চোখের এলার্জি বা এলার্জিক কনজাংক্টিভাইটিস(Allergic conjunctivitis)
আজকের বিষয় চোখের অ্যালার্জিক সমস্যা বা অ্যালার্জিক কানজাংকটিভাইটিস।
অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস সম্পর্কে বলার আগে কনজাংটিভাইটিস সম্পর্কে পাঠকদের একটু ধারনা দিলে বিষয়টি আরো সহজে বোধগম্য হবে বলে আমি আশা করি।
চোখের কনজাংটিভাতে কোন প্রকার প্রদাহ বা Infalamation হলেই তাকে কনজাংটিভাইটিস বলে।
আর কনজাংটিভা হল চোখের পাতার আইলেশের গোড়া থেকে চোখের পাতার ভেতরের পৃষ্ট হয়ে অক্ষি গোলকের কর্নিয়ার মার্জিন পর্যন্ত যে পাতলা ও মসৃন আবরন থাকে তাকেই কনজাংটিভা বলে।
চোখের অ্যালার্জি সমস্যা ও প্রতিকারঃ
আপনার চোখ দিয়ে যখন দেখবেন প্রায়ই পানি পড়ে,চোখ লাল হয়ে চুলকায় অথবা জ্বালা – পোড়া করে, তখন বুঝবেন আপনার চোখে অ্যালার্জিক সমস্যা থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে খুবই সতর্ক থাকতে হবে চোখের অ্যালার্জি সমস্যা নিয়ে। বলা হয়ে থাকে চোখ হচ্ছে মনের জানালা।অন্যান্য অ্যালার্জির মত চোখের অ্যালার্জিতে মানুষ তখনই আক্রান্ত হয় যখন তার শরীরের ইমিউন সিস্টেমে বা রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থাপনায় কোন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
অ্যালার্লাজিক কনজাংক্টটিভাইটিস কিঃ
অ্যালার্জি জনিত কারণে চোখের কনজাংটিভায় যে চুলকানি রোগ হয় তাকে অ্যালার্জিক কনজাংক্টিভাইটিস বলে।
আর যে সব দ্রব্য অ্যালার্জি রোগ সৃষ্টি করে তাকে বলা হয় অ্যালার্জেন্স।
চোখের জন্য অ্যার্জেন্স কিকি:
আমাদের ঘরে বাইরে চারপাশে প্রচুর অদৃশ্য পদার্থ আছে, এসব ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অ্যালার্জেন্স থেকেই চোখের অ্যালার্জি হতে পারে।
যেমন ধুলোবালি,কসমেটিকস,বসন্ত বা শরৎকালে ফুলের পরাগ রেনু,চিংড়িমাছ,ইলিশ মাছ,বেগুন,গরুর মাংশ,পুঁইশাকের মত পিচ্ছিল সব্জি,বিভিন্ন খাবারের মধ্যে থাকা রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি।
শুষ্ক মৌসুমে শুধু চোখের না বরং অন্যান্য অ্যালার্জিও বেশি হয়ে থাকে। তবে এটা জেনে রাখা ভালো যে সব অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থেই সবার চোখে অ্যালার্জি হয় না। যাদের শরীরে অ্যালার্জি বেশি হয়, তাদের চোখের অ্যালার্জিও বেশি হয়।
হাঁপানি রোগী, শিশু এবং যারা বাইরে ধূলোবালির সংস্পর্শে বেশি থাকে, তাদের মধ্যে চোখের অ্যালার্জি বেশি দেখা যায়। শুনে হয়ত অবাক হবেন যে মাথায় খুশকি থাকলেও চোখের অ্যালার্জিতে আপনি আক্রান্ত হতে পারেন।
এপিডেমোলজি বা পরিসংখ্যান:
শরীরে অ্যালার্জি থাকা প্রায় ৭০% পর্যন্ত লোক এলার্জি আক্রান্ত হতে পারে।
এ রোগ দুধের শিশু থেকে শুরু করে যকোন বয়সের লোকেরই এই সমস্যা হতে পারে।
চোখের অ্যালার্জি সমস্যা কয়েক ধরনের অ্যালার্জি দেখা যায়ঃ
১) সিজনাল বা মৌসুমি:
সিজনাল অ্যালার্জি বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে হয়ে থাকে বিশেষ করে শরৎ কালে আর বসন্তকালে। এসব সময়ে এলারজেন যেমন ঘাস, গাছ থেকে পরাগ রেণু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি ছত্রাক থেকে স্পোরও বাতাসে ছড়িয়ে আমাদের চোখের অ্যালার্জির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
২) বারোমেসে:
বর্ষজীবী অ্যালার্জি সারা বছরই হয়ে থাকে। সাধারণত ধূলোবালি, পাখির পালক, পশুর গায়ের লোম, ধোঁয়া, ক্লোরিন, কসমেটিকস, পারফিউম ইত্যাদিও চক্ষু অ্যালার্জির জন্য দায়ী।
৩। ভার্নাল অ্যালার্জিক কনজাংক্টিভাইটিস: জেনেটিক বা পারিবারি ভাবে হয়।
৪। এটপিক: টাইপ ওয়ান হাইপার সেন্সেটিভওটির (Type-I hypersensitivity)জন্য হয়।
৫।জায়ান্ট প্যাপিলারি(Giant papillary): এখানে চোখের উপরের অংশে প্যাপিলার মত দেখা যায়।
এটা টাইপ ওয়ান ও টাইপ ফোর হাইপার সেন্সেটিভিটির (Type-lV) জন্য হয়।
চোখের অ্যালার্জি সমস্যা হলে লক্ষণসমূহঃ
০১. চোখ লাল হয়ে যাওয়া।
০২. চোখে চুলকানি হওয়া আর অনবরত পানি পড়া।
০৩. চোখ খচখচ করা মানে চোখের ভেতর কিছু ময়লা পড়েছে এমন বোধ হওয়া।
০৪. চোখ ফুলে যাওয়া
চোখের অ্যালার্জি সমস্যা প্রতিরোধের উপায়ঃ
০১. অ্যার্জেন্স থেকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলবেন।
২. যে সকল খাবার খেলে অ্যার্জি হয় সে সকল খাবার খাবেন না।
৩. শরীরে অ্যালার্জিক সমস্যা থাকলে তা চিকিৎসা করে নিবেন।
৪. দুধের শিশুর ক্ষেত্রে প্রসূতি মা অ্যালার্জিক খাবার এড়িয়ে চলবেন।
চোখের অ্যালার্জি সমস্যা এড়িয়ে চলার কয়েকটি টিপস:
০১. শুষ্ক মৌসুমে যখনই বাইরে বের হবেন ধূলোবালি থেকে রক্ষা পেতে নাকে-মুখে মাস্ক এবং চোখে সানগ্লাস ব্যবহার করবেন।
০২. চোখ চুলকালে আঙ্গুল দিয়ে চোখ রগড়াবেন না। সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলবেন।
০৩. টিভি বা কম্পিউটারের সামনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করবেন না।
০৪. সাবধানে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করবেন।
০৫. খেয়াল রাখবেন গরুর মাংস, চিংড়ি মাছ, ডিম জাতীয় কোন খাবারের কারণে আপনার অ্যালার্জি হচ্ছে কিনা।
০৬. ঘরের কার্পেট নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
০৭. ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আই ড্রপ ব্যবহার করবেন।
০৮. আপনার যদি বাড়ীতে লোমশ পোষা কোন প্রাণী থাকে তাহলে তার থেকে সতর্ক থাকবেন।
মোট কথা সব সময় পরিষ্কার পরিছন্নতার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। অনেক সময় হয়ত বুঝতে পারেন না আপনার চোখের অ্যালার্জি কেন হচ্ছে। কিন্তু কিছু কিছু সময় যেমন বাইরে বেশি বাতাস হলে আপনি যদি বের হন বা ধোঁয়া যুক্ত জায়গায় গেলে যদি আপনার চোখে জ্বালা-পোড়া করে বা চুলকায় বা পানি পড়ে তাহলে বুঝবেন এগুলোই আপনার জন্য ক্ষতিকারক। তারপরও যদি বুঝতে না পারেন আপনি কিসের প্রতি সংবেদনশীল তাহলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
চিকিৎসা:
চোখের অ্যালার্জি চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা তিন ধরনের ঔষধ বেশি ব্যবহার করেন-
→ট্রপিক্যাল স্টেরয়েড,
→ট্রপিক্যাল এন্টিহিসটামিন,
→ আর্টিফিসিয়াল টিয়ার।
→ ওরাল এন্টিহিস্টামিন ইত্যাদি
চোখের চুলকানীর কারন কি?
উত্তরমুছুন