومَ يُبْعَثُونَ فيَقولُ اللَّهُ إنِّي حَرَّمْتُ الجَنَّةَ على الكافِرين.
অর্থাত হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবি সঃ বলেছেন (কেয়ামতের দিন) ইবরাহীম আঃ তাঁর বাবা (আযরের) সাথে দেখা করবেন। অতঃপর আল্লাহ তা’য়ালাকে বলবেন হে আল্লাহ! আপনি কি আমার সাথে ওয়াদা করেননি যে, আমাকে কেয়ামতের দিন অপমানিত করবেন না? (অর্থাত বাবাকে আসামী করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার মত অপমান আমাকে করবেন না।)তখন আল্লাহ তা’য়ালা বলবেন আমি কাফেরদের জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছি।
সূত্রঃ বুখারী হাদিস-৪৭৬৯
উপরোক্ত আয়াত এবং হাদিস দুটি থেকে জানা গেল কুফর আর শিরক নিয়ে যারা কেয়ামতে উঠবে,সেই কাফের এবং মুশরিকের নাজাত পাওয়ার কোন রাস্তা অবশিষ্ট নেই।
কিন্তু কুফরী এবং শিরকী গুনাহ ব্যাতিত যত গুনাহ রয়েছে আল্লাহ তা’য়ালা ইচ্ছা করলে মাফ করবেন।
যেমনটি পবিত্র কুরআনে রয়েছে-
وَیَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَ ٰلِكَ لِمَن یَشَاۤءُۚ
অর্থাৎ আর শিরক ব্যতিত যত গুনাহ আছে যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেবেন।
সুরা নিসা-৪৮
বরং যদি কোন ঈমানদার অনুপরিমান নেকির কাজও করেন,তাহলে সেটা নষ্ট করা তো দূরের কথা বরং সেটা দ্বিগুন করে দেবেন।
যেমনটি কুরআন শরিফে রয়েছে-
إِنَّ اللَّهَ لا يَظْلِمُ مِثْقالَ ذَرَّةٍ وَإِنْ تَكُ حَسَنَةً يُضاعِفْها وَيُؤْتِ مِنْ لَدُنْهُ أَجْرًا عَظِيمًا
নিঃসন্দেহে আল্লাহ অণু পরিমাণও জুলুম করেন না এবং অণু পরিমাণ পূণ্যকার্য হলেও তিনি তা দ্বিগুণ করে দেন এবং আল্লাহ তার কাছ থেকে মহাপুরস্কার দান করে থাকেন।
নিসা আয়াত-৪০ঃ
পাঠক! উপরোক্ত আয়াত এবং হাদিস থেকে ৩টি জিনিষ বুঝতে পারলাম।
১. কাফের মুশরিকের কোন ক্ষমা কেয়ামতে হবে না।
২.ঈমানদারদের ছোট বড় এমন কি কবিরা গুনাহও আল্লাহর ইচ্ছা হলে ক্ষমা করে দেবেন।
৩. ঈমানদারদের কোন নেক নষ্ট হবে না বরং দ্বিগুন হবে।
অতএব কাফের মুশরিক তো শুরু থেকেই চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে। কারণ তাদের কোন নেক আমলই নেই বরং শিরক কুফরের মত গুনাহ রয়েছে।পক্ষান্তরে যাদের ঈমান রয়েছে কিন্তু গুনাহও রয়েছে তাদের আল্লাহ চাইলে ক্ষমাও করতে পারেন আবার শাস্তিও দিতে পারেন? কিন্তু কোন মুসলিম চিরকার জাহান্নামে থাকবে না।
এ ব্যাপারে সহীহ মুসলিমসহ বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে অসংখ্য হাদিস রয়েছে। কয়েকটি হাদিস এখানে তুলে ধরছি-
হাদিস-১
عن أبي سعيد الخدري قُلْنَا يا رَسولَ اللَّهِ هلْ نَرَى رَبَّنَا يَومَ القِيَامَةِ قالَ هلْ تُضَارُونَ في رُؤْيَةِ الشَّمْسِ والقَمَرِ إذَا كَانَتْ صَحْوًا قُلْنَا لَا قالَ فإنَّكُمْ لا تُضَارُونَ في رُؤْيَةِ رَبِّكُمْ يَومَئذٍ إلَّا كما تُضَارُونَ في رُؤْيَتِهِما ثُمَّ قالَ يُنَادِي مُنَادٍ لِيَذْهَبْ كُلُّ قَوْمٍ إلى ما كَانُوا يَعْبُدُونَ فَيَذْهَبُ أصْحَابُ الصَّلِيبِ مع صَلِيبِهِمْ وأَصْحَابُ الأوْثَانِ مع أوْثَانِهِمْ وأَصْحَابُ كُلِّ آلِهَةٍ مع آلِهَتِهِمْ حتَّى يَبْقَى مَن كانَ يَعْبُدُ اللَّهَ مِن بَرٍّ أوْ فَاجِرٍ وغُبَّرَاتٌ مِن أهْلِ الكِتَابِ ثُمَّ يُؤْتَى بجَهَنَّمَ تُعْرَضُ كَأنَّهَا سَرَابٌ فيُقَالُ لِلْيَهُودِ ما كُنْتُمْ تَعْبُدُونَ قالوا كُنَّا نَعْبُدُ عُزَيْرَ ابْنَ اللَّهِ فيُقَالُ كَذَبْتُمْ لَمْ يَكُنْ لِلَّهِ صَاحِبَةٌ ولَا ولَدٌ فَما تُرِيدُونَ قالوا نُرِيدُ أنْ تَسْقِيَنَا فيُقَالُ اشْرَبُوا فَيَتَسَاقَطُونَ في جَهَنَّمَ ثُمَّ يُقَالُ لِلنَّصَارَى ما كُنْتُمْ تَعْبُدُونَ فيَقولونَ كُنَّا نَعْبُدُ المَسِيحَ ابْنَ اللَّهِ فيُقَالُ كَذَبْتُمْ لَمْ يَكُنْ لِلَّهِ صَاحِبَةٌ ولَا ولَدٌ فَما تُرِيدُونَ فيَقولونَ نُرِيدُ أنْ تَسْقِيَنَا فيُقَالُ اشْرَبُوا فَيَتَسَاقَطُونَ في جَهَنَّمَ، حتَّى يَبْقَى مَن كانَ يَعْبُدُ اللَّهَ مِن بَرٍّ أوْ فَاجِرٍ فيُقَالُ لهمْ ما يَحْبِسُكُمْ وقدْ ذَهَبَ النَّاسُ فيَقولونَ فَارَقْنَاهُمْ ونَحْنُ أحْوَجُ مِنَّا إلَيْهِ اليَومَ وإنَّا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُنَادِي لِيَلْحَقْ كُلُّ قَوْمٍ بما كَانُوا يَعْبُدُونَ وإنَّما نَنْتَظِرُ رَبَّنَا قالَ فَيَأْتِيهِمُ الجَبَّارُ في صُورَةٍ غيرِ صُورَتِهِ الَّتي رَأَوْهُ فِيهَا أوَّلَ مَرَّةٍ فيَقولُ أنَا رَبُّكُمْ فيَقولونَ أنْتَ رَبُّنَا فلا يُكَلِّمُهُ إلَّا الأنْبِيَاءُ فيَقولُ هلْ بيْنَكُمْ وبيْنَهُ آيَةٌ تَعْرِفُونَهُ فيَقولونَ السَّاقُ فَيَكْشِفُ عن سَاقِهِ فَيَسْجُدُ له كُلُّ مُؤْمِنٍ ويَبْقَى مَن كانَ يَسْجُدُ لِلَّهِ رِيَاءً وسُمْعَةً فَيَذْهَبُ كَيْما يَسْجُدَ فَيَعُودُ ظَهْرُهُ طَبَقًا واحِدًا ثُمَّ يُؤْتَى بالجَسْرِ فيُجْعَلُ بيْنَ ظَهْرَيْ جَهَنَّمَ قُلْنَا يا رَسولَ اللَّهِ وما الجَسْرُ قالَ مَدْحَضَةٌ مَزِلَّةٌ عليه خَطَاطِيفُ وكَلَالِيبُ وحَسَكَةٌ مُفَلْطَحَةٌ لَهَا شَوْكَةٌ عُقَيْفَاءُ تَكُونُ بنَجْدٍ يُقَالُ لَهَا السَّعْدَانُ المُؤْمِنُ عَلَيْهَا كَالطَّرْفِ وكَالْبَرْقِ وكَالرِّيحِ وكَأَجَاوِيدِ الخَيْلِ والرِّكَابِ فَنَاجٍ مُسَلَّمٌ ونَاجٍ مَخْدُوشٌ ومَكْدُوسٌ في نَارِ جَهَنَّمَ حتَّى يَمُرَّ آخِرُهُمْ يُسْحَبُ سَحْبًا فَما أنتُمْ بأَشَدَّ لي مُنَاشَدَةً في الحَقِّ قدْ تَبَيَّنَ لَكُمْ مِنَ المُؤْمِنِ يَومَئذٍ لِلْجَبَّارِ وإذَا رَأَوْا أنَّهُمْ قدْ نَجَوْا في إخْوَانِهِمْ يقولونَ رَبَّنَا إخْوَانُنَا كَانُوا يُصَلُّونَ معنَا ويَصُومُونَ معنَا ويَعْمَلُونَ معنَا فيَقولُ اللَّهُ تَعَالَى اذْهَبُوا فمَن وجَدْتُمْ في قَلْبِهِ مِثْقالَ دِينَارٍ مِن إيمَانٍ فأخْرِجُوهُ ويُحَرِّمُ اللَّهُ صُوَرَهُمْ علَى النَّارِ فَيَأْتُونَهُمْ وبَعْضُهُمْ قدْ غَابَ في النَّارِ إلى قَدَمِهِ وإلَى أنْصَافِ سَاقَيْهِ فيُخْرِجُونَ مَن عَرَفُوا ثُمَّ يَعُودُونَ فيَقولُ اذْهَبُوا فمَن وجَدْتُمْ في قَلْبِهِ مِثْقالَ نِصْفِ دِينَارٍ فأخْرِجُوهُ فيُخْرِجُونَ مَن عَرَفُوا ثُمَّ يَعُودُونَ فيَقولُ اذْهَبُوا فمَن وجَدْتُمْ في قَلْبِهِ مِثْقالَ ذَرَّةٍ مِن إيمَانٍ فأخْرِجُوهُ فيُخْرِجُونَ مَن عَرَفُوا قالَ أبو سَعِيدٍ فإنْ لَمْ تُصَدِّقُونِي فَاقْرَؤُوا “إنَّ اللَّهَ لا يَظْلِمُ مِثْقالَ ذَرَّةٍ وإنْ تَكُ حَسَنَةً يُضَاعِفْهَا” [النساء: ٤٠] فَيَشْفَعُ النَّبِيُّونَ والمَلَائِكَةُ والمُؤْمِنُونَ فيَقولُ الجَبَّارُ بَقِيَتْ شَفَاعَتِي فَيَقْبِضُ قَبْضَةً مِنَ النَّارِ فيُخْرِجُ أقْوَامًا قَدِ امْتُحِشُوا فيُلْقَوْنَ في نَهَرٍ بأَفْوَاهِ الجَنَّةِ يُقَالُ له مَاءُ الحَيَاةِ فَيَنْبُتُونَ في حَافَتَيْهِ كما تَنْبُتُ الحِبَّةُ في حَمِيلِ السَّيْلِ قدْ رَأَيْتُمُوهَا إلى جَانِبِ الصَّخْرَةِ وإلَى جَانِبِ الشَّجَرَةِ فَما كانَ إلى الشَّمْسِ منها كانَ أخْضَرَ وما كانَ منها إلى الظِّلِّ كانَ أبْيَضَ فَيَخْرُجُونَ كَأنَّهُمُ اللُّؤْلُؤُ فيُجْعَلُ في رِقَابِهِمُ الخَوَاتِيمُ فَيَدْخُلُونَ الجَنَّةَ فيَقولُ أهْلُ الجَنَّةِ هَؤُلَاءِ عُتَقَاءُ الرَّحْمَنِ أدْخَلَهُمُ الجَنَّةَ بغيرِ عَمَلٍ عَمِلُوهُ ولَا خَيْرٍ قَدَّمُوهُ فيُقَالُ لهمْ لَكُمْ ما رَأَيْتُمْ ومِثْلَهُ معهُ
অর্থাৎ আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের রবকে দেখব? তিনি বলেন: “তোমরা কি সূর্য ও চাঁদ দেখায় সন্দেহ কর যখন আসমান পরিষ্কার থাকে?”, আমরা বললাম: না, তিনি বললেন: “নিশ্চয় সেদিন তোমরা তোমাদের রবকে দেখায় সন্দেহ করবে না, যেমন চাঁদ-সূর্য উভয়কে দেখায় সন্দেহ কর না”। অতঃপর বললেন: “একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে: প্রত্যেক সম্প্রদায় যেন তার নিকট যায়, যার তারা ইবাদত করত- ক্রুসের অনুসারীরা তাদের ক্রুসের সাথে যাবে, মূর্তিপূজকরা তাদের মূর্তির সাথে যাবে এবং প্রত্যেক মাবুদের ইবাদতকারীরা তাদের মাবুদের সাথে যাবে। অবশেষে আল্লাহকে ইবাদতকারী নেককার অথবা বদকার লোকেরা অবশিষ্ট থাকবে এবং কতক কিতাবি, অতঃপর জাহান্নাম হাজির করা হবে যেন তা মরীচিকা। অতঃপর ইয়াহূদীদের বলা হবে: তোমরা কার ইবাদত করতে? তারা বলবে: আমরা আল্লাহর ছেলে উযাইর এর ইবাদত করতাম, অতঃপর তাদেরকে বলা হবে: তোমরা মিথ্যা বলেছ, আল্লাহর কোনো স্ত্রী ও সন্তান নেই, তোমরা কি চাও? তারা বলবে: আমরা চাই আমাদেরকে পানি পান করান, বলা হবে: তোমরা পান কর, ফলে তারা জাহান্নামে ছিটকে পড়বে। অতঃপর খৃস্টানদের বলা হবে: তোমরা কার ইবাদত করতে? তারা বলবে: আমরা আল্লাহর ছেলে ঈসার ইবাদত করতাম, বলা হবে: তোমরা মিথ্যা বলেছ, আল্লাহর কোনো স্ত্রী ও সন্তান নেই, তোমরা কি চাও? তারা বলবে: আমরা চাই আমাদের পানি পান করান। বলা হবে: পান কর, ফলে তারা জাহান্নামে ছিটকে পড়বে, অবশেষে আল্লাহকে ইবাদতকারী নেককার ও বদকার অবশিষ্ট থাকবে, তাদেরকে বলা হবে: কে তোমাদেরকে আটকে রেখেছে অথচ লোকেরা চলে গেছে? তারা বলবে: আমরা তাদেরকে (দুনিয়াতে) ত্যাগ করেছি, আজ আমরা তার (আমাদের রবের) বেশি মুখাপেক্ষী, আমরা এক ঘোষণাকারীকে ঘোষণা করতে শুনেছি: প্রত্যেক কওম যেন তার সাথেই মিলিত হয়, যার তারা ইবাদত করত, তাই আমরা আমাদের রবের অপেক্ষা করছি। তিনি বলেন: অতঃপর আল্লাহ তাদের নিকট আসবেন ভিন্ন সুরুতে, যে সুরুতে প্রথমবার তারা তাকে দেখেনি। তিনি বলবেন: আমি তোমাদের রব। তারা বলবে: আপনি আমাদের রব, নবীগণ ব্যতীত তার সাথে কেউ কথা বলবে না। তিনি বলবেন: তোমাদের ও তার মাঝে কোনো নিদর্শন আছে যা তোমরা চিন? তারা বলবে: পায়ের গোছা, ফলে তিনি তার গোছা উন্মুক্ত করবেন, প্রত্যেক মুমিন তাকে সাজদাহ করবে, তবে যে লোকদেখানো কিংবা লোকদের শোনানোর জন্য সাজদাহ করত সে অবশিষ্ট থাকবে। সে সাজদাহ করতে চাইবে কিন্তু তার পিঠ উল্টো সোজা খাড়া হয়ে যাবে। অতঃপর পুল আনা হবে এবং তা জাহান্নামের ওপর রাখা হবে। আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল পুল কি? তিনি বললেন: পদস্খলনের স্থান, তার ওপর রয়েছে ছো মারা হুক, পেরেক, বিশাল বড়শি যার রয়েছে বড় কাঁটা যেরূপ নজদ এলাকায় হয়, যা সা‘দান বলা হয়। তার ওপর দিয়ে মুমিনগণ চোখের পলক, বিদ্যুৎ, বাতাস, শক্তিশালী ঘোড়া ও পায়দল চলার ন্যায় পার হবে, কেউ নিরাপদে নাজাত পাবে, কেউ ক্ষতবিক্ষত হয়ে নাজাত পাবে এবং কেউ জাহান্নামে নিক্ষেপ হবে, অবশেষে যখন তাদের সর্বশেষ ব্যক্তি অতিক্রম করবে তখন তাকে টেনে হিছড়ে পার করা হবে। আর কোনো সত্য বিষয়ে তোমরা আমার নিকট এতটা পীড়াপীড়ি কর না, (তোমাদের নিকট যা স্পষ্ট হয়েছে) মুমিনগণ সেদিন আল্লাহর নিকট যতটা পীড়াপীড়ি করবে, যখন দেখবে যে তাদের ভাইদের মধ্যে শুধু তারাই নাজাত পেয়েছে, তারা বলবে: হে আমাদের রব, আমাদের ভাইয়েরা আমাদের সাথে সালাত আদায় করত, আমাদের সাথে সিয়াম পালন করত এবং আমাদের সাথে আমল করত। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: যাও যার অন্তরে তোমরা দিনার পরিমাণ ঈমান দেখ তাকে বের কর। আল্লাহ তাদের আকৃতিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিবেন। তারা তাদের নিকট আসবে, তাদের কেউ পা পর্যন্ত অদৃশ্য হয়ে গেছে, কেউ গোছার অর্ধেক পর্যন্ত, তারা যাদেরকে চিনবে বের করে আনবে। অতঃপর ফিরে আসবে, আল্লাহ বলবেন: যাও, যার অন্তরে তোমরা অর্ধেক দিনার পরিমাণ ঈমান দেখ তাকে বের কর, তারা যাকে চিনবে বের করে আনবে। অতঃপর ফিরে আসবে, আল্লাহ বলবেন: যাও যার অন্তরে তোমরা অণু পরিমাণ ঈমান দেখ তাকে বের কর, ফলে তারা যাকে চিনবে বের করবে”। আবু সাঈদ বলেন: যদি তোমরা আমাকে সত্য জ্ঞান না কর, তাহলে পড়।
ٱللَّهَ لَا يَظۡلِمُ مِثۡقَالَ ذَرَّةٖۖ وَإِن تَكُ حَسَنَةٗ يُضَٰعِفۡهَا
“নিশ্চয় আল্লাহ অণু পরিমাণও যুলুম করেন না। আর যদি সেটি ভালো কাজ হয়, তিনি তাকে দ্বিগুণ করে দেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে মহা প্রতিদান প্রদান করেন”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪০] অতঃপর নবী, ফিরিশতা ও মুমিনগণ সুপারিশ করবেন। আল্লাহ বলবেন: আমার সুপারিশ বাকি রয়েছে, অতঃপর জাহান্নাম থেকে এক মুষ্টি গ্রহণ করবেন, ফলে এমন লোক বের করবেন যারা জ্বলে গিয়েছে, তাদেরকে জান্নাতের দরজার নিকট অবস্থিত নহরে নিক্ষেপ করা হবে, যাকে বলা হয় সঞ্জীবনী পানি, ফলে তার দু’পাশে গজিয়ে উঠবে যেমন প্রবাহিত পানির উর্বর মাটিতে শস্য গজিয়ে উঠে, যা তোমরা দেখেছ পাথর ও গাছের পাশে, তার থেকে যা সূর্যের দিকে তা সবুজ এবং যা ছায়ার আড়ালে তা সাদা, অতঃপর তারা মুক্তোর ন্যায় বের হবে। অতঃপর তাদের গর্দানে সীলমোহর দয়া হবে, অতঃপর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, জান্নাতীরা বলবে: তারা হচ্ছে রহমানের নাজাতপ্রাপ্ত, তাদেরকে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন কোনো আমলের বিনিময়ে নয়, যা তারা করেছে, বা কোনো কল্যাণের বিনিময়ে নয় যা তারা অগ্রে প্রেরণ করেছে। অতঃপর তাদেরকে বলা হবে: তোমাদের জন্য তোমরা যা দেখেছ তা এবং তার সাথে তার অনুরূপ”। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম) হাদীসটি সহীহ।
সূত্র: বুখারী হাদিস-৭৪৩৯
সহিহ ইবনে হিব্বান-৭৩৭৭
একটি সংশয় ও সমাধান :
তবে প্রশ্ন হলো কখন উক্ত কবিরাহ গুনাহকারী ব্যক্তিও জান্নাতে প্রবেশ করবে?
উত্তর: ক. যদি শুরুতেই আল্লাহ তায়ালা এহসান করে মাফ করে দেন, তাহলে শুরুতেই জান্নাতে যাবে।
খ. আর যদি আল্লাহ ইনসাফ করেন, তাহলে উপযুক্ত শাস্তি ভোগ করে তারপর জান্নাতে যাবেন।
হাদিসের মূল কথা হলো কালিমাওয়ালা মুমিন জান্নাতে একদিন না একদিন যাবেনই।
আরেকটি একটি সংশয় ও সমাধান-
একটি হাদিসে এসেছে, যার অন্তরে অনু পরিমান ঈমান থাকবে সে জাহান্নামে যাবে না।
عن عبدالله بن مسعود عن النبي صلي الله عليه وسلم قال لا يدخُلُ النّارَ مَن كان في قلبِه مثقالُ ذرَّةٍ مِن إيمانٍ
ولا يدخُلُ الجنَّةَ مَن كان في قلبِه مثقالُ ذرَّةٍ مِن كِبْر
অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ নবি সঃ থেকে বর্ণনা করেন যে,যার অন্তরে অনু পরিমান ঈমান আছে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। আর যার অন্তরে অনুপরিমান অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
সূত্রঃসহিহ ইবনে হিব্বান হাদিস-৫৪৬৬
আত-তাওহীদ খঃ২ পৃঃ৮৯৭
উক্ত হাদিস থেকে তো বোঝা যায় ঈমান থাকলে জাহান্নামেই যাবে না।
সমাধান:
আর “অনুপরিমান ঈমান থাকলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না” এর অর্থ হলো জাহান্নামে চিরদিনের জন্য প্রবেশ করবে না।
যেটা অন্য হাদিসে স্পষ্ট করে বিশ্বনবি সঃ বুঝিয়েছেন-
عَنْ أَنَسٍ عن النبي صلي الله عليه وسلم قال يَخْرُجُ مِنَ النّارِ مَن قالَ لا إلَهَ إلّا اللَّهُ، وفي قَلْبِهِ وزْنُ شَعِيرَةٍ مِن خَيْرٍ، ويَخْرُجُ مِنَ النّارِ مَن قالَ لا إلَهَ إلّا اللَّهُ، وفي قَلْبِهِ وزْنُ بُرَّةٍ مِن خَيْرٍ، ويَخْرُجُ مِنَ النّارِ مَن قالَ لا إلَهَ إلّا اللَّهُ، وفي قَلْبِهِ وزْنُ ذَرَّةٍ مِن خَيْرٍ
অর্থাৎ হযরত আনাস রাঃ নবি সঃ থেকে বর্ণনা করেন যে, যে ব্যক্তি লা-ইলাহা ইল্লাহ বলেছে এবং অন্তরে যব পরিমান নেক থাকবে এবং সেও বের হবে যে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে এবং আমল নামায় গম পরিমান নেক রয়েছে এবং সেও বের হবে যে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে এবং অন্তরে অনুপরিমান নেক রয়েছে।
সূত্রঃ বুখারী হাদিস-৪৪ মুসলিম-১৯৩
সুতরাং উপরোল্লিখিত আয়াত এবং হাদিস সমূহ দ্বারা এটাই প্রমাণ হয় যে,কালিমা ওয়ালা মুমিন যতবড়ই গুনাহ করুক না কেন ঈমানের খাতিরে একদিন না একদিন জান্নাতে প্রবেশ করবেই।
হয়তো রবের দয়ায় শুরুতেই অথবা রবের ইনসাফে পর্যাপ্ত পরিমান শাস্তি ভোগ করানোর পর জান্নাতে দেবেন। যেটা অন্য একটি হাদিস দ্বারা স্পষ্ট হয়,
عن أبي سعيد الخدري عن النبي صلي الله عليه وسلم قال يدخُلُ أهلُ الجنَّةِ الجنَّةَ ويدخُلُ أهلُ النّارِ النّارَ ثمَّ يقولُ جلَّ وعلا: انظُروا مَن وجَدْتم في قلبِه مثقالَ حَبَّةٍ مِن خردلٍ مِن الإيمانِ فأخرِجوه
অর্থাৎ হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন নবি সঃ বলেছেন-জান্নাতীরা জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করার পর আল্লাহ তা’য়ালা বলবেন- দেখো। যার অন্তরে অনু পরিমাণ ঈমান পাবে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনো।
সূত্র: সহিহ ইবনে হিব্বান হাদিস-২২২
প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আলোচনায় কি প্রতিয়মান হয় যে, গুনাহগার মুমিন চিরস্থায়ী জাহান্নামে থাকবেন? কখনই না।
সুতরাং এরপরও যদি কেউ দাবী করেন যে, গুনাহগার মুমিন চিরস্থায়ী জাহান্নামী তাকে কি বলা উচিৎ সেটা আপনাদের কাছে সোপর্দ।
এবার চলুন দেখি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত কি?
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা:
কবিরা গুনাহকারী ব্যাক্তি যদি তওবা না করে মারা যায় তাহলে জাহান্নামে চিরস্থায়ী ভাবে থাকবে না।
তবে গুনাহের কারণে তাদের ঈমান কমে যাবে বটে।
وأهل السنة يقولون إنهم مؤمنون ناقصوا الإيمان قد نقص إيمانهم بقدر ما ارتكبوا من الكبائر
অর্থাৎ আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মতবাদ হলো কবিরা গুনাহকারী ব্যক্তি (কাফের নয় বরং) তারা মুমিন। কিন্তু গুনাহ পরিমান তাদেরর ঈমান কমে যায়।
সূত্র: আল ইনতেছার পৃ:৬৬৬ আল মাসায়েলুল ই’তেযালিয়াহ পৃ:২৪৫
সুতরাং গুনাহগার মুমিনদের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের সিদ্ধান্ত হলো-
ولا نقول إن المؤمن لا تضره الذنوب ولا نقول إنه لا يدخل النار ولا نقول إنه يخلد فيها وإن كان فاسقا بعد أن يخرج من الدنيا مؤمنا
অর্থাৎ আমরা বলি না যে, গুনাহ মুমিনের কোন ক্ষতি করে না। আবার এটাও বলি না যে,সে জাহান্নামে যাবে না। আবার এটাও বলি না যে, মুমিন কবিরা গুনাহ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলে জাহান্নামে চিরকাল থাকবে।
সূত্র: আল ফিকহুল আকবার পৃ:৫
শরহু কিতাবিল ফিকহীল আকবার পৃ:১২৫
প্রিয় পাঠক! আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের এ মতবাদ সম্পূর্ন ভাবে কুরআন-হাদিস সম্মত।অর্থাৎ কবিরা গুনাহ করলে ঈমান কমে যায়, এ অবস্থায় তওবা ব্যতিত মারা গেলে জাহান্নামে চিরস্থায়ী ভাবে থাকতে হবে না। একদিন না একদিন জান্নাতে যাবেই। অতএব পুরো বিশ্বব্যাপী সমস্ত মুসলিমদের সিদ্ধান্তই শীরোধার্য।
রচনায়ঃ মূফতী রিজওয়ান রফিকী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ