"ইসলামে রাজনীতি ফরজ, ইসলাম মানি, ইসলামে রাজনীতি পছন্দ করিনা, এটা মুনাফেকী বাক্য"
দুনিয়ায় সৃষ্টির শুরু হতে আজ পর্যন্ত মানব জীবনের সবচেয়ে বড় প্রভাবক বা নিয়ামক হলো সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা। এই সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাই আপনার-আমার জীবনের সবচেযলয়ে বড় নিয়ামক। মানুষ ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক অনেক বৈধ ও অবৈধ কাজই রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার কারনে করতে হয়। যেমন বর্তমান ইরানে নাস্তিক হোক আর আস্তিক হোক সবাই রাষ্ট্রীয় বাধ্য বাধকতার কারনে সকল নারীরা বোরকা পড়তে হয়। আবার বাংলাদেশে যত বড় বুজুর্গ ব্যক্তিই হোক সুদি ব্যাংকিংয়ের কারনে সুদ খেতে হয়। এজন্যই বলছি যে রাষ্ট্র আর সমাজ ব্যবস্থা মানব জাতির বড় নিয়ামক। আবার দেখেন পাকিস্তানে বোরকা ও হিজাব ঐচ্ছিক হওয়ার কারনে অনেক মারী মুসলিম হওয়ার পরও পর্দা করে না।
রাষ্ট্রের কারনে যেমন মানুষ ইচ্ছা করলেও হারাম কাজ হতে বেঁচে থাকতে পারে না তেমনি অনেক রাষ্ট্রের কারনে চাইলেও মানুষ হারাম কাজ সহজে করতে পারে না। অনুরুপ কেউ পূর্নাঙ্গ ইসলাম পালন করতে হলে অবশ্যই ইলামি রাষ্ট্র কায়েম করা জরুরী, তা না হলে চাইলেও কেউ পূর্ণাঙ্গ মুমিন হতে পারবে না।
আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ
ইসলাম আল্লাহর নিকট একমাত্র দ্বীন-জীবন বিধান।(আল-ইমরান:১৯)
এখানে الدِّينَ শব্দটি ধর্ম বুঝায় নি, বরং বুঝিয়েছে জীবন ব্যবস্থা। আর ইসলাম একটি পূর্নাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা, ইসলাম কোনো গতানুগতিক ধম নয়। কোরআনের বহু জায়গায় এই الدِّينَ অর্থ জীবন ব্যবস্থা কথাটি এসেছে।
আল্লাহর কাছে মানুষের জন্য একটি মাত্র জীবন ব্যবস্থা ও একটি মাত্র জীবনবিধান সঠিক ও নির্ভুল বলে গৃহীত। সেটি হচ্ছে, মানুষ আল্লাহকে নিজের মালিক ও মাবুদ বলে স্বীকার করে নেবে এবং তাঁর ইবাদাত, বন্দেগী ও দাসত্বের মধ্যে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সোপর্দ করে দেবে। আর তাঁর বন্দেগী করার পদ্ধতি নিজে আবিষ্কার করবে না। বরং তিনি নিজের নবী-রসূলগণের মাধ্যমে যে হিদায়ত ও বিধান পাঠিয়েছেন কোনো প্রকার কমবেশী না করে তার অনুসরণ করবে। এই চিন্তা ও কর্মপদ্ধতির নাম "ইসলাম" আর বিশ্ব-জাহানের স্রষ্টার ও প্রভুর নিজের সৃষ্টিকুল ও প্রজা সাধারণের জন্য ইসলাম ছাড়া অন্য কোন কর্মপদ্ধতির বৈধতার স্বীকৃতি না দেয়াও পুরোপুরি ন্যায়সঙ্গত। মানুষ তার নির্বুদ্ধিতার কারণে নাস্তিক্যবাদ থেকে নিয়ে শিরক ও মূর্তিপূজা পর্যন্ত যে কোন মতবাদ ও যে কোন পদ্ধতির অনুসরণ করা নিজের জন্য বৈধ মনে করতে পারে কিন্তু বিশ্ব-জাহানের প্রভুর দৃষ্টিতে এগুলো নিছক বিদ্রোহ ছাড়া আর কিছুই নয়।
অর্থাদ মানুষ জীবনের সকল ক্ষেত্রেই এই জীবন ব্যবস্থাকে পূর্নাঙ্গ মেনে চললে মুসলিম হতে পারবে না কেননা ইসলাম কোনো অসম্পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা না।
আল্লাহ বলেন,
أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ ۚ فَمَا جَزَاءُ مَن يَفْعَلُ ذَٰلِكَ مِنكُمْ إِلَّا خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَىٰ أَشَدِّ الْعَذَابِ ۗ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ
" তাহলে কি তোমরা কিতাবের একটি অংশের ওপর ঈমান আনছো এবং অন্য অংশের সাথে কুফরী করছো? তারপর তোমাদের মধ্য থেকে যারাই এমনটি করবে তাদের শাস্তি এ ছাড়া
আর কি হতে পারে যে, দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছিত পর্যুদস্ত হবে এবং আখেরাতে তাদেরকে কঠিনতম শাস্তির দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে? তোমাদের কর্মকান্ড থেকে আল্লাহ বেখবর নন।"
আল বাকারাহ, ৮৫
যদি আপনি মুসলিম হতেই চান তাইলে আপনাকে পূর্নাঙ্গ ইসলামে প্রবেশ করতে হবে। আর ইসলমা কোনো গতানুগতিক ধর্ম নয়, বরং পূর্নাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। আপনি ইমাননএনেছেন দাবী করে জীবনের কিছু কাজ আল্লাহর দেওয়া বিধান মতে করবেন আর কিছু অংশ মানুষের তৈরী বিধান মতে করবেন এমনটা হলে আপনি মুসলমান নয়, কেননা আংশিক ইমান আনা কিংবা আংশিক মুসলিম হওয়ার কোনো সিস্টেম ইসলামে নাই। আপনি সব কিছুই আল্লাহর নিয়ম অনুযায়ী করতে হবে।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ
" হে ঈমানদারগণ! আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো রসূলের আর আর তোমাদের উপর দায়িত্বশীলের।" আন্ নিসাঃ ৫৯
এখন আপনি যে নেতার আনুগত্য করছেন তিনি কি আল্লাহ্ এবং রাসূলের আনুগত্য করছেন ? তিনি যে রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী সেটা কি আল্লাহ্ ও রাসূল (সঃ) নির্দেশিত পথে? হতে পারে তিনি হয়ত নামায, রোযা, হজ্জ্ব, যাকাত সবই আদায় করছেন কিন্তু ব্যাক্তিজীবনে ইসলাম মানবো আর রাজনৈতিক আদর্শ ও জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে মানব সৃষ্ট মতবাদের।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা পুরোপুরি ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের অনুসারী হয়ো না, কেননা সে তোমাদের সুস্পষ্ট দুশমন। আল বাকারাহ, ২০৮
إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ ۗ وَمَا اخْتَلَفَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ إِلَّا مِن بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ ۗ وَمَن يَكْفُرْ بِآيَاتِ اللَّهِ فَإِنَّ اللَّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ
" ইসলাম আল্লাহর নিকট একমাত্র দ্বীন–জীবন বিধান। যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল, তারা এ দ্বীন থেকে সরে গিয়ে যেসব বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেছে, সেগুলো অবলম্বনের।
,এছাড়া আর কোন কারণই ছিল না যে, প্রকৃত জ্ঞান এসে যাওয়ার পর তারা নিজেদের মধ্যে পরস্পরের ওপর বাড়াবাড়ি করার জন্য এমনটি করেছে। আর যে কেউ আল্লাহর হেদায়াতের আনুগত্য করতে অস্বীকার করে, তার কাছ থেকে হিসেব নিতে আল্লাহর মোটেই দেরী হয় না।" আলে ইমরান, ১৯।
এখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসবে যে আমরা তো সমাজ ও রাষ্ট্রের কারনে চাইলেও পুরোপুরি ইসলাম পালন করতে পারছি না। আৃাদের রাষ্ট্র চলে মানুষের তৈরী নিয়মে, আমাদের লেনদেন রাষ্ট্রের কারনে সুদে নিমজ্জিত। এখন কি করব?
এখানেই হলো ইসলামী রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা। অর্থাদ এই সৃাজ ব্যবস্থা, রাষ্ট্র ব্যবস্থা, আইন ব্যবস্থা সব কিছুই ইসলামের আলোকে সাজাতে হবে, আর এই সকল ব্যবস্থা ইসলামের আলোকে না সাজালে চাইলেও আপনি মুসলমান হতে পারবেন না, কেননা আংশিক ইসলামের কোনো সিস্টেম নাই। আর পূর্ণাঙ্গ ইসলাম পালন করতে হলে মানব জীবনের সকল ব্যবস্থাকে ইসলামের আলোকে সাজাতে হবে। আর এই সিস্টেম গুলোর মধ্যে সব চেয়ে শক্তিশালী সিস্টেম হলো রাষ্ট্র ব্যবস্থা, আর এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা ইসলামের আলোকে সাজানোর সবচেয়ে বড় পদ্ধতি হলো রাজনীতি। আপনি রাজনীতি করবেন না, ইক্বামতে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করবেন মা, বলবে আমি কোরআন হাদিস মানি, রাজনীতি করি না, এটা মুনাফেকী ছাড়া কিছু নয়। আপনি সমাজ ও রাষ্ট্র ইসলামের আলোকে সাজাবেন না, আপনি ইসলাম মানবেন এর কোনো সুযোগ নাই।
লেখক:চিকিৎসক, জার্নালিস্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ