প্রশ্ন: যেসকল ধর্মের ঐশী গ্রন্থ আছে তারা কেনো ইসলাম গ্রহন করে কোরআন মানতে হবে? নিজ নিজ ধর্ম ও নিজ ধর্মের ঐশী গ্রন্থ মেনে চলাই যথেষ্ট নয় কি?
উত্তরঃ আসলে আজকের প্রশ্নটি কোন নাস্তিকের প্রশ্ন নয়, এটি একজন স্বনাতন ধর্মের ছোট ভাইয়ের নিকট ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার পর সে এই প্রশ্নটি উপস্থাপন করেছে।
সে বলে যে বেধ ও পুরাণ তো ইশ্বরেরই বানী, তাইলে আমি এটা মেনে হিন্দু থাকলেই কি আমার জন্য যথেষ্ঠ নয়? আমি মুসলমান হয়ে কোরআন মানার দরকার কি? কোরআন আর পুরান উভয়ই তো ইশ্বরের বানী।
সুন্দর প্রশ্ন করেছে ঐ হিন্দু ভাইটি। এখন জবাব দেওয়ার পালা। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করার জন্য, সৃষ্টি করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন শুধু পরীক্ষা করার জন্য কে আল্লাহর অনুগত্য করে আর কে করে না তা দেখার জন্য, আর এই আনুগত্যের পরিমানের উপর মানুষকে আখিরাতে পুরস্কৃত করবেন। মানুষ সৃষ্টি কর্তার পথ যাতে ভুলে না যায় দুনিয়ায় যুগে যুগে বহু নবী ও রাসূল প্রেরন করেছেন কিতাব সহ আবার কিতাব ছাড়াও।
আল্লাহ তা'লা বলেই দিয়েছেন যে দুনিয়ার এমন কোন জাতি নাই যাদের নিকট আমি আমার প্রতিনিধির মাধ্যমে হেদায়েতের বানী প্রেরন করি নি, তবে তার কিছু প্রকাশ করেছি এবং কিছু প্রকাশ করি নি তোমাদের কল্যানের জন্য। ইতিহাস হতে জানা যায় যে আল্লাহ তা'য়ালা ১০৪ খানা কিতাব দুনিয়ায় নাজিল করেছেন মানুষের হেূায়েতের জন্য, যেগুলোর চারটি বড় কিতাবের নাম আমরা জানতে পেরেছি, তাওরাত, যবুর, ইঞ্জিন ও সর্বশেষ কোরআন। বাকি ১০০টি কিতাবের নাম আমরা আজও জানতে পারি নি।
তাইলে বুঝা গেলো দুনিয়ায় কোরআন ছাড়া আরো ১০৩টি কিতাব আল্লাহ বিভিন্ন জাতির নিকট প্রেরন করেছেন নবী ও রাসূলদের মাধ্যমে।
এখন প্রশ্ন হলো আরো ১০৩ টি কিতাবও আল্লাহর বানী, আল কোরআনও আল্লাহর বানী, তাইলে বাকী কিতাব যারা মানে তারা কি ভুল? তাদের নিকট কিতাব থাকার পরও কেনো কোরআন মানতে হবে?
এক কথায় উত্তর দিতে গেলে আমি বলব আগের কিতাব গুলি ঐশী বানী হলেও প্রত্যেকটা কিতাব বিলুপ্ত হয়ে গেছে, কোরআন বাদে বাকী যেগুলো নামে মাত্র অস্তিত্ব আছে তা সম্পূর্ণ বিকৃত। যাবুর কিতাব দাউদ আ: এর উপর নাজিল হয়েছিলো বলে আমরা জানি কিন্তু এর ছিটে-ফোঁটাও কোথাও আছে বলে কারো জানা নাই। তাওরাত নাজিল হয়েছিলো মূসা আ: এর উপর যা কাঠের তক্তার উপর খোূাই করা ছিলো, এই কাঠের তক্তার কোন অস্তিত্ব পৃথিবীর কোথাও নাই। তারা এখন তালমূদ নামে তাওরাতের নানান ভার্সন তৈরী করেছে যে ভার্সন গুলোর একটির সাথে একটির কোন মিল নাই, তাইলে আপনি এই তালমূদের কোন অংশটিকে আল্লাহর বানী বলবেন?
ইঞ্জিল কিতাব নাজিল হয়েছিলো ২০০০ বছর আগে ইসা আ: এর উপর। বর্তমানে এই কিতাবও অস্তিত্বহীন। এই কিতাব ইসা আ: আকাশে গমনের কয়েকশত বছর পর বিকৃত অবস্থায় সংকলন করেন তাঁর অনুসারীরা যার এখন চার চারটি ভর্সন আছে। এই ভার্সন গুলোরও একটার সাথে একটার মিল নাই এবং এগুলোও এক ভার্সন হতে আরেক ভার্সনের রচনার সময়ের পার্থক্য শত বছরের বেশী। এখানেও আপনি কোন ভার্সনটাকে আল্লাহর বানী মনে করবেন?
এখন আসেন বেদ আর পূরানের কথায়। মাত্র ২ হাজার বছর আগের ইঞ্জিল এখন বাইবেল হয়ে চারটি ভার্সনে পরিনত হয়েছে। তাও এই সর্ব শেষ ভার্সন হয়েছে ৫০০ বছর আগে। আর আপনাদের বপদ ও পুরানের ইতিহাস হলো ৬ থেকে ৮ হাজার বছরের পুরোনো কমপক্ষে বা তারও বেশি। এখন আপনিই বলেন আপনাদের কিতাব বা গ্রন্থ গুলো কি বিকৃত হয়েছে বলে মনে হয় না? যদিও বেদ-পুরাণ ইশ্বরের বানী মর্মে কোন অকাট্য প্রমান এখনোবধি আমার কাছে প্রমান পৌঁছে নি তবুও তর্কের খাতিরে যদি ধরেই নেই পুরান ইশ্বরের বানী, পুরানেরও তো ভার্সন আছে, ১৮ তম খন্ড খুলে দেখুন এই পুরা সংকলনকারী যাকে বেধ অব বেশ বলা হয় তিনি কি আফসোস করেছেন? তিনি পুরানের শেষ খন্ডে আফসোস করে বলেছেন আমি ১৮ খানা পুরান রচনা করে ইশ্বরকে যে নির্দ্দিষ্ট জায়গায় বেঁধে দিলাম তা কি আমার অপরাধ হয়েছে? আমি তো জানি না। তিনি নিজেই এখানে এই গ্রন্থ সম্পর্কে সন্দিহান ছিলেন।
আল্লাহ কোরআনে বলেন,
সূরা আল-বাক্বারাহ, আয়াত: ১১৮
وَ قَالَ الَّذِیْنَ لَا یَعْلَمُوْنَ لَوْ لَا یُكَلِّمُنَا اللّٰهُ اَوْ تَاْتِیْنَاۤ اٰیَةٌ١ؕ كَذٰلِكَ قَالَ الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ مِّثْلَ قَوْلِهِمْ١ؕ تَشَابَهَتْ قُلُوْبُهُمْ١ؕ قَدْ بَیَّنَّا الْاٰیٰتِ لِقَوْمٍ یُّوْقِنُوْنَ
অজ্ঞ লোকেরা বলে, আল্লাহ নিজে আমাদের সাথে কথা বলেন না কেন অথবা কোন নিশানী আমাদের কাছে আসে না কেন? এদের আগের লোকেরাও এমনি ধারা কথা বলতো। এদের সবার (আগের ও পরের পথভ্রষ্টদের) মানসিকতা একই। দৃঢ় বিশ্বাসীদের জন্য আমরা নিশানীসমূহ সুস্পষ্ট করে দিয়েছি।
আল্লাহর কিতাব সুস্পষ্টভাবে বর্ননা করেন, আল্লাহর কিতাবে কোন সন্দেহ থাকে না। আল্লাহ সূরা বাক্বারায় ২-৩ নং আয়াতে বলেন এই কিতাব নি:সন্দেহ বিশ্বাসীদের জন্য।
এবার আসুন আপনাদের ধর্ম গ্রন্থ বেদের বেলায়, এখানে বেদের চারটি ভার্সন আলাদা আলাদা চারজন ঋষী চার যুগে সংকলন করেছে, এখন আপনি কোন ভার্সনটি ইশ্বরের সরাসরি বানী বলে দাবি করতে পারবেন?
অতএব, দুনিয়ায় যত ধর্ম গ্রন্থই নাজিল হয়েছিলো একমাত্র কোরআন ব্যতিত সকল কিতাবই বিলিন হয়ে গেছে এবং সম্পূর্ণ বিকৃত হয়ে গেছে এক মাত্র কোরআন ছাড়া। এজন্যই অন্যান্য কিতাব গুলো মানার মানে এই নয় যে সৃষ্টি কর্তার আদেশ মানা, বরং অবিকৃত কোরআন মানার মাধ্যমেই সৃষ্টি কর্তার হুকুম মানা। যদি সৃষ্টি কর্তার ইবাদত করতেই হয় তাইলে কেরআনের দেখানো পথেই করতে হবে, বাকী কিতাব গুলো সম্পূর্ণ বিকৃত, এগুলো ইশ্বরের হুকুম না, মানুষের বানানো।
লেখক:চিকিৎসক, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ