"দ্বীন প্রচারের নামে ওয়ায়েজিনদের ভিক্ষা বৃত্তির টাকায় ধর্ম ব্যবসা নিকৃষ্ট হারাম"
দ্বীন প্রচারের নামে ওয়াজ মাহফিলের আড়ালে ধর্ম ব্যবসা করা ধর্ম ব্যবসায়ীদের গায়ে জ্বালা ধরানো কিছু অপ্রিয় সত্য কথা প্রকাশ করার মাধ্যমে দ্বীন বেচে দুনিয়া হাসিল করা ধর্ম ব্যবসায়ীদের স্বরুপ উন্মোচন করা দরকার। আবার কেউ কেউ ভাববেন না যে আমি ওয়াজ মাহফিলের বিরোধী । নামের বেলায় নবীর ওয়ারিশ আর কামের বেলায় যারা করে ওয়াজের নামে ভিক্ষা বৃত্তির টাকায় ধর্ম ব্যবসা করে তাদের উদ্দেশ্যে বলছি আপনি ও আপনাদের টাকার বিনিময়ে এহেন ওয়াজ মাহফিল, তাফসিরুল কুরআন মাহফিলকে মানুষ দ্বীনের প্রচার নয় বরং ধর্ম ব্যবসা হিসেবেই দেখে থাকি ।
ধর্ম ব্যাবসায়ীরা ওয়াজ মাহফিলের নামে, তাফসিরুল কুরআন মাহফিলের নামে ধান্দার ব্যবসা খুইলা বসছে । নিম্নে ২০,০০০ (বিশ হাজার) টাকা থেকে শুরু করে ৩,০০,০০০ (তিন লক্ষ) টাকা পর্যন্ত তারা একেকজন বক্তা নিয়ে থাকে মানুষকে দ্বীনের কথা বলার নাম করে । এটা কি দ্বীনের প্রচার নাকি ধর্ম ব্যবসা ?
আবার এসকল টাকা আসে অবুঝ শিশুদের রাস্তায় দাড়িয়ে ভিক্ষার মাধ্যমে আর এই টাকায় ওয়ায়েজিনরা করে ফুটানি। একে অন্যকে গালিগালাজ থেকে শুরু করে হেন কোন অশ্রাব্য ভাষা নাই যা বলেন না।
তাদের মতো এইসব তথাকথিত নবীর ওয়ারিশদের একটা ওয়াজ মাহফিলে একজন বক্তার দ্বীনের কথা বলার রেট যদি এই পরিমাণ টাকা হয় তাহলে হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে আমাদের প্রিয় নবী শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রাসূল-পয়গম্বরগণের দ্বীনের কথা বলার রেট ঘন্টা প্রতি কত ছিল ??? ! ! !
পবিত্র কুরআনেই আছেঃ
اتَّبِعُوا مَنْ لاَ يَسْأَلُكُمْ أَجْراً وَهُمْ مُهْتَدُونَ
যার উচ্চারনঃ ইত্তাবি‘ঊ মাল্লা-ইয়াস্য়ালুকুম্ আজরঁও অহুম্ মুহ্তাদূন্
যার অর্থঃ অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত
সূরা ইয়াসিন, সূরা নম্বর ৩৬, আয়াত নম্বর ২১, মক্কী সূরা
টাকা দিলে দ্বীনের কথা বলব আর টাকা না দিলে দ্বীনের কথা বলবনা এটা কি নবীওয়ালা ছিফত ??? সকল নবী-রসূলগণ ছিলেন কর্মজীবি । কিন্তু বর্তমানে সেই নবীদের কথিত ওয়ারিশ দাবীদাররা কেন হলেন ধর্মজীবি ?
পবিত্র কুরআনের সূরা আল বাকারার ১৭৪ (একশ চুয়াত্তর) নম্বর আয়াতে আছে
اِنَّ الَّذِیۡنَ یَکۡتُمُوۡنَ مَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ مِنَ الۡکِتٰبِ وَ یَشۡتَرُوۡنَ بِہٖ ثَمَنًا قَلِیۡلًا ۙ اُولٰٓئِکَ مَا یَاۡکُلُوۡنَ فِیۡ بُطُوۡنِہِمۡ اِلَّا النَّارَ وَ لَا یُکَلِّمُہُمُ اللّٰہُ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ وَ لَا یُزَکِّیۡہِمۡ ۚۖ وَ لَہُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ
যার অর্থঃ কিতাব হতে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, যারা এটা গোপন করে এবং এর বিনিময়ে স্বল্প মূল্য গ্রহণ করে, এরা নিজেদের পেটে একমাত্র আগুন ভক্ষণ করে, ওদের সাথে আল্লাহ ক্বিয়ামাতের দিন কথা বলবেন না এবং ওদেরকে পবিত্রও করবেন না; এবং ওদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ।
ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসার আলেম ওলামাদের বয়ান থেকে যা শুনে এসেছি তাতে দেখা যায় নবী রাসূলগন মানুষের ময়দানে যেমন মহান আল্লাহপাকের দ্বীনের দাওয়াতের মেহনত করে মানুষকে আল্লাহর হুকুম আহকামের দিকে ডেকেছেন তেমনি পাশাপাশি ব্যাক্তিগত জীবনে উনারা কোন না কোন হালাল পেশা অবলম্বন করতেন যেমন পশুপালন (মেষ ভেড়া দুম্বা ইত্যাদি), কৃষিকাজ ইত্যাদি যেটা ওলামায়েকেরাম আরও ভাল বলতে পারবেন । এমনকি হযরত ইউসুফ (আঃ) তো আজিজে মিশর হিসেবে মিশরের বাদশার উজিরের দায়িত্বও পালন করেছেন ! এতদসত্তেও কেউ কি এই কথা বলতে পারবে যে মিশরের বাদশার উজিরের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আল্লাহর নবী হিসেবে নবুয়্যতের দায়িত্ব পালনে উনার কোন ধরনের ঘাটতি হয়েছে ? নবী রাসূলগন যদি কর্ম করে জীবন অতিবাহিত করতে পারেন আবার পাশাপাশি নবুয়তের দায়িত্বও যথাযথভাবে পালন করতে পারেন তবে আমাদের বর্তমান যামানার এইসব তথাকথিত নবীর ওয়ারিশগণেরা কেন তা পারবেননা ? নবী-রাসূলগণকি উম্মতের মাঝে দাওয়াত ইলাল্লাহর কাজ করে বিনিময়ে উম্মতের কাছ থেকে পারিশ্রমিক নিতেন ? দ্বীনের মেহনতের মোড়কে বৎসরের পর বৎসর, যুগের পর যুগ ধরে ধর্মব্যাবসায়ীরা ওয়াজ মাহফিল করার নামে কত কোটি কোটি টাকা যে মানুষের পকেট থেকে হাতিয়ে নিছে তার হিসাব এক আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউ জানেনা !
এখন আসেন নবী-রাসূলগণের ওয়ারিশের দাবিদার তথাকথিত এইসব ধর্ম ব্যাবসায়ীদের কর্মকান্ডের বিপরীতে নবী রাসূল ও পয়গম্বরগণ উনাদের জীবিকা নির্বাহে কি পন্থা অবলম্বন করতেন তা দেখে নেইঃ
ইসলাম ধর্মে রাসুল হলেন আল্লাহর প্রেরিত বার্তাবাহী ব্যক্তিত্ব । রাসূল বলতে তাদেরকেই বোঝানো হয় যারা আল্লাহ্র কাছ থেকে কিতাব বা পুস্তক প্রাপ্ত হয়েছেন । হাদিসসহ অন্যান্য ইসলামী বইয়ে এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবীর কথা বলা হয়েছে । উনাদের মাঝে সকলে কিতাব প্রাপ্ত হননি । যারা কিতাব প্রাপ্ত হয়েছেন তারাই শুধু রাসূলের খেতাব পেয়েছেন । অর্থাৎ সকল রাসূলই নবী কিন্তু সকল নবী রাসূল নন । কোরআন অনুযায়ী, আল্লাহ্ মানবজাতির নিকট বহু নবী রাসুল প্রেরণ করেছেন । আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘প্রতিটি জাতির জন্য পথ-প্রদর্শনকারী রয়েছে।’ (সুরা : আর রাদ, আয়াত : ১৩) অন্যত্র ইরশাদ করেছেন, ‘আমি রাসুল প্রেরণ না করে কাউকে শাস্তি দিই না।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ১৬৫) । সকল নবী-রাসুলের কোনো না কোনো পেশা ছিল, তাঁরা অন্যের ওপর নির্ভরশীল হতেন না । বরং স্বীয় হস্তে অর্জিত জিনিস ভক্ষণ করাকে পছন্দ করতেন । মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)- কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কোন ধরনের উপার্জন উত্তম ও শ্রেষ্ঠ ? তিনি প্রত্যুত্তরে বলেন, ব্যক্তির নিজ হাতে কাজ করা এবং সৎ ব্যবসা। (সুয়ুতি আদদুররুল মানসুর, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ২২০) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হালাল রুজি অর্জন করা ফরজের পর একটি ফরজ ।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম) । হযরত ঈসা (আঃ) এক ব্যক্তিকে অসময়ে ইবাদাতখানায় দেখে প্রশ্ন করলেন, তুমি এখানে বসে ইবাদত করছ, তোমার রিজিকের ব্যবস্থা কে করে? লোকটি বলল, আমার ভাই আমার রিজিকের ব্যবস্থা করে। ঈসা (আঃ) তাকে বলেন, সে তোমার চেয়ে অনেক উত্তম। (হেদায়াতুল মুরশিদিন)। কবির ভাষায়, ‘নবীর শিক্ষা কোরো না ভিক্ষা, মেহনত করো সবে।’ নবী-রাসুলরা হলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব । উনারা স্বহস্তে অর্জিত সম্পদে জীবিকা নির্বাহ করতেন । নিম্নে সংক্ষিপ্ত আকারে এর বিবরণ দেয়া হলোঃ
১) হযরত আদম (আঃ) ছিলেন একজন কৃষক । তিনি চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন । তাঁর ছেলেদের পেশাও ছিল চাষাবাদ। তা ছাড়া তিনি তাঁতের কাজও করতেন। কারো কারো মতে, তাঁর পুত্র হাবিল পশু পালন করতেন। কৃষিকাজের যন্ত্রপাতির নাম আল্লাহ তাআলা তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন । যেমন—আল্লাহর বাণী, ‘আর আল্লাহ আদমকে সব নামের জ্ঞান দান করেছেন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৩১)
২) হযরত শিস (আঃ)ও কৃষক ছিলেন । তাঁর পৌত্র মাহলাইল সর্বপ্রথম গাছ কেটে জ্বালানি কাজে ব্যবহার করেন। তিনি শহর, নগর ও বড় বড় কিল্লা তৈরি করেছেন । তিনি বাবেল শহর প্রতিষ্ঠা করেছেন । (ইবনে কাসির)
৩) হযরত ইদরিস (আঃ)-এর পেশা ছিল কাপড় সেলাই করা। কাপড় সেলাই করে যে অর্থ উপার্জন করতেন, তা দিয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন । ইদরিস শব্দটি দিরাসা শব্দ থেকে নির্গত । তিনি বেশি পরিমাণে সহিফা পাঠ করতেন বলে তাঁকে ইদরিস বলা হয় । পড়াশোনার প্রথা তাঁর সময় থেকে চালু হয় । একদল পণ্ডিত মনে করেন, হিকমত ও জ্যোতির্বিদ্যার জন্ম ইদরিস (আ.)-এর সময়ই হয়েছিল ।
৪) হযরত নুহ (আঃ) ছিলেন কাঠমিস্ত্রি । আল্লাহ তাআলা তাঁকে নৌকা তৈরির কলাকৌশল শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং আল্লাহর নির্দেশে তিনি নৌকা তৈরি করেছিলেন । আল্লাহর বাণী—‘আর তুমি আমার তত্ত্বাবধানে ও আমার ওহি অনুযায়ী নৌকা নির্মাণ করো।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৩৭) তিনি ৩০০ হাত দীর্ঘ, ৫০ হাত প্রস্থ, ৩০ হাত উচ্চতাসম্পন্ন একটি বিশাল নৌকা তৈরি করেন ।
৫) হযরত হুদ (আঃ)-এর জীবনী পাঠান্তে জানা যায় যে তাঁর পেশা ছিল ব্যবসা ও পশু পালন। ব্যবসা ও পশু পালন করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন।
৬) হযরত সালেহ (আঃ)-এর পেশাও ছিল ব্যবসা ও পশু পালন ।
৭) হযরত লুত (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের লোকেরা চাষাবাদের সঙ্গে জড়িত ছিল। এতে প্রতীয়মান হয় যে তিনিও জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করতেন চাষাবাদের মাধ্যমে।
৮) হযরত ইবরাহিম (আঃ)-এর জীবনী পাঠান্তে জানা যায় যে তিনি জীবিকা নির্বাহের জন্য কখনো ব্যবসা, আবার কখনো পশু পালন করতেন ।
৯) হযরত ইসমাইল (আঃ) পশু শিকার করতেন। তিনি ও তাঁর পিতা উভয়ই ছিলেন রাজমিস্ত্রি। পিতা-পুত্র মিলে আল্লাহর ঘর তৈরি করেছিলেন ।
১০) ইয়াকুব (আঃ)-এর পেশা ছিল ব্যবসা, কৃষিকাজ করা ও পশু পালন ।
১১) হযরত ইউসুফ (আঃ) রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেন । তিনি বেতন হিসেবে রাষ্ট্রীয় অর্থ গ্রহণ করতেন । ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার রব! আপনি আমাকে রাষ্ট্রক্ষমতা দান করেছেন।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ১০১)
১২) হযরত শোয়াইব (আঃ)-এর পেশা ছিল পশু পালন ও দুধ বিক্রি । পশু পালন ও দুধ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন । তাঁর কন্যারা চারণভূমিতে পশু চরাতেন ।
১৩) হযরত দাউদ (আঃ) ছিলেন রাজা ও নবী। সহিহ বুখারির ব্যবসা অধ্যায়ে রয়েছে যে দাউদ (আঃ) নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন। তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন, হে আল্লাহ! এমন একটি উপায় আমার জন্য বের করে দিন, যেন আমি নিজ হাতে উপার্জন করতে পারি। অতঃপর তাঁর দোয়া কবুল হয় এবং আল্লাহ তাআলা তাঁকে লোহা দ্বারা বর্ম ও অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করার কৌশল শিক্ষা দেন। শক্ত ও কঠিন লোহা স্পর্শ করলে তা নরম হয়ে যেত। যুদ্ধাস্ত্র, লৌহ বর্ম ও দেহবস্ত্র প্রস্তুত করা ছিল তাঁর পেশা। এগুলো বিক্রি করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন।
১৪) হযরত সোলায়মান (আঃ) ছিলেন সমগ্র পৃথিবীর শাসক ও নবী। তিনি তাঁর পিতা থেকে অঢেল ধন-সম্পদের মালিক হয়েছিলেন। তিনি নিজেও অঢেল সম্পদের মালিক ছিলেন। ভিন্ন পেশা গ্রহণ করার চেয়ে নিজ সম্পদ রক্ষা ও তদারকি করাই ছিল তাঁর প্রদান দায়িত্ব। মানব-দানব, পশু-পাখি, বাতাস ইত্যাদির ওপর তাঁর কর্তৃত্ব ছিল। তাঁর সাথি ঈসা ইবনে বরখিয়া চোখের পলক ফেলার আগে বিলকিসের সিংহাসন সোলায়মান (আ.)-এর সামনে এনে হাজির করেন।
১৫) হযরত মুসা (আঃ) ছিলেন একজন রাখাল। তিনি শ্বশুরালয়ে মাদায়েনে পশু চরাতেন। সিনাই পর্বতের পাদদেশে বিরাট চারণভূমি মাদায়েনের অন্তর্ভুক্ত ছিল । লোকজন সেখানে পশু চরাত। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন মুসা (আঃ)। আট বছর তিনি স্বীয় শ্বশুর শোয়াইব (আঃ)-এর পশু চরিয়েছেন ।
১৬) হযরত হারুন (আঃ)-এর পেশাও ছিল পশু পালন । পশু পালন করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন ।
১৭) হযরত ইলিয়াস (আঃ)-এর পেশাও ছিল ব্যবসা ও পশু পালন ।
১৮) হযরত আইউব (আঃ)-এর পেশা ছিল গবাদি পশু পালন । তাঁর প্রথম পরীক্ষাটি ছিল গবাদি পশুর ওপর । ডাকাতরা তাঁর পশুগুলো লুট করে নিয়ে গিয়েছিল । (আনওয়ারে আম্বিয়া, ই. ফা. বাংলাদেশ)
১৯) হযরত ইউনুস (আঃ)-এর গোত্রের পেশা ছিল চাষাবাদ। সুতরাং কারো কারো মতে, তাঁর পেশাও ছিল চাষাবাদ ।
২০) হযরত জাকারিয়া (আঃ) ছিলেন কাঠমিস্ত্রি । আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে মহানবী হযরত মুহাম্দ (সাঃ) বলেছেন, হযরত জাকারিয়া (আঃ) কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন । তাই তাঁর শত্রুরা তাঁর করাত দিয়েই তাঁকে দ্বিখণ্ডিত করে । (সহিহ বুখারি)
২১) হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে যে তিনি জীবনের একটি সময় জঙ্গলে ও জনহীন স্থানে কাটিয়েছিলেন । আহার হিসেবে তিনি বৃক্ষের লতাপাতা ভক্ষণ করতেন। (আনওয়ারে আম্বিয়া)
২২) হযরত জুলকিফল (আঃ)-এর পেশা ছিল পশু পালন ।
২৩) হযরত ইয়াসা (আঃ)-এর পেশা ছিল ব্যবসা ও পশু পালন ।
২৪) হযরত ঈসা (আঃ) ও মরিয়ম (আঃ)-এর আবাসস্থল প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি তাদের উভয়কে এক উচ্চ ভূমি প্রদান করেছিলাম, যা সুজলা ও বাসযোগ্য ছিল।’ (সুরা : আল মুমিনুন, আয়াত : ৫০) এই উচ্চ ভূমি হলো ফিলিস্তিন । তিনি ফিলিস্তিনে উৎপন্ন ফলমূল খেয়ে বড় হয়েছেন। তিনি ঘুরে ঘুরে অলিতে-গলিতে দ্বিনের দাওয়াতি কাজ করতেন । যেখানে রাত হতো, সেখানে খেয়ে না খেয়ে নিদ্রা যেতেন। তাঁর নির্দিষ্ট কোনো পেশা ছিলনা ।
২৫) মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন একজন সফল ও সৎ ব্যবসায়ী। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ীদের হাশর হবে নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সঙ্গে।’ (আদ্দুররুল মানসুর, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২২০) তিনি গৃহের কাজ নিজ হাতে করতেন। বকরির দুধ দোহন করতেন। নিজের জুতা ও কাপড় সেলাই ও ধোলাই করতেন, গৃহ ঝাড়ু দিতেন। মসজিদে নববী নির্মাণকালে শ্রমিকের মতো কাজ করেছেন। খন্দকের যুদ্ধে মাটি কেটেছেন। বাজার থেকে প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় করতেন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘বর্শার ছায়ার নিচে আমার রিজিক নির্ধারণ করা হয়েছে—তথা গণিমতের মাল হলো আমার রিজিক।’ (কুরতুবি, ১৩তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১২)
নবী-রাসুলদের চিরন্তন বৈশিষ্ট্য এই যে, বৈষয়িক ধন-সম্পদের প্রতি তাঁদের কোনো আকর্ষণ ছিলনা । তাঁরা কখনো ধন-সম্পদ সঞ্চয় করতেন না এবং সঞ্চয় করা পছন্দও করতেননা । তথাপি যেহেতু তাঁরা মানুষ ছিলেন, সেহেতু বৈষয়িক প্রয়োজনে যতটুকু জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রয়োজন, ততটুকু সম্পদ অর্জনে বিভিন্ন পেশা গ্রহণ করেছেন । সদা-সর্বদা নিজেদের কষ্টার্জিত সম্পদ থেকে ভক্ষণ করা পছন্দ করতেন । মানুষদের থেকে কখনো তাঁরা নজর-নেওয়াজ, এমনকি বেতনও গ্রহণ করতেননা । বরং যথাসম্ভব নিজেদের উপার্জন থেকে গরিব ও দুস্থদের সাহায্য করতেন । সব নবী-রাসুল ছাগল চরাতেন । রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘এমন কোনো নবী নেই, যিনি ছাগল চরাননি।’ জনৈক সাহাবি প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহর রাসুল ! আপনিও কি ছাগল চরিয়েছেন ? প্রত্যুত্তরে রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘হ্যাঁ, আমিও মক্কায় অর্থের বিনিময়ে ছাগল চরিয়েছি।’ বলা বাহুল্য যে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাহাবিরা অনেকেই ব্যবসা করতেন । বিশেষ করে মুহাজিররা ছিলেন ব্যবসায়ী আর আনসাররা ছিলেন কৃষক ।
উপরের আলোচনা থেকে পরিশেষে এই কথাই বলবো ধর্ম ব্যাবসায়ী আর নবীর ওয়ারিশ এক জিনিস নয় । তাই দাবি করার সময় যখন নবীর ওয়ারিশ দাবি করা হয় তেমনি জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রেও নবী রাসূল পয়গম্বরগণের পথ অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয় । নইলে কথা আর কাজের মিল রইল কোথায় ?
ডা:বশির আহাম্মদ, লেখক, চিকিৎসক, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ