ইউভাইটিস(Uveitis)
ইউভাইটিস কাকে বলেঃ
ইউভিয়া বা চোখের মধ্য স্তরে এবং তার চারপাশের টিস্যুগুলির স্ফীতি বা প্রদাহকে ইউভাইটিস বলে।
এপিডেমোলজি বা প্রবনতাঃ
★রোগীর এক চোখ অথবা উভয় চোখই এক সাথে আক্রান্ত হতে পারে।
★সাধারনত ২০ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে এ রোগ বেশী হয় তবে কম বয়সেও হতে পারে।
★যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের এ সমস্যা বেশী হয়।
প্রকার ভেদঃ
আক্রান্ত অংশের উপর ভিত্তি করে ইউভাইটিস তিন প্রকার:
১। এন্টেরিয়র ইউভাইটিস(Anterior uveitis)
২। পোস্টরিয়র ইউভাইটিস(Postorior uveitis)
৩। ইন্টার মিডিয়েট ইউভাইটিস(Intermediet uveitis)।
অনেক সময় তিনটি অংশই এক সাথে আক্রান্ত হয়, এ অবস্থাকে প্যান ইউভাইটিস(Pan uveitis)।
কারণঃ
ইউভাইটিস রোগটির সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। সাধারণত অটোইমিউন(Auto immuno) রোগের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি দেখতে পাওয়া যায় যখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা রোগীর চোখসহ বিভিন্ন টিস্যুর উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এই রোগটি কয়েকটি কারণ নীচে দেওয়া হল:
★চক্ষুর সার্জারী।
★Auto immune disease e.g: Sarcoidosis, Ankylosing spondolysis.
★Infection: Cat scratch diseases, HZV, Syphillis, Toxo plasmosis. TB, Lym disease, west nille virus.
★Cancer effecting eye: Lymphoma.
★ক্রোন'স ডিজিজ।
★আলসারেটিভ কোলাইটিস।
★এইডস বা এইচ.আই.ভি সংক্রমণ।
★হারপিস।
★লাইম ডিজিজ।
★সিফিলিস।
★টিউবারকিউলোসিস বা যক্ষ্মা।
★রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস।
★সোরিয়াসিস।
★জুভেনাইল আর্থ্রাইটিস।
★চোখের আঘাত।
★কোন বিষাক্ত দ্রব্য চোখে ঢুকে যাওয়া।
★ধূমপান।
প্যাথফিজিওলজি:
১।চোখের ইনজুরী প্রদাহ সৃষ্টি করে BBB কে ভেঙ্গে দেয় যার ফলে Pg ও Lt রিলিজ হয় যা ব্লাড ভেসেলের পারমিয়েবিলিটি বাড়িয়ে দেয় ফলে ইনফ্লামেটরি Cell প্রবেশ করে সুযোগ তৈরী করে দেয়ে।
২। সংক্রমনের কারণে Exotoxin বা Endotoxin রিলিজ হয় যা হোস্ট Cell কে ধ্বংস করে ফলে প্রদাহ তৈরী করার কোষ গুলো তৈরী হয় এবং প্রবল প্রদাহ সৃষৃটি হয়।
৩। চোখের প্রদাহ Immuno diseases এর সাথে জড়িত, যা Antigen specific রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সংযুক্ত হয়।
৪।রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় আরো কিছু জটিলতম মেকানিজম কাজ করে এই রোগের সৃষ্টি করে।
রিস্ক ফ্যাক্টরঃ ধূমপান।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গঃ
(ক)এন্টেরিয়র ইউভাইটিসঃ
★এক চোখে আক্রান্ত হবে।
★ চোখের চারপাশে Dull aching পেইন হবে।
★চোখ লাল হওয়া।
★ফটো ফোবিয়া।
★চোখে কম দেখা।
★ পানি পড়া।
★মাথা ব্যাথা।
★ চোখের মনির আকার পরিবর্তন।
★চেখের মনি আলোক সংবেদনশীলতা কমে যাওয়া।
(খ)ইন্টারমিডিয়েট ইউভাইটিসঃ
★ দুই চোখেই আক্রান্ত হয়।
★ব্যাথা থাকেনা কিন্তু চোখে ঝাপসা দপখা যায়।
★ ফটোফোবিয়া ও Redness সাধারনত হয় না।
★ব্ল্যাক ফ্লটার্স।
(গ)পোস্টরিয়র ইউভাইটিসঃ
এ ক্ষেত্রে ইন্টারমিরিডিয়েট ইউভাইটিসের মতই তার সাথে থাকবে স্কোটোমা থাকবে।
ডায়াগনসিসঃ
★এই রোগটি নির্ণয় করার জন্য চিকিৎসক রোগীর চোখ পরিষ্কার না ঝাপসা সেটি পর্যবেক্ষণ করেন। এছাড়াও কয়েকটি পরীক্ষা করা হয়ে থাকে, যেমন; সাধারণ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা ও প্রোটিনের মাত্রা নির্ণয়।
★চোখের ভিতরে উপস্থিত তরলের পরীক্ষা।
★পুঙ্খানুপুঙ্খ শারীরিক পরীক্ষার পাশাপাশি রোগীর সম্পূর্ণ চিকিৎসার ইতিহাস সংগ্রহ করা।
★ত্বকের পরীক্ষা করা।
★ভিসুয়াল একুইটি টেস্ট করতে হবে।
★ফন্ডোস্কপি।
★ আইওপি টেস্ট।
★স্লীট ল্যাম্প পরীক্ষা, এ ক্ষেত্রে মাটন চপ এপেয়ারেন্স পাওয়া যাবে।
একই লক্ষনের রোগ সমূহঃ
★এন্ডোপথ্যালমাইটিস।
★Intra occular foreign body.
★গ্লোকোমা।
★অকোলার ইস্ককেমিক সিন্ড্রম।
★UV কেরাটাইটিস।
★ Acute কনজাংক্টিভাইটিস।
চিকিৎসাঃ
★প্রদাহ কমাতে কর্টিকোস্টেরয়েড ওষুধ প্রয়োগ।
★তারারন্ধ্র প্রসারণে সাহায্য করতে মাইড্রিয়াটিক চোখের ড্রপ।
★সংক্রমণের ক্ষেত্রে, এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার।
★চোখের দৃষ্টি হারানোর ঝুঁকি থাকলে ইমিউনোসাপ্রেসেন্ট ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হতে পারে।
সার্জিক্যাল প্রসিডিউরঃ
★ ভাইরেক্টমি।
★সার্জিক্যাল ইমপ্লান্ট এর মাধ্যমে ধীর গতির নিয়মিত স্টেরয়েড ঔষধ নিঃসরন ব্যবস্থা করা।
★গাঢ় কালো রঙের চশমা আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
কমপ্লিকেশনঃ
* গ্লুকোমা।
*রেটিনাল ডিটাচটমেন্ট।
*চোখের ছানী।
* ভিশন লস বা দৃষ্টিহীনতা।
* রেটিনার ইডিমা।
প্রতিরোধঃ
লক্ষন ভেদে চিকিৎসা।
প্রগনোসিস/ফলাফলঃ
★ বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ইউভাইটিস সঠিক চিকিৎসা করলে ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে ভাল হয়ে যায়।
★ Anterion uveitis এর ক্ষেত্রে বার বার হতে পারে।
★ Postorior uveitis এর ক্ষেত্রে কয়েক বছর পর্যন্ত থাকতে পারে।
★ সঠিক চিকিৎসার অভাবে স্থায়ী ভাবে রোগী অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ভালো তথ্য চিকিৎসকদের জন্য।
উত্তরমুছুন